প্রশ্নকর্তা: আসসালামু আলাইকুম। একটা প্রশ্ন ছিলো। আপনি কি ফ্রি আছেন? স্রষ্টার ভালোবাসা কি কন্ডিশনাল?
আমি: না। যেহেতু স্রষ্টা কোনো শর্তের অধীন নয়।
প্রশ্নকর্তা: তাহলে একজন নাস্তিক/অন্য ধর্মের ভালো মানুষ জান্নাতে যাবে না কেন? আর কেনইবা তাকে দোজখে যেতে হবে?”
আমি: একসাথে সবগুলো প্রশ্ন করে ফেললে উত্তর দিতে সুবিধা হবে। আমি কথার পিঠে কথা বলাতে অভ্যস্ত নই। নেভার মাইন্ড প্লিজ!
প্রশ্নকর্তা: আমরা সবাই unconditional love চাই। আসলেই কি unconditional love বলে কিছু আছে? সবাই এক বাক্যে বলে আছে। সেটা কী? চিন্তা না করেই লোকে বলে, মা-বাবা আর সন্তানের ভালোবাসা। আমিও তাই বলি।
***
একজন মুসলিম হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, মা-বাবার চেয়েও সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) আমাকে বেশি ভালোবাসে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা কি unconditional? একজন আস্তিক হিসেবে প্রথমেই আমার মাথায় আসে সৃষ্টিকর্তা unconditional। কিন্তু একটু চিন্তা করতেই মনে হলো সৃষ্টিকর্তা conditional। একজন নাস্তিক/অন্য ধর্মের ভালো মানুষ জান্নাতে যাবে না। কারণ, স্রষ্টার কন্ডিশনের মধ্যে সে পড়ে না।
*****
স্রষ্টার ভালোবাসা কি conditional?
(বি. দ্র.:– আমি ১০০% আস্তিক, প্রশ্নের উত্তর না পেলেও আমি বিশ্বাসী আর পেলে ঈমানটা আরো মজবুত হবে।)
আমি: এ বিষয়ে আমার কথাগুলো বুঝতে হলে যে কাউকে এসব বিষয়ে কতিপয় তত্ত্ব বা পূর্বধারণাকে (theory or presupposition) বুঝতে হবে।”
(১) বোধের তাত্ত্বিক পদ্ধতি (Ontological method of understanding)
(২) মানুষের জ্ঞানগত কেন্দ্রিকতা (human cognitive centrality)।
(৩) ঐশী অজ্ঞেয়বাদ (divine agnosticism)
(৪) জগতের ক্রমসোপানমূলক কাঠামো (hierarchical structure of the world)
(৫) জ্ঞানের নির্যাস তত্ত্ব (core of knowledge)
(৬) মানুষের বুদ্ধিগত অনুরূপতা (uniformity of human intellect)
এগুলো নিয়ে আমি লিখব, ইনশাল্লাহ।
*****
এটি এক পাঠকের সাথে আমার ইনবক্সে কথোপকথন। গতকাল সকালে। ফ্যাকাল্টিতে ইব্রাহিম হোসেনের সাথে (IML-এর টিচার) দেখা হলো। প্রসঙ্গক্রমে উনাকে এই বিষয়ে বললে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে লেখার পরিবর্তে উনার সাথে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি।
তত্ত্বগুলোকে যতটা কাঠখোট্টা ও কঠিন মনে হচ্ছে সেগুলো ততটা নিরস ও কঠিন নয়। অনেক সহজ। কেউ এগুলো নিয়ে এর আগে ঠিক এভাবে কথা বলে নাই। সেজন্য এগুলোকে অশ্রুতপূর্ব মনে হতে পারে। আপনি জাস্ট আধঘণ্টা আমাদের আলোচনাটা শুনলেই বিষয়টি ঠাওর করতে পারবেন। নিশ্চিত। ‘বিফলে মূল্য ফেরত’…!!!!!
ইউটিউবে আমার এ সংক্রান্ত চ্যানেল ‘যুক্তি ও জীবনে’ এ সংক্রান্ত আরো ভিডিও পাবেন। এই ভিডিওটি সেখানে পাবেন এখানে:
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Ahsan Habib: মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় সৃষ্টি আমাদের নিঃশর্ত ভালোবাসেন এবং আমরা ‘মানুষ’ সৃষ্টির সেরা হলেও তাঁর ভালোবাসার আদ্যোপান্ত বুঝতে পারবো সে ক্ষমতা আমাদের সবাইকে সমানভাবে দেয়া হয়নি!
যে কোরআন পৃথিবী ধ্বংস হবার আগ পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে, ২০১৮ সালের মানুষ এই আমি সেরকম সমস্যার মুখামুখি নাও হতে পারি! সুতরাং সময় এবং জ্ঞানের পরিধি বিবেচনায় রেখে অঙ্কটা মেলালে বিষয়টা বুঝতে সহজ হবে! আমাদের ঈমান আরো দৃঢ় ও মজবুত হোক। সুন্দর আলোচনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আল্লাহ তায়ালার নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ্!
Mohammad Mozammel Hoque: আলোচনার প্রথম দিকে স্রষ্টার ভালোবাসা শর্তযুক্ত হিসাবে বলা হলেও মূলত সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা নিঃশর্ত। কেননা, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বিশ্বাস ও কর্মের যে শর্ত তিনি দিয়েছেন তা স্থায়ীভিত্তিতে তাঁর অনুগ্রহ ও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। তিনি যদি সত্যিকারের নিঃশর্ত ভালো না-ই বাসতেন, তাহলে তো সৃষ্টিই করতেন না। ভালোবাসায় শর্তারোপ করার জন্য সৃষ্টিকে আগে তো অস্তিত্বশীল ও উপযুক্ত করে সৃষ্টি করতে হয়েছে। সেটাই বা তিনি কেন করলেন?
কোনো prior cause বা পূর্বশর্ত দ্বারা বাধ্য হয়ে নিশ্চয়ই নয়। সৃষ্টি করার জন্য স্রষ্টার যদি কোনো বাধ্যবাধকতা না থেকে থাকে তাহলে বলতে হয়, ভালোবেসেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। সোজা কথায়, সৃষ্টি করেছেন বলেই তো ভালোবাসা না বাসার কথা আসছে। হোক সেটা নিঃশর্ত বা শর্তযুক্ত।
দ্বিতীয়ত: নিঃশর্ত ভালোবাসার দাবী বা ধারণাটা আসলো কোত্থেকে?
জাগতিক কোনো ভালোবাসা তো সত্যিভাবে নিঃশর্ত নয়। যে সব ভালোবাসার সম্পর্ককে আমরা নিঃশর্ত হিসাবে জানি, সেগুলো তুলনামূলকভাবে, অর্থাৎ শর্তযুক্ত ভালোবাসার তুলনায় শর্তমুক্ত বা নিঃশর্ত। একটু খেয়াল করলেই আমরা বুঝতে পারবো, স্রষ্টার পক্ষ থেকে সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমরা নিঃশর্ত ভালোবাসার প্রমাণ, নিদর্শন ও ধারণা পেয়ে থাকি।
অন্টোলজিক্যালি সব জাগতিক ভালোবাসাই যদি শর্তাধীন হয়ে থাকে, তাহলে ঈশ্বরের ভালোবাসা একমাত্র শর্তহীন ভালোবাসা, নিঃশর্ত ভালোবাসার ধারণা ও প্রত্যাশা ঈশ্বর থেকেই এসেছে, এটাই তো বলতে হয়।
সর্বোপরি বলতে হয়, ঈশ্বরের সত্তা, কাজকর্ম, উদ্দেশ্য ইত্যাদি ধরনের জ্ঞানগত বিষয়সমূহ সম্পর্কে মানুষের যে জ্ঞান, সেটা ঈশ্বর তথা স্রষ্টার ওপর সামগ্রিক অর্থে ও সমভাবে প্রয়োগযোগ্য মনে করাটা, সার্বিক ও বিশেষের সম্পর্কের আলোকে, অযৌক্তিক। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি জ্ঞানগত শির্ক। ভিডিও বক্তব্যে এ ব্যাপারে খোলাসা করে বলেছি। এই আলোচনার এটি হচ্ছে ফোকাল পয়েন্ট বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
Ahsan Habib ভাই, আপনার জন্য এই মন্তব্য সংযোজন।
Md Nayem Uddin: আপনার ভিডিও ক্লিপটা অসাধারণ স্যার। ভালো লাগল। আশা করি নতুন কিছু শুনতে পাব।
Mohammad Mozammel Hoque: এ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় করতে পারো, কিংবা তোমার কোনো সংশয়বাদী বন্ধু থাকলে তাদেরকে রেফার করতে পারো। আমাকে এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন করলে শ্রোতাদের ধৈর্য এবং মনোযোগ থাকা সাপেক্ষে আমি যে কোনো প্রশ্নের একেবারে কনক্লুসিভ জবাব দিতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।
তুমি কি ভিডিও বক্তব্যটি পুরোটা শুনেছো?
Md Nayem Uddin: জ্বী। আমি এই প্রথম আপনাকে শুনলাম। রীতিমত আপনার ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম। আমি অধীর আগ্রহে শুনেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনার অসাধারণ মনমানসিকতার জন্য। দোয়া রইল।
Mohammad Mozammel Hoque: ওখানে একটা জিনিস আলোচনা করা হয়নি। সেটা হলো, একজন নাস্তিক ভালো মানুষ হতে পারেন কিনা। ভাবছি সেটা নিয়ে কিছু একটা লিখবো। তবে আগ্রহী শ্রোতা থাকলে ক্যামেরা অন করে আলোচনাও করতে পারি।
Md Nayem Uddin: অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি♥♥♥