যে আদর্শের গাইডেন্সই আপনি প্রেফার করুন না কেন, আপনাকে মানতে হবে:

(১) চলমান সামাজিক পরিবর্তন অভূতপূর্ব

(২) এই পরিবর্তন গঠনমূলক ও ইতিবাচক

(৩) হীনমন্যতার ঊর্ধ্বে উঠে এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে হবে।

প্রথম দু্‌ই পয়েন্টের কিছুটা ব্যাখ্যা পাবেন ক’দিন আগের এই পোস্টে: চাই টেক্সট ও কনটেক্সটের সম্মিলন। তৃতীয় পয়েন্টের ব্যাখ্যা না করে পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে গিয়ে হীনমন্যতার শিকার হয়েছেন যারা তাদের দুয়েকটা ভুল দেখিয়ে দেয়া যথেষ্ট মনে করছি।

হিন্দী গানের প্যারোডি করে যারা ‘ইসলামী সংগীত’ করছেন, তারা চলমান পরিবর্তনকে মানতে গিয়ে হীনমন্যতার শিকার হয়েছেন।

সবকিছুর মধ্যে যারা ইসলামীকরণের প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পান তারাও হীনমন্যতার শিকার হয়েছেন। হ্যাঁ, তাই-ই ব্যাপার।

সো কলড মেইনস্ট্রীম হতে গিয়ে যারা সেলফ-আইডেন্টিটি বিসর্জন দিয়ে ‘কাকের চোখ বন্ধ করে খাবার লুকানোর কৌশল’ অবলম্বন করছেন বা তেমনটা করার কথা ভাবছেন, আদর্শবোধ ও আধুনিকতার দ্বন্দ্বে তারাও ভিতরে ভিতরে দিশাহারা। স্পষ্টতই তারা হীনমন্যতার শিকার।

বুঝলাম, নচিকেতার গান আপনার কাছে অধিকতর ‘ইসলামিক’ মনে হয়। তাই বলে আপনি নচিকেতার অনুকরণ করবেন, তা তো ঠিক না। আপনি নিজেই একজন নচিকেতা হয়ে উঠার অন‍্যতম শর্ত হলো আপনি অন্য কারো অনুকরণ করা বর্জন করবেন।

আপনি আপনার মতো করে কিছু একটা হওয়ার চেষ্টা করবেন, এটাই তো সৃজনশীলতার পথ।

খোলা মনে, আননেসেসারি একাডেমিক জটিলতাগুলিকে সম্মানে এড়িয়ে গিয়ে আদর্শ ও বাস্তবতাকে যারা সরলভাবে সমন্বয় করবেন বা করছেন, শুধুমাত্র তারাই এই ধরনের হীনমন্যতা হতে কমবেশি মুক্ত থাকতে পারবেন অথবা পারছেন। এ ধরনের মৌলিক পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করার এটাই সঠিক পথ।

কাকের ময়ূরপুচ্ছ অসুন্দর। গলার স্বর বাদে কাক অনেক সুন্দর। যেমন করে বিশ্রী পায়ের অংশ বাদে ময়ূর অনেক সুন্দর।

যে যেমন তার জন্য সেটাই সুন্দর। অন্যদের সফলতায় হতচকিত হয়ে স্টেপ বাই স্টেপ তাদের মতো হতে চাওয়া বা অন্যের উপর অযথা চড়াও হওয়া, দুনিয়ার সবকিছুকে ‘অপর’ ও শত্রু গণ্য করা, এসব হীনমন্যতার লক্ষণ।

যারা সমাজ গড়ার কাজ করবেন, তাদেরকে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে। ব্যক্তিত্ব হচ্ছে ব্যক্তির অন্তর্গত প্রতিভার বিকাশ। সততা ছাড়া সত্যিকারের কোনো কিছু অর্জন করা যায় না। সিনসিয়ারিটি ছাড়া ব্যক্তিত্বের বিকাশ অসম্ভব।

আসুন, অপরকে সম্মান করি। একইসাথে নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। আসুন, প্রত্যেকে আমরা আত্ম-উপলব্ধির আলো জ্বালিয়ে খুঁজে নেই নিজ নিজ যোগ্যতা ও অবদান রাখার ক্ষেত্র। আসুন, নিজ নিজ আদর্শ ও মূল্যবোধকে এই জীবন চলার পথে গাইডেন্স হিসাবে আঁকড়ে ধরি।

অন্যকে অনুসরণ করে সৃজনশীল হওয়া যায় না। কিন্তু পণ্ডিত হওয়া যায়। সাহিত্য যারা পড়ায় তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো লেভেলের পণ্ডিত, যদিও তারা নেসেসারিলি সাহিত্যক নন। একই কথা দর্শন যারা পড়ান তাদের জন্যও প্রযোজ্য। একই কথা বিজ্ঞান যারা পড়ান তাদের জন্যও প্রযোজ্য। রুটিনমাফিক গবেষণা করে পদোন্নতি নেয়া গেলেও গবেষক-জ্ঞানী হতে হলে রুটি-রুজির প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে উঠে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবেদিতপ্রাণ হতে হয়।

আজকের দিনে সমাজকর্মীদের তাই ক্রিয়েটিভ হতে হবে। ইনোভেটিভ হতে হবে। জোম্বিমার্কা অন্ধ-অনুসারীদের দিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াশীল রেজিমেন্টেড দল পরিচালনা করা হয়তো সম্ভব। কিন্তু টেকসই ও উপযোগী সমাজ পরিবর্তনের জন্য যারা কাজ করবেন, তাদেরকে হতে হবে সত্যিকার অর্থে প্রো-অ্যাক্টিভ এবং সাফিশিয়েন্টলি পজেটিভ।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *