দেখলাম আমাদের এক সহকর্মী তার এক প্রয়াত সহকর্মীর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। মালা পরানো প্রয়াত সহকর্মীর বাঁধাইকৃত বড় একটা ছবির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। খুব সম্ভবত সেখানে খেয়েছেনও। এ’ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম কয়েকজন প্রফেসর ড. মাওলানা/মুফতি সহকর্মীকে।

মৃত্যুর পরে তার আত্মা মুক্তি পেয়ে স্বর্গবাসী হওয়ার জন্য বিশেষ করে সনাতনীরা যেসব আচার অনুষ্ঠান করে, শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান তার অন্যতম। এ’ ধরনের আয়োজনে মুসলিম কেউ খেতে পারবে? কিংবা, খাইলে কী হবে?

আমার এমন প্রশ্নের উত্তরে দু’জন বললেন, বিধর্মীদের এ’ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খাওয়া মুসলমানদের জন্য হারাম হবে। অপর দু’জনের মতে এ’ধরনের কাজ মাকরুহ তাহরীমি পর্যায়ের গুনাহের কাজ হবে। উল্লেখ্য, হারাম হলো ফরজের বিপরীত। মাকরুহ তাহরীমি হলো ওয়াজিবের বিপরীত। যাদেরকে আমি জিজ্ঞাসা করেছি তাদের প্রত্যেককে আমি প্রশ্ন করেছি, ‘আল্লাহর নামে জবেহ না করার কারণে গোশত জাতীয় খাবার গ্রহণ জায়েয না হলেও সবজি এবং মাছ জাতীয় খাবার কেন খাওয়া যাবে না?’

উনারা বলেছেন, সবজির তরকারী হোক বা মাছ হোক বা এ’ধরনের হালাল অন্যকিছু হোক, ‘প্রসাদ’ হিসেবে যে খাবার বিতরণ করা হয় তা মুসলমানরা খেতে পারবে না। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়া সাধারণ দাওয়াতে গিয়ে জায়েয যে কোনো খাবার অমুসলিম গৃহে খাওয়া যাবে। প্রতিবেশী বা বন্ধু হিসেবে সৌহার্দ্যের নিদর্শন হিসেবে দেয়া যে কোনো খাবারের জন্যও এটি প্রযোজ্য।

আমাদের যে সহকর্মী শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করেছেন, ধারণা করছি, তিনি সৌজন্যতার খাতিরে অথবা ইনক্লুসিভ হওয়ার জন্য সেখানে গিয়েছেন। সৌজন্যতারও দরকার আছে, ইনক্লুসিভ হওয়ারও দরকার। তবে, সেটা কোন ক্ষেত্রে কীভাবে করতে হবে তা বুঝতে হবে।

সাধারণ তথা বেআমলদার নামকাওয়াস্ত মুসলমান তো বটেই, আমলদার লোকদের একাংশের মধ্যেও ইদানীংকালে অতিউদার, প্রগতিশীল ও ইনক্লুসিভ হওয়ার উদগ্রতা (একচুয়েলি, কদর্যতা) লক্ষ করছি। ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক। নিজের আইডেন্টিটি বিসর্জন দেয়ার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নাই। একই কথা মুসলিমদের জন্যও প্রযোজ্য, অমুসলিমদের জন্যও প্রযোজ্য।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

১। Bristy Paul Anamika: স্যার কোন হিন্দু গৃহে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হলে পূজার সামগ্রী পুরোপুরি আলাদা ভাবে করা হয় এবং পূজার প্রসাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয় তা কখনো খাবার খেতে আসা তাদের কে দেওয়া হয় না। পুরো আলাদা ভাবেই রান্না করা হয়। আর যেহেতু মনে দ্বিধা রয়েছে খাবার খাওয়া নিয়ে সেই ক্ষেত্রে খাবার না খাওয়ায় উত্তম।

Mohammad Mozammel Hoque: আমাদের ধর্মীয় বিধান অনুসারে তোমাদের পূজার প্রসাদ খাওয়া যাবে না। এছাড়া সাধারণ যা কিছু আমাদের ধর্মীয় বিধানমতে হালাল তা অবশ্যই খাওয়া যাবে। এর মাঝামাঝি হলো পূজা উপলক্ষে তৈরিকৃত হালাল খাবার। এ’ব্যাপারে কেউ সতর্কতা অবলম্বন করে তা নাও খেতে পারে, কিংবা কখনো কেউ যদি সেটা খেয়ে ফেলে তাকে দোষারোপ করা যাবে না।

শুরুতে যা বললাম, খাবারটুকু পূজার প্রসাদ কি-না সেটা নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপার।

আমরা নিশ্চয়ই আমাদের কোরবানি দেওয়া গরুর গোস্ত তোমাদেরকে খেতে দিব না। তোমাদের সনাতনী কেউ এসে যদি আমাদের কোরবানির উপলক্ষে জবাই করা গরুর গোশত খায় তাকে নিশ্চয়ই তোমরা নিন্দা করবে। আমার ধারণা।

মন্তব্য করে কিছু ক্লারিফিকেশন দিয়েছো, তাতে উপকৃত হয়েছি। অনেক ধন্যবাদ।

Bristy Paul Anamika: স্যার, আমি আমাদের দিকটা বললাম যেহেতু আমরাও জানি পূজায় ব্যবহারকৃত খাবার আপনাদের ধর্মের জন্য হারাম, তাই আমরাও কখনো পূজার প্রসাদ খেতে দিই না, আর আমাদের ধর্মে যখন কারও বাড়িতে মরণাশৌচ চলে তখন ওই খাবার গুলো পর্যন্ত ছোয়া নিষিদ্ধ থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত পূজো শেষ না হয় কারণ আমাদের রীতি অনুযায়ি তারা শৌচ না হওয়ায় আগে কিছুই স্পর্শ করতে পারে না, তাদের রান্নার জন্য ব্যবহারকৃত জিনিসই স্পর্শ করে। সেহেতু খাবার খাওয়া হালাল/ হারাম হবে কি না তা আপনারাই ভালোভাবে বলতে পারবেন।

আর আমি বারবার এইটাই বুঝাতে চেয়েছিলেম এই অনুষ্ঠানে পূজায় ব্যবহার করা জিনিসগুলো সম্পুর্ন আলাদা। মানুষকে খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ দেওয়া হয়। সেইটার সাথে পূজোর প্রসাদের কোন যোগাযোগ নেই। আর আমাদের পূজার প্রসাদ সবসময়ই নিরামিষ আহার হয়, তাই আমরা কখনো প্রসাদ খাওয়ার জন্য মন্দিরের কোন কাজে নিমন্ত্রণ করি না। আলাদা কোন অনুষ্ঠান যেমন জন্মদিন এইগুলোও নিমন্ত্রণ করা হয়।

২। Puspita: এটা বেশ ব্যতিক্রম লিখা। একটু আশ্চর্যই হয়েছি। আপনার ভিতর ইনক্লুসিভনেস অনেক বেশি দেখা যায়। সে হিসেবে এটা অবশ্যই ব্যতিক্রম। তবে মতামতটি ভালো লেগেছে।

Mohammad Mozammel Hoque: লেখার মধ্যেই বলেছি, আমাদের সৌজন্যবোধেরও দরকার আছে, ইনক্লুসিভ হওয়ারও দরকার আছে। কিন্তু সেটা মাত্রা এবং সীমা বজায় রাখা সাপেক্ষে।

৩। Anisur Karim: অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিধর্মী বলা হয় কেন? তাদের তো একটা ধর্ম আছে।

Mohammad Mozammel Hoque: বিধর্মী শব্দটার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ধর্মহীনতা। আর প্রচলিত অর্থে এটাকে ব্যবহার করা হয় অন্য ধর্ম অবলম্বী ব্যক্তিকে বোঝাতে।

অনেক শব্দ আমাদের ভাষাতে আমরা ব্যবহার করি যেগুলোর ব্যুৎপত্তিগত অর্থের সাথে প্রচলিত অর্থের বড় ধরনের গড়মিল আছে। কোনো একটা শব্দকে তার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দিয়েই বিবেচনা করা, কিংবা প্রচলিত অর্থের পরিবর্তে বুৎপত্তিগত অর্থকে প্রাধান্য দেয়া, এটা লজিকের ভাষায় একটা ফেলাসি। এটাকে বলা হয় জেনেটিক ফেলাসি।

এনিওয়ে, অন্য ধর্মাবলম্বনকারী ব্যক্তিকে বোঝাতে সন্ধি বা সমাস না করে একটা শব্দ কী হতে পারে? আপনার ধারণা?

বিধর্মী কথাটাকে কেউ যদি গালি অর্থে নেয়, সে ক্ষেত্রে অন্য ধর্মাবলম্বী বোঝাতে বিধর্মী কথাটা ব্যবহার না করাই ভালো। আমি এখানে বিধর্মী কথাটাকে গালি অর্থে ব্যবহার করিনি।

কোনো অমুসলিম যদি এই শব্দটির ব্যাপারে আপত্তি করে এখানে মন্তব্য করেন তাহলে আমি এটাকে সংশোধন করে নেব।

Shaheda Naim: যেমন বাংলাদেশ ছাড়া অন্য সব দেশ আমাদের কাছে! “বিদেশ”।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, বিদেশ বলতে তো আমরা দেশহীনতা বুঝাই না। বরং অন্য দেশ বুঝাই।

Shaheda Naim: সৌজন্যের খাতিরে গিয়ে খাবার না খেলেই কি হয়না? মৃত্যুতে সমবেদনা জানানো নাজায়েজ হওয়ার কারণতো নাই। এক ইহুদির লাশ সামনে দিয়ে গেলে রাসুল (স:)ও কোনভাবে সম্মানার্থে দাঁড়ালে বা পাশে দাঁড়ালে (সঠিক মনে নাই) সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটিতো ইহুদির লাশ! তিনি বলেছিলেন,মানুষতো!

তাহলে মানবিকতার খাতিরে যাওয়া, সামাজিকতা রক্ষাকে খারাপ হিসেবে দেখার দরকার নাই। তবে হালাল হারম মেনে খাদ্য গ্রহণ হতে বিরত থাকা দরকার।

Mohammad Mozammel Hoque:  Actually, they celebrate the whole thing, the death of their near one. The whole environment there is joyful and in a celebrating mood. বিয়ের অনুষ্ঠান আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানের মধ্যে পরিবেশগত কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। Without participating myself personally, I have been confirmed this by many people who participated in such programs.

Set aside the religious law, is it ethical or humanitarian to celebrate a death? In a condolence program, there are everything without the very condolence-act. How funny! what a contradiction!

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *