১.

মীর কাশেম আলীর উচিত ছিলো জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা। যা করেছিলেন আবদুল্লাহ গুল ও এরদোয়ান। কমফোর্ট জোন হতে বের হয়ে রাস্তায় নামার হিম্মত অবশ্য সবাই রাখে না। আল্লাহর রাসূল (সা) নিজ জন্মভূমিতে হক্বের জন্য শহীদ হওয়ার অপেক্ষা না করে কী করেছিলেন, তা আমরা সবাই জানি।

দেশ ও জাতি, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং আদর্শের দাবিকে সমন্বয় করার পরিবর্তে সংগঠনবাদীরা শেষ পর্যন্ত তথাকথিত সাংগঠনিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গ করে। সত্যিকারের নেতা হচ্ছে তারা, যারা সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়। প্রশংসার জোয়ারে তারা বিভ্রান্ত হয় না। সমালোচনার আঘাতে তারা পিছপা হয় না। ঊর্ধ্বতনের সমীপে গোপনে পত্র লিখে, দুয়েকটা ক্লোজডোর সেমিনার করে, পত্রিকার কোনায় একটা হা-হুতাশ মার্কা নিবন্ধ ছাপালে দায়িত্ব পালন হয়েছে বলা যায় না। সময়ের সাহসী সন্তানেরা “ওয়ামা ‘আলাইনা ইল্লাল বালা-গ”-এর ওপর নির্ভর না করে “ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ”কে নীতি হিসাবে গ্রহণ করে এগিয়ে যান।

অগ্রসর চিন্তা ও উদ্ভাবনী তৎপরতার জন্য উনার মতো ব্যক্তিত্বকে ইতিহাস স্মরণ করবে, এটি সত্য। পাশাপাশি এও সত্য, শিশুতোষ নেতৃত্বের হাতে উর্বর সম্ভাবনাকে জলাঞ্জলি দেয়ার জন্য ইতিহাস তাঁদেরকে দায়ীও করবে। বুঝজ্ঞান আল্লাহর নেয়ামত। শ্রেষ্ঠ আমানত। “লাতুসআলুন্না ইয়াওমাইজিন ‘আনিন্নাঈম”-এর মধ্যে নিজের প্রতিভাও অন্তর্ভুক্ত।

২.

সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করে জেতার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নাহর দাবি হলো– (১) ওই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে এমন যে কোনো পদক্ষেপ হতে বিরত থাকা। অর্থাৎ কনফ্লিক্ট এড়ানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করা। যদি তা সম্ভব না হয়, অথবা ভুলক্রমে যদি সে ধরনের কোনো রেড লাইন অলরেডি ক্রস করা হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে (২) পালিয়ে আত্মরক্ষা করে শক্তি সঞ্চয় করা কিংবা ফিরে আসার জন্য অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষা করা।

আল্লাহর রাসুল (সা) তা-ই করেছিলেন।

৩.

ইসলামের দৃষ্টিতে দায়-দায়িত্বের ব্যাপারটা, ইংরেজিতে যাকে রেসপন্সিবিলিটি বলে, তা সদাসর্বদাই ব্যক্তিগত। জবাবদিহিতা হবে ব্যক্তিগতভাবে। সামষ্টিক কোনো ত্রুটির জন্যও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হবে। ক্ষমা করা হবে কিনা– তা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার একান্ত অনুগ্রহের ব্যাপার। এমনকি দুনিয়াতেও কোনো দলীয় বিপর্যয়ের জন্য নেতৃত্বকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হয়। যুদ্ধে পরাজয় বা জাতীয় বিপর্যয়ের জন্য সেনাপতি কিংবা নির্বাহী প্রধানকে দায় স্বীকার করতে হয়।

[জামায়াতের অভ্যন্তরে মীর কাশেম আলীর সংস্কার প্রচেষ্টা নিয়ে একটা পোস্টে আমার মন্তব্য।]

Similar Posts

২ Comments

  1. অগ্রসর চিন্তা ও উদ্ভাবনী তৎপরতার জন্য উনার মতো ব্যক্তিত্বকে ইতিহাস স্মরণ করবে, এটি সত্য। পাশাপাশি এও সত্য, শিশুতোষ নেতৃত্বের হাতে উর্বর সম্ভাবনাকে জলাঞ্জলি দেয়ার জন্য ইতিহাস তাঁদেরকে দায়ীও করবে। বুঝজ্ঞান আল্লাহর নেয়ামত। শ্রেষ্ঠ আমানত। “লাতুসআলুন্না ইয়াওমাইজিন ‘আনিন্নাঈম”-এর মধ্যে নিজের প্রতিভাও অন্তর্ভুক্ত।

    যথার্থ বলেছেন!

  2. তাঁরা যা করেছেন তা সুন্নাহ নয়। এটাকে আত্মহত্যা বললে খুব কমই বলা হবে। লণ্ডন থেকে তাদের বলা হয়েছে কমপক্ষে দু জনকে বেরিয়ে আসতে। তারা পাত্তা দেননি।
    একটা উর্বর জমিনকে তারা বালখিল্য আচরণ করে কন্টকময় করে গেছেন। এ রকম সিদ্ধান্তের আগে কতটুকু পরামর্শ হয়েছে এবং সেখানে কি ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে সে ব্যাপারেও আমার প্রশ্ন আছে। ইয়েসম্যানদের নিয়ে শুরা হলে সেখানে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হয়, এটা বুঝার জন্যে পণ্ডিত হতে হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *