স্ক্রিনশটটা নিয়েছিলাম বিকেলে। স্ট্যাটাস দিবো কি দিবো না, তা নিয়ে দোদুল্যমানতায় ছিলাম। ঘুমানোর আগে ভাবছি এটা নিয়ে কিছু একটা বলি। কিন্তু কী আর বলি …! ছেলেটার মন্তব্য সেলফ-এক্সপ্লেনেটরি। বুঝতে কোনো ঝামেলা নাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ফিলসফির একটা গ্রুপে আজকে বিকেলে দেয়া মন্তব্য।

ক্লাসে আমরা কতো ফিলসফারের কত ভারি ভারি তত্ত্ব পড়াই। সেগুলো শেষ পর্যন্ত যে জায়গামতো আস্ত বাইর হয়ে যায়, তা আমরা বড় বড় পণ্ডিতেরা যেন খেয়ালই করি না। জ্ঞান উৎপাদন ও বিতরণের বিষয়টা সম্পূর্ণই বিশুদ্ধ ধান্ধা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে মাস্টারেরা করে চাকরী। আর সেখানে পড়ুয়া পোলাপাইনের টার্গেট চাকরীর দরখাস্তে যুতসই গ্রেডসহকারে সার্টিফিকেট সংযোজন। লেখাপড়ার সাথে কারোরই কোনো প্রকৃত যোগাযোগ নাই।

ডেইলি স্টারে কলাম লিখতেন শ্রদ্ধেয় মরহুম বদরুল আহসান। তেমনি একটি কলামের শিরোনাম ছিল, education is certified ignorance। কলামটা নিয়ে আমি তখন একটা ইনডোর সেমিনার করেছিলাম।

knowing about a subject এর সাথে knowing a subject এর পার্থক্য যদি আপনার কাছে ক্লিয়ার থাকে তাহলে বুঝবেন, জাতীয়, সরকারী বা বেসরকারী, সব জায়গাতেই আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার অবস্থা শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীদের উভয় তরফেই নিছক ‌knowing about শ্রেণির মুখস্থবিদ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই, জীবনের জন্য জ্ঞান বনাম জীবিকার জন্য জ্ঞানকে স্বতন্ত্র পরিচয়ে সুনির্দিষ্ট করা আজ সময়ে দাবী।

ফিলসফি কী – এই শিরোনামে আমার একটা আলোচনা ইউটিউবে আছে। সেখানে আমি বলেছি, ‌‘দেশে ফি বছর সহস্রাধিক ফিলসফির পোস্ট গ্রাজুয়েট স্কলার(?) বের হচ্ছে। এ যেন এক জাতীয় তামাশা।’ ‌‘চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ি’ স্টাইলের এই শিক্ষা পদ্ধতির বলি হতে এসে এই ছাত্রটি উচ্চশিক্ষা জীবনের শুরুতেই যা বলেছে, ‌‘সহজ সাবজেক্ট’ নিয়ে গ্রাজুয়েশনের প্রথম থেকেই ‌‘চাকুরীর পড়াশোনা করা’, তাছাড়া ইনোসেন্ট ছাত্রছাত্রীদের আর কী-ই বা করার আছে?

কোনো চাকুরীর জন্য যে লেভেলের শিক্ষাগত যোগ্যতার দরকার নাই তা কারো থাকলে সে উক্ত চাকুরীর জন্য অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। খুব সহজ এ’রকম একটা গভর্নমেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে সহসাই বন্ধ হতে পারে গণ-উচ্চশিক্ষার এই গণবিকার, সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থের এই গণ-অপচয়।

কে শোনে কার কথা ……?

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Jahid Hasan: অথচ আমি ভাবি—‌‘ইস, আমি যদি অন্তত কয়েকবছর ফিলসফি নিয়ে একাডেমিক্যালি একটু পড়াশোনা করতে পারতাম!’ আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো নন-ব্যাকগ্রাউন্ড কেউ ফিলসফির মাস্টার্সে এডমিশন নিতে পারে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলসফির মতো ‌‘অকেজো’ সাবজেক্টগুলো পড়ানো হয় না!

ভাগ্যিস, একজন মোজাম্মেল স্যারকে পেয়েছি—যিনি অন্তত নন-একাডেমিকভাবে ওনার একজন নন-একাডেমিক ছাত্র হিসেবে আমার ফিলসফির তৃষ্ণা কিছুটা হলেও মেটানোর চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তৃষ্ণা তো মোটেও কমেনি, বরং আরো বেড়েছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জ্ঞান হচ্ছে প্রেমের মত। উর্দু ভাষার কবি মীর তকি মীর এর ভাষায়,

‍“প্রেম আকাঙ্ক্ষা,
আবার প্রেমই আকাঙ্ক্ষার শেষ লক্ষ্য।
প্রেমের ব্যথায় প্রেমই নিবারক।
জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ, তোমরা কি জানো
প্রেম কী?
প্রেম হচ্ছে আত্মার বহিঃপ্রকাশ!”

Zidan Mahmud: আমার অবস্থা হচ্ছে আমি সদ্য hsc পাশ। ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার ইচ্ছা philoshopy নিয়ে পড়ার। কিন্তু কেউই support করছেনা। Science এর student হয়ে এই subject কেনো নিবো। নিলেও এমন কোনো subject নিতে হবে যেটার market value অনেক বেশি।

Rajib Roy: ফিলসফি সবার জন্য না। যারা একান্ত জ্ঞান অর্জন করতে চায় কিংবা গবেষণা করতে চায় তাদের জন্য ফিলসফি বা সাহিত্য বিষয়গুলোর উপর উচ্চশিক্ষা রাখা প্রয়োজন।

Hasan Mahmud: আমাদের দরকার শ্রমিক আর আমলা, আর অল্প কিছু টেকনিক্যাল লোকজন। বাকি সব উচ্চশিক্ষা জীবনীশক্তি ও অর্থের অপচয়। সিস্টেমটাই এমন দাঁড়িয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেই হবে, জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা থাক আর না থাক….! যাদের জ্ঞানপিপাসা আছে শুধু তাদের জন্যই হোক উচ্চশিক্ষা।

Fazlay Azim: আমি বলি কি স্যার, এসব বিষয় একদম সামান্য কয়টা সিট দু-তিনটা ভার্সিটিতে রেখে বাকি সবখানে বন্ধ করে দিতে। দেশে ফি বছর এতো ইতিহাস, পৌরনীতি, অর্থনীতি, রাষ্টবিজ্ঞান, সোশিওলজি হাবিযাবি পড়ে পাস করে তাদের এসবের জ্ঞান ব্যাংকে কি কাজে লাগে বা বিসিএসে বা দেশের উৎপাদনে? দেশে কয়জন রাষ্টবিজ্ঞানী নতুন তত্ত্ব দিতে পেরেছে? আজকে এক রুশ নাগরিকের ইমিগ্রেশন করলাম, লেডির জন্ম ২০০০ সালে। সে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করতে এসেছে। আমাদেরও এরকম দক্ষতাভিত্তিক, বৃত্তিমূলক সাবজেক্ট পড়ানো দরকার গণভাবে, গণহারে।

Shahria Sultan Hamim: একটা কলেজের ফিজিক্সের টিচারের শুধু ফিজিক্স বিষয়ে জ্ঞান থাকাই প্রয়োজন। ফিজিক্স ছাড়া আর অন্য কিছু সে পারে কিনা এটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু কলেজের টিচার হতে গেলে বিসিএস দেওয়া লাগে। আর বিসিএস পাশ করতে গেলে বাংলা, ইংরেজি, জিকে মুখস্ত করা লাগে।

ফলে দেখা যায়, যেই স্টুডেন্ট অনার্সের প্রথম থেকেই এসব জিকে/ইংলিশ মুখস্থ করে আসছে সে কোনোরকমে ফিজিক্সে অনার্স পাশ করেই বিসিএস দিয়ে কলেজের টিচার হয়ে যাবে৷ অন্যদিকে ভার্সিটির ফিজিক্সের অন্যতম সেরা স্টুডেন্ট যে সবসময় ফিজিক্স নিয়েই পড়ে থাকতো সে কিন্তু কলেজের টিচার হতে পারবেনা অথচ তারই টিচার হওয়ার যোগ্যতাটা ছিলো। এই হলো আমাদের সিস্টেম!

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *