যা পাইনি তা ছিলো না পাওয়ার। যা পেয়েছি তা ঢের বেশি। আশাতীত। কোনো প্রাপ্যতা ছাড়াই পেয়েছি সবকিছু।
আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। কতদিন যে এভাবে সুস্থ দেহ নিয়ে আনন্দচিত্ত থাকতে পারবো, জানি না। কুল এলার্জি, ঝাল হজম না হওয়ার সমস্যা আর ইদানীং খালি চোখে বেশিক্ষণ পড়তে না পারার সমস্যা ছাড়া এ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে পূর্ণ কর্মক্ষমতাসম্পন্ন আছি। আমার প্রধান সমস্যা গভীর আলস্য আর খেয়ালিপনা।
ওয়াশরুমে গেলে স্বল্পতম সময়ে নির্ভার হতে পারি। ঘুমাতে গেলে এপাশ ওপাশ করতে হয় না। রেসিপি যা-ই হোক, খাওয়ার সময়ে আমাকে দেখলে যে কারো খেতে ইচ্ছা করবে। কারো সাথে দেখা হলে ভালো লাগে। মানুষটা যে-ই হোন না কেন কিছুক্ষণের মধ্যে ভাব জমে উঠে।
বড়দের কাছে শুনেছি, ছোট বেলায় নাকি খুব জোরে চিমটি দিলে একটুখানি কেঁদে আবার হাসতে থাকতাম। জীবনে যা পাইনি তা নিয়ে আমারও আফসোস আছে। দুঃখবোধও কম নয়। কিন্তু বেঁচে থাকার আনন্দ, জীবনকে উপভোগ করার আনন্দ আর আত্মতুষ্টি আমার দুঃখবোধের চেয়ে অনেক বেশি। আশপাশের আর দশজনের নৈমিত্তিক চাওয়া-পাওয়া থেকে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ও চলার হিসাব ভিন্ন।
মানুষকে মোটের ওপরে বিশ্বাস করি। জীবনে ঠকেছি বহুবার। বিনা দোষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি অনেকের হাতে। অযোগ্যেদের ওপর ভুল করে আস্থা রেখেছি, প্রতারিত হয়েছি বহুবার নিদারুণভাবে। হ্যাঁ, ঠকলে তো কিছুটা খারাপ লাগবেই। তাতে কী? রক্তের গ্রুপের সাথে সাথে ইন মাই প্র্যাক্টিকেল লাইফ অলসো, আই এম অলওয়েজ ‘বি পজেটিভ’।
আমি সাহস, কৌশল আর যোগ্যতায় বিশ্বাসী। দোষারোপ চর্চাকে ভীষণ অপছন্দ করি। আমি জীবনবাদী, বাস্তববাদী। অটুট সত্যের পক্ষে থেকেছি আজীবন। নিজেকে নিজের মতো করে উপস্থাপনে আমি বরাবরই নিঃসংকোচ। সেলফ ব্র্যান্ডিংকে দোষের কিছু মনে করি না। বরং একে জরুরী মনে করি।
যেটাতে আমি লজিক্যালি কনভিন্সড হই না, আমাকে দিয়ে সেটা কেউ করাতে পারে না। আচারসর্বস্ব ও কৃত্রিম সব সামাজিক রীতিনীতিকে এড়িয়ে চলি। এমনকি ৫০ জন লোককেও কখনো দাওয়াত করে খাওয়াই নাই। নিজের বিয়েতেও না। আমি কি অসামাজিক প্রকৃতির? ব্যক্তিগতভাবে যারা আমার পরিচিত তারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
বয়সের ভারে যা হারিয়েছি, পেয়েছি তার চেয়ে বেশি কিছু; স্নেহ, প্রীতি, ভালোবাসা, সম্মান, অর্থ, ক্ষমতা, সুন্দর একটা পরিবার আর সম্মানজনক ও সোশ্যাল ওয়ার্কের উপযোগী জীবিকার উপায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, খুঁজে পেয়েছি আত্মপরিচয়। কৈশোর হতেই ছিলাম সত্যসন্ধানী। পেয়েছি জীবন ও জগতের রহস্য উন্মোচনের চাবিকাঠি। পরশ্রীকাতরতা ও হীনমন্যতা হতে মুক্ত জীবনের চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!
চার দশক পিছন থেকে আজকের এই আমাকে যখন আমি স্মৃতির আয়নায় চেয়ে দেখি তখন কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠে। নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়। তুলনামূলকভাবে ঐতিহ্য আর মূল্যবোধসমৃদ্ধ একটা পরিবারে অনেক ভালোভাবে বড় হয়েছি…! না চাইতে কত কিছু পেয়েছি। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে মৃত্যুর অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া একান্ত আপনজনদের জন্য অন্তরের গভীরে অনুভব করি সুগভীর বেদনা। চিরন্তন এই মানবিক সংকটের বাইরে জীবনে আমার তেমন কোনো কষ্ট, গ্লানি কিংবা দুঃখবোধ নাই।
বেঁচে থাকার আনন্দে, অনুভবের গভীরতায় আর স্বচ্ছ সুখের নিবিড় আবেশে আমি মুগ্ধ থাকি দিবানিশি। অধিকাংশ মানুষকে দেখি তারা ক্যারিয়ার নামক ব্রেকফেইল ট্রেনের যাত্রী। এস্টাবলিশমেন্টের পিছনে অন্ধের মতো ছুটে চলেছেন দিনরাত। কোথায় যে থামবেন তা তারা নিজেরাই জানেন না। পরিণত বয়সেও জীবনকে উপভোগ করা আর অন্যদের জন্য অর্থবহ কিছু করার অবসর তাদের নাই। নিজেকে তারা আরো উপরের অবস্থানে টেনে নেয়ার বিভৎস চেষ্টায় প্রাণান্ত! আফসোস…!
জীবন তো একটাই। দ্বিতীয়বার এসে এ জীবনে কিছু করার সুযোগ কেউ পায় নাই, পাবেও না। ‘জীবন একটাই। অতএব, যা পারি হাতিয়ে নিই। জীবনের কোনো অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য নাই’ – এভাবে কেউ ভাবতে পারেন। আবার ‘জীবন একটাই। অতএব, অবুঝেরা কে কী বলছে তার তোয়াক্কা না করে যতটুকু পারি জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করে যাই।’ – পুরো বিষয়টাকে আপনি এভাবেও ভাবতে পারেন। আমার মানসিকতা দ্বিতীয় ধরনের ‘বোকাদের’ মতো।
আলহামদুলিল্লাহ, আত্মপ্রতিষ্ঠার দৌড়ে একটা জায়গায় এসে থামতে পেরেছি। স্থিত হতে পেরেছি শুদ্ধ আত্মপরিচয়ে। অঢেল না পেলেও যেদিকে তাকাই, দেখি জীবনের প্রাপ্তিখাতা পূর্ণ-প্রায়। চাওয়াগুলোই বরং কখনো ভুল ছিলো। পাওয়াগুলো অথচ সব অনবদ্য। এমন কী যোগ্যতা ছিলো এতসব পাওয়ার? সত্যি, অনেক অনেক পেয়েছি। ভাবছি, এখন আমার দেবার পালা।
জীবনের সব ঋণ
একদিন –
দিয়ে যাবো সব
করে দিয়ে শোধ…।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য
Mohammad Mozammel Hoque: বড় আপা আমাদের দশ ভাইবোনের সিরিয়ালে এক নম্বর। লেখাপড়া, পজিশন, আর্থিক সংগতি, অন্যদের জন্য কিছু করা, ছেলে মেয়েদের সংখ্যা, তাদের সার্বিক উন্নতি, এক কথায় বড় আপা এমন মানুষ যাকে হিংসা করা রীতিমতো জায়েয। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে আমাদের ফ্যামিলির centre of gravity হিসাবে বড় আপা আমাদের অবিসংবাদিত গার্জিয়ান। সব ইতিবাচক দিকেই তিনি সেরা, সবার বড়। দেশের একটা শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল কলেজের ফুল প্রফেসর Fatima Khanam। একটা বিভাগের প্রধান।