প্রশ্ন: আসসালামুয়ালাইকুম স্যার। আপনার কমেন্টে পড়লাম যে মাদ্রাসায় শিক্ষাকে স্টাডি অর্থে না নিয়ে ইনডকট্রিনেশান অর্থে নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকে ওনারা সেই অর্থে মনে করেন। এখানে স্যার কী বুঝাতে চেয়েছেন? যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।
উত্তর: আক্ষরিক অর্থে মুক্তচিন্তা বা মুক্তশিক্ষা বলে কিছু নাই। সকল শিক্ষাই তৎপূর্ববর্তী শিক্ষার ধারাবাহিকতা। আগের শিক্ষাকে নতুন করে ধারণ করার পাশাপাশি নাকচ করাও শিক্ষার এক ধরনের ধারাবাহিকতা বটে।
বিগত কয়েক সহস্র বৎসরে মানুষ জীবন ও জগত সম্পর্কে যা বলেছে এর বাইরে আপনি, আমি বা কেউ এসে এখন আর নতুন কিছু বলার সুযোগ নাই।
প্রসঙ্গক্রমে একজনকে বলেছিলাম, গ্রিক ফিলসফির পরে ফিলসফির নতুন কোনো মৌলিক তত্ত্ব হাজির করার সুযোগ আর নাই। আমাদের অনলি স্কোপ হলো পূর্ববর্তী কোনো গ্রুপ বা স্কুল অব থটের সাথে একমত হওয়া।
ক্ষেত্রবিশেষে তাদের কথার কিছুটা নতুন কোনো ব্যাখ্যা দেয়া। শিক্ষায় আমাদের পক্ষে সম্ভবপর সৃজনশীলতার বড় ধরনের সুযোগ ও অবকাশ আছে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে। এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ডগুলোতে।
সৃজনশীলতা তিন ধরনের।
আমেরিকা মহাদেশ যিনি আবিষ্কার করেছেন তার কাজটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিয়েটিভ কাজ। আমেরিকা যাওয়ার সহজতর কোনো নতুন রাস্তা যিনি বের করেছেন তার কাজটি দ্বিতীয় পর্যায়ের সৃষ্টিশীল কাজ। এই দু’টোর কোনোটিই না করে যিনি জীবনে প্রথমবার আমেরিকা গিয়েছেন, তার জন্য নতুন এই অভিজ্ঞতা অর্জন, এটিও এক ধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ। এটি তৃতীয় শ্রেণীর ক্রিয়েটিভ কাজের উদাহরণ।
বুঝতেই পারছেন, কলা ও মানববিদ্যা শিক্ষায় আমাদের পক্ষে প্রথম ধরনের ক্রিয়েটিভিটি অর্জনের সুযোগ নাই। আমরা নতুন কোনো কথা বলতে পারবো না, যে ধরনের কথা অতীতের কেউ বলেনি। এতদসত্বেও আমরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরনের ক্রিয়েটিভ হতে পারি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এতদুভয় ধরনের সৃজনমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি।
যে শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ক্রিয়েটিভিটির সুযোগ আছে, তা গূণগতভাবে উন্নতমানের শিক্ষা। যে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বিতীয় ধরনের ক্রিয়েটিভিটির সুযোগ নাই এবং তৃতীয় ধরনের ক্রিয়েটিভিটির সুযোগও সীমিত, সেই শিক্ষাব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে নিম্নমানের।
এই দিক থেকে বিবেচনা করলে বর্তমানে প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে নিম্নমানের। মনে রাখতে হবে, এখানে কন্টেন্টের কথা বলা হচ্ছে না। শুধু শিক্ষাপদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে।
একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের দৃষ্টিতে শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে অনুন্নত ও কমফলপ্রসূ হওয়া সত্বেও মাদ্রাসা শিক্ষার কিছু বিষয় ফ্যান্টাসটিক। শিক্ষার্থীদের পাঠঅনুশীলন পদ্ধতি, তাদের প্যাশন, ডেডিকেশন ও নিয়মানুবর্তিতা এর অন্যতম উদাহরণ।
পাঠ্যসূচীর প্রসঙ্গ বাদ দিলেও মাদ্রাসাশিক্ষায় পাঠদান পদ্ধতি অত্যন্ত দুর্বল। মুখস্তনির্ভর পদ্ধতি। তাদের পাঠদান পদ্ধতি ইন্টারেক্টিভ না। তারা passive learning system-এ পাঠদান করে।
প্রাইমারি, টারশিয়ারি এবং হাইয়ার লেভেলে পড়া যে একটির তুলনায় অপরটি অনেকখানি ভিন্নপদ্ধতির হতে হয় তা আমল করা তো দূরের কথা, উস্তাদের প্রতি অতিশ্রদ্ধার কারণে প্যাসিভ লার্নিং সিস্টেমের বাইরে তারা কিছু ভাবতেই পারে না।
ইন্টারেক্টিভ পদ্ধতির শিক্ষার জন্য উপযুক্ত ফিজিকাল এনভায়রনমেন্ট লাগে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য উপযোগী পরিবেশ লাগে। জীবীকার উপায় হিসেবে সীমিত হলেও আকর্ষণীয় কিছু সুযোগ থাকা জরুরী। মাদ্রাসা শিক্ষায় এসবের ‘বালাই’ নাই।
একবার আমি হাটহাজারি মাদ্রাসার ইফতা (ফতোয়া) বিভাগে গিয়েছিলাম। বিশাল হল রুম। চারিদিকে সারি সারি অগুণিত আলমারি ভর্তি সব কিতাব। এসব কিতাব পড়ার সৌভাগ্য না হওয়ার জন্য আমার যতখানি আফসোস হয়েছে তারচেয়ে বেশি আফসোস হয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য।
আমি ভাবলাম, এখানে বসে বহু আগে লেখা কিতাবগুলো ছাত্ররা যখন পড়ে, তারা মনে করে, এই কিতাবগুলোর মধ্যেই সব সমস্যার সমাধান দেয়া আছে। ফতোয়া লেখার সময় তারা এ’গুলো হতে শুধু নকল করে। নকল করা মানে সূত্র উল্লেখ করে উদ্ধৃতি দেয়া।
তারা মনে করে না, শত হতে শুরু করে সহস্র বছর আগে লেখা এই সব কিতাবের হাল নাগাদের কোনো ফলোআপ ভার্শান থাকা জরুরী। তারা মনে করে না, এসব ক্লাসিকাল টেক্সটের পাশাপাশি কনটেক্সট জানার জন্য কনটেমপরারি টেক্সটগুলোর অধ্যয়নও জরুরী।
আইরনি অব দ্যা ফেইট হলো, দ্বীন দুনিয়া আলাদা করার যে আধুনিক প্রজেক্ট, যাকে আমরা সেকুলারিজম হিসেবে জানি, তারা সেটার ঘোরতর বিরোধী। অথচ শুধুমাত্র ‘দ্বীনি শিক্ষায়’ কনসেনট্রেইট করার মাধ্যমে প্রাকটিকেলি তারা একটা সেকুলার সেটআপের অংশ হিসেবে ভূমিকাপালন করছে।
শুরুর কথাটা দিয়ে শেষ করি। মুক্তচিন্তা ও মুক্তশিক্ষার বাস্তবসম্মত অর্থ হলো কিছুটা দ্বিতীয় এবং অনেকখানি তৃতীয় সারির ক্রিয়েটিভিটির সুযোগ থাকা। শিক্ষার্থীর সেলফ-ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ না থাকাসহ নানা কারণে, সরি টু সে, মাদ্রাসা শিক্ষায় বর্তমানে ইনডক্ট্রিনেশন হয়, স্টাডি বলতে যা বোঝায় তা খুব একটা হয় না।
এটি আমার সামগ্রিক ওভারঅল পারসনাল অবজার্ভেশন। এর ব্যতিক্রম থাকাটাই স্বাভাবিক।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Mamun Chowdhury: “অথচ শুধুমাত্র ‘দ্বীনি শিক্ষায়’ কনসেনট্রেইট করার মাধ্যমে প্রাকটিকেলি তারা একটা সেকুলার সেটআপের অংশ হিসেবে ভূমিকাপালন করছে।” How does it work out? To me this statement demands an illustration.
Mohammad Mozammel Hoque: লিবারেল সেকুলাররা চায়, মানুষ যেহেতু এসবে শান্তি পায়, সুশৃংখল থাকে, তাই সমাজে ধর্মকর্মের একটা ধারাও থাকুক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মসজিদগুলো প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রফেসর আবুল ফজল স্যার। তিনি ছিলেন নাস্তিক। কেউ জিজ্ঞাসা করার পর স্যার অনুরূপ কথাই বলেছিলেন। ক্যাম্পাসে আমি লোকমুখে এটি শুনেছি। এই সেকুলার সেটআপের মূল কর্মনীতি হলো mutual exclusion within a holistic setup। দুনিয়া আমাদের। আখেরাত তোমাদের।
Ashraf Ehan: প্যাসিভ লার্নিং সিস্টেমটা আসলে উস্তাদের প্রতি অতি ভক্তির কারণ না, অনেকটা কনভেনশনাল বলা যায়।
Mohammad Mozammel Hoque: আমার তা মনে হয় না। শুনেছি ইমাম আবু হানিফার সাথে তাঁর প্রধান দুই শীষ্য ইমাম মোহাম্মদ এবং ইমাম আবু ইউসুফ অধিকাংশ মাসাআলাতে দ্বিমত করেছেন। Interactive class-এর পরিবর্তে সেখানে যদি এখনকার মত একমুখী Passive learning system থাকতো তাহলে ছাত্রদের পক্ষে শিক্ষকের মতামতের সাথে এত বেশি পরিমাণে দ্বিমত করে স্বাধীন মতামত দেওয়া কখনোই সম্ভব হতো না।
Ahmad Rafiq: যদিও এই আপত্তি (অবজার্ভেশন) জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থায় আরো বড় করে আরোপ হয়, তবু খারাপ বলেননি। তবে তার প্রেক্ষিতটা দেশি মাদরাসাগুলোর সাথে কিছুটা সীমিত রাখতে হবে। পুরা দুনিয়ার মাদরাসাগুলো ব্যতিক্রম।
Ataur Rahman Emon: আমাদের দেশের কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই কাঠামোগতভাবে ভালো না। তার মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা কাঠামোটা এমন, যেখানে নূন্যতম Analytical Ability & Critical reasoning-এর জায়গা নেই। ফলে এখানে জ্ঞান উৎপাদন একদমই নেই। আছে তরবিয়ত। এছাড়াও আমাদের দেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষজন খুব বেশি রকমের প্রথা এবং সিলসিলা নির্ভর। ফলে তারা পূর্ববর্তী প্রজন্মের বিষয় বা পদ্ধতি বর্জন মোটেও পছন্দ বা মেনে নেয় না। এই বিষয়গুলো যতদিন আলেম সমাজ Address করতে না পারবে, ততদিন এই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা মোটাদাগে সমাজ এবং রাষ্ট্রে কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না।
Abdullahil Kafi: “বিগত কয়েক সহস্র বৎসরে মানুষ জীবন ও জগত সম্পর্কে যা বলেছে, আপনি, আমি বা কেউ এসে এখন আর নতুন কিছু বলার সুযোগ নাই।” — এই কথাটা বুঝি নাই, কারণ এপিস্টেমোলজিকাল সিঙ্গুলারিটির ক্ষেত্রে জ্ঞানের প্যারাডাইম শিফ্ট অনিবার্য।
Mohammad Mozammel Hoque: প্যারাডাইম শিফট, এই জিনিসটা নিয়ে আছে ব্যাপক ভুল বোঝাবুঝি। গাড়ির একটা টায়ার নষ্ট হইলে যেমন আমরা গাড়িটা ফেলে না দিয়ে টায়ারটা শুধু বদলাই, তেমনি করে প্রতিষ্ঠিত ধ্যানধারণার মধ্যে আমরা কোনো এক জায়গাতে কিছু একটা সিগনিফিকেন্ট চেঞ্জ আনি, এটা হচ্ছে নতুন প্যারাডাইম। এই শিফটিংয়ের মাধ্যমে আগের ধ্যান-ধারণা ও চিন্তাকাঠামোটা পুনর্গঠিত হয়, সম্পূর্ণভাবে বাদ যায় না। Paradigm shift-কে বুঝতে হবে হেগেলের (পরিবর্তনের) তৃতীয় সূত্র negation of negation এর আলোকে।
Sharmin Rima: আমি কওমী মাদ্রাসা থেকে দাওরা শেষ করে এসেছি। তাই ইন্টার্নাল বিষয়গুলো নিয়ে বেশ ভালোই অভিজ্ঞতা আছে। সবথেকে মৌলিক যে সমস্যা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় তা হলো, তারা কোনও ধরনের সমালোচনা বা বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারে না, যেটি আপনার কমেন্ট সেকশনেও দেখা যাচ্ছে। তাদের সহযোগী বা হিতাকাঙ্ক্ষী হয়েও যদি কেউ পরামর্শ দিতে চায় তথাপি তারা সেটাকে ভালো চোখে দেখে না। একমাত্র তাদের শিক্ষকদের কথাই সর্বশেষ।
আউট অফ দ্যা বক্স কোনো প্রশ্নই তারা ভালোভাবে নিতে শেখেনি, বলা যায় শেখানো হয়নি। আকায়েদ এবং ফিক্বহ বিষয়ক কোনও প্রশ্ন যখন আমার মাথায় আসতো তা ওস্তাদদের নিকট পেশ করলে তারা উত্তর দেয়ার বদলে আমাকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতো। ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীরা কিছুমাত্রায় বুলি করতেও ছাড়তো না।
তবে মাদ্রাসা লাইনে পাঠদানের কৌশলটা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আরবীর মতো একটি কঠিন ভাষাকেও তারা মোটাদাগে তিন থেকে চার বছর লাগিয়ে এমনভাবে শিখিয়ে ফেলে যে কোনো মনোযোগী ছাত্রের সারাজীবনের জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যায়। অথচ, স্কুল-কলেজ ভার্সিটিতে আজীবন অধ্যয়ন করেও ইংরেজি ভালোভাবে শিখতে পারে না জেনারেল শিক্ষার্থীরা।
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের তুলনায় মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের ডেডিকেশন সত্যিই প্রশংসনীয়।
Awadud Farrokh: আপনার মতো এত মুক্ত চিন্তার মানুষের এমন মন্তব্য, ধারণা পড়ে কেন যেন হাসি পাওয়ার মতো অপরাধ ও অবমাননা করে ফেললাম হয়তো। আপনার মতো এমন সীমাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনাই মাদরাসা শিক্ষাকে অনন্য অনুপম মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। কারণ হাটহাজারীর ছাত্ররা যা কপি করে, তার আপডেট দেওয়ার মতো পৃথিবীতে কেউ নেই, কিছু নেই – এটা আল্লাহ কিংবা তার রাসূলের আইন। যাকে অমান্য করলে ঈমান থাকেনা, পরিবর্তন করলে কী হবে বুঝে নিন।
মরিচ বুকাইলিসহ অনেক বড় মাপের মানুষ ইসলামকে ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে আজ মুসলিম। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুক। বেয়াদবি নিবেন না।
Mohammad Mozammel Hoque: আপনার মন্তব্যটা সেলফ – এভিডেন্ড। It’s clear evidence in favour of my proposition.
Md Tawhidul Islam: রিফাত হাসান ভাই ইসলামের মধ্যে থাকা প্রচলিত মাসলাকগুলাকেও পৌত্তলিকতা বলেছিলেন। যদিও উনার অভারঅল বয়ান যেটা ছিল তা কিছুটা সরলীকরণ মনে হইছে, হতে পারে সেটা আমার চিন্তার সীমাবদ্ধতা। তবে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে উনার এই বয়ানটা ভালোভাবেই ফিট করে।
এই শিক্ষাব্যবস্থার ফ্রেইমওয়ার্কটাই এমন যে এখানে ট্র্যাডিশনাল একটা কনসেপ্ট বা থট কে চ্যালেঞ্জ করা তো দুরের কথা, এর বাইরে গিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করাটাও পাপ মনে করা হয়!
Mohammad Mozammel Hoque: কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে কথা বলাটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সেই ব্যক্তি কোন প্রেক্ষাপটে কী বলেছেন তা আমি খুব ভালো করে জানি না। তাই রিফাত হাসান প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আর কোনো একটা শিক্ষা ব্যবস্থা বা কোনো কিছুর সবকিছুই খারাপ বা সবকিছুই ভালো, এমনটা হয় না। ওভারঅল আমরা যেমনটা দেখি তেমনটা নিয়ে সাধারণত বলি।
Muhammad T Sobhan: ধর্মীয় বিষয়ে যত গোড়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তত বেশি বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জিত হবে। আর ফিকহের অধিকাংশ বিষয়ই পূর্ববর্তী ইমাম ও আলেমগণ কোরআন-হাদীসের আলোকে সমাধা করে দিয়েছেন। খুব সামান্য কিছু ক্ষেত্রেই (নব উদ্ভাবিত বিষয়) নতুন করে ফিকহী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। ফিকহের ক্ষেত্রে কপি-পেস্ট কথাটা আপত্তিকর মনে হচ্ছে।
Mohammad Mozammel Hoque: এই যে আপনি ভাগাভাগি করছেন, ধর্মীয় বিষয় বলে। তার মানে দুনিয়াতে কিছু বিষয় হচ্ছে দুনিয়াবী, কিছু আছে ধর্মীয়। ইসলাম এই ভাগাভাগিটাকেই অস্বীকার করে। ফেকাহ শুধু ধর্মীয় বিষয়েই বলবে, এমন কেন? অন্য বিষয়ে বলতে পারে না? বললে সেটা কীভাবে বলবে? এবং ধর্মীয় বিষয়ের সাথে সমকালীন ‘দুনিয়াবি’ বিষয়গুলোর সমন্বয় কীভাবে করবে?
Muhammad Alamin: আপনার কথা নির্দিষ্ট একটা বিভাগ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু তাখাসসুস বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে আপনার কথা এলাউ না। আপনি ইফতায় গিয়ে ‘ছাত্রদের ভাবা’ বিষয়টাকে অনুমাননির্ভর করে পেশ করেছেন।
কিন্তু খোদ হাটহাজারী থেকেই সমকালীন ফিকহ-ফতোয়া দেখা হলে, উলুমুল হাদিসে বাংলার নতুন কারনামাগুলোর সাথে পরিচিত হলে এই ধারণার অসারতা অনেকটাই বুঝতে পারতেন। হ্যাঁ, সব দারুল ইফতা এখনও আপনার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হবে না।
Mohammad Mozammel Hoque: আসলে মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানসিক দূরত্ব এখন অনেক বেশি। উনারা আমাদেরকে গোনে না। আমরাও উনাদেরকে পাত্তা দেই না। এটা ইনজেনারেল কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই গ্যাপটাকে কমিয়ে আনার পক্ষপাতি।
কথার কথা, উনারা মানতেক বা লজিক পড়ান। অথচ লজিক আমরা যা পড়াই সেগুলোর সাথে তোমাদের পড়ার মিল নাই। দুনিয়াতে তো দুই ধরনের লজিক আল্লাহতালা তৈরি করে নাই। দুনিয়া তো বাস্তবে এক ধরনের লজিক দিয়েই চলে। যদি তাই হয় তাহলে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা নিজেকে আপডেট করতে পারে নাই। এবং সেই কারণে শিক্ষার্থীদেরকে ভুলভাল পড়াচ্ছেন। কারা, সেটা এখানে আলোচনার সুযোগ নাই।
Shakil Mia: স্যার, পাশ্চাত্য দর্শনের যেহেতু নতুন কিছু আর নেই সেহেতু এখন আমারা পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসই শুধু পড়তে পারি। তাহলে কি পাশ্চাত্য দর্শনের গুরুত্ব কম?
Mohammad Mozammel Hoque: ম্যাটাথিউরি বলতে যা বোঝায়, সেটা নতুন হবে না। কিন্তু সেগুলোর নানা ধরনের ভেরিয়েশন হতে পারে। যেমন বাস্তববাদ এবং ভাববাদের পরে তৃতীয় একটা মতবাদ হবে না। কিন্তু সেগুলোর নানা ধরনের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ হতে পারে। গড ইস্যুতে নতুন কোনো তত্ত্ব আনা অসম্ভব। কিন্তু পুরনো কোনো তত্ত্বের পক্ষে নতুন ধরনের কোনো যুক্তি দেয়া যেতে পারে। যদিও সেগুলো পুরনো যুক্তিগুলোর কোনো না কোনো ক্যাটাগরিতে ব্রডলি ইনক্লুডেড হবে।
Eyasen Arafat: উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিগত এক বছর মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে অধ্যায়ন করছি। আমার মনে প্রথম দিন থেকেই এই জিনিসটা কাজ করেছে যা যা ভাবতাম সবকিছু আপনার ভাষায় প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। অনেকটা যন্ত্র মানবের মতো মাদ্রাসার ছাত্ররা। বাহিরের জগৎ সম্পর্কে এদের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। কিন্তু এই ছেলেগুলোকে যদি কাস্টমাইজ করে মুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে গুটিকয়েক শিক্ষার্থীই বিপ্লব এনে দিতে পারবে। বড় আফসোসের বিষয় এরা ঠিক মত ডিলও করতে পারে না পরস্পরের সাথে।