ইসলামী সমাজ বলতে আমরা যা বুঝি তার নিম্নোক্ত দিকসমূহ (আসপেক্টস) থাকতে হবে:
(১) আধ্যাত্মিক
(২) সামাজিক
(৩) বুদ্ধিবৃত্তিক
(৪) সাংস্কৃতিক
(৫) অর্থনৈতিক
(৬) রাজনৈতিক ও
(৭) সামরিক।
এই সাত পদ্ধতি বা ধারায় বিশ্বে অতীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ হয়েছে, বর্তমানে হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এইসব দিক নিয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ হতে পারে। এগুলো একাধারে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজের পদ্ধতি এবং ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এগুলো পরস্পরের পরিপূরক।
এই পদ্ধতিসমূহের শুধুমাত্র যে কোনো একটি বা দুটির সমন্বয়ে কাজ শুরু করা ও অনেকটা এগিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও এক পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে বাদ পড়া বা বাদ দেয়া দিকসমূহ নিয়ে কাজ শুরু করতেই হবে। এই ধারা বা বৈশিষ্ট্যগুলোর কোনো একটিকেও যদি স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া বা স্থগিত রাখা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সংগঠন বা সমাজে মারাত্মক আত্মবিরোধ ও একদেশদর্শিতার সৃষ্টি হবে। এবার আসুন, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে সম্ভাব্য কনসেপ্ট গ্রুপ যেসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে কাজ করবে তা নির্ণয় করার চেষ্টা করি।
সামরিক ধারা বা এপ্রোচে কাজ করার প্রসংগ মূলত ইসলামী রাষ্ট্রের অনুষঙ্গ। অতএব, এ ধারায় কাজ করার সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তা আমাদের অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে নাই। আধ্যাত্মিক ধারায় কাজের মাধ্যমে এ দেশে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। আধ্যাত্মিক ধারার পাশাপাশি অন্যান্য ধারা বা দিকসমূহে উল্লেখযোগ্য কাজ না হওয়ার কারণে ‘মাইনরিটি ইসলাম ইন দ্য মুসলিম মেজরিটি বাংলাদেশে’ সেক্যুলারিজমের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গও ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসাবে গ্রহণ না করে নিছক (শ্রেষ্ঠ) ধর্ম হিসাবে বিবেচনা করে। তাছাড়া আধ্যাত্মিকতা মূলত ব্যক্তিগত পর্যায়েই চর্চার বিষয়।
জামায়াতে ইসলামী দাবি করে, ইসলামে রাজনীতি আছে, ইসলামী হতে হলে রাজনৈতিকও হতে হয়– এটি বাংলাদেশের আলেম সমাজকে বুঝাতে তাদের পঞ্চাশ বছর লেগেছে। তাদের এ দাবি যে সঠিক তার প্রমাণ হলো এখন তাবলীগ জামাত ছাড়া বাংলাদেশের সব ইসলামী দল ও প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক শাখা আছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো পাগলকে ভালো করতে গিয়ে ভালো মানুষ পাগল হয়ে যাওয়ার মতো পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ আন্দোলন হিসাবে যাত্রা করা জামায়াতে ইসলামী এখন এমনকি তাদের নিজ দাবি মোতাবেকই একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, যাদের আদর্শিক পছন্দ হচ্ছে ইসলাম। জামায়াতসহ ইসলামী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসমূহ সমান্তরাল ধারায় অপরাপর প্রয়োজনীয় ধারা বা দিকসমূহে কাজ না করা বা বিকাশ লাভ না করার ফলশ্রুতিতে এক ধরনের অনাকাঙ্খিত ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের বিষয় মূলত ব্যক্তিনির্ভর। ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে এ বিষয়ে সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইসলামের অর্থনৈতিক যোগ্যতাকে সফল উদ্যোগ ও উদাহরণ সৃষ্টি করেই সাধারণ জনগণকে বুঝাতে হবে, আশ্বস্ত করতে হবে। এ দায়িত্ব ইসলামপন্থীদের। এ কথা সত্য। সাথে সাথে এটিও সমভাবে সত্য, এ দায়িত্ব ইসলামপন্থীদের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকামী সংগঠন যদি ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তা সংগঠনটির বিকাশ ও পরিচালনায় বিরোধ সৃষ্টি ও বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আমাদের বিবেচনার জন্য অবশিষ্ট থাকলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারা। কনসেপ্ট গ্রুপ বুদ্ধিবৃত্তিক ধারায় কাজ করবে। ইসলাম সম্পর্কে বিদ্যমান সকল ভুল ধারণার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে, বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে ইসলামের জাগতিক যোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করবে। প্রচলিত পন্থায় একাডেমিক ও গণসেমিনার, স্টাডি সার্কেল আয়োজন করা হবে। কনসেপ্ট গ্রুপের থাকবে ব্যাপকভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা ও গণমাধ্যম। দেশব্যাপী পাঠাগার ও আর্কাইভ প্রতিষ্ঠাকে আন্দোলন হিসাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি নন-ট্র্যাডিশনাল এপ্রোচে (এনটিএ) ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এই গ্রুপের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও কর্মসূচি থাকবে না। এটি হবে অনেকটাই শিথিল কাঠামোর। ইন্টারেক্টিভ ইন্টেলেকচুয়্যালিটি হবে এর কার্যনিয়ামক।
কনসেপ্ট গ্রুপের শাখা বা সহযোগী হিসাবে অথবা স্বতন্ত্র গঠন কাঠামো নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারায় দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। সামাজিক ধারায় কাজ করার জন্য education, tolerance, respect, compassion এই চারটি বিষয়কে সামনে নিয়ে ETRC নামে কোনো সংগঠন হতে পারে। প্রচলিত ইসলামী সংগঠনসমূহের সাংগঠনিক এককেন্দ্রিকতাকে পরিহার করে শুধুমাত্র আদর্শিক সাযুজ্যতাকেই যথেষ্ট মনে করতে হবে। সিঙ্গেল জায়ান্ট ট্রি মডেলের পরিবর্তে ওয়াইড গার্ডেন মডেলকে বিবেচনায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্রমধারা এবং বৈচিত্রময়তাই একবিংশ শতাব্দীতে সময়ের দাবি। অতএব, একটি, দুটি বা কয়েকটি নয়; প্রয়োজনে দশজন মিলে বিশটা সংগঠন কায়েম করা ও চালিয়ে নেয়ার কথা ভাবতে হবে। একই লোকেরা বিভিন্ন ফোরাম, ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় ও ভাবমূর্তি নিয়ে কাজ করবে। যে কোনো পর্যায়ে কোনো সংগঠন হবে কতিপয় সংগঠনের সংস্থা।
সাংস্কৃতিক ধারায় যারা কাজ করবে তারা ইসলামের মৌলিক ভাবধারা ও আবশ্যকীয় ব্যক্তিগত ইবাদত (যেমন– নামাজ) ছাড়া অন্য কোনো নিয়ন্ত্রণের অধীন থাকবে না। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় যেমন সাতার কাটা যায় না, তেমনি অসাংস্কৃতিক ব্যক্তির নেতৃত্বের অধীনে কখনো শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ধারা সৃষ্টি হওয়া এবং সেটি টিকে থাকা অসম্ভব। চোখ বাঁধা অবস্থায় মার্শাল আর্টিস্টরা যেভাবে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে লড়াই করে, বর্তমান সময়ের সংস্কৃতি কর্মীদেরকেও তেমনি শাণিত বিবেক ও বিবেচনাবোধের আলোকবর্তিকা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। যুদ্ধের ময়দানে যেমন মারো অথবা মরো পরিস্থিতিকে স্মরণ করে প্রাণপণ লড়াই করে যেতে হয়, সংস্কৃতি কর্মীদেরও সেভাবে অদম্য মনোবল নিয়ে কাজ করতে হবে। ধর্মবাদীরা কী বলবে– তা নিয়ে পেরেশান হওয়া যাবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, ইসলামী আন্দোলনপন্থীদেরও বৃহত্তর অংশ, সংস্কৃতি, বিশেষ করে বিনোদন-সংস্কৃতির ব্যাপারে (রক্ষণশীল) ধর্মবাদী।
ব্যক্তিগতভাবে শুভানুধ্যায়ীরা কনসেপ্ট গ্রুপের রূপরেখা দেয়ার জন্য প্রায়শ বলেন। তাই এই লেখা। এটি একটি প্রস্তাবনা ও আহ্বান। যেহেতু ইসলামী আন্দোলনের প্রচলিত ধারা নিজ থেকে ও প্রয়োজনীয় মাত্রায় সংশোধন হবে না, তাই যারা ‘চেঞ্জ ফ্রম উইদিন’ ফর্মূলা নিয়ে আছেন, তারা নিছক দায়দায়িত্ব বা ঝুঁকি এড়িয়ে চলছেন অথবা ভুলক্রমে নিছক সময় নষ্ট করছেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এ মুহূর্তে পরিস্থিতিগত দিক থেকে প্রতিকূলতা ও প্রয়োজনীয় মানের নেতৃত্বের অভাবে বিকল্প কোনো প্লাটফরম গঠনও সম্ভব নয়। অথচ, অন্যরা কী করে, দেখি না কী হয়, সময় আসুক, পরে দেখা যাবে– এসব ধ্যানধারণারও কোনো সুযোগ নাই। হকের দাওয়াত, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধের জন্য সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার কোনো বিরতি নাই, বিকল্প নাই। অনুকূল সময়ের জন্য অপেক্ষার কোনো সুযোগ নাই। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম হতে আমরা বিরত থাকতে পারি না। এ জন্য যে ‘নো অল্টারনেটিভ’ তত্ত্ব দেয়া হয়, তা শুধুমাত্র অক্ষম, দুর্বল ও অবুঝের কাছেই গ্রহণযোগ্য পন্থা হতে পারে।
এরিস্টটলেরর ভাষায়, what we have to learn to do, we learn by doing। তাই আল্টিমেইটলি কী হবে তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজ নিজ অবস্থান ও সংগঠন-সংশ্লিষ্টতাকে বজায় রেখেই আসুন চিন্তার পরিশুদ্ধি ও সবলতা সৃষ্টির জন্য কনসেপ্ট গ্রুপ গঠন করে কাজ করতে থাকি। সময়ের পরিক্রমায় এর গতি কোনদিকে যাবে তা ভবিষ্যতই বলে দিবে। আল্লাহ হাফেজ।
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
ঈগল: বিভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করা সময়ের দাবি। আমি সম্পূর্ণ একমত। সংস্কৃতির রূপরেখা নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। আপনি যে ধারাগুলি নিয়ে আলোচনা করলেন তার মধ্যে সংস্কৃতির বিষয়টি বেশ জটিল।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিদেশ থেকে একজন ভাই গত কয়েকদিন ফোনে কথা বলছিলেন। উনাকে পাঠাবার জন্য এটি লিখেছি। লেখা শেষ হবার পর ভাবলাম নেটে দিয়ে দেই। নামাজ পড়ে এসে উনাকে এর লিংক দিয়ে মেইল করেছি। ইসলামপন্থীরা ইসলাম বুঝলেও সংস্কৃতির অ-আ ক-খও না বুঝে ইসলামী সংস্কৃতির ভালো-মন্দ নিয়ে বই লিখেন, প্রশিক্ষণ শিবিরে আলোচনা করেন, ফতোয়া দিতে থাকেন। তাই, সংস্কৃতি নিয়ে সংস্কৃতিকর্মী নন– এমন ব্যক্তিবর্গের বেশি চিন্তা বা দুশ্চিন্তা না করাই ভালো। যেমন করে যাদের পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী অর্থনীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য ধারণা নাই তাদের উচিত নয় ইসলামী অর্থনীতি নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা। ভালো থাকুন।
আবু সাইফ: “ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকামী সংগঠন যদি ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তা সংগঠনটির বিকাশ ও পরিচালনায় বিরোধ সৃষ্টি ও বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
আমার মনে হয়, মাথাব্যথার জন্য মাথা বাদ দেয়ার চিন্তা না করে ব্যথা সারানোর চিন্তা উত্তম। সংগঠনের বিকাশ ও পরিচালনায় বিরোধ সৃষ্টি ও বাধার কারণ যেন না হয় তার সমাধান বের করতে হবে।
“সিঙ্গেল জায়ান্ট ট্রি মডেলের পরিবর্তে ওয়াইড গার্ডেন মডেলকে বিবেচনায় রাখতে হবে।”
কথাটি তুলে রাখলাম, পরে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বর্তমান প্রধান ইসলামী সংগঠনটির কাঠামো হলো জায়ান্ট ট্রি মডেলের। যখন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের প্রোগ্রামে যাচ্ছিলাম তখন বাসের মধ্যেই সহকর্মীদের বলেছিলাম, এ ধরনের নাযিলকৃত অর্থ ও নেতৃত্ব দিয়ে অন্তত পেশাজীবীদের কোনো শক্তিশালী সংগঠন হতে পারে না। দেখা গেল, বিরাট একটা প্রোগ্রাম করার পর আর কোনো খবর নাই। কারণ, ওই কেন্দ্রনির্ভরতা। কাণ্ড বা শাখা-প্রশাখা তো সব সময় মূল বা প্রধান কাণ্ডের রসদ ও নির্দেশনার মুখাপেক্ষী থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই মূলে বা প্রধান কাণ্ডে অর্থাৎ গোড়ায় যখন কোনো গলদ হয় তখন সব শাখা-প্রশাখাই প্রভাবিত, অস্থির এমনকি স্থবির হয়ে পড়ে।
বর্তমানে যে ধারায় কাজ চলছে তা সর্বাত্মকবাদী। উত্তরাধুনিকতা বলুন আর যা-ই বলুন না কেন, এখন যুগ ও সময় হলো স্বাধীনতার, বৈচিত্র্যের ও ব্যক্তি-উদ্যোগের। সামষ্টিকতার উপর প্রচলিত ধারায় অতি গুরুত্বারোপের বিষয়টা একটা ক্যাটাগরি মিসটেক। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় যে ধরনের আনুগত্য ও সামষ্টিকতার (প্রশাসনিক) প্রয়োজনীয়তা, তা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নানামুখী প্রচেষ্টার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না।
আনুগত্যের সাথে নেতৃত্বের ভারসাম্যের যে কথা প্রচলিত ধারায় অতি গুরুত্ব সহকারে বলা হয়, তা ভুল। আনুগত্যের সাথে মূলত পরামর্শের ভারসাম্য থাকা জরুরি। এই বিশেষজ্ঞ-পরামর্শ প্রথা তথা থিঙ্কট্যাংক সিস্টেম সর্বপর্যায়ে প্রবর্তন করতে হবে। ভালো থাকুন।
রেজা হাসান: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সুন্দর একটি বিষয়ের অবতারণা করলেন, কনসেপ্টটি একেবারে নতুন নয়। তবে বাংলাদেশে এটি এক্কেবারে নতুন, কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয় অবশ্যই। আপনারা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তারিক রমাদানের সাইট দেখতে পারেন। দেখতে পারেন তার বেশ কটি আলোচনা ইউটিউবে সার্চ দিয়ে। তবে Iiman & Spiritualism লেকচারটি অসাধারণ! তাঁর গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাল্টিডিসিপ্লিনারি নলেজ ইন্টিগ্রিশনের কাজ করছে, যা আপনার চিন্তার সাথে মিল আছে। তবে আপনি কেন মাথা কেটে ইন্টেলেকচুয়ালিটির চর্চা করতে চাচ্ছেন জানি না। আত্মঘাতী হবে! আমার মতে, এমন বিকল্প ও আধুনিক চিন্তা বা গবেষণার আশু প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু সর্বাগ্রে প্রয়োজন সকল ইসলামপন্থীদের ইসলামের পরম সৌন্দর্য পরমত সহিষ্ণুতা চর্চা করা, সত্যি বড়ই আবশ্যক। সকল ইসলামপন্থীদের একই ছাতার নিচে আসতে হবে। তারা যদি তা না পারেন তাহলে এটি সত্যি তারা এসব করছেন দুনিয়ার লাভের জন্য। যদি তারা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকেন তবে তা এক্কেবারে জলের মতো সহজ হবে। সুতরাং, জনসাধারণকে দোষ না দিয়ে তারা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারবেন কী– তারা যা করছেন তা শুধু আল্লাহকেই সন্তুষ্ট করার জন্য করছেন! কী বলেন, পারবেন কী এই কাজটি করার জন্য নামতে? আমি আছি আপনার সাথে এবং তারপর আপনার পরিকল্পনার কাজে আমি নিজেকে আত্মনিয়োগ করবো, কথা দিচ্ছি। সবাই সাক্ষী থাকবেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি কি ইমাম হাসান রেজা, চবি উদ্ভিদ বিজ্ঞান? ইন্টেলেকচুয়্যালিটি প্রসংগে ভাই মাথা কাটা যাওয়ার কথা আসলো কেন? সব ইসলামিস্ট একছাতার নিচে আসা অতি আবশ্যক মনে করি না। যে যার জায়গায় থাকুক। কিছু কমন এজেন্ডা নিজের মতো করে গ্রহণ করলেই হলো। বহুত্বকে নিয়েই ঐক্য। ভালো থাকুন।
Salam: মাল্টিডিসিপ্লিনারি নলেজ ইন্টেগ্রেশন বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই টুকটাক চিন্তা মাথায় আসে। হঠাৎ একদিন খুঁজতে খুঁজতে পেলাম এ নিয়ে মিডলইস্টের আরো দুয়েকজন কিছু কাজ করেছেন, নাম মনে করতে পারছি না কারো এই মুহূর্তে। তারিক রামাদান বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন জেনে ভাল লাগলো। সময় করে ঘেঁটে দেখবো। তথ্যটির জন্য ধন্যবাদ!
ব্লগ ইন্টারনেটের বদৌলতে তারিক রামাদানের নামডাক শুনলেও তাঁর ফরমাল চিন্তাভাবনার সাথে একদম অপরিচিত।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জনাব সালাম, তারিক রমাদানের একটা প্রবন্ধ বা তত্ত্বের কথা শুনলাম, বিষয় শিরোনাম হলো ‘হালাল পুঁজিবাদ’। যদিও কোনো কিছু না পড়ে ধারণা করা ঠিক নয়। আমি উনার প্রবন্ধটা পড়ি নাই। শিরোনাম দেখেই নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। গত কদিন আগে লেখা এক পোস্টে এ ধরনের (হালাল পুঁজিবাদ) টার্মকে হাস্যকর হিসাবে মন্তব্য করেছি। এক সময় শোনা যেত, ইসলামী সমাজতন্ত্র! এখন শোনা যায়, ইসলামী গণতন্ত্র! হালাল পুঁজিবাদ!
মনসুর: + মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, যাযাকাল্লহু খাইরান, ধন্যবাদ। যদিও আপনার কনসেপ্ট গ্রুপের প্রস্তাব পশ্চিমা অমুসলিম ধ্যানধারণা পুষ্ট, তথাপি বৃহত্তর মুসলিম ঐক্যের স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। শুরু করেন সাথে আছি, ইনশাআল্লাহুল আযীয। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেদায়েত দিয়ে উম্মতে মুহাম্মাদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিসাবে কবুল করে দুনিয়া ও আখেরাতে সকল নেক কামিয়াবী দান করুন। আমীন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভাই মনসুর, আমি বোধহয় একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যিনি নিজ এলাকার বাইরে কখনো যাননি, যাওয়ার কোনো চেষ্টাও করেননি। ব্লগে লিখি পড়ি ,এই যা। এসব লেখা তারিক রমাদান বা কারো সাথে মিলে যাওয়া, অন্তত আমার দিক থেকে, নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার। আমি যা লিখেছি, লিখি তা আমার অন্তর্গত প্রেরণার ফলশ্রুতি। কারো সূত্রে কিছু লিখলে সাধারণত তাকে একনলেজ করি। আশাবাদ জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
যুমার৫৩: মোজাম্মেল ভাই, আপনি তারিক রমাদানের ‘হালাল পুঁজিবাদ’ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা করেছেন। তারিক রমাদান আসলে ‘হালাল পুঁজিবাদ’ শব্দটিকে বিদ্রুপ অর্থে ব্যবহার করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, পশ্চিমারা কখনোই ইসলামিস্টদেরকে শত্রু মনে করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামিস্টরা পশ্চিমা পুঁজিবাদকে মেনে নেবে নতুন কোনো নাম দিয়ে (যেমন ‘হালাল পুঁজিবাদ’)। তিনি উদাহরণ দেখিয়ে বলেছেন, সৌদি আরবে গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকার না থাকলেও এ নিয়ে পশ্চিমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, বরং সৌদিরা পশ্চিমাদের মিত্র। এর কারণ হলো সৌদিরা পশ্চিমা পুঁজিবাদের বিরোধিতা করে না। তিনি বলেন, ‘Halal capitalism’ is dangerous. We are just playing with words. The west has no problem if the islamist accept their economic order. অনুগ্রহ করে ভুল বোঝাবুঝি দূর করুন। আমি আপনাকে ভিডিওটা দিচ্ছি। প্রথম পাঁচ মিনিট শুনলেই ভ্রান্তি কেটে যাবে।
https://www.youtube.com/watch?v=w4uT7QLRdV0
যুমার৫৩: তারিক রমাদান বলছেন, মুসলিমরা কখনই বিজয়ী হতে পারবে না, যতক্ষণ তারা পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা (economic order) উৎখাত না করবে। এটা না করে ইসলামিস্টরা যদি স্রেফ পশ্চিমা পুঁজিবাদের গায়ে ‘ইসলামী’ সিল লাগিয়ে কার্যত ঐ একই অর্থব্যবস্থা মেনে নেয়, তাহলে কোনোদিনও বিশ্বে ইসলাম বিজয়ী হতে পারবে না। পশ্চিমারা এটা জানে বলেই সৌদি বা ঐ ধাঁচের ইসলামিস্টদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের কোনো আপত্তি নেই। কাজেই বুঝতেই পারছেন তিনি ‘হালাল পুঁজিবাদের’ ঘোরবিরোধী। ভাই, সৌদিপন্থী সালাফিরা তারিক রমাদানকে ঘৃণা করে। তাদের কথা শোনার আগে বিস্তারিত যাচাই করে নেবেন। আমি দুঃখিত দুইবার মন্তব্য করার জন্য। কিন্তু তারিক রমাদানের বক্তব্য সম্পূর্ণ উল্টোভাবে আপনার কাছে পৌঁছেছে– এটা জেনে খুবই খারাপ লাগছিলো।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: উপরের এক মন্তব্যের উত্তরে বলেছি, আমি শিরোনামের বাহিরে বিষয়টি যাচাই করিনি। সেজন্য ‘জিহাদ অথবা গণতন্ত্র’ শিরোনামের পোস্টে ‘হালাল পুঁজিবাদ’ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করলেও বলিনি যে, তা তারিক রমাদান বলেছেন। পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্রের জন্য ফানা হয়ে যায়। অথচ সৌদীদের ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নাই। সারা জোসেফ দোহা ডিবেটে বলেছেন, এসব হচ্ছে তাদের ‘ডেমোক্রেটিক এক্সেপশানালিজম’। আমি অতি সাধারণভাবে দুটি অবস্থানকে এড়িয়ে চলি– (১) এপলোজেটিক ট্রেন্ড এবং (২) পিউরিটানিক ট্রেন্ড। সৌদী-শিক্ষিতগণ সাধারণত এক ধরনের সেক্যুলার সুন্নাহ চর্চা করেন। আমার বেশ কিছু লেখায় আমি এই পরিভাষাটি ব্যবহার করেছি। এই সেক্যুলার সুন্নাহবাদীরা আকীদার ব্যাপারে ওভার-সিরিয়াস, কিন্তু হুকুমতের বেলায় রিলাক্ট্যান্ট। আপনার সংশোধনী ও সতর্কীকরণের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
শামিম: “সৌদী-শিক্ষিতগণ সাধারণত এক ধরনের সেক্যুলার সুন্নাহ চর্চা করেন। আমার বেশ কিছু লেখায় আমি এই পরিভাষাটি ব্যবহার করেছি। এই সেক্যুলার সুন্নাহবাদীরা আকীদার ব্যাপারে ওভার-সিরিয়াস, কিন্তু হুকুমতের বেলায় রিলাক্ট্যান্ট।”
এক্সাক্টলি! এ রকম একটা শব্দ কীভাবে বের করতে পারেন! হুকুমাত সব ফিতনা মনে করেন উনারা, এ রকম মনে হয় কথা শুনে!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলামের দিক থেকে বিবেচনা করলে সৌদী আরবের ভেতরকার সামাজিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। একজন ঘনিষ্ঠ শ্রদ্ধেয় আলেম গতকাল এই সেক্যুলার সুন্নাহ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা বললেন। মক্কার হারাম শরীফ হতে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে মরুর মাঝে হাইওয়ের পাশে বিশ্রাম নেয়ার একটি জায়গা আছে। উনি যখন সেখানে যান তখন কোনো বিদেশী ছিল না। সৌদী নাগরিকরা বসে বড়সড় হুক্কা টানছেন। বেশ কয়েকটি বড় আকারের টিভি। সকল বয়সের সৌদীরা যে যার মতো রিমোট নিয়ে সব হিন্দি চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখছেন। আমাদের দেশে ডিশ কর্তৃপক্ষ কয়েকটি হিন্দি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউট করে যাতে একান্ত ঘরোয়া পরিবেশে (বেপর্দা অবস্থায়) নারীদের দেখানো হয়। উল্লেখ্য, সৌদী আরবে কোনো বেসরকারী টিভি চ্যানেল নাই।
উক্ত শ্রদ্ধেয় আরো বললেন, অধিকাংশ যুবক লম্বা চুল রাখে এবং থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরে নামাজ পড়ে। দাড়ি না রাখার প্রচলন ব্যাপক। এসব বিষয়ে বিশেষ করে শ্রদ্ধেয় প্রফেসর তারিক রমাদানের ভাষায় ‘পেট্রো-মনার্কি’র বিষয়ে সেখানকার ভাতানির্ভর আলেমরা এক ধরনের মিউচুয়্যাল এক্সক্লুশনের নীতি বজায় রেখে চলেন। কিন্তু তারা লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেন। কারণ, তাদের আকীদা খারাপ। অর্থাৎ তারা শিয়া। অথচ হিজবুল্লাহ হলো হামাসের মতোই ইসরাইলের আতংক! এবার বুঝুন!!
অভিযাত্রিক: চমৎকার প্রস্তাবনা। আমাদের ক্ষেত্রে এখানে একটা সমস্যা কাজ করবে, যেটা জাতিগত চরিত্রের সাথে জড়িত। যখন বুদ্ধিবৃত্তিক সেক্টরটা ভালো কাজ করবে, তখন রাজনৈতিক অথবা অন্য সেক্টরে ভালো করা লোকজন মনে করবে ঐখানে আমার বা আমাদের জড়িত হওয়া দরকার, না হলে বুঝি এটা আমার বা আমাদের অযোগ্যতা প্রমাণ করবে। একই কথা অন্য সেক্টরগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। যেমন রাজনৈতিক সেক্টর ভালো করলে তখন প্রফেসররা নেতা হওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করবেন। অথবা অর্থনীতি ভালো করলে গায়ক-লেখকরা কোম্পানির ডাইরেক্টর হওয়ার জন্য। অবচেতন অহমিকা ত্যাগ এবং আত্মপোলব্ধির বিকাশ ছাড়া কম্পার্টমেন্টালাইজ করে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট সম্ভবপর না। অথচ বর্তমান বিশালতর কর্মক্ষেত্রে শ্রমবন্টন ছাড়া টিকে থাকাও অসম্ভব।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যেমন– রাজনৈতিক ইসলামের পক্ষের একমাত্র গ্রহণযোগ্য ও সাড়াজাগানো গণবক্তা ছিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। অবশেষে তাঁকে দখল করা জরুরি মনে করা হলো। না করলে তিনি যদি ‘কিছু একটা’ করে বসেন! সমস্যা যা-ই হোক, আমার এক সহকর্মীকে যেমনটি আমি বলেছি, ‘we have to…’ অর্থাৎ আমাদের পারতেই হবে। যাদের এখনো বয়স আছে অথবা অশেষ আশাবাদ আছে তারা ‘চেঞ্জ ফ্রম উইদিন’ এ আস্থা রেখে অপেক্ষা করতে পারেন। কিন্তু আমি এবং আমার মতো কারো কারো সময় নাই, now is the only time and we just have to do it [in no time]. Now or never [in our lifetime].
প্রতিটা সেক্টর আলাদা আলাদাভাবে কাজ করবে। প্রতিটা ধারাই হবে এক একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ধারা। বিশেষ করে সামাজিক সহায়তামূলক ধারা, বুদ্ধিবৃত্তিক ধারা ও সাংস্কৃতিক ধারার উপর জোর দিতে হবে। যার যেদিকে পটেনশিয়্যালিটি আছে তার প্রতি লক্ষ্য রেখে কর্মোদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ঊর্ধ্বতনের পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও গাইডেন্সের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নাই। কাজে নেমে পড়লে অনুমোদন ও সহযোগিতা পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফুল-টাইমার বলতে ড. ইউসুফ কারজাভী তাঁর ‘প্রায়োরিটিজ অফ দ্য ইসলামিক মুভমেন্ট ইন দ্য কামিং ফেজ’ বইয়ে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন। এই বইটা একটা টোটাল গাইড বুক হওয়ার মতো।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
স্বপ্নচারী: মোজাম্মেল ভাই, যদিও প্রফেসর রমাদানের আলোচনা আপনি শুনেননি বলেছেন, আমি অনুরোধ করবো তার কিছু লেখা পড়তে। এটা শুধুই আপনার জ্ঞানের আর অন্তর্দৃষ্টিটা হয়ত আরো বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তার খোরাক পাবে, কিছু ব্যাপারে আপনি প্রশ্নবিদ্ধ হবেন আর ভাবতে থাকবেন আরো। দর্শনের মানুষগুলোর হয়ত কিছু বিষয়ে চিন্তা করা জরুরি। আপনি যেই লেভেলে ভাবতে পারেন/জানেন, আমার মতন ছোট মানুষ সেটা পারি না, তাই আমি আন্তরিকভাবেই এই অনুরোধ করছি– তার সাহিত্য সময় করে পড়বেন। আপনার প্রপোজালটা বেশ সময়োপযোগী বলেই অনুভব করছি। আসলেই কিছু ব্যাপারে সবার নিজস্ব গণ্ডি পেরিয়ে স্পেশালাইজেশনের প্রয়োজন– সময়ের তাগিদই এমন এখন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধন্যবাদ, চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। আমার এ প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য এই নয় যে, আগামী এত তারিখ থেকে আমি অমুক অমুককে নিয়ে এই এই কর্মসূচিভিত্তিক একটা কিছু করতে যাচ্ছি। এমনটি নয়। আবার এমনটি নয়– তাও নয়। আমি যা সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করি, তা হলো এ দেশীয় ইসলামপন্থীদের অতি আনুগত্যশীলতার কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যক্তি-উদ্যোগ গ্রহণে সীমাহীন জড়তা! এক ধরনের ধর্মীয় বাতাবরণের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটা মুসলিমই কি স্ব স্ব ক্ষেত্রে এক একটা সংগঠন ও আন্দোলন হতে পারে না? সবাইকে সব বিষয়ে এক জায়গায় আসতে বা এক হতে হবে কেন? সবাই যে যার জায়গায় থেকে একই আদর্শকে যার যার মতো ফুটিয়ে তুলতে বা সমর্থন দিতে পারে না?
‘ওয়াতাসিমু বি হাবলিল্লাহি জামিয়াহ’র মানে একজন আরেক জনের হাত ধরা নয়। বরং প্রত্যেকে আল্লাহর রজ্জু তথা ইসলামকে আপহোল্ড করাই বোঝায়। ‘উদখিলু ফিস সিলমি কায়াফফা’ বলতে যে সমর্পণের কথা বলা হয়েছে তা ব্যক্তির কাছে নয়, আদর্শের কাছে। আমি চাই, ব্র্যান্ডিংয়ের ধারা প্রতিষ্ঠিত হোক। এটি আত্মপ্রচার নয়, আত্মবিশ্বাস ও স্ব-উপস্থাপন। আমরা কী উপস্থাপন করবো? আমি যে মুসলিম, ইসলাম যে আমার আদর্শ, তা যে কোনো আদর্শের চাইতে অধিকতর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ও কল্যাণজনক– তা আমি আমার মতো করে তুলে ধরবো। এ কাজে আমাকে আল্লাহ তায়ালা যে যোগ্যতা দিয়েছেন তার ভিত্তিতে সমাজকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা ও দাবি করবো। এভাবে ইসলামের জাগতিক যোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নাজাতের আশায় আধ্যাত্মিকতায় সমর্পিত হয়ে থাকলে চলবে না। দোয়া করবেন। ভালো থাকুন।
মু. নূরনবী: সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমরা মার খেয়ে যাচ্ছি। আপনি যদি সুস্থ সংস্কৃতি না দেন, তাহলে অসুস্থ সংস্কৃতি সেখানে দানা বাঁধবেই।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সাংস্কৃতিক ধারাটা এতটাই শক্তিশালী হওয়া দরকার যে, এটি যেন ইসলামী আন্দোলনের মূল ধারা! সংস্কৃতির নামে কতক নীতি কপচালে তো আর হবে না।
আদর্শ + প্রযুক্তি = (আধুনিক তথা বর্তমান যুগে) ইসলাম। শুধু আদর্শ দিয়ে হবে না।
লাল বৃত্ত: এক একজন ব্যক্তি নিজেই যখন একটি যোগ্যতর সংগঠন হয়ে উঠবে এবং তার কর্ম যখন সমাজের মৌলিক চালিকার জীবনীশক্তি হিসেবে প্রকাশিত হয়ে এক ধরনের অপরিহার্যতা সৃষ্টি করবে তখন মানুষ আপনাতেই ঝুঁকে পড়বে ইসলামের মহান আদর্শে। আমরা আজো নিজেদেরকে ডায়নামিক এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রকাশ করতে পারিনি, যা আমাদের অতি রাজনৈতিকীকরণ এবং কূপমুণ্ডকতার প্রচণ্ড বহিঃপ্রকাশ। ব্যক্তি-উদ্যোগকে একদমই হাস্যাস্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় (কেবল ব্যবসা ব্যতীত, কারণ ঐ জায়গাটাকে বোধহয় দুনিয়াদারীর পার্ট হিসেবে বিবেচনা করে লোকে)।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার ফিল্ড অর্থাৎ সংস্কৃতি নিয়ে লিখলাম কিন্তু আপনার মন্তব্যে সংস্কৃতি নিয়ে কিছু বলেননি। এ বিষয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ আশা করছি। ভালো থাকুন।
লাল বৃত্ত: সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের অবস্থান ঠিক ঐ কৃষক বাবার মতো, যে তার সন্তানের শিক্ষার প্রয়জনীয়তা প্রচণ্ডভাবে উপলব্ধি করে, কিন্তু নিজের কোনো জ্ঞান না থাকায় কীসে সন্তানের মঙ্গল বা অমঙ্গল তা নির্ধারণ করতে পারে না। উপরন্তু কখনো কখনো মঙ্গলের কথা ভেবে এমন কিছু করে বসে যা হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়।
১। রাজনৈতিক মস্তিস্ক দিয়ে সংস্কৃতিকে পর্যালোচনা যেমন একধরনের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স তেমনি এই পর্যন্ত যারাই এইসব বিষয় নিয়ে বই লিখেছেন তাদের লেখায় সংস্কৃতি স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিজস্ব অবস্থান কিংবা বৈশ্বিক অবস্থান ও ভৌগোলিক ভিন্নতার পরিচায়ক হিসেবে যতটা না প্রকাশিত হয়েছে তারচেয়ে বেশি বিশ্লেষিত হয়েছে নিজ নিজ দর্শনগত অবস্থানের পরিচ্ছন্ন প্রকাশে।
২। সাংস্কৃতিক উপাদান কিংবা এর প্রয়োগিক পন্থা এবং প্রচলিত ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার– এই সবকিছুই নির্ভর করে জনগণের সাইকোলজিকে আমি কীভাবে এনালাইসিস করছি এবং কোনদিকে ডাইভার্ট করতে চাচ্ছি তার উপর। কিন্তু সকল সময়েই এই ক্ষেত্রটিকে কেবল মাত্র মনোরঞ্জন, অথবা সাময়িক বিনোদন, কিংবা পারমানবিক বোমার বিপরীতে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলের বুলেট হিসেবে ব্যবহার করায় তা যথেষ্ট মানে উন্নীত হওয়া তো দূরে থাক, দিনে দিনে অনেকটাই অবাস্তবতা এবং পঙ্গুত্ববরণ করে নিচ্ছে। তবে আমরা তা উপলব্ধি করতে বরাবরই ব্যর্থ। কারণ, নিজেরা যা করছি তা সম্পর্কে একটা উন্নাসিক মানসিকতা আমাদেরকে নিজেদের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করতে দিচ্ছে না।
৩। ব্যবসা যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক তেমনিভাবে সংস্কৃতিকেও একটি ব্যবসা হিসেবে না দেখে এটাকে সংগঠনবাদিতার সাথে সুস্পষ্টভাবে সম্পৃক্ত করে রাখার ফলে এই ক্ষেত্রটি কেবলমাত্র অর্থনৈতিক দারিদ্রতা সৃষ্টি করে। যার ফলে অনেক ইসলামপন্থী বাবা তার সন্তানের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও এই ক্ষেত্রে যেতে দিতে চান না (আমার আব্বু এর জলন্ত উদাহরণ)। অথচ যাকে আমরা বাতিল বলি তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক লাভজনক অবস্থান থাকার কারণেই তারা এতটা সফল। তাদেরকে সংগঠনের শেয়ারে টিভি চ্যানেল চালাতে হয় না।
৪। এক সময় মেয়েরা লাইন (প্রেম) করে নষ্ট হয়ে যাবে বলে তাদেরকে স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় পাঠানো হতো না (আমার নানার হক্কানী পরিবার এর জীবন্ত উদাহরণ)। যার ফলে অনেক সন্তানই ভালো মা পেলেও শিক্ষিত মা থেকে বঞ্চিত হয়েছে (শিক্ষায় সুশিক্ষা ও স্বশিক্ষা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে), যারা সমাজকে দেখেছে একটা ভিন্ন চোখে। সেই একই ফর্মুলা প্রয়োগ হয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের বেলায়। তারা নষ্ট হয়ে যাবে বলে একটা বদ্ধমূল ভয় তাড়িয়ে বেড়ায় মুরুব্বিদের। এবং এটা যে একেবারেই অমূলক তা নয়। কিন্তু তাই বলে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন না করে জ্ঞানার্জনের পথে কিংবা সাংস্কৃতিক বিকাশের পথে যদি বাঁধা সৃষ্টি হয়, সেটা ঐ নষ্ট হয়ে যাওয়ার চেয়েও ভয়াবহ এফেক্ট আনবে সোসাইটিতে। যা আমরা বোধহয় এখনো বিবেচনায় আনিনি।
৫। বাইনারি পদ্ধতিতে হারাম-হালাল নির্ধারণের মানসিকতায় এখনো স্টারিজমকে ফেলে দেয়া হয়। যার ফলে ধারণা করা হয়, একজন মানুষকে কখনোই স্টার বানানো যাবে না, বানাতে হলে পুরো দলকে বানাতে হবে। আমি এই মতকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করি না। কিন্তু সেলিব্রিটি না থাকলে মানুষ মগ্ন হয়ে তার কথাকে গ্রহণ করবে না। যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেলিব্রেটিজমকে নাকচ করতে হয়, তাহলে বলতে হবে ইউসুফ আল কারযাভীর বই সব বাতিল হোক। তিনি আলেম হতে পারেন, কিন্তু তিনি সেলিব্রেটি কিংবা স্টার। কিন্তু আমাদের ডাবল স্টান্ডার্ড কারযাভীকে তাঁর জায়গায় দাঁড় করাতে আপত্তি করবে না, কিন্তু আপত্তি করবে একজন সিঙ্গার বা অভিনেতাকে সেলিব্রেটি হিসেবে উপস্থাপনা করতে, এখানেই নাকি অহংকার জন্ম নেয়।
সমাজতন্ত্রের চেয়ে ইসলাম বেশি যৌক্তিক এজন্য যে ইসলাম ব্যক্তিকেন্দ্রিক পুঁজি বা ব্যবসাকে অনুমোদন দিয়েছে। অথচ সেই একই যুক্তি যদি আমি সাংস্কৃতিক, সামাজিক কাজ কিংবা অন্য কোনো ভালো কাজে প্রদর্শন করি, তাহলে তা বাতিল হয়ে যায়। এটা কেন হয় আমি তা ভালো করেই জানি। তা হচ্ছে অতিমাত্রায় সংগঠনবাদিতা। ডায়নামিক চিন্তা না থাকায় আমরা উত্তরণের উপায় না খুঁজে সন্তরণের উপায়, মানে সমস্যায় সাঁতার কেটেই তীরে যাবার কথা ভাবি।
মাত্র কয়েকদিন আগেই আমি আব্বুর সাথে এই নিয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি হা-হুতাশ করছিলেন যে আমরা তো আর নোংরা বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবো না, তাহলে চ্যনেলা চালাবো কী করে? আমি বললাম, আমাদের কি এমন প্রডাকশন হাউজ থাকতে পারে না যেটা নৈতিক প্রিন্সিপ্যাল মেনে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করবে? এবং চ্যানেলে প্রদর্শিত হওয়ার জন্য ডিসকাউন্টে সেই কোম্পানির উন্নত মানসম্পন্ন বিজ্ঞাপন নির্মাণের অপশন ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে কাজ হবে দুটো মানুষ বিজ্ঞাপনেও বিকল্প কিছু পেলো সেই সাথে কোম্পানিরও ফায়দা হলো। আর সবকিছুতে ইসলাম ইসলাম করে মানুষের বিরক্তির উদ্রেক না ঘটিয়ে জীবনবোধ ও মূল্যবোধের সম্প্রসারণ এবং মানবতার জন্য কল্যাণকর কাজ করে যাওয়াটাই আমার পরকালীন মুক্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
অবশ্যই এই কাজগুলো সংঘবদ্ধভাবে হওয়া উচিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে একটি সংগঠনকেই সব কাজ করতে হবে (এতে করে কাজের মধ্যে এককেন্দ্রিকতা অথবা অপূর্ণতা সৃষ্টি হবে), অথবা কারো লেজ হয়ে থাকতে হবে। বরং চিন্তা ও মনমানসিকতা ও মঞ্জিলে মাকসুদের ঐক্যই পারে সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনতে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি– এগুলো পরস্পর বিপরীত না হলেও স্বতন্ত্র। আপনি পেশাদারিত্বের কথা বলেছেন। টিকে থাকার জন্য পেশাদারিত্বের দরকার আছে বটে। কিন্তু পেশাদারিত্বের কারণেই নেতৃস্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণ ব্যবসা করেছেন যতটা, সে তুলনায় তাদের কোয়ালিটি প্রোডাক্ট নেই মোটেও।
যেমন তারা সাঈদী সাহেবের ক্যাসেট বের করেছেন। সাঈদীর জিনিস হলেই হলো। লোকেরা দেদারসে কিনেছে। সেগুলোর ফরম্যাট ও প্রেজেন্টেশনের যে উন্নত মান হওয়া দরকার– তা কিন্তু নাই। প্যারোডি গান বের করলেই চলার কারণে কোয়ালিটির কথা ভাবা হচ্ছে না তেমন। সংস্কৃতির অপব্যবহারের কারণে জনশক্তি নষ্ট হওয়ার আশংকার চেয়েও তাদের জীবননিষ্ঠ হিসাবে গড়ে উঠার সম্ভাবনাই বেশি। আপনার স্টার-ইজমকে আমি বলছি ব্র্যান্ডিং পলিসি হিসাবে, যা প্রচলিত অর্গানাইজেশনালিজমের বিপরীত। নিজের মনের কথা (যেমন– প্রডাকশন হাউজ, প্রায়োগিক বহুত্ববাদ ইত্যাদি) আরেকজনের মুখে শুনতে খুব ভালো লাগে! তাই না? এই প্রথম আপনি কোনো এক্সক্লুসিভ মন্তব্য করলেন! ধন্যবাদ।
লাল বৃত্ত: বয়স অল্প, শ্রদ্ধেয়রা স্বভাবতই ‘বেশি বুঝি’ বলে ধারণা করবে, তাই মুরুব্বি টাইপের লেখা ও কমেন্টস দেয়া থেকে সতর্কভাবেই দূরে থাকি।
“আপনি পেশাদারিত্বের কথা বলেছেন। টিকে থাকার জন্য পেশাদারিত্বের দরকার আছে বটে। কিন্তু পেশাদারিত্বের কারণেই নেতৃস্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণ ব্যবসা করেছেন যতটা, সে তুলনায় তাদের কোয়ালিটি প্রোডাক্ট নেই মোটেও।”
কোয়ালিটি প্রডাক্ট না থাকলে কি পেশাদারিত্ব থাকে? নাকি ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে সেটা হালাল হয়? আসলে কোয়ালিটি জিনিসটার প্রয়োজনীয়তা ক্রেতার মধ্যে যেমন নেই তেমনি বিক্রেতার মধ্যেও যথেষ্টভাবেই অনুপস্থিত। তার তো সুবিধাই বলা চলে। কারণ, কোয়ালিটি প্রডাক্টের উৎপাদন খরচ বেশি হলে লাভ তুলনামুলক কম হবে।
আসল বিষয় হচ্ছে কোয়ালিটি কি দুনিয়াবি না পরকালীন, সেটাই তাদের কাছে আন্তরিক বিবেচ্য বিষয়। পরকালীন কোয়ালিটি হচ্ছে জিনিসটা কতটুকু দ্বীনের জন্য এবং কতটা ইসলামিক (এখানে ইসলামিক অর্থ দ্বীন নয় বরং আরবী জাতীয়তাবাদের মিশ্রণ অথবা দেখানো ইসলাম বলে যা বুঝায় তার রঙ্গে কতটা রঙ্গীন)। আর দুনিয়াবী কোয়ালিটি হচ্ছে প্রোডাক্টের মান এবং টেকসই ও সামাজিক ক্ষেত্রে কতটুকু ইফেক্টিভ। পরকালীন ক্রেতা-বিক্রেতারা দুনিয়াবী মান যাচাই কেন করবে?
আর কেবল এই একটি কারণে আমরা সবার হতে চেয়েও কেবল আমাদেরই হয়ে যাই বার বার।
তার মানে আমাদের চাওয়া অনেক উন্নত হলেও কর্মপদ্ধতির অনুন্নত অবস্থাই আমাদেরকে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে রেখেছে।
অনেকেই আমার মন্তব্যে নাখোশ হতে পারেন, এজন্য কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন, কেউ একজন একটা শর্ট ফিল্ম বানাবে এই যুগের মানুষদের জন্য। কিন্তু বানানোর সময় সে ব্যবহার করলো খুবই ভালো মানের ক্যামেরা এবং সেটসহ সকল আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু নির্মাণের সময় চিত্রগ্রহণ বা সম্পাদনা পদ্ধতি যুগোপযোগী না হওয়ায় এটা হয়ে গেলো ৬০ সালের কোনো চলচ্চিত্রের মতো। যেখানে নেই স্ট্রিম অব কনসাসনেস, কিংবা সুরিয়ালিস্টিক প্রেজেন্টেশন অথবা এনিমেশন কিংবা আকর্ষনীয় উপস্থাপন ভঙ্গী। তাহলে এটা এই প্রজন্মের মানুষ কেন গ্রহণ করবে? এরচেয়ে ঐ পক্ষের নির্মাণে আদর্শ না থাকলেও প্রেজেন্টেশন সুন্দর। ব্যাস। সিনেমাটোগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা নেই, ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিকের বিষয়ে কোনো অধ্যায়ন নেই… এ যেন ঢাল-তলোয়ার সব থাকার পরেও যুদ্ধের পদ্ধতি না জানা থাকায় একবিংশ শতকের নিধিরাম সরকার! অথচ আমরা ভালো জিনিস বানানোর ব্যাপারে মুখলেস।
পেশাদারিত্ব তো লাভে নয়, বরং আমার নির্মাণ কতটুকু মানসম্পন্ন সেখানে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সব কথার শেষ কথা হলো আমাদের বাস্তবে মডেল হিসাবে করে দেখাতে হবে। কোয়ালিটি এবং কনটেন্টের দ্বন্দ্বে কোয়ালিটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। Quality does matter– এ জিনিসটা যারা বুঝেছে তাদের দায়িত্ব হলো অন্যদের তা বুঝানো।
বুলেন: কয়েকটা বিষয় মনে আসলো:
১. টুইটার, ফেইসবুক দিয়ে একটা বিপ্লব হয়ে গেল, আর টেকনোলজিকে কেন আলাদা একটা দিক হিসেবে বিবেচনা করলেন না, মাথায় আসলো না!
২. দেশের বাহিরে যারা আছেন, তাদেরকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার করা দরকার।
৩. স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়ে জানাবেন আশা রাখছি।
৪. সাথে আছি!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহারের বিষয়ে উপরে জনাব মু. নূরনবীর কমেন্টের উত্তরে কিছু বলেছি। বহু বছর আগে ইসলামিক মর্ডানিজমের উপর একটা নাতিদীর্ঘ গবেষণা প্রবন্ধ ছাপিয়েছিলাম। বিষয় ছিল স্যার সাইয়েদ আহমেদ খান এবং আল্লামা ইকবালের ইসলামী আধুনিকতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ। সেখানে শুরুতে লিখেছিলাম–
ইসলামী আধুনিকতা হচ্ছে পাশ্চাত্যবাদ ও ইসলামের মধ্যে একটা সমন্বয়। পাশ্চাত্য হতে নেয়া হয়েছে প্রযুক্তি, বাদ দেয়া হয়েছে তার বস্তুবাদী আদর্শ। প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞান চর্চার ফসল, যা মুসলমানদের ঘরে নাই কয়েক শতাব্দী ধরে। ইসলাম থেকে নেয়া হয়েছে নৈতিক আদর্শ।
আরো সহজ করে বললে, মুসলমানেরা পাশ্চাত্যের প্রযুক্তিকে ভোগ করতে চায় ইসলামের নৈতিক আদর্শকে বিসর্জন না দিয়েই। অতএব, ইসলামী আধুনিকতাবাদের ছাদের নিচেই নিশ্চিন্তবাস।
আপনি প্রযুক্তিগত বিষয়াবলীকে নিয়ে একটা স্বতন্ত্র ধারার প্রস্তাব করার কারণে এ কথাগুলো বললাম। আমার মতে এটি কোনো স্বতন্ত্র ধারা নয়। যেমন করে মিডিয়াও কোনো স্বতন্ত্র ধারা নয়। অথচ, এগুলো খুবই শক্তিশালী। প্রযুক্তি আর মিডিয়া একই বিষয় যা কনসেপ্ট গ্রুপের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক– এই তিন ধারার জন্য প্রায়োগিক দিক থেকে সমভাবে আবশ্যকীয়। প্রযুক্তি ও মিডিয়া কোনো তাত্ত্বিক বিষয় নয়। তাই তাত্ত্বিক ধারায় সেগুলো না আসলেও চলে। যদিও বর্তমানে কোনো ধারাই এগুলোর পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া চলবে না।
এ পর্যন্ত দেখা গেছে সংগঠনবাদিতা হতে মুক্ত দায়িত্বশীলদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বিদেশনিবাসী। তাই দেশের বাহিরে যারা আছেন, কনসেপ্ট গ্রুপে তাদের অবদান হবে অত্যন্ত মৌলিক ও সবচেয়ে বেশি, ইনশাআল্লাহ।
কনসেপ্ট গ্রুপ বেসিক্যালি কনসেপচুয়্যালই হবে। এর স্ট্রাকচার তেমন একটা থাকবে না। পরস্পরের বোধ, প্রতিশ্রুতি, প্রজ্ঞা ও আস্থার ভিত্তিতে মুক্ত কার্যসূচি নিয়ে শুধুমাত্র জ্ঞান চর্চার জন্য এ ফোরাম। এর প্রতি সদস্যের নিজ পরিমণ্ডলে নিজস্ব ফোরাম বা সার্কেল থাকতে পারে। প্রত্যেকেই নিজে কিছু না কিছু অপ্রচলিত পন্থায় কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকার ইসলামী সংগঠন ও সংস্থাসমূহের সকল নির্দোষ ও গঠনমূলক কাজে যথাসম্ভব অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রদান করবেন। প্রচলিত সংগঠনসমূহের মতো কোনো সংগঠন হিসাবে কনসেপ্ট গ্রুপকে চিন্তা করা ঠিক হবে না। ইন্টারেক্টিভ ইন্টেলেকচুয়্যালিটি হবে এর সর্বোচ্চ কার্যনিয়ামক। ঐক্যমতের প্রাধান্য থাকলেও দ্বিমতকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। যুক্তি দিয়েই সব বুঝতে বা বুঝাতে হবে। এমনকি যেখানে যুক্তি চলবে না সেখানে যুক্তি দিয়েই বুঝতে ও বুঝাতে হবে যে কেন সেখানে যুক্তি চলবে না।
ভালো থাকুন। দোয়া করবেন।
kabir: বুলেন ভাই, কেন চাই কনসেপ্ট গ্রুপ, কনসেপ্ট গ্রুপের ভাইয়েরা অতীতের মতো রাজনৈতিক দল দাঁড় করাবে। অতীতে চারবার ইসলামিক মুভমেন্ট ভেঙ্গেছে। যারা জাহেলিয়াতের সাথে জড়িত, তারা কীভাবে ইসলাম করবে? বরং পুরাতনটা সংস্কার করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। অল্টারনেটিভ চিন্তা করা মানে ইসলামী আন্দোলনকে দুর্বল করা। থিওরিটিক্যাল কনসেপ্ট লেখা যায়, যা বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভাঙ্গন বা দুর্বল করার কথা কেন আসছে? নেতৃত্ব ও সংগঠনের এককেন্দ্রিকতা হলো মূলত প্রশাসনিক ব্যাপার। সমাজ আন্দোলন বহুত্বের ধারায় পুষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোনো বিষয়ে প্রমাণ হাজির করলে প্রেক্ষাপট বিবেচনা অতীব জরুরি। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামীদের একক প্লাটফর্মে আসতে হবে, থাকতে হবে– এসব দাবির কোনো ভিত্তি নাই।
কোনো সংগঠন বিশেষের আমীরকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে সংশ্লিষ্ট জনপদের মুসলিমরা কেন মানতে বাধ্য হবে? উক্ত সংগঠনের আনুগত্যশীলদের তিনি নেতা হবেন। প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণে তারা তাকে মানতে বাধ্য থাকবেন। কিন্তু যারা সে সংগঠনে যোগ দিবে না বা আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিবে না, তারা কি শরয়ী সীমার বাহিরে বিবেচিত হবে? কোরআন-হাদীসের কোথায় আছে যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টারত সংগঠন একটিই হতে হবে? একাধিক থাকতে পারবে না?
বিংশ শতাব্দীর সর্বাত্মকবাদী এককেন্দ্রিকতা হতে বেরিয়ে আসতে আমাদের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু এর কোনো গত্যন্তর নাই।
আমার সাথে আপনার মিলল না। আমি বিশ্বাস করি প্লুরালিজমে, ঢিলেঢালা সংগঠন কাঠামোতে, জন-জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতায়। বিশ্বাস করি ব্যক্তি-উদ্যোগ ও সেলফ-ব্র্যান্ডিংয়ে। ভুল মনে করি ক্যাডার সিস্টেমকে। অযৌক্তিক ঐক্যমতের চেয়ে যুক্তিসংগত দ্বিমতকেই স্বাগত জানাই। মনে করি, যুক্তি যেখানে চলবে না যুক্তি দিয়েই বুঝাতে হবে কেন সেখানে যুক্তি চলবে না। ইন্টারেক্টিভ ইন্টেলেকচুয়্যালিটিকে জীবনের প্র্যাকটিক্যাল মটো হিসাবে গ্রহণ করেছি। একটিভিজম ও ইন্টেলেকচুয়্যালিটিকে, আল্লাহর রহমতে, নিজ জীবনে অদ্যাবধি সমান্তরাল ও সফলভাবে চর্চা করে যাচ্ছি।
মেধাবিকাশ: “উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গও ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসাবে গ্রহণ না করে নিছক (শ্রেষ্ঠ) ধর্ম হিসাবে বিবেচনা করে।”
কারণ, তাদের কাছে ইসলামের সঠিক উপস্থাপনা অনুপস্থিত।
“দুঃখজনক ব্যাপার হলো পাগলকে ভালো করতে গিয়ে ভালো মানুষ পাগল হয়ে যাওয়ার মতো পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ আন্দোলন হিসাবে যাত্রা করা জামায়াতে ইসলামী এখন এমনকি তাদের নিজ দাবি মোতাবেকই একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, যাদের আদর্শিক পছন্দ হচ্ছে ইসলাম।”
এখান থেকে মনে হয় আর ফিরার উপায় নাই
“ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকামী সংগঠন যদি ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তা সংগঠনটির বিকাশ ও পরিচালনায় বিরোধ সৃষ্টি ও বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
ব্যাপকভাবে আজ এ সমস্যা বিদ্যমান।
“সিঙ্গেল জায়ান্ট ট্রি মডেলের পরিবর্তে ওয়াইড গার্ডেন মডেলকে বিবেচনায় রাখতে হবে।”
তবে অবশ্যই সাংগঠনিক আনুগত্যকে ভুলে গেলে চলবে না।
“হাত-পা বাঁধা অবস্থায় যেমন সাতার কাটা যায় না, তেমনি অসাংস্কৃতিক ব্যক্তির নেতৃত্বের অধীনে কখনো শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ধারা সৃষ্টি হওয়া এবং সেটি টিকে থাকা অসম্ভব।”
উপায় কী?
আলমগীর স্যার বিরোধী আন্দোলনের সফলতার জন্যই আজ আপনি বাঘা মোজাম্মেল। যদি আমরা হেরে যেতাম, আপনি হতেন মোজাম্মেল নিজামী। আবার সেই দরদ, মায়া, হিম্মত নিয়ে রাস্তায় নামবেন? সাথে কেউ না থাকলেও ওয়াদা করছি, পিছপা হবো না। প্রবাসজীবন ফেলে চলে আসব, আপনার এক কথায়। কিন্তু অনুরোধ একটাই– আলমগীর স্যার বিরোধী আন্দোলনের মতন আমাদের আবার মুক্তিযোদ্বা বানাবেন, পরাজিত রাজাকার নয়।
পরিশেষে, একজনকে ভালোবাসতাম খুব করে। ঘরের অমতে কাজি অফিসে হাজির হলাম, কিন্তু সে আসলো না। আমাকে কাজি অফিসে রেখে, তিনি তখন সাভারের স্মৃতিসৌধে শিরিকে মত্ত।
আপনি আমার ভালোবাসা এবং আনুগত্য গ্রহণ করেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: গণমানুষের কাছে ইসলামের যথার্থ উপস্থাপনার পর্যায় অতক্রম না করে ইসলাহ-ই-হুকুমতের এজেন্ডা নিয়ে নেমে পড়া হলো ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ানোর মতো পরিস্থিতি।
ট্রি মডেলে মূল সংগঠন সব পার্শ্ব সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করে। গার্ডেন মডেলে প্রতিটা ধারা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। তাদের পরস্পরের মধ্যে শুধুমাত্র আদর্শিক ঐক্য ও সহযোগিতা থাকবে। অতএব, সাংস্কৃতিক অংগনের দায়িত্বশীলদের কোনো মূল সংগঠন সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। এতে তাদের মানগত যে আশংকার কথা উঠতে পারে তা অমূলক। প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের চেয়ে তা খারাপ হবে না, এটুকু বলা যায়।
এসব সুশীল মিডিয়া কেবলমাত্র সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। প্রসংশায় যারা বিভ্রান্ত হবে না, (অযোক্তিক) সমালোচনায় যারা পিছপা হবে না– এমন লোকদের নিয়ে এক পর্যায়ে রাস্তায় নামতে হবে। নতুন ধারা সৃষ্টি এত সহজ নয়।
কনসেপ্ট গ্রুপ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন হবে না। তা হবে সহযোগী ও পরিপূরক। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান হতে এতে সম্পৃক্ত হবেন। এ অর্থে একে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন হিসাব দাবি করা যাবে না।
পরাজিত মানসিকতা নিয়ে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির জোয়ারে শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যাওয়াকে সমর্থন করি না। সেখানে যাওয়া অপছন্দনীয় হতে পারে। শিরক হবে কেন?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় দেয়া জনাব আহমেদ চৌধুরীর পোস্টে যে মন্তব্য করেছি তা এই পোস্টের জন্যও প্রাসংগিক মনে করছি–
একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামী আন্দোলনের কাজের ক্ষেত্র ও পদ্ধতি নিয়ে মুক্ত আলাপ-আলোচনা ও মতামত গঠনের ফোরাম হতে পারে ‘কনসেপ্ট গ্রুপ’।
এই কাজে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হবে প্রধান ইসলামী দলসহ ইসলামী দল ও সংগঠনসমূহের ব্যাপারে নেতিবাচক আলোচনা। এতে কনসেপ্ট গ্রুপকে বেকারদের গ্রুপ হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ করে দেয়া হবে।
প্রধান ইসলামী দলের সমালোচনা প্রাধান্য পাওয়াটা এটির উপর এক ধরনের নির্ভরশীলতাকেও নির্দেশ বা প্রমাণ করে!!
কনসেপ্ট গ্রুপ হবে অন্যান্য ধারায় চলমান কাজগুলো হতে স্বতন্ত্র অর্থে স্বাধীন। যে যেখানে যে দলের সাথে আছেন বা কোনো দল বা সংগঠনের সাথে না থেকে থাকুন না কেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান হতে এই কনসেপ্ট বিল্ডআপের আন্দোলনে শরীক হতে ও নেতৃত্ব দিতে পারবেন। এ অর্থে এটি একটি সহায়ক শক্তি বা সম্পূরক ধারা।
আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব: বেশ ভেঙে পড়েছি। চারপাশে যখন নজর বুলাচ্ছিলাম, তখন কেমন জানি একটা শূন্যতার আনাগোনা লক্ষ্য করলাম। আপনার লেখাটা পড়ে, আপনার চিন্তা ও লেখনীর শক্তির কথা ভেবে, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পর্যালোচনা দেখে আশায় বুক বেঁধেছি। আপনাকে নিয়মিত চাই প্রিয় আংকেল। আন্টিকে আবারো লেখালেখিতে সক্রিয় করতে আপনার উৎসাহ কামনা করছি। অনেক শুকরিয়া এবং শুভেচ্ছা।
ইবনে বতুতা: কনসেপ্ট গ্রুপের আইডিয়ার সাথে আমি বহুদিন থেকেই একাত্মতা পোষণ করে আসছি। ছাত্র থাকাকালে আমাকে অনেকেই বুদ্ধিজীবী বলে উপহাস করতো। আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীর স্থান হয়নি। এখনো দেখা হলে প্রাক্তন ভাইদের কেউ কেউ বুদ্ধিজীবী নামে ডাকেন। এখন অবশ্য আগের মতো মাইন্ড করি না। মোজাম্মেল ভাইয়ের লেখাগুলো পড়ে পড়ে এখন ভাবি, আমি ভুল পথে ছিলাম না। এ পথে আরো বহুদূর যাবার আছে।
অনেক ভাইকেই আমরা এখন পাচ্ছি চিন্তার জগতের পথিক রূপে। মোজাম্মেল ভাইয়ের লেখনীর দ্বারা একটা গ্রুপ সংগঠিত হচ্ছে। এখন আরো অগ্রসর হয়ে আর কী কী কাজ আমরা করতে পারি— এই ব্যাপারে আলোকপাত আশা করি।