(১) সম্পত্তি বণ্টন ব্যবস্থা হতে শিক্ষণীয়
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তার দিকে খেয়াল করে যৌথ পরিবার প্রথাকে ইসলামী শরীয়াহ বাধ্যতামূলক না করলেও সম্পত্তি বণ্টন ব্যবস্থার ধরন ও মাতাপিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের বাধ্যবাধকতা থেকে যৌথ পরিবার প্রথার প্রতি ইসলামী জীবনব্যবস্থার সমর্থন লক্ষ করা যায়। ‘দেশের প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর আমি অধীন নই’ – কোনো আর্মি অফিসার বা সৈনিকের এমন বেহুদা কথার মতো ‘শশ্বড়-শাশুড়ির প্রতি বউয়ের দায়দায়িত্ব নাই’ – এই কথাটিও হচ্ছে তেমন ধরনের একটা বেহুদা-বাতিল কথা।
(২) অংক কী বলে?
‘গ’ যদি ‘খ’ কে মানতে বাধ্য হন। ‘খ’ যদি ‘ক’ কে মানতে বাধ্য হন। তাহলে, ‘গ’, ‘ক’ কে মানতে বাধ্য কি না, এটি হলো প্রশ্ন। অর্থাৎ [‘গ’˂’খ’˂’ক’] হলে [‘গ’˂’ক’] হয় কি না। অথবা, ‘ক’-এর অধীন যদি হয় ‘খ’, ‘খ’-এর অধীন যদি হয় ‘গ’, তাহলে ‘গ’, ‘ক’-এর অধীন কি না? প্রশ্ন হচ্ছে, ‘গ’, ‘খ’এর কথা-নির্দেশ শুনতে বাধ্য হলেও তিনি ‘ক’এর কথা শুনতে বাধ্য কিনা। ‘ক’>’খ’>’গ’ হলে ক>গ হবে কি? এখানে ‘ক’= মাতাপিতা, ‘খ’= উক্ত মাতাপিতার পুত্রসন্তান এবং ‘গ’= পুত্রবঁধু। কোরআন-হাদীসের এতদসংক্রান্ত নির্দেশ ও নির্দেশনাগুলোর আক্ষরিক ও ভাবগত অর্থ হলো ছেলের মধ্যস্থতায় বউ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর ন্যায়সংগত ‘কথা’ শুনতে বাধ্য। সালাফি-ফেমিনিস্ট-ইসলামিস্ট কারো এটি মানতে অসুবিধা হলে তিনি আমাকে অংকটি মিলিয়ে দিন, প্লিজ! অথবা, … সংশোধন হন, আল্লাহর ওয়াস্তে!
(৩) ‘ফেতনার আশংকা’র ফেতনা
সালাফি-ফেমিনিস্ট-ইসলামিস্টরা হয়তো বলবেন, ‘ফেতনার আশংকা’ না থাকলে তো একসাথে থাকতে অসুবিধা নাই। যদিও বাস্তবে উনারা সদাসর্বদাই ‘ফেতনার আশংকা’তে ভোগেন! এই ‘ফেতনার আশংকা’র শংকাটাই হলো বাস্তবে কট্টরপন্থীদের (বাস্তবে সুবিধাবাদী) অন্যতম মূল সমস্যা। আমরা জানি, দুর্বল ব্যক্তিরাই সহজে আক্রান্ত হয়। যত্রতত্র ‘শংকা’বোধ করা হলো কিছু লোকের নির্লজ্জ বৈশিষ্ট্য। সদাসর্বদা ‘ফেতনার আশংকা’বোধ করা ফেতনাবাজ পুরুষরা নারী মাত্রকেই বাস্তবে পূর্ণসম্পর্কযোগ্য মনে করে। অনুরূপভাবে ভিতরে ভিতরে টগবগে ফেতনার আশংকাবোধকারী নারীরা পুরুষ মাত্রকেই বাস্তবে পূর্ণসম্পর্কযোগ্য কিংবা ধর্ষকামী মনে করে। অর্ধশতাব্দীর এ জীবনের বিস্তীর্ণ অভিজ্ঞতায় এটি লক্ষ করেছি।
হ্যাঁ, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক গায়ের মাহরাম যে কোনো নারী-পুরুষের মধ্যে (বৈবাহিক সূত্রে) বাস্তব পূর্ণসম্পর্ক হতে পারে। এটি তাত্ত্বিকভাবে সত্য। এবার বলুন, আপনি কি এ ধরনের সব নারী বা পুরুষের ক্ষেত্রে অনুরূপ সম্ভাবনা অনুভব করে থাকেন? আমি তো করি না। আমি তো মনে করি, কোনো সুস্থ মানসিকতার ব্যক্তিই তা করে না, করার কথা না। তাই, সব জায়গায় ‘ফেতনার আশংকা’ দ্বারা তাড়িত হওয়া এবং এ জন্য ‘নিজের সংসারে’ শ্বশুড়-শাশুড়ীকেও অপাংক্তেয় মনে করা অসুস্থ মানসিকতারই লক্ষণ বৈকি। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, ফেতনার আশংকাকে আপনি কখনোই গ্রাহ্য করবেন না। যতই ছাতা মাথায় দেন আর রেইনকোট পরেন, বৃষ্টির ছাঁট কিছুটা আপনার গায়ে লাগবেই। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা ‘ইল্লা মা জাহরা মিনহা’র কথা বলেছেন। যা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে তা অনুতাপসাপেক্ষে ক্ষমাযোগ্য।
দ্বিতীয়ত, ‘ফেতনার আশংকা’ সত্বেও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে, সামাজিক সম্পর্ক ও দায়িত্বপালন করে যেতে হয়। নারীদের মসজিদে প্রবেশাধিকার, এমনকি তাদেরকে ঘরের বাইরে যেতে দেয়াও, এক অর্থে, ‘ফেতনার আশংকা’কে বৃদ্ধিকরণ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। এর বিকল্প হতে পারে বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানাস ড্রিমে’র মতো পুরুষদেরকে ঘরে অবস্থানে বাধ্য করা! এর কোনোটিই কি সুস্থতা-স্বাভাবিকতার পরিচায়ক?
অতএব, আমাদের সমাজে কী চলে, সেটি দিয়ে নিজের ‘ফেতনা-মানসিকতা’কে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা না করে বিদ্যমান সামাজিক অসুবিধা ও অসংগতিগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে পরিবর্তনের চেষ্টা করাই সঠিক কাজ। যদ্দুর বুঝেছি, প্রচলিত সমাজকে আদর্শের যথাসম্ভব আদর্শ অবস্থার কাছাকাছি আনার চেষ্টা করাইতো ইসলামী আন্দোলনের কনসেপ্ট।
(৪) আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র হলেও এটি খুব সেন্সেটিভ একটা বিষয়
আমি সাধারণত ফিকহী মতবিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলি। কিন্তু, ‘পুত্রবঁধু শ্বশুড় বাড়ির কাউকে দেখ-ভাল করতে বাধ্য নন’ – এ জাতীয় নিতান্ত ভুল কথার প্রতিবাদ না করে পারি না। মাওলানা মওদূদী যেখানে নারীদেরকে শ্বশুড় বাড়ীতে যথাসম্ভব মানিয়ে চলার জন্য বলেছেন (রাসায়েল ও মাসায়েল দ্রষ্টব্য) সেখানে তাঁর অনুসারীদের বিরাট অংশকে দেখি পর্দার নামে এক ধরনের ভোগবাদী ইসলামে আত্মতৃপ্ত, বরং ‘সওয়াবের নিয়তে’ সেটিকে লেজিটিমেইট করার কোশেশ করছেন! অবাক লাগে, কষ্ট লাগে …! আফসোস, সমাজ ব্যবস্থার গোড়া কেটে সমাজ গড়ার, সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা ….!!
(৫) ক্ষুদ্র ও একক পরিবার প্রথাকে প্রমোট করা পাশ্চাত্য লিভিং টুগেদারকে প্রমোট করার সামিল
শক্তিশালী পারিবারিক ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার পূর্বশর্ত। শক্তিশালী ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজের ওপর ভর করেই কোনো ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গড়ে উঠতে ও টিকে থাকতে পারে। ক্ষুদ্র, একক ও আণবিক (small, single and atomic) পারিবারিক ব্যবস্থা পাশ্চাত্যের ‘লিভিং টুগেদারে’র মতো একটা ব্যাপার। এর কাছাকাছি ধরনের জিনিস। ইসলাম এসেছে জোড়া লাগাতে, সমন্বিত করতে। সম্পর্ক বাড়াতে। একসাথে বা যথাসম্ভব কাছাকাছি না থাকলে কখনোই সম্পর্ক বাড়ে না। তাই ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী বা আত্মস্বার্থবাদী এমন যে কোনো ব্যবস্থাই স্পিরিটের দিক থেকে ইসলামী মতাদর্শের চেতনাবিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য ব্যাপার।
(৬) প্রাইভেসি ও সেলফিশনেস
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদীদের কাছে প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অজুহাতই বড় ‘যুক্তি’। প্রাইভেসির ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা খুবই পরিষ্কার। প্রাইভেসি রক্ষার ব্যাপারে ইসলাম আপোষহীন, কঠোর। প্রাইভেসি হলো একটা সাংস্কৃতিক বোধ বা চেতনা, সেন্টিমেন্ট। প্রাইভেসি রক্ষার নামে আলাদা বাসায় থাকার কথা তারাই বলতে পারে যাদের আলাদা বাসায় থাকার মতো যথেষ্ট আর্থিক সংগতি আছে। কোনোমতে যারা থাকে, কষ্টে জীবনধারণ করে তাদের সেন্স অব প্রাইভেসি নাই, এটি বলা যাবে না। নিতান্তই পারভার্টেড-এভনরমাল ছাড়া প্রত্যেক মানুষেরই সেন্স অব প্রাইভেসি থাকে। সুরম্য অট্টালিকা নিবাসীরা বুঝতে না পারলেও একটি বা দু’টি কক্ষের ঘরে বসবাসকারী বৃহৎ-যৌথ পরিবারের সদস্যরা ঠিকই নিজেদের মতো করে প্রাইভেসি রক্ষা করে। কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলোর সম্যক বুঝ-জ্ঞানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মননশীল মন-মানসিকতা থাকা জরুরী। ইসলাম যদি কেবলমাত্র উচ্চবিত্তের জীবনযাপনের উপযোগী হতো তাহলে ইসলাম এ পর্যন্ত আসতে আসতে পারতো না। কী বলেন?
সে জন্য একটি মাত্র কক্ষের নিবাসে এমনকি দরজায় শুধুমাত্র পর্দা ঝুলিয়েও সোনালী যুগের মানুষেরা তাদের প্রাইভেসি মেনটেইন করেছেন। প্রাইভেসি মানে একা একা থাকা নয়। কোথাও প্রাইভেসির প্রপার প্র্যাকটিসে ত্রুটি থাকলে সেটি ভিন্ন বিষয় এবং তা কীভাবে সংশোধন করা যায়, অর্থাৎ লোকদের মধ্যে কীভাবে প্রাইভেসির সেন্স আনানো যায়, তা-ই চিন্তা ও আলোচনার বিষয় হতে পারে। বলাবাহুল্য, ইসলামে প্রাইভেসি রক্ষার মূল এপ্রোচ হচ্ছে সালাম দেয়া ও উত্তরের অপেক্ষা করা।
(৭) ইসলাম কি বড়লোকদের ধর্ম?
ইসলাম শুধুমাত্র বড়লোকদের জন্য আসে নাই। সবার জন্য এর সমান আবেদন, স্পেস। অর্থবিত্তের মালিক, বিশেষ করে পুঁজিপতিরা এটি ভুলে যান। ধনীদের জন্য ইসলাম, না গরীবদের জন্য ইসলাম? – এ ধরনের প্রশ্ন আদতে ভুল (category mistake) হওয়া সত্বেও কেউ যদি ইসলামের ফোকাস নিয়ে জানতে আগ্রহী হন তিনি এ নিয়ে জানার চেষ্টা করতে পারেন। আমি নিশ্চিত, তিনি শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে এভাবেই কনভিন্স হবেন যে, ধনীদের চেয়ে ইসলাম গরীবদের দিকে একটু বেশিই তাকায়। সুতরাং আর্থিকভাবে দুর্বল ও হতদরিদ্রদের জন্য শরিয়াহর অনুসরণকে অধিকতর কঠিন করে তোলে, ইসলামের নামে এমন কোনো বড়লোকি কাজকারবারকে প্রমোট করা যাবে না। ক্লিয়ার?
(৮) ব্যক্তির সুরক্ষা প্রয়োজনীয় হলেও সামষ্টিক অধিকার রক্ষা অতিপ্রয়োজনীয়
ব্যক্তির সুরক্ষা ও অধিকার এবং সমাজের সুরক্ষা ও অধিকার – ইসলামে এ দুটি পরিপূরক। যদি কখনো এই দুয়ের মধ্যে স্বার্থগত সংঘাত (conflict of interest) তৈরী হলে সেক্ষেত্রে ইসলামী মতাদর্শ বৃহত্তর প্রয়োজন তথা সামষ্টিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। স্ত্রীর পর্দা রক্ষা হলো একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। অপরদিকে বাবা-মা’কে সাথে রাখা হলো একটা বৃহত্তর বা সামাজিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপার। এক্ষেত্রে ইসলাম সংগত কারণেই বৃহত্তর বা সামাজিক স্বার্থের পক্ষে। এই দৃষ্টিতে পর্দা ইত্যাদির নামে আণবিক পারিবারিক ব্যবস্থার প্রচলন বা উকালতি ইসলামের এই মৌলিক নীতিকে লংঘন করে। একটি হলো ফোকাস বা অতিঅবশ্যকরনীয়, আর একটি হলো প্রয়োজনীয়। পর্দা করা ফরজ যাকে আমরা প্রয়োজনীয় বলতে পারি। এটি হলো যথাসম্ভব মেনে চলার, চেষ্টা করার ব্যাপার। অন্যদিকে মাতাপিতাকে দেখাশোনা করা, মেনে চলাও ফরজ। মাতাপিতাকে টেককেয়ার করা হলো ইসলামসম্মত পারিবারিক ও সমাজব্যবস্থার ফোকাস। এটি অতিঅবশ্যকরণীয়।
(৯) নারীনিগ্রহমূলক ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব
আমাদের সমাজে ঘরের পুত্রবঁধুদেরকে দাসী-বাঁদী বিবেচনা করার যে অভিযোগ সালাফি-ফেমিনিস্ট-ইসলামিস্টরা করে থাকেন তার এক ধরনের ঐতিহাসিক বাস্তবতা আছে। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষেত্রে এই অভিযোগটি অনেকটাই ঠিক। ক্ষুদিরামের ফাঁসির পরে তার স্মরণে রচিত গানের একটা পংক্তি হচ্ছে, ‘… তাদের নিয়ে ঘর করিস মা, বউদের করিস দাসী। একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।’ ঘরের বউদেরকে দাসী বিবেচনা করা হিন্দু ধর্মের ‘কণ্যাদান’ প্রথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মুসলিম সমাজে কখনো এটি ছিলো না। মুসলমান মেয়েরা, বিশেষ করে, কৃষক পরিবারের বউয়েরা ঘরের সব কাজই করতো। এখনও করে। করতে হয়। এটি collective interest এর বিষয়। গ্রামীণ হিন্দু মেয়েরাও তাদের শ্বশুড় বাড়িতে সব কাজ করে। পার্থক্য হচ্ছে, হিন্দু মেয়েদের ওই শ্বশুড় বাড়িই তাদের ধর্ম মোতাবেক তার জীবনের শেষ ঠিকানা, একমাত্র আশ্রয়স্থল। মুসলমান নারীদের ক্ষেত্রে বিষয় একেবারেই আলাদা। মুসলমান নারীরা নিজেদের শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সেবা করে, দেখাশোনা করে একান্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ হতে, নিজের বাবা-মা’র ক্ষেত্রে সে যা করে।
এটি সত্যি যে, ঘরের বউদেরকে উন্নত মানের দাসী-বাঁদী হিসাবে ট্রিট করার কুপ্রথা আমাদের সমাজে, বিশেষ করে কোনো কোনো অঞ্চলে চালু হয়ে গেছে। এটি বন্ধ করা জরুরী। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, যৌথ পরিবার ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করতে হবে। শুরুতে যেমনটা বলেছি, ইসলামে সম্পত্তি বণ্টন ব্যবস্থার যে ধরন, তাতে এটি স্পষ্ট যে, extended family protection is a must। একটা যৌথ পরিবারে, নিদেনপক্ষে যে ঘরে কোনো মুরুব্বী বা আত্মীয়-স্বজন থাকেন সেখানে সংশ্লিষ্ট দম্পতি বিশেষ করে সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে কতো বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন তা আণবিক পরিবারে বসবাসকারীরা কখনো বুঝতে পারে না। পারার কথাও না। ফলকথা হলো, পাশ্চাত্য ধাঁচে lawful living together-এর প্রচলন করা হলো নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মৌলিক মানবাধিকার ও শাশ্বত নৈতিকতাকে লংঘন করার শামিল। এটি মোটেও কাংখিত নয়। আদিকাল হতে নানা রকমের স্বার্থ ও সুরক্ষার জন্য মানুষ পরিবার, গোত্র ও সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে। পরিবারের ক্রমবর্ধনই গোত্র ও সমাজ তৈরী করে। তাই, পরিবার প্রথা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে ইসলামী জীবনাদর্শ ভংগুর হয়ে পড়া। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
(১০) অনুমোদন, অগ্রাধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য
নারীরা প্রয়োজনে আয়-উপার্জন করতে পারবে। এটি হলো অনুমোদন বা পারমিসিবিলিটি। ফোকাস বা উদ্দীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে পুরুষরাই আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা করবে। তেমনি প্রয়োজনে আণবিক বা একক বা ক্ষুদ্র পরিবার ব্যবস্থায় বসবাস করা যাবে। এটি নিষেধ নয়। কিন্তু ফোকাল পয়েন্ট বা প্রেফারড-প্যাটার্ন হচ্ছে বাবা-মা-ভাই-বোন ও নির্ভরশীলদেরকে সাথে কাছে রেখে নিবিড়ভাবে দেখা-ভাল (look after) করা। এর প্রক্রিয়া-পদ্ধতি-ধরন কী হবে, কেমনে করবেন, কতটুকু করবেন, বা করতে পারবেন সেসব ভিন্ন ইস্যু। নিতান্ত প্রায়োগিক ব্যাপার।
স্ত্রী-সন্তানের বাইরেও বাবা-মা-ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের প্রয়োজন ও সামর্থ্য সাপেক্ষে দায়-দায়িত্ব নেয়া হচ্ছে এই সংক্রান্ত ইসলামী আইনের দৃশ্যমান প্রবণতা ও ইসলামী নৈতিকতার অকাট্য দাবী। ‘লিটারালিস্ট’রা এসব বেশি খেয়াল করার কথা। অথচ, তারাই নানা অপশনের ফাঁক-ফোকরে, তারেক রমাদানের ভাষায়, ‘হালাল ক্যাপিটালিজমে’র ফেরি করে বেড়াচ্ছেন …!!
(১১) ব্যক্তিগত পারিবারিক অভিজ্ঞতা ও প্রেক্ষিত
আমার দাদারা ছিলেন ৮ ভাই ১ বোন। আমার বাবা উনার কাজিনদের মধ্যে সবার চেয়ে বড় ছিলেন। ছোট বেলা থেকে আমাদের ঘরে আত্মীয়-স্বজনরা সব সময়ে ভীড় করতো। থাকতো। আমরা নিজেরাইতো ৯ ভাই-বোন। একা একা থাকা, নিজের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সুখের ঢেঁকুর তোলার সুযোগ উনাদের ছিল না। আমরা একটা এক্সটেনডেড ফেমিলিতে বড় হয়েছি। সিঙ্গেল ফ্যামিলির চেয়ে জয়েন্ট ফ্যামিলি, সিস্টেম হিসাবে অ-নে-ক ভালো। সুবিধার। বর্তমানে পেশাগত কারণে আমরা সব ভাইবোনের একসাথে থাকা অসম্ভব। চট্টগ্রামে আমার ৪ ভাইবোন এক বিল্ডিংয়ে থাকে। তারা শুধু রাত্রে ঘরের দরজা বন্ধ করে। সব ফ্ল্যাট অলমোস্ট অল টাইম খোলা থাকে। খাওয়া দাওয়াও সেরকম। বাচ্চারা সব ঘরকে নিজের মনে করে। যেখানে ইজি ফিল করে সেখানেই গেঞ্জাম করে। বাবা বেঁচে থাকতে আমরা সবাই মিলে বড় আপার বাসায় ছিলাম। আমার সরকারী আমলা বড় ভাই সহ। পরবর্তীতে আম্মা আমাদের কারো বাসায় ক’দিন থাকলে আমরা ধন্য মনে করতাম। আমাদের ৯ ভাইবোনের ছেলে মেয়েরা পরষ্পরকে নিজের আপন ভাইবোনের মতই মনে করে। একা একা যারা নিজের ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকে তারা কখনো এই আন্তরিকতা-হৃদ্যতাকে উপলব্ধি করতে পারবে না। অসম্ভব।
(১২) একটা উদাহরণ
মনে করুন, আপনি পরিবারের বড় সন্তান। আপনার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী নিয়ে আপনি ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরের একটা ছোট্ট বাসায় উঠেছেন। আপনার ছোট ভাইটি বা আপনার স্ত্রীর ছোট বোনটি ঢাকা বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে আপনার বা আপনার স্ত্রীর তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নাই। আপনার ভাই বা শ্যালিকাকে হলে রেখে পড়াবার সামর্থ্যও আপনার নাই। এমতাবস্থায় আপনার ভাই বা শ্যালিকাকে বাসায় পর্দা-সংশ্লিষ্ট সমস্যা সত্বেও আপনি পড়ালেখার জন্য রাখবেন কি না? আপনি যদি সালাফি-ফেমিনিস্ট-ইসলামিস্ট হোন, ধারণা করছি, আপনি ভাইটির বা শ্যালিকাটির থাকা ও পড়ালেখার ‘অন্য কোনো’ (বায়বীয়) ব্যবস্থা করার কথা বলবেন। অর্থাৎ তারা গ্রামে থেকে যদ্দুর পারে পড়ুক, আপনি যা পারেন টাকা পয়সা পাঠাবেন। এক্ষেত্রে আপনি তাদের উচ্চশিক্ষা লাভ ও সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেয়েও আপনার বা আপনার স্ত্রীর ‘পর্দা রক্ষা’কে প্রেফার করলেন …!
এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমার বাবা পড়েছিলেন। আমার বড় ভাই-বোনেরা পড়েছিলেন। তারা কী করেছিলেন? তারা নিজ নিজ পোষ্যদেরকে কষ্ট করে হলেও বাসায় রেখে পড়িয়েছিলেন। আমারতো মনে হয় আমার বাবা-মা ও বড় ভাই-বোনেরা সঠিক কাজটিই করেছিলেন। তারা কোনো প্রচলিত ইসলামী সংগঠনের অনুসারী ছিলেন না। তারা ছিলেন ট্রুলি প্র্যাকটিসিং মুসলিম। ছোট ভাই বা শ্যালিকার পরিবর্তে এই উদাহরণে আপনি বাবা-মা বা ঘনিষ্ট অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজনকেও চিন্তা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে হতে পারে গ্রামের বাড়িতে তাদের দেখাশোনা করার কেউ নাই। অথবা তাদের চিকিৎসার দরকার।
ইসলামকে আমরা নৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে সামগ্রিকভাবে বুঝবো, নাকি একে খণ্ডিতভাবে নিজের সুবিধা মোতাবেক ব্যাখ্যা করবো, সেটিই হচ্ছে মূল বিবেচ্য বিষয়।
[লেখার উপলক্ষ্য: ফেসবুকে জনাব শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকীর ইসলামে ‘শ্বশুরবাড়ি’ ও ‘যৌথ পরিবার’ বিতর্ক: বাংলাদেশি এক ইসলামিস্ট বোনের স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে শীর্ষক নোটটি আমার ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করতে গিয়ে যে ফরোয়ার্ডিং দিয়েছি তার সূত্রে এই লেখা।]
ফেসবুকে প্রথম প্রকাশিত লেখাটিতে মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য:
Masud Zakaria: ইবনে খালদুনের আসাবিয়তের নিরীখে আলোচনা করা যেতে পারে। পরিবার ছাড়া সমাজ হবে না। একটা আবছা আবহ ছাড়া ব্যক্তি বলে তো কিছু নাই। আছে পরিবার, আছে সম্পর্ক, সমাজ। পরিবারকে একটা এন্টিটি ধরা যেতে পারে…।
Sabuj Kabir: পর্দার বাড়াবাড়িও পরিবার ভাংছে।
Nure Alam Masud স্যার, এখানে আপনি দুটি দৃষ্টিকোণকে একত্রে এনেছেন, এবং সেটা অপরিহার্যও বটে। একটি সমাজবিজ্ঞানী/দার্শনিকের দৃষ্টিকোণ, অপরটি ফিক্বহী দৃষ্টিকোণ। তবে ফিক্বহী বিষয়টিতে আপনি ফিকাহর প্রমাণের উপায় অবলম্বন করে যুক্তি দেননি। যদি:
১. প্রথমত বিষয়টির শরয়ী বাধ্যবাধকতা প্রমাণ করতেন ও
২. সামাজিক দিক উপস্থাপন করতেন, তবে ভালো হতো।
‘স্ত্রী স্বামীকে মানতে বাধ্য’ – এই premise ব্যবহার করে আপনি গ>খ>ক আর্গুমেন্ট দিয়ে শরীয়ার প্রমাণটি সমাপ্ত করেছেন। এখন এই premise কোনোভাবে ভুল প্রমাণিত হলে অথবা premise এর পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞায়ন “স্বামীকে মান্য করাকে” সীমিত করে আনলে আপনার সামাজিক দৃষ্টিকোণসহ পুরো আর্গুমেন্টটা ভেঙে পড়বে। কারণ এক্ষেত্রে শরীয়া বিরোধী কোনো সামাজিক প্রস্তাবনা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না।
‘স্ত্রী স্বামীকে মানতে বাধ্য’ – এটার ধর্মীয় প্রমাণের আর্গুমেন্ট ছাড়া লেখাটির ভিত্তি দুর্বল থাকলো। “মওলানা মওদুদী বলেছেন…” মওলানা মওদুদী তো শরীয়ার দলীল হতে পারেন না।
Mohammad Mozammel Hoque: স্বামীর প্রতি স্ত্রীর বাধ্যবাধকতার বিষয়টিকে আমি অবভিয়াস মনে করে, অর্থাৎ সবার জানা আছে মনে করে বিস্তারিত সূত্র উল্লেখ করি নাই।
Nure Alam Masud: আপনি অবশ্য বাধ্যবাধকতাটাকে যে মাত্রায় মনে করেন (বলে মনে হলো), বা আপনার দৃষ্টিতে বাধ্যবাধকতার যে scope, তা স্বামীর “মধ্যস্থতায়” শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করতে স্ত্রীকে ধর্মীয়ভাবে বাধ্য করলেও, আমি এমন কোনো অকাট্য ইসলামী দলীল পাইনি যা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্যকে ঐ মাত্রায় অপরিহার্যভাবে নিয়ে যাবে/scope-কে অতদূর বিস্তৃত করবে। তবে বোধকরি এখানে সে আলোচনার স্কোপ নেই। আমি আমার চিন্তাটা রেখে গেলাম আরকি। 🙂
Mohammad Mozammel Hoque: বিবেচ্য আর্গুমেন্ট ছিলো, স্ত্রী কেবলমাত্র স্বামীর অনুগত থাকবে। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির আনুগত্য করা স্ত্রীর শরয়ী কর্তব্য নয়–সালাফি-ফেমিনিস্টদের এই দাবী খণ্ডনের জন্য আমি যুক্তি দিয়ে আলোচনা করেছি। এখন “স্ত্রী স্বামীকে মানতে বাধ্য – এটার ধর্মীয় প্রমাণের আর্গুমেন্ট” দাবি করাটা কতটুকু প্রাসঙ্গিক? এটি কি straw man fallacy হলো না?
মাওলানা মওদূদীর কথা স্বয়ং কোনো দলীল নয়। এটি জাস্ট প্রসঙ্গক্রমে এসেছে।
Nure Alam Masud: ওহ, তাহলে তো অবশ্যই স্ট্র ম্যান। “স্ত্রী কেবলমাত্র স্বামীর অনুগত থাকবে।” এই কথার সূত্র ধরে এসেছে, তা কি নোটে উল্লেখ ছিল? আমি মেবি স্কিপ করে গেছি। আর শেষের যে লিঙ্ক দিয়েছেন তাতে যাইনি, তাই জানা হয়নি।
তাহলে ঠিক আছে।
(তাহলে আবার মূল premise-টাতে আমার আপত্তি আছে।)
Mohammad Mozammel Hoque: পুরুষ নারীর পরিচালক – এই মর্মের কোরআনের আয়াত এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদার অনুমতি থাকলে স্বামীকে সিজদার জন্য স্ত্রীকে আদেশ করা হতো – এটিসহ এই মর্মের হাদীসগুলো হতে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্যের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন। আর সম্পত্তি বণ্টনে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় সব নিকট আত্মীয়ই ভাগ পেয়ে থাকেন। অতএব কোন প্রেমিজটাতে আপনার আপত্তি বুঝতে পারলাম না।
ক্ষেত্রবিশেষে চাচা, বাবা, মা, ভাই, বোন, দাদা, দাদী, নানা, নানী, স্বামী, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে – পারিবারিক গঠন-কাঠামো ভেদে এরা পরষ্পরের কাছ হতে উত্তরাধিকার পেয়ে থাকেন। পরিবারের লোকেরাই সম্পত্তির ভাগ পান। নিছক প্রতিবেশিরা পান না। যারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তারা সবাই এই অর্থে পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
Nure Alam Masud: উত্তরাধিকার আইন সুস্পষ্ট। এই নিয়ে আমার কোনো কথা নাই। এর সামাজিক নানান aspect আছে, সেগুলিও স্বাভাবিক, ইসলামের অর্থনৈতিক বিধানের নানান aspect থাকেই।
কিন্তু “পুরুষ নারীর পরিচালক” (পরিচালক, ম্যানেজার — অনুবাদ নিয়ে বহু আলোচনা আছে), সেই ৪:৩৪ আয়াত থেকে “স্বামীকে মান্য করতে স্ত্রী বাধ্য” এটা imply/infer করা হলো কিভাবে?
হাদীসটিকে আলোচনায় আনছি না, কেননা হাদীসের গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ড বিস্তর আলোচনাসাপেক্ষ ব্যাপার ও নানাজনের কাছে নানারকম। কিন্তু যেহেতু কুরআনে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকলে কারো মানতে সমস্যা থাকে না, যেমন মীরাসের আয়াতগুলি অতি স্পষ্ট, তেমনি করে কি “স্বামীর আদেশ মানতে স্ত্রী বাধ্য” একথা কুরআনে বলা হয়েছে?
আর আক্বলের দাবী হলো, আল্লাহ তায়ালা কাউকে (স্বামীকে) নিঃশর্ত আনুগত্য করতে (স্ত্রীকে) আদেশ করবেন, অথচ সেই ব্যক্তির “নিষ্পাপত্ব, নির্ভুলতা, ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ ও সর্বোচ্চ বুদ্ধিমান” হবার বিষয়টা নিশ্চিত করবেন না, এটা হতেই পারে না।
নিঃশর্ত আনুগত্য কেবল আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তির ক্ষেত্রে (যেমন– নবী)। অন্যান্য সকল আনুগত্য শর্তসাপেক্ষ।
সেখানে “স্ত্রী, স্বামীকে মানতে বাধ্য, বাধ্যবাধকতা আছে” – এ ধরণের যুক্তিকে ব্যবহার করা হবে, অথচ সেই “বাধ্যবাধকতা, আনুগত্যের” scope, শর্তগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খ define করে দেয়া হবে না – ইসলামী বিধানে এমন ফাঁকফোঁকর কি থাকা সম্ভব?
মোদ্দা কথা, কুরআন থেকে স্বামীকে নিঃশর্ত মান্য করার কোনো বক্তব্য তো পাওয়া যায়ই না, স্বামীর আদেশে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করা তো দূরের কথা। এ ধরণের কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করতে হলে এক দুই বাক্যে প্রমাণ করা সম্ভব নয়, বরং সেকেন্ডারি ও পরবর্তী বিভিন্ন রিলিজিয়াস সোর্সের দ্বারস্থ হতে হবে।
Mohammad Mozammel Hoque: প্রথমত, কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহকে মানো এবং রাসূলকে মানো এবং উলিল আমর তথা দায়িত্বশীলদের মানো।’ আমি তো মনে করি না, এর কোনোটি মানা নয়, কিংবা আল্লাহ, রাসূল (সা) ও দায়িত্বশীলদেরকে মানা হলো সমান মানা। অর্থাৎ সব মানা সমান মানা নয়। আল্লাহ ও রাসূল (সা) ছাড়া সব আনুগত্যই শর্ত সাপেক্ষ। দ্বিতীয়ত, ভালোই হলো। স্বামীকে মানতেও যদি স্ত্রী বাধ্য না হন তাহলে তো এই নোটে আপনার সাথে আমার আর এনগেজ হওয়ারই দরকার নাই। পূর্বেই বলেছি, স্বামীকে মানতে স্ত্রী বাধ্য কিনা, সেটি এই নোটের মূল প্রতিপাদ্য নয়। এটি এসেছে এই দাবীর পরবর্তী প্রতিপাদ্যের উৎস বা প্রসঙ্গ হিসাবে। এ নিয়ে অন্য সময়ে আলোচনা হতে পারে। উপরের straw man fallacy’র কমেন্টটা আবার একটু কষ্ট করে পড়ুন।
Nure Alam Masud: স্যার, আমার দ্বিতীয় কমেন্টেই সেটা বলেছি যে, সেই আলোচনার স্কোপ এখানে নেই।
মূল প্রেমিসে আপত্তি আছে ব্র্যাকেটে বলেছি। আপনি কথাটাকে ধরে উত্তর করলেন দেখেই বাকি কথাগুলো আমি বললাম। আপনার প্রেমিসই যেহেতু আমি গ্রহণ করতে পারছি না, সেহেতু পরবর্তী আর্গুমেন্ট ইনভ্যালিড, স্বাভাবিক। এই আলোচনা আর বৃদ্ধি করাও সঙ্গত হবে না। গোলপোস্ট মুভ করার ফ্যালাসি হয়ে যাবে।
তবে আমার চিন্তাটা রেখে গেলাম আরকি: প্রেমিসটির পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞায়ন ছাড়া পরবর্তী আর্গুমেন্টে যাওয়া সঙ্গত মনে করি না।
Shahadat Mahmud Siddiquee: ১। ইসলামে ‘যৌথ পরিবার’ এবং ‘শ্বশুর বাড়িতে বউদের দায়িত্ব’ প্রসঙ্গ: মাকাসিদে শরীয়ার আলোকে
২। শরিয়া মূলনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা: প্রসঙ্গ ‘যৌথ পরিবার’ এবং ‘শ্বশুর বাড়িতে বউদের দায়িত্ব’
আলোচনায় নিজের যুক্তি তর্ক তখনই খুব বেশি দিতে হয়, তখন কোরআন ও হাদিসের সরাসরি রেফারেন্স দেয়া না যায়। আর যে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি রেফারেন্স খুব কম থাকে সেই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত থাকাটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদদের উদ্ধৃতি থেকে একেক জন একেকটা গ্রহনযোগ্য মনে হয়। কোরআন ও হাদিসের সরাসরি রেফারেন্স না দিয়ে নিজের মা সঠিক মনে হচ্ছে সেটাই একমাত্র সত্য মনে করে অন্য মতামত মিথ্যা প্রমাণিত করার চেষ্টা করা খুবই ভয়ংকর। কারণ যদি আমার মা মনে হয় তা ভুল হয়ে থাকে তাহলে ইসলাম বিকৃতির অভিযোগে কঠিনভাবে পাকরাও করা হবে শেষ বিচারের দিন। আলোচনায় সতর্ক থাকা দরকার এই অনূভুতি নিয়ে মে, কোনটি সঠিক Allah knows the best.
আলোচনায় খুব সতর্ক থাকা জরুরী, কারণ মানুষ বাপ দাদার আমল থেকে আসা প্রচলিত প্রথা দিয়ে প্রভাবিত হয় অনেক বেশি। সেই সাথে অমুক বড় চিন্তাবিদ অথবা মাওলানা কি লিখেছেন তার উপর নিজের মতামত লিখে নিজের উপর সত্য মিথ্যার ভার নেওয়া আরও মারাত্মক। ইসলামী আলোচনায় নিজের ঝাল ঝাড়ার প্রবনতা খুবই অশোভন। মার্জিত ভাষায় আল্লাহভিতি নিয়ে লেখা দরকার। May Allah forgive all of us.
Sorry, আমার মন্তব্য লিখতে গিয়ে যতবার ‘যে’ লিখেছি, ততবার ‘মে’ লেখা উঠেছে।
আমরা গরুর মাংস খাই গরু ঘাস খায় তার মানে আমরা ঘাস খাই ? ক খ গ এই সূত্রটা এমনি যুক্তি l আলোচনায় কোরান হাদিসে আক্ষরিক ভাবে বলা হয়েছে উল্লেখ করলেও কোরান ও হাদিস থেকে রেফারেন্স গুলো দেন নাই যা খুবই দুঃখ জনক l