হ্যাঁ, অপবাদ ও ‘ঘটনা’– দুটোই কিন্তু মাত্রাভেদে সত্য। সঠিক কিংবা সম্ভাব্য অনাকাঙ্খিত ‘ঘটনাগুলোকে’ এড়িয়ে যাওয়াই হলো ইসলামের নীতি, বিশেষ করে যদি তা হয় যৌনতার মতো নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার-স্যাপার। নিশ্চিতভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্দোষ, এটি হলো এ ধরনের বিষয়ে ইসলামী আইনের অন্যতম মূলনীতি। যিনার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার জন্য চারজন প্রত্যক্ষদর্শী পুরুষ সাক্ষীর ‘তেমন করে’ দেখা ও প্রকাশ্য সাক্ষ্য দেয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারি। আফসোস, ব্যতিক্রম বাদে দুনিয়াজোড়া ইসলামপন্থীরা ড. তারিক রমাদানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের ব্যাপারে ইসলামী আইন ও সামাজিক নৈতিকতার এই মূলনীতি সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়নি।
শুরুতেই যেটা বলছিলাম, অপবাদ ও ‘ঘটনা’ দুটোই সত্য। খুব সম্ভবত তারিক রমাদান (ফ্রান্সের আইনানুযায়ী) বেআইনীভাবে বিয়ে করেছিলেন। এবং তেমনি বেসরকারীভাবে ডিভোর্সও দিয়েছেন। তারিক রমাদানের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের কথা থেকেও এটা অনুমান করা যায়। এ ধরনের ‘বেসরকারী বিয়ের’ অভিযোগ নোমান আলী খানের ব্যাপারেও করা হয়েছিলো। ড. তারিকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যারা ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলো তাদের প্রত্যেকটা অভিযোগই যে ইতোমধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে সেটা এড়িয়ে গিয়ে, উনার ওপরে ফ্রেঞ্চ সরকার যে অমানবিক আচরণ করেছে সে ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকে, উনার এলিইজড অর কনফেসড ‘কনসেনচুয়্যাল সেক্সের’ ব্যাপারে ইসলামপন্থীদের কাউকে কাউকে দেখেছি নির্লজ্জভাবে সোচ্চার হতে।
ইসলামপন্থীদের মন-মানসিকতায় যৌন-অবদমন যে কতটা মজ্জাগত হয়ে আছে, এই ধরনের অপবাদচর্চা হতে তা আন্দাজ করা যায়। মানুষ যখন কোনো কিছুর ব্যাপারে গভীর আসক্তি অনুভব করে তখন সে কখনো প্রবলভাবে সেটার পক্ষে চলে যায়। অথবা, তীব্রভাবে সেটার বিরোধিতা করে। আচরণ হিসাবে এগুলো বিপরীত মনে হলেও আসলে ভিতরকার অবস্থা কিন্তু একই। এ ধরনের নাটকীয় ইতিবাচকতা কিংবা বিরোধিতার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যৌনতার বিষয়ে স্বীয় অন্তর্গত সুগভীর আসক্তিকে ধামাচাপা দিতে চায়।
তাই তো দেখবেন, মেয়েদেরকে সর্বোতভাবে এড়িয়ে চলতে চাওয়া ছেলেরা ভেতরে ভেতরে মেয়েদের প্রতি অস্বাভাবিকভাবে আসক্ত। নানা ধরনের বিকৃত যৌনতা ও অবদমন চেষ্টার মাধ্যমে তাদের জীবনে সেটার বহিঃপ্রকাশও ঘটে। তেমনিভাবে, যেসব মেয়ে ছেলেদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না, পুরুষ মানুষ দেখলেই কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে পড়ে, কুঁকড়ে যায়, বাহ্যত উচ্চমানের নৈতিকতাসম্পন্ন হিসাবে পরিচিতি পেলেও, অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ভেতরে ভেতরে তারা আসলে অতিমাত্রায় আকৃষ্ট। তাই তো দেখবেন, তারা পুরুষদের সাথে এমন আচরণ করে যাতে মনে হয়, পরিবারের সদস্য নয় এমন পুরুষ মাত্রই তাদের সম্ভাব্য যৌনসঙ্গী কিংবা ধর্ষক।
তারিক রমাদানের ঘটনাটা যখন তুমুল চলছে তখন একজন এ ব্যাপারে আমার অবস্থান জানতে চাইলে তাকে বলেছিলাম, ‘নিজেকে আমি ততটা ভালো মনে করি না। তাই অন্য কারো এ ধরনের ব্যাপারে নিন্দাচর্চা করতে ভয় পাই।’ হ্যাঁ, এসব বিষয়ে আমি ততটা ভালো নই। নিজেকে কখনোই আমি নির্দোষ মনে করতে পারি না। আদম সন্তান হিসাবে প্রত্যেকেই আমরা কোনো না কোনো মাত্রায় দোষী। আমার এ কথা থেকে আপনার মনে যদি এ কথা পপআপ করে, ‘তাই? তাহলে আপনিও!’ অথবা, আপনি যদি জানতে চান, কেন আমি নিজেকে ততটা ভালো মনে করি না, তাহলে জেনে নিন, সেক্সচুয়েলি আপনি আসলে সমস্যাগ্রস্ত, কিছুটা পারভার্টেড। যে কারণেই হোক না কেন, আপনি যৌন অবদমনের শিকার। আপনার আশু চিকিৎসা জরুরি। চাইলে আপনি নিজেই নিজের ট্রিটমেন্ট করতে পারেন। বলাবাহুল্য, প্রত্যেক রোগী নিজেই নিজের জন্য প্রথম ডাক্তার। যে কোনো রোগের জন্যই এটি সত্য।
যৌনতার ব্যাপারে কেউই যথাযথ মানে ভালো থাকার দাবি করতে পারে না। এটি অসম্ভব। বিশেষ করে, বিবাহপূর্ব প্রায় দেড় দশকের ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের এ সময়কার রূঢ় বাস্তবতায় অন্তত। এ সংক্রান্ত আমার একটা লেখা আছে। পড়তে পারেন: দাম্পত্য জীবন হলো অন্যতম মৌলিক মানবিক অধিকার
এরপরও যিনি যতটুকু ‘ভালো’ আছেন বা থাকতে পেরেছেন, তা তালেগোলে, ‘খারাপ হওয়ার’ সুযোগ না পাওয়া সাপেক্ষে নিছক ঘটনাচক্রে। ‘বিশেষ নিদর্শন’ দেখার কারণে যেমন করে ইউসুফ (আ.) ‘খারাপ হওয়া’ থেকে আত্মরক্ষা করতে পেরেছিলেন। সবাই তো আর নবী-রাসুলদের মতো ডিভাইন প্রটেকশান পান না। তাই এসব বিষয়ে বড় বড় কথা না বলাই ভালো।
এসব কারণে, কারো ব্যাপারে এ ধরনের কোনো এলিগেশন আসলে বা এরকম কোনো কানাঘুষা চললে, সন্দেহের তীর ধনুক নিয়ে হামলে পড়ার মওকা খোঁজা থেকে অন্তত নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি।
শুরুতেই যেটা বলেছি, অপবাদ ও ‘ঘটনার সত্যতা’, দুটোই সত্য। যুগে যুগে নেতারা নারী ও অর্থের কাছে পরাভূত হয়েছেন। এটি সত্য। আবার যুগে যুগে নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিশেষ করে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ তোলা হয়েছে। এটাও সত্য। প্রফেট মুহাম্মদের (সা) ব্যাপারে নাস্তিকদের এটা একটা কমন এলিগেশন। হযরত আয়িশার (রা) বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ উঠেছিলো। এ ব্যাপারে ইসলামের নীতি সম্পর্কে শুরুতেই বলেছি। তাই, দ্বিরুক্তি নিষ্প্রয়োজন।
এবার আসুন, বহুবিবাহ নিয়ে কিঞ্চিৎ বলি। বেশি বলার সুযোগ নাই। আসলে ড. আবদুস সালাম আজাদী ভাইয়ের একটা স্ট্যাটাস শেয়ার দেয়ার জন্য নিছক ফরোয়ার্ডিং হিসাবে এই লেখা। তাই, এখানে জাস্ট হিন্টস দিচ্ছি। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, যুক্তি-পাল্টাযুক্তি, কাইজ্জা-ঝগড়া ও বিবাদ পরে কোনো একসময় করা যাবে।
নারীরা ইসলামের সবকিছু মানে, বহু বিবাহ ছাড়া। কিছু হীনমন্য পাশ্চাত্যপন্থী পুরুষও মনে করে– ইসলাম, দাসপ্রথার মতো অগত্যা পরিস্থিতিতেই শুধু, পুরুষদের বহুবিবাহের অনুমোদন দিয়েছে। বহু বিবাহকে যারা আসলেই খুব খারাপ মনে করে তাদের মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। এর মধ্যে আছে ইসলামবিরোধী সেক্যুলার গোষ্ঠী। আছে ইসলামী নারীবাদী, বিশেষ করে শিক্ষিত নারীকূল। ক্ষমতাপ্রাপ্ত নারীদের কাজ কারবার সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকলে এ প্রসঙ্গে আমার দীর্ঘ ও দুঃসহ এ লেখাটা পড়তে পারেন: উচ্চশিক্ষিত আধুনিক নারীদের ক্ষমতার বিকার
সেক্যুলার-নাস্তিকেরা একাধিক প্রেম করা ও পছন্দনীয় হওয়া সাপেক্ষে যে কারো সাথে অকেশনাল অথবা রেগুলার যৌন সম্পর্ক রাখাকে খারাপ মনে করে না। কিন্তু অজ্ঞাত কোনো কারণে একাধিক বিয়েকে তারা অত্যন্ত খারাপ মনে করে।
অন্যদিকে, ইসলামী নারীবাদীরা পুরুষদের একাধিক বিয়ের ব্যাপারে প্রফেট, সাহাবীগণ ও সালফে সালেহীনদের অনুসরণ করতে নারাজ। তারা স্বামীদের এমনকি অবৈধ সম্পর্ককেও তীব্র আপত্তি সহকারে মানতে রাজী, কিন্তু স্বামীর অন্য বিয়েকে কোনোক্রমেই মানতে নারাজ।
যৌনতা নিয়ে আমাদের সমাজে চলছে এক আশ্চর্য, স্ববিরোধী, প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও অস্বাভাবিক ‘স্বাভাবিকতা’।
‘এসব’ ব্যাপারে আমার নীতি হচ্ছে– I like it, but not in public, and with responsibility। কথাটা খুব ক্লিয়ার। এরপরে কেউ যদি আমাকে আনফ্রেন্ড ও আনফলো করতে চান আল্লাহর ওয়াস্তে সেটা করুন। আপনার মতো আত্মপ্রবঞ্চক ও ভণ্ডের সাথে থাকতে আমি রাজী নই।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের প্রতি ছাড়া অন্য কারো যৌন-নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে অভিযোগ তোলা ও সেটা নিয়ে চর্চা করাকে আমি অতিবড় স্পর্ধার ব্যাপার বলে মনে করি। কিছু ব্যতিক্রম বাদে তারিক রমাদানের ওপর জুলুমের ব্যাপারে পুরো মুসলিম বিশ্ব অনভিপ্রেত ভূমিকা পালন করেছে। মজলুমের ব্যাপারে নিরপেক্ষতা ও নীরবতা অবলম্বন করাও পরোক্ষভাবে জালেমের পক্ষাবলম্বন, আমরা জানি।
তারিক রমাদান প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলতে হয়। নোমান আলী খানের ব্যাপারেও এটি ঘটেছে। রোগটা আরো গভীরে। সেটা হলো, ইসলামিস্টরা মনে করে, ‘ফাসেকের’ কাছ হতে শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে না। তাই তারা দেখে, লোকটার মধ্যে কোনো জেনুইন ‘খারাবি’ আছে কিনা। অথবা, এ ধরনের কোনো লগজিশের সন্দেহ আছে কিনা। যদি তেমন কোনো আভাস বা ‘প্রমাণ’ পায়, তখন তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সর্বোতভাবে বর্জন করে। মুসলমানদের মধ্যে মধ্যযুগের পরে ক্রমে ক্রমে জ্ঞানবিজ্ঞানের অবনতি হওয়ার পিছনে এই ধরনের (বাড়াবাড়িসুলভ ও ব্যক্তিচরিত্রগত) অতিসতর্কতার বিরাট ভূমিকা আছে।
ইসলামপন্থীরা সাধারণত মেন্টর, টিচার ও ইন্সট্রাকটরের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। অর্থাৎ প্রশিক্ষক ও শিক্ষকদেরকেও অভিভাবক মনে করে। এই তিনটার পার্থক্যকে গুলিয়ে ফেলে। প্রকৃত ব্যাপার হলো, আপনি চরিত্রগত শুদ্ধতা দেখবেন যাকে আপনি অভিভাবক হিসাবে মনে করেন, তার মধ্যে। শিক্ষকের চরিত্র নিয়ে টানাটানি করার তো কোনো মানে হয় না।
গাইড/মেন্টর, টিচার ও ইনস্ট্রাকটরের পার্থক্য নিয়ে আমার এই লেখাটা পড়তে পারেন: প্রশিক্ষক, শিক্ষক ও গুরুর মধ্যে পার্থক্য করতে না পারার ব্যর্থতা ও এর পরিণতি
তারিক রমাদানকে আমি স্টিল আমাদের অন্যতম মেন্টর মনে করি। আপনি যদি উনাকে মেন্টর হিসাবে ভাবতে না পারেন তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উনাকে একজন এক্সপার্ট বা শিক্ষক হিসাবে স্বীকার করুন। মুসলিম বিশ্বের বিশেষ করে ইউরোপের মুসলমানদের ব্যাপারে উনার অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করুন, স্বীকৃতি দিন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারিক রমাদানকে আপনি যতই ইনসাল্ট বা ইগনোর করতে চান না কেন, বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথমাংশের এ সময়কালের মুসলিম মেধা ও মননের ইতিহাসে ইউসুফ কারযাভী ও রশিদ ঘানুশীর পরে উনার নামই ইতিহাসে উচ্চারিত হবে। এ বিষয়ে একজন একাডেমিক হিসাবে অন্তত এটুকু আমি বলতে পারি।
তারিক রমাদান প্রসংগে ড. সালাম আজাদীর এই লেখাটা পড়তে পারেন। এত সুন্দর একটা লেখা দেয়ার জন্য শায়েখ আজাদী ভাইয়ের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও দোয়া রইল।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Nure Elahi Shafat: ব্যক্তিগতভাবে নিস্তেজ ছিলাম না। অপেক্ষা অপেক্ষা… ‘যাহাক্বাল বাতেলের’ অপেক্ষা করতে থাকি। শুরুতেই যখন কারাগারে গেলেন তখন লিখেছিলাম #I_am_Tariq_Ramadan। পরিবেশ দেখছিলাম আশপাশে, ফেসবুকে। যাদের লেখা ভালো লাগে তারা রমাদানে আত্মপক্ষ নিয়ে… দুয়েকজন ছাড়া বাদবাকি সবাই নিশ্চুপ ছিলেন। অপ-পর্যবেক্ষণ/ জাহেলামী না করে অবশ্য চুপ থাকাই তাদের জন্যে ভালো। এত আনকনফিডেন্ট ইসলামপন্থীরা! ভাবতেই অবাক লাগে।
Khondoker Zakaria Ahmed: ধন্যবাদ, সাহসী উচ্চারণ এবং গভীর থেকে উপলব্ধিকে প্রকাশের জন্য।
Mohammad Mozammel Hoque: ইসলামী মতাদর্শভিত্তিক যে ধরনের সামাজিক আন্দোলন আমরা শুরু করতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ, সেটার কাজের ক্ষেত্রে নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে সব ধরনের বাড়াবাড়ি ও আলগা সংবেদনশীলতা একটা বাধা। তাই আগেভাগে এটাকে ঝেড়ে ফেলাই বেহেতর। এজন্যই আজাদী ভাইয়ের লেখাটা সরাসরি শুধুমাত্র শেয়ার না করে এ ধরনের দীর্ঘ ফরোয়ার্ডিং বক্তব্যের অবতারণা।
Abdus Salam Azadi: অনেক সুন্দর অ্যানালাইসিস।
Mohammad Mozammel Hoque: বাংলা ভাষাভাষী লোকদের মধ্যে আপনিই প্রথম এ প্রসঙ্গে কলম ধরলেন। আল্লাহ আপনাকে এভাবে হক কথা সবার আগে বলার তৌফিক দান করুন! অগ্রণী হোন সব সময়ে আমাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে নেতৃত্ব দেয়ার কাজে। দোয়া করবেন।
Abdus Salam Azadi: স্যার, সহীহ আক্বীদার এক ভাই আমাকে আগেই বলেছেন তিনি তারিক্ব রমাদানকে পছন্দ করেন না। কারণের মধ্যে এই স্ক্যান্ডাল। আর দ্বিতীয় কারণ হলো তিনি নাকি চিন্তার ক্ষেত্রে ভ্রষ্ট। ঐ ব্যাথা থেকেই লেখা। তবে আপনার বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে পাওলার যে কথাগুলো আমি পাশ কেটে গেছি, তা বলে দিয়ে ভালো করেছেন।
Mohammad Mozammel Hoque: ‘স্যার’ সম্বোধন কেন, ভাই?
Abdus Salam Azadi: ভাইজান, অনেক সম্মান গলায় জড়ালে ঐটা আসে। ঐটা ঐশ্বী পাওনা।
Kaniz Fatema: যেখানে উনার লইয়ার স্বীকার করেছেন উনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করেছেন, সেখানে আপনি আসছেন সাফাই গাইতে! কী বলতে চান, এসব অবদমিত ব্লা ব্লা করা ইসলামে জায়েজ, আল্লাহ হেদায়েত দিক এসব অসুস্থ চিন্তা ভাবনাকে!
Ohidul Islam: আমি যেটা বুঝলাম সেটা হচ্ছে, তিনি ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী ঠিকই বিয়ে করেছেন উক্ত মহিলাকে। তবে ফ্রান্সের আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়নি। আইনজীবীকে তো আইনী ভাষায়ই কথা বলতে হবে। তুরস্কে কামাল আতাতুর্কের সময় রাষ্ট্রীয় সিস্টেমের বিয়ে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী ছিলো না। লোকজন তখন রাষ্ট্রীয় সিস্টেমের পর গোপনে আবার ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী বিয়ে করতো।
ড. সালাম আজাদীর এই লেখাটা পড়ুন– তারিক্ব রমাদানের জামিন অতঃপর
Kaniz Fatema: সম্ভবত বাংলাদেশী উৎস থেকে জেনে বিশেষ করে যে লিংকটা দিলেন তার থেকে জেনে এইসব সাফাই গাইছেন (লেখাটা ভয়ংকর)! ইন্টারনেটে উনার লইয়ারের বিবৃতিটা যদি পাওয়া যায় পড়ে নিবেন!
Masudul Alam: এই লেখায় ড. আজাদী বাংলায় যা বলেছেন, সেগুলোই তারিক রমাদানের আইনজীবী ও অন্যান্য রেফারেন্সে এই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে– Free Tariq Ramadan। ওয়েবসাইটটির Plaintiff Facts সেকশনটি ভিজিট করলেই জানতে পারবেন।
আর লেখাটার কোন কথাটা ভয়ংকর, স্পেসিফিক্যালি বলুন, প্লিজ। আমাদেরও জানা দরকার।
Kaniz Fatema: লেখাটা ভয়ংকর, কারণ লেখক নিজেকে ভক্ত হিসেবে বলে দুই বিচার প্রার্থীকে খুবই খারাপভাবে চিত্রিত করেছেন, কথা হলো এই মহিলাগুলো খারাপ হলে সেটাও তারিক রমাদনেরই দোষ, উনার চয়েজ খারাপ!
ঠিক আছে, রেপের অভিযোগ মিথ্যা, কিন্তু শুয়েছিলেন তা তো শতভাগ সত্য!
Masudul Alam: বিচারপ্রার্থীরা যে মিথ্যা বলেছে, তা তো ইতোমধ্যে স্পষ্ট। একজন তো সালাফী থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। ওই মহিলার আপন ভাই জানিয়েছে, হিন্দা আয়ারী ওইদিন তার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলো। এর ছবি এবং ভিডিও আছে। এবং তার বোন বহু আগে থেকেই ফেইম সিকার। এ জন্য সে আগেও নানান ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা তার আপন ভাইয়ের বক্তব্য। এখানে বিস্তারিত দেখুন: http://freetariqramadan.com/henda-ayari/
অন্য অভিযোগের ব্যাপারে দেখুন: http://freetariqramadan.com/christelle/
আর এই মহিলার অভিযোগ তো আদালতই বিশ্বাস করেনি: http://freetariqramadan.com/marie/
ওখানকার ইসলামবিদ্বেষী রাজনীতিটা আগে বুঝার চেষ্টা করুন। আর ঈমানদারদের ব্যাপারে এইসব পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা সূরা নূর পড়ে বুঝার চেষ্টা করুন। আন্দাজ-অনুমানে কনক্লুসিভ কথা বলার ঝুঁকি এড়িয়ে চলুন।
Masudul Alam: হযরত আয়েশার (রা) ইফকের ঘটনার প্রেক্ষিতে সূরা নূরে আল্লাহ কী বলেছিলেন, তা বিবেচনায় রাখা জরুরি।
“১৩. (যারা অপবাদ রটালো) তারাই বা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী হাজির করলো না, যেহেতু তারা (প্রয়োজনীয় চারজন) সাক্ষী হাজির করতে পারেনি, তাই আল্লাহ তায়ালার কাছে তারাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী।
১৪. (হে মোমেনরা,) যদি দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার দয়া অনুগ্রহ না থাকতো, তাহলে (একজন নবীপত্মীর) যে বিষয়টি তোমরা চর্চা করছিলে, তার জন্যে এক বড় ধরনের আজাব এসে তোমাদের স্পর্শ করতো,
১৫. তোমরা এ (মিথ্যা)-কে নিজেদের মুখে মুখে প্রচার করছিলে, নিজেদের মুখ দিয়ে এমনসব কথা বলে যাচ্ছিলে যে ব্যাপারে তোমাদের কোনো কিছুই জানা ছিলো না, তোমরা একে একটি তুচ্ছ বিষয় মনে করছিলে, কিন্তু তা ছিলো আল্লাহ তায়ালার কাছে একটি গুরুতর বিষয়।
১৬. তোমরা যখন ব্যাপারটা শুনলে তখন সাথে সাথেই কেন বললে না যে, আমাদের এটা মোটেই সাজে না যে, আমরা এ ব্যাপারে কথা বলবো, আল্লাহ তায়ালা অনেক পবিত্র, অনেক মহান। সত্যিই (এ ছিলো) এক গুরুতর অপবাদ!
১৭. আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি (সত্যিই) মোমেন হও তাহলে কখনো এরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না।
১৮. আল্লাহ তায়ালা (তাঁর) আয়াতসমূহ স্পষ্ট করে তোমাদের সামনে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ তায়ালা (সবকিছু) জানেন, তিনি বিজ্ঞ, কুশলী।
১৯. যারা মোমেনদের মাঝে (মিছে অপবাদ রটনা করে) অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি; আল্লাহ তায়ালা (সব কিছু) জানেন, আর তোমরা (কিছুই) জানো না।”
Sourav Abdullah: Kaniz Fatema, আপনি একে ওকে জঘন্য বলছেন, অথচ একটাবারও খেয়াল করলেন না আপনার কথা বলার ধরন কতটা জঘন্য!
Ohidul Islam: Kaniz Fatema, এটা কেমন রুচির কথা! ছি!! খোলামনে শায়খ আবদুস সালাম আজাদীর লেখাটি পড়ুন। অভিযোগ যে মিথ্যা তার সপক্ষে অনেক প্রমাণ আছে।
Sourav Abdullah: Kaniz Fatema, ইসলাম নিয়ে আপনাদের সরব হওয়ার আপদটা হচ্ছে আপনারা আদৌ জানেনই না যে কোনটা নিয়ে সরব হওয়া জরুরি। একটা ঘোরের মধ্য থেকে কথা বলেন। লোকটার উপর যে অপবাদের জুলুম করা হলো, লোকটাকে যে দশটা মাস বন্দি করে রাখা হলো সেসবের মতন গুরুতর জুলুম নিয়ে কথা না বলে বলছেন তার ‘কন্সেন্সুয়াল সেক্স’ নিয়ে। যেটা নিয়ে আদৌ আপত্তি করা যায় কিনা তাও বুঝার চেষ্টা করছেন না! আর বিচারিক প্রক্রিয়ায়ই তো দেখা যাচ্ছে যে তার উপর মিথ্যাচার করা হয়েছে, অথচ আপনি তারপরও খুবই জঘন্য, নীচ ভাষায় বলে যাচ্ছেন “দুইজনের সাথে হোটেল রুমে ইত্যাদি”! প্লিজ, ঈমানদারদের হকের ব্যাপারে আরো সাবধানী হোন। ধন্যবাদ।
Kaniz Fatema: I’m actually saying what his personal lawyer submitted to the court in writing, that’s all!
if you want to do this ছিঃ, ছাঃ or show me verses from the Quran pls do to them (mr. Tariq & his appointed lawyer) or take for your own! Behave yourself!
Don’t try to advise me what I will talk on behalf of Islam or anyone & no one should mention me here anymore! Period!
Mohammad Mozammel Hoque: “উনার ল’ইয়ার স্বীকার করেছেন, উনি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করেছেন” – এইটা আইনী ভাষা। এর মানে কি এটা প্রমাণিত হয়, তিনি অনৈতিক কাজ করেছেন? হ্যাঁ, হতে পারে, যদি “বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক” নামক ব্যাপারটা স্বয়ং অনৈতিক হয়। এবার আসেন, ফরাসী সামাজিক মূল্যবোধ কাঠামোতে “বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক” অনৈতিক কিনা, তা দেখি। স্পষ্টত তা নয়।
তাহলে “উনার ল’ইয়ার স্বীকার করেছেন, উনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করেছেন” – এই কথাটা ফরাসী কনটেক্সটে নিছকই একটা তথ্য বা ঘটনা, যা নয় বেআইনী, যা নয় অনৈতিক। অবশ্য যদি জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেছেন বলে প্রমাণিত হতো তাহলে হোক বৈবাহিক সম্পর্ক বা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, উভয় ক্ষেত্রেই তা হতো বেআইনী ও অনৈতিক।
এবার আসেন, “উনার ল’ইয়ার স্বীকার করেছেন, উনি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করেছেন” – এই কথাটাকে আমরা অন্যদিক থেকে বুঝার চেষ্টা করি। যে দেশে একাধিক বিয়ের আইনগত স্বীকৃতি নাই। বরং সেটা ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য, সে দেশে বসবাসকারী কেউ যদি একাধিক বিয়েকে জায়েয মনে করে এবং সে মোতাবেক সেখানকার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ‘বেআইনী’ বিয়ে করে, তাহলে বাহ্যত “বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক” করা ছাড়া তার আর কী করার থাকে?
আপনি বলতে পারেন, স্ত্রী থাকার পরেও একাধিক নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক তো অবৈধ ব্যভিচার। হ্যাঁ, আমি আপনার কথার সাথে একমত। তবে, কোনো পুরুষ চাইলে আইনগতভাবে একাধিক বিয়ে করতে পারে, শুধুমাত্র সেখানকার জন্য এটি প্রযোজ্য।
তো, Kaniz Fatema, আপনি কীভাবে জানলেন, ড. তারিক রমাদান ইজাব-কবুল-সাক্ষী-মোহরানা তথা বিয়ে করা ছাড়া যৌন সম্পর্ক করেছেন? শোনেন, ইজাব, কবুল, সাক্ষী ও মোহরানার শর্ত পূরণ করেও কেউ যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে, ফরাসী আইনানুযায়ী তা বিবাহ বহির্ভূত স্বেচ্ছামূলক যৌন সম্পর্ক। তারিকের আইনজীবী যা বলেছেন।
এরচেয়ে বড় কথা হলো, যারা ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন, তা সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক শুনানীর মাধ্যমে মামলাগুলো ডিসমিস হওয়ার অপেক্ষা। কেন এই লোকটির বিরুদ্ধে এভাবে মিডিয়া ট্রায়াল করা হলো, তা নিয়ে কি ভেবেছেন?
Kaniz Fatema: আপনি কীভাবে জানেন, উনি উনি সাক্ষী, ইজাব, কবুল বলেছিলেন, দাওয়াত পেয়েছিলেন কি? আমি পাইনি তাই জানি না! উনার যখন এতই সখ বিয়ের, তো ফ্রান্সে কেন, উনি কি ফ্রান্সের আইন জানতেন না?
ইহুদী, খ্রিষ্টানরা কি আমাদের আদর করার জন্য সৃষ্ট, দুনিয়ায় কি মজলুম তিনি একা যে প্রথম জেলে গেছে?
একজনের সাথে বিয়ে আর বাকী দুইজনের সাথে হোটেল রুমে ছিলেন, একবারও বিয়ের কথা আসেনি, উনারা মিস্ট্রেস ছিলেন!
আপনার সাফাই দিতে থাকেন, আমি আর এই বিকৃত পুরুষ আর তাদের সাফাইয়ারদের রিপ্লাই দিবো না
Masudul Alam: আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন তারিক রমাদান বিকৃত? “ইহুদী, খ্রিষ্টান” সোর্স থেকে জেনে? আর ওইসব পার্ভার্টেট, স্বগোষিত ইসলামোফোব নারীদের স্টেটমেন্ট থেকে?
Muntasir Mahmud: আহারে ইসলাম, আহারে মুসলিম! এরাই আবার বলবে পশ্চিমা মিডিয়া বিশ্বাস না করতে। উনি এসব তথ্য প্রমাণ বিশ্বাস করেন না। উনি ফ্রান্সের সরকার, ওদের মিডিয়া, আর ওই প্রমাণিত মিথ্যুক মেয়েদের কথা বিশ্বাস করেন!
দাওয়াত পেয়েছিলেন কি! কী চমৎকার প্রশ্ন! তারিক রমাদানের বিরুদ্ধে কেন এত কিছু হলো, এগুলা নিয়া উনার প্রশ্ন নাই। উনি কেন দাওয়াত পায় নাই, পাইলে প্রমাণ হতো, সেটাই প্রশ্ন। দুনিয়ায় অনেক মুসলিম জেলে গেছে তাই সবার যাইতে হবে, সেজন্যে মিথ্যা রেপের অপবাদ দিলেও চুপ করে মেনে নিয়ে জেলে পচতে হবে??
শুধু যদি এটা স্যারের পোস্ট না হইতো গালি দিয়ে এসব বেয়াদপের ইসলাম ছুটাইতাম আমি। হ্যাঁ, আমি বেয়াদপ। এসব মানুষ যেই ইসলামের কথা বলে, সেইটা যদি ইসলাম হয়, আমি নাস্তিক হওয়া পছন্দ করবো। ইসলামরে পঁচায়া গন্ধ বানাই ফেলছি আমরা। এ কী রকম ইসলাম, কোথায় ইসলাম??
Mohammad Mozammel Hoque: Muntasir Mahmud, অর্ধশতাব্দীর অধিক এই জীবনের বিপুল অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ‘এসব বিষয়ে’ যারা অতিসাধু ভাব দেখাতে চান, ভিতরে ভিতরে তারা আসলে ‘এসব ব্যাপারে’ অতিমাত্রায় আগ্রহী। অতি আগ্রহের পরিণতি হলো অতিরিক্ত অবদমন। এর অনিবার্য বহিঃপ্রকাশ হলো পারভারসন বা বিকৃতি কিংবা এই ধরনের অতিসাধু মনোভাব। অন্যদের ব্যাপারে অতিরিক্ত ‘সর্তকতা’ ও অতিসংবেদনশীলতা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের এই ভিতরকার সমস্যাটা সম্পর্কে আমরা বুঝতে পারি। আমার লেখার শুরুতে যে বিষয়ে খানিকটা বলেছি। সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারী সম্ভবত সেরকমই একজন।
Muhammad Ahosanur Rahaman: স্যার, আপনার উপরের কমেন্টের উপর ভিত্তি করে একটি পূর্ণাংগ লেখা পেতে আগ্রহী। খুব ইন্টারেস্টিং কমেন্ট।
Mohammad Mozammel Hoque: এসব নিয়ে তো আমার অনেক লেখালেখি আছে। আরো বেশি লিখতে গেলে শেষ পর্যন্ত না জানি আমি একজন ‘য-বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে ‘খ্যাতি'(?) লাভ করি! আশঙ্কা করছি।
যারা এসব বিষয় নিয়ে সব সময় সংশোধনমূলক কথাবার্তা বলে থাকেন, সমাজকে সংশোধন করার চেষ্টা করেন তাদের জন্যও আমার সতর্কবাণী আছে। সংশোধনমূলক চেষ্টাও হতে পারে এক ধরনের ‘চর্চা’র বহিঃপ্রকাশ। এ নিয়ে কৃষণ চন্দরের ‘কাচরা বাবা’ গল্পটি পড়ে দেখতে পারেন।
বিয়ে ও পারিবারিক ব্যবস্থাসহ এ ধরনের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে আমার যেসব লেখা আছে সেগুলোর একটা সংকলন একসাথে করলে পাঠকদের সুবিধা হবে। দেখা যাক সেটা করতে পারে কিনা।
Nure Alam Masud: কোনো ব্যক্তিকে সর্বোতোভাবে বর্জন করার এই ‘অতি সতর্কতার’ নীতিটা আসলে সেইসব মানুষদের অসহায় লাস্ট অপশন, যারা সত্য-মিথ্যা ফারাক করতে জানে না, কাদা ধুয়ে রত্ন উদ্ধার করে জানে না, ভালো-মন্দের মিশ্রণ থেকে ভালোকে আলাদা করতে জানে না। এ ধরনের ব্যক্তিরা ‘অন্ধ অনুসারী’ হতে চায়, তবে সেটা ‘ভালো’-র।
ড. তারিক রামাদান এবং নোমান আলী খানের অধিকাংশ অনুসারীই এরকম। ইন ফ্যাক্ট, বর্তমান যামানার অধিকাংশ মুসলিমই এমন। আর এরকম অন্ধ অনুসারীদের হাতেই জুলুমের শিকার হয়েছেন উনারা। নোমান আলী খান সম্পর্কে যখন এত এত মুসলমানেরা ইসলামী শরীয়া লঙ্ঘন করে চরিত্র নিয়ে কথা বললো ও প্রচার-প্রসার করলো, এমনকি তার বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ওমর সুলাইমানকে জিতানোর জন্য কোটি টাকার ফান্ড কালেক্ট করে ফেললো, তখন সামগ্রিক ব্যাপারটা নিয়ে লাইভ করেছিলাম।
ব্যক্তিগতভাবে আমার ধর্মদর্শন উনাদের থেকে ভিন্ন অনেকাংশে, তবুও তাদের উপর যখন জুলুম করা হয়েছে, সেটাকে জুলুমই বলেছি।
এ ধরনের ঘটনা থেকে মুসলিম উম্মাহকে বাঁচাতে প্রত্যেকের মাঝে ইন্টেলেকচুয়াল প্র্যাকটিস বৃদ্ধি করতে হবে, তাদেরকে সচেতন করতে হবে এবং ‘অন্ধ অনুসারী’ থেকে ‘চিন্তাশীল অনুসারীতে’ রূপান্তর করতে হবে। যে কাজটা তারিক রামাদান বা নোমান আলী খানের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটা দুই-একজন মানুষের দ্বারা স্বল্প সময়ে ঘটানো সম্ভবও নয়।
এ ধরনের ‘হিউজ ফ্যান’রা পূজো করার দেবতা চায়, মানুষ চায় না। তারপর যখন দেবতার মাঝে জেনুইন ত্রুটি দেখে, কিংবা দেবতা সম্পর্কে কোনো অভিযোগও দেখে, তখন দুটো ভাগ হয়ে যায়–
একদল অন্ধ অনুসারী ডিনায়াল পজিশনে গিয়ে সব অভিযোগ অস্বীকার এবং এমনকি দেখতেও চায় না,
আরেক দল অন্ধ অনুসারী দেবতাকে মাথার উপর থেকে মাটিতে আছড়ে শেষ করে।
খোদ রাসূলের (সা.) সাহাবীরাই কি ‘নারীর উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ’ করেননি? মুখে মুখে কথা ছড়াননি?
এটা মানুষের বৈশিষ্ট্যগত বদ স্বভাব। ইতিহাসে খুব কম মানুষই এবং খুব কম মুসলমানই এ থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে। তখনও, এখনও।
(মাত্র কয়েকদিন আগেই আমার ব্যাচেলরস-এর ইউনিভার্সিটি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে বহিষ্কার করা হলো কিছু ‘স্ক্রিনশটের’ কারণে। অথচ ফটোশপের যুগে সেগুলো অকাট্য প্রমাণ নয়। কিন্তু সেসব আলোচনার আগেই মানুষ দুটোর মান-সম্মানের ক্ষতি যা হবার, হয়ে গেল। অহরহ এসব ঘটনা ঘটছে চারিদিকে। নোমান আলী খানদের ঘটনাগুলো নজরে আসে বেশি, এই আরকি।)
Mohammad Mozammel Hoque: সুন্দর বলেছেন। ধন্যবাদ।
Ibn Abd Al-Qadir: কিন্তু আপনি কি নূরে আলম মাসুদ সাহেবের যুক্ত করে দেয়া ভিডিওটা দেখেছেন?
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, দেখেছি। সেখানে তিনি ওমর সুলাইমানের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে নোমান আলী খানের বিরোধিতা করেছেন। এবং শেষের দিকে শিয়া মতবাদের পক্ষে বলেছেন। মাঝখানে জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা করেছেন।
ইসলাম প্রসঙ্গে কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত থাকলেও জনাব নূরে আলম মাসুদ সাহেবের অবস্থান আর আমার অবস্থান দুইটা ভিন্ন অবস্থান। তৎসত্ত্বেও আমার এই স্ট্যাটাসে তিনি যে মন্তব্যটা লিখেছেন সেটা আমার দৃষ্টিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক বলে মনে হয়েছে সেজন্য আমি সেটাকে এপ্রিশিয়েট করেছি।
Ibn Abd Al-Qadir: হ্যাঁ, এই স্ট্যাটাসে উনার মন্তব্যটা সুন্দর। কিন্তু উনার ভিডিওটা দেখে আমি রীতিমত থ বনে গেছি! একটা ডগমার প্রতি ইন্টারেস্ট থেকে উনি এতটা ফ্যালাসিয়াস কথাবার্তা বললেন! তাহলে শেষমেশ কী হলো? উনি যে ‘চিন্তাশীল অনুসারী’ হতে বলেছেন, ‘হিউজ ফ্যান’ হতে বারণ করেছেন, সেটা নিজেই ভায়োলেট করলেন!
Mohammad Mozammel Hoque: ইমাম খোমেনী সম্পর্কে তিনি যেটা দাবি করেছেন সেটা তিনি করতেই পারেন, একটি বিশেষ অবস্থান থেকে। একই দাবি জামায়াতে ইসলামীর লোকেরাও করতে পারেন মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে। একই দাবি কওমী ঘরানার লোকেরা করতে পারেন আশরাফ আলী থানভী সম্পর্কে কিংবা আবুল হাসান আলী নদভী সম্পর্কে। এ রকম বিভিন্ন মনীষী সম্পর্কে তাঁর অনুসারীরা বলতে পারেন যে, জীবনের সব ক্ষেত্রে তিনি বলে গেছেন। তাকে অনুসরণ করাই যথেষ্ট।
কিন্তু এই কথাগুলোর ইসলামিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। ইসলামী মতাদর্শ অনুযায়ী অনুসরণ করতে হবে ব্যক্তি হিসেবে শুধুমাত্র একজনকে। তিনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সা) এবং দল হিসেবে শুধুমাত্র এক দল লোককে। যারা আল্লাহর রাসূলের (সা) সঙ্গী বা সাহাবী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া বাদবাকি সব ক্ষেত্রে লোকদেরকে অনুসরণ করতে হবে বেছে বেছে, সমর্থনযোগ্য বিষয়ে সমর্থন করা এবং যেসব বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার মতো সেগুলোকে বাদ দিয়ে।
শিয়া মতবাদের অনুসারীকে দেখেছি, যে কোনো প্রসঙ্গে, বিশেষ করে ইসলাম সংক্রান্ত কোনো কিছু বললে সেখানে কিছু না কিছু শিয়া প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। যেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। সত্যি কথা হলো, শিয়া মতবাদ সম্পর্কে আমার তেমন ভালো জানাশোনা নাই। তবে বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে কোনো কোনো শিক্ষক শিয়া হয়ে ফিরেছেন। তাদের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা মুক্ত আলোচনা এবং সহিষ্ণুতা, এগুলার ধারেকাছেও নেই। এই আরকি। আমার অবস্থানটা পরিষ্কার করার জন্য এই কথাগুলো এভাবে বললাম।
Ibn Abd Al-Qadir: কেউ মাওলানা মওদূদীকে নিয়ে বা কেউ ইমাম খোমেনীকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগবে, এতে আমার তেমন আপত্তি ছিল না। এ রকম প্রায় সব ধারার লোকেরাই করে থাকেন। কিন্তু দেখা গেলো উনি ‘তাগুতের আদালতে’ বিচার চাওয়া নিয়ে যেসব হাস্যকর কথা বললেন সেসবও উনার শিয়া বায়াসনেস থেকে। জামায়াতে ইসলামী কেন বাংলাদেশী তাগুতের আদালতে আইনী প্রক্রিয়া চালালো, নুমান আলী খান কেন আমেরিকান তাগুতের আদালতে বিচারপ্রার্থী হলো বা স্ট্যাটাসের টপিক অনুযায়ী ড. তারিক কেন ফ্রেঞ্চ তাগুতের আদালতে আইনী প্রক্রিয়া চালালো ইত্যাদি আপত্তি! হাহাহা! তাহলে দুনিয়ার সবার বিরুদ্ধে মামলা হবে নিজ নিজ দেশে, আর উনারা গিয়ে ইরানের ‘ইসলামী আদালতের’ আশ্রয় নিতে হবে অবস্থা!
Nure Alam Masud: Ibn Abd Al-Qadir, অবস্থানগত ভিন্নতা থাকলেও আপনার ভাষার কারণে আপনার সাথে চিন্তাশীল আলোচনা করা সম্ভব হয় না/হবে না, যেটা জনাব মোজাম্মেল হকের সাথে সম্ভব হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র ও সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আমি ভুলগুলোকে ভুলই বলি/বলেছি। এমনকি জামায়াতের নায়েবে আমীরের সাথেও আমি আমার মতো করেই কথা বলেছি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
যখন আমার আলোচনায় আমি বলেছি যে We have Imam Khomeini, we can get everything from him, তখন এই কথাটা ‘চিন্তাশীল অনুসারী’ হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যারা ‘তরিকা’ বা পীর-মুরিদি ব্যাপারগুলো বোঝেন, তারা বুঝতে পারবেন।
আমাদেরকে অবশ্যই বুদ্ধিবৃত্তির সীমা বুঝতে হবে। যে বিষয়গুলো বুদ্ধিবৃত্তির (human intellect) কাজ নয়, সেগুলিকেও দর্শন/যুক্তি/বিজ্ঞান দ্বারা টাচ করতে যাওয়াটা বোকামী।
ধর্মীয় জগতে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চার wide-open সুযোগ রয়েছে। একইসাথে বুদ্ধিবৃত্তি-ঊর্ধ্ব জগতের বিষয়ও রয়েছে, যেগুলিই ইসলামের প্রাণ। সেই বিষয়গুলিতে একজন ওস্তাদ/পীর/গুরুর শরণাপন্ন হতে হয়। সেখানে ইন্টেলেকচুয়াল প্র্যাকটিস চলে না।
আমি টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরির একজন সফটওয়্যার এঞ্জিনিয়ার, I have gone through all those science vs religion discussions, একইসাথে আমি ইসলামের শিয়া-সুন্নী ইস্যু, রাজনৈতিক ইস্যু, ধর্মীয়-রাজনৈতিক দল, ইসলামী বিপ্লব ইত্যাদি ইস্যুও গো-থ্রু করেছি। আমি ধর্মের ইন্টেলেকচুয়াল প্র্যাকটিসের জায়গাগুলিও কমবেশি টাচ করেছি ও করি। একইসাথে একজন গুরু/ওস্তাদের ‘চোখ-বুঁজে অনুসরণের’ ক্ষেত্রগুলো (আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে) জেনে সেই ক্ষেত্রে একজন ওস্তাদের অনুসরণের চেষ্টা করি। প্রত্যেকটারই বিভিন্ন applicable area আছে। এর একটার সাথে আরেকটার সংঘর্ষ নেই।
বুদ্ধিবৃত্তির জগতে নতুন পা রাখা ছাত্রের অবস্থা হলো সেই শিশুর মতো, যার হাতে একটি স্ক্রু-ড্রাইভার পড়েছে, এবং সেটা দিয়ে সে বাসার সমস্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি খুলে ফেলেছে, তারপর সাঁজোয়া যান (tank) খোলার জন্যও স্ক্রু-ড্রাইভার নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। সে তার টুলসের সীমাবদ্ধতা জানে না।
আমি তেমন লাগামহীন বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করি না। দর্শন বুদ্ধিবৃত্তির সীমা জানে না। বুদ্ধিবৃত্তির সীমা যেখানে শেষ, ইরফানের যাত্রা সেখানে শুরু। দার্শনিকের যাত্রা বুদ্ধিবৃত্তিক ও সরলরৈখিক। আ’রেফের যাত্রা বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক এবং বৃত্তীয়। কমেন্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই।
Ibn Abd Al-Qadir: আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা, অসাড়তা ও হতাশা লক্ষ্য করার মতো। আপনি আমার আপত্তির জবাব না দিয়ে অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয়, বাগাড়ম্বর জুড়ে দিয়েছেন!
Md Mahdi Hasan: ঠিকই বলেছেন কারযাভী ও রশীদ ঘানুশীর পরেই উনার অবস্থান। তারিক রমাদানের লেকচার থেকে যে কতকিছু শিখতে পারি তা বলে বোঝাতে পাড়বো না। বিশেষ করে আলজাজিরায় মেহদী হাসানের নিয়মিত উপস্থাপনায় হেড টু হেড প্রোগ্রামটির পলিটিক্যাল ইসলাম বনাম সেক্যুলারিজম টপিকটিতে উনার পারফরমেন্স আজও আমাকে অনেক কিছু শেখায়, অনেক কিছু ভাবায়।