[ডিসক্লেইমার: আমি অনেকদিন থেকে ভাবছিলাম এই প্রশ্নগুলো নিয়ে লিখবো। এ সব বিষয়ে বিশেষ করে পাশ্চাত্যনিবাসী ‘বন্ধুদের’ কাছ হতে জানতে চাইবো। গর্ভপাত নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে দেয়া রায়ের সাথে এই লেখাটির সম্পর্ক নিছক কাকতালীয়।]

২টি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমি ২টি প্রশ্ন করছি।

পর্যবেক্ষণ-১:

পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের দিক থেকে প্রাচ্য দেশীয় মানুষজনের, বিশেষ করে মুসলমানদের, সাথে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সমর্থক গোষ্ঠীর অনেক বেশি মিল। অধিকাংশ রিপাবলিকান সমর্থকগণ ধর্ম-সমর্থক অথবা ধার্মিক। এর বিপরীতে সেখানকার ডেমোক্রেটরা মূলত নিধর্মীয় বা নাস্তিক চরিত্রের। যত ধরনের চারিত্রিক অধঃপতনমূলক কর্মকাণ্ড সেখানে প্রচলিত আছে তা সব কিছুর সমর্থক বা অনুসরণকারীরা হচ্ছে সেখানকার বামপন্থী উদারতাবাদী ডেমোক্রেট ঘরানার লোকজন। সনাতনী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সেখানকার ডানপন্থী রক্ষণশীল লোকজনেরা মূলত রিপাবলিকান পার্টি সমর্থন করে।

পর্যবেক্ষণ-২:

পাশ্চাত্যনিবাসী এশিয়ান ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজনের মধ্যে উদাহরণ হিসেবে আমরা সেখানকার মুসলমানদের সমর্থনের বিষয়টাকে বিবেচনা করতে পারি। তারা ব্যাপক হারে ডেমোক্রেট সাপোর্টার। খুব সম্ভবত ডেমোক্রেটদের উদার ইমিগ্রেশন পলিসি এর কারণ।

প্রশ্ন-১: আমার এই পর্যবেক্ষণদ্বয় সঠিক কিনা?

প্রশ্ন-২: এই অবস্থা কি অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই রকমের?

এই প্রশ্ন দু’টির উত্তর ইতিবাচক হয়ে থাকলে আমার সম্পূরক প্রশ্ন—

পাশ্চাত্য দুনিয়ায় বসবাসকারী মুসলমানদের কাছে অধিকতর নাগরিক সুবিধাদি প্রাপ্তির সুযোগ নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চেয়ে কার্যত অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ?

যুক্তিবিদ্যার আলোচনায় দু’টি অপযুক্তির (fallacy) কথা বলা হয়। একটি হলো, যা বলা হয় নাই তাই বলা হয়েছে বলে দাবী করে, সেটার ওপর ফোকাস করে পাল্টা যুক্তি দেয়া। এটাকে বলে স্ট্র ম্যান ফেলাসি। আরেকটা হলো, মূল আলোচ্য বা বিবেচ্য বিষয়কে পাশ কাটিয়ে প্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ে আলোচনাকে টেনে নিয়ে যাওয়া। এটাকে বলা হয় রেড হারিং ফেলাসি।

কেন এই ফেলাসিগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম তা ইতোমধ্যেই আপনি বুঝে ফেলেছেন, আশা করি।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: That’s a Great Idea!

Mostafa Mobinullah Azad: স্যার, আপনার বক্তব্য, মতামত, ধারণা সবসময়ই নূতনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। যাহোক, পরিশেষে আপনাকে ধন্যবাদ স্যার।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইউরোপ আমেরিকাতে আসলেই কী ঘটে তা জানার পাশাপাশি একতরফাভাবে পাশ্চাত্যের ‌‘সফিসটিকেটেড ইসলাম’ এর যেভাবে ঢোল পিটানো হয় সেটার যে অপরপিঠে কিছু দগদগে ঘা আছে, বিপরীত কিছু অপ্রত্যাশিত চিত্রও আছে, কোনো কিছুই যে প্রেক্ষাপটবিযুক্ত নয়, তা দেখানো এই পোস্টের উদ্দেশ্য।

রুবেল আহমেদ: নাগরিক সুবিধার মধ্যে আদর্শ চর্চার বিষয়টা জড়িত। তাই পশ্চিমে বসবাসরত মুসলমানরা উদার/লিবারেল/বাম ইত্যাদি ঘরানার দলের প্রতি বেশি ঝুঁকে কারণ নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে তাদেরকে ডানপন্থীদের চাইতে বেশি কাছে পাওয়া যায়। মন্দের ভালো আর কি। যেমন, কিছুদিন আগে ফ্রান্সে হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলমানরা সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো’কেই ভোট দিয়েছে, যদিও নবীর (স) কার্টুন ইস্যুতে বাংলাদেশসহ অনেক মুসলিম দেশে ম্যাক্রোর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিলো, তবুও তাকে ভোট দেওয়ার কারণ হলো তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লো পেন যদি নির্বাচিত হয়ে যায় তাহলে ফ্রান্সে মুসলমানদের অবস্থা আরো অবনতি হবে এই ভয়ে । এখানে মারি লো পেনের উপরে মাক্রোকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে আদর্শের স্খলন হয় কিনা জানিনা, তবে বৃহৎ স্বার্থে তা কমিউনিটির নাগরিক সুবিধাদি অক্ষুণ্ণ রাখার মাধ্যমে আদর্শ চর্চাও অক্ষুণ্ণ থাকে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কথা তো সেটাই যে অধিকতর নাগরিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতার চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

রুবেল আহমেদ: অধিকতর নাগরিক সুবিধা না বলে আমি বলবো মৌলিক নাগরিক সুবিধা। মৌলিক নাগরিক সুবিধা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, ট্যাক্স রিটার্নসহ যাবতীয় নাগরিক দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও যাতে ২য় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য না হতে হয়, বৈষ্যম্যের শিকার যাতে না হতে হয়, আদর্শ চর্চার নূন্যতম সুযোগ যাতে মিলে সেগুলো ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে। সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে বৈষম্যের শিকার হলে নীতি নৈতিকতাও হুমকির মুখে পড়ে, দুইটাই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভবিষ্যতে আমি নৈতিকতার উন্নয়ন করবো, সেজন্য আপাতত নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে একটা সুবিধাবাদী অবস্থান নেই, নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার এই ব্যাপারটা কি এক ধরনের স্ববিরোধিতা হলো না? To compromise ethics at present for practicing better ethics in the future, isn’t it a sort of contradiction?

Ab Kal: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মানুষ মাত্রই স্ব-বিরোধী, বেশিরভাগ ‌‘মুসলমান’ ইসলামকে আপনার মত এতো সিরিয়াসলি নেয়না। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত অন্য যে কোনো ধর্মের মত ইসলাম তাদের কাছে একটা কালচারাল, spiritual চাহিদা মিট করে মাঝে মধ্যে।

Abdullahil Kafi: পর্যবেক্ষণ সঠিক। তবে শুধু পাশ্চাত্যনিবাসী এশিয়ান ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজনের মধ্যেই যে এমনটি দেখা যায় তা নয়, বরং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বেলায়ও এমনটি দেখা যায়। ১.৩৮ বিলিয়ন মানুষের দেশ ইন্ডিয়াতে তেমনটি লক্ষণীয়। রক্ষনশীল সরকারের অধীনে সাধারণত ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নাগরিক অধীকার ক্রমশ সংকোচিত হওয়ার প্রবনতা দেখা যায়।

Ragib Shahriar: স্যার, এখানে সম্পূরক প্রশ্নের জন্যে নিচের প্রেক্ষাপট মাথায় রাখা দরকার বলে মনে করি:

যে কোনো দেশে সেই দেশের সংখ্যাগুরু জনগণ থেকে সংখ্যালঘুরা কোনো না কোনোভাবে বঞ্চিত হয়ই। সেটা ভারত, বাংলাদেশ, আমেরিকা যেই দেশই হোক না কেন। আর সংখ্যাগুরু হওয়া মানে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী হইতে হবে তা না। সেটা যে কোনো আদর্শের হইতে পারে।

আমার জানামতে, এখনো পাশ্চাত্য দুনিয়া লিবারেল বা বামদের মেজরিটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হয় নাই। তাই এই ঘরানার মানুষেরা কিছুটা ফ্লেক্সিবিলিটি দিতে চায়, বা অন্য কথায় নিজের জন্যে নিশ্চিত করতে চায়। সেই চাওয়ার বাই প্রোডাক্ট হিসেবে মুসলিম থেকে শুরু করে যেকোন ইমিগ্র্যান্ট যারা আছে তারা সুবিধাগুলো পাচ্ছে। যেহেতু তারা সুবিধা দিচ্ছে আর মুসলিমরা সুবিধা পাচ্ছে, তাই স্বভাবতই মুসলিমরা ওদের সমর্থন করবে।

তবে আমার একটা ধারণা, সত্যি হবে কি না জানি না, যখন পশ্চিম বাম বা লিবারেল ডেমোক্রেটিক লোকদের মেজরিটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হবে, তখন মুসলিমদের জন্য যেই বাই প্রোডাক্ট আসছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। আর তখন দেখা যাবে ওরা কনজারভেটিভদের সাথে, মুসলিমদের সাথে বা যারাই তাদের মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে, তাদের ব্যাপারে অসহিষ্ণু আচরণ করবে।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *