সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি, চাকরির মধ্যে বোধকরি সবচেয়ে ঢিলেঢালা চাকরি। কোনো প্রকারের বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও, কাছের লোকেরা জানে, ছুটি না থাকলে আমি সপ্তাহের পাঁচদিন সকাল সাড়ে আটটা-ন’টার মধ্যে কাপড়-চোপড়, সু পরে রেডি হয়ে যাই। যদিও আমার ক্লাসগুলো শুরু হয় সকাল ১০টা ৪০ মিনিট হতে। কাজে বের না হলে ভাল লাগে না। এটি কি পুরুষ হওয়ার কারণে? নাকি সৈনিক-পুত্র হওয়ার কারণে? জানি না।
নিয়মিত আল জাযিরা শোনা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আল শিফা হাসপাতাল রেইডের কাহিনী ইত্যাদি শোনার পরে ৩টা সায়েন্স ফিকশান মুভির কাহিনী সংক্ষেপ শুনলাম ইউটিউবে।
আচ্ছা, অন্য মেয়েরা কি আল জাযিরা এ’রকম নিয়ম করে শোনে? আমার ওয়াইফকে কখনো গাযার পরিস্থিতি ফলো করতে দেখি নাই। আমার মেয়েদেরকেও না। কোথায় কী হচ্ছে তা নিয়ে ওদের এত নির্বিকার হওয়ার কী কারণ? জানি না।
বলছিলাম সায়েন্স ফিকশান মুভি দেখার কথা। ফিলসফি অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামে একটা কোর্স আমি নেই বহু বছর হতে। সেই সূত্রে নিয়মিত সায়েন্স ফিকশান মুভি দেখা। নাকি, এ’ধরনের সিনেমা নিয়মিত দেখার কারণে ডিপার্টমেন্টে এই কোর্স চালু করা? জানি না।
যেমনটা বলছিলাম, ভূতের গল্প শুনে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ যেমন আশেপাশে ভূতের উপস্থিতি কল্পনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তেমন করে শিক্ষিত লোকদেরকেও দেখি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোকে নিকট-ভবিষ্যতের (অমোঘ) সত্য বলে মনে করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় টাইম ট্রাভেল কনসেপ্ট নির্ভর মুভিগুলোর কথা। গ্রান্ড ফাদার প্যারাডক্স নামক এক ভূয়া প্যরাডক্স এসব মুভির উদ্ভট সব অন্টলজিকেল বিভ্রান্তির অন্যতম প্রধান উৎস। কারো আগ্রহ থাকলে এসব নিয়ে ভিন্ন পরিসরে আলাপ হতে পারে।
সিনেমার সারসংক্ষেপ দেখে যথারীতি রেডি হয়ে ফয়সাল (সিএসসিএস-এর অধ্যয়ন সহকারী) মিয়াকে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম হরতাল কেমন হচ্ছে দেখার জন্য। গাড়ী নেই নাই। হেঁটেছি কয়েক কিলোমিটার।
তাবলীগ করার কারণে ফয়সাল ইজ আ গুড স্টরিটেলার। হাঁটতে হাঁটতে অনেক কথা বললো। প্রসঙ্গক্রমে বললো, “স্যার, ‘অমুক স্যার’কে দেখলাম কাটা পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে নয়টার পরে ব্যাগ নিয়ে ফেকাল্টির দিকে যাচ্ছেন।” অবাক হলাম।
আরে, ওই স্যার তো জেনারেল স্ট্রাইক আহ্বানকারী দ্বিতীয় প্রধান দলের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা। কেমনে কী …? ওই সংগঠন যেহেতু আমার প্রাক্তন, তাই স্টকিং না করাই ভালো মনে করে সোজা পশ্চিম দিকে হাঁটতে থাকলাম। হাঁটার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর একটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড়ের পৌনে এক কিলোমিটার ব্যাপী সোজা এই রাস্তা। গত ৪০ বছর ধরে এই রাস্তা দিয়ে আমি হাঁটছি।
কখন আমি রেডি হই, সায়েন্স ফিকশান মুভির গোষ্ঠী উদ্ধার, আন্দোলনকারী নেতাদের স্ববিরোধিতা কিংবা কাটা পাহাড় ধরে আমি কত বছর হাঁটছি আর এর সৌন্দর্য – এসব বলার জন্য এই লেখা নয়। আসল কাহিনী বলছি।
আর্টস লাউঞ্জে খাওয়ার মতো কিছু না পেয়ে ফয়সাল যেহেতু ছাত্রমানুষ, ওকে নিয়ে গেলাম কলার ঝুপড়িতে। কিছু একটা খাওয়ার অজুহাতে সামনের একটা দোকানের চালের নিচে একটা বেঞ্চে কিছুক্ষণ বসলাম।
স্টুডেন্টদের ফ্রি-স্টাইল জেশ্চার, মুভমেন্ট, এগুলো ‘এনজয়’ করলাম। ফ্যাকাল্টি তথা একাডেমিক এরিয়াতে তারা এত ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ হয়ে উঠে না। দেখলাম, ছেলেদের সাথে আড্ডায় একটা মেয়ে সিগারেট টানছে। খুব কেয়ারফুল অমনোযোগিতা নিয়ে। আর এত সিরিয়াস মুডে কথা বলছে, মনে হলো যেন সে ইউএস আর চায়নার প্রেসিডেন্টের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকটার ব্যাপারে কিছু একটা বলছে। হোয়াটেভার শি ওয়াজ সেইং, আই মিসড ইট।
মেয়েটাকে দেখে ভাবলাম, মেয়েরা সিগারেট খেলে অসুবিধা কী?
গ্রামীণ মহিলারা বিড়ি খেতো। আমি নিজে ছোট বেলায় দেখেছি। চট্টগ্রামের পীর সাহেব হুজুরদেরও কেউ কেউ বিড়ি-সিগারেট খেতেন। আমার মা পানের সাথে তামাক পাতা (চট্টগ্রামের ভাষায় সাদা পাতা) খেতেন। আমরা বাজার থেকে কিনে আনতাম।
হুক্কার আগায় গোশতের ছোট বড়ার মতো তামাক লাগিয়ে হুক্কা খাওয়াটা ছিল ব্যাপকভাবে প্রচলিত সামাজিক রীতি। পাহাড়িদের দোকানে কিছু খেলে বিনা পয়সায় আপনি হুক্কা টানতে পারবেন। শুনেছি, তুরস্কের মেয়েরা ছেলেদের মতোই সভা-সমাবেশ ও গণপরিসরে, এমনকি ক্লাসের করিডোরে অবলীলায় পরিত্যাগ করে দামী তামাকের ঘন ধোঁয়া।
ভাবলাম, এতে অসুবিধা কী?
এটাও ভাবলাম, বিড়ি, সিগারেট আর তামাক পাতা খেতে পারলে সিদ্ধি, গাঁজা আর মদ খেতে পারবে না কেন? কীভাবে আমরা ঠিক করবো, এইটা এতটুকু বা এদের জন্য জায়েয, নিরাপদ? ওইটা বা অতটুকু ওদের জন্য না-জায়েয, অনিরাপদ ও ক্ষতিকর?
হতে পারে কারো যে মাত্রায় যতটুকু ‘প্রতিক্রিয়া’ হয়, অন্যদের তার কয়েকগুণ বেশিতেও তেমন কিছু হয় না। তাহলে আইন করা হবে কীসের ভিত্তিতে? আদৌ আইনের ভিত্তি কী? আইনমাত্রই ব্যক্তিমানুষের জন্য এক ধরনের শাস্তি বা নিগ্রহ নয় কি? অপরিবর্তনীয় কোনো আইন কি আছে? যদি না থাকে তাহলে ইউএন ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার আইনগুলোর ভিত্তি কী?
জানি, কেউ যখন কোনো ধর্ম বা আদর্শ বা বিশেষ বিশ্বাসব্যবস্থা বা কোনো সমাজ/রাষ্ট্রে আস্থা রাখবেন, সেইটাকে মেনে চলার প্রতিজ্ঞা করবেন, তখন তার জন্য সেইটার সবকিছু মেনে চলা অপরিহার্য।
এই বিশেষ অপরিহার্যতার বাইরে, বিশেষ করে জেন্ডার স্পেসিফিক পয়েন্ট অব ভিউ থেকে, কেউ কি বলতে পারবেন, মেয়েরা সিগারেট খেলে সমস্যা কী? আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে,
ছেলেরা সিগারেট খেতে পারলে মেয়েরা কেন পারবে না?
কোনো বিষয়ে ফেয়ার ডিবেট আর ফ্রি ডিসকাসশানের রীতি আমাদের সমাজে নাই। ডানপন্থীরা ক্রিটিকাল থিংকিং কী, সেইটা মোটেরওপরে জানেই না। বামপন্থীদের প্রগতিশীলতা তাদের মতাদর্শগত ঘেরাটোপের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। বাইরে আসতে পারে না। তাদের দৃষ্টিতে যারা নন-লিবারেল তাদের প্রতি তারা চরমমাত্রায় এগ্রেসিভ। ইনটলারেন্ট।
আইরনি হলো, লিবারেলরা জোর করে সবাইকে লিবারেল বানাতে চায়।
সে যাই হোক, মেয়েটাকে সিগারেট খেতে দেখে ভাবলাম আজকে এ’বিষয়ে একটা ‘সাহসী’ পোস্ট দিবো।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সিগারেট খাওয়াকে মাদকগ্রহণতুল্য বলে মনে করি। তাই ধুমপানকে যারা হারাম বলেন আমি তাদের মতকে সঠিক বলে মনে করি। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বা অন্য কোনো স্পেসিফিকেশন অপ্রাসঙ্গিক।
তৎকালীন সামাজিক সংস্কৃতির ঘোরে তরুণ বয়সে ধুমপান করার কারণে খুব সম্ভবত, আমার বাবা সারা জীবন ব্রংকাইটিস তথা ফুসফুসের রোগে ভুগেছেন। পানের সাথে ‘সাদা পাতা’ খাওয়ার অভ্যাসের কারণে আমার মা ফুসফুসের ক্যান্সারে কষ্ট পেয়েছেন।
সেসব কথা থাক।
মানুষ যা কিছু করে তা সুনির্দিষ্ট কারণেই করে। মনের সচেতন স্তরে অবগত না থাকলেও কারণটি সক্রিয় থাকে তার অবচেতনে। লেট আস আনফোল্ড অ্যান্ড ডিগ দ্যাট ইন কেইস অব স্মোকিং হেবিট।
এবার বলেন, মেয়েরা সিগারেট কেন খাবে? অথবা, খেলে সমস্যা কী?
আমি আপনার কথা শুনতে আগ্রহী।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Saeed Ahsan Khalid: সিগারেটে তামাক একটি উপাদান। কিন্তু তামাক মাত্রই সিগারেট নয়। দুটোর পার্থক্য আছে এবং এই পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ।
হুক্কা, জর্দা, বিড়ি, সাদা পাতা, গুল- প্রভৃতিতে তামাক থাকলেও এগুলো সোশ্যাল ক্লাস রিপ্রেজেন্ট করে না এবং জেন্ডার- নিউট্রাল। আপনি নিজেই উল্লেখ করেছেন গ্রামাঞ্চলে নারী-পুরুষ এবং পারিবারিক সম্পর্ক নির্বিশেষে সকলে তামাক খায় এবং বেশিরভাগ সময় একই আসরে ভাগাভাগি করে খায় এবং এটিকে সামাজিক সৌজন্য গণ্য করে।
কিন্তু তামাক-সমৃদ্ধ হলেও সিগারেট সোশ্যাল ক্লাস প্রকাশ করে। যেমন, অগ্রজের সামনে অনুজ, ক্ষমতাবানের সামনে ক্ষমতাহীনের সিগারেট খাওয়া সামাজিক নিষেধের আওতায় পড়ে, এটিকে বেয়াদবি এবং ঔদ্ধত্য হিসেবেও দেখা হয়। অনেক সময় ঊর্ধ্বতনের সম্মুখে সিগারেট খাওয়ার জন্য অধস্তনকে শাস্তির সম্মুখীনও হওয়া লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তো এই নিয়ে নিপীড়নের চর্চাও হয়।
সিগারেটের এই সোশ্যাল ও পাওয়ার ডাইমেনশন মূলত ব্রিটিশ কলোনিয়াল লিগ্যাসি। কারণ- এদেশে যদিও তামাক বহু আগে থেকেই বর্তমান কিন্তু সিগারেট ঢুকেছে ব্রিটিশদের হাত ধরে, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো এর পথিকৃৎ। তখন শুধু সাদা চামড়ার ব্রিটিশ প্রভুরাই সিগারেট খাওয়ার অধিকার রাখতো এবং এটি আভিজাত্য ও সুপিরিয়রিটির প্রতীক ছিলো।
অর্থাৎ, সিগারেটে সবার সমান প্রবেশাধিকার ছিল না। কালক্রমে সিগারেটের ব্যবহার সর্বজনীন হলেও এর সাথে যুক্ত ক্লাস ও ক্ষমতাকাঠামো আরো বহু কলোনিয়াল লিগ্যাসির মতো এখনো রয়ে গেছে।
সিগারেটের জেন্ডার রোলও আছে। এটি ম্যাসকুলিনিটির প্রকাশ ঘটায়। অর্থাৎ, সিগারেট ফুঁকাকে নায়কোচিত, পুরুষত্ব ও সাহসের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হয়, নাটক-সিনেমা এটির বড় কারণ হতে পারে। ফলে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সিগারেট ফুঁকাকে খারাপ চোখে দেখা হয় এই কারণে যে এর মাধ্যমে সমাজ গৃহীত নারীর কনভেনশনাল কমনীয়-নমনীয় জেন্ডার রোল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। পুরুষ সমাজের কাছে সেটি কাঙ্ক্ষিত নয়। আবার অনেক নারী যারা ফেমিনিজমকে “পুরুষের সমকক্ষ” হওয়া অর্থে বুঝে, তারা এই প্র্যাকটিসের মাধ্যমে নিজেকে ক্ষমতায়িত দেখতে প্রয়াস পায়।
তাই, তামাক-কে মানুষ যেভাবে ট্রিট করে, সিগারেট কে সেভাবে ট্রিট করে না।
Afsar Uddin: সুন্দর একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন স্যার। বেশ কয়েক বছর ধরে নারী বা মেয়ে ধূমপায়ীদের সংখ্যা বহু গুণে বেড়েছে। কিন্তু কেন? জানি না। হতে পারে মেয়েরা নিজেদের স্মার্ট দেখানোর জন্য একাজ করছে।
তবে ধূমপান কারও জন্যই উপকারী নয়। আমার কাছে আঁতেল মনে হয় শিক্ষিত লোকজন যারা ধূমপায়ী। শিক্ষা গ্রহণ করে যদি নিজের ভালো না-ই বুঝলাম তাহলে এ কেমন শিক্ষা।
Abu Bokor Siddique Raju: ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই বিষয়ে একটা লম্বা স্ট্যাটাস লেখেছিলাম। মন্তব্য হিসেবে প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে এখনে। সেটা কপি করে দিচ্ছি:
“নিজের বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আমি বরাবরই স্বচ্ছন্দ ছিলাম। আমার এমন বন্ধু আছে যার ডিপার্টমেন্টের বাকিরা বহুদিন পর্যন্ত জানতো যে আমিও সেই ডিপার্টমেন্টের। অথচ আমি সেই ইউনিভার্সিটিরই না।
জগন্নাথ ইউনির ক্যাম্পাস ছাড়ার পর বেশ লম্বা সময়ের জন্য গ্যাপ। এরপরে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক এক্টিভিটিতে এমন হয় নাই যে উইকডেতে কোনো মিটিং, সেমিনার বাদ দিলে একটা গোটা দিন লম্বা সময়ের জন্য ক্যাম্পাসে আমজনতার মাঝে দিন কাটাইছি। আজকে কাটাইলাম। ঢাবির বিজনেস ফ্যাকাল্টি কম্পাউন্ডে বণিক বার্তা আয়োজিত ৬ষ্ঠ নন-ফিকশন বই মেলাতে। লাঞ্চের পর থেকে টানা রাত ৮টা পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বা এর আশেপাশে থাকার সুবিধা হইলো বেশ লাইভলি একটা এনভায়রনমেন্ট বিরাজ করে। ১৮-২৫ বছরের একদল এনার্জেটিক পোলাপানের মাঝে থাকার ফলে কিছু এনার্জি জোয়ান-বৃদ্ধ নির্বিশেষে নিজের ভাগেও আসে মনে হয়।
আমি একটু ওল্ড স্কুল আছি। এবং সেইজন্য আমি মোটেই দুঃখিত নই। তাই হয়তো কিছু জিনিস চোখে লাগলো। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে স্মোকিং। এটা বেশ কমন দেখলাম। আগে ক্যাম্পাসে এই চর্চাটা চারুকলা, ছবির হাট এবং টিএসসি কেন্দ্রিক ছিল। এখন ঢাবি ক্যাম্পাসে সর্বত্র বেশ কমন। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে অবশ্য এইটা ডাল ভাত।
নারীবাদী আপ্পিরা মাইন্ড খাইয়েন না পিলিজ। যে কেউ নিজের পয়সায় বিড়ি সিগারেট কিনে খাইতে পারেন। তাতে আমার কোনো কিছু বলার নাই। সিগারেটের অর্থনৈতিক বা স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদে আর কোনো অপকারিতা নিয়াও আমার কোনো ইস্যু নাই। সিগারেট লুকায়া বড়দের সম্মান করার দলেও আমি নাই। দেশের আইনে নিষেধ নাই, আমি কে কথা বলার। সরকার ট্যাক্স পায়, দেশের ইকোনোমি তরতর করে এগোয়।
তবে যেহেতু আমি আমার মা, খালা, ফুফু, বোন, নারী কাজিন এদের কাউকেই প্রকাশ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিড়ি টানতে দেখি নাই (গোপনেও দেখি নাই), তাই আমার ওল্ড স্কুল চোখ একটু ইতস্তত বোধ করে। আমি নিজে একটু সংশয়ে পড়ে যাই, আমি কি এক্কেবারে ব্যাকডেটেড?
সমস্যাটা আপনাদের নাকি আমার চোখের? সেই তক্কে আর না যাই। আপনারা নিশ্চিন্তে বিড়ি টানেন। পরিবর্তন অনিবার্য। তবে আমার ওল্ড স্কুল চোখ একটু খচখচ করে। এই আর কি।
তবে কেন জানি মনে হইলো টিনেজের শুরুর দিকে পোলারা ধূম্রশলাকায় টান দিয়া যেমন স্মার্ট হওয়ার ভঙ্গি লইতো, নিজেরে বড় মনে করার ব্যাপারটা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ফুইটা উঠতো, এইখানেও ঘটনা একই। ছোট করে ঘাইটা দেখলাম বেনসন সুইচ নামের একটা গন্ধহীন ফ্লেভারের দামি বিড়িও রিলিজ করছে কোনো এক বড় কর্পোরেট। মানে এই বিড়ি খাইলে গন্ধ টের পাওয়া যাবে না। সোশ্যাল এক্সেপ্টেন্সের ব্যাপারটা এই ঘাঘু কর্পোরেটরা ভালো করেই জানে। এবং সামনে এইটা নরমালাইজেশনের জন্য আরও এক্টিভিটি হবে। বাকি কোম্পানিরাও মনে হয় আলাদা আলাদা টিজি ঠিক করে মার্কেটে প্রবলভাবেই আছে বা আসতেছে। হুম, ব্যাপারটা ক্লিয়ার হইতেছে আমার কাছে। সেইম ওল্ড বিজনেস স্ট্রাটেজি। এইটা য়ুরোপ, আম্রিকায় বহু দশক আগে হইয়া গেছে। বিড়ি খাইলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ফিগার স্লিম হয় এইসব দাবি বেশিদিন আগের না। মাত্র গত শতকের মাঝামাঝির।
তবে ৯০ এর দশকে বা আরও আগে কন্সট্রাকশন এর কাজে ইটের খোয়া ভাঙ্গার কাজ করা মহিলাদের যারা দেখছে তারা জানে, সেই নারী শ্রমিকদের চোস্ত হাতে ধরানো বিড়ি, অতি অভ্যস্ত ধোঁয়া ছাড়ার দৃশ্যের কাছে আপনারা নিতান্তই এমেচার। এক্কেবারে শিশু।”
Rihad Islam: প্রথমত যা ক্ষতিকর তা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের পরিহার করা উচিত।
সিগারেট শুধুমাত্র বিভিন্ন ব্যাধির জন্য দায়ী না। এটার চর্চা প্রজাতির বিলুপ্তির জন্য দায়ী হতে পারে। কিছু গবেষণা বলছে গত পঞ্চাশ বছরে পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। অন্যান্য কারণের সাথে গবেষকরা এর জন্য সিগারেট খাওয়াকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ যেখানে প্রতিটি প্রজাতির মূল লক্ষ্য সুস্থ্ প্রজন্ম রেখে যাওয়া সেখানে ধূমপান সেই প্রধান লক্ষ্যটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। তাই এটাকে স্বাভাবিকীকরণ করার প্রয়াসকেও একটি ব্যাধি হিসেবে অভিহিত করতে হয়। যদিও এটা নারী-পুরুষ উভয়কেই পরিহার করা উচিত কিন্তু মেয়েদের একটু বেশিই। কারণ:
প্রজননে নারীর ভূমিকা সবথেকে বেশি। এক্ষেত্রে পুরুষ শুধু শুক্রাণু সরবরাহ করে। কিন্তু, নারী শুধু ডিম্বাণু সরবরাহ করেনা। তাকে ভ্রূণ ধারণ করতে হয়। সন্তানের প্রাথমিক খাদ্যের যোগানও সে দেয়। তাই নারীকে তার দৈহিক সুরক্ষার ব্যাপারে পুরুষের থেকে বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। কেননা নারীর ক্ষতির সাথে পুরো একটা প্রজন্মের ক্ষতি বিশেষভাবে জড়িত।
Muhammad Shahidul Islam: প্রথমত যারা ইসলামে বিশ্বাস রাখে তারা ইসলামের বিধান মেনে চলবে। মাদক ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম তাই মেয়ে-ছেলে কেউই এটা গ্রহণ করবে না। আর সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন ধূমপান মানেই শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি তাই এটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
Abdullahil Kafi: আপনার সাহসী পোষ্ট দেখে আমিও সাহস করে কমেন্ট করে দিলাম! ছেলে বা মেয়ে যার যা খেতে ইচ্ছে করে সে তাই খাবে এতে আমার সমস্যা হওয়ার কোন কারণ দেখি না। এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। আর ধর্মের নামে কোনকিছুকে টেনেহেঁচরে হারাম বানানোর দুঃসাহস আমি করি না। চা, পান, সিগারেট, হুক্কা এগুলো জমিয়ে আড্ডা দেয়ার জন্য ভাল উপাদায়ক। মদও ভাল কার্যকরী উপাদায়ক। সে কারণে অসুমলিম সমাজে যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথীদেরকে মদ পরিবেশন করা হয় যাতে মনখুলে আড্ডা হয়। ইসলাম ধর্মে মদ হারাম তাই মুসলিম সমাজে কোন অনুষ্ঠানে মদ পরিবেশন করা হয় না। সুতরাং মদ ব্যতিত চা,পান, হুক্কা, সিগারেট দিয়ে হালকা আপ্যায়ন করলে আড্ডাটা ভাল বৈকি খারাপ হয় না। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়, হোক না সেটা হালাল। আমার এই কমেন্টের সাথে কিঞ্চিৎ স্ববিরোধীতা থাকলেও থাকতে পারে।
উম্মুল আখয়ার: স্যার, ভালো টপিক। মানুষ কেন খাবে তার কারণ জানি না। কেন খাবে না হিসেবে বলতে পারি, স্রোতে গা ভাসানোর প্রয়োজন নেই। সিগারেট খাওয়ার মধ্যে কোনো স্মার্টনেস খুঁজে পাই না। পয়সা নষ্ট, স্বাস্থ্য নষ্ট, পরিবেশ নষ্ট। আফটারঅল, কখনো মনেও হয়নি যে, সিগারেট/এনি কাইন্ড অফ নেশাজাতীয় কিছুর প্রয়োজনীয়তা আছে ভালো লাইফ লিড করতে। নেশা করতে চাইলে সেবন/পানযোগ্য দ্রব্যের বাইরে অনেক নেশা করা যায়। যেমন-সাইকেল চালানো, পর্বত আরোহণ ইত্যাদি।
সাদিয়া তাজ ঐশী: ছেলে-মেয়ে কারোরই ধুমপান করা ঠিক নয়। স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দেখলেও শ্বাসতন্ত্র আর প্রজননতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় উভয়েরই। কিন্তু ‘সিগারেট খাওয়া’র দুইটি বিশেষ দিক আছে: ১. যা অপ্রয়োজনীয় আর ক্ষতিকর তাকে তুড়ি মেরে গ্রহণ করে প্রাইড বা অহমিকা নেওয়ার প্রবণতা, ২. সিগারেট বা অন্যান্য মাদকদ্রব্যকে রোমান্টিসাইজ করা!
মেয়েদের সিগারেট খাওয়া শুরুই হয়েছিলো, “পুরুষ পারলে তুমিও পারবে” এই স্লোগান দিয়ে। আবার সামাজিকভাবে এই কিছুটা দমিয়ে রাখার জন্যই মেয়েদেরকে আড় চোখে দেখা হয় সিগারেট খেলে।
তো, আসলে ব্যাপারটা এমন যদি ধর্মীয়/স্বাস্থ্যগত কারণ বাদ দেওয়া হয় তাহলে শুধুমাত্র সামাজিক কারণে মেয়েরা ক্যানো খাবে না? তখন তাদের সিগারেট খাওয়াতে কোনো সমস্যা দেখি নাহ!
একজন শিশু যখন দেখবে একটা খারাপ জিনিস যার তেমন ভালো কোনো দিক নেই, শুধু বাবা, চাচা সবাই খাচ্ছে, কিন্তু মেয়েরা খাচ্ছে না, জেন্ডার বেসিসে একটা খাবার ইয়েস অর নো হয়ে যাচ্ছে তাহলে একটা জিনিসের ভালো-মন্দের রেক্টিফাই কীভাবে করবে সে? উল্টো কনফিউজড হয়ে পড়বে সে!
Moonshat Nobin: মেয়েরা সিগারেট খাবে কারণ বাজারকে প্রসারিত করতে হবে। সিগারেট খাবে, গাঁজা খাবে, তাতে বাজার প্রসারিত হবে, বাজার প্রসারিত হলে অর্থনীতি সচল থাকবে। সিগারেট খাবে, গাঁজা খাবে, আরো নেশা করবে, অসুস্থ হবে, তারপর ডাক্তারের কাছে যাবে, ডাক্তার ওষুধ দিবে, রোগী ওষুধ খাবে, বিশাল বড় বাজার। নেশার কারণে সংসারে অশান্তি আসবে, ডিভোর্স হবে, উকিল-মোক্তার ধরা হবে, তখন আরো বড় বাজার তৈরি হবে।
পুঁজিবাদে যেহেতু নৈতিকতার স্থান নেই তাই আমাদের মতো জনবহুল দেশে বাজার তৈরি করতে পারলেই আমাদের জন্য ভালো, কোন পন্থায় হয় সেটা মূখ্য বিষয় না। নৈতিকতা কোথায় গিয়ে ঠেকে যায় যাক…
আমাদের ছেলে-মেয়েরা সিগারেটসহ সব ধরনের মাদক নিয়ে আমাদের মতো জনবহুল দেশের জন্য অনেক বড় বাজার তৈরিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে যা পুঁজিবাদীদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে। তাই ছেলেমেয়েরা যাতে আরো খুব ইজিলি এই বাজারকে গতিশীল রাখতে পারে তার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা তারা করে যাচ্ছে, ছেলেমেয়ারাও সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে….
Akib Jabed: ছেলেপেলেরা সিগারেট মূলত খায় নিজের ম্যাস্কুলিনিটি জাহির করতে৷ সিগারেট, গাঁজা যেকোনো টাইপের নেশার মধ্যে একটা মর্দাংগী ব্যাপার আছে। যেটা টিনেজ বয়সে নিজের মর্দাংগী নিয়ে ইন্সিকিউর ছেলেরা শুরু করে কিন্ত পরবর্তীতে একটা লুপ কিংবা সাইকেলে আটকে যায়। ফলে বের হতে পারে না৷ সোসাইটির নিম্ন শ্রেণির নারীরা বিড়ি টানার ব্যাপারটা মোটেই মর্দাংগী না বরং বদভ্যাস যেটা অনেকটা পান খাওয়ার মতই৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের সিগারেট খাওয়া ব্যাপারটা অনেকটা পুরুষদের সমান হইতে চাওয়ার মতই।
আমরা সোসাইটিতে প্রকাশ্যে যা করি কিংবা বলি তার মধ্যে একটা মেসেজ দেয়ার প্রবণতা থাকে৷ মিডল ক্লাস ভার্সিটি পড়ুয়া নারীটি প্রকাশ্যে সিগারেট টেনে তার ‘আইডেন্টিটি’, ‘আইডোলজির’ একটা সিগনেচার রেখে যেতে চায়৷ এই জন্য আপনি নিম্ন পেশাজীবি নারী বিড়ি খোরকে নারীবাদি হিসেবে দেখবেন না কিন্ত ঠিকই একটা জিন্স-ফতুয়া পড়া সিগারেট খাওয়া নারীটিকে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে নারীবাদী হিসেবে খুঁজে পাবেন৷ যেহেতু সোসাইটি পিতৃতান্ত্রিক তাই নারীর এই ধরনের ফেইক এম্পাওয়ারমেন্টকে বিরক্ত হিসেবে দেখে, যেমন চ্যাংড়া কোনো টিনেজার বড় ভাইদের সামনে বিড়ি খেলে তাকে বেয়াদব বলে, ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই মনে হয়।
One Comment