স্ক্রিনশটটা পড়েন। ছেলেটা রাজশাহী হতে এনআইটি কুরুক্ষেত্রে গেছে ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর করার জন্য।

২০২৪ সালে ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান NIT Kurukshetra এর পজিশন: সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৩১৩৪ (আউট অব ১৪,১৩১), ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাটাগরিতে ১২৭১ (আউট অব ৬,৬৮৪), লিবারেল আর্টস এন্ড সোশ্যাল সায়েন্সে ২০৮১ (আউট অব ৭,০২০), আর্ট এন্ড ডিজাইনে ১৭৫৮ (আউট অব ৫৭২০)।
কথাটা বহুবার বলেছি, প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নহে। স্বাস্থ্যটা কষ্ট করে অর্জন করতে হয়। ইউরোপ, আমেরিকা তো দূরের কথা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর শিক্ষামানও আমরা অর্জন করতে পারিনি। ছাত্ররা ভাবে তারা বঞ্চিত, শিক্ষকরা ভাবে তারা বঞ্চিত। কোনো পক্ষের দাবীর কোনো শেষ নাই। অথচ উভয়পক্ষই স্বীয় দায়িত্বপালনের ব্যাপারে সমানতালে গাফেল।
আমি মনে করি, অতি জরুরী কিছু কারিগরি শিক্ষা ব্যতিরেকে সকল প্রকারের সাধারণ উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম অন্তত দশ বছরের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। এখানে শিক্ষার নামে সময়ের অপচয় হচ্ছে। কেন শিক্ষা, কী শিক্ষা, কীভাবে শিক্ষা, শিক্ষার মূল্যায়ন ও শিক্ষার প্রয়োগ – এই অতি জরুরী বিষয়গুলোর একটাকেও যদি প্রপারলি এড্রেস করা না হয়, তাহলে সেই শিক্ষা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য। যেমনটি হচ্ছে আমাদের এখানে প্রচলিত উচ্চশিক্ষা।
সে যাই হোক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রজীবনে হলে রোলকল করা হতো না। তবে আমরা শুনেছিলাম, হাউজ টিউটরদের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাত্রিবেলায় স্টুডেন্টদের রোলকল করা। হাউজ টিউটরগণ আমাদের সময়ে হলে যেতেন ইলেক্ট্রিকের বাল্ব বিতরণ করার জন্য। সে সময়ে কোনো ছাত্রী সন্ধ্যার পরে হলে ফিরলে হল গেইটে দারোয়ানের কাছে থাকা একটা খাতায় সাইন করে আসতে হতো। সন্ধ্যারাতে হাউস টিউটরগণ হলে এসে বিলম্বে হলে ফেরা ছাত্রীদেরকে ডেকে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করতেন।
এখন যদ্দুর শুনি, প্রভোস্ট, হাউজ টিউটরগণ ক্বদাচিৎ হলে যান। ছাত্র হলে সীট বরাদ্দ হয় না কত বছর তা হিসেব করে বলতে হবে। আমি নিজে প্রভোস্টের সাইন নেয়ার জন্য একটা হলের আবাসিক শিক্ষকদের সবাইকে ফোন করে ঘণ্টা দুয়েক পরে একজনকে ফ্যাকাল্টিতে পেয়েছিলাম। এটি মাস কয়েক আগের কথা। মাত্র ক’বছর আগে বলেছিলাম, সান্ধ্যআইন তো দূরের কথা, সূর্যোদয়ের আগে ফেরার নিয়ম করলে সেটাও কার্যকর হবে না। এখন ঠিক সে রকম পরিস্থিতি হয়েছে।
এইটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়?
স্টুডেন্টরা কীভাবে আসে, কীভাবে যায়, কী খায়, কোথায় থাকে, কীভাবে থাকে, কোনোকিছুর ঠিকঠিকানা নাই। কর্তৃপক্ষ মনেই করে না, এসব ব্যাপার দেখভাল করা মূলত তাদেরই দায়িত্ব। এই দল, ওই দল যে দলই তারা করেন না কেন, কোন্দলই যেন শিক্ষকদের মূল দল।
ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের তো এটি বদ্ধমূল ধারণা, তারা সরকারী ভার্সিটির ছাত্র, অতএব কারো কাছে তাদের জবাবদিহিতা নাই। গার্ডিয়ানদের কাছে তারা এমন ইমপ্রেশন দেয়, এখানে তারা লেখাপড়ায় ব্যস্ত। বাস্তবে তারা ক্যাম্পাসজুড়ে ইনসেইন লেভেলে স্বাধীনতাচর্চায় ব্যস্ত।
কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ক্যাম্পাস মসজিদ সংলগ্ন এস.ই. ৯নং বাসার সামনে ফার্স্ট ইয়ারের একজোড়া ছেলেমেয়েকে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে বারণ করেছিলাম। সরাসরি নিষেধ করি নাই। বলেছিলাম, ‘তোমার বাবা-মা’র সামনে কি তোমরা এমনটি করতে?’ উত্তরে ছেলেটা বলেছিল, “এখন যুগ পাল্টেছে। ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বে আপনাদের অভ্যস্ত হওয়া উচিত।” এখন ছেলে-মেয়ে হাত ধরে হাঁটা তুলনামূলকভাবে ডিসেন্ট বেহেইভিয়ার। আমাদের বরং অভ্যস্ত হতে হচ্ছে তাদের ঢলাঢলি দেখতে। সেদিন গোলপুকুরের ওদিকে এমন একজোড়া নির্লজ্জ কাপলকে বললাম, ‘আশপাশের ঝোপঝাড়ের আড়ালেও তো যেতে পারো। প্রকাশ্য রাস্তার উপরে এ’রকম করছো কেন?’ আমার ভাগ্য ভালো, তারা প্রতিবাদ করেনি।
অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলতে পারবো না, নিজের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলতে পারি, অন্তত তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী এখানে পরবর্তী দিনের ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার গরজ অনুভব করে না। স্টুডেন্টরা ওভারঅল ক্লাসমুখী না। দুনিয়াতে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নাই, যেখানে স্টুডেন্টরা শতকরা চল্লিশ ভাগ ক্লাস কোনো কারণ ছাড়াই না করা সত্বেও সামান্য জরিমানা দিয়ে পরীক্ষা দিতে পারে। এটি এখানে সম্ভব।
শিডিউলড ক্লাসে ছুটি ছাড়াই টিচার এবসেন্ট থাকবে, এমনটি দুনিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কল্পনাও করতে পারে না। আমরা পারি। আমরা এক আজব দেশের নাগরিক। অসম্ভবের সম্ভাবনার এই দেশে যে কোনো কিছুই হতে পারে।
সেদিন একছাত্র বললো, তাদের ডিপার্টমেন্টের এক টিচার ক্লাসে যান না। মাঝে মাঝে রাত ১০টায় অনলাইন ক্লাস নেন। ক্লাস হলো পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী এঙ্গেলে ক্যামেরা অন করে রিডিং পড়তে থাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এই ক্যাটাগরির শিক্ষক। এজন্যই বললাম, এই দল, ওই দল যে দলই করেন না কেন, কোন্দলই শেষ পর্যন্ত (সরকারী) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মূল দল।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Sabbir Summan: ফার্স্ট ইয়ারে একজন গেস্ট টিচার আমাদের নামমাত্র ৭-৮টা ক্লাস করিয়ে কোর্স শেষ করেছিলেন। শেষ দিন, আমাদের এক ফ্রেন্ড এটার প্রতিবাদ করায় উনি অনেকটা ধমকের স্বরে বলেন, কোন গ্রুপ করো? এসব রাজনীতি আমরাও করে আসছি। এরপর উনি উনার রাজনৈতিক ইতিহাস শুনান। আমরা ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে যাই। উনি নিজে তো উনার দায়িত্ব পালন করছেন না, উল্টা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। শেষে বলে যান, আমার খুব ভালো করেই জানা আছে কীভাবে কী করতে হয়। কেউ আমার চাকরি খাইতে পারবে না। যদি আমি একটা ক্লাসও না করাই। আজব এক জায়গায় পড়াশোনা করছি আমরা!
Mohammad Mozammel Hoque: আমি নিশ্চিত, সেই পার্টটাইম টিচার, আসলে চিটার, পুরো ৫০টা বা কোর্সভেদে ৩০টা লেকচারেরই বিল তুলেছেন।
Junaid Hossain Chowdhury: বর্ণিত এরকম একটা ভার্সিটিতে পড়তে পারলে জীবনকে মনে হয় উপভোগ করতাম। অনেক শিক্ষক তার ক্লাস নেয়াকে মনে করেন ছাত্রের উপর তার দয়া। দয়া করে আসছেন, আর তিনি ক্লাস না নিলে কেউ কিছু বলবেনা এমন ভাব করেন।
Mohammad Mozammel Hoque: ভার্সিটি মানেই ওরকম। আমরা নামেমাত্র ভার্সিটি। কামে আসলে কলেজ-মানেরও নিম্নে। এমনকি স্কুলও এভাবে চলে না।
Shamim Noor: তবে এ সবকিছুর জন্য দোষারোপের আঙ্গুল আমাদের দিকেই উঠবে আগে এবং তা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গতও। এমনও বহু শিক্ষককে চিনি এবং জানি যারা বোগলের নিচে ঔ একখানা বই দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। গবেষণা, লেখালেখি বাদই দিলাম, আপডেইট নলেজ নিয়ে নিজের জানাশুনার পরিধি একটু বাড়িয়ে নিবেন সেটাও তাদের সক্ষমতায় কুলিয়ে উঠতে পারে না। কন্ডিশন ছাড়া চাকুরীর গদি পারমানেন্ট হলে যা হয় আর কি!
Mohammad Mozammel Hoque: শোনো, চৌত্রিশ বছর শুধু একটা কোর্সই পড়িয়েছেন এমন শিক্ষক আমি জানি। এঁরা সাধারণত নেতা গোছের টিচার হয়ে থাকেন। ক্লাস পারফরম্যান্স হলো আমার কাছে একমাত্র মাপকাঠি। গবেষণা হলো ভাল ক্লাস নেয়ার জন্য। আমরা নিছক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নই।
Nazmul HR: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে ভাবতাম, এখানে আসলেই ভিন্ন একটা জগৎ পাবো। এখানকার মানুষগুলো হবে দেশ গড়ার কারিগর। অথচ, এখানে গাজার আসর দেখলে মনে হয় রিকশাচালকরাও এদের থেকে সভ্য, অন্ততপক্ষে প্রকাশ্যে সেবন করে না। দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন দুর্নীতি আর দুর্নীতিতে ভরে গেছে।
Mohammad Mozammel Hoque: অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ভর্তি-পরবর্তী ইমপ্রেশন নেগেটিভ। পুরো স্টুডেন্ট লাইফে এই হতাশা কন্টিনিউ করে। বন্ধুবান্ধব ছাড়া আর কোনো ভাল স্মৃতি তাদের থাকে না। ইনজেন্রেল।
Siful Islam: এটা সত্য উভয়দলই স্বীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। কিন্তু স্যার, আপনি যেমন সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশ নিয়ে অনেক উদ্বেগ থেকে এসব লেখেন, আপনার মতো আরো অনেকেই লেখেন। ভালো লাগছে যে আপনাদের পর্যায় থেকে লিখছেন এবং কথা বলছেন। কিন্তু আদৌ কি এসব থেকে এই সমাজ আর রেহাই পাবে?
Mohammad Mozammel Hoque: নিশ্চয়ই পাবে। তার জন্য আমাদের দরকার খোলা মনে সমস্যাগুলোকে স্বীকার করে নিয়ে যার যার জায়গা থেকে সাধ্য মোতাবেক সমাধানের জন্য চেষ্টা করা।
Md. Tanbir Rahman: আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ান, তারা করেন চাকরি। আমরা যারা পড়ি, তারা পড়ি সার্টিফিকেট লাগবে সেজন্য। বিশ্ববিদ্যালয় কী, কেন, কেন দরকার, কী কী শেখা উচিত, শেখানো উচিত এগুলো নিয়ে কারো মাথাব্যথা নাই বললেই চলে। শিক্ষকরাও ফাঁকিবাজ, শিক্ষার্থীরাও। ফলে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য না তাই আমাদের কাছে মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ, এগুলা না পেলে জীবন বৃথা।
Tanvir Ahmed Himel: এদেশের উচ্চশিক্ষার অবস্থা প্রাইমারির চেয়েও খারাপ, অন্তত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। যা দেখলাম সবাই শুধু কোনোরকম চোখ বুঝে বের হওয়া, কেমনে নম্বর পাওয়া যায় এ ধান্ধায় থাকে। আসল শিক্ষাটা আর হয়না।
আর নোংরা রাজনীতি। যেখানে পোলাপান থাকে ক্ষমতার দাপট নিয়া। কেমনে কারটা মাইরা খাবে, কই থেকে চাঁদা নিবে। কেউ কাউকে সম্মান দেয়না। স্যাররা স্টুডেন্টদের ভয় পায়। ভার্সিটির প্রধানরা অন্যায়ের সাথে জড়িত। সেদেশে আর কী হবে? এদেশকে খুব কম মানুষই ভালোবাসে নয়ত এমনটা থাকতো না পরিবেশ।
আর পড়াশোনা যা করায় নোট দিয়ে শেষ। কয়টা ক্লাস নেয় ঠিক নাই, অনেকের দায়িত্ববোধ নাই। এগুলো হলো বেকার তৈরির কারখানা।