দাসপ্রথাকে উচ্ছেদ না করে ইসলাম কেন ক্ষেত্রবিশেষে ও সীমিত আকারে অনুমোদন দিয়েছে? দাসীর সাথে পুরুষ মালিকের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমোদন থাকার কী কারণ? ইসলামে কি যুদ্ধের অজুহাতে ধর্ষণ জায়েয? এসব বিষয়ে অনেকের মধ্যেই স্বচ্ছ ধারণার অভাব লক্ষ করেছি। তাই এই লেখা। লেখাটা একটু বড় হলেও নিশ্চয়তা দিচ্ছি, অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে পড়লে এতে আপনি নতুন কিছু তথ্য পাবেন। চিন্তার কিছু খোরাক পাবেন। এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভংগীর পরিবর্তন ঘটবে। হোপফুলি।

ইসলাম দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করেনি। সংস্কার করেছে। এইসব সংস্কার এতই মৌলিক ছিলো, যার পরিণতিতে দাসপ্রথা ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

দীর্ঘমেয়াদে দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটাবে এমন মৌলিক সংশোধন ও সংস্কারের দিকে ইসলাম কেন গেলো, অমানবিক এই ব্যবস্থাকে আইনত নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে? মদপান ও সুদ নিষিদ্ধকরণের মতো করে এই অপপ্রথা কেন স্থায়ীভাবে বাতিল করা হলো না? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাবেন এই লেখায়।

প্রকৃত সত্য হলো, ধাপে ধাপে মদ নিষিদ্ধের মতো ইসলাম ধাপে ধাপে দাসপ্রথারও বিলুপ্তি সাধন করেছে। মদ পান নিষিদ্ধ করা হয়েছে নৈতিক ও প্রত্যক্ষ আইনি প্রক্রিয়ায়। দাসপ্রথার ব্যাপারে ইসলাম প্রত্যক্ষ আইনী প্রক্রিয়াতে অগ্রসর না হয়ে পরোক্ষ আইনি প্রক্রিয়া, সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিকভাবে সমস্যাটিকে মোকাবিলা করেছে। বলা যায়, গাছটিকে একসাথে সমূলে উৎপাটন না করে এর গোড়ায় পানি সিঞ্চন বন্ধ করে এর প্রত্যেকটি শেকড় একে একে কেটে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, এক পর্যায়ে এর অবসান হয়েছে। যদিও এখনো বিশ্বব্যাপী নানা মাত্রায় রয়ে গেছে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মানুষের ওপর মানুষের দাসত্ব।

দাসব্যবস্থা ইসলামের কোনো মৌলিক বিধান না হওয়া সত্ত্বেও, বিশেষ করে দাসীদের সাথে মালিকের ‘বিবাহ-বহির্ভূত’(?) যৌন সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে ইসলামবিরোধী মহল, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইসলামপন্থীগণও এই ইস্যুতে নানা মাত্রায় সন্দেহ-সংশয়ে ভুগছেন। তারচেয়েও বড় কথা হলো, যেসব যুক্তি দিয়ে এ ব্যাপারে ইসলামের অবস্থানকে ডিফেন্ড করা হচ্ছে সেগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। বরং কিছুটা নিম্নমানের। ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষতান্ত্রিক মন-মানসিকতাপ্রসূত অধিকতর আপত্তিজনক।

দাস-দাসীদের ব্যাপারে ইসলামের মূল উৎস কোরআন ও হাদীসে কী কী বলা আছে ইত্যাদি নিয়ে সিস্টেমেটিক্যালি আলোচনা করার চেয়ে আমি বরং দাসীদের সাথে মালিকের ‘বিবাহবহির্ভূত’(?) যৌন সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে টু-দ্যা-পয়েন্টে কিছু আলোচনা করবো। আলোচনায় রেফারেন্সের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে কনটেন্ট ও কনটেক্সটের ওপর গুরুত্বারোপ করবো।

স্বাধীন মানুষকে জোর করে দাস বানানো ও স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণ করাকে ইসলাম হারাম করেছে। যুদ্ধবন্দীদেরকে কী করা হবে তা নিয়ে আমাদের কাণ্ডজ্ঞান যা সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত করণীয় হিসাবে বলে, ইসলামী শরীয়তও ঠিক সেইসব ব্যবস্থা গ্রহণের কথাই বলে। একটা বিকল্প হতে পারে, তাদেরকে পটেনশিয়াল থ্রেট মনে করে হত্যা করা। আরেকটা বিকল্প হতে পারে, বন্দি-বিনিময় চুক্তির আওতায় বা মুক্তিপণের বিনিময়ে বা শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে মুক্তি দেয়া। এর কোনোটাই যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যুদ্ধবন্দীদের জন্য শ্রমশিবির ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিকল্প হিসেবে তাদেরকে উপযুক্ত নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে ব্যক্তিগত-বন্দি তথা দাস হিসাবে ডিস্ট্রিবিউট করে দেয়ার মাধ্যমে এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা সহকারে সামাজিক জীবনে আত্মীকরণ করা হতে পারে একটি ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে এ কথাটি বলে নেয়া ভালো, ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক নিরীহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে কিন্তু কোনো অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না।

তখনকার সমাজে দাস কেনা-বেচার যে সিস্টেম ছিলো সেটাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেনি। কারণ, সমাজের কাঠামোর আমূল পরিবর্তন না করে হঠাৎ করে এর অন্যতম ক্রিয়াশীল একটা ভিত্তিকে ধ্বসিয়ে দেয়াটা যুক্তিসংগত ছিলো না। এর পাশাপাশি, দাসদের মানবিক আত্মমর্যাদাবোধ ও সমাজে তাদের ন্যায্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না করে তাদেরকে গণহারে স্বাধীন করে দেয়াটা বাস্তবসম্মত ও টেকসই সমাধান হতো না।

সমাজ পরিবর্তনে ইসলামের মূল পদ্ধতি যে বটম-আপ এপ্রোচ বলতে আমরা যা বুঝি ঠিক তা-ই, সেটা আমরা এই ইস্যু থেকে ভালোভাবে বুঝতে পারি। তখনকার ব্যবসায় লাভ ও সুদ, দুটোই ছিলো। ইসলাম সুদকে নিষিদ্ধ করে শুধু লাভ-ক্ষতিভিত্তিক ব্যবসা পদ্ধতির প্রবর্তন করে। যৌনতার বিষয়ে তখনকার সমাজে নানা ধরনের ব্যবস্থা অনুমোদিত ও প্রচলিত ছিলো। ইসলাম বৈবাহিক ব্যবস্থার একক ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় সেগুলোকে রেগুলেইট করে। ধাপে ধাপে মদ নিষিদ্ধকরণ ছিলো বিনোদন সংস্কৃতি সংস্কারের অন্যতম অনুষঙ্গ।

তখনকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দাসদের ভূমিকা ছিলো ব্যাপক। এই প্রেক্ষাপটে ইসলাম একতরফাভাবে দাসব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ না করে দাসদের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে। আফসোস! ইসলামপন্থীগণ দাসব্যবস্থা বিলোপের ব্যাপারে ইসলামের এই ক্রমধারা অবলম্বনকে ফোকাস করলেও অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে ‘সুন্নাতে তাদাররুজ’ বা ক্রমধারা অবলম্বনের এই নীতিকে মানতে চান না।

যুদ্ধবন্দীদেরকে হত্যা করা বা মুক্তি দেয়ার বিকল্প হতে পারে, তাদেরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে রাখা। অথবা, যে কোনো মাত্রায় যে কোনো কাজে বাধ্য করা যাবে, এমন মানবিক মর্যাদাশূন্য দাস হিসাবে তাদেরকে সৈনিক ও নাগরিকদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া। তখনকার অমুসলিম সমাজে যা ছিল প্রচলিত। অর্থনৈতিক, মানবিক ও নৈতিক বিবেচনায় ইসলাম এই দুইয়ের মাঝামাঝি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দাসদের জন্য শ্রমশিবির স্থাপন না করে তাদেরকে সৈনিক ও নাগরিকদের নিরাপত্তা-হেফাজতে স্থায়ীভাবে বণ্টন করা হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে যেন তারা জীবনযাপনের দিক থেকে সংশ্লিষ্ট পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সমমর্যাদায় বসবাস করতে পারে। বণ্টনের পূর্বে ধৃত কোনো যুদ্ধবন্দী ছিল নিছকই একজন যুদ্ধবন্দী। লুটের মাল নয়। এ ব্যাপারে ইসলামের আইন অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

দাসদাসীদের যৌনজীবন কেমন ছিলো, তা নিয়ে আসেন এবার সংক্ষেপে কিছু কথা বলি।

যৌনজীবনের ইসলাম-অনুমোদিত একমাত্র ফরমেট হলো বিয়ে। ইসলামের দৃষ্টিতে তাই বৈবাহিক সম্পর্ক-বহির্ভূত সম্পর্ক মাত্রই হলো ব্যভিচার। অতএব, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সমকামিতার প্রভাব তখন কমবেশি ছিলো এবং এ ধরনের আচরণকে যৌন বিকৃতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্যভিচার বেআইনী হলেও স্বাভাবিক যৌন আচরণ। বিকৃতি বা পারভার্শন নয়। কেন জানি কথাটা এভাবে বলা হয় না। অথচ এটাই হলো সত্য।

দাসীদের সাথে মালিকের যৌন সম্পর্ক স্থাপন ছিলো এক ধরনের বিয়ে। ইসলামে বিয়ে সম্পর্কে যা কিছু বলা আছে তা বাহ্যত, স্বাধীন মুসলিম নর-নারীর বিয়ের প্রসঙ্গে বর্ণিত। তাই মনে হতে পারে, দাসীদের সাথে সম্পর্ক বুঝিবা বিয়ে-বহির্ভূত বিশেষ কোনো সম্পর্ক। অথচ, একটু আগেই বলেছি, আইনী দৃষ্টিকোণ হতে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের মাত্র দুটি ধরন: বিয়ে অথবা ব্যভিচার।

দাসীদের সাথে মালিকের যৌন সম্পর্ক যদি ব্যভিচারের সম্পর্ক না হয়, তাহলে বিয়ে-ব্যভিচারের এই আইদার-অর বাইনারির আলোকে বলতে হয়, দাসীদের সাথে মালিকের যৌনসম্পর্কসহ আইন অনুমোদিত যৌন সম্পর্ক মাত্রই কোনো না কোনো ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক।

স্বাধীন মহিলার সাথে বিয়ের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত মানতে হয়, দাসীর সাথে মালিকের যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সেগুলো কার্যকর থাকে। এ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি।

পুরুষ মালিকের অধীনে বণ্টনকৃত দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক করা যাবে না, যদি সে মহিলা গর্ভবতী হয়, তার এক হায়েজ যদি অতিক্রম না হয়। শুধুমাত্র মালিক পুরুষটিই যৌন সম্পর্ক করতে পারবে। অন্য কেউ যদি তার সাথে যৌন সম্পর্ক করে তাহলে সে দণ্ডবিধি মোতাবেক যিনার শাস্তি পাবে। এমনকি নিজ স্ত্রীর মালিকানাধীন দাসীও যদি হয়।

অন্য কারো সাথে উক্ত দাসীর বিয়ে দিলে মোহরানার টাকা বা সম্পদ দাসী পাবে, নাকি তার মালিক পাবে– তা নিয়ে এখতেলাফ আছে। মোহরানা যে-ই পাক, দাসীকে বিয়ে দেয়ার পরে তার পুরুষ মালিক তার সাথে কোনো প্রকার যৌন সম্পর্ক করতে পারবে না। করলে দণ্ডবিধি অনুসারে তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

সাধারণ বিয়ের শর্তগুলো মালিক-দাসীর যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রযোজ্য তা খেয়াল করলে আমরা দেখবো:

(১) দাসী মানে জনগণের বা পরিবারের যৌথ যৌন-সম্পত্তি নয়।

(২) বিয়েতে অভিভাবকের সম্মতি লাগে। দাসীর ক্ষেত্রে বণ্টনকারী কর্তৃপক্ষ তথা রাষ্ট্র এই দায়িত্ব পালন করে।

(৩) বিয়েতে জানাজানি হতে হয়। দাসীর সাথে মালিকের যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অথরিটি কর্তৃক প্রকাশ্য বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই শর্তটি পূর্ণ হয়।

(৪) বিয়েতে পাত্রীর সম্মতি লাগে। স্বাধীনতা না থাকায় মালিকের সম্মতিই দাসীর সম্মতি হিসাবে বিবেচিত হয়। যেভাবেই হোক না কেন, সমাজে দাসপ্রথা বিদ্যমান থাকা সাপেক্ষে এটাই যুক্তিসঙ্গত।

(৫) বিয়েতে মোহরানা লাগে। দাসীর টাকা-পয়সার মালিকানা তার মালিকের হওয়ার কারণে নিজ দাসীকে মোহরানা দেয়ার মানে হলো নিজেই নিজেকে মোহরানা দেয়া। দাসীকে মোহরানা দেয়ার প্রয়োজন না থাকার এটি হলো কারণ। সহজ কাণ্ডজ্ঞান থেকে যা আমরা বুঝতে পারি।

(৬) সাধারণ বৈবাহিক সম্পর্কের মতো দাসীর গর্ভজাত সন্তান মালিকের স্বাধীন স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানের সমতূল্য সর্ববিধ মর্যাদা লাভ করে। তদুপরি, মালিকের সন্তানের মা হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট দাসীকে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। মালিকের মৃত্যুর পরে ‘সন্তানের মা’ হিসেবে সেই দাসী অটোমেটিক্যালি স্বাধীন হয়ে যায়। এমনকি, মালিকের ঔরসের সন্তান যদি অপূর্ণ বা মৃতও হয়।

(৭) সাধারণ বিয়েতে তালাকের ব্যবস্থা থাকে। ব্যক্তি হিসাবে স্বাধীন না হওয়ার কারণে দাসী তালাকের অধিকার পায় না। তবে মালিক ব্যতীত অন্য কারো সাথে তার বিয়ে হলে প্রয়োজনে সে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারে।

মোটকথা হলো, জ্ঞাত ও দায়দায়িত্বসম্পন্ন যৌন সম্পর্ককে যদি আমরা বিয়ে বলি, তাহলে বলতে হয় দাসীর সাথে মালিকের যৌন সম্পর্কও এক ধরনের বিয়ে।

মা বা খালাকে যেমন বিয়ে করা যায় না, তেমন করে বাবার সাথে যৌন সম্পর্ক ছিলো এমন দাসীকে বা তার কোনো বোনকে, উক্ত মালিকের ছেলে বিয়ে করতে পারবে না, যদিও সে ক্রয়, দান কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে উক্ত ক্যাটাগরির কোনো দাসীর মালিকানা অর্জন করে।

দুই বোনকে যেমন একসাথে বৈবাহিক সম্পর্কে রাখা যায় না, তেমন করে দুই সহোদরা দাসীর সাথে একইসাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার বিধান নাই। মালিক এ ক্ষেত্রে দুই বোনকে আলাদা আলাদাভাবে বিয়ে দিবেন। অথবা, একজনকে অন্যত্র বিয়ে দিবেন এবং অপরজনকে স্ত্রীসুলভ সম্পর্কে গ্রহণ করবেন। এমতাবস্থায় যাকে অন্য কারো কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে সে তার জন্য হারাম হয়ে যাবে।

স্বাধীন নারীদের বৈবাহিক সম্পর্কের মতো দাসীদের ক্ষেত্রেও ফুফু কিংবা খালা ও ভাইঝি কিংবা বোনঝিকে একসাথে করা যাবে না। মা ও মেয়েকে নয় যেমন করে। এক কথায়, বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ হওয়া বা না হওয়ার যে সম্পর্ক-সূত্রগত শরয়ী বিধান, তাতে স্বাধীন নারী ও দাসীর মধ্যে পার্থক্য নাই। সো, নো কনফিউশন।

দাসীদের সাথে যৌন সম্পর্ক অবাধ যৌনতা চর্চার কোনো ব্যাপার নয়। বরং স্বাধীন নারীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের মতোই বিধিবদ্ধ ও দায়-দায়িত্বসম্পন্ন মানবিক সম্পর্ক। সামরিক কারণে সংশ্লিষ্ট নারীর ব্যক্তি-স্বাধীনতা সীমিত হওয়া বা ক্ষেত্রবিশেষে না থাকার কারণে দাসীর দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন যদিও তুলনামূলকভাবে খানিকটা নিম্নস্তরের।

পুরুষতন্ত্র নিবর্তনমূলক। তাই তা অনৈসলামিক। এর পাশাপাশি এ কথা আমাদের ভালোভাবে স্মরণে রাখতে হবে, ইসলাম সমর্থিত পরিবারব্যবস্থা হলো পিতৃতান্ত্রিক। অর্থাৎ পিতা হবেন পরিবার নামক এই সামাজিক-একক বা আণবিক-প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি। তাই, সঙ্গত কারণেই নারী মালিককে স্বীয় অধীনস্থ পুরুষ দাসের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি।

বিদ্যমান সামরিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থা বিশেষ করে যুদ্ধের অনির্ণেয় পরিস্থিতিজনিত অনিশ্চয়তার কারণে চারের অনধিক স্ত্রীর মতো যৌন সম্পর্কে গৃহীত দাসীর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয় নাই। তাই বলে কেউ অন্দরমহলে ‘হারেম’ কায়েম করবে, তা কোনোক্রমেই ইসলামসম্মত হতে পারে না। পরবর্তী যত ‘খলিফা’ই তা করুক না কেন, খেলাফতের নামে প্রবর্তিত রাজতন্ত্রের মতোই তা ইসলামবহির্ভূত। অতএব, বাতিল।

প্রতিদিন বিয়ে করে খেয়ালখুশি মতো তালাক দিয়ে কেউ চাইলে বৈবাহিক ব্যবস্থার কাঠামো ঠিক রেখে এর অন্তর্গত উদ্দেশ্যকে উল্টিয়ে দিতে পারে। ‘উলিল আমর’ তথা কার্যবিধায়ক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিশেষ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখবেন। সমস্যা হলো, যে ইসলাম কবরের উপর কোনো কাঠামো নির্মাণকেই বৈধতা দেয় না, সেই ইসলামের অনুসারীরাই আবার তাজমহল নিয়ে মুসলিম ঐতিহ্যের গর্ব করে!

এ বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকলে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ (সিএসসিএস) কর্তৃক অনূদিত ‘হালাল হলেই কি ইসলামিক হবে? ইসলামী নৈতিক চেতনার গুরুত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন।

স্বাধীন নারীর পক্ষে স্বামী কর্তৃক যৌন সম্পর্কের আহ্বানকে অস্বীকার করার সুযোগ নাই। শরীয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া। তবে স্বামীর আইনানুগ যৌন আচরণকে অপছন্দ করলে তিনি এই ক্ষেত্রে তালাক নিতে পারেন। দাসী তা পারেন না। তবে, হোক তিনি দাসী বা স্বাধীন নারী, সর্বাবস্থাতেই একজন নারী ‘যৌন নির্যাতনের’ প্রতিকার চাইতে পারেন। স্বাধীন নারী-দাসী নির্বিশেষে সমমর্যাদায় প্রচলিত নিয়মে এ ধরনের যে কাউকে যথাযথ আইনি প্রটেকশন দিতে হবে।

আজীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে কয়েদখানায় একসাথে সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় না রেখে উপযুক্ত নাগরিকদের অধীনে স্থায়ী হেফাজতে রাখার ব্যবস্থা করাই হলো ইসলাম অনুমোদিত দাসব্যবস্থার মূল কথা। একজন দাস বা দাসী পূর্ণ নাগরিক অধিকার, বিশেষ করে রাজনৈতিক অধিকার পাবে না, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু সে পাবে পূর্ণ নৈতিক, ধর্মীয় ও মানবিক অধিকার। অধীনস্ত পরিবারের সদস্যদের বিয়ের ব্যবস্থা করা যেমন পরিবার প্রধানের কর্তব্য, তেমনিভাবে পুরুষ দাসের বিয়ের ব্যবস্থা করার দায়িত্বও তার মালিকের। দাসত্বের মধ্যে থাকা নারীকে স্ত্রী-তুল্য যৌনসঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। অথবা, তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।

ইসলাম এমন এক সমাজব্যবস্থা চায়, যাতে কেউ যৌনতা থেকে দীর্ঘমেয়াদে বা স্থায়ীভাবে বঞ্চিত না থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যাদের জুড়ি নাই, তাদের জন্য সঙ্গীর ব্যবস্থা করো। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়েই হচ্ছে যৌনতার প্রয়োজন পূরণের একমাত্র বৈধ ব্যবস্থা।

মুহসিনা বা স্বাধীন কোনো নারীর ওপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তেমনি করে কোনো দাসীর চরিত্রহননও শাস্তিমূলক অপরাধ। সেটা যে-ই করুক না কেন। স্বাধীন নারী যেমন ব্যভিচারে লিপ্ত হলে শাস্তির সম্মুখীন হয়, তেমনিভাবে যিনায় লিপ্ত হলে শাস্তি পাবে দাস বা দাসী। অবশ্য, দাস বা দাসী হিসেবে নিম্নমর্যাদাসম্পন্ন ও কিছুটা হালকা সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে থাকার কারণে এ ধরনের অপরাধীদের জন্য শাস্তির মাত্রা হবে লঘুতর। একশত বেত্রাঘাত। স্বাধীন বিবাহিত পুরুষ বা নারীর জন্য এটি হলো মৃত্যুদণ্ড।

ইসলামী শরীয়াহ অনুসারে, মুসলিম বাহিনীর হাতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আটক হওয়ার কারণে বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীদের পূর্বেকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমনকি স্বামীসহ বন্দী হলেও। এটি হলো সিভিলিয়ান হয়েও যুদ্ধে আসার শাস্তি।

কোনো দাস বা দাসী যখন তার মালিকের সাথে মুক্তির চুক্তি করতে চাইবে, তাতে তার মালিককে অবশ্যই সম্মত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে উক্ত দাস বা দাসীকে স্বাধীনভাবে উপার্জন করে মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করার সুযোগ করে দিতে হবে। কোনো দাসী অবশ্য এ জন্য পতিতাবৃত্তির অনুমতি পাবে না। এমনকি মালিকের সম্মতি থাকলেও না।

লেখাটা শেষ করতে চাই আমাদের আলোচ্য বিষয়ে একটা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে–

হারুন ইবনুল আসিম বর্ণনা করেন: উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদকে (রা.) সৈন্যবাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর তারা আসাদ গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তারা একটি সুন্দরী নারীকে বন্দি করেন এবং জিরার তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তার সঙ্গীদের থেকে তাকে (নারীটিকে) চাইলেন, তারা দিয়ে দিল এবং তিনি তার সাথে সঙ্গম করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং খালিদের (রা.) নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে বললেন। খালিদ (রা.) বললেন, অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি। জিরার বললেন, “না, উমরকে চিঠি না পাঠানো পর্যন্ত নয়।” উমর (রা.) উত্তরে লিখলেন, তাকে রজম (প্রস্তারাঘাতে হত্যা) করতে হবে। কিন্তু চিঠি পৌঁছবার আগেই জিরার ইন্তেকাল করলেন। খালিদ (রা.) বললেন, “আল্লাহ জিরারকে অপমানিত করতে চাননি।” [সূত্র: বায়হাকির সুনান আল কুবরা, হাদীস নং ১৮৬৮৫]

এর পরবর্তী রিলেটেড পোস্ট: “প্রফেট মুহাম্মদের (সা.) দাম্পত্য জীবন নিয়ে নাস্তিক্যবাদীদের অভিযোগের ভিত্তি কী?

ফেইসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Jibon Rahman: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো বন্দীকে নির্বাসনে না পাঠিয়ে কিংবা জেলখানায় না দিয়ে সীমিত নাগরিক অধিকার দিয়ে সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের সুযোগ প্রদানের নাম দাসপ্রথা! আর এই জন্যই এটাকে ইসলাম একেবারে নিষিদ্ধ করে নাই। তবে এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে এই প্রথা বিলুপ্ত হতে বাধ্য!

আমি আপনার স্ট্যাটাস পড়ে এই রকম বুঝতে পেরেছি, আমি কি স্ট্যাটাসের মূল থিম ধরতে পেরেছি?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ। এর পাশে আরেকটা পয়েন্ট আছে। সেটা হলো, বিদ্যমান দাসব্যবস্থার সাথে মুসলমানরা অংশগ্রহণ করেছে। মুসলমানরা দাস বাজারে গেছে এবং দাস কেনাবেচা করেছে। সে ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নিছক যুদ্ধবন্দী ব্যবস্থাপনার গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যে সামাজিক অপব্যবস্থার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, তা নিরসনে আমাদেরকে অবলম্বন করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি ক্রমধারার নীতি।

Jibon Rahman: কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সমাজের গভীরে প্রোথিত শিকড়সম্পন্ন সমস্যা সমাধানের এই শিক্ষাটা আমরা গ্রহণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি! দ্রুত ফল লাভের তাড়নায় আমরা অস্থির!

Tanziya Islam Tanha: স্যার, আমি কোথাও দেখেছিলাম, স্বামী-স্ত্রী একসাথে যুদ্ধবন্দী হলে স্ত্রী কোনো পুরুষের যৌনদাসী হবে না, সেই স্বামীর স্ত্রী হিসেবেই থাকবে। ব্যাপারটায় তবে কি ইখতিলাফ আছে?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ, এ ব্যাপারে মতদ্বৈততা আছে। নাস্তিক্যবাদীদের কথার জবাব দেওয়ার জন্য আমি কঠোর অবস্থানটাকেই মূল অবস্থান ধরে নিয়ে আলোচনা করেছি।

Abu Zayeed Mohammed Sarwar: আপনি লিখেছেন, “ইসলাম দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করেনি। সংস্কার করেছে। এইসব সংস্কার এতই মৌলিক ছিলো, যার পরিণতিতে দাসপ্রথা ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।”

ইতিহাস তা সাক্ষ্য দেয় কি? দাসপ্রথা ইসলামিক কোনও শক্তির দ্বারা উচ্ছেদ হয়নি। অটোম্যান সাম্রাজ্য থেকে ভারতবর্ষ, যেখানেই মুসলিম শাসন ছিল, সেখানেই বিভিন্ন মাত্রায় নতুন দাস সংগ্রহ, দাস বিক্রির বাজার এগুলো ছিলো। প্রায় ১৮০০ সাল পর্যন্ত অটোম্যান সুলতানেরা নতুন দাস সংগ্রহ করতেন রাজ্য পরিচালনার জনশক্তি হিসেবে। সেখানে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্য দাস বাজার ছিলো, যেখান থেকে যে কেউ দাস কেনাবেচা করতে পারতো। বর্তমান সোদি আরব ও আরব বিশ্বেও এই রকম হাট বহু স্থানে ছিলো। অটোম্যান সাম্রাজ্য ভাগ, বিভিন্ন নয়া রাষ্ট্র তৈরি ও স্বাধীনতার শর্ত হিসেবে ব্রিটেন ও ফ্রান্স যখন দাসপ্রথা বিলুপ্তির শর্ত দেয়, তখন থেকে আরব বিশ্বে দাসপ্রথা বন্ধের কার্যক্রম শুরু হয় প্রকৃতভাবে। এই দেশগুলো দাসপ্রথা অবৈধ ঘোষণা করে মাত্র ৪০-৫০ বছর আগে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলামে বহু বিবাহের অনুমতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, পর্যালোচনা, আপত্তি ও যুক্তি ইত্যাদি আছে। অথচ, বাস্তবতা হলো অধিকাংশ মুসলমানই হলো একগামী বা non-polygamous। দাসব্যবস্থা নিয়েও ব্যাপারটা সেরকম। প্রবন্ধের মধ্যে উল্লেখ করেছি, দাসব্যবস্থা ইসলাম প্রচলন করেনি। বরঞ্চ তখনকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে ইসলাম এ বিষয়টাকে স্বীয় আদর্শের পরিধির মধ্যে রেগুলেইট করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে বা ইসলামী রাষ্ট্রে এটি বিলুপ্ত করা ছিল ডিফিকাল্ট। বিষয়টি বিশেষ করে রাষ্ট্রসমূহের যুদ্ধনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে এটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি।

ইসলাম কেন এটিকে সরাসরি নিষিদ্ধ করেনি, শুধুমাত্র সেটার উপর ফোকাস করে কেউ যদি আলোচনা করে, তাহলে ব্যাপারটা তার কাছে যে রকম নেতিবাচক মনে হবে, এর পাশাপাশি ইসলাম দাসদের কীভাবে ট্রিট করেছে, তা যদি তিনি যাচাই করে দেখেন তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন, ব্যাপারটা মানবিকতার দিক থেকে ছিল অনেকখানি সহনীয়।

এসব কিছুর পরেও আমি যেহেতু ইতিহাসের গবেষক নই, সেজন্য ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ যদি আমার এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে, সে ক্ষেত্রে আমি সরাসরি মোকাবেলাতে অগ্রসর হবো না। যেহেতু ইতিহাস আমার আগ্রহের বিষয় নয়। আমি সাধারণ জ্ঞান থেকে যতটুকু বুঝেছি ততটুকুই শুধু পাঠকদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি।

যে কোনো ধরনের আলোচনার একটা গোড়ার বিষয় বা মূল আলোচনা থাকে। সেই বিষয়টাতে যদি আমরা আগেভাগে একমত হতে না পারি, তাহলে বাদবাকি সব বিষয়ে যে আমরা একমত হতে পারবো না, তা বলাই বাহুল্য।

মুসলিম রাজা-বাদশাদের কর্মনীতি বা কাহিনীর দায়-দায়িত্ব ইসলাম নিবে কিনা? এ ব্যাপারে আমার অবস্থান মাঝামাঝি। ইসলামের সাথে এর অনুসারীদের কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নাই, এই অবস্থানটাকে আমি অগ্রহণযোগ্য ও প্রান্তিক পজিশন বলে মনে করি। আবার, মুসলিম রাজা-বাদশারা, বৃহত্তর অর্থে মুসলমান হিসেবে পরিচিত লোকেরা যা-ই করেছে, তার সব কিছুকে ইসলামের ওপর চাপানোর প্রবণতাকেও ভুল বলে মনে করি। যেহেতু, ইসলামের রয়ে গেছে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সহজলভ্য মূল উৎসসমূহ, যেগুলোকে আমরা কোরআন ও হাদীস হিসেবে জানি।

তাই দাসব্যবস্থা বা এ রকম যে কোনো কিছু সম্পর্কে কোনো বিশেষ রাজা-বাদশা বা বিশেষ কোনো মুসলিম অঞ্চলে কোনো জুলুম, অত্যাচার বা অমানবিক কোনো কিছু হয়ে থাকলে সেটার দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গেরই হবে। কথাটা ওভারঅল বিবেচনার জন্য বললাম।

বিতর্কিত কোনো বিষয়ে আলোচনারত পক্ষদ্বয়ের দায়িত্ব হলো, নিজ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা। যেটা আমি আমার নিবন্ধে করার চেষ্টা করেছি। যাই হোক, অর্থবহ মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ভালো থাকেন।

Abu Zayeed Mohammed Sarwar: আপনি বলেছেন, “আন্তর্জাতিকভাবে বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে বা ইসলামী রাষ্ট্রে এটি বিলুপ্ত করা ছিল ডিফিকাল্ট। বিষয়টি বিশেষ করে রাষ্ট্রসমূহের যুদ্ধনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে এটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি।”

সবার আগে মদ নিষিদ্ধ করা গেছে, সুদ নিষিদ্ধ করা গেছে, শুধু দাসপ্রথার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতার দোহাই দেয়াকে যুক্তি হিসেবে অদ্ভুত লাগলো। ইসলাম ধীর কিন্তু স্টিডি মেথডে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করতে চেয়েছে, এটাও ‘সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে’ কম্প্রিহেন্ড করতে পারলাম না। সর্বোচ্চ বলা যায়, ইসলাম তুলনামূলকভাবে সেকালের বিবেচনায় দাসদেরকে বেটার ট্রিটমেন্টের নির্দেশনা দিয়েছে। যতটুকু আমি জানি, মুক্ত মুসলিমদেরকে দাস বানানো যাবে না; মালিকের ঔরসজাত দাসীর সন্তান, স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানের সমান অধিকার পাবে; ভালো ব্যবহার করতে হবে; দাসমুক্তি অনেক বড় সওয়াবের কাজ ও বিভিন্ন কাফফারার একটি উপায়। এগুলো ছাড়া ইসলামে দাসপ্রথার ব্যাপারে আর তেমন কোনো বক্তব্য নাই।

স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে যুদ্ধবন্দি হলে অটোম্যাটিক্যালি তালাক হয়ে যাবে (এবং সেই স্ত্রীকে বন্টন করা যাবে, সুন্নাতে এর উদাহরণ আছে বলে অনেক জায়গায় পেয়েছি)। এই ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বললেন, সিভিলিয়ান হিসেবে যুদ্ধ করার শাস্তি এটাই। আর স্বামী যুদ্ধে নিহত হলে বা তাকে মেরে ফেলা হলে স্ত্রীকে দাস হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বললেন, “অর্থনৈতিক, মানবিক ও নৈতিক বিবেচনায় ইসলাম এই দুইয়ের মাঝামাঝি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”

আলোচনা আর বাড়ালাম না। দাসপ্রথা ইসলামে হালাল হলে হালাল, হারাম হলে হারাম, তালাকের মতো মাকরূহ হলে মাকরূহ। অন্যদের চাপে বাতিল বা পরিমার্জিত করার পর, “ইসলাম এটাই আসলে চেয়েছে” বলাটা অনেকদিন ধরেই দেখছি। “ইসলাম দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করেনি। সংস্কার করেছে। এইসব সংস্কার এতই মৌলিক ছিলো, যার পরিণতিতে দাসপ্রথা ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।” এই রকম প্রিজাম্পশন নিয়ে ইতিহাস সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনাই অস্বীকার করা যাবে কি?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: না ভাই, ইতিহাস তো স্বীকার করতেই হবে। জানতে হবে। আমি যেহেতু ইতিহাস বিশেষজ্ঞ নই, সেহেতু ঐতিহাসিক কোনো বিষয়ে কোনো প্রকার বিতর্কে লিপ্ত হবো না। কথাটা পরিস্কার।

আমি শুধু আমার যুক্তি এবং বক্তব্যকে তুলে ধরেছি মাত্র। এসব বক্তব্যের কোনোটাই কনক্লুসিভ নয়। একই সেলফোনের প্যাটার্ন লক যেমন বিভিন্ন রকমের হতে পারে, তেমনি একই তথ্য-উপাত্ত থেকে যে কেউ যে কোনো ধরনের উপসংহারে পৌঁছতে পারে। কে কী ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সেটা নির্ভর করছে যার যার মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

মদ এবং সুদ– এর কোনোটাই তখনকার সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপরে তেমন কোনো প্রভাব রাখার মতো কিছু ছিল না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ছিল নগদ কারবারের ব্যাপার। সুদ ছিল অভ্যন্তরীণ তহবিল বা পুঁজি সংগ্রহের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মদ এমন কোনো পণ্য ছিল না, যেটার উপর জাতীয় আয় নির্ভরশীল।

অপরদিকে সুদ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি জারি ছিল তখনকার সময়ে প্রচলিত লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যবসার ধরন। তখনকার ব্যবসায়ে ছিল সুদ এবং অংশীদারিত্ব উভয়ই। এর একটি তথা সুদ নিষিদ্ধ করে চালু রাখা হয়েছিল অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যবসার পদ্ধতি। তাই একটি বিশেষ ও নির্দিষ্ট ধরনের লেনদেন তথা সুদকে নৈতিক কারণে বন্ধ করে দেওয়াতে পুরো ব্যবস্থাটা ধ্বসে পড়েনি।

অথচ তখনকার সব সমাজ ও সভ্যতার অন্যতম ভিত্তি ছিল দাসপ্রথা। সেটা ইসলামসহ সবগুলো সভ্যতার জন্য প্রযোজ্য। তাই সুদ ও মদ নিষিদ্ধের মতো দাসব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা ছিল না অতটা সহজসাধ্য।

আর না ভাই, আমি কোনো অ্যাপোলোজেটিক মানুষ নই। এটা আমার অন্য লেখা পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন। আমি শুধু বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করেছি এবং আমি যা বুঝেছি সেটাকে আমি শেয়ার করেছি।

Abu Zayeed Mohammed Sarwar: প্রশ্ন ১: “স্বাধীন মানুষকে জোর করে দাস বানানো ও স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণ করাকে ইসলাম হারাম করেছে। হত্যা করা ও মুক্তি দেয়ার বিকল্প হিসাবে শুধুমাত্র যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস হিসাবে গ্রহণ করার কথা ইসলাম বলেছে।” অমুসলিম কাউকে জবরদস্তি দাস বানানো যাবে না, এ রকম কোনো দলিল আছে কি? মুসলিম শাসকদের এ ধরনের অনুশীলন ব্যাপক আকারে ছিলো?

প্রশ্ন ২: “তখনকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দাসদের ভূমিকা ছিলো ব্যাপক।” মক্কা-মদীনায় প্রতিষ্ঠিত রাসূল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিলোপে স্থানীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যা হতো কি? স্থানীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি মেনে নিয়েই কি আমেরিকায় দাসপ্রথা বিলোপ করা হয়নি?

প্রশ্ন ৩: “ইসলামপন্থীগণ দাসব্যবস্থা বিলোপের ব্যাপারে ইসলামের এই ক্রমধারা…।” এই ধারণার পেছনে কোনো দলিল আছে কি? কিংবা তালাকের মতো এটা অপছন্দনীয় হালাল, এই ধরনের কোনো দলিল আছে কি? যুদ্ধবন্দী মাত্রই দাস, আর কোনো বিকল্প নাই– এই নিয়ম জারী করে দাসপ্রথাকে চিরকাল ধরে হালাল করা হলো কিনা? বন্দীদেরকে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত করে দেয়া অসম্ভব ছিলো কিনা?

প্রশ্ন ৪: “ইসলামী শরীয়াহ অনুসারে, মুসলিম বাহিনীর হাতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আটক হওয়ার কারণে বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীদের পূর্বেকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমনকি স্বামীসহ বন্দী হলেও। এটি হলো সিভিলিয়ান হয়েও যুদ্ধে আসার শাস্তি।” তৎকালীন আরব-বেদুইন সমাজে পেশাভিত্তিক সৈনিক শ্রেণী ছিলো, এর কোনো প্রমাণ আছে কি? প্রয়োজনে সিভিলিয়ানদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ঠিক নয়, এ ধরনের কোনো নিয়ম ছিলো কি? মুসলিম সেনাবাহিনীর সবাই কি পেশাগত সৈনিক ছিলো? আর সিভিলিয়ানরা কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য স্পেশাল শাস্তির বিধান থাকা যৌক্তিক মনে করেন কি?

প্রশ্ন ৫: “প্রতিদিন বিয়ে করে খেয়ালখুশি মতো তালাক দিয়ে কেউ চাইলে বৈবাহিক ব্যবস্থার কাঠামোকে ঠিক রেখে এর অন্তর্গত উদ্দেশ্যকে উল্টিয়ে দিতে পারে। ‘উলিল আমর’ তথা কার্যবিধায়ক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিশেষ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখবেন।” এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ারের প্রমাণস্বরূপ কোনো দলিল আছে কি?

আরো অনেক জিজ্ঞাসা আমার মনে উদয় হয়। এই যদি আমার অপরাধ হয়, তাহলে আমি এই কমেন্ট ডিলিট করে দেবো। আপনাকে ফলো করি শুধু এই কারণে যে আমি একজন যৌক্তিক বিবেচনাসম্পন্ন ও মেধাবী ব্যক্তির কাছ থেকে ইসলামের ধারণাগুলোর ফিলোসফি বুঝতে চাই। বিব্রত করা বা জেতা আমার উদ্দেশ্য নয়। ‘চাই প্রশ্ন করার অধিকার’– আপনার এই শ্লোগানের বলে সাহস পেয়ে প্রশ্নগুলো রাখলাম।

আমার মতে আপনি যা লিখছেন বা ভাবছেন, তার অনেকগুলোই সিউডো-সাইন্সের মতো, যুক্তির মতো লাগে, আসলে সেলফ-ডিলিউশন বা আত্মপ্রবোধের উদাহরণ। যুক্তি দিয়ে ধর্ম পালন না করে, বিশ্বাস দিয়ে ধর্ম পালন করার দাবি করলে এই প্রশ্ন আপনার উদ্দেশ্যে রাখতাম না। সালাম।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: প্রশ্ন ১-এর উত্তর: স্বাধীন ব্যক্তিকে কেনাবেচা নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত হাদীস:

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরূদ্ধে যাবো, (১) যে আমার নামে শপথ করে অতঃপর বিশ্বাসঘাতকতা করে, (২) যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে (ক্রীতদাস হিসেবে) বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে, (৩) যে কোনো মজুরকে নিযুক্ত করে তার থেকে পরিপূর্ণ কাজ গ্রহণ করে, অথচ তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না। [সহীহ বুখারী, হাদীস নম্বর- ২২২৭; ইংরেজি অনুবাদ: ভলিউম-৩, বুক-৩৪, নম্বর- ৪৩০; https://sunnah.com/urn/20920]

প্রশ্ন ২-এর উত্তর: তখনকার সময়ে দেশে দেশে ছিলো দাসপ্রথা। ইসলাম একতরফভাবে এটি নিষিদ্ধ করলে শত্রু সৈন্যদের হাতে ধৃত মুসলিমদের দাস করার সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ বা গ্রহণের থ্রেট জারি রাখা সম্ভবপর হতো না। রাজনৈতিক ও সামরিক কারণে সশ্রম কারাদণ্ডের মতো অন্তরীণ অবস্থা ছাড়া ইসলাম দাসদের যেসব মানবিক অধিকার দিয়েছে সেগুলোর দিকে লক্ষ করলে যে কেউই বুঝতে পারবে, ইসলাম মূলত দাসপ্রথার বিরোধী। ইসলামে দাসপ্রথার সীমিত অনুমোদনের বিষয়টি মূলত সামরিক কৌশলগত। অর্থনৈতিক দিকটা হলো এর কনসিকোয়েন্স বা ফলোআপ ইফেক্ট, যা মুসলমানদের পক্ষে গেছে।

প্রশ্ন ৩-এর প্রথমাংশের উত্তর: এ রকম ভুরি ভুরি আয়াত ও হাদীস পাবেন। আমি আপাতত দুটো রেফারেন্স দিচ্ছি:

মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য সম্পদ ব্যয় করা বড় সৎকাজ।

“অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান, এতীম আত্মীয়কে অথবা ধূলি-ধূসরিত মিসকীনকে, অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার।” [আল কোরআন, ৯০:১১-১৭]

“সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে।” [আল কোরআন, ২:১৭৭]

প্রশ্ন ৩-এর শেষাংশের উত্তর: “যুদ্ধবন্দী মাত্রই দাস, আর কোনো বিকল্প নাই”– আপনার এই ধারণা অসম্পূর্ণ। সীরাতের গ্রন্থগুলোর যে কোনো একটা পড়লেই আপনি তা জানতে পারবেন। আমার পোস্টের শুরুর দিকে আমি সংক্ষেপে এ বিষয়ে বলেছি:

“যুদ্ধবন্দীদেরকে কী করা হবে তা নিয়ে আমাদের কাণ্ডজ্ঞান যা সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত করণীয় হিসাবে বলে, ইসলামী শরীয়তও ঠিক সেইসব ব্যবস্থা গ্রহণের কথাই বলে। একটা বিকল্প হতে পারে, তাদেরকে পটেনশিয়াল থ্রেট মনে করে হত্যা করা। আরেকটা বিকল্প হতে পারে, বন্দি-বিনিময় চুক্তির আওতায় বা মুক্তিপণের বিনিময়ে বা শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে মুক্তি দেয়া। এর কোনোটাই যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যুদ্ধবন্দীদের জন্য শ্রমশিবির ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিকল্প হিসেবে তাদেরকে উপযুক্ত নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে ব্যক্তিগত-বন্দি তথা দাস হিসাবে ডিস্ট্রিবিউট করে দেয়ার মাধ্যমে এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা সহকারে সামাজিক জীবনে আত্মীকরণ করা হতে পারে একটি ব্যবস্থা।”

প্রশ্ন ৪-এর উত্তর: “সিভিলিয়ানরা কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য স্পেশাল শাস্তির বিধান থাকা যৌক্তিক মনে করেন কি?– আপনার প্রশ্নটা কন্ট্রাডিক্টরি। সিভিলিয়ান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে, যেভাবেই তা হোক না কেন, সেই সিভিলিয়ান আর সিভিলিয়ান থাকে না। যুদ্ধে পরোক্ষ অংশগ্রহণও কাউকে সৈনিক বানিয়ে দেয়। এমনকি সে যদি রান্নার কাজও করে।

প্রশ্ন ৫এর উত্তর: ইসলামী শরীয়তে কেবলমাত্র চারটি অপরাধের শাস্তি নির্ধারিত। যেগুলোকে হদ বলে। বাদবাকি সব অপরাধের শাস্তি বিচারকের এখতিয়ারাধীন। এগুলো সামষ্টিকভাবে ‘তাজীর’ বা সংশোধনমূলক শাস্তি বলা হয়।

দাসপ্রথা ও ইসলাম’ শিরোনামের এই নিবন্ধটি পড়তে পারেন। বিশেষ করে রেফারেন্সগুলো জানার জন্য।

Muhiuddin Mohammad Zobair: চমৎকার লেখা, কয়েকবার পড়েছি। “চারের অনধিক স্ত্রীর মতো যৌন সম্পর্কে গৃহীত দাসীর সংখ্যা” নিয়ে বক্তব্য স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। এবং অন্দরমহলে ‘হারেম’ বলতে কী বুঝিয়েছেন? ক্লিয়ার করবেন, স্যার।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কয়টা যুদ্ধ হবে, সেখানে কতজন যুদ্ধবন্দী ধৃত হবে, তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে নাকি দাস-দাসী হিসাবে বন্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো তো ছিল অনির্ধারিত বা আনসার্টেইন। তাই দাসীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে রাজা-বাদশারা যেভাবে একেকজন ডজনকে ডজন, এমনকি শতাধিক নারীদেরকে নিজের যৌন সম্পর্কে নিয়ে হারেম গড়ে তুলেছে, সেটার সাথে বিবাহ সংক্রান্ত ইসলামের নৈতিক চেতনা সাংঘর্ষিক।

Anisujjaman: এটা তো মুসলিমদের কাছে কেউ যদি যুদ্ধবন্দী হয়ে আসে সেটার বিধান বললেন। কিন্তু একটা বিষয় আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। ধরুন, কোনো মুসলিম নারী অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলেন। এখন, ইসলাম যেহেতু সর্বোপরি প্রযোজ্য, শরিয়তের বিধানও তো সর্বোপরি প্রযোজ্য হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে কোনো মুসলিম নারীর সাথে কোনো অমুসলিম যদি ঠিক একই রকম আচরণ করে, যেমনটি আপনার লেখায় ফুটে উঠেছে, সেক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিরোধীপক্ষ এমনটা করতে পারে, সুযোগ পেলে করবে, যা তারা করে থাকে। সেজন্যই তো এ রকম পাল্টা ব্যবস্থা।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

৩ Comments

    1. ইসলামে যৌনতা নিবারণের একমাত্র উপায় বৈবাহিক ব্যবস্থা। এর অন্যথা ব্যভিচার। আমি দেখিয়েছি, দাসীর সাথে মালিকের যৌন সম্পর্ক ব্যভিচারের লক্ষণযুক্ত নয়; বরং তা এক ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক।

      সে যাই হোক, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মতো পরিবারও একটা প্রতিষ্ঠান। সমাজের ক্ষুদ্রতম একক প্রতিষ্ঠান। পরিবার নামক এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে নেতৃত্বের ক্রমসোপান। স্বামী হলেন স্ত্রীর ওপর একজিকিউটিভ লিডার। সে জন্য আহলে কিতাব নারী বিয়ে করা গেলেও আহলে কিতাবী পুরুষের সাথে মুসলিম নারীর বিয়ের অনুমতি নাই। একই কারণে পুরুষ দাসের সাথে মালিক মুসলিম নারীর যৌন সম্পর্ক অনুমোদিত নয়। ব্যাপারটা পারিবারিক ব্যবস্থাপনাগত।

      বলাবাহুল্য, আইন করা হয়, যে কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রে, সার্বিক বিবেচনায়। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির চেয়ে বরং সাধারণ অবস্থাকেই বিবেচনা করা হয়। ইসলামী আইনও তাই।

      এই বিষয়ে আপনি যদি এই লেখাটা পড়েন খুশি হবো।

      ‘দেনমোহর প্রসংগে বিয়ে বনাম লিভ-টুগেদার’ https://mozammelhq.com/post/896

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *