দৃশ্যত, সেন্ট্রিস্ট পলিটিক্স নিয়ে ’২৫এর ঢাকায় একটা তত্ত্ববিভ্রাট চলছে। এই তাত্ত্বিক বিভ্রান্তির শিকার এনসিপি, এবি পার্টি। খুব সম্ভবত ইনফ্লুয়েন্সার রেজাউল করিম রনি। সাথে আছেন খন্দকার রাকীবের মতো একাডেমিক-একটিভিস্ট। উনাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, উনারা মনে করেন রাজনীতি হলো মানুষের অধিকার আদায়ের ব্যাপার। আদর্শটা এখানে গৌণ। উনাদের এই ধারণা খণ্ডিত। তাই ভুল।

বরং রাজনীতিতে আদর্শ আর অধিকার, দু’টোরই দরকার। neither one is individually sufficient, yet both are necessary. উনারা মনে করেন, এখন হলো পোস্ট-ন্যারেটিভ জামানা। এগুলো পোস্ট-মডার্নিস্ট কথাবার্তা। as a whole, পোস্ট-মডার্নিজম জিনিসটা কালচারালি ভালো জিনিস হলেও ফিলসফিকেলি স্ববিরোধী। ‘পোস্ট-ন্যারেটিভ era’র কথা বলা, এটাও স্বয়ং এক ধরনের ‘ন্যারেটিভ’। জোট নিরপেক্ষ জোটও একটা জোট।

সে যাই হোক। সব সময়ে প্রসঙ্গক্রমে এই কথাটা বলি, মানুষ রাজনীতি করে, প্রত্যক্ষভাবে না করলেও অকেশনালি এক্টিভ হয়ে উঠে একইসাথে তার বস্তুগত প্রয়োজন পূরণ ও আদর্শগত ফ্যান্টাসি চর্চার জন্য। শুধু আদর্শ ও নীতিবোধ দিয়ে রাজনীতি চলে না। তেমনিভাবে শুধু অধিকার নিয়েও রাজনীতি চলে না। দুনিয়ার ইতিহাস এবং বিদ্যমান বাস্তবতা আমাদেরকে এ’কথাই বলে।

এরই আলোকে আমরা বুঝতে পারি, সেন্ট্রিস্ট তথা মধ্যপন্থী রাজনীতি হলো একটা ideological position নিয়ে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও নিরাপত্তাসহ জনগণের physical needs পূরণ করার কাজে নেতৃত্ব দেয়া। নেতৃত্ব লাভের জন্য চেষ্টা করা। সোজা কথায় যাকে বলে ক্ষমতার রাজনীতি। পাওয়ার পলিটিক্স।

পাওয়ার পলিটিক্সে নন-ফিজিক্যাল নিডস থাকে ideological preference হিসেবে। পাওয়ার পলিটিক্স করে এমন পলিটিশিয়ানদের কাছে জনগণের ফিজিক্যাল নিডসের এজেন্ডাসমূহ অগ্রাধিকার লাভ করে। আইডিওলজিক্যাল পলিটিক্স করে এমন পলিটিশিয়ানদের কাছে সংশ্লিষ্ট আদর্শ ও নৈতিকতার বিষয়গুলো প্রাধান্য লাভ করে।

আদর্শ ও নৈতিকতার বিষয়ে নিরপেক্ষ থেকে রাজনীতি করার যে অবাস্তব ফর্মূলা এবি পার্টি অনুসরণ করছে তা সঙ্গতকারণেই ব্যর্থ হবে। পারসনাল এস্টাবলিশমেন্টের দিক থেকে এই দলের নেতারা সফল হলেও দলগতভাবে তারা অলরেডি ব্যর্থ। এনসিপির পজিশন তো আরো উদ্ভট। তাদের কিছু লোক ডানের সাথে আছে। কিছু আছে বামের সাথে। এই জগাখিচুড়ি রাজনীতির আমি কোনো ভবিষ্যত দেখি না, যদি তারা কোনো ক্লিয়ারকাট পজিশন না নেয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিধারার আলোকে আমার এই কথাগুলোকে বিশ্লেষণ করা যাক।

মুসলিম লীগ হতে বের হয়ে গিয়ে যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ হলো তখন নিজস্ব রাজনীতি দাঁড় করানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ ডান থেকে বামে যাওয়া শুরু করলো। এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন লাল মাওলানা, মাওলানা ভাসানী। শেখ মুজিব ব্যক্তিগতভাবে বামপন্থী না হওয়া সত্ত্বেও এন্টি-মুসলিম লীগ রাজনীতির স্বার্থে আওয়ামী লীগকে বামের দিকে নিয়ে গেছে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পুঁজি না থাকায় শেখ সাহেব সহজেই বামপন্থীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছেন। ডেলিবারেটলি। আওয়ামী মুসলিম লীগ হতে আওয়ামী লীগ হতে গিয়ে শেখ সাহেব ভাসানীর চীনপন্থার মোকাবেলায় নিজেকে এবং নিজের দলকে ভারতপন্থার হাতে ন্যস্ত করেছেন।

খুব সংক্ষেপে এই হলো আওয়ামী লীগের উৎপত্তি ও সেন্টার লেফট অবস্থানে আসার ইতিহাস।

কেউ ব্যক্তিগতভাবে যে আদর্শের অনুসারী হোন না কেন, রাজনীতিতে সেটার তেমন গুরুত্ব থাকে না। বরং, তাঁর রাজনৈতিক পজিশনটা কী, তাঁর রাজনীতিটা কী, এটা রাজনীতিতে খুব গুরুত্ব। সে জন্য দেখবেন, চীনপন্থী বামদের একাংশ বিএনপিতে জয়েন করলেও বিএনপিকে তারা বামপন্থায় নিতে পারে নাই। তারা ভারতবিরোধিতার প্লাটফর্ম হিসেবে বিএনপিতে জয়েন করেছেন। জিয়াউর রহমানের পর থেকে বিএনপি’র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পজিজন দখল করে ছিলেন। এখনো আছেন। অথচ তারা রাজনীতি করেন দক্ষিণপন্থী হিসেবে।

শেখ মুজিব ও তদীয় কন্যা শেখ হাসিনা, এরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ বামপন্থী ছিলেন না। অথচ তারা করেছেন সেন্টার লেফট পলিটিক্স।

গণআন্দোলনে শেখ ডাইনেস্টির পতন হয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আর থাকবে না। কিন্তু অতি অবশ্যই থাকবে সেন্টার লেফট পলিটিক্স। সেই জায়গায় কারা যাবে? দ্যাট ইজ আ বিলিয়ন ডলার কোশ্চেন নাউ। এর উত্তর আমার জানা নাই। দেখতে হবে, কী হয়।

আমার ধারণা, টাকা পয়সার লোভ আর জামায়াত ঠেকানোর জন্য মাঠে ময়দানে বিএনপি কর্তৃক আওয়ামী লীগকে শেল্টার দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি কিন্তু আওয়ামী লীগ হয়ে উঠবে না। এর কারণ দুইটা। প্রথমত, মুসলিম লীগ হতে বের হয়ে এসে আওয়ামী মুসলিম লীগ হয়ে আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠতে হয়েছিল। কারণ, মুসলিম লীগ তখন ডমিন্যান্ট। অলরেডি ইন পাওয়ার। তাই মুসলিম লীগের বিপরীত পজিশনে যাওয়া ছাড়া আওয়ামী মুসলিম লীগের গতি ছিল না। বটবৃক্ষের ছায়ায় অন্য গাছ হয় না। এই ধরনের ট্রান্সফর্মেশন প্রসেস বিএনপির জরুরী না। কেননা, বিএনপি অলরেডি ভালো অবস্থানে আছে। সেন্টার রাইট পজিশনে তাদের সমকক্ষ বা নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নাই। বিএনপি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী।

বিএনপি আওয়ামী লীগের পজিশনে না যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, নেতৃত্ব। নামে মাওলানা হলেও ভাসানী ছিলেন বামপন্থী। মুজিব ছিলেন ক্ষমতালিপ্সু সুবিধাবাদি। হাসিনাও তাই। এর বিপরীতে জিয়া পরিবার আদর্শগতভাবে ডানপন্থী। কমিটেড হওয়া তো দূরের কথা, তারা হালকাভাবেও কেউ বামপন্থী নন। মির্জা ফখরুলের মতো কোনো প্রাক্তন বামপন্থী যদি বিএনপির শীর্ষতম নেতা হোন, এবং তিনি যদি জিয়া ও জিয়াপত্নীর মতো ক্যারিসমেটিক লিডার হতে পারেন তাহলে অবশ্য বিএনপি’র আওয়ামী লীগ হয়ে উঠার একটা চান্স আছে।

আমার মনে হয় না, জিয়ার এতবড় লিগ্যাসি ফেলে বাম বুদ্ধিবৃত্তি, মিডিয়া আর কালচারের লোভে বিএনপি আওয়ামী লীগ হয়ে উঠবে। আগের মতোই তারা বামদের সাথে সমঝোতা করে চলবে বড় জোর। দেখা যাক।

তাহলে, আওয়ামী লীগের সেন্টার লেফট পলিটিক্সটা কে করবে? আমার ধারণায় সফট আওয়ামী লীগের সাথে মিলে বামপন্থা থেকে উঠে আসা লোকজনদের মধ্য থেকে একটা বামলীগ গড়ে উঠবে। বামপন্থীরা জনবিচ্ছিন্ন। তাই তারা সওয়ার হতে চাচ্ছে ডানপন্থার ভিতর থেকে উঠে আসা কোনো দলের ওপর। এই কাজে এবি পার্টি তাদের প্রাথমিক চয়েস। এ’জন্য দেখবেন মজিবুর রহমান মঞ্জু, ব্যারিস্টার ফুয়াদ, এদেরকে তারা যথেষ্ট স্পেস দেয়।

বামদের হালনাগাদের বেস্ট চয়েস হলো নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি তথা এনসিপি। এনসিপিকে তারা মিডিয়া কাভারেজ দিয়ে কব্জা করেছে। রক্ষণশীল ডানপন্থী প্রতিটা এজেন্ডাতে, লক্ষ করলে দেখবেন, তালেগোলে সময় কাটানোর পলিসি নিচ্ছে এনসিপি। ডানদের কাছে এক গ্রুপকে পাঠিয়ে বামদের কাছে আরেক গ্রুপকে ডেপ্লয় করে তারা কোনো একদিকে ‘চিহ্নিত’ হওয়া থেকে বাঁচতে চাচ্ছে। হানিমুন পিরিয়ডে এ’ধরনের উল্টাপাল্টা আচরণকে মানুষ কিছুটা উপেক্ষা করলেও আলটিমেইটলি মানুষ যখন দেখবে, তারা, মানে এনসিপি বামবলয়ের বাইরে যাচ্ছে না, বা যেতে পারছে না, তখন তারা এনসিপিকে সফট-আওয়ামী লীগ হিসেবে চিহ্নিত করবে।

এই ধরনের শাহবাগপন্থী পজিশন তাদের জন্য অসুবিধাজনক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাবে, যদি তারা সিরিয়াসলি পলিটিক্স করতে চায়। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি’র মতো মূলধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।

ভারতবিরোধী হিসেবে শ্লোগান দিয়ে ইসলামপন্থীদেরকে পাকিস্তানপন্থী বলে গালি দেয়া, এটা ইউটোপিয়ান পজিশন। আপনি ’৪৭-এর কথাও বলবেন, আবার বামপ্রকল্পের ডিজাইনে ’৭১পন্থীও হবেন, এটা তরুণ মনের ফ্যান্টাসি হতে পারে। রাজনীতির বাস্তবতা এমন উৎকল্পনা সমর্থন করে না। রাজনৈতিক সফলতা পেতে হলে আপনাকে ’৪৭কে ‘’৪৭এর মর্যাদা দিতে হবে, ’৭১কে ’৭১এর মর্যাদা দিতে হবে, ’২৪কে ’২৪এর মর্যাদা দিতে হবে। মাইনাস ’৪৭এর রাজনীতি মূলত আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বামধারার রাজনীতি।

‘আমরা একইসাথে ডানেরও পক্ষে, বামেরও পক্ষে। আমাদের পজিশন ডানের বামে, বামের ডানে।’ – এই ধরনের কথাগুলো কিশোর মনের ভাবনাচিন্তার সাথে বেশি মিলে। ছোট বয়সে যখনই যা কিছু আমাদেরকে মুগ্ধ করতো, আমরা তা-ই হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। চেষ্টা করতাম।

ফিজিক্স যেমন নিয়মে চলে, রাজনীতিও তেমন নিয়মে চলে। গেইম থিওরির বাইরে এখানে কোনো কথা নাই। যা কিছু ঘটে তা সুনির্দিষ্ট তাত্ত্বিক নিয়মেই ঘটে। ব্যতিক্রম এখানে অসম্ভব। কোথাও যদি কোনো ‘ব্যতিক্রম’ হয় তা আসলে হয় ঊর্ধতন বা বৃহত্তর কোনো নিয়ম বা নীতির কারণে। তাই, রাজনীতি করার আগে সঠিক রাজনৈতিক জ্ঞানলাভ জরুরী। তত্ত্বে যা সম্ভবপর তার জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু, তত্ত্ব যা এলাউ করে না তার জন্য চেষ্টা করা বৃথা। আম গাছে ফল নাও ধরতে পারে। ধরলে সেটা আম-ই হবে। কাঁঠাল হবে না।

আরেকটা ছোট দল বা উদ্যোগের কথা বলে শেষ করবো। তার আগে জামায়াতে ইসলামী নিয়ে একটা কথা বলা জরুরী মনে করছি।

ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম হলো একটা এক্সট্রাঅর্ডিনারিলি ফুললি লোডেড আদর্শবাদ ও জীবনযাপন পদ্ধতি। এক কথায় বললে, ইসলামী আন্দোলন হলো ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ইসলামী আন্দোলনের যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং জামায়াতে ইসলামী ধারণ করে তা মাওলানা মওদূদী থেকে এসেছে। এর ভালোমন্দ নিয়ে আলোচনা অনেক হয়েছে। আমিও অনেক করেছি। তাই সেই আলোচনা থাক। আজ শুধু এ’টুকুই আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জামায়াত যে ধরনের টোটাল আইডিওলজির কথা বলে, জামায়াতের যে সাংগঠনিক কাঠামো, তাতে করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক প্রসেসে তাদের ক্ষমতার রাজনীতি করাটা স্পষ্ট গোঁজামিল ছাড়া কিছু নয়।

একই সাথে আদর্শবাদের দাবী আর গণমানুষের বস্তুগত চাহিদাসমূহকে পূরণ করা অসম্ভব। মানুষ স্বভাবতই সুবিধা পেতে চায়। একইসাথে তারা আদর্শ ও নীতিনৈতিকতার ফ্যান্টাসিকেও বিসর্জন দিতে নারাজ। তাই কাজের কাজ হচ্ছে আদর্শের বলয়ের মধ্যে থেকে তাদের প্রাপ্য সুবিধাদির জন্য কাজ করা। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির এটাই মূলবৈশিষ্ট্য। এটাই পলিটিক্যাল ফিজিক্স।

সেই জন্য জামায়াতের মতো একটা ক্যাডারভিত্তিক দলের পক্ষে ক্ষমতার রাজনীতি করা অসম্ভব। হ্যাঁ, অগণতান্ত্রিক পন্থায় একটা আদর্শবাদী দল ক্ষমতায় যেতে পারে। টিকেও থাকতে পারে, বাট ইন সাম অটোক্রেটিক ওয়েজ। সেটার ভালোমন্দ ভিন্ন আলোচনার বিষয়। পলিটিক্যাল ফিজিক্সের সূত্র বলে, ক্যাডারভিত্তিক সাংগঠনিক কাঠামোর আদর্শবাদী দল, এমন দলের ক্ষমতার রাজনীতি কখনো সফল হবার নয়। অতীতেও হয় নাই। ভবিষ্যতেও হবে না। আপনার জানা মতে কোথাও কি হয়েছে?

তাহলে কি আইডিওলজিক্যাল পলিটিক্সের দরকার নাই?

অবশ্যই আছে। বরং আইডিওলজিক্যাল পলিটিক্স হলো পাওয়ার পলিটিক্সের ভিত্তি। আইডিওলজিক্যাল পলিটিক্স থাকতেই হবে। এটি সমমনা পাওয়ার পলিটিক্সকে ফাউন্ডেশনাল সাপোর্ট দেয়। আইডিওলজিক্যাল পলিটিক্স থাকলেই কেবল পাওয়ার পলিটিক্স ঠিকঠাক মতো কাজ করে। যেমন, জামায়াতের ইসলামীর মতো চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সাপোর্টে বিএনপি’র মতো মধ্যপন্থী দক্ষিণপন্থানুসারী দল এ’পর্যন্ত ফাংশান করতে পেরেছি। একইভাবে, সিপিবি’র মতো চরম বামপন্থী দলগুলোর ছত্রছায়াতে থেকে আওয়ামী লীগের মতো মধ্যবাম ধারার ক্ষমতাপন্থী দল এ’পর্যন্ত সাকসেসফুলি ফাংশান করতে পেরেছে। এই সিনারিও’র নরম্যাটিভ আসপেক্ট নিয়ে এখানে আমি কিছু বলছি না।

বরং, পুরো বিষয়টাকে আমি অবজেক্টিভ অ্যান্ড ফাংশনাল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বিশ্লেষণ করছি।

রাজনীতি হলো গেইম থিওরির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এখানে রুলের বাইরে কিছুই ঘটে না। যারা রাজনীতি করছেন বা করতে চান, সফল হতে হলে আপনাকে রাজনীতির মৌলিক সূত্রগুলো জানতে হবে। শুধু তাত্ত্বিকভাবে জানলেই হবে না, ন্যূনতম দক্ষতার ভিত্তিতে সেগুলোকে রপ্তও করতে হবে।

খেলার মধ্যে যেমন একেকজন একেক পজিশনে থাকে, খেলে, তেমনি করে রাজনীতির খেলাতেও পজিশনিং, টাইমিং, কোঅপারেশন এবং স্ট্রাইকিং, এসব খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যদি গোল দাতা হতে চান, সে খেলায় জয়লাভ অসম্ভব।

দুনিয়ার ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোথাও এমন হয় নাই, আদর্শবাদী দল লিবারেল ডেমোক্রেসির ফ্রেমে ক্ষমতায় গেছে। হ্যাঁ, গেছে। কিংবা যেতে পারে বিশেষ কোনো পলিটিক্যাল ক্রাইসিস বা ভ্যাকুয়ামের পরিণতিতে। যেমন, হিটলারের নাজি পার্টি। সেই ইতিহাস অর্থাৎ ক্ষমতায় গিয়ে তারা কী করেছে এবং কীভাবে টিকে থেকেছে তা আমরা জানি। গণতান্ত্রিক দল ক্ষমতায় গিয়ে সর্বাত্মকবাদী হয়ে উঠাটা accidental তথা হতে পারে টাইপের ব্যাপার। কিন্তু ক্যাডারভিত্তিক আদর্শবাদী দল একবার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সর্বাত্মকবাদী হয়ে পড়াটা necessary তথা অনিবার্য ঘটনা। এমনটি না হওয়ার কোনো কারণ নাই।

জামায়াতের মধ্যে থিংক ট্যাঙ্ক আছে কিনা, থাকলেও তাদের কথা জামায়াত শোনে কিনা, আমি জানি না। জামায়াত নিয়ে আমি শঙ্কিত।

এবার আসি অন্যতম জামায়াত অফশুট ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ তথা আপ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। তারা কী করবে, সেটা তারাই ভালো জানেন। তারা কি একটা এনসিপি হবে? অথবা, এবি পার্টি? হু নোজ?

‘আপ বাংলাদেশে’র একজন শুভাকাঙক্ষী হিসেবে আমি চাই তারা সেন্টার রাইট পজিশনে থেকে পাওয়ার পলিটিক্স করুক। এখনই নয়। আরো পরে। এর বড় কারণ হলো তাদের কোনো বিগ ফিগার নাই। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিশেষ পজিশনে অলরেডি থাকা কোনো টাওয়ারিং ফিগার নেতৃত্ব না দিলে হঠাৎ করে সিগনিফিক্যান্ট কিছু করা কঠিন। কালেক্টিভ লিডারশীপের কোনো দলের পথচলা হতে হয় খুব সতর্ক ও প্রত্যয়ী। তাই এখনই কোনো বিগ জাম্প না দিয়ে আপ’এর উচিত নিজেদের ভিতরে এবং বাইরে ইমেজকে গুছিয়ে নেয়া।

রাইটিস্ট পলিটিক্সে জামায়াত যে ভুল করছে সেরকম ভুল আপ’ও করুক, এটি চাই না।

জামায়াতের সরল অংক হলো, বিএনপিকে দুর্বল করতে পারলে সেই জায়গায় তারা উঠে আসবে। অংকটা অর্ধেক কষা হয়েছে। ইটস আ হাফ বেইকড কেক। ডানপন্থী রাজনীতির প্রধান শক্তি বিএনপি। বিএনপি দুর্বল হলে সেই শূন্যস্থানে জামায়াত আসবে, এটি হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, প্রধান ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতার কারণে বামপন্থী রাজনীতি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশপন্থার রাজনীতি দুর্বল হওয়ার মাধ্যমে ভারতপন্থার রাজনীতি সুযোগ পাচ্ছে। সমকালীন বাংলাদেশে বরং এটাই ঘটছে। বিএনপি’র দুর্বলতার সুযোগে বাম ঘরানার লোকজন আপার হ্যান্ড নিচ্ছে। জামায়াত কর্তৃক বিএনপি বিরোধিতার কারণে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গেইম থিওরির অংশ prisoner’s dilemma’র সূত্রানুসারে, দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল বা প্লাটফর্মগুলোর উচিত বিএনপির মতো পার্টিকে লিডিংয়ে রেখে তাকে ফ্রম উইদিন মোকাবেলা করা। যেসব শক্তি বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছে, সে সব শক্তি বিএনপি’র চেয়েও বেশি করে অর্জন করা। ক্যারিসম্যাটিক লিডার তৈরী করা। এন্টি-ইন্ডিয়ান পলিসিকে প্রাধান্য দেয়া। উগ্রবাম এবং মধ্যবামপন্থী শক্তিগুলোকে মাইরের উপর রাখা। মাইর মানে পলিটিক্যাল মাইর। কেউ আবার ভাইবেন না, প্রফেসর সাহেব মারপিটের কথা বলছেন। তবে, হ্যাঁ, মারপিট করতে পারাও অন্যতম রাজনৈতিক পুঁজি।

শুধু পরিষ্কার কাপড় পরে টক-শো করা লোকজন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনো ভালো করবে না। সব সেক্টরেই আপনার লোক থাকতে হবে।

আপ বাংলাদেশের উচিত বামপন্থীদের কাছ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ইসলামপন্থী তরুণদের দল হিসেবে অর্গানিক গ্রোথের ওপর নজর দেয়া। বামরা তাদের কালচারাল, মিডিয়া এবং ইন্টেলেকচুয়াল সাপোর্টের বিনিময়ে আপনাদের পলিটিক্সটাকেই নাই করে দিবে। কিছু কিছু এলিগেশান দিনশেষে ক্যাপিটাল হিসেবে কাজ করে। তাই সবার কাছে ভালো হওয়া বিপদজনক। আপে’র উচিত জামায়াত আর বিএনপির কাছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত না হয়ে তাদের সহযোগীর ভূমিকাপালন করা। এক্স-শিবির ফোরাম হিসেবে পরিচিত হওয়া খারাপ কিছু নয়। শিবির অলরেডি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। এখন সময় এসেছে এটাকে ক্যাশ করার।

আমি বুঝি না, অর্ধশত বছরের পুরনো একটা ছাত্র সংগঠনের এত এত লোকজন কেন একটা দেশের নেতৃত্ব দিতে পারবে না? কীসে তাদের কমতি? কী তাদের ঘাটতি?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *