বাংলাদেশে মাসব্যাপী ঘটা করে পালন করা হয় ‘একুশে বইমেলা’। সেখানে ইসলামী পুস্তক ব্যবসায়ীরা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে, চলমান ‘ইসলামী বইমেলা’য় ‘সাধারণ’ পুস্তক ব্যবসায়ীরা নামকরণের কারণে বাই কেটাগরি এক্সক্লুডেড।
আমরা জানি, সেকুলার সেটআপ মানে হলো রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা বিষয় বলে বিবেচনা করা, যেন তারা পরস্পর পরস্পরকে সসম্মানে এড়িয়ে চলতে পারে। লাইক, মিউচুয়েলি এক্সক্লুসিভ টু ইচ্চ আদার। ওরা আমাদেরকে বাদ দিছে। আমরাও তাই ওদেরকে বাদ দিবো।
রাষ্ট্র আর ধর্মকে আলাদা করাকে আমি আদতে খারাপ মনে করিনা। সমস্যা হলো ইসলামকে নিয়ে। ইসলাম কি অন্যান্য ধর্মের মতো নিছক একটা ধর্ম? অথবা, এমন ধর্ম যা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়? ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক মতবাদ? এই অর্থে একটা রাজনৈতিক ধর্ম?
এই প্রশ্নগুলোর কোনোটির উত্তর আমার কাছে সদর্থক নয়। তাহলে ইসলাম বলতে আমি কী বুঝি?
আমার দৃষ্টিতে, ইসলাম হলো ইসলাম। আরবিতে দ্বীন বলতে যা বোঝায়। কোরআনে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে বলা হয়েছে। দ্বীন হিসেবে ইসলামের মধ্যে আছে ফিলসফি। আছে টোটাল লাইফ স্টাইল, ইসলামী পরিভাষায় যাকে শরীয়াহ বলা হয়। শরীয়াহ’র মধ্যে আছে রাজনীতি। আছে অর্থনীতি। আছে সমাজনীতি। আছে সাহিত্য, সংস্কৃতি। এককথায় মানুষের জীবন চলার সব মূলনীতি।
বিষয়গুলো অনেক পুরনো। তাই আমি এগুলোকে থিওরাইজ করেছি বলাটা অতিশয়োক্তি। ইদানীং কাউকে এভাবে ঝেড়ে কেশে বলতে শুনছি না, তাই নিচের প্যারায় উল্লেখিত বিষয়টিকে আমি থিওরাইজ করেছি, এই হিসেবে মাঝে মাঝে প্রসঙ্গক্রমে বলি।
শরীয়াহ’র যে অংশটুকু এবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট, ইংরেজীতে যেগুলোকে রিচুয়াল বলে, সেগুলোর ক্ষেত্রে গিভেন স্ট্রাকচার এবং মূলনীতি, অর্থাৎ ভিতরের এবং বাহিরের উভয় অংশকেই হুবহু হতে হবে। যেমন, আপনি ‘আল্লাহ মহান’ বলে ‘নামাজ’ শুরু করলে সেটা ‘তাকবির-ই-তাহরীমা’র শর্ত পূরণ করবে না। যে ভাষারই হোন না কেন, আপনাকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে নামাজ শুরু করতে হবে।
পক্ষান্তরে, যাকাত অন্যতম প্রধান এবাদত হওয়া সত্ত্বেও এটি যেহেতু ‘মুয়ামালাত’ তথা সামাজিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, তাই যাকাতের নিয়ত ও যাকাত হিসাব করার পদ্ধতি সঠিক হওয়া সাপেক্ষে আপনি ‘যাকাত দিচ্ছি’ না বলেও যাকাত প্রদান করতে পারেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এটাই বরং উত্তম। হতে পারে, এমন কেউ যে কিনা নিজের দারিদ্র্য নিয়ে সংকোচবোধ করছে। তাকে আপনি ‘আপনাকে উপহার দিচ্ছি’ বলে যাকাতের সম্পদ দিতে পারবেন। তাই, যাকাতকে বাহ্যিকভাবেও ‘যাকাত’ হয়ে উঠতে হয় না।
রাজনীতির ব্যাপারেও এটি প্রযোজ্য। ইসলামসম্মত রাজনীতিকে তাই নেসেসারিলি ‘ইসলামী রাজনীতি’ হিসেবে বলার শরয়ী আবশ্যকতা নাই। এই দৃষ্টিতে, ইসলামসম্মত অর্থনীতিকেও ‘ইসলামী অর্থনীতি’ হয়ে উঠতে হয় না। এই দৃষ্টিতে ‘ইসলামী পরিবার’ থাকার আবশ্যকতা নাই। বরং পারিবারিক ব্যবস্থা ইসলামসম্মত হওয়াই যথেষ্ট। সমাজ হওয়াটাই যথেষ্ট। ‘ইসলামী সমাজ’ কায়েম করাটা জরুরী নয়। জরুরী হলো বিদ্যমান সমাজকে ইসলামী মূল্যবোধের আদলে গড়ে তোলা।
ইসলামী আকিদা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ হলেও ‘ইসলামী গণিত’ টাইপের টার্মিনোলজি বা ভোকাবুলারি নিতান্তই রিডান্ডেসি। বুঝতেই পারছেন, এই দৃষ্টিতে ‘ইসলামী মূল্যবোধ’ কথাটাও ব্যাখ্যাসাপেক্ষ।
চিরন্তন মানবিক মূল্যবোধগুলোর ওপরে ইসলাম তাওহিদনির্ভর কিছু মূল্যবোধকে এস্টাবলিশ করে। বলতে পারেন, মানবিক মূল্যবোধ হলো ইসলামী মূল্যবোধ ব্যবস্থার ভিত্তিকাঠামো বা বেসিক স্ট্রাকচার। এমতাবস্থায়, ‘ইসলামী মূল্যবোধ’ বলতে আমরা সচারাচর যা বুঝি সেগুলো হলো উপরিকাঠামো বা সুপারস্ট্রাকচার। মানবিক মূল্যবোধ মাত্রকেই তাই ‘ইসলামিক’ হয়ে উঠতে হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক পজিটিভ হিউমেন ফেনোমেননই মূলত ইসলামিক।
২. ‘এটা জাতীয় বইমেলা, ওইটা ইসলামী বইমেলা’ – এই টাইপের ভাগাভাগিটা চরিত্রগতভাবে সেকুলার সেটআপ। সেকুলাররা এটা ইসলামিকদের ওপর চাপিয়েছে। দৃশ্যত, ইসলামিকরাও এই সেকুলার সেটআপকে অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নিয়েছে। দুঃখটা এখানেই।
বাংলা একাডেমির সেকুলারধর্মভিত্তিক পৌরহিত্যের কারণে, আগেই বলেছি, মূলধারার ইসলামপন্থীরা একুশে বইমেলাতে অবাঞ্চিত। এখন সময় এসেছে এটাকে টেক্কা দেয়ার। সমস্যা হলো, যেই সরকারই ক্ষমতায় আসে, বাংলা একাডেমি থাকে ‘ওদের’ কব্জায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনও থাকে তাদের কব্জায়।
এই যখন পরিস্থিতি তখন বিকল্প ধারার গ্রন্থমেলার আয়োজন কীভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নই আপনি এখন আমাকে করবেন, জানি।
আমার কথা হলো, কীভাবে সম্ভব এই চিন্তার চেয়েও জরুরী হলো, সেকুলার প্রতিক্রিয়াশীলতার এই ট্র্যাপ হতে বের হয়ে আসা। এর জন্য দরকার বৃহত্তর সমাজ সম্পর্কে ‘আমাদের’ অবচেতনে কাজ করা সেকুলার মাইন্ডসেটকে পরিবর্তন করা। প্রতিক্রিয়াশীলতাকে গঠনমূলক চিন্তার দ্বারা রিপ্লেস করা। এটলিস্ট ব্যালেন্স করা। দ্বীন-দুনিয়ার ভাগাভাগি হতে মানসিকভাবে বের হয়ে আসা। নিছক ‘দ্বীনি আয়োজন’ যে একটা সেকুলার সেটআপের অংশ, এটা বুঝতে পারা ও স্বীকার করা।
৩. বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে শুধু নয়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমাজের মূলধারাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অথবা বিকল্প মূলধারা হয়ে উঠতে চাইলে ইসলামপন্থীদেরকে ‘ইসলামী’ প্রিফিক্সের এই খোলস হতে বের হয়ে প্রকৃত অর্থে তথা প্র্যাগমেটিকেলি ইসলামী হয়ে উঠতে হবে। এর তাত্ত্বিক ভিত্তি হলো, উপরে উল্লেখ করেছি, এবাদত ও মুয়ামালাতের পার্থক্যকে বুঝতে পারা এবং মেনে চলা। এবাদতকে এবাদত হিসেবে নিতে হবে, মুয়ামালাতকে নিতে হবে মুয়ামালাত হিসেবে।
এ বিষয়ে আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হল, নতুন কিছু ক্ষুদ্রতর পরিসরে শুরু করাটাই ভালো। তাতে কোনো অসুবিধা নাই। বীজ থেকেই তো গাছ হয়। তাই বলে মন-মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গী সংকীর্ণ হওয়াটা বাঞ্চনীয় নয় কোনোক্রমে। বামন-গাছ বসার ঘরে শোভা পায়। ফল পেতে হলো বৃক্ষ রোপণ করতে হয় উপযুক্ত ময়দানে।
৪. ধ্রুপদী সাহিত্যের জায়গা হয় না যেখানে, ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থাদির জায়াগা হয় না যেখানে, দর্শন যেখানে অপাঙ্ক্তেয়, বিজ্ঞান যেখানে অনাহুত; শুধু নির্দিষ্ট ধর্মপুস্তক যেখানে সমাদৃত, সেই বইমেলা দ্বীন হিসেবে যে ইসলাম, তারসাথে সুসমন্বিত (কম্প্লায়েন্ট অর্থে) হয় কীভাবে?
বুঝে আসে না। মনে প্রশ্ন জাগে, প্রতিক্রিয়ার এই ফেইজ কি ইসলামপন্থীরা সহসা অতিক্রম করতে পারবে?
৫. হ্যাঁ, আক্রান্ত পরিস্থিতিতে প্রবল প্রতিক্রিয়ার দরকার আছে। সেটা প্রাইমারি লেভেলে। প্রতিক্রিয়ার এই প্রাথমিক পর্যায়কে অতিক্রম করে অগ্রসর হতে হবে। মানুষের জীবন ও সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে ব্যবসায়িক বিষয়বুদ্ধি, গণ্ডীবদ্ধ পাঠকসমাজের চাপ, কোনোমতে ইসলামকে ঠেসে দেয়ার বিদ্যমান মেন্টালিটি হতে বের হয়ে আসতে হবে।
মানুষ, মানুষের জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র, বৈশ্বিক বাস্তবতা, এগুলোকে দেখতে হবে সদর্থক তথা গঠনমূলক দৃষ্টিতে। প্রাকটিকেল ফিল্ড এক্সপেরিয়েন্সের নিরিখে। এটাই ‘মধ্যমপন্থী জাতি’ হিসেবে দায়িত্বশীলসুলভ দৃষ্টিভঙ্গী। মারদাঙ্গা মনমানসিকতার দরকার থাকলেও তাতে পড়ে থাকা হলো নিজেকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে রাখার সামিল।
সজল (সানজাক-ই উসমান লেখক প্রিন্স মুহাম্মদ সজল) ঠিকই বলেছে। নিজেকে ইসলামপন্থী হিসেবে ভাবে না এমন কেউ ‘ইসলামী বইমেলা’য় কেন যাবে? এর উত্তর কি ‘ইসলামী বইমেলা’র আয়োজকদের কাছে আছে?
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
উম্মে সালমা: ভাবনার বিষয়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: শুধু বইমেলা না, অন্যান্য সব বিষয়েই ‘ইসলামী’ প্রিফিক্স থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দ্বীন দুনিয়ার এই যে ভাগাভাগি, এটাকে অস্বীকার করতে হবে।
সঠিক চিন্তা হলো, দ্বীনের অপরিহার্য অংশ হলো দুনিয়া, এবং দুনিয়ার মাধ্যমে দ্বীন। ‘দুনিয়া হল আখেরাতের শস্যক্ষেত্র’ এই হাদিসকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শুরু করতে হবে উদার মন মানসিকতা দিয়ে। সেক্টারিয়ান হলে আল্টিমেটলি তেমন লাভের লাভ কিছু হবে না।
অন্য একটা কমেন্টে বলেছি, ইসলামী বইমেলা এখন যা চলছে, আলহামদুলিল্লাহ, এটা খুবই ভালো হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা ইতিবাচক অগ্রগতি। কিন্তু আল্টিমেটলি এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে হবে, এটাই আমি বলতে চাইছি।
আমার ধারণা, এই আয়োজনের সুবিধার দিকগুলোর পাশাপাশি অসুবিধা দিকগুলো নিয়ে এভাবে বলাবলি না করলে, কিছুটা হিট করে কথা না বললে, মানুষের মধ্যে সঠিক চেতনা জাগ্রত হবে না, তাই এভাবে শিরোনাম দিয়ে লেখা।
রেজাউল ইসলাম: চিন্তা-ভাবনার বিষয়। ইসলামপন্থী বা ইসলামি – এই বোধটাও তো সেক্যুলার সেটআপ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ওরা ওদেরটা আমরা আমাদেরটা, এই যে ভাগাভাগি, এতে ওদের ভাগ বা area of functionality কোনটা?
ধর্মের পক্ষের দৃষ্টিতে, অপরপক্ষের ভাগ তথা দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে দুনিয়া পরিচালনা এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো। আর আমাদের, অর্থাৎ পিপল অফ রিলিজিওন এর এরিয়া অফ ফাংশনালিটি হলো, আখেরাত এবং এর সাথে রিলেটেড বিষয়গুলো।
ধার্মিকেরা লোকজনের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মানের সমস্যা ও উন্নয়নের কথা বলবে। কিন্তু, মানুষের পার্সোনাল অ্যান্ড ন্যাশনাল ডে টু ডে প্র্যাকটিক্যাল লাইফের মেটারিয়াল, কমফোর্ট-ডিজকমফোর্ট, ক্ষুদ্র-বৃহৎ উদ্যোগ, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, এগুলো নিয়ে তারা মাথা ঘামাবে না, যতক্ষণ না এইসব দুনিয়াবি কাজের মধ্যে আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক তথা ধর্মীয় দিক থেকে কোনো সমস্যা দেখা যায়।
এই যে দ্বীন বনাম দুনিয়ার ভাগাভাগি, ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের এই যে মন মানসিকতা, এটাই হচ্ছে সেকুলার সেটআপ। এই দৃষ্টিতে অর্থাৎ দ্বীন এবং দুনিয়ার পার্থক্যকরণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যা কিছু করা হোক না কেন, সেটার নাম ইসলামী হোক বা না হোক, বৃহত্তর পরিসারে বা দিনশেষে এটা একটা সফট ভার্শন অব সেকুলার সেটআপ।
রেজাউল ইসলাম: বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ। সমস্যা হচ্ছে আমাদের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এই সেক্যুলার সেটআপটি ধরতে পারছেন না। এটিকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন সে কৌশল কিংবা সেই জ্ঞান অর্জনের পথেও চলবেন না। আপনার জন্য দোয়া এবং শুভ কামনা।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: উনারা ভার্বালি বিরোধিতা করেন যেসব বিষয়ের, সেগুলোরই একটা কোর কনসেপ্ট এবং সেটআপ যে উনারা মেনে চলেছেন, সেটা বুঝতে পারছেন না।
নারীবাদ যে পুরুষতন্ত্রেরই একটা বিকল্প আয়োজন, সেটা অনেক নারীবাদীরা যেমন করে বোঝে না; তেমনি করে সবকিছুর ইসলামী বিকল্প বের করার ব্যাপারটা যে ধর্মনিরপেক্ষতারই সেটআপ, সেটা ধর্মপন্থীরা বুঝতে পারছেন না।
জাহিদ হাসান: চিন্তার বিষয়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যা হচ্ছে তা বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। এই বইমেলা এক সময় ছিল খুবই নিরুত্তাপ, গতানুগতিক। আমি নিজে কতবার গেছি। কোনো মানুষজন ছিল না। শুধু শুক্রবারে জমজমাট হতো। এখন তো এটা খুবই জমজমাট। ইসলামপন্থীদের মধ্যে একটা ন্যাশনাল ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। ব্যাপার হলো, এটাকে আরো বৃহত্তর পরিসরে এগিয়ে নিতে হবে এবং আরো একোমোডেটিভ হতে হবে।
সফলতা মানুষের প্রত্যাশাকে বাড়িয়ে দেয়।
মুহিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়ের: “রাষ্ট্র আর ধর্মকে আলাদা করাকে আমি আদতে খারাপ মনে করিনা। এ লাইন আপনার পুরো লেখার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হৃদপিণ্ড আর ফুসফুস যেমন করে আলাদা কিন্তু একটার সাথে একটা কানেক্টেড এবং পরস্পর নির্ভরশীল, সেরকম ধর্ম আর রাজনীতি আলাদা কিন্তু ইন্টারকানেক্টেড এবং ইন্টারডিপেন্ডেন্ট।
জাহিদ হাসান হৃদয়: খুবই বাস্তবধর্মী কথা লিখেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ইসলামী বইমেলা প্রাঙ্গণের আয়তন দেখলেও বোঝা যায়—এ দেশের সেক্যুলার সেটআপে ইসলামের পরিসর কতটুকু!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বর্তমান ইসলামী বইমেলা জমজমাট হয়ে উঠাটা যথেষ্ট ইতিবাচক। আমার মনে হয়, এখনি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে না তুললে এটা সমাজবিচ্ছিন্ন আলাদা একটা ইসলামী ঘরানা তৈরী করতে পারে।
ইসলামিক লোকজন যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী মেইনস্ট্রীম হওয়ার জন্য একোমোডেটিভ এপ্রোচ গ্রহণ করে, আমার আশঙ্কা, তাদের অবুঝ পাঠকগোষ্ঠী তাতে বাধা দিবে। ‘গেল গেল’ বলে রব তুলবে।
কথার কথা, কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাসের মত সাহিত্য বইয়ের পাশাপাশি কোরআন, হাদিস, সিরাতের মত ধর্মীয় বই, এই দৃশ্য ধর্মের বিপক্ষ লোকদের কাছে যতটা অকল্পনীয়, ধর্মের পক্ষভুক্ত লোকদের কাছেও ততটা অকল্পনীয়। অথচ, সমাজটা হলো সবকিছুকে মিলে। আমরা এই সবকিছুই পড়ি।
আসলে ইসলামের বিজয় বলতে কী বুঝায়, তা ইসলামিস্টদের কাছে ক্লিয়ার না। কোরআনের ভাষা মোতাবেক ইসলামের বিজয় বা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়া মানে ইসলামের আধিপত্য কায়েম হওয়া। এই আধিপত্য পরিমাণগত নয়, গূণগত। সে যাই হোক, এসব বিষয়ে কথাবার্তা চলুক, আপাতত এটাই চাই।
ইশতিয়াক হোসাইন ভূঁইয়া: ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশাল পরিসরের মেলায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে আলাদা করে আর ইসলামি বইমেলা আয়োজনের দরকারই পড়ে না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যদি-তবে, এটাকে আমাদের ডিসিপ্লিনে বলে একটা ভুল যুক্তি পদ্ধতি। ফেলাসি। পজিটিভ কোনো কাজ যদি-তবে দিয়ে হয় না। বরং সেটা করে দেখাতে হয়।
বিরোধীপক্ষ আমাকে স্পেস দিচ্ছে না, এটা মোনাফেকিও নয়, ষড়যন্ত্রও নয়। বরং এটা তাদের পজিশন ও কৌশল। আমাকে আমার কেপাসিটি দিয়ে তাদের পজিশন ও কৌশলকে মোকাবিলা করতে হবে।
নর্দমার পাশে যারা খাল কেটে দিতে পারে না, তারা সমাজকর্মী কিংবা বিপ্লবী হতে পারে না। আমরা এ মুহুর্তে কিছু করতে না পারি, কী করা দরকার, সেটা তো অন্তত বুঝার চেষ্টা করতে পারি।
what one thinks today to do, by tomorrow or day after tomorrow, he sees it’s done. so, conceptual clarity first.
One Comment