[একটু আগে এক তরুণের সাথে মেসেজ সেকশনে আলাপ]
“আমার ফিলোসফি খুব ভালো লাগে। আমি নিয়মিত আপনার ওয়েবসাইটের কনটেন্টগুলো পড়ি। দর্শন নিয়ে পড়তে চাই। কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না। দর্শন ভালো লাগে। কিন্তু এটা নিয়ে আমি কি কোনো ক্যারিয়ার করতে পারবো? আমি এখন দশম শ্রেণীতে পড়ি এবং পরীক্ষা দিচ্ছি। যদি বলেন তাহলে আমার অনেক উপকার হতো।”
কিছু চাকরি আছে যেগুলো নির্দিষ্ট পেশার বাইরের কেউ করতে পারে না। যেমন– ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। আবার কিছু চাকরি আছে যেগুলোতে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হয়। যেমন ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবে কাজ করার জন্য কেমিস্ট্রি বা বায়োকেমিস্ট্রি পড়া লাগে।
এভাবে বিশেষায়িত পেশায় কর্মসংস্থানের সুযোগ আমার ধারণায় বড়জোর শতকরা ৩০ ভাগ চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। চাকরি বাজারের অবশিষ্ট বেশিরভাগ জব যে কোনো সাবজেক্ট পড়েই করা যায়। প্রয়োজন হলো স্মার্টনেস, অ্যানালাইটিক পাওয়ার, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, কমিউনিকেশন স্কিল, ইনক্লুসিভনেস ইত্যাদি। এই মানবিক গুণগুলো অর্জনের জন্য যে সাবজেক্টটা সবচেয়ে বেশি উপযোগী তা হলো ফিলোসফি। ফিলোসোফি পড়ানোর যে পদ্ধতি আমাদের এখানে ফলো করা হয় তা ত্রুটিপূর্ণ। এ কথা সত্যি। কিন্তু এই ধরনের সমস্যা আমাদের এখানকার অন্যান্য তথাকথিত ভালো সাবজেক্টগুলোর জন্যও প্রযোজ্য।
ওইসব তথাকথিত ভালো সাবজেক্টে যেই মানের স্টুডেন্ট ভর্তি হয় আমরা যদি সেই মানের স্টুডেন্ট পেতাম, তাহলে হয়তোবা আমাদের ডিপার্টমেন্টে পড়ালেখার মান আরো অনেক ভালো করা যেত। বিগত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা বিসিএসে বেশি টিকেছে তাদের মধ্যে ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টের অবস্থান প্রথম দিকেই।
সবশেষে আমি যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই তা হলো, জীবন তো শুধু ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপার নয়। জীবন কী? ক্যারিয়ার কেন? এ ধরনের মৌলিক যে কোনো প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য যে কাউকে আসতে হবে ফিলোসফির ডোমেইনে। তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ফিলোসফি পড়াশোনা করুন কিংবা না করুন, তাতে কিছু আসে যায় না। ‘ফিলোসফির দরকার নাই’– এই কথাটাও কাউকে বলতে হয় ফিলোসফিক্যালি তথা যুক্তি-বুদ্ধির সাহায্য নিয়ে।
ফিলোসোফি ছিল আমার ফার্স্ট এন্ড ফোরমোস্ট চয়েস। যদিও আমি মেট্রিক-ইন্টার সায়েন্স নিয়ে পড়েছি। তখনকার সময়ে দুটোতেই ছিল ফার্স্ট ডিভিশন। আমি অন্য কোথাও ভর্তির কোনো চেষ্টাই করিনি। আমি মনে করি, জীবনের এই সিদ্ধান্তটিতে আমি একেবারেই সঠিক ছিলাম। যারা আদর্শবাদী, যারা চিন্তাশীল, ফিলোসফি হওয়া উচিত তাদের প্রথম অথবা প্রধান চয়েস।
“ধন্যবাদ স্যার সময় দেওয়ার জন্য। আমি ফিলোসফি নিয়েই পড়বো। জানি না কেন। কিন্তু এইটাই ভালো লাগে। আমি জানি না চাকরি পাবো কিনা। কিন্তু এটা নিয়েই পড়বো। দোয়া করবেন।”