শিক্ষার্থী যখন নিজের স্বাধীন বিবেচনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে, তখন তা শিক্ষা। বিশেষ করে কলা ও সমাজবিজ্ঞানের জন্য এটি সত্য। এর বিপরীতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী যখন ঠিক একই ধাঁচে চিন্তা করে, ঠিক একই যুক্তি প্রয়োগ করে, হুবহু একই ধ্যানধারনাকে লালন করে, তাদের শত্রুমিত্র সব হুবহু এক, তাদের কথাবার্তা ও কাজকারবার নির্ভুলভাবে অনুমানযোগ্য, তাহলে বুঝবেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবর্তে অথবা শিক্ষার চেয়েও বেশি দেয়া হচ্ছে দীক্ষা।
শিক্ষাব্যবস্থাপনার সাথে যারা জড়িত তারা নিজেরাও অনেক সময়ে বুঝে না, শিক্ষা আর দীক্ষার পার্থক্য কী। শিক্ষা যত নিম্নপর্যায়ের তত দীক্ষামূলক। ‘শিক্ষা’ শিক্ষা হয়ে উঠে উচ্চপর্যায়ে এসে। এই দৃষ্টিতে উচ্চশিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। যেসব শিক্ষা কারিগরীমূলক, সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জনই বড় কথা। চিকিৎসাবিদ্যা পড়ে কেউ প্রকৌশলবিদ্যায় বুৎপত্তি অর্জন করবে না। করার কোনো সুযোগ নাই। একইকথা সকল টেকনিক্যাল শিক্ষার জন্যই প্রযোজ্য।
বিজনেস স্টাডি পড়ে কেউ বিজনেসম্যান হয়ে উঠবে না। কারো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হবেন বড়জোর। একই কথা কি রাজনীতিবিজ্ঞানের জন্য প্রযোজ্য? এখানে একটুখানি ভিন্নতা আছে। রাজনীতিবিজ্ঞান পড়ে কেউ রাজনীতিবিদ হবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা নেতা হওয়ার জন্যও রাজনীতিবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার অপরিহার্যতা নাই। রাজনীতিবিজ্ঞান পড়ে রাজনীতি সম্পর্কে কারো স্বাধীন মত গড়ে উঠতে পারে। রাজনীতিবিজ্ঞান না পড়েও তা হতে পারে। তবে তা অতটা বিশ্লেষণমূলক এবং ফ্যাক্টবেইজড হবে না।
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভূক্ত বিভাগসমূহের লেখাপড়া উপরের সব ক্যাটাগরি হতে ভিন্ন রকমের। কেউ সাহিত্য পড়ে সাহিত্যিকও হবে না, সাহিত্যবিদ্বেষীও হবে না। এটি অনুমানযোগ্য। কিন্তু সে কোন ধরনের সাহিত্যমোদী হবে সেটি বলা যায় না। দর্শন কাউকে আস্তিকও বানায় না, নাস্তিকও বানায় না। যদিও উভয় পক্ষ দার্শনিক আলোচনা হতে নিজ বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি খুঁজে পায়।
ইতিহাস পড়ে একজন শিক্ষার্থী ইতিহাসের কোনো এক্টরকে নায়ক মনে করবে, না খলনায়ক মনে করবে, এটি তার ব্যাপার। কোনো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থীরা যদি একই এক্টরকে নায়ক মনে করে, নির্দিষ্ট এক্টরদেরকে খলনায়ক বলে মনে করেন, ওয়ান-টু-অল, তাহলে বুঝতে হবে, ওই প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস শিক্ষার নামে মূলত দেয়া হচ্ছে মতবাদবিশেষের দীক্ষা।
একটা কথা একেবারে খোলাসা করেই বলা দরকার। মাদ্রাসায় শুধু নিষ্ঠাবান মোসলমানই পড়েবে এমন কোনো কথা নাই। জানার জন্য যে কেউ যে কোনো বিষয়ে পড়তে পারে। যে শিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত নয়, তা দীক্ষামূলক শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা হবে উন্মুক্ত। পাঠগ্রহণের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক দক্ষতার শর্ত ভিন্ন কথা।
তো, মাদ্রাসায় পড়ে কেউ নাস্তিক হবে, এটি অস্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাপারটা এমন হচ্ছে, একই জালালাইন শরীফ পড়ে, একই মেশকাত পড়ে, ফেকাহ’র একই কিতাব পড়ে ‘সুন্নী মাদ্রাসায়’ পড়ুয়াদের সবাই কট্টর ‘সুন্নী’ হচ্ছে, ‘ওহাবী মাদ্রাসায়’ পড়ে প্রত্যেক স্টুডেন্ট কট্টর ‘ওহাবী’ হয়ে বের হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের এ’কথা স্বীকার করতেই হবে প্রতিটি মাদ্রাসায় তালেবদেরকে পাঠদানের সাথে সাথে তরীকাবিশেষের দীক্ষা দান করা হয়। যদ্দুর জানি, নির্দয়ভাবে এ’কাজটি করা হয়। শিক্ষা সেখানে উপলক্ষ্য, দীক্ষাই লক্ষ্য।
আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষের জীবনে জীবীকার জন্য দক্ষতা এবং জীবনের জন্য শিক্ষার সুযোগ থাকা জরুরী। এর পাশাপাশি মানুষের জন্য উপযুক্ত দীক্ষার সুযোগ থাকাটাও জরুরী। এরমানে এই নয় যে আমরা এইগুলোকে একঘাটের জল বানিয়ে ফেলবো। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যেমন মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষা ও দীক্ষাকে যেভাবে একাকার করে ফেলা হয়েছে, আমি তার বিরোধিতা করি। দক্ষতা, শিক্ষা ও দীক্ষা, এই ৩টা আলাদা জিনিস। যদিও আমরা এই তিনটাকেই সাধারণত এককথায় শিক্ষা হিসেবেই বলি।
কারো কাছ হতে আপনি গাড়ি চালানো শিখবেন, ব্যাকরণ শিখবেন, কম্পিউটার শিখবেন, এগুলো দক্ষতামূলক শিক্ষা। এ’ধরনের শিক্ষা যিনি দেন তাকে আমরা বলি প্রশিক্ষক, ইনস্ট্রাকটর, ডেমোনেস্ট্রটর, গাইড কিম্বা কোচ। কারো কাছ হতে আপনি ইতিহাস শিখবেন, পদার্থবিদ্যা শিখবেন, দর্শন শিখবেন, সমাজতত্ত্ব পড়বেন, এ’গুলো শুধুই শিক্ষা। এ’ধরনের শিক্ষা যিনি দেন তাকে আমরা বলবো শিক্ষক।
আর যার কথাকে আপনি মেনে নেন, যিনি আপনার লাইফের গোল সেট করে দেন, কোন পথে কীভাবে যাবেন এরচেয়ে কোথায় যাবেন, কেন যাবেন, সেটা যার কাছ হতে আপনি জেনে নেন, সেই ব্যক্তি আপনার গুরু বা মেন্টর। আপনি যখন নীতিগত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, তখন যার শরণাপন্ন হোন, যার দেয়া সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে নেন, তিনি আপনার মেন্টর। মুরশিদ।
মাঝখানে বলেছি, মাদ্রাসায় পড়ে কেউ নাস্তিক হয় না (মুফতি মাসুদের মতো লোকেরা নিতান্ত ব্যতিক্রম), তাই মাদ্রাসার পড়া study নয়, indoctrination, আমি এমনটি মনে করি না। এক ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা কমন ট্রেন্ড থাকবে, এটি স্বাভাবিক। তারমানে, এই নয় যে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী রোবটিকেলি একই রকমের হবে। যদি তা হয় তাহলে বুঝতে হবে সেখানে শিক্ষার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাইকরণও হচ্ছে নির্মমভাবে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য মস্তিষ্কের উন্নয়ন। সেটা যে ধরনের শিক্ষাই হোক না কেন। কোনো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে গণহারে লোকেরা যদি একটা নির্দিষ্ট মতবাদ ও সংস্কৃতিতে দীক্ষিত হয়ে উঠে, বুঝতে হবে, এখানেও মস্তিষ্কের উন্নয়নের পরিবর্তে মগজ ধোলাই হচ্ছে।
Instruction, teaching এবং mentoring-এর পার্থক্য শিক্ষাবিদেরাও বোঝে না। শিক্ষা সংক্রান্ত বেসিক জ্ঞানটুকু ছাড়াই তারা ‘শিক্ষার সাথে মূল্যবোধের সম্পর্ক’ নিয়ে চিল্লাচিল্লি করে, পরিণতিতে যা হবার তাই হচ্ছে।
এই লেখাটি পূর্ববর্তী ‘কেন বলেছি মাদ্রাসাতে অধ্যয়ন হয় না, পড়া হয়’ লেখার ফলোআপ।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Md. Tanbir Rahman: একমত পোষণ করছি। এই ব্যাপারটা অধিকাংশ মানুষই বুঝতে চায় না। তোতাপাখির মতো শুধুমাত্র থিউরি মুখস্থ করাকে তারা শিক্ষা বলে। তাছাড়া যতটুকু শিক্ষাকে তারা পছন্দ করে তার থেকে বেশি তাচ্ছিল্য করে দীক্ষাকে।
Mohammad Mozammel Hoque: এই ধরনের ইনডক্ট্রিনেশন বিশ্ববিদ্যালয়েও হয়। তুলনামূলকভাবে এটি ভয়াবহ রকমের বেশি হয় মাদ্রাসাগুলোতে।
Md. Tanbir Rahman: জ্বি স্যার। বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ব্যাপারটা কম না।
Mohammad Mozammel Hoque: মুক্তচিন্তাকে এখানে অন্তত তাত্ত্বিকভাবে স্বীকার করা হয়। মাদ্রাসাশিক্ষাতে মুক্তচিন্তাকে কুফুরীর সমতুল্য বলে মনে করা হয়। পার্থক্যটা এখানে।
MD Firoz Mahmud Firoz: মুক্তচিন্তাকে কুফুরি বলা হয় এটাই যুক্তিসংগত। কেননা মুক্তচিন্তাতে বিশ্বাস করলে আপনি নাস্তিক না হলেও সৃষ্টিকর্তার সকল ধরনের বিধিনিষেধ মেনে নিতে পারবেন না।
Mohammad Mozammel Hoque: মুক্তচিন্তাই শুধু পারে ভুল বিশ্বাসব্যবস্থা হতে, অপসংস্কৃতির পরিমণ্ডল হতে, মানুষকে সঠিক বিশ্বাসে ফিরিয়ে আনতে। ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের উদাহরণ এ’ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ও শিক্ষণীয়।
MD Firoz Mahmud Firoz: মুক্ত চিন্তা কাকে বলে সেটা আগে বলেন?
Mohammad Mozammel Hoque: ক্রিটিকাল থিংকিং কী, কেন ও কীভাবে
Mokhlesor Rahman Molla: সম্পূর্ণ সহমত। এক্ষেত্রে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা এক ব্যতিক্রম উদাহরণ। এখানে সকল ঘরানার শিক্ষক, ছাত্রের মিলনমেলা ঘটেছে। প্রতিটি আলাদা ক্লাসে ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার শিক্ষক। এবার ছাত্ররাই বুঝে নিবে তার পথ কোনদিকে। এখানে কেউ কাউকে বাধ্য করেনা। মানতেই হবে বলেনা। ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করে নিজেই বুঝে নাও।
Mohammad Mozammel Hoque: খুব ভালো। আল্লাহ চাহেন তো কখনো সেখানে যাবো।
Jahid Hassan: স্বাধীনতার ইতিহাসের নামে আমাদের যা গিলানো হয়, এটা কে কি শিক্ষা বলবো, নাকি মতবাদ বিশেষের দীক্ষা? এখানে সবাই খলনায়ক হিসাবে তাদেরকেই দেখে।
Mohammad Mozammel Hoque: যারা শিক্ষা দেয় তাদের উচিত শুধু শিক্ষা দেওয়া। শিক্ষার্থীদেরকে নির্দিষ্ট মতে দীক্ষিত না করা। এটি বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রযোজ্য।
শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে সচেতন থাকতে হবে যাতে করে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তারা দীক্ষিত হয়ে না পড়েন। কোনটা শিক্ষা এবং কোনটা দীক্ষা এটা বোঝার যদি ক্ষমতাই না থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী আদৌ উচ্চশিক্ষার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে ক্রিটিকাল থিংকিং-এর অভ্যাস থাকা জরুরী।
স্বতন্ত্রভাবে শিক্ষাও জরুরী, দীক্ষাও জরুরী। কিন্তু শিক্ষার সাথে দীক্ষা বা শিক্ষার নামে দীক্ষিতকরণ, এটা খারাপ। এ অবস্থা থেকে আত্মরক্ষার দায়িত্ব উভয় তরফের। It’s a reciprocal duty.
Rasel Ahmed: আমি বেশ কিছু মানুষের সাথে মিশেছি, যারা মাদ্রাসা পড়ুয়া (অনার্সে অধ্যয়নরত)। একবার আমি দর্শন শাস্ত্র নিয়ে কথা বলাতে উনারা সমস্বরে বলে উঠল ফিলোসফি (দর্শন) পড়লে নাকি নাস্তিক হয়ে যায়। ওনাদের ভাষ্যে ফিলোসফি নাকি পড়লেই মানুষ কাফের হয়ে যায়, এবং তারা জোর দিয়ে এটা বলে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষীণ। আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।
Mohammad Mozammel Hoque: আমাকে বেশ অনেক আগে এক তরুণ বলেছিল আমি যাতে ফিলসফি পড়ানোর চাকরিটা ছেড়ে দেই। তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কি সুদি ব্যাংকে চাকরি করার মতো? সে আমাকে বলেছিল, তারচেয়েও খারাপ! কারণ সুদি ব্যাংকে চাকরি করলে গুনাহ হবে, ফিলসফি পড়লে বা পড়ালে ঈমান চলে যাবে।
Nezam Uddin: যথার্থ বলেছেন। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টির আড়ালে থেকেছে সবসময়। কেউ ভাবেওনি কেন কওমি ধাঁচের শিক্ষার্থী কওমিই হয়, কেনো সুন্নি দাবি করারা শুধু সেই সুন্নিই হয়।
Mohammad Mozammel Hoque: অথচ তারা একই কিতাবদিই পড়ে। তারা লাইন যতটুকু পড়ে তারচেয়ে বেশি পড়ে লাইনের মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটুকু। they read between the lines more than the lines. এতেই আমরা বুঝতে পারি, সেখানে পড়ার চেয়ে গেলানো হয় বেশি।
অতিব্যতিক্রম বাদে তাদের এই বুদ্ধিবৈকল্য সর্বস্তরে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, তাদের অতিবড় পণ্ডিতেরাও কাণ্ডজ্ঞানের দাবীর মতো সামান্য বিষয়ও অনেক সময়ে বুঝতে পারেন না। এগেইন, অতিব্যতিক্রম বাদে তারা কখনোই আউট অব দ্যা বক্স ভাবতেই পারেন না। যাদের তারা তুমুল বিরোধী, সেই নারীবাদী-নাস্তিকদের সাথে তাদের এই জায়গাতে অদ্ভুত মিল।
Shamsul Alam: সুন্দর বলেছেন। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ ব্যক্তিবর্গকে আমার দীক্ষিত বলে মনে হয়। এই যে, রবীন্দ্র বলয়ের ভেতরে থেকে রবীন্দ্রনাথকে রক্তমাংসের মানুষ না ভেবে তাঁকে দেবতা ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা, কিংবা রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন বা সাহিত্যকর্ম নিয়ে সমালোচনা করলেই তাকে একেবারে বাংলা সংস্কৃতির বিরোধী বলে ট্যাগ মেরে দেওয়া, এটাও তো মনে হয় গুরুদীক্ষার পর্যায়ে পড়ে।
Mohammad Mozammel Hoque: রবীন্দ্রভক্তরা রবীন্দ্রনাথকে ঈশ্বর মনে করে কিনা জানি না। তবে নবুয়তের সমতুল্য দেবতা বলে যে মনে করে, এটি নিশ্চিত।
Mehedi Hasan: দীক্ষাও দরকার, পজিটিভ মাইন্ডসেট তৈরির দীক্ষা। তবে এই পজিটিভের সংজ্ঞায়ন নিয়ে বাধে জটিলতা। মাদ্রাসায় যে দীক্ষা দেয়া হয় সেটাকে ইসলামিক পার্সপেক্টিভ থেকে পজিটিভ বলতে হয়। তবে এখানেও একটা নির্দিষ্ট ঘরানার প্রতি ব্লাইন্ড করে দেবার মতো দীক্ষাও দেয়া হয় অনেক সময়, যেটাকে পজিটিভ বলা মুশকিল।
সেকুলাররা ধার্মিক হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারাকেই পজিটিভ ডেভলপমেন্ট মনে করে। যেমন, এবারের মাধ্যমিকের কারিকুলাম পুরোপুরি ধর্মবিদ্বেষী। এখানেও বিশেষ কিছু আইডলিওলজিতে সফট ইনডক্ট্রিনেশনের প্রত্যয় আছে।
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ ভাই, দীক্ষা শুধু মাদ্রাসাতেই না। খুব রুথলেসলি এটি ইমপোজ করা হয় অনেক তথাকথিত প্রগতিশীল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। যেমন, ঢাবি’র চারুকলা ইনস্টিটিউট, দুনিয়াজোড়া সব জেন্ডারস্টাডিজ বিভাগে। এমনকি ফিলসফি পড়ানো হয় এমন অনেক ডিপার্টমেন্টেও হালকা করে দীক্ষাদান করা হয়। যেমন, মওদূদী পড়ানো যাবে না। অথচ, বিংশ শতাব্দীর কোনো ইসলামিক পলিটিকাল থটের আলোচনা হতেই পারে না মওদূদীকে ছাড়া।
পোস্টে যেমনটা বলেছি, দক্ষতা, শিক্ষা ও দীক্ষা, সবই দরকার। তবে সোর্স হওয়া উচিত আলাদা। বিশেষ করে শিক্ষা হতে দীক্ষা আলাদা রাখা জরুরী। দীক্ষাগ্রহণে শিক্ষার্থীর পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা চাই।
Abdullah Faisal: ওহাবি মাদ্রাসার স্টুডেন্টের ওহাবি হওয়া আর সুন্নি মাদ্রাসার স্টুডেন্টের সুন্নী হওয়াটা আমার মতে দীক্ষার প্রভাব নয়। এই জিনিসটা চিন্তার জগতে প্রভাব ফেলে না। ওহাবি, সুন্নি এই দুই ধারা কিন্তু আদতে একই। এভাবে বললে ভালো হতো যে হানাফি হয়ে বের হচ্ছে। এখানে স্বাধীন চিন্তার জন্য মুসলমান হওয়া যেমন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না, তেমনি হানাফি হওয়া বা আরো একধাপ নিচে নেমে ওহাবি হওয়াটা চিন্তার জগতে প্রভাব ফেলে না।
শিক্ষা যে মস্তিষ্কের উন্নয়ন সেটা ধ্রুব সত্য। মাদ্রাসার আঙ্গিনায়ও এইভাবে মস্তিষ্কের উন্নয়ন হয় এবং হচ্ছে। কেউ হাদিসকে নতুনভাবে ব্যখ্যার প্রয়াস পাচ্ছেন, কেউ ইসলামের বিভিন্ন অংশকে বর্তমান যুগের সাথে মিলিয়ে আমাদের সামনে প্রদর্শন করেন।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা মাদ্রাসায় পড়া বলতে যা বুঝি, মানে দাওরা (যেটাকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে, আদতে যা কখনো মাস্টার্সের সমমান হতে পারে না), সেটা মূলত ইসলামের উচ্চপর্যায়ের জ্ঞান অর্জনের দরজা মাত্র। মানে আমাদের উচ্চমাধ্যমিক বলা চলে। এই দাওরা শেষ করেই তারা সার্টিফিকেট পেয়ে যায়। যা বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষার সবচেয়ে বড় ভুল।
অথচ এরপর থেকেই উচ্চপর্যায়ের পড়াশোনা শুরু৷ ঐ বিভাগগুলোতে পড়ে খুব কম ছাত্র। উচ্চপর্যায়ের পড়াশোনা যারা করে তারাই মূলত শিক্ষা লাভ করতে পারে। তো, মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ হচ্ছে, কিন্তু সেটা খুবই সীমিত আকারে৷ কারণ, ঐ পর্যায়ে যাওয়ার পূর্বেই ছাত্রকে সার্টিফিকেট দিয়ে মাওলানার তকমা দিয়ে দেওয়া হয়।