নাস্তিক্যবাদ থেকে কীভাবে ফিরলেন কবি চৌধুরী গোলাম মাওলা

বেশ আগে। চৌধুরী গোলাম মাওলা ভাই এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটা আবৃত্তি সংগঠনের আমন্ত্রণে। প্রশিক্ষক হিসেবে। আমি উনার সাথে দেখা করতে গেলাম চাকসুতে। প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পরে একপ্রকার জোর করে উনাকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম। তখন বিকেল হয়ে গেছে। উনি বেশ ক্লান্ত। অনুরোাধ করলাম, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‌‘ছন্নছাড়া’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনানোর জন্য।

চৌধুরী গোলাম মাওলা ভাই আমাকে কেন জানি বিশেষ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখেন। এক কাপ চায়ের ‌‘বিনিময়ে’ আমাকে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কবিতাটি শোনালেন। তখন অতটা ডিজিটাইলাজেশন হয়নি। আমি একটা এমপিথ্রি রেকর্ডার সব সময়ে সাথে রাখি। উনার অনুমতি নিয়ে সেটাতে আবৃত্তিটা রেকর্ড করলাম।

আমাদের এক সহকর্মী। ছাত্রজীবনে ছিল একটা আবৃত্তি সংগঠনের পরিচালক। প্রগতিশীল ঘরানার। পরীক্ষার হলে ডিউটি করার সময় একদিন ওকে মাওলা ভাইয়ের আবৃত্তিটা শোনার অনুরোধ করলাম। হেডফোন লাগিয়ে সে আবৃত্তিটা মনোযোগ দিয়ে শুনলো এবং আবৃত্তির বেশ তারিফ করলো।

মাওলা ভাইয়ের এই আবৃত্তিটা কতোদিন কতোবার যে শুনেছি, তার কোনো ইয়াত্তা নাই। সে সময়ে সারাক্ষণ কানে বাজতো,

‍“প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে। প্রাণ থাকলেই স্থান আছে, মান আছে, সমস্ত বাঁধা-নিষেধের বাইরেও আছে অস্তিত্বের অধিকার। … প্রাণ আছে, প্রাণ আছে। শুধু প্রাণই এক আশ্চর্য সম্পদ, এক ক্ষয়হীন আশা, এক মৃত্যুহীন মযার্দা।”

আবৃত্তিকারের চেয়েও মাওলা ভাইয়ের বড় পরিচয় হচ্ছে তিনি গীতিকার, সুরকার, গায়ক। এবং কবি।

ক’দিন আগে উনাকে দেখার জন্য গিয়েছিলাম। উনার চট্টগ্রাম শহরের বাসায়। আমাদেরকে দেখে তিনি আবেগ আপ্লুত হলেন। অনরেকর্ড বললেন অনেক বিষয়ে অনেক কথা। বললেন উনার বিখ্যাত কিছু গান রচনার পটভূমি। সুরারোপের ইতিহাস। সেসব পাবেন ‍‌‘সামাজিক আন্দোলন’ ইউটিউব চ্যানেলে। ‌‘যুক্তি ও জীবন’ চ্যানেলে শুধু এই ক্লিপটা দিয়েছি উপর্যুক্ত শিরোনামে।

অসুস্থ অবস্থাতেও আমাদেরকে প্রায় চার ঘণ্টা সময় দেয়ার জন্য শ্রদ্ধেয় মাওলা ভাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এ ধরনের আরো লেখা

আফতাব, সত্যিই তুমি আজ লাশ হলে

কমসে কম আজ থেকে পনের বছর আগের কথা। খুব ভোরে শুনলাম...

কামরুল হুদা স্মরণে

সব ছেড়ে একদিন যেতে হবে, থাকবে শুধু কিছু স্মৃতি। থেকে যাওয়া...

মন্তব্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

প্লিজ, আপনার মন্তব্য লিখুন!
প্লিজ, এখানে আপনার নাম লিখুন

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকhttps://mozammelhq.com
নিজেকে একজন জীবনবাদী সমাজকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলসফি পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। থাকি চবি ক্যাম্পাসে। নিশিদিন এক অনাবিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। তাই, স্বপ্নের ফেরি করে বেড়াই। বর্তমানে বেঁচে থাকা এক ভবিষ্যতের নাগরিক।

সম্প্রতি জনপ্রিয়

মেয়েদের চাকরি করা বা না করার সুবিধা-অসুবিধা ও কর্মজীবী নারীদের সংসার জীবনের ভালোমন্দ

“কর্মজীবী মহিলা যারা সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার জন্য চাকরি...

ডিভোর্সি নারীদের সমস্যা

কোনো মেয়ের যখন ডিভোর্স হয় তখন সবাই ভাবে, দোষ...

ইসলামে ‘শ্বশুরবাড়ি’ ও ‘যৌথ পরিবার’ বিতর্ক প্রসংগে কিছু মন্তব্য

(১) সম্পত্তি বণ্টন ব্যবস্থা হতে শিক্ষণীয় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার...

বিবেক হলো আবেগের শুদ্ধতম বহিঃপ্রকাশ

একটু আগে খেয়াল করলাম, একজন দৃশ্যত আবেগী পাঠক/দর্শক আমার...