[সৈয়দ আল জাবের আহমেদ লিখিত ‘অভিনয় প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামের লেখাটি ফেইসবুকে শেয়ার করার সময় ফরোয়ার্ডিং হিসেবে এই কথাগুলো বলেছি।]
লেখাটা দীর্ঘ, তথ্যবহুল ও এপলজেটিক। এবং সে অর্থে অপূর্ণ। অবশ্য, বিষয় বিবেচনায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিনোদন সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে আলেমদের মধ্যে অদ্ভূত সব ভাবনাচিন্তা কাজ করে। তত্ত্বকথার নিরাপদ আশ্রয়ের বাইরে এসে যারা তেমন একটা কিছু করতে উদ্যোগী হয়েছেন তারা নিশ্চয় পিকিউলিয়ার সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
শ্রদ্ধেয় ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের একটা প্রশ্নোত্তর নিজে শুনেছি। ভেরি ফানি। প্রশ্নকর্তা জানতে চেয়েছেন, তিনি হজের মধ্যে আছেন। দেখছেন, অনেকেই ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। তিনি করতে পারবেন কিনা? আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব উত্তর দিয়েছেন, আপনি ছবি তুলতে পারবেন না, কিন্তু ভিডিও করতে পারবেন। যেহেতু, ভিডিও ছবি নয়…!
‘শিক্ষাব্যবস্থা: ইসলামী দৃষ্টিকোণ’ বইয়ে আর ‘রাসায়েল ও মাসায়েলে’ সংকলিত একটা প্রশ্নোত্তরে দেখা যায়, মাওলানা মওদূদী বলছেন, অভিনয় নাজায়েয। উনার মতে, অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকৃতি ঘটে। কতটা হাস্যকর কথা…!
কিছুদিন আগে একটা লেখা প্রকাশ করেছিলাম যাতে বলেছি, চাই টেক্সট ও কনটেক্সটের সম্মিলন। সেখানে তা সমকালীন অর্থব্যবস্থা প্রসংগে বলেছিলাম। বিনোদন সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এটি সমভাবে প্রযোজ্য। আজকের দিনে আগামীর জন্য যারা কাজ করবেন তাদেরকে দুনিয়ার পরিবর্তিত বাস্তবতাকে বুঝতে হবে, মানতে হবে এবং ইতিবাচকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাহস, সততা ও যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে।
যারা শর্টকাট লেখা পড়তে অভ্যস্ত, যারা চট করে জায়েয নাজায়েযের ফয়সালা দেখে ফেলতে চান, যারা প্রতিক্রিয়াশীল, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যাদের প্রধান অজুহাত, এই লেখা তাদের জন্য নয়।
পরিশেষে, এত সুন্দর একটা রচনার জন্য সৈয়দ আল জাবের আহমেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। চাপে পড়ে তিনি আবার মুছে দেন কিনা, এই শংকায় লেখাটা কপি করে শেয়ার করলাম।
“অভিনয় প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি – সৈয়দ আল জাবের আহমেদ
অভিনয় অভিনব কিছু নয়। সহজাত কারণে দুনিয়ার সকল মানুষই কিছু না কিছু অভিনয় করে। বয়সের দিক থেকে বড় মানুষেরা যখন কোন শিশুর সাথে কথা বলে, যে শিশু তখনও কথা বলতে পারে না অথবা ছোট ছোট কথা বলতে শিখেছে তার সাথে তারা যখন কথা বলে তখন বিশেষ ভঙ্গিতে ও স্বরে কথা বলে, যাকে বলে ভান ও কৃত্রিম ভাবপ্রকাশ করে কথা বলা। এভাবে শিশুদের সাথে কথা বলেনি এমন মানুষ এই ঐহিক জগতে পাওয়া যাবে না। এই যে ভান ও কৃত্রিম ভাবপ্রকাশ করে বিশেষ ভঙ্গিতে কথা বলা যা শিশুর আনন্দের জন্য করা হয় এবং ঐ ব্যক্তিও আনন্দ পায় একেই বলে অভিনয়। অভিনয়কে অনুকরণও বলা হয়। এ অনুকরণ সাধারণ অনুকরণ নয়। অুনকরণের সাথে যুক্ত হয় নান্দনিকতা। অভিনয় প্রকৃতপক্ষে একটি শিল্প। অভিনয় বিনোদনের একটি মাধ্যম। অভিনয় শুধু বিনোদনেরই মাধ্যম নয় শিক্ষারও শিল্পিত উপকরণ। অভিনয়েরও কিছু মাধ্যম আছে যেমন মঞ্চ বা থিয়েটার, ভিডিওগ্রাফির সাহায্যে অভিনীত টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রসহ আরও কিছু মাধ্যম বা উপকরণ। টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র তৈরির সাথে প্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবন্ত ছবি ধারণ করা হয় ক্যামেরার মাধ্যমে। এই ছবি কি ইসলামে নিষিদ্ধ ছবির আওতাভুক্ত? না, এই ভিডিও ছবি নিষিদ্ধ নয় বরং এটি সিদ্ধ। এর হুকুম আয়নায় ও পানিতে প্রতিবিম্বিত ছবির ন্যায়। আর এই ছবি যে বৈধ তা সর্বজনবিদিত।
এ বিষয়ে ইসলামী মনীষীদের মতামত দেখা যেতে পারে দলিল হিসেবে। ভিডিও প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশ শতকের নন্দিত ও বরেণ্য মুজতাহিদ আলেম মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “ ইসলামী শরী’য়াতের দৃষ্টিতে এতে অন্যায় কিছু থাকে না। এতেও হয়ত প্রাণীর ছবি ভেসে ওঠবে; কিন্তু তা দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিবিম্বের মতই ক্ষণস্থায়ী। আর দর্পণে প্রতিফলিত ছবি যে নিষিদ্ধ নয় তা সকলেরই জানা কথা। তা সেই ছবি নয়, যা শরী’য়াতে নিষিদ্ধ।“ (শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা-২৮৯, খায়রুন প্রকাশনী-২০০৬, ঢাকা)।
সমকালীন বাঙালি সালাফি বিজ্ঞ আলেম, লেখক ও দা’য়ী শাইখ আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানি হাফিজাহুল্লাহ বলেন, “ভিডিওর ছবি গুপ্ত থাকে, সময়ে দেখা যায়। সুতরাং তা আয়না ও পানির উপরে প্রকাশিত ছবির মতো। তা নিষেধের পর্যায়ভুক্ত নয়।” (দ্বীনী প্রশ্নোত্তর, পৃষ্ঠা-২৬৫, তাওহীদ পাবলিকেশন-২০১২, ঢাকা)
বিশ শতকের বিশ্ব বরেণ্য মুজতাহিদ আলেম ইমাম আল উস্তায মওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “সিনেমা আসলে কোন না জায়েজ বস্তু নয়। তবে তার নাজায়েজ ব্যবহার তাকে নাজায়েজ করে দেয়। সিনেমার পর্দায় যে ছবি দেখা যায় তা আসলে ছবি নয় বরং পরছায়া, যেমন আয়নার মধ্যে পরছায়া দেখা যায়। কাজেই তা হারাম নয়।” (রাসায়েল মাসায়েল ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৪, শতাব্দী প্রকাশনী, ঢাকা)।
এবার অভিনয় প্রসঙ্গ। চারটি বিষয় যুক্ত হয়ে অভিনয় হয়। বিষয় চারটি হলো আঙ্গিক, বাচিক, সাত্তিক ও আহার্য অর্থাৎ মানুষের দেহ বা শরীর, কণ্ঠ, মন বা আবেগ এবং পোষাক ও অন্যান্য উপকরণ। এ সকল একত্রিত হয়ে কোন একটি বিষয়ে চরিত্র ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে যা কিছু প্রদর্শন ও চিত্রিত করা হয় তার সামষ্টিক নাম হলো অভিনয়। আপনি যা করতে চান বা যা দেখাতে ও বুঝাতে চান তা-ই অভিনয়ের মাধ্যমে করতে পারেন। তাহলে বুঝা গেল অভিনয়ের সামগ্রিক দিকটাই হলো একটি মাধ্যম বা উপকরণ। এই মাধ্যমটি মৌলিক ভাবে সক্রিয় বা বস্তগত কিছু নয়। বরং বিনোদিত হওয়া ও ইতিবাচক শিক্ষা ও তথ্য প্রদানের একটি উপকরণ। শুধু বিনোদিত হওয়া নয়, বরং আপনি যা করতে চান, যে তথ্য ও চিন্তা জানাতে ও দেখাতে চান তাই পারবেন। আমরা যদি অভিনয়ের মাধ্যমে করা বিষয়ের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যারা এর সাথে যুক্ত তারা এর মাধ্যমে তাদের চিন্তা, বিশ্বাস, আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা ও বিকাশ করছেন। তার মানে এর অর্থ দাঁড়ালো অভিনয় মূলগতভাবে একটি বৈধ বিষয়। এটির ব্যবহার ও বিষয় বস্তুর উপর নির্ভর করে জায়েজ ও না জায়েজ হওয়া।
ইসলামী শরিয়াতের একটি উসূল বা নীতি হলো “সবকিছু বৈধ বা হালাল যতক্ষণ না হারামের দলিল পাওয়া যায়” (ইসলামী ফিকহের পটভূমি ও বিন্যাস, পৃষ্ঠা- ২২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-২০০৪, ঢাকা ও ড. ইউসুফ আল কারদাবি, ইসলামের হালাল ও হারামের বিধান, পৃষ্ঠা-২৮, খায়রুন প্রকাশনী-২০১৩, ঢাকা)। সুতরাং অভিনয় হারাম এমন কোন কথা কুরআন ও হাদিসে উল্লেখ নেই। কুরআনের সূরা বাকারার ২৯নং আয়াতে বলা হয়েছে “তিনিই পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।”
অভিনয়ের কয়েকটি দৃষ্টান্ত কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সূরা মায়িদাহ’র ২৭-৩১নং আয়াতে আদম (আ:) এর দুই সন্তানের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। আদম (আ:) এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল নামে পরিচিত। ঘটনাক্রমে কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে ফেলে। কিন্তু কাবিল ঠিক জানেনা কীভাবে মৃতদেহের সৎকার করতে হয়। তখন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা একটি কাক দিয়ে শবদেহের সৎকারের অভিনয় করিয়ে কাবিলকে দেখান ও শিক্ষা দেন কীভাবে সৎকার করতে হয়। সূরা মায়িদাহ’র ৩১নং আয়াতে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে“অতঃপর আল্লাহ এক কাক পাঠালেন, যে তার ভাইয়ের শবদেহ কীভাবে গোপন করা যায়, তা দেখাবার উদ্দেশ্যে মাটি খনন করতে লাগলো। সে বললো, হায় ! আমি কি এ কাকের মতোও হতে পারলাম না, যাতে আমার ভাইয়ের শবদেহ গোপন করতে পারি? অতঃপর সে অনুতপ্ত হলো।” এখানে চমৎকার ভাবে কাকের অভিনয়ের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা কাবিলকে শিক্ষা দিলেন। সুতরাং ইসলামের শিক্ষা প্রচার-প্রসারের জন্য, মানুষের জন্য কল্যাণমূলক কাজ ও হালাল বিনোদনের জন্য অভিনয়ের কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কুরআনে আরও দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমরা আরও একটি উদাহরণ নিতে পারি। যেমন কুরআনে মারইয়াম (আ:) এর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মারইয়াম (আ:) এর ঘটনায় সূরা মারইয়ামের ১৭নং আয়াতে বলা হয়েছে “অতঃপর তাদের হতে সে নিজেকে পর্দা করলো, আমি তাঁর নিকট আমার রুহকে (জিব্রাইল) পাঠালাম, সে তাঁর নিকট পূর্ণ মানুষ আকারে আত্মপ্রকাশ করলো।” এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম নিজের আকৃতি ও কায়া বদল করে মানুষ বেশে হাজির হয়েছেন। এটাই অভিনয়। অন্যদিকে এ আয়াতে ফাতামাস্সাল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই ফাতামাস্সাল শব্দ থেকে আরবি তামসিল শব্দ যার অর্থ হলো ‘অভিনয়’। আমরা এখান থেকে স্পষ্ট দেখতে পাই অভিনয়ের পক্ষে কুরআনের বয়ান।
আমরা আরও একটি দৃষ্টান্ত গ্রহণ করতে পারি কুরআন থেকে। কুরআনে ইউসুফ (আ:) এর জীবন কাহিনী দারুণভাবে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। ইউসুফ (আ:) এর ভাই বিনয়ামিনকে চোর বানানোর ঘটনা পরিকল্পিত ভাবে ঘটনো হয়েছে। চুরি ও চোর বানানোর ঘটনাটি একটি কৌশল ছিল, এই কৌশলটাই অভিনয়। কুরআনে ঘটনাটি এভাবে এসেছে “অতঃপর যখন ইউসুফ তাদের রসদপত্র প্রস্তুত করে দিল, তখন পানপাত্র আপন ভাইয়ের রসদের মধ্যে রেখে দিল। অতঃপর একজন ঘোষক ডেকে বললো, হে কাফেলার লোকজন, তোমরা অবশ্যই চোর। তারা ওদের দিকে মুখ করে বললো, তোমাদের কি হারিয়েছে? তারা বললো, আমরা বাদশাহর পানপাত্র হারিয়েছি এবং যে কেউ এটা এনে দেবে সে এক উটের বোঝা পরিমাণ মাল পাবে এবং আমি এর জামিন। তারা বললো, আল্লাহর কসম, তোমরা তো জান, আমরা অনর্থ ঘটাতে এদেশে আসিনি এবং আমরা কখনও চোর ছিলাম না। তারা বললো, যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও, তবে যে, চুরি করেছে তার কি শাস্তি? তারা বললো, এর শাস্তি এই যে, যার রসদপত্র থেকে তা পাওয়া যাবে, এর প্রতিদানে সে দাসত্বে যাবে। আমরা জালেমদেরকে এভাবেই শাস্তি দেই। অতঃপর ইউসুফ আপন ভাইয়ের থলের পূর্বে তাদের থলে তল্লাশি শুরু করলেন। অবশেষে সেই পাত্র আপন ভাইয়ের থলের মধ্য থেকে বের করলেন। এমনিভাবে আমি ইউসুফকে কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম। আল্লাহ ইচ্ছা না করলে, সে বাদশাহর আইনে তাঁর ভাইকে আটক (দাসত্বে ) করতে পারতো না। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে অধিকতর জ্ঞানী।”(সূরা ইউসুফ, আয়াত-৭০-৭৬)।
সুতরাং উপর্যুক্ত কুরআনের ঘটনা সম্বলিত আয়াতের আলোকে আমরা বলতে পারি ইসলামে অভিনয় বৈধ। আমরা ইসলামের দাওয়াহ কার্যক্রমে অভিনয়কে ব্যবহার করতে পারি। মানুষের মন ও মননের উপর অনায়াসে অভিনয়ের প্রভাব পড়ে। অভিনয় মানুষকে আকর্ষণ করে। বাস্তবিকই অভিনয়ে মানুষ আকৃষ্ট। অভিনয়ের মাধ্যমে দেখানো বিষয় মানুষ সহজেই বুঝতে ও মনে রাখতে পারে। সুতরাং আমরা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় অভিনয়ের কৌশল প্রয়োগ করতে পারি। কুরআনের সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা করো সদ্ভাবে।” এক্ষেত্রে অভিনয় একটি সুন্দর উপকরণ হতে পারে। হিকমতের একটি দিক হতে পারে অভিনয়।
অনেকেই অভিনয়কে মিথ্যার সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু ব্যাপারটি প্রকৃতপক্ষে তা নয়। কেননা লোকে জানে যে, এটি মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত বিষয় নয়। এরপরও যদি আমরা কেউ এমনটি মনে করতে চাই তাহলে বলতে পারি তাহলে এটি বৈধ মিথ্যার মধ্যে গণ্য হবে যেমনটি হাদিসে এসেছে। যেমন হাদিসে তিন ধরণের মিথ্যাকে বৈধ বলা হয়েছে। রিয়াদুস সালিহিন গ্রন্থের একটি অনুচ্ছেদের নাম হলো বৈধ মিথ্যা। গ্রন্থকার সহিহ বুখারি ও মুসলিমের বরাতে এখানে উম্মে কুলসুম থেকে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। উম্মে কুলসুম (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবীকে (স.) বলতে শুনেছেন যে, “লোকদের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকারী মিথ্যাবাদী নয়। সে হয় ভালো কথা পৌঁছায় না হয় ভালো কথা বলে।” সহিহ মুসলিমে আছে, উম্মে কুলসুম (রা.) বলেন, তাঁকে মানুষের কথাবার্তায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনিনি, তিন ক্ষেত্র ছাড়া যুদ্ধকালে, লোকদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখতে ও স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের (প্রেমবর্ধক) কথোপকথনে। (রিয়াদুস সালিহিন, ২৬১ পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা-৬৮৬, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ঢাকা)।
এ থেকে আমরা বলতে পারি মানুষের মধ্যে সদ্ভাব তৈরি, সুকুমার প্রবৃত্তির বিকাশ ও ইসলামী মূল্যবোধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য অভিনয়কে ব্যবহার করা যায়। অভিনয়কে তাওরিয়াহ এর অন্তর্ভুক্ত বলা যেতে পারে। ‘তাওরিয়াহ’ হলো এমন বাক্য ব্যবহার করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য শুদ্ধ তথা তাতে সে মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিক শব্দার্থে ও সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে মিথ্যাবাদী হয়। তাছাড়াও স্পষ্ট মিথ্যা বললেও তাওরিয়াহ বৈধ; পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে। উপর্যুক্ত হাদিস তার দলিল। এছাড়াও ‘কর্মের ফল বা পরিণতি নিয়তের উপর’ এ হাদিসও অভিনয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
অভিনয় প্রসঙ্গে সৌদি আরবের দুইজন বিজ্ঞ ও বিশ্ব সমাদৃত আলেমের মতামত উল্লেখ করতে চাই। তাঁরা হলেন শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ এবং শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফিজাহুল্লাহ। এই দুইজন বিশ্বখ্যাত আলেম শর্তসাপেক্ষে অভিনয়কে জায়েজ বলেছেন। তাঁদের শর্তসাপেক্ষ এই মতটি বিস্তারিত নিচের এই লিংকে দেখতে পাবেন।
বিশ্বখ্যাত ভারতীয় ইসলাম প্রচার দা’য়ী ড.জাকির আবদুল করিম নায়েক হাফিজাহুল্লাহও অভিনয়কে বৈধ বলেছেন। তাঁর এই মতটি ইউটিউবের এই লিংকে দেখতে পাবেন।
https://www.youtube.com/watch?v=Epg3n4YfgTs
এবারে আমরা আমাদের দেশের দুইজন বরেণ্য মুহাক্কিক আলেমের মতামত উল্লেখ করতে চাই অভিনয় প্রসঙ্গে। তাঁদের একজন হলেন শাইখ সাইয়েদ কামাল উদ্দিন জাফরী হাফিজাহুল্লাহ। তিনি অভিনয়কে জায়েজ বলেছেন। তাঁর এই মতটি ইউটিউবের এই লিংকে দেখতে পাবেন।
https://www.youtube.com/watch?v=19g7xeS_Ik8
অন্যজন হলেন শাইখ ড. মুহাম্মাদ আবদুস সামাদ হাফিজাহুল্লাহ। তিনি অভিনয়কে বৈধ বলেছেন। তাঁর এই মতটি ইউটিউবের এই লিংকে দেখতে পাবেন।
অভিনয়ের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। তা হলো অভিনয়ে নারীর ব্যবহার। এটা নিশ্চিত যে, প্রচলিত অভিনয়ের মাধ্যমগুলোতে তা নাটক বা চলচ্চিত্র যাই হোক না কেন তাতে নারীর উপস্থাপনা ও ব্যবহার ইসলামে একেবারেই অনুমোদিত নয়। কিন্তু নারী ও পুরুষ মিলেই আমাদের জীবন ও সমাজ। নারী মুক্ত নয়, নারী যুক্তই জীবন। কুরআনে ও হাদিসে নারীর প্রসঙ্গ মানুষের সূচনা লগ্ন থেকেই এসেছে। প্রায় সকল নবী ও রাসূলের জীবন ও কর্মের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রায় প্রত্যেকের সাথে নারী প্রসঙ্গ কুরআনে এসেছে। শুধু তা-ই নয় কুরআনে একটি সূরার নামকরণই করা হয়েছে নিসা নারী এবং একজন নারীর নামে সূরার নাম রাখা হয়েছে সূরা মারইয়াম। সুতরাং নারী ছাড়া কিছু নেই। নর-নারী মিলেই মানুষ, জীবন ও সমাজ।
তাই অভিনয়ের ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান কী হবে? এ প্রসঙ্গে সমকালীন বিশ্বের নন্দিত ও বরেণ্য মুহাক্কিক-মুজতাহিদ আলেম আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারদাবি হাফিজাহুল্লাহ’র মতামত উল্লেখ করতে চাই। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,“বিষয়টি ব্যাপক স্টাডির দাবি রাখে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট পর্যালোচনা প্রয়োজন। মেয়েদের পুরোপুরি নিষেধ করা যাবে না। আবার তাদেরকে বেপর্দা করে উত্তেজক দৃশ্য দিয়ে অশ্লীলতা ছড়ানোও কোনো মতেই জায়েজ হবে না।
কোনো ঘটনাই কি মেয়েদের বাদ দিয়ে? মেয়েদের বাদ দিয়ে তো কোনো ঘটনাই নেই। আদম ও হাওয়ার ঘটনার কথাই ধরুন,“তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো, খাও এবং সর্বত্র ঘুরে বেড়াও (এখানে নারী ও পুরুষ আদম ও হাওয়া)।” কুরআনে তো মেয়েদের কথা বারবার এসেছে। ইবরাহিম (আ:) ও সারার ঘটনা, ইসমাঈল (আ:) ও তাঁর মায়ের ঘটনা, নূহ (আ:) ও তাঁর স্ত্রীর ঘটনা, লুত (আ:) ও তাঁর স্ত্রীর ঘটনায় তো মেয়েদের উপস্থিতি রয়েছে। মূসার (আ:) জন্মলগ্ন থেকেই তাঁর মায়ের ঘটনা এসেছে “তুমি তাঁকে দুধপান করাও, তাঁকে নদীতে ভাসিয়ে দাও আর তুমি চিন্তা করো না।” মূসার ঘটনায় ফেরাউনের স্ত্রীর কথা, “একে হত্যা করো না।” মূসার বোনের প্রসঙ্গ “যাও কী ঘটে।” শুআইব (আ:) এর দুই মেয়ের ঘটনা, যাদের একজনের সাথে মূসার বিয়ে হয়েছিল। ঈসা (আ:) এর মায়ের ঘটনা।
আমাদের নবী’র (স.) স্ত্রী খাদিজা ও অন্যান্য স্ত্রীদের ঘটনা। সব ক্ষেত্রেই মহিলাদের কথা এসেছে। এ জন্যই আমাদের জীবন থেকে মহিলাদের বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। কাজেই আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে, কীভাবে অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমরা মহিলাদের অংশগ্রহণ করাতে পারি। তবে পশ্চিমাদের মতো করে তো অবশ্যই নয়। এ জন্য চিন্তাশীল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিন্তা-গবেষণা করতে হবে। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মহিলাদের অংশগ্রহণ যেন উত্তেজনা না ছড়ায়, যৌনতা না নিয়ে আসে ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ইরানি অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি, এ থেকে আমরা ফায়দা নিতে পারি।” (স্মারক, জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন ২০০২, পৃষ্ঠা-৩২৯, জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা)।
এ প্রসঙ্গে আমরা কুরআনের সূরা তাওবার ৭১নং আয়াত থেকে নির্দেশনা নিতে পারি। এ আয়াতে বলা হয়েছে,“বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে পরস্পরের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে। আর যথাযথভাবে সালাত আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতিই আল্লাহ অতি সত্বর করুণা বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান হিকমতওয়ালা।”
পরিশেষে আমরা বলতে পারি ইসলামী সীমারেখা রক্ষা করে ইসলামী মূলবোধের বিকাশ, হালাল বিনোদন ও মানুষের কল্যাণে অভিনয়কে কাজে লাগানো যায় ও সমকালীন পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের দাবি রাখে এবং এটি উপেক্ষা করা সঠিক হবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আমাদের কল্যাণ দান করুন।
২০. ১১. ১৭. গুলশান, ঢাকা।”
[পাঠক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সংযোজিত অংশ]
১.
সাইয়েদ আল জাবের আহমেদের উদ্ধৃতিকে কেন এপলজেটিক বলেছিলাম, তা একই প্রশ্নোত্তরে ফিল্মের ব্যাপারে [রাসায়েল ও মাসায়েল, ২য় খণ্ড ১৮৪-১৮৫] মাওলানা মওদূদী কী বলেছেন তা আদ্যোপান্ত পড়লে বুঝা যাবে। উত্তরটা তিন পৃষ্ঠার। জাবের একটা অংশ কোট করেছে। আমি একটা অংশ এখানে তুলে দিলাম। আন্ডারস্ট্যান্ডিং যার যার নিজস্ব। এ বিষয়ে আমার অধিকতর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
“… গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এর মধ্যে বড় বড় দুটি দোষ দেখা যায়। এ দোষ দুটির সংশোধন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। …
দুই. … আর অভিনয়ের মধ্যে বিরাট ত্রুটি ও ক্ষতি রয়েছে। অভিনেতা দিনের পর দিন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে অবশেষে নিজের ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পূর্ণ না হলেও বেশিরভাগ হারিয়ে বসে। এভাবে চলচ্চিত্রায়িত নাটকগুলোকে আমরা সমাজ সংস্কার ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে ব্যয় করতে চাইলেও সেখানে অবশ্যি আমাদের একদল লোককে এ উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে তৈরি করতে হবে, তারা অভিনেতার পেশা গ্রহণ করে নিজেদের ব্যক্তিগত চরিত্র বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হবে।
… এসব কারণে আমার মতে সিনেমার শক্তিকে চলচ্চিত্রায়িত নাটকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে না।”
২.
For those who have commented with a mixture of support and confusion.
The problem on this issue and the concerned ones is in the very understanding of following Islam.
আমি শুধুমাত্র নিজের বুঝজ্ঞানের দায়িত্ব নিতে পারি। এবং তা আগ্রহীদের সাথে শেয়ার করতে পারি। তা হলো:
ইসলাম হলো জীবনদৃষ্টি, নিয়মের সমষ্টি নয়। তারমানে এই নয়, নিয়ম গুরুত্বহীন। ব্যাপারটা এটি অথবা ঐটি – এই ধরনের নয়। ব্যাপার হলো কোনটা ভিত্তি, কোনটা পরিণতি, তা। বলাবাহুল্য, আসল হলো জীবনদৃষ্টি বা ওয়ার্ল্ডভিউ। শরীয়া হলো দ্বীনের ব্যবহারিক দিক। দ্বীন আর শরীয়াকে একাকার বা অভিন্ন ভাবাটাই সমস্যার কারণ।
এ বিষয়ে এর পরের কথাটুকু আমার “ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা” শিরোনামের প্রবন্ধ হতে একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন। গুগলে সার্চ দিলেই পাবেন।
ফেইসবুকে প্রদ্ত্ত মন্তব্য–প্রতিমন্তব্য
Mohammed Shah Alam: লেখাটি কপি করে সংরক্ষণ করলাম।
Mohammad Mozammel Hoque: Syed Al Jaber Ahmed এ সময়কার একজন প্রতিভাবান টিভি প্রেজেন্টার, কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও আবৃত্তিকার। moreover, he is an outstanding Islamist.
Syed Al Jaber Ahmed: সহস্র শুকরিয়া স্যার….
Farid A Reza: Congratulation dear Syed Al Jaber Ahmmed
Mohammad Mozammel Hoque: যারা স্টিল ক্যামেরার ছবিকে না জায়েয বলেন, অথচ, ভিডিওতে অসুবিধা দেখেন না, তাদেরকে সশ্রদ্ধভাবে এড়িয়ে এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমার অনেক ভাবনাচিন্তা আছে। সময়ের অভাবে, মূলত আলসেমির কারণে লেখা হচ্ছে না। ইচ্ছা আছে। চাচ্ছি, যারা প্র্যাকটিকেলি কাজ করছে তারা যেন তাত্ত্বিকভাবে বিভ্রান্তি ও দোটানার মধ্যে না পড়ে। CSCS-এর কাজ হলো চিন্তাগত ভ্রান্তিগুলোর অপনোদন করা। ভালো থাকো।
Mohammad Mozammel Hoque: প্রিয় ব্যক্তিগণ বাংলাদেশ নামক এই অব্যবস্থার অপরিচ্ছন্ন ও দরিদ্র জনপদকে ছেড়ে সেই কবে থেকে ক্রমে ক্রমে কলনিয়াল মাস্টারদের অন্যতম আদিভূমি লন্ডন নিবাসী হয়েছেন। এই শূন্যতার মাঝেও তাদের উত্তরসূরীরা এখানে কীভাবে যেন গড়ে উঠছে, তৈরী হয়ে উঠছে। জাবের তাদেরই একজন। রেজা ভাই, শাহ আলম ভাই, হামিদ হোসাইন ভাই, আবদুল আউয়াল মামুন, নাজমুল হাসান ও শিমু, এই ক’জন এইসব মিস করা প্রিয়দের অন্যতম।
Farid A Reza: Thanks dear brother. But we, not only I, should be grateful to you and young scholars like Syed Al Jaber Ahmed, Juabir Al Mahmud and others who are contributing a lot to enrich our knowledge and widen our thinking. I did not know Syed Jaber. It is because of you I came to know him and got the opportunity to read his very valuable article. In fact I was expecting that one day you would be writing on this topic in details. Alhamdulillah we got him. May Allah give him ability to do more of this kind.
Mohammad Mozammel Hoque: Jaber is very promising one. They are our rising, I would like to call ‘social entrepreneurs’. জোবায়ের আল মাহমুদ is also one of them. He is in Turkey now, doing a second masters. Hopefully, he will come back and work with us.
জোবায়ের আল মাহমুদ: আসসালামুয়ালাইকুম। আপনারা শ্রদ্ধেয় দুই জন স্যার আমাদের তরুণদের অনুপ্রেরণা ও আদর্শ। আমাদের মতো নগণ্যদেরকে আপনারা যেভাবে আপনাদের অনুজ হিসাবে গ্রহণ করেছেন, তাতে আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ ও অনুপ্রাণিত। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের মত আমাদেরকেও দ্বীনের পথে কবুল করুন।
Syed Al Jaber Ahmed: মওলানা আবদুর রহীম (র)ও মওলানা মওদূদী(র) মতো মত ব্যক্ত করেছেন তাঁর শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি বইয়ে… আর এভাবে ভূমিকাসহ লেখাটি পোস্ট করার জন্য বিশেষ শুকরিয়া আপনার প্রতি প্রিয় স্যার…
Mohammad Mozammel Hoque: From your age level and position, what you have written is advanced write-up. It seems a bit apologetic from my age level and position. Never mind it.
একবার রাসুলুল্লাহ (স.) একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন যার উত্তর উপস্থিত সাহাবীদের কেউ দিতে পারে নাই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)। তিনি সঠিক উত্তরটাই ভেবেছিলেন কিন্তু জুনিয়র হওয়ার কারণে বলতে সংকোচবোধ করেছিলেন। এ বিষয়ে উমার (রা.) উনাকে বলেছিলেন, তুমি যদি এত এত সংখ্যক দামী উঠ আমাকে এনে দিতে তাহলেও আমি ততটা খুশী হতাম না যতোটা খুশী হতাম যদি তুমি সংকোচ না করে তুমি যা ফিল করেছো তা যদি বলে দিতে।
তাই হক কথা বলার ক্ষেত্রে বয়সকে বিবেচনায় না নিয়ে সাহস করে বলে ফেলতে হবে। নেতা ও তাত্ত্বিক মানে বয়োজেষ্ঠ কেউ হবেন, এটি প্রচলিত ভুল ধারণা।
Shariful Haque: আপনি বলেছেন: শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলামী দৃষ্টিকোণ বইয়ে আর রাসায়েল ও মাসায়েলে সংকলিত একটা প্রশ্নউত্তরে দেখা যায়, মাওলানা মওদূদী বলছেন, অভিনয় না জায়েয। উনার মতে অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকৃতি ঘটে। কতটা হাস্যকর কথা…!
সাইয়েদ আল জাবের আহমেদ বলেছেন: বিশ শতকের বিশ্ব বরেণ্য মুজতাহিদ আলেম ইমাম আল উস্তায মওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “সিনেমা আসলে কোন না জায়েজ বস্তু নয়। তবে তার নাজায়েজ ব্যবহার তাকে নাজায়েজ করে দেয়। সিনেমার পর্দায় যে ছবি দেখা যায় তা আসলে ছবি নয় বরং পরছায়া, যেমন আয়নার মধ্যে পরছায়া দেখা যায়। কাজেই তা হারাম নয়।” (রাসায়েল মাসায়েল ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৪, শতাব্দী প্রকাশনী, ঢাকা)।
Mohammad Mozammel Hoque: সাইয়েদ আল জাবের আহমেদের উদ্ধৃতিকে কেন এপলজেটিক বলেছিলাম, তা একই প্রশ্নউত্তরে ফিল্মের ব্যাপারে [রাসায়েল ও মাসায়েল, ২য় খণ্ড ১৮৪-১৮৫] মাওলানা মওদূদী কী বলেছেন তা অদ্যপান্ত পড়লে বুঝা যাবে। উত্তরটা তিন পৃষ্ঠার। জাবের একটা অংশ কোট করেছে। আমি একটা অংশ এখানে তুলে দিলাম। আন্ডারস্ট্যান্ডিং যার যার নিজস্ব। এ বিষয়ে আমার অধিকতর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
“… গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এর মধ্যে বড় বড় দুটি দোষ দেখা যায়। এ দোষ দুটির সংশোধন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। …
দুই. … আর অভিনয়ের মধ্যে বিরাট ত্রুটি ও ক্ষতি রয়েছে। অভিনেতা দিনের পর দিন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে অবশেষে নিজের ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পূর্ণ না হলেও বেশিরভাগ হারিয়ে বসে। এভাবে চলচ্চিত্রায়িত নাটকগুলোকে আমরা সমাজ সংস্কার ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে ব্যয় করতে চাইলেও সেখানে অবশ্যি আমাদের একদল লোককে এ উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে তৈরি করতে হবে, তারা অভিনেতার পেশা গ্রহণ করে নিজেদের ব্যক্তিগত চরিত্র বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হবে।
… এসব কারণে আমার মতে সিনেমার শক্তিকে চলচ্চিত্রায়িত নাটকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে না।”
Syed Al Jaber Ahmed: আমি মাওলানা মওদূদীকে (র) কোট করেছি সিনেমা ও ভিডিও প্রযুক্তির ব্যবহার বৈধ সে ক্ষেত্রে দলিল হিসেবে। অভিনয় বৈধ বা অবৈধ প্রসঙ্গে নয়…তিনি অভিনয়ের প্রতিকূলে মত দিয়েছিলেন, সেটা আমি গ্রহণ করিনি আর করবোও না…স্যার উপরে কমেন্ট তা উল্লেখ করেছেন….একই প্রশ্নের জবাবে মওলানা ঐ কথা বলেছেন…আমি একাংশ নিয়েছি…….@ shariful ভাই
Mohammad Mozammel Hoque: জাবের চেষ্টা করেছেন মাওলানা মওদূদীকে কিছুটা সেইভ করার। অভিনয় নিয়ে উনার এ রকম প্রান্তিক মন্তব্য সম্পর্কে সাধারণ পাঠকগণ অনবহিত থেকে যেত যদি আমি এখানে তা খোলাসা না করতাম। আশা করি, জাবের তাতে মাইন্ড করে নাই।
Rafiq Bin Ali: শ্রদ্ধেয় Mozammel ভাই, ব্যক্তিগত আক্রমণের জন্যে নয়, এমনি ওপেন মাইন্ডে জানার জন্যে জিজ্ঞাসা-
কেউ যদি জানতে চায় যে, আল্লামা মওদুদী (রহঃ) এর এই বিষয়ে আপনাদের মতন জ্ঞান না থাকায় তিনি প্রান্তিক মন্তব্য করেছিলেন, ঠিক আছে মানলাম। কিন্তু আপনারাও যে অপর প্রান্তে গিয়ে প্রান্তিক মন্তব্য করছেন না সেটির ভিত্তি কি?
Mohammad Mozammel Hoque: Rafiq Bin Ali, বাস্তবতার জ্ঞান।
Md Rifat Chowdhury: আসলে মাওলানা মওদূদী (রহি:) অভিনয় বলতে কাহিনি বা গল্পের অভিনয় শিল্পকে হারাম বলেছেন। আর সিনেমা বলতে সম্ভবত ডকুমেন্টারিকে মিন করেছেন। একজন আলেমের সব মতই যে গ্রহণযোগ্য হবে এমন তো না। সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহি:) তো ধর্ষণ অপরাধের তদন্তের কাজে ডিএনএ টেকনলোজিকেও হারাম বলেছেন। তাই বলে কি তা গ্রহণযোগ্য??? অভিনয় বিষয়ে জামায়াত নিজেও মাওলানার মতের সাথে এখন একমত পোষণ করছে না।
মুসলমানদের বড় সংকট বুদ্ধিবৃত্তির সংকট ।
Syed Al Jaber Ahmed: আমি আসলে মওলানা মওদূদী (র) কে শুধু সিনেমা প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়েছি। আপনি অভিনয়ে তাঁর মত উল্লেখ করেছেন সেটা ভালো হয়েছে….শুকরিয়া স্যার, আমি কিছু মনে করিনি
Syed Al Jaber Ahmed: Md Rifat Chowdhury, ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) বলেছেন, দুনিয়ার কোন আলেমেরই সব কথা গ্রহণ করা যায় না বা সব শুদ্ধ অথবা ভুলের উর্ধে নয় এমন নয়, সকলেরই কিছু ভুল হয়েছে
Russel Kabir: কিছু মনে করবেন না স্যার। কিন্তু অভিনয়ে নারীর অংশগ্রহণের ব্যাপারে সূরা তাওবার ৭১ নম্বর আয়াত আনয়ন অপ্রাসঙ্গিক যদি না এটার ভুল ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আমি যতটুক জানি উক্ত আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসিরগণের ইজমা হলো “বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী পুরুষ পরস্পরের বন্ধু। বিশ্বাসী নারী ও বিশ্বাসী নারী পরস্পরের বন্ধু। বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী একে অন্যের বন্ধু নয়।” কোথাও বুঝতে ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।
Mohammad Mozammel Hoque: For you and those who have commented with a mixture of support and confusion.
The problem that you have mentioned on this issue and the concerned ones is in the very understanding of following Islam.
আমি শুধুমাত্র নিজের বুঝজ্ঞানের দায়িত্ব নিতে পারি। এবং তা আগ্রহীদের সাথে শেয়ার করতে পারি। তা হলো –
ইসলাম হলো জীবনদৃষ্টি, নিয়মের সমষ্টি নয়। তারমানে এই নয়, নিয়ম গুরুত্বহীন। ব্যাপারটা এটি অথবা ঐটি – এই ধরনের নয়। ব্যাপার হলো কোনটা ভিত্তি, কোনটা পরিণতি, তা। বলাবাহুল্য, আসল হলো জীবনদৃষ্টি বা ওয়ার্ল্ডভিউ। শরীয়া হলো দ্বীনের ব্যবহারিক দিক। দ্বীন অার শরীয়াকে একাকার বা অভিন্ন ভাবাটাই সমস্যার কারণ।
এ বিষয়ে এর পরের কথাটুকু আমার “ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা” শিরোনামের প্রবন্ধ হতে একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন। গুগলে সার্চ দিলেই পাবেন।
Syed Al Jaber Ahmed: @ Rusel kabir রাসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা বইটি পড়ুন চার খন্ড, দেখবেন অনেক কনফিউশন থাকবে না, আর কিছু আলেমের বাড়াবাড়ি ও প্রান্তিকতা বুঝতে পারবেন এবং তাঁদের উপলব্ধির ঘাটতি ও ভ্রান্তি এবং প্রয়োগজনিত সমস্য বুঝবেন। আর হেদায়া কিতাবে নারীদের পর্দার ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা (র) এর মতটি পড়ুন যদিও এদেশের হানাফিরা তাঁর এ মত মানেন না
Abdus Salam Azadi: ড. প্রফেসর মাহফুজ সাহেব আপনার প্রিয়। উনার পিএইচডি থিসিস কিন্তু এর উপরে। আসুন, উনাকে আমরা ধরি।
Syed Al Jaber Ahmed: থিসিসটির নাম সম্ভবত ‘মাওকিফুল ইসলাম মিনাল আদাবি ওয়াল ফান’
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী: আমাদের এমন কোনকিছু চিন্তা করা উচিত নয় যা হয়তো আমরা ইসলামের জন্য করছি, কিন্তু তার মাঝে ইসলামই থাকলো না।
Mohammad Mozammel Hoque: সমস্যা হলো ইসলাম বলতে কে কী বুঝেন, তা নিয়ে। ইসলাম তো এক, যদিও ইসলামের আন্ডারস্ট্যান্ডিং এক না।
Rasedul Hasan Rasel: আন্ডারস্ট্যান্ডিং তো অবশ্যই এক হবে না, দর্শনের পণ্ডিতরা যদি ইসলামী মাসয়ালা দিতে পারে তাহলে আর ফিকহ শাস্ত্রের কি দরকার!
ভাবতেছি কয়েকটা ওষুধের নাম মুখস্ত করেই ডাক্তার হয়ে যাই!! আর ডাক্তারি বিদ্যা শেখার জন্য গুগল মামা তো আছেই!!!
লেখক আবার দাবি করেছেন “লেখাটা দীর্ঘ, তথ্যবহুল ও এপলজেটিক। এবং সে অর্থে অপূর্ণ……”, সঙ্গে আমি আরেকটু যোগ করতে চাই-“……… মানুষকে মিসগাইড করার জন্য পরিপূর্ণ”
Mohammad Mozammel Hoque: আমি কি কোনো “মাসয়ালা” দিয়েছি? হ্যাঁ, কথা বলেছি। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আপনারা মনে করতে পারেন, এক্সপার্টদের বাইরে কেউ কথা বলতে পারবে না, সেটা আপনাদের ব্যাপার। আমি মনে করি, আলেম ও অধ্যাপকদের যৌথ অনুসন্ধানেই কেবল সমকালীন কোনো যুগ-সংকটের সমাধান হতে পারে।
Syed Al Jaber Ahmed: Rasedul Hasan Rasel, আপনার মিসগাইড শব্দ প্রয়োগ ঠিক হয়নি, অভিনয় নিয়ে কোন রেফারেন্স ছাড়া একটি কথাও লিখিনি। শাইখ ইবনে উসাইমিন (র)সহ দেশি-বিদেশী আলেমদের মতামত সূত্রসহ উল্লেখ করেছি। আপনি পুরো লেখাটি মনযোগ দিয়ে আবার পড়ুন। আর দর্শনের পন্ডিতরা মাসয়ালা-ফিকাহ ও কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে কথা বলতে পারবে না এটা কোথায় লেখা হয়েছে কুরআনও হাদিসে? এটা নিশ্চয়ই আপনার জানা থাকার কথা আমাদের প্রাচীন পূর্বসুরী আলেমগণ একই সাথে বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপার্ট ছিলেন।
Md Rifat Chowdhury: “ফেকাহ” বিষয় স্টাডির পদ্ধতিগত একাডেমিক রিথিংকিং একান্তই জরুরী প্রয়োজন:
আজকের আধুনিক যুগের সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থার একটা বড় ব্যাপার হলো সুপার স্পেশালাইজেশন। ধরেন আপনি ডাক্তার। কিন্তু ক্রিটিকাল সমস্যা মোকাবেলার বেলায় প্রয়োজন হচ্ছে সুপার স্পেশালাইজেশনের। ধরেন শিশুরোগের কথা, তার জন্য রয়েছে দুইটা সাবজেক্ট পেডিয়েট্রিক্স ও পেডিয়েট্রিক্স সার্জারি। আবার শুধু পেডিয়েট্রিক্স হলে চলছে না। তারও আছে এত্তোগুলা শাখা : পেডিয়েট্রিক্স নিওরোলজি, পেডিএট্রিক্স কার্ডিওলজি, পেডিয়েট্রিক্স নেফ্রোলজি, পেডিয়েট্রিক্স পালমনোলজি, পেডিয়েট্রিক্স হেমাটো-অংকোলজি, নিওনেটোলজি, পেডিয়েট্রিক্স সাইকিয়াট্রি।
একইরকমভাবে ফেকাহর সুপার স্পেশালাইজেশন দরকার, ফেকাহ অন বেসিক ইকনোমিক্স, ফেকাহ অন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ফেকাহ অন কালচার এন্ড আর্টস।
যে আলেম কালচার বলতে ঢোল-তবলা-বাঁশি-গান-কাওয়ালি নাশিদ-টিভি-নেটই বুঝেন তিনি আধুনিক সেকুলার জাহেলি কালচার মোকাবেলা করবেন কিভাবে?? ঐ “মান্নান মিয়ার তিতাস মলম, ত্রিশ বছর ধরে এক জায়গায় বসে” থাকতে হবে।
Ohidul Alam: Many thanks, Mohammad Mozammel Hoque, for this intellectual discussion and pointing the inconsistency in our Ulamahs thinking.
Another important area also they muddled up is in modern economics. Our current Islamic scholars and Ulamah don’t understand inflation but they’re OK to use paper money.