গতকাল সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে একটা টেইলারিংয়ের দোকানে। মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য গেলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার নতুন মসজিদে। সাত তলা বিশাল মসজিদ। সেখানে যাওয়ার পরে এক বিশেষ অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করেছে। নামাজের আগে ফয়সলকে বললাম।

যখনই আমি সুবিশাল কোনো মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য গিয়েছি, বিস্তৃত ফ্লোর, স্পেস, আর উঁচু অভ্যন্তরীণ খিলান দেখে আমি মোহিত হয়েছি। তারচেয়েও বেশি আফসোস হয়েছে আমাতুল্লাহদের জন্য। আমাতুল্লাহ হলো আল্লাহর দাসী। আবদুল্লাহ’র প্রতিশব্দ।

মুহাম্মদ (স.) যখন মদিনাতে হিজরত করেন তখন উনার মায়ের দিক থেকে আত্মীয় আবু আইয়ুব আনসারীর (রা.) কাঠের তৈরী দ্বিতল ঘরের নিচতলায় উঠেছিলেন। মদিনার লোকদের ক্ষেতখামার ছিল মদিনার উপকণ্ঠে। মূল শহর ছিল পুরনো ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ।

রাসূল (স.) চাইলে মসজিদে নবরীকে দোতলা করে নিতে পারতেন। এখনকার মতো নামাজ পড়তে মসজিদে আসা নারীদেরকে দোতলায় অথবা নিচতলার কোনো চিপায় ঠেসে দিতে পারতেন। না, তিনি তা করেননি। তেমন ফেতনা মসজিদেই সংঘটিত হওয়া সত্বেও।

এক অতিসুন্দরী নারী নিয়মিত নামাজ পড়তে আসতেন। তাঁকে দেখার জন্য তরুণ সাহাবীদের কেউ কেউ ফিকিরে থাকতেন কীভাবে শেষের কাতারে থাকা যায়। কেউ কেউ এমনকি রুকুতে যাওয়ার পরে একটুখানি বেশি ঝুঁকতেন যাতে করে সেই নারীকে দেখা যায়। প্রবীণ সাহাবীরা এর বিপরীতে চেষ্টা করতেন সামনের দিকে থাকার জন্য। ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য তাদের ঐকান্তিকতার প্রশংসা করে কোরআনের আয়াতও নাযিল হয়েছিল।

ফেতনার কারণ হওয়ার ‘অপরাধে’ সেই নারীকে মসজিদে আসতে বারণ করা হয়নি। এমনকি তাঁর নামটি পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়নি। অতিসুন্দরী সেই মহিলা সাহাবীকে সবখানে ‘সেই নারী’ হিসেবে হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। মসজিদে আসার সময়ে আরেক মহিলা সাহাবী ধর্ষিত হওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তৎসত্বেও নারীদের মসজিদে আসার অধিকার বাতিল করা হয়নি। মসজিদে তাদের জন্য বিশেষ বয়ানের জন্য স্বতন্ত্র দিন ধার্য করা হয়েছে।

তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল উমরের (রা.) স্ত্রী আতিকাও (রা.) নামাজে নিয়মিত আসতেন, বিশেষ করে ফজরের ওয়াক্তে। যেদিন ফজরের নামাজে উমর (রা.) ইহুদী আততায়ী কাঠমিস্ত্রী আবু লুলু’র হাতে ছুরিকাহত হোন, সেই নামাজে তাঁর স্ত্রী আতিকাও (রা.) উপস্থিত ছিলেন। কোনো এক সময়ে মসজিদে আসতে নিরুৎসাহিত করে আতিকাকে (রা.) হযরাত উমর (রা.) কিছু একটা বলেছিলেন। তখন আতিকা (রা.) তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, তুমি আমাকে সরাসরি নিষেধ করো। তাহলে আমি যাবো না।

উমর (রা.) কীভাবে সেটি করবেন? আল্লাহর রাসূল (স.) স্বয়ং বারে বারে বলেছেন, সাবধান, নারীদেরকে মসজিদে যেতে তোমরা বাধা দিয়ো না। অথচ এখন আমরা মসজিদগুলোকে বানিয়েছি menz zone। পুরুষদের জন্য খাস জায়গা। মসজিদের সামনে আশেপাশে রাস্তায় মেয়েরা ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু মসজিদ কম্পাউন্ডের ভেতরে যেতে পারে না।

এই অচলায়তন অবশ্য ভাঙছে আজকাল। সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমি দেখেছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে, আর ঢাকার ডিওএইচএস মসজিদে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দলে দলে মেয়েরা মসজিদের মূল ফ্লোরের একপাশে তাদের জন্য সংরক্ষিত অংশে আসা-যাওয়া করছে। তারমধ্যে আছে বোরকা পরা, স্কার্ফ পরা, ‘সাধারণ পোশাকের’ সব ধরনের মেয়েরা। দেখলাম, ঝোলানো পর্দার বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেয়েদের অনেক সেন্ডেল, জুতো। শুধু ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্যও বোধকরি অনেক মেয়েরা ওখানে যায়। তাতে কী? গৃহহীন নারীদের কেউ কেউ তো মসজিদে নববীতে তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ীভাবে থেকেছেন।

হিজাব বলতে এখন যা বোঝানো হয়, কোরআনের ভাষায় তাকে বলা হয় খিমার। আর হিজাব হলো সম্পূর্ণভাবে আড়াল তৈরী করা। এটি সাধারণ মুসলিম নারীদের জন্য ফরজ বা ওয়াজিব কিনা তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও নবীর স্ত্রীদের জন্য যে এটি ফরজ ছিল, এ’ব্যাপারে কোনো বিতর্ক নাই। অথচ, সেই নবীপত্নীরাই হিজাবের বিধান নাযিল হওয়ার পরে মসজিদে নববীতে এতেকাফ (মসজিদেই কিছুদিন অবস্থান করা সংক্রান্ত রমজান মাসের বিশেষ এবাদত) করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তাঁরা আলাদা আলাদা তাঁবুও খাটিয়েছিলেন।

প্রথমে একজন উদ্যোগ নেয়ার পরে বাদবাকীরা রেষারেষির কারণে এটি করছে, এমনটি লক্ষ করে রাসূল (স.) তাদের সবাইকে নিজ নিজ তাঁবু সরিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু এই ঘটনার পরে রাসূল (স.) তাঁর স্ত্রীদের জন্য বা সাধারণ বিশ্বাসী নারীদের জন্য মসজিদে এতেকাফ করা নিষিদ্ধ করে কোনো হুকুম জারি করেননি।

যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। পাশাপাশি দু’টি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, উম্মুল মাদারিস হিসেবে খ্যাত হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং ঐতিহ্যবাহী পাবলিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমটিতে নারীরা নিষিদ্ধ। দ্বিতীয়টি নারীদের স্বর্গরাজ্য।

হাটহাজারী মাদ্রাসায় গেলে আপনি বুঝতেই পারবেন না দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। না জানলে কেউ ধারণাও করতে পারবে না, জ্ঞান অর্জন নারীপুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। সেখানকার মসজিদকেন্দ্রিক পরিবেশ দেখে ভাবতে কষ্ট হবে, ইসলামের দৃষ্টিতে মসজিদ হলো শৌচকর্ম, যৌনকর্ম, ক্রয়বিক্রয় আর হারানো বিজ্ঞপ্তি ছাড়া সব ধরনের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে আপনার ভাবতে কষ্ট হবে এটি রক্ষণশীল একটা মুসলিমপ্রধান দেশের অন্যতম জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আমার ওয়াইফকে সেদিন বললাম, ছেলে-মেয়ে অবাধে হাত ধরাধরি করে হাঁটছে, মেয়েটাই বরং হেলে পড়ে পাশের বিল্ডিংয়ে ঠেস দেয়া দালানের মতো ছেলেবন্ধুর গায়ে হেলান দিয়ে চলছে, তাও আবার শিক্ষকদের বাসাবাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে, ফ্লার্টিং করছে অবাধে, সিগারেট টানতে টানতে যাচ্ছে, আপত্তি করলে ‘অধিকার’-এর তলোয়ার নিয়ে চড়াও হচ্ছে, সারারাত ছেলেবন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসের সর্বত্র ঘোরাঘুরি করছে, সূর্যাস্ত-সূর্যোদয় কেনো নিয়মেরই তোয়াক্কা করছে না বিন্দুমাত্র, তোমার লাইফটাইমেই এটি ঘটছে, তোমার আর্লি লাইফে তুমি কি এমন পরিবেশ-পরিস্থিতি হবে, তা কল্পনা করতে পেরেছিলে? সে বলেছে, বিশেষ করে নারীদের এমন উচ্ছৃঙ্খলতা স্বপ্নেও কল্পনা করে নাই।

I don’t buy feminist narrative. তাই আমি মনে করিনা, আগের যুগের নারীরা ছিল বঞ্চিত। বরং আমার দৃষ্টিতে আমাদের আগের জেনারেশনের নারীরা বরং ওভারঅল অনেক ভালই ছিলেন। এতদসত্বেও আমাদের মানতে হবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার থেকে আমরা নারীদের বঞ্চিত করেছি। এর সুযোগ নিয়েছে খুশী আপার গোষ্ঠী।

তারা বলেনি, আমরা তোমাদের পরিবারব্যবস্থা ভেঙ্গে দিবো। নারীপুরুষের প্রচলিত সম্পর্কব্যবস্থাকে গুড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা কিছু শুগারকোটেড কথা বলেছে। তারা নারীদের ক্ষমতায়নের কথা বলেছে। নারীশিক্ষার কথা বলেছে। লিঙ্গসমতার কথা বলেছে। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা আমাদের বোকা বানিয়েছে। ফলাফল? যা হবার তাই হয়েছে।

যা আমরা এখন ভাবতেও পারছি না, অচিরে ঠিক তাই ঘটবে। পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো প্রত্যেকের হৃত সব ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। কথায় বলে, বাইন্ধা পিটাইলে বিড়ালও বাঘ হয়ে উঠে। কেউ বলেনি তাই আমি নিজেই কথাটা বারম্বার বলি, ventilation prevents explosion.

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Monirojjaman: জনাব, মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস আছে, সাহাবীদের (রা.) আমল আছে, যেটা আপনার বক্তব্যের বিপরীত এবং সেগুলো হয়তো আপনার জানা নেই। একই বিষয়ে রাসূলের (সা.) দুই রকম আমল পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে শেষের আমলটা ধর্তব্য হয়। আবার অনেক আমল রাসূল (স.) করেননি, কিন্তু পরবর্তীতে সাহাবীদের (রা.) ইজমার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোরআন-হাদিস থেকে মাসালা-মাসায়েল, হুকুম-আহকাম বের করা অনেক সুক্ষ ব্যাপার। উসুলে হাদিস শাস্ত্র আছে, তাফসির শাস্ত্র আছে, ফিকহ একটা শাস্ত্র আছে, যেমনটা দর্শন, বিজ্ঞান, অর্থনীতি এক একটা আলাদা শাস্ত্র। আপনি কিছু হাদিস পড়লেন আর নিজের মত করে সেগুলো উপস্থাপন করলেন আপনার যুক্তি দিয়ে এটা মোটেও কাম্য নয়। আপনি দর্শনের কোনো পাঠ নিশ্চয় কোনো ইঞ্জিনিয়ার থেকে নিবেন না!

গুগলে আপনি কোনো একটা রোগের সিম্পটম লিখে সার্চ দিলে সেখানে গুগল আপনাকে মেডিসিন সাজেস্ট করবে। কোন মেডিসিন এর কী কাজ, খাওয়ার পদ্ধতি, সাইড ইফেক্টসহ সমস্ত বিবরণ দেওয়া আছে, আপনি কি সেটা দেখে মেডিসিন গ্রহন করেন? করেন না। কোরআন-হাদিস থেকে মাসালা-মাসায়েল বের করাও একটা শাস্ত্রীয় জ্ঞান। অনেকে ১৩/১৪/১৫ বছর, এমনকি পুরো জীবন ইলমের খেদমতে কাটিয়ে দেওয়ার পরও তারা সাহাবী-তাবেয়ী এবং বিজ্ঞ ইমামদের অনুসরণ করেন, নিজে ইজতেহাদ করার সাহস করেন না। কারণ তিনি জানেন এই শাস্ত্রটা কত বিশাল আর ব্যাপক। জানা সত্ত্বেও সামান্য ভুল হলে কি বিশাল বিপর্যয় আর বিশৃঙ্খলা বাধবে সেই ভয়ে।

কোনো বিষয়ে নিজের মতামত দিতেই পারেন, তবে পরিপূর্ণভাবে জেনে না দিলে বিশৃঙ্খলা তৈরী হবে। আপাত দৃষ্টিতে আপনার কথা যৌক্তিক মনে করছে অনেকে, কিন্তু এ বিষয়ে আরো বহু হাদিস আছে, সাহাবীদের (রা.) আমল আছে, ইমামদের ফতোয়া আছে। বিস্তারিত না জেনে নিজের মতামত এভাবে খোলাখুলি প্রকাশ করাটা শুধু বিভেদ তৈরী করবে। আমি ডক্টরের কাছ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাঠ আর আর দার্শনিকের কাছ থেকে ভুগোলের পাঠ নিতে আগ্রহী নই। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

Mohammad Mozammel Hoque: আপনার কথা সঠিক। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানীদের কথা মানতে হবে। সেক্ষেত্রে,

  1. জ্ঞানীরা যখন পরস্পর বিপরীত কথা বলেন তখন কী হবে?
  2. রাসুল (স.) যে বলেছেন ‘তোমরা সম্ভব হলে আমার একটি কথা হলেও লোকদের কাছে পৌঁছাও’, এটার কী হবে?
  3. কোনো মুসলিমকে যখন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভিন্ন ধরনের আমল করে এমন মুসলিম কিছু জিজ্ঞাসা করবে, বা কোনো অমুসলিম জানতে চাইবে, তখন সে কী করবে?
  4. আমার মতো দর্শন বিশেষজ্ঞদের জ্ঞান কি ইসলামের সাথে সম্পর্কহীন?
  5. চার নং প্রশ্নকে কেউ যদি ইতিবাচক অর্থে নেয়, অর্থাৎ কেউ যদি মনে করে দর্শন যথেষ্ট জরুরী জিনিস, তাহলে তারা কি জ্ঞানীব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভূক্ত নন?

সম্পুরক প্রশ্ন, যদি তা হোন তাহলে তাদের কাছ হতে অন্য ফিল্ডের জ্ঞানীদের কি শেখার কিছু নাই? প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিবেন এবং খুব সংক্ষেপে বলবেন। আশা করি।

Muhammed Tareq Aziz: মহিলাদের মসজিদে নামাজ নিরুৎসাহিত করে ঘরে নামাজ পড়াকে উৎসাহিত করেও তো হাদিস আছে, সেইগুলো যদি শেয়ার না করেন, তাহলে আপনি শুধুমাত্র এক ধরনের হাদিসের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন।

Mohammad Mozammel Hoque: সব ধরনের হাদিসই প্রচার করা উচিত। এ’ধরনের ছাড় দেয়া হাদিস প্রচার করলে লোকেরা সুবিধাবাদী হয়ে পড়বে, এটি নির্দোষ কিন্তু ভুল দৃষ্টিভঙ্গী। আপতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী হাদিস ও অনুমোদনগুলোর পিছনে বিরাট ফায়দা আছে। ওহীর বিধানের মধ্যে যে প্রশস্ততা আছে তা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।

নিজের জন্য সর্বোত্তম মানকে গ্রহণ করা দোষের কিছু নয়। কিন্তু অপরের জন্য সেটি দাবী করা অনুচিত। কেউ রোখসত (ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য মান) গ্রহণ করছে বিধায় তাকে দোষারোপ করা হলো দোষারোপকারী ব্যক্তির মানসিক সমস্যার লক্ষণ। অনুগ্রহপূর্বক কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করবেন।

মুসআব ইবনে উমাইর: আসসালামু আলাইকুম। আপনার যেসব দিক নির্দেশনা আছে, যা কওমি মাদ্রাসায় তথা মাদ্রাসা শিক্ষা-ব্যবস্থাপনায় কোনো উপকারে আসবে বা সংস্কার প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন, সেসব একটা লিস্ট করে বা সুযোগ করে হাটহাজারী মাদ্রাসা বা সেসব কওমি মাদ্রাসায় গিয়ে মুহতামিম্ এর কাছে পরামর্শ দিতে পারেন। আপনার যুক্তিতে ভুল থাকলে তারা ধরিয়ে দিবেন। তাদের ভুল থাকলে তা তারা উপলব্ধি করবেন।

এখানে আমাদের মতো আম-জনতার সাথে এগুলো বলে কী ফায়দা স্যার? আপনার সব যুক্তি ১০বার করে খণ্ডন করতে পারে এমন লোকও সেখানে থাকতে পারে। কিন্তু এখানে আমরা নাদান মূর্খ ছাড়া আর কিছুই নই আপনার জ্ঞানের তুলনায়। বেয়াদবি নেবেন না প্রিয় স্যার। আপনার মতামত অবশ্যই সম্মান করি। তবে আমরা আমাদের জ্ঞানকেই সঠিক জ্ঞান মনে করি এটাই সমস্যা। সহনশীলতা কম আমাদের মাঝে। ক্ষমা করবেন।

Mohammad Mozammel Hoque: দ্বিমত এবং পরামর্শ গ্রহণ কিংবা প্রদানের ব্যপারে মূলনীতি হলো পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির মতো। পৃথিবী নিজ কক্ষপথেও ঘুরে সূর্যের চারপাশেও ঘুরে। সময়, সুযোগ, প্রেক্ষাপট তথা স্থান, কাল ও পাত্রভেদে দ্বিমত প্রকাশ, পরামর্শ প্রদান ও প্রতিবাদের উপায় কখনো হবে খাসভাবে (মানে, বিশেষভাবে), কখনো হবে আমভাবে (মানে, সামগ্রিকভাবে)।

এক্সপার্টরা প্রতিটি বিষয়ে সাধরণদের কাছে ক্লারিফিকেশন ও জবাবদিহিতা করবে, আমি এমনটি মনে করি না। তবে টাইম এন্ড এগেইন তারা সাধরণদের কাছে ক্লারিফিকেশন দিবে এবং কাইন্ড অব জওয়াবদিহিতা করবে। উভয় তরফে এই উভয় ধরনের কাজে ভারসাম্য থাকাটা জরুরী।

সাধারণরা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদেরকে সরাসরি পরামর্শ দিবে। এ’ক্ষেত্রে তা হবে নৈর্ব্যক্তিক, সাধারণ মতামত হিসেবে বলবে। আমজনতা কখনো এক্সপার্টদেরকে ব্যক্তিগতভাবে না বলে সাধারণভাবে কথা বলবে। তাদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানাবে।

মাদ্রাসার ব্যাপারে আমার কথাগুলো সাধারণ মতামত। একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে যদি বলেন, সে ক্ষেত্রে তা অবশ্যই এক্সপার্ট ওপিনিয়ন। সে যাই হোক। শিক্ষা সংস্কার নিয়ে এখানে লম্বাচওড়া কথা বলার সুযোগ নাই।

যখনই শীর্ষ আলেম হিসেবে পরিচিত কারো সাথে আমার ব্যক্তিগত সাক্ষাত হয়েছে, এই ঠিক এ’ধরনের কথাই তাদেরকে বলেছি। ক্যাটাগরিকেলি এন্ড ইমপ্লিসিটলি। আমার গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন বাবুনগর মাদ্রাসা, নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসা এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার কয়েকজন শীর্ষ আলেমের সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে। আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে উনাদের নাম বলতে হবে। সেটির বোধকরি দরকার নাই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে অবস্থিত ইসলামিয়া হাট মাদ্রাসা নিয়ে আমার এই লেখাটা পড়তে পারেন। বেশ আগের লেখা। সেখানে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা আছে। যে কোনো আগ্রহীর সাথে এসব বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে আনন্দবোধ করবো। অযাচিতভাবে কাউকে জ্ঞানদান করে বিব্রত করতে চাই না।

Zayef Atik: আল্লামা ডক্টর মুহাম্মাদ ইকবালের ছায়া দেখতে পাই আপনার জ্ঞানতাত্ত্বিক অস্তিত্বে। আপনার জ্ঞান ও মেধা যদি কাজে লাগানো যায়, বর্তমান সময়ের ইসলামের দার্শনিক মূল্যায়ন নবরূপ লাভ করবে, সন্দেহ নাই।

আল্লামা ইকবাল এতোবড় দার্শনিক হওয়া সত্বেও ধর্ম, দর্শন এবং সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে উলামায়ে কেরামের সাথে গভীর নিবিড় ইলমী মুজাকারা অব্যাহত রাখতেন। ইমাম আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ তো বলতেন, ডক্টর ইকবাল আমার কাছ থেকে যা অর্জন করেছে, কোনো মাওলানাও তা অর্জন করতে পারে নাই। আপনি সম্ভবত জানেন যে আল্লামা ইকবালের চেয়ে কমপক্ষে সাত বছরের ছোটো ছিলেন আল্লামা সাইয়েদ সুলাইমান নদভী। কিন্তু ইলমের পিপাসা আল্লামা ইকবালের জ্ঞানার্জনের পথে বয়সের ব্যাপারটাকে প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড় করায় নাই। আল্লামা ইকবাল দর্শন, সাহিত্য, ইসলামী আইন এবং ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে আল্লামা নদভীর কাছে এতোবেশি চিঠি চালাচালি করেছেন, যা বর্তমানে গ্রন্থনায় রুপ নিয়েছে। আর জানতে চাওয়ার ভাষা ভঙ্গিমাও ছিল এমন, যেন একজন তালিবুল ইলম তার উস্তাজের কাছে সবিনয়ে আরজ করছেন কোনো মাসআলা।

আমি আপনাকে পরামর্শও দিচ্ছি না, উপদেশও না। আমি আবদার করছি, আপনি যদি দেশের কিংবা বিদেশের, আপনার ইখলাস এবং জানাশোনার নিক্তিতে উত্তীর্ণ, এমন কোনো আলেমের সাথে সম্পর্ক রেখে চলেন এবং বিশেষ করে ধর্ম ও ধর্মতত্ত্ব-বিষয়ক আলাপগুলো জাহির করার আগে তাঁর সাথে মুজাকারা করে নেন, তাহলে আশা করি উম্মতে মুসলিমা আপনার যাবতীয় জ্ঞান-গরীমা অত্যন্ত নিরাপদে গ্রহণ এবং পালনে তৃপ্তি বোধ করবে। দোয়া চাই আর বেয়াদবি হয়ে থাকলে ক্ষমা চাই প্রিয় স্যার।

Mohammad Mozammel Hoque: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টা বিভাগ আছে, যেখানকার সব শিক্ষক মাদ্রাসাশিক্ষিত। তাদের প্রত্যেকের সাথে আমার সম্পর্ক ভাল। আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলি যাতে করে তারা যা জানেন তা হতে আমি উপকৃত হতে পারি। খুব সম্প্রতি রাস্তার উপর বাজার বসানো নিয়ে আমি তাদের সাত/আটজনের সাথে কথা বলেছি। দুইটা সাক্ষাতকার ফেইসবুকেও দিয়েছি।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যারা জানে তাদের কাছ হতে তোমরা জেনে নাও। আমি যা জানি না তা সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে। একইসাথে আমি যা জানি, অন্য অনেকের চেয়ে আল্লাহর রহমতে বেশিই জানি, সংশ্লিষ্টদের উচিত আমার কাছ হতে তা জেনে নেয়া। তাই না?

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আলেম কারা, এই প্রসঙ্গে যদ্দুর জানি কোরআনে একটাই আয়াত আছে। সুরা রুমের ২২নং আয়াত — وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦ خَلْقُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱخْتِلَـٰفُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَٰنِكُمْ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّلْعَـٰلِمِينَ — এই আয়াত মোতাবেক এখনকার আলেমদের কি কোনো ঘাটতি আছে বলে মনে করেন? অথবা, তারা কী মনে করেন? সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

Saikat Hossain: মজার বিষয় হলো রাসূলের (সা.) সময়ে সেখানে ইসলামী শাসন ছিলো কিনা সেটাও দেখতে হবে। আরও কিছু বিষয় আছে। ঐ শাসনব্যবস্থা বিষয় নিয়ে কথা বলার সাহস না থাকলে আশেপাশের কারণগুলোকে না হাতড়ানোই ভালো। মসজিদে ইমামরা খুতবা দিতে পারে না ইচ্ছামতো, সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে মসজিদই বন্ধ করে দিবে এই লিংকনের গোলামরা। নিজেরা সাজানো নাটক করেও যে দুর্নাম ছড়াবেনা তার ঠিক নাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ থেকেই আপনার অনুমেয় হওয়ার কথা।

Mohammad Mozammel Hoque: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো খারাবি দেখলে সেখানকার লোকজনই তা নিয়ে প্রকাশ্যে বলাবলি করে। মাদ্রাসাসমূহ কি স্বর্গরাজ্য? সেখানকার অনাকাঙ্খিত কোনোকিছু নিয়ে প্রতিবাদ কিংবা আপত্তি কই? বলার মতো কিছু নাই নাকি?

H.M. Ibrahim: ধন্যবাদ, প্রিয় জামিয়াতে আগমনের জন্য।

Mohammad Mozammel Hoque: আমি প্রায়ই যাই। নামাজ পড়ি। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে আমার দেখা হয়েছিল ওখানেই। তিনি আমার কিছু খোঁজখবর নিয়েছিলেন। কথা হয়েছিল সংক্ষিপ্তভাবে অথচ টু-দা-পয়েন্টে। হেফাজতের ১৩ দফার সমর্থনে আমার উদ্যোগে আমিসহ ক’জন চবি শিক্ষক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় আর্টিকেল ছাপিয়েছিলাম, তা জেনে তিনি খুব খুশী হয়েছিলেন। মুফতি জসিম উদ্দীন সাহেব এবং মুফতি কেফায়েতুল্লাহ সাহেবের সাথেও দেখা এবং কথা হয়েছে।

মুফতী তৌহিদুল ইসলাম: মসজিদে আসার সময় নারী সাহাবী ধর্ষিত হয়েছিলেন। এটা কি আপনি স্বপ্নে দেখেছেন নাকি আপনার কাছে ওহী এসেছিলো? রেফারেন্সটা দিলে খুশি হবো।

Abu Zafar: আলকামা ইবনু ওয়াইল (রহঃ) হতে তার বাবা থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় একজন মহিলা নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাস্তায় একজন লোক তার সামনে পড়ে এবং সে তাকে তার পোশাকে ঢেকে নিয়ে (জাপটে ধরে) নিজের প্রয়োজন মিটায় (ধর্ষণ করে)। মহিলাটি চিৎকার করলে লোকটি পালিয়ে গেল।

তারপর আরেকজন লোক তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। ইতোমধ্যে মুহাজির সাহাবীদের একটি দলও সে স্থান দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। যে লোকটি তাকে ধর্ষণ করেছে বলে সে ধারণা করল, তারা (দৌঁড়ে) গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। তাকে নিয়ে তারা মহিলাটির সামনে ফিরে আসলে সে বলল, হ্যাঁ, এই সেই লোক।

তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তাকে নিয়ে আসেন। তিনি যখন তাকে রজমের (পাথর মেরে হত্যা) হুকুম দিলেন, সে সময় তার আসল ধর্ষণকারী উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার ধর্ষণকারী (ঐ লোকটি নয়)। তিনি মহিলাটিকে বললেন: যাও, তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা মাফ করে দিয়েছেন। তিনি (সন্দেহজনকভাবে) ধৃত লোকটির সম্বন্ধে ভাল কথা বললেন। মহিলাটির আসল ধর্ষণকারীর সম্পর্কে তিনি হুকুম করলেন: একে রজম কর। তিনি আরও বললেন: সে এমন ধরনের তাওবা করেছে, যদি মাদীনার সকল জনগণ এমন তাওবা করে তবে তাদের সেই তাওবা ক্ববূল করা হবে।

হাসান, তাকে রজম কর বাক্য ব্যতীত। সঠিক বক্তব্য হল তাকে রজম করা হয় নাই। মিশকাত (৩৫৭২) সহীহাহ (৯০০)

ফুটনোট: এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হসান গারীব সহীহ্ বলেছেন। আলকামা (রহঃ) তার পিতা ওয়াইল (রাঃ) -এর কাছে হাদীস শ্রবণ করেছেন। তিনি বয়সে তার ভাই আবদুল জাব্বারের চেয়ে বড় ছিলেন। আবদুল জাব্বার (রহঃ) তার আব্বা ওয়াইল (রাঃ) –এর কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করার সুযোগ লাভ করেননি।

জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৪৫৪। হাদিসের মান: হাসান হাদিস। সোর্স: আল হাদিস অ্যাপ, irdfoundation․com

M A Monjur Limon: আমরা মুসলিম পুরুষরা নিজেদের মা-বোনদের দোযখে রেখে নিজেরা জান্নাতে যেতে চাই।

Mohammad Mozammel Hoque: খুব খারাপ কথা। ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব ও নির্মম হৃদয়ের ফেরেশতা, যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না।’ (সুরা তাহরিম: ৬)

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *