অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে, আইনের দৃষ্টিতে, ব্যভিচারে কারো কোনো দোষ নাই। সংশ্লিষ্ট নারীর আজীবন সম্মতিই যথেষ্ট। ‘আজীবন সম্মতি’র মানে হলো, পরবর্তীতে ইন দ্যা রেস্ট অব হার লাইফ, কখনো তার মনে হবে না যে সে ধর্ষিত হয়েছে।
সম্পর্কের কোনো এক পক্ষ যদি বিবাহিত হয় তাহলে সে সম্পর্ককে বলা হয় পরকীয়ার সম্পর্ক। পরকীয়াতে দোষ শুধু পুরুষের।
যৌনতার বিষয়ে নারী কর্তৃক কোনো প্রকারের দোষ বা অপরাধ হতেই পারে না, এটি হচ্ছে আইনের কথা। বিশেষ করে পাশ্চাত্য মূল্যবোধনির্ভর উচ্চ শিক্ষিত মহলে এটি হচ্ছে সামাজিক বাস্তবতা।
২. প্যাটার্নিটি ফ্রড
কোনো নারী কর্তৃক অন্যকারো সন্তানকে স্বামীর সন্তান হিসেবে চালিয়ে দেয়া অথবা একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্কে করে তাদের যে কোনো একজনকে নিজ সন্তানের পিতা হিসেবে দাবী করা। এটি হলো প্যাটার্নিটি ফ্রড।
পাশ্চাত্য বিশ্বে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিয়ে করেন বা না করেন, কোনো নারীর সাথে আপনি যৌন সংগম করেছেন, এতটুকু প্রমাণ হওয়াই যথেষ্ট। আপনার সাথে শারীরিক মিলনের পরে সংশ্লিষ্ট নারী গর্ভবতী হলে উক্ত সন্তানের আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চার মাকে চাইল্ড সাপোর্ট দিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট পুরুষটি আইনত বাধ্য।
একইসাথে উক্ত নারী কতজনের সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে, তা আদৌ বিবেচ্য নয়।
বাচ্চাকে নিয়ে নারীটি আলাদা হয়ে গেলে পুরুষটি আদালতের মধ্যস্থতায় নিজের বাচ্চাকে সপ্তাহে বা মাসে কিছুক্ষণের জন্য কাছে পেতে পারে। কিন্তু বাচ্চার লালন-পালন, তার শিক্ষাদীক্ষা, তার ধর্ম বা অধর্ম, বাচ্চার জেন্ডার আইডেন্টি পরিবর্তনের কোনো সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত, কোনো ক্ষেত্রেই বাবার কোনো ভূমিকা নাই।
বাচ্চাটা আসলে ওই লোকের ঔরসজাত নয়, অন্য কারো। এমন হতে পারে না?
হ্যাঁ, পারে। কিন্তু তাতে করে পুরুষটার কোনো লাভ নাই। ডিএনএ টেস্ট করে আরোপিত ভুল পিতৃত্ব হতে মুক্ত হওয়ার সুযোগ নাই। নারীটি দাবী করেছে এবং পুরুষটি আসলেই সেই কাজ মেয়েটার সাথে করেছে, এ’টুকুই যথেষ্ট।
শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ওইসব দেশে প্যাটার্নিটি ফ্রড প্রমাণের উদ্দেশ্যে ডিএনএ টেস্ট করা আইনত নিষিদ্ধ।
এবার বুঝেন, রিভার্স ডিসক্রিমিনেশন কাকে বলে …!
ভাবছেন, এ’সব তো ওয়েস্টের সমস্যা। ওরা অতিরিক্ত নারীবাদী, তাই এত বাড়াবাড়ি। না মশাই, ডিমোক্লিসের তরবারী আপনার ঘাড়ের উপরেও ঝুলছে। আপনি জাস্ট বেখবর।
৩. ফ্রি সেক্স বাট অনলি ফর ফিমেইল ওয়ানস
“…. বর্তমানে যেটা হয়েছে এখন কিন্তু কালচারটা বাংলাদেশেও চলে এসেছে। লাস্ট পাঁচ-দশ বছর ধরে আমরা এই জিনিসটা এতবেশি দেখছি, যে কোনো কারণ ছাড়াই দেখা গেল একটা মানুষের কোনো ইয়া নাই … ব্যাপারটা কেমন যেন সোসাইটিতে একদম কমন হয়ে গেছে।
আমি কিছু ক্লায়েন্টের কাছ হতে লাস্ট কয়েকদিন ধরে শুনছি যে তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই নাকি কোনো না কোনোভাবে পরকীয়ায় আসক্ত। বা, একটা মেয়ে কমিউনিটি তারা …. একজন এসে কমপ্লেইন করছে আমার কাছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করার পরে তারা বলছে, তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে এমন অনেক ফ্রেন্ডেরই হাজবেন্ড আছে, (অথচ) যারা কোনো না কোনোভাবে এক্সট্রা-মেরিটাল এফেয়ার বা পরকীয়াতে আসলে আসক্ত।
এই সিচুয়েশনে আসলে আমরা কী বলবো? বা এটার কি ….। এটাও অনেকে জানে না যে এক্সট্রামেরিটাল এফেয়ার বা পরকীয়ার কিন্তু শাস্তি আছে।”
কারো সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে থাকার পরও অন্য কারো সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার শাস্তি সম্পর্কে এরপর তিনি বলছেন, “সেই শাস্তিটা কিন্তু আমাদের পেনাল কোডে বলা আছে। … ৪৯৭ (ধারা)তে বলা আছে যে কেউ যদি এডাল্ট্রির মতো অপরাধ করে তাহলে তার কিন্তু শাস্তি পাঁচ বছরের জেল। এবং পাঁচ বছরের (শাস্তির) সাথে তার কিন্তু জরিমানাও হতে পারে, যদি তার (অপরাধের মাত্রা বা) পরিমাণ অনেক বেশি হয়। … তাহলে সে জরিমানা ও শাস্তি দু’টাই একসাথে পাবে।”
এরপরের অংশটা ইন্টারেস্টিং। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট Anjuman Ara Lima এরপরে বলছেন, “এডাল্ট্রির শাস্তিটা কিন্তু ছেলেটারই হবে। যে ছেলেটা অন্য একজনের ওয়াইফের সাথে ‘ইনভল্ভড’। এ’ক্ষেত্রে কিন্তু মেয়েটার কোনো শাস্তি, জরিমানা, কোনো রকমের বিচার-আচার কিছুই হবে না।
আমাদের সোসাইটি ধরেই নিয়েছে, এ’ক্ষেত্রে বাইরের যে ছেলেটা আছে সে কোনো না কোনোভাবে (আরেকজনের স্ত্রীকে) প্রভোক করেছে, মোটিভেইট করেছে তার সাথে একটা ইল্লিগেল, একটা অবৈধ সম্পর্ক মেইনটেইন করার জন্য।”
আপনি পুরুষ। আপনি পরকীয়া করেছেন। এভভোকেট সাহেবের মুখেই শুনলেন, আপনার জন্য শাস্তি নির্ধারিত। হোন আপনি বিবাহিত অথবা অবিবাহিত।
অনুরূপ কাজে নারীর কোনো অপরাধ হয় না, অথবা এই ধরনের ‘অপরাধে’ নারীর কোনো শাস্তির বিধান নাই। বিবাহিত হলে বড়জোর তাকে তার স্বামী তালাক দিতে পারবেন।
সে ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রী যে পরকীয়ার অপবাদ মেনে নিয়ে চুপচাপ কেটে পড়বেন, এমনটা ভাববেন না। নারী নির্যাতন সংক্রান্ত সব আইনের ধারা তো রেডিমেইড আছেই। শোনা যায়, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগ অভিযোগ ভুয়া এবং হয়রানিমূলক।
৪. ব্লু পিল অর রেড পিল
এক প্রাক্তন অভিনেত্রী এবং নারীবাদী নারীর তৈরি করা ‘দ্যা রেড পিল’ এমন একটা ডকুমেন্টারি সিনেমা, বলা হয়, নারীবাদী হিসেবে এটি দেখা শুরু করার পরে সিনেমা শেষ হতে হতে লোকজন নারীবাদী হিসেবে নিজেকে আর পরিচয় দিতে চায় না।
এই ডকুমেন্টারির একটা অংশে দেখা যায়, একজন পুরুষ পুলিশের কাছে গেছে এই অভিযোগ নিয়ে যে বউ তাকে মারে। পুলিশ বলেছে, আবার যখন মারবে তখন সতর্ক থেকো যাতে করে তোমাকে মারতে গিয়ে সে ব্যথা না পায়। তোমাকে মারতে গিয়ে তোমার স্ত্রীর একটা নখও যদি ভাঙে এবং এ ব্যাপারে সে তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাহলে কিন্তু আমরা তোমাকে সাথে সাথে এরেস্ট করবো।
৫. আইন, নৈতিকতা ও ধর্ম
নারী অধিকার সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে নৈতিকতা, বিশেষ করে ধর্মের কথা নারীবাদীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। নারীবাদের দৃষ্টিতে, ধর্ম হলো পুরুষ কর্তৃক নারীকে নির্যাতন করার হাতিয়ার। নারীবাদীদের কাছে নৈতিকতার শুধুমাত্র সেই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য যা নারীবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, ইতিহাস, যুক্তি, বুদ্ধি এবং বায়োলজি-সাইকোলজিকে নারীবাদীরা সাধারণত অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে। এর পরিবর্তে তারা শাস্তি এবং বল প্রয়োগের উপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করে। নারীবাদ হলো একটা লিগালিস্টিক এপ্রোচ। এটি তাই অধিকতর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী। ইন দ্যাট সেন্স, ফেমিনিজম ইজ আ প্যারাডক্স।
এটি নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করে, অথচ নারীত্ব বা ফ্যামিনিনিটিকে সম্ভাব্য সব উপায়ে অপোজ করে। সো ফার।
৬. নারীবাদী নারীশিক্ষা নীতি
বার বার না বলে খুব সংক্ষেপে কথাগুলো বলে ফেলতে চাচ্ছি। তাই বলছি।
জাতিসংঘের কাঁধে ভর করে পাশ্চাত্য নারীবাদের আদলে গড়ে উঠেছে এ’দেশের নারী-শিক্ষা-নীতি। তাই আধুনিক শিক্ষিত নারীমাত্রই নারীবাদী। বাই ডিফল্ট। ব্যতিক্রম হলে ব্যতিক্রম।
খুব ভারী কথা হয়ে গেল?
দুঃখিত, নারীবাদীরা যাদেরকে পুরুষবাদী বলে গালি দেয়, তারা কিন্তু নিজেদেরকে পুরুষবাদী স্বীকার করে না। তাই, বোন এবং মেয়েরা, এটি কি হতে পারে না, আপনি জানেনই না যে আপনি আসলে নারীবাদের দৃষ্টিতেই সবকিছু দেখছেন? যারা চশমা পরে তারা জানেন, চশমা পরে থাকার কথাটা তাদের মনে থাকে না। মনে হয়, এই তো সরাসরি নিজের চোখে দেখছি।
কেউ যদি (১) পাশ্চাত্য নারীবাদ এবং (২) শিক্ষা ও আইনে আমাদের নারীনীতি, এই দুইটাকে পাশাপাশি রেখে বিবেচনা করেন নির্মোহভাবে, তাহলে তিনি বুঝবেন, ব্যতিক্রমবাদে তাবৎ নারীকূল ইতোমধ্যে পাশ্চাত্য নারীবাদের ব্লু-পিল গলাধঃকরণ করেছেন। অজান্তে অথবা অনিচ্ছায়। এর পরিণতিতে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
৭. বিয়ে ও পারিবারিক দায়িত্বভীতি
কোনো মফস্বল স্কুলের আর্লি টিনএজ মেয়েদেরকে বিয়ে ও পারিবারিক দায়িত্বপালন সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন করেন। একই প্রশ্নমালা নিয়ে ভার্সিটির আউট গোয়িং মেয়েদের মধ্যে সার্ভে করেন, দেখবেন, গ্রসলি একই ধরনের উত্তর।
মেয়েদের চিন্তাভাবনা ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক। বিয়ে, মাতৃত্ব এবং পারিবারিক দায়িত্বপালন সেখানে অনুপস্থিত। অথবা সেকেন্ডারি কন্সিডারেশনের ব্যাপার। কারো কারো কাছে ফ্যামিলি লাইফ নিয়ে কথা বলা রীতিমত ইনসাল্টিং টপিক। ট্যাবু।
Eastern family based human values and system, from within almost killed by …. সামাজিক মূল্যবোধ ব্যবস্থা ভিতর থেকে পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেকখানি। আইনে শুধুমাত্র এর প্রতিফলন ঘটছে।
৮. আর কী বলবো…?
আপনাদের কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছি। আমি মাস্টার মানুষ। সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করি। আইন সম্পর্কে খুব একটা জানি না। তাই ট্রান্সক্রিপটেড ভিডিও বক্তব্য সম্পর্কে আপনাদের, বিশেষ করে উকিলদের, বক্তব্য জানতে চাচ্ছি।