গত সপ্তাহে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম শীর্ষ জামায়াত নেতার সাথে কথা বলার পর হতে এক ধরনের বিষন্নতায় ভুগছি! মনে হলো, দায়িত্বশীলদের সাথে কর্মীদের মন-মানসিকতায় ব্যাপক ফারাক। সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনায় তাঁরা এখনও কয়েক যুগ পিছিয়ে আছেন।

আলোচনার সূত্রপাত: ফেসবুকে-টিভিতে অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতার ভয়াবহ বিস্তারের বিরুদ্ধে উনার একটা স্ট্যাটাসে আমার করা মন্তব্য নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হলো। উনি অকপটে বললেন যে, উনার তরফ হতে অন্য একজন এটি দেখে থাকেন। অন্য কাউকে দিয়ে নিজের একাউন্ট চালানোর নৈতিক সমস্যার কথা বলে আলোচনাকে ভারাক্রান্ত না করে বিদ্যমান রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক বিকল্প গড়ে উঠার সমস্যা নিয়ে কিছু বললাম। এ ব্যাপারে আলোচনা তেমন জমলো না।

সদস্যরা কেন রুকন হয় না: ‘বেশি কথা বলা’ প্রাক্তন দায়িত্বশীলদের সামলানোর যে কায়দা জামায়াত দায়িত্বশীলগণ সাধারণত অনুসরণ করেন, উনি এবার সেদিকে অর্থাৎ রুকন না হওয়ার কারণ উদঘাটনের দিকে অগ্রসর হলেন। আমি অকপটে নিজের দায়িত্ব স্বীকার করে উনার জানামতো কয়েকজন অতীব যোগ্য প্রাক্তন দায়িত্বশীলের নাম বললাম যারা এখনও রুকন হন নাই। প্রসংগক্রমে অত্যন্ত মেধাবী, ত্যাগী ও যোগ্য ছাত্র দায়িত্বশীলদের বৃহ্ত্তর অংশ পেশাগত জীবনে ইসলামী আন্দোলনে তাদের পটেনশিয়ালিটি নিয়ে অগ্রসর হয়ে দায়িত্বপালন না করার বিষয়টির উপর আলোকপাত করার জন্য উনাকে বললেও তিনি পাশ কাটিয়ে অন্য প্রসংগে চলে গেলেন।

পরবর্তী প্রায় একঘণ্টা যত বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বলেছি তিনি কোনো বিষয়েই সুস্পষ্ট কিছু বলেন নাই, কেবলমাত্র একটি বিষয়ে ছাড়া। সেটি পরে বলছি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ কর্তৃক রাজনৈতিক সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করা: যাহোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী শিক্ষকগণ ছাড়া কেউ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের শাখা হিসাবে প্রকাশ্যে কাজ করে না। বিশেষ করে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামীপন্থীরা বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে এবং বিএনপির লোকজন জিয়া পরিষদের প্লাটফর্মে কাজ করেন। এমনকি জামায়াত করেন এমন অন্যান্য পেশাজীবীরাও ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে নিজ নিজ এরিয়াতে কাজ করেন। এ বিষয়ে উনাকে বলার পর উনি মোস্ট ট্রাডিশনাল ওয়েতে আদর্শ শিক্ষক পরিষদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ ইত্যাদির সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা বলতে থাকলেন। ব্যক্তিগতভাবে সবাই অত্যন্ত মেধাবী ও ভালো গবেষক হওয়া সত্ত্বেও সংগঠন হিসাবে বা সাংগঠনিকভাবে বা সামষ্টিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ইসলাম নিয়ে কোনো গবেষণা অনুষ্ঠান বা গবেষনাকর্ম না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ নিয়ে উনার মধ্যে কোনো বিশেষ আগ্রহ বা ভাবান্তর লক্ষ্য করা যায়নি।

বিকেন্দ্রীকৃত সংগঠনকাঠামো: পার্শ্ব/সহযোগী সংগঠনসমূহের বিশেষ করে পেশাজীবীদের সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য আমি সেগুলোতে নেতৃত্ব নাযিল করাকে এক নম্বরের সমস্যা হিসাবে বললাম। মনে হলো, বিষয়টা তিনি অনুধাবন করেছেন (যদিও জানি, কাজের কাজ কিছু হবে না)। এ পর্যায়ে এসে উনাকে জামায়াতের এককেন্দ্রিক (জায়ান্ট ট্রি মডেলের) সাংগঠনিক কাঠামোর সমস্যা নিয়ে কিছু বললাম। প্রসংগক্রমে বহুত্ববাদী ও বিকেন্দ্রীকৃত সাংগঠনিক কাঠামোর গঠন, কার্যকারিতা ও উপযোগিতা নিয়েও বলার চেষ্টা করলাম।

এই সূত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে জামায়াতের করুণ দশার জন্য অতি রাজনীতির (over political growth) বিষয়ে আমি যা বললাম তা উনি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন বলে মনে হলো না। ইসলামী আন্দোলন সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইকন হিসাবে গড়ে উঠার জন্য বিদ্যমান আমিত্ব-ত্যাগ নীতির (submissive sacrificing tendency) পরিবর্তে আত্ম-উপস্থাপনা নীতির (self-branding policy) অপরিহার্যতা সম্পর্কে বললাম। এটিও উনি কেবল শুনলেন। যার ফলে ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সিস্টেমের’ প্রসংগ তুলে পরিবেশকে আরো ভারী করতে চাইলাম না।

৭১ ইস্যু: জামায়াত কর্তৃক ১৯৭১ ইস্যুতে রাখঢাক পলিসি এডপ্ট করার প্রসংগে উনাকে বললাম– প্রফেসর গোলাম আযম গ্রেফতারের আগের দিন সাংবাদিকদেরকে ডেকে যে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তা যদি সবাই মিলে প্রথম থেকে করতো তাহলে হয়তোবা ইস্যুটা অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। এসব উনি কেবলই শুনলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাংগঠনিক অচলাবস্থা: নানা কথার ফাঁকে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সংগঠনসমূহ তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ কর্তৃক প্রয়োজনীয় সময় দিতে না পারার বিষয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন। এবং এ ক্ষেত্রে মোক্ষম এক্সকিউজ হিসাবে বিদ্যমান নিরাপত্তা সমস্যার কথা বললেন। আমি বললাম, আপনারা কেন এসব ধরে রেখেছেন? উদাহরণ হিসাবে বললাম, আমার কর্মক্ষেত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগঠন দূরবর্তী চট্টগ্রাম মহানগরীর অনেকগুলো সাংগঠনিক ওয়ার্ডের একটি। ক্যাম্পাস হতে শহরে আসা-যাওয়াতে যেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা ব্যয় হয়, সেখানে আপনাদের প্রতিটা গড়পরতা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের দায়িত্বশীলদের ছোটাছুটি করতে হয়! আমি উনাকে আরও বললাম যে, ছাত্রীদের সংগঠন শহরের সংগঠনের একটি শাখা মাত্র। অথচ, সংশ্লিষ্ট এলাকার অপরাপর সবগুলো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বের চাইতে একটা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় গুরুত্ব অনেক বেশি। এসব বিষয়ে তিনি তেমন সারবত্তাসম্পন্ন কোনো কথা বলেননি।

বিকল্প প্লাটফরম: শেষে উঠে যাওয়ার সময়ে জেল থেকে কামারুজ্জামান ভাইয়ের লেখা চিঠি নিয়ে জামায়াত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই কেন– এ বিষয়ে তিনি যা বললেন তা রীতিমতো থ খেয়ে যাওয়ার মতো (stunning) ব্যাপার। তিনি যা বললেন তার সারমর্ম নিম্নরূপ:

জামায়াত অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখেছে, কোনো বিকল্প প্লাটফরম জামায়াতের তরফ হতে করা হলে তা আত্মঘাতী হবে। উনার ভাষায়, ‘… তখন আর কেউ জামায়াত করবে না। আপনিও করবেন না, আপনিও না।’ আমি বললাম, এভাবেই তাহলে চলবে? উনি বললেন,  দেখা যাক, খেলাটা আগে শেষ হোক

কর্মীদের কথা শোনার জন্য দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতা প্রসংগে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ: ১৯৮৬ সালের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনের মাঠে এক বিকাল বেলায় আমরা তিনজন কর্মীকে নিয়ে (কোনো সাথী না থাকায়) একজন সদস্য এসে প্রোগ্রাম নিচ্ছিলেন। কোনো বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনা আর একটু বাড়িয়ে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল আমাদের এক সহযোগী কর্মীকে পিড়াপিড়ি করছিলেন। তখন আমি বললাম– নেন না, এসব তো শুধু নেয়ার জন্যই নেয়া। এ কথা শুনে উক্ত সহজ-সরল সদস্য ভাইটি খুব আহত হয়ে এমন মন্তব্য করার কারণ জানতে চাইলেন। তখন আমি বললাম– দেখেন, সংগঠন নিয়ে আমাদের অনেক কথা আছে। ইত্যাদি। তিনি তৎক্ষণাৎ প্রোগ্রামটি বাতিল করে উঠে পড়লেন। বললেন, আমি এখনই ‘মৌসুমী’তে যাচ্ছি। আগামীকাল আপনারা মক্কী মসজিদে ফজরের নামাজ পড়বেন। মহানগরী সভাপতি কিম্বা সেক্রেটারির যে কোনো একজনকে যেভাবেই হোক না কেন আমি নিয়ে আসবো। আপনাদের সাথে কথা হবে।

সংগঠনের বিষয়ে আমরা খুব সম্ভবত ২১টি প্রশ্ন তৈরি করলাম। ফজরের পরে দেখা গেল তৎকালীন মহানগরী সভাপতিকে নিয়ে তিনি এসেছেন। মহানগরীর উক্ত সভাপতি বললেন, আমরা তিনজন কর্মী সংখ্যায় নগণ্য হলেও আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা উনার একান্ত কর্তব্য। তাই তিনি এসেছেন। প্রায় বেলা এগারোটা পর্যন্ত মসজিদের বারান্দায় বসে কথা হলো। শুধুমাত্র মেহমানই আমাদের সাথে কথা বললেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে ঢাকা মহানগরীর সভাপতি হিসাবে কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন আয়োজন তদারকী করতে এসে আমাকে সেখানে দেখে তিনি অভিভূত হয়ে পড়লেন। আমাকে জড়িয়ে ধরলেন! আফসোস, কর্মীদের কথা শোনার মতো সময় বর্তমান দায়িত্বশীলদের নাই। উনারা আজ বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। প্রোগ্রামে প্রোগ্রামে উনাদের দিন কাটে। সংগঠন চলে যান্ত্রিক নিয়মে।

দায়িত্বশীলদের উপর কর্মীদের আস্থার সংকট: আমার আলাপে, উক্ত অন্যতম শীর্ষ জামায়াত দায়িত্বশীলকে বললাম, দেখুন, ছাত্রজীবনে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা ছিল। এর কারণ এই নয় যে, আমরা বয়সে নবীন হওয়ায় কিছুটা অবুঝ এবং অনেকটা আবেগী ছিলাম। বরং তাঁরা ছিলেন দুনিয়াবিমুখ ও অতি রাজনৈতিকতা হতে মুক্ত। কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। দেখেন, আমাদের যে দায়িত্বশীল সদস্য মহানগরীর তৎকালীন সভাপতিকে জরুরিভাবে ডেকে নিয়ে আসলেন, চাইলে তিনি নিজেই আমাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে নিতে পারতেন। তিনি চবিতে সায়েন্স ফ্যাকল্টির একটি সাবজেক্টে পড়তেন। এখন একটি সরকারী কলেজের অধ্যাপক। কিন্তু তিনি মনে করেছেন, চট্টগ্রামের সবচেয়ে অভিজাত এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অত্যন্ত সিনসিয়ার এই তিনজন কর্মীর পটেনশিয়ালিটি আছে। উনাদের সামলানো বোধহয় আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

করণীয়: এখন দেখি, যে কোনো দায়িত্বশীলই যে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে উদগ্রীব। নিজের অপারগতার কথা বলে সময় নেয়া বা ঊর্ধ্বতন কাউকে রেফার করে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রচলন এখন প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনে দেখি না। রেডিমেড উত্তর দিয়ে ইনস্ট্যান্ট নুডুলসের মতো রেডিমেড সাফল্য হয়তো পাওয়া সম্ভব। কিন্তু মানুষের মন জয় করতে হলে আন্তরিক হতে হবে। কৌশল হিসাবে নয়, রিয়ালাইজেশানের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ভুল স্বীকার করতে হবে। খবরদারির মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ব্যক্তি বা সংগঠন বা শাখা বিশেষের দুর্বলতার অজুহাতে সেটিকে কব্জা করে না রেখে ছেড়ে দিতে হবে। স্বাধীনভাবে স্বীয় বুঝজ্ঞান মোতাবেক চলতে দিতে হবে।

পরিশিষ্ট

জামায়াতের সংস্কার সংক্রান্ত ফোর পয়েন্টস: প্রিয় দায়িত্বশীলের সাথে আমার এই সাক্ষাৎকার আমাকে হতাশ করেছে। ব্লগের বিভিন্ন লেখায় গত তিন-চার বছর হতে আমি যে ফোর পয়েন্টের কথা বলেছি তা আবার নতুন করে অনুধাবন করলাম।

(১) জামায়াত স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো মৌলিক পরিবর্তনকে গ্রহণ করবে না। অতএব, রিফর্ম ফ্রম উইদিন অসম্ভব।

(২) জামায়াতের বিকল্প কিছু করার মতো নেতৃত্ব বা ব্যক্তিত্ব ময়দানে অনুপস্থিত।

(৩) দেখি না কী হয়, দেখি অন্যরা কী করে বা কী হয় – এই টাইপের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ কোরআন-হাদীসে নাই। অতএব,

(৪) ইতোমধ্যে কোমর বেধে কনসেপ্ট বিল্ডআপের কাজ করতে হবে। এটি নতুন ধারার উৎপত্তি বা প্রচলিত ধারার সংশোধন বা উভয়টির জন্য ‘স্পনিং গ্রাউন্ড’ বা ideological hub হিসাবে ভূমিকা পালন করবে।

ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Masuk Pathan: I imagine a turning point would be made now a days by who are the Islamic thinkers specially from the coalition of university teachers and field the browsing potential Islamized youth who also from tertiary level academic and research institutions as hub…then others will be move later. Sir, you can make a triggering to form a lighthouse by your equi-minded well civilized activists to perceive the beauty and capability of Islam among the mind and soul of Bangladeshi people scope exposed. The youth of the activists are now vigorously high to adornment the country.

Mobashwer Ahmed Noman: এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠার পরও (আল্লাহ তৌফিক দিক) যদি জামায়াত অতি রাজনৈতিকতার দিক থেকে ফিরে না আসে, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সংগঠনকে নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু না করে, ইজতিহাদের পথ রুদ্ধ রাখে, তবে বুঝব– জামায়াতকে দিয়ে সময়ের পিছনে দৌড়ানোই যাবে শুধু। সময়ের আগে তো নয়ই, সময়ের সাথেও চলা অসম্ভব।

Salam Azadi: ভাই আমিও পড়েছি বিপদে। কিছু কথা বলার কারণে একজন শীর্ষনেতা তো বলেই দিয়েছেন, “আপনারা ভাবতে থাকেন, আর আমরা কাজ করে যাই।”

Shahidullah Kazi: গত কয় বছরে জামাত অর্থনৈতিকভাবে যে অবস্থান তৈরি করেছে, বুদ্ধিভিক্তিকভাবে সে অবস্থান তৈরি করতে পারে নাই– এটা যে কেউই স্বীকার করবে। নতুন যে কোনো চিন্তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জামাত এপ্রিশিয়েট করে না। মনে হয় এ কারণেই আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ জামাতের মধ্যে থেকে কোনো আন্তজাতিক মানের স্কলার উঠে আসেনি । বাংলাদেশের আদর্শবিহীন রাজনীতির সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আজ জামাত যতটা না সার্বজনীন আদর্শিক আন্দোলন, তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক। তবুও অনেকেই বলে, যাইহোক অপর রাজনৈতিক সংগঠনের থেকে আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার তো ভালো! এই প্রবোধ আর কয় দিন?

Farid A Reza: যারা জানতে চায় না, শুধু জানাতে চায় তাদের সাথে কথা বলা সময়ের অপচয়। এর ফলে শুধু সম্পর্ক নষ্ট হয়, কোনো লাভ হয় না। যেচে পরামর্শ দিতে নেই, পরামর্শ গ্রহণের মানসিকতা থাকলেই পরামর্শ দেয়া উচিত।

Rakib Hossain: আপনার এই সমালোচনা প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ল। বিগত দুই বছর আগে আইআইইউসির একটি অনুষ্ঠানে আমি এক স্যারকে বিশেষ অতিথি হিসেবে নিয়ে যাই। উক্ত অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আতিথেয়তার ক্ষণ আসলে কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ সম্মানিত অথিতিদের যথেষ্ট সমাদার করা হয়। এবং ঐ সমাদর তাদের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাদের ভোজনের সময় হলে আমাকে কক্ষের বাহিরে যেতে হয় এবং খাওয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দরজার বাহিরে অবস্থান করতে হয় (ইসলামের সুমহান আলো না থাকলেও সামাজিকতার খাতিরেও আমি এই কাজ করতাম না)। ঐ সময় বার বারই আমার রাসূলের (সা) আদর্শের কথা মনে পড়ে, আর আমি বার বারই চিন্তা করতে থাকি– এই আমার নেতা! যাদের বিষয়ে আমাদের বরাবরই ধারণা ছিল সে নিজের মুখের খাবার অন্যের মুখে তুলে দিবে, নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়াবে। হায় আফসোস! বাস্তবতা বড়ই ভিন্ন জিনিস। না হলে অনেক বড় বড় নেতা, যারা সারাজীবন ‘শপথ’ ‘শপথ’ বলে আমাদের কান জ্বালাপালা করে দিলেন, তাদের অনেককেই আজ দেখি জামায়েতে ইসলামী তো দূরের কথা, ইসলামী আন্দোলন যে ফরয সে বিষয়টি ভুলে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচবেন বলে মনে হয়।

Sayed Mahmud: সময় এসেছে জামায়াতে ইসলামীকে ঢেলে সাজানোর, জামায়াত শিবিরের নীতির্নিধারক থেকে শুরু করে অনেক কর্মী-সমর্থকও তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন জামায়াতের বর্তমান এবিলিটি নিয়ে, যেটা আসলেই মরিচিকার মতো। জামায়াতের যে জনশক্তি আছে তা দিয়ে র্বতমানের চেয়েও আরো বেশি সফল হওয়া উচিত ছিল। কেননা, জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্ব ১০০ পাসেন্ট শিক্ষিত ও ৮০ ভাগ চরিত্রবান ও সমাজিক কলংকহীন। তারপরও জামায়াত কেমন যেন নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো তাদের কার্যাদি পরিচালনা করছে। যা মোটেও কাম্য নয়, অন্তত জামায়াতের মতো একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শিক দলের কাছ থেকে। তারাও ট্র্যাডিশনাল রাজনৈতিক দল হয়ে যাচ্ছে। শিবিরের অনেক দায়িত্বশীল আছে, যাদের কাছে তোষামোদীদের কদর অন্য যে কারোর চেয়ে বেশি। সমালোচনা শোনা বা সহ্য করার এবিলিটি তো টোটালি নেই বললেই চলে। ‘সমালোচনাহীন গোলাপটিও পরিপূর্ণ নয়’– এটি অনেক জামায়াত-শিবির নেতারা আজকে জানেনই না। যারা জানেন তারাও তা ভুলে যাচ্ছেন। তাদের এক্টিভিটি দেখে তাই মনে হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের, সৌন্দর্যকে আরো বেশি খুঁতহীন করার প্রয়োজনেই সমালোচকদের প্রশ্রয় দেয়া উচিত।

Mohammad Mozammel Hoque:ইসলামী আন্দোলনে হীনম্মন্যতাবোধের সুযোগ নেই” – This article is written by Moulana Motiur Rahman Nizami, so far, I have been confirmed. It shows that Jamaat will not change itself from its classical position.

Mohammad Fakhrul Islam: জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতি হতে বিলীন হয়ে যাবে। বড়জোর ধর্মীয় উপদল হিসেবে জামায়াত এই শতাব্দী পর্যন্ত টিকে থাকবে ।

Mohammad Mozammel Hoque: আমার ধারণায় জামায়াত রাজনীতিসহ অন্যান্য ময়দানে অন্যতম প্রভাবক হিসাবে টিকে থাকবে। তবে দ্বীন কায়েম করা বলতে যা বোঝায়, তা তাদের দ্বারা আদেৌ সম্ভব হবে না। অন্য কেউ যে পারবে, তেমনও দেখি না, যদি না আল্লাহ চান। ইকামতে দ্বীনের শ্লোগান দিয়ে জামায়াত কার্যত খেদমতে দ্বীনে পর্যবসিত হয়েছে।

Abm Mohiuddin: স্যার, আমি আপনাকে চিনি। আপনিও হয়ত আমাকে চিনে থাকবেন। এই সময়ে আপনার দার্শনিক চিন্তাগুলো অন্য প্লাটফর্মে কাজে লাগান। আপনার এইসব জনশক্তির মেজাজ খারাপ করছে। প্লিজ চুপ যান।

www.facebook.com/abm.mohiuddin1/posts/10202173815733569

Mohammad Mozammel Hoque: Perhaps I know you. Have I tagged someone who did not like it? Is my fb wall an ‘organizational platform’? What do you mean by ‘চুপ যান।’? If you or anyone differ with me, anyone has this right, no problem. Already someone named Abdullah Russel has written an elaborate counter of this note and I have sent it to a few close persons. Anyway, may Allah forgive and bless all of us!

Mazharul Islam: this organization is passing a tough critical situation, so this is not the proper time for argumentation, we all should pray to Allah, the almighty to show us the perfect way to protect Islam and its followers.

Mohammad Mozammel Hoque: (১) ধৈর্যধারণ করা, (২) আত্মসমালোচনা করা, (৩) কর্মকৌশল পরিবর্তন করা ও (৪) চলমান মোকাবিলায় অটল থাকা – বিপদ ও মুসীবতের সময় এই কাজগুলো করতে হয়। ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক যে পর্যায়েই হোক না কেন, এই চার ধরনের আমল সর্বদাই করণীয়। অবশ্য, সবাই একযোগে ব্যক্তিগতভাবে ও একই সময়ে উপর্যুক্ত সবগুলো কাজ করে না, করতে পারে না। তাই না?

Ala Uddin: Dear sir, thanks for pen throwing in contemporary issues. I have read all your post and comments. I am agreed with your opinion. you are always seeking something different which we have observed from varsity life. In this moment our moral duty to give important advice to our leaders. we don’t expect any divide opinion for this crucial time. so I am fully agreed with Mazhar’s (Ex-solder CU campus) opinion. Finally, I earnestly request you, please advise our brothers what steps should be taken in this crucial time by your practical and dept knowledge.

Mohammad Mozammel Hoque: এই নাজুক সময়ের কথা বাদ দিন, জামায়াত– হোক তা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, বা চট্টগ্রাম মহানগরী বা কেন্দ্র – কখনো কোনো বিষয়ে সুষ্ঠু পর্যালোচনা বা উন্মুক্ত-মন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেনি। সব সময় জরুরতের কথা বলে particularistic approach-এ one-to-one স্ট্র্যাটেজিতে (তাৎক্ষণিক ধরনের) সিদ্ধান্ত নিয়েছে। holistically কোনো বিষয়কে বিবেচনা (review) করেনি। অন্তত চবি জামায়াত সম্পর্কে আমি দায়িত্ব নিয়ে এ কথা বলতে পারি। এসব বিষয়ে এ ধরনের উন্মুক্ত প্লাটফরমে এর চেয়ে বেশি কথা বলা যাচ্ছে না।

জামায়াতের রেজিমেন্টেডনেস যতটা সন্দেহাতীত, এর সাংগঠনিক স্বচ্ছতা ততটাই প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ মহানগরী জামায়াতের বিভিন্ন নৈমত্তিক হুকুম পালন ও সাদা দল নামক এক ‘ব্ল্যাক হোলের’ পিছনে ঘুরা ছাড়া চলমান জাতীয় সংকট তথা পরিস্থিতি নিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নিজস্ব কোনো পর্যালোচনা, অভিমত গঠন ও পেশ করেছে কি? আমি আবারো দায়িত্ব নিয়ে বলছি, না, তারা তা করেনি। জামায়াত তো থিংকট্যাঙ্ক সিস্টেমেই বিশ্বাস করে না (অথচ, কোরআন শরীফে এ ব্যাপারে ইতিবাচক নির্দেশনা রয়েছে)। জাতীয় দুর্যোগের এ দিনে এসব কথা বলতে চাইনি। আপনি প্রসংগ তুলেছেন বিধায় কিছু বললাম।

Atiqur Rahman:

এই দুর্যোগে এই দুর্ভোগে আজ
জাগতেই হবে জাগতেই হবে তোমাকে।
জীবনের এই মরু বিয়া বানে
প্রাণ আনতেই হবে আনতেই হবে তোমাকে।
জড়তার দেশে দাও দাও হিন্দোল
বহাও বন্যা তৌহিদি হিল্লোল,
অমারাত্রির সকল কালিমা মুছে
সুর্য উঠাতেই হবে উঠাতেই হবে তোমাকে।
এখানে এখনও জাহেলি তমুদ্দুন
শিকড় গড়ার প্রয়াসে যে তৎপর,
সজাগ সান্ত্রী প্রস্তুতি নাও নাও
প্রতিটি শিকড় উপড়াতে পরপর।
কুফুরির ভিত ভাঙ্গার সময় হল
মরু সাইমুম আগুনের ঝড় তোলো,
কোরানের ডাকে বাতিলের ঝঙ্কার
শেষ করতেই হবে করতেই হবে তোমাকে।

Mohammad Mozammel Hoque: দুর্যোগ-দুর্ভোগের ‘মাসয়ালা’ কি? আমি যা বুঝেছি তা হলো: (১) ধৈর্যধারণ করা, (২) আত্মসমালোচনা করা, (৩) কর্মকৌশল পরিবর্তন করা ও (৪) চলমান মোকাবিলায় অটল থাকা। জরুরতের কথা বলে সবসময়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতে থাকা, আনুগত্যের কথা বলে পরামর্শকে এড়িয়ে যাওয়া, ডিসিসিভ বডি’র কথা বলে সর্বাত্মকবাদী কর্তৃত্বকে দৃঢ়তর করা – এসব সঠিক নয় বলে মনে করি। ইসলামী নেযাম একটি উন্মুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। এটি পরিষ্কার থাকা দরকার যে, I am with Islam, not Jamaat-e-Islam or anything else when it contradicts with Islam. so far it is consistent with the line of prophet Muhammad’s (pbuh) sunnah.

সংগঠন বিশেষের মৌলিক প্রপজিশানগুলোর রেফারেন্স বা সমর্থন ইসলামে থাকলেই চলবে না, দেখতে হবে, ইসলামে সামগ্রিকভাবে জিনিসগুলোর অবস্থা কী। অথেনটিসিটির সাথে কম্প্রিহেনসিভনেসকেও সমগুরুত্বে বিবেচনা করতে হবে। সত্যিকারভাবে বলতে কি, কোরআন-হাদীসের প্রেক্ষিতবিচ্ছিন্ন ভুল অর্থ প্রয়োগের কাজটি সব ইসলামী দল ও প্রতিষ্ঠানই কমবেশি করে থাকে। জামায়াতে ইসলামী এ কাজ তুলনামূলকভাবে কম করে। কিন্তু একেবারেই করে না, এমন নয়। সেসব ভিন্ন নোটে আলোচনার বিষয়।

নিজেকে বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী হিসাবে দেখতে চাই না। ভালো থাকুন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

Khandoker Zakaria Ahmed: আপনার লেখাটি ভালো করে পড়লাম। পুরানো অভিজ্ঞতাই উঠে এসেছে। আমার মনে হয় পরিবর্তন না হওয়ার পিছনে এই কারণগুলো থাকতে পারে:

১) সংগঠনের সাথে অনেকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা জড়িয়ে গেছে। এরা পরিবর্তনের পিছনে তাদের পতন দেখতে পায়।

২) নতুন কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না। সংগঠনের দীর্ঘদিনের লালিত পরিবেশ ও সংস্কৃতি নতুন পথ খোঁজার ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব তৈরি করেছে

৩) যারা নতুন কিছু করার চিন্তা করে, তারা পরিবর্তন চায়, কিন্তু তারা এতই দুর্বল যে ‘দুয়ার বন্ধ’ – এ কথা বলে চিৎকার করা ব্যতীত কাজের কাজ করার সাহস, শক্তি ও বুদ্ধি তাদের নেই (মন্তব্যকারী নিজেও হয়ত তাই)।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংস্কার, পরিবর্তন বা নতুন কিছু করার নানা ধরনের ফরমুলা অনেকেই বলছেন, কিন্তু একটির সাথে আরেকটির মিল নেই, অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী। এমতবস্থায় সম্মিলিত উদ্যোগের অভাব তীব্র। ফরমুলাগুলোকে একত্রিত ও যাচাই-বাছাই করে ন্যূনতম ঐক্য সৃষ্টির জন্য কোনো ভূমিকা কেউ নিচ্ছে না। ফলে জামাযাতকে আকৃষ্ট করার উপাদান তৈরি না হওয়ায় তারাও তাদের পলিসিতে দৃঢ়।

Mohammad Mozammel Hoque: “আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংস্কার, পরিবর্তন বা নতুন কিছু করার নানা ধরনের ফরমুলা অনেকেই বলছেন, কিন্তু একটির সাথে আরেকটির মিল নেই, অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী। এমতবস্থায় সম্মিলিত উদ্যোগের অভাব তীব্র।” আপনার সর্বশেষ এই পয়েন্টটির ব্যাপারে আমার কথা হলো:

একটা বহুত্ববাদী বিকেন্দ্রীকৃত সংগঠনব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।

এর মানে হলো যিনি যেখানে যে সংগঠনের সাথে যে পর্যায়ে জড়িত আছেন, তিনি সেখানে সে অবস্থাতেই থাকবেন। কেবলমাত্র কিছু কন্সেপ্টচুয়্যাল বিষয়ে তিনি অপরাপরদের সাথে মতৈক্য পোষণ করবেন। এটি এক ধরনের গণসংগঠন ধরনের ব্যাপার। গণসংগঠনের যে প্রচলিত ধারণা তাতে সংগঠন একটিই, যদিও সেটি ক্যাডার সিস্টেম নির্ভর নয়। এই প্রস্তাবিত সংগঠনব্যবস্থা গণসংগঠন ব্যবস্থার কাছাকাছি, হুবহু গণসংগঠন নয়। কারণ, প্লুরালিস্টিক ডিসেন্ট্রালাইজড অর্গানাইজেশন সিস্টেমে প্রত্যেকের নিজ নিজ সংগঠনে থেকে এর সদস্য হওয়ার বা এর সাথে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখার, এমনকি এতে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ থাকবে। মৌলিক ধারণাগত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় সুবিধা অনুসারে সংগঠন কায়েম করতে পারে। একটি ফুল নয় বরং চাই মঞ্জরী। একটি বৃহৎ বৃক্ষ নয়, চাই একটি বাগান। কেউ কারো হাত ধরবে না, প্রত্যেকেই দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে ‘আল্লাহর রজ্জু’।

সাংগঠনিক এককতার যে সেব ‘নস’ তা স্পিরিট এবং প্রশাসনিক দিক থেকে বিবেচনা করতে হবে। আদর্শনির্ভর সামাজিক আন্দোলনের জন্য দলীয় বা প্রশাসনিক এককত্ব বা unicity প্রযোজ্য নয়। যাহোক, এই বিশেষ ধরনের গণসংগঠন ব্যবস্থার আউটকাম হিসাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হওয়াটা স্বাভাবিক, যারা বিভিন্ন প্রায়োগিক বিষয়ে পরস্পরের সাথে ঐক্যমত বা দ্বিমত পোষণ করবে। এক পর্যায়ে এর কোনো অফশ্যুট এককভাবে বা জোটগতভাবে ক্ষমতায়ও যেতে পারে। পরবর্তীতে কোনো কারণে তাদের পতনকে শুধুমাত্র তাদেরই পতন হিসাবে দেখা হবে। ব্যক্তি বা দল বিশেষের জয়-পরাজয়কে প্রত্যক্ষভাবে কনসেপ্ট বা আইডিওলজি তথা ইসলামের জয় কিম্বা পরাজয় হিসাবে দেখা হবে না।

তাই, চলমান পরিস্থিতির উপর নজর রাখার বাইরে যে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিকে আপাতত এড়িয়ে কনসেপ্ট বিল্ডআপের কাজ করতে হবে। যারা ‘জামায়াতের সংস্কার চান’, অতএব, বুঝতেই পারছেন, আমি তাঁদের সাথে নাই। আমি আত্মশক্তি ও সম্ভাবনায় বিশ্বাসী। এ দেশে ইসলামিক মর্ডানিজমের শক্তিশালী ধারা প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর প্রতি কৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধাশীল। আমার অতীত সাংগঠনিক জীবনের ধারাবাহিকতা হিসাবে প্রচলিত ইসলামী আন্দোলন তথা জামায়াতের তাবৎ ভালো কাজে আমি আমৃত্যু সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণ করে যাবো। ব্যাপারটা সিম্পলি এতটুকু যে, ‘জামায়াতে ইসলামী = ইসলাম’ – কখনো আমি এমনটি মনে করিনি।

আমরা যদি শুধুমাত্র ইসলাম নিয়ে অগ্রসর হই, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ দেশের জনগণ সাড়া দিবে। কারণ, তারা ইসলামকে ভালোবাসে। অধ্যাপক গোলাম আযমের সাথে এতটুকু পর্যন্ত আমার মিল। এর পরবর্তী ধাপ (way out) হিসাবে তিনি (রাজনৈতিক) নেতৃত্ব পরিবর্তনের কথা বলেন। আমার মতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন অনেক পরের ধাপ। এ মুহূর্তে যেটি সবচেয়ে বেশি করণীয় তা হলো (১) ইসলাম সম্পর্কে লোকদের ধারণাগত বিভ্রান্তি দূর করার কাজ করা। (২) ইসলাম নিয়ে যারা কাজ করবেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতাকে অনুধাবন করে ইসলামের ক্লাসিক্যাল বিষয়গুলোকে প্রয়োগযোগ্য হিসাবে নিজেরা বুঝে নেয়া, অগ্রাধিকার বিবেচনাকে (hierarchy) সাজিয়ে নেয়া ও সমাজের কাছে পুরো বিষয়টিকে অকপটভাবে তুলে ধরা।

অনেক বড় মন্তব্য করে ফেললাম। ভালো থাকুন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

Abubakar Siddique: জামায়াতের ঘাটতি-ত্রুটি নেই– এমন কথা কি কোনো শীর্ষ নেতা বলেছেন? ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ আছেন কি? আমি যা বুঝি, তারচেয়ে বেশি বুঝে– এমন মানুষের সংখ্যা কি খুব কম? আমি যা গবেষণা করে পেলাম, তা কেন জামায়াত গ্রহণ করে না– এমন চিন্তা কোনো বুদ্ধিমান মানুষ করতে পারে? আমাকে ইসলামী আন্দোলন বেগবান-শক্তিশালী করার জন্যে গবেষণা করতে জামায়াত কি কোনো বাধা সৃষ্টি করেছে? আমি জামায়াতের ব্যর্থতা দেখে জামায়াতের চেয়ে উন্নত কোনো ইসলামী সংগঠন গঠন করতে গিয়ে জামায়াত দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েছি, নাকি জামায়াত হুমকি দিয়েছে? আমি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হলে আমার ঘরের সমস্যা মিডিয়ায় প্রকাশ করব? তাতে কার লাভ? বর্তমান পরিস্থিতির দাবী কী? এই বিতর্ক? যে ভাইটি জেলে, হাসপাতালে, বাড়ি-ঘরে থাকতে পারে না, শহীদ হয়েছে, পারলে তাদের পরিবারে খবর নিন। তাদের পাশে দাঁড়ান। না পারলে চুপ থেকে জালিমের শক্তি যোগান।

Mohammad Mozammel Hoque: ‘জামায়াতের ঘাটতি-ত্রুটি থাকতে পারবে না’– এমনটা কি কেউ বলেছে? উপরে Khandoker Zakaria Ahmed ভাইয়ের মন্তব্যে আমি যা বলেছি, তারমধ্যে এ অংশটুকু “যারা ‘জামায়াতের সংস্কার চান’, অতএব, বুঝতেই পারছেন, আমি তাঁদের সাথে নাই” আপনি হয়তোবা খেয়াল করেননি। বাধা সৃষ্টি করা বা না করার কথা আসছে না, একজন জামায়াত কর্মী হিসাবে পরামর্শ দেয়াটা আমার দায়িত্ব। পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের এখতিয়ার। সমস্যা হলো, ‘ফোরামে’ পরামর্শ দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আর কনসার্ন না হওয়ার যে ‘সাংগঠনিক রীতি’, তার সাথে আমি একমত নই। গোপনীয়তার এই তথাকথিত ‘সাংগঠনিক রীতিকে’ আমি কোরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করি।

পরামর্শ, পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় exclusiveness এবং openness – এতদুভয়ই প্রযোজ্য। তাৎক্ষণিক ও প্রায়োগিকভাবে সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য উপযুক্ত ফোরাম থাকতে হবে। সাথে সাথে একটা পর্যায়ে এক্সক্লুসিভ সিদ্ধান্তসমূহের ব্যাপারে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলার, প্রশ্ন করার, পরামর্শ দেয়ার অধিকার সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির সাধারণ যে কোনো সদস্যের থাকা উচিত বলে মনে করি। বিষয়টা একদৃষ্টিতে পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির মতো।

পরামর্শ দেয়ার পরে সে বিষয়টিকে ‘ভুলে বা চেপে যাওয়ার’ বিদ্যমান ‘সাংগঠনিক রীতি’ ইসলামের মতো প্রাগ্রসর আদর্শের অনুসারীদের মধ্যে এক ধরনের ‘মতামতের দাসত্বের’ (opinion-slavery) মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। (১) ছাত্রদের উন্মুক্ত-প্রশ্ন করার অধিকারবঞ্চিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, (২) ইসলামকে রাজনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতি ইত্যাদি সম্বলিত ‘ধর্ম’ হিসাবে উপস্থাপনের সূক্ষ্ম কিন্তু সুদূরপ্রসারী মাইন্ডসেট ও (৩) ইসলামী আন্দোলনের প্রচলিত ধারা প্রবর্তনকালীন অত্যন্ত প্রভাবশালী ও সফল সর্বাত্মকবাদী (totalitarian) কম্যুনিস্ট ও ফ্যাসিবাদী আদর্শের আদলে গড়ে উঠা রেজিমেন্টেড সাংগঠনিক কাঠামো – এই তিনটি ফ্যাক্টর সম্বলিতভাবে ‘মতামতের দাসত্বের’ সুন্নাহবিরোধী ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে।

আপনি ‘বর্তমান পরিস্থিতির’ কথা বলে আপনার জানার বাহিরে থাকা আমার অ্যাক্টিভিজমকে আন্ডারমাইন করে কিছু খোঁচা দিয়েছেন। ধারণা করছি, আপনি একজন নবীন (young) ফেসবুকিয়ান। তাই ‘বিল্লাতি হিয়া আহসান’-এর আলোকে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, উপরে জনাব Atiqur Rahman-কে দেয়া প্রতিমন্তব্যে পরিস্থিতি বিষয়ে বলেছিলাম–

“দুর্যোগ-দুর্ভোগের ‘মাসয়ালা’ কি? আমি যা বুঝেছি তা হলো: (১) ধৈর্যধারণ করা, (২) আত্মসমালোচনা করা, (৩) কর্মকৌশল পরিবর্তন করা ও (৪) চলমান মোকাবিলায় অটল থাকা। জরুরতের কথা বলে সবসময়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতে থাকা, আনুগত্যের কথা বলে পরামর্শকে এড়িয়ে যাওয়া, ডিসিসিভ বডি’র কথা বলে সর্বাত্মকবাদী কর্তৃত্বকে দৃঢ়তর করা – এসব সঠিক নয় বলে মনে করি। ইসলামী নেযাম একটি উন্মুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা।”

একই কথা আপনার জন্যও থাকলো।

Mohammad Mozammel Hoque: আচ্ছা, আপনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে (মেসেজ/ইমেইল/ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে) না বলে ওপেন কমেন্ট করে ‘সাইজ’ করতে চাচ্ছেন কেন? [উত্তর হতে পারে] কারণ, ওপেন ফেসবুক নোটের মাধ্যমে বিষয়টাকে ইতোমধ্যে পাবলিক করে ফেলা হয়েছে। তাই না? তাহলে দেখুন, যে সকল ‘সাংগঠনিক (গোপন) বিষয়’ দেশ-জাতি-জনগণ ও সামষ্টিক স্বার্থের সাথে জড়িত, সে সকল বিষয়ে ব্যক্তিগত পরামর্শকে অযেৌক্তিকভাবে উপেক্ষা করা হলে, সেসব বিষয়কে বোধসম্পন্নদের কাছে তুলে ধরাকে কীভাবে অনুচিত বলবেন?

আমি যদি প্রকাশ্যে বলে ‘অন্যায়’ করে থাকি, একই ‘ভুল’ আপনিও কি করেননি? বিপরীতভাবে, আপনার প্রকাশ্য প্রতিবাদটি যদি ‘অন্যায়’ না হয়, তাহলে আমারটা কেন ‘অনুচিত’ হবে? যেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলের সাথে আমার কথা হয়েছে, তা কি তাঁর এবং আমার মধ্যকার একান্ত ব্যক্তিগত কোনো বিষয় ছিল? আমি পুরো বিষয়টাকে নৈর্ব্যক্তিক করে বলিনি? সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি কি আপনাকে ট্যাগ করেছি?

“জামায়াতের ব্যর্থতা দেখে জামায়াতের চেয়ে উন্নত কোনো ইসলামী সংগঠন গঠন করতে গিয়ে জামায়াত দ্বারা বাধাগ্রস্ত…” – আপনার বক্তব্যের এই অংশে জামায়াতের লড়াকু কর্মীবাহিনীর একাংশের এক ধরনের টিপিক্যাল মেন্টালিটির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

‘জামায়াতের চেয়ে উন্নত’ – এই কথা দ্বারা সাধারণত সংখ্যা, শক্তি ও অবস্থাগত দিকগুলোকে, এক কথায় quantitative বিষয়গুলোকেই mean করা হয়। আন্দোলন বা আদর্শ বিশেষকে ইসলামের তরফ হতে তুলনা করার প্যারামিটার হিসাবে কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি এবং পটেনশিয়ালিটিকেই অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তাহলেই কেবল প্রচলিত ‘no alternative theory’র basic flaw সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।

যদি সংখ্যা বৃদ্ধিকে সঠিক পথে থাকার অন্যতম প্রমাণ হিসাবে ধরা হয় তাহলে তাবলীগ জামায়াতের জন্যও সেটি সমভাবে প্রযোজ্য হবে যেটি আপনারা মানতে নারাজ। মনে রাখবেন, ইসলামে কোয়ালিটির মোকাবিলায় কোয়ান্টিটির কোনো মূল্য নাই। এবং success is not always measured by what you see…

ভালো থাকুন! আমার জন্য দোয়া করবেন!

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *