ইসলামের দৃষ্টিতে সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রচলিত প্রিডমিনেন্ট মত হলো, বাদ্যযন্ত্র হারাম। আপাতত আমরা আলোচনার খাতিরে ধরে নিলাম, বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হারাম। কিন্তু যন্ত্র ছাড়া নানা ধরনের শরীরী প্রক্রিয়ায়, যেমন মুখ ও হাতে শব্দ তৈরি করা এবং বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক শব্দ রেকর্ড করে গানের সাথে সংযোজন করা ইত্যাদির মাধ্যমে যদি আমরা বাদ্যযন্ত্রের মতো হুবহু একই রকমের আইডেন্টিক্যাল সাউন্ড তৈরি করতে পারি এবং সেটাকে গানের মধ্যে ব্যবহার করি, সে ক্ষেত্রে মাসয়ালা কী হবে? এটি কি জায়েজ হবে? ডান হাতে না খেয়ে ব্যাপারটা কি বাম হাতে খাওয়ার মতো কিছু একটা?

সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা কি একটি কনটেক্সট-স্পেসিফিক পার্শিয়াল এন্ড এসেনশিয়াল সমস্যা? নাকি, এজওয়েল এজ, এটি একটি স্ট্রাকচারাল প্রবলেমও বটে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইসলামী শরীয়াহ স্বীয় অনুসারীদেরকে করণীয় ও বর্জনীয় হিসেবে যেসব হুকুম আহকাম দিয়ে থাকে সেগুলোকে যদি বুঝার চেষ্টা করি তাহলে আমরা বুঝতে পারি, কিছু কিছু হুকুম মর্মগত বা essential। Sense is important not the way of realizing it। কিছু কিছু হুকুম একই সাথে মর্মগত এবং কাঠামোগত। At the same time, both essential and structural। এবাদতের বিষয়গুলো এর উদাহরণ। সামাজিক আচরণ তথা মুয়ামালাতের বিষয়গুলো মূলত এসেনশিয়াল বা মর্মগত।

এ বিষয়ে অধিকতর ও বিস্তারিতভাবে জানার আগ্রহ থাকলে আমার “ইসলাম অনুসরণের ক্ষেত্রে স্ট্রাকচারাল বনাম এসেনশিয়াল হুকুমের পার্থক্য বুঝার গুরুত্ব” শীর্ষক আর্টিকেলটা পড়তে পারেন।

অহনিশ ফিল্মের স্বত্বাধিকারী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসান আল বান্নাসহ কয়েকজন উদ্যমী সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোক্তার সাথে প্রায় ঘন্টাখানেকের এই আলোচনা শুনলে এতে আপনি সংস্কৃতির অঙ্গনে ইসলামপন্থীদের সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয় সম্পর্কে চিন্তার খোরাক পাবেন।

ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

নাদিম মাহমুদ: হারাম মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলাম প্রচার ইসলামে জায়েয আছে কি? এটা জানতে চাই। তাহলে এ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এবং হাদীসে কী বলা আছে, জানালে খুবই উপকৃত হতাম।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: “হারাম মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলাম প্রচার করা জায়েজ আছে কি?” – এই প্রশ্নটাই তো একটা স্ববিরোধী প্রশ্ন। তবে ব্যাপার হলো, আপনি যেটাকে হারাম বলছেন এটা আপনার বিবেচনায় হারাম হলেও যিনি এই কথিত ‘হারাম’কে ব্যবহার করে ইসলাম প্রচার করছেন, হতে পারে যে তিনি বিষয়টাকে আদতে হারাম মনে করেন না। সুতরাং নিজের মতামত অন্য কারো উপর চাপিয়ে অন্যের একটা ফেইক অবস্থান তৈরি করা এবং সেটাকে মোকাবেলা করতে চাওয়ার এই যে প্রবণতা, এটি হচ্ছে আমাদের একাডেমিক পরিভাষায় straw-man fallacy। আপনার কথায় যেটি মনে হচ্ছে।

নাদিম মাহমুদ:  আমি কুরআন এবং হাদীস থেকে উদাহরণ চেয়েছিলাম স্যার। আর কখন, কারা গান বাজনা ব্যবহার করত এগুলোও।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ফিকহুল গিনা ওয়াল মাওসিকা ফি দাওয়িল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ

Manaqib Ahsan Khan: আমি গান বাজনা বা বাদ্যযন্ত্রের বেলায় শিল্পসম্মত, সুরুচিপূর্ণ, নিয়ন্ত্রিত, আরো বিভিন্ন বিষয়ে, আমি বর্তমান আরব চিন্তাবিদের অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি। এবং প্রমাণ সহকারে তারা দেখিয়েছেন ‘মুসিকা’ বা ‘গিনা’ অর্থাৎ গান-বাজনার বেলায় আগের তুলনায় অনেকটাই শিথিল। আমার ব্যক্তিগত ইসলামী শরিয়া স্টাডি অনুযায়ী বলতে পারি, এটা নিয়ে এত কিছু বলার কিছু নেই । এছাড়া এই ব্যাপারে অনেক শিথিলতা আছে। সবকিছুকে আত্মঘাতী হিসেবে নেয়া ঠিক নয়। এই ব্যাপারে ইউসুফ কারযাভী অনেক কিছু লিখেছেন। আশা করি ওইখানে দেখে নেওয়া ভালো। পাশাপাশি, ওয়াসট্রিয়ার প্রসিদ্ধ জ্ঞানী এবং আলেম আদনান ইব্রাহিম অনেক কিছু বলেছেন। এবং আরবের আলী আল হুয়াই রিনিও বৈধতার কথা বলেছেন ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বাদ্যযন্ত্র ছাড়া মুখের মাধ্যমে বাদ্যযন্ত্রের সুর তৈরি করা এবং সেটা গানের সাথে সংযোজন করা যদি বৈধ হয় তাহলে আর্টিফিশিয়ালভাবে তৈরি হওয়ার কারণে যে কোনো কিছুর ব্যবহারও বৈধ হবে, ন্যাচারাল ফর্মে যেটার ব্যবহার অবৈধ। আর যদি ন্যাচারাল ফর্মে যেটা অবৈধ, আর্টিফিশিয়াল ফর্মেও সেটা অবৈধ হয়, তাহলে মুখে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ তৈরি করাও অবৈধ হবে।

সমস্যা হলো, কথাবার্তা বলতে গিয়ে এটা আমরা হরহামেশাই করে থাকি। মুখে শব্দ তৈরি করার ব্যাপারে এক্সপার্ট bit-boxer-রা বাদ্যযন্ত্রের শব্দগুলোকে অত্যন্ত নিখুঁত ও সুন্দরভাবে তৈরি করতে পারে। সেজন্য তাদেরগুলোকে যদি আমরা অবৈধ বলি, আর আমরা যেহেতু তেমন সুন্দর করে এগুলো করতে পারি না, তাই আমাদের জন্য এগুলো বৈধ হবে, এমনটা বলি তাহলে সেটা হবে স্ববিরোধিতা। সেটা তাই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটা বাদ্যযন্ত্র আমরা আনাড়ি হাতে বানাইছি ও বেসুরাভাবে বাজাইছি, আর একটা বাদ্যযন্ত্র খুব ভালোভাবে বানানো হয়েছে ও সুন্দর করে বাজানো হয়েছে, এই দুইটার একটাকে যদি অবৈধ মনে করা হয় তাহলে অপরটাও অবৈধ হবে। কথাটা উল্টো করে বললে, এর একটা যদি বৈধ হয় অপরটাও বৈধ হবে।

এসব কথার মূল কথা হলো, যেভাবে আমরা বৈধ-অবৈধ বা হালাল-হারাম ঠিক করছি, খুব সম্ভবত আমাদের এই ভেরি জাস্টিফিকেশন প্রসেসটার মধ্যেই আসলে ফল্ট রয়ে গেছে। যুক্তি দিয়ে ব্যাপারটা যদি আমরা বুঝার চেষ্টা করি তাহলে এটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি।

আক্কাস আলী: According to Maliki madhab, all forms of music are halal. I also think singing and listening to music have nothing to do with believing in Allah.

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *