দেখা হলে লোকজন বলে, আপনার লেখা পড়ি। কিন্তু ইদানীং আপনার লেখা পাচ্ছি না। আপনি কি লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছেন?
আসলে আমি এখন অফলাইন যোগাযোগকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। অনলাইনে দেয়া একটা লেখা অনেকেই পড়ে। তাতে ওভারঅল কিছু কাজ তো হয়। সঠিক। কিন্তু ফেইস-টু-ফেইস বসে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মানুষের যত কাছে যাওয়া যায়, illocutionary act বলে ফিলসফি অব ল্যাঙ্গুয়েজে যে একটা কথা আছে, সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যায় না।
এইতো গতকাল রাত্রে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে দেখা করলাম একজন ব্যবসায়ী সুধীজনের সাথে। ঢাকা থেকে এসেছেন ব্যবসায়িক কাজে। ব্যস্ততার মাঝেও সময় দিলেন। বসালেন চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে দামী হোটেলে। কথা হলো অনেক। এর আগে সন্ধ্যায় মতবিনিময় হলো এইচ আল বান্নার সাথে এবং ওর হাতে গড়া ‘সার্জ বাংলাদেশ’ এর কিছু ইয়াং ছেলেমেয়ের সাথে।
কিছু একটা করা দরকার, এমনটা মনে করলেও কিছু একটা কন্সিসটেন্টলি করা হয়ে উঠছে না; এটি সত্য অনেকের জন্য। যারা সত্যি সত্যিই কিছু করছেন গণমানুষের জন্য, সার্জ বাংলাদেশের উদ্যোগ তেমনি ব্যতিক্রমী। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি তারা মুক্তচিন্তা চর্চাও করে। চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকায় তাদের ছিমছাম সুন্দর অফিসে বসে তাদের কথাগুলো শুনতে এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালই লাগছিল।
গতকাল দুপুরে আমার বাসায় আসলেন একজন ভিআইপি গেস্ট। বলা উচিত ভিভিআইপি গেস্ট। তিনি একটা কাজে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। একজনের মাধ্যমে সাক্ষাতের আগ্রহ জানানোর পরে তিনি নিজেই ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন করে এসেছেন। ছিলেন বেশ খানিকটা সময়। কথা বললেন অনেক বিষয়ে। সিএসসিএস এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানলেন। কিছু পরামর্শ দিলেন।
না, ছবি তোলা হয়নি। আলোচনার কোনো রেকর্ডও রাখা হয়নি। একজন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলাকে আমি পাবলিসিটির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। হরদম লোকদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে। কারো কাছে আমি যাচ্ছি। কেউ আমার কাছে আসছেন।
গতপরশু দিন আসলো দু’জন ছাত্র। একজন এসেছে ফেনী থেকে। উঠেছে চবি’র এক বন্ধুর মেসে। ফেনী থেকে আসা ছাত্রভাইটা পড়ে গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওর বন্ধুটি এখানে মেরিন সায়েন্স ফেকাল্টির স্টুডেন্ট।
তারা প্রশ্ন করেছে কিছু মৌলিক বিষয়ে। আলাপ হয়েছে প্রায় ঘন্টা দেড়েক।
তাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল তথাকথিত omnipotent paradox নিয়ে। খোদা চাইলে নিজের নিয়ম ভঙ্গ করতে পারেন কিনা। যদি পারেন তাহলে কী হয়, যদি না পারেন তাহলে এর তাৎপর্য কী হতে পারে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল আমাদের cognitive faculty’র রিলায়াবিলিটি বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। তাদের প্রশ্ন, আমরা কীভাবে বুঝবো যে আমরা যেভাবে যা কিছু জানি তা আসলেই সঠিক। প্রত্যেকে তো নিজের মতো করে অভিজ্ঞতা লাভ করে।
তাদের তৃতীয় প্রশ্ন ছিল মোরাল ফিলসফি নিয়ে। প্রত্যেকটা মোরাল সিস্টেম কিছু axiom বা স্বতঃসিদ্ধের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। স্বতঃসিদ্ধকে প্রশ্ন করা যায় না। স্বতঃসিদ্ধকে গ্রহণ করে নেয়ার পরে (নৈতিকতার) উপরিকাঠামোকে, ফিলসফিতে যাকে আমরা নরমেটিভ এথিক্স বলি, সেটাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না।
এভাবে প্রত্যেক মোরাল সিস্টেমেরই নিজস্ব ও স্বতন্ত্র ধাঁচের বৈধতা বা এক্সেপটেবিলিটি থাকে। ব্যাপার যদি তাই হয় তাহলে কেউ ইসলামিক বা বিশেষ কোনো মোরাল সিস্টেমকে কেন দ্যা সুপেরিয়র বা অনলি এক্সেপটেবল বলবে? আসলে কি ইউনিভার্সেল মোরাল সিস্টেম বলে কোন কিছু আছে?
তাদের লাস্ট কোশ্চেনটাও ছিল খুব ইন্টারেস্টিং এবং ইমপর্টেন্ট। তারা, বিশেষ করে ফেনী থেকে আসা ছেলেটা জানতে চাইলো— সাধারণ মানুষেরা, যারা অত পড়াশোনা করে না বা যাদের অত পড়াশোনা করার সুযোগ নাই, কিংবা যারা আদৌ পড়াশোনা করতে পারে নাই, তারা কীভাবে সত্যকে জানবে? নলেজ জার্নি কিংবা ট্রুথ সিকিং বলতে জ্ঞানী-গুণীরা যা বুঝিয়ে থাকেন তা যাদের নাগালের বাইরে সেই লে-মেনদের কী হবে?
প্রশ্নের ধরন দেখেই বুঝতে পারছেন আলোচনাটা খুব ইন্টেনসিভ এন্ড এনগেইজিং ছিল। ‘মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র’ এর সাইটে এবং ‘যুক্তি ও জীবন’ ইউটিউব চ্যানেলে এসব প্রশ্নের উত্তর আমি বিভিন্ন সময়ে দিয়েছি। এখানে তাই আপাতত কিছু বলছি না।
আমি যেহেতু একটা ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই, সামাজিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করতে চাই, তাই সব বিষয়ে কথা বলা হতে বিরত থাকি। তাছাড়া, ওই যে বললাম, অনলাইন কাজের চেয়ে অফলাইন কাজকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া, এটার কারণে মাঝে মাঝে আমার এ’রকম অনলাইন-গ্যাপ হয়ে যায়।
আমি মনে করি, মূল কাজটা হওয়া উচিত অফলাইনে। সোশ্যাল মিডিয়ার অনলাইন উইন্ডো দিয়ে যা দৃশ্যমান করা যেতে পারে বড় জোর। Social Justice Warrior (SJW) টাইপের কিছু হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করো, নিজের প্রতি এবং আপনার প্রতি আমার পরামর্শ।
এক্সট্রোভার্ট বনাম ইনট্রোভার্টের মাঝামাঝি একটা পারসনালিটি টাইপ ইদানীং গড়ে উঠেছে। এটাকে বলা যায় টেক্সট্রোভার্ট। এক্সট্রোভার্ট পারসনালিটির এক ধরনের ইউটিলিটি আছে। ইনট্রোভার্ট পারসনালিটির অন্য ধরনের উপযোগিতা আছে। কিন্তু, সোশ্যাল জাস্টিস ওয়ারিয়র হওয়া ছাড়া এখনকার সময়ে উদ্ভূত এই টেক্সট্রোভার্ট পার্সোনালিটি সম্পন্ন লোকদের কোনো সামাজিক উপযোগিতা নাই।
এরা পলায়নপর, আক্রমণাত্মক এবং আলটিমেইটলি হতাশ। এ ধরনের নেগেটিভিটি অবসেসড পিপলদের দিয়ে কাজের কাজ কিছু হয় না। অনলাইন কমিউনিটির এইসব লোকজন একটা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে বসবাস করে। এইসব নেটিজেনেরা বাস্তব সমাজ ও জীবনে যতটা পজেটিভ ইম্পেক্ট ফেলে তারচেয়ে অনেক বেশি নেগেটিভিটি এবং টক্সিসিটি এরা প্রডিউস করে। নীতিনান্দনিকতা সর্বস্ব একটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে এরা বসবাস করে।
কারা কারা এই ক্যাটাগরিতে পড়ে তা মোর স্পেসিফিকলি বলে আমি ‘চাকরী হারাতে চাই না’। চেষ্টা করছি এ ধরনের অলস ও ফাঁপা বুদ্ধিজীবী হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচতে। দোয়া চাই।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
হাসান ইমাম: লেখাটি পড়ে ভাল লেগেছে! But what makes you seek dua from people? Does dua has have any utility in philosophical realm? Would appreciate if you could explain please. Thanks.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আনসার্টেইনটি’র জগতে চান্স একটা বিরাট ব্যাপার। আনসারটেইনিটিকে ইগনোরেন্স বলা যায়। চান্সকে বলা যায় হোপ। সেকুলার এইসব সেন্সে দোয়া করা বা চাওয়া হলো উইশ করার শামিল।
ইসলামিক সেন্সে সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আমরা নিজেদের ভাল চাই। তাই আমরা দোয়া চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি দোয়ায় বিশ্বাসী।
এইচ আল বান্না: এজন্যই আমি অফলাইনেই কাজ করি, অনলাইনে যাস্ট ব্র্যান্ডিং করি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: অনলাইন-অফলাইন দুদিকেই কাজ হওয়া উচিত। এগুলো পরস্পরের পরিপূরক। তবে অনলাইনের কাজ হওয়া উচিত অফলাইনের সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে। মূল কাজ অফলাইনেই হতে হবে। সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক কিছু কাজকর্ম হতে পারে, সেই ধরনের উপযোগী সেক্টর বা ফিল্ডে। সামাজিক আন্দোলন যদি অনলাইনেই সীমাবদ্ধ থাকে তখন সেটা সোশ্যাল জাস্টিস ওয়ারিয়রদের পরস্পরের বিরুদ্ধে ফাইট করার একটা আড্ডা খানা হয়ে দাঁড়াবে। কাজের কাজ কিছু হবে না, অথবা কাজ যা হবে অকাজ হবে তারচেয়ে অনেক বেশি।
Zim Tanvir: SJW are activists who do activism both online and offline. Their definition is to do with promoting liberal left-wing values, not online activism. I don’t know what your post has to do with SJWs.