অপসংস্কৃতি কিংবা যে কোনো অপব্যবস্থাকে কীভাবে রুখবেন? এড-আপ পলিসি হতে পারে সর্বোত্তম উপায়

অ্যাড-আপ পলিসি হলো মোকাবেলার নীতি। এই মোকাবিলা হতে পারে যে কোনো ক্ষেত্রে। বিশেষত সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামরিক ক্ষেত্রে।

এর মূলকথা হলো– বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্টের ইতিবাচক দিকগুলোকে পূর্ণমাত্রায় ধারণ করা, ওউন করা এবং সেগুলোকে সেই সিস্টেমের অধীনেই যথাসম্ভব ডেভেলপ করার চেষ্টা করা।

এবং বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্টের নেতিবাচক দিকগুলোর প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া। বিশেষত, যে মোকাবেলায় বিজয়ী হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাও নাই।

‘Quality does matter’ পলিসি অনুসারে, তুলনামূলকভাবে ভালো কিছুর প্রভাবে, যা কিছু নিম্নমানের তা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে এক পর্যায়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। লো কোয়ালিটির প্র্যাকটিস, বেটার অল্টারনেটিভ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে। তেমন সত্যিকারের গুণগত মানসম্পন্ন উত্তম বিকল্প প্রতিষ্ঠা করাই হলো আসল চ্যালেঞ্জ।

যেমন করে অন্ধকার টিকতে পারে না, যদি কেউ সেখানে আলোর প্রজ্বলন ঘটায়। কিংবা, যেমন করে তীব্রতর আলো জ্বালানোর পরে কম পাওয়ারের বাতি ওভার-শেডোড হয়ে পড়ে। যেমন করে পাশেই একটি দীর্ঘতর রেখা আঁকার মাধ্যমে কোনো রেখাকে কাটছাঁট না করেই সেটাকে ছোট করে দেয়া যায়।

যেমন করে কোনো কিছুর সীমানা সংকোচন না করেও সেটাকে হজম করে ফেলা যায়, সেটির চতুর্পাশের সবটুকু স্থান দখল করে নেয়ার মাধ্যমে। কাউকে ছোট না করেও নিজেকে যেমন করে বড় করা যায়। কাউকে প্রত্যক্ষভাবে পরাজিত না করেও যেমন করে তার ওপর বিজয়ী হওয়া যায়।

কাউকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত না করেও তার সবটুকু একসাথে গিলে ফেলা যায়। সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণী যা করে থাকে। কোনো আদর্শ যদি তেমনি উপযোগী ও accommodating হয় তাহলে অপরাপর তত্ত্ব, মত, পথ ও আদর্শগুলোকে সেটি গিলে ফেলে নিতে পারার কথা।

প্রতিদ্বন্দ্বী মত, পথ ও আদর্শগুলোকে দেখলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ওয়ান টু ওয়ান। অর্থাৎ এটি থাকলে ওইটি থাকবে না। কিংবা ওইটি থাকলে এটি থাকবে না। মতাদর্শগত এই দ্বন্দ্বকে যদি আমরা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখি তাহলে দেখবো চিত্রটি ভিন্নতর।

মতাদর্শগত দ্বন্দ্বকে আমি সত্য-মিথ্যার সাদা-কালো বাইনারিতে না দেখে বরং পূর্ণতা-অপূর্ণতার দৃষ্টিতে দেখি। উন্নততর আদর্শ, তুলনামূলকভাবে নিম্নতর আদর্শের ইতিবাচক দিকগুলোর সাথে কিছু উন্নততর তত্ত্ব, মূল্যবোধ ও কার্যক্রমকে add-up করে। স্ববিরোধ ও অপূর্ণতার কারণে নিম্নতর আদর্শকে আমরা মিথ্যা ও বাতিল হিসেবে অভিহিত করতে পারি, বা করে থাকি।

তত্ত্ব, মত ও পথের এই দ্বান্দ্বিক পৃথিবীতে কম্পিটিং আইডিওলজিগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ক্রমসোপনমূলক বা (hierarchical)।

মোকাবেলার ব্যাপারে আমার ‘No conflict with any authority’র সাথে এই এড-আপ পলিসি সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রেক্ষাপট বিবেচনা ব্যতিরেকে কোনো কিছু স্বয়ং হক বা সত্য হওয়া, আর সেই হককে বাস্তবায়ন করার পদ্ধতির মাঝে যে পার্থক্য রয়েছে, সেটা মনে রাখা জরুরি।

তার মানে, কোনো কিছু হক হওয়ার শর্ত হলো– সেটা আদতে হক হওয়ার সাথে সাথে সেটা বাস্তবায়নের পদ্ধতিটাও হক হতে হবে। হক-বাতিলের কাল্পনিক দ্বন্দ্বে উন্মত্ত ও যত্রতত্র দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে চাওয়া স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন আদর্শবাদী চরমপন্থীদের এটি বোঝানো মুশকিল।

Conflict is a must, কিন্তু কনফ্লিক্টের পদ্ধতি সবসময় নেগেটিভ হবে, এমন নয়।

বরং অ্যাড-আপ নীতির আলোকে পজেটিভ ওয়েতে কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টকে আমরা সহজতর উপায়ে ও সফলভাবে কাজে লাগাতে পারি।

এটি মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিস্থাপন করা সংক্রান্ত কোরআনের নীতির সাথে সামঞ্জস্যশীল। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা মন্দকে ভালো দ্বারা মোকাবেলা করো।’ আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তোমার ভাইকে সহায়তা করো হোক সে জালেম অথবা মজলুম…, যদি জালেম হয় তাহলে তাকে জুলুম করা হতে বিরত রাখো। এটি হচ্ছে তাকে সহায়তা করা।’

মোকাবেলার একটা অংশ হচ্ছে নেতিবাচক মোকাবেলা। ইতিবাচকভাবে মোকাবেলা না করে কিংবা ইতিবাচক মোকাবেলা পদ্ধতিকে এগজস্ট না করে উগ্র আদর্শবাদীরা মানুষকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দিতে চায়। এটি আদর্শ বিরোধী। বাস্তবতা বিরোধী। সমাজতত্ত্বের নিয়ম বিরোধী। সুন্নাহ বিরোধী।

মোদ্দা কথা হলো, উত্তম বিকল্প স্থাপনের মাধ্যমে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক ময়দানে প্রচলিত অপব্যবস্থাসমূহকে মোকাবেলা করতে হবে। মন্দ ব্যবস্থা হতে উত্তম ব্যবস্থায় উত্তরণের এই প্রক্রিয়াতে বাস্তবসম্মত পর্যায়ক্রম অনুসরণ করতে হবে।

প্রপার নলেজ অফ দা টেক্সট এবং নলেজ অফ দা কনটেক্সটের সাথে সাথে এই কাজে ‘আক্বলে সালিম’ তথা সুস্থ বিবেকবুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞানের অনুশীলন জরুরি।

কিছুটা খাপছাড়া খাপছাড়া এই কথাগুলোকে ভালো করে বোঝার জন্য নিচের এই লেখাগুলোর কোন একটি বা সম্ভব হলে সবগুলো পড়তে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এই ভিডিওটির কথাগুলো ভালো করে শুনেন।

ভিডিও আলোচনা:

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল:

১। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলো

২। অন্যান্য মতাদর্শের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে ইসলামের ইতিবাচক অনন্যতা

৩। একজন পরাজিতের বিজয় ভাবনা

৪। সুষম সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে নৈতিকতা, স্বার্থ ও প্রবৃত্তির মধ্যে সমন্বয়ের অপরিহার্যতা

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

এ ধরনের আরো লেখা

What is culture?

Culture is the common practice of personal moral values. (সংস্কৃতি হচ্ছে ব্যক্তিগত...

সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পর্যালোচনা

ইসলামের দৃষ্টিতে সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রচলিত প্রিডমিনেন্ট মত হলো, বাদ্যযন্ত্র...

মন্তব্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

প্লিজ, আপনার মন্তব্য লিখুন!
প্লিজ, এখানে আপনার নাম লিখুন

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকhttps://mozammelhq.com
নিজেকে একজন জীবনবাদী সমাজকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলসফি পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। থাকি চবি ক্যাম্পাসে। নিশিদিন এক অনাবিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। তাই, স্বপ্নের ফেরি করে বেড়াই। বর্তমানে বেঁচে থাকা এক ভবিষ্যতের নাগরিক।

সম্প্রতি জনপ্রিয়

ক্রিটিকাল থিংকিং কী, কেন ও কীভাবে

জীবন থেকে নেয়া একটা কথা দিয়ে শুরু করি। মানুষ...

ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ: একটি প্রস্তাবনার খসড়া

বাংলাদেশ নামের এ ভূখণ্ডে ইসলামের বিধানের আলোকে একটি ইনসাফপূর্ণ...

‘অভিনয় প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি’: আমার কথা

লেখাটা দীর্ঘ, তথ্যবহুল ও এপলজেটিক। এবং সে অর্থে অপূর্ণ।...