সাঁই সাঁই করে ছুটে চলছে অগুণিত অটো রিক্সা। গেল গেল লেগে গেল। না, লাগেনি। থেমে গেছে অথবা পার হয়ে গেছে গা ঘেঁষে। দু’এক ইঞ্চির ভিতরে। এমনই বেপরোয়া ও দক্ষ রাজশাহী শহরের অটোরিক্সার ড্রাইভারেরা। রাজশাহী যেন অটোরিক্সার শহর। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে কিছু নাই। সরকারী গাড়ি বাদে বড়লোকেরা সেখানে কিছু কার জীপ চালায়।

রাজশাহী শহর যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। যত্রতত্র ময়লা ফেলার বদভ্যাস ওখানকার লোকদের নাই। লোকজন খুবই হাম্বল। কোঅপারেটিভ। জিনিসপত্রের দাম কম। গা জ্বলা করা অতিরিক্ত গরম। রাজশাহীতে কারেন্ট যায় না। এসির ব্যবহার অনেক বেশি। ছোটখাট রেস্টুরেন্টেও কয়েকটা এসি লাগানো।

ছিলাম সেখানে তিনদিন। ছোট মেয়ের ইচ্ছা সেখানে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। তাই যাওয়া। হোটেলে ছিলাম। খুবই সাধারণ মানের হোটেল। পাঁচতলা হোটেল। আমরা ছিলাম চতুর্থ তলায়। রাস্তার পাশে।

বাথরুমে নাই শাওয়ারের ব্যবস্থা। বেসিনের নবটা ঘোরাতে গেলে সরে যায়। একটা বালতি সাথে একটা মগ। হাই কমোডের ব্যবস্থা নাই। রুম সার্ভিস বলে কিছু নাই। আমি ছেলেটাকে বললাম, তোমাদেরকে কিভাবে ডাকবো? সে বলল, মোবাইলে ফোন করবেন। হাতলছাড়া একটা বসার চেয়ার। আড়াআড়ি করে দুটো বিছানা। একটা সিলিং ফ্যান অনেক পুরনো।

সবচেয়ে যেটা সুবিধা হইছে, ছোটবেলায় আমাদের খাট/পালংকের সাথে মশারীর স্ট্যান্ড লাগানো থাকতো। তাতে কাপড় শুকাতে দেয়ার অথবা ঝুলানোর সুবিধা পাওয়া যেত। রাজশাহীতে হোটেল এশিয়ার যে রুমে আমরা ছিলাম সেখানে এই সুবিধাটা ছিল। হোটেলটার উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল, এসি থাকা। একটা পুরনো এসি। কিন্তু ভালোই চলেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মী রুমটা বুক করার কাজে সহযোগিতা করেছেন। হয়তো ভর্তির মৌসুম বলে অন্য কোন ভালো হোটেল পাননি। এতটুকু যে করেছেন তাতেই আমি অনেক কৃতজ্ঞ।

খাটের সাথে সেট করা মশারি স্ট্যান্ডে কাপড় শুকাতে দেওয়া কিংবা ঝুলিয়ে রাখা, এইটার যে কি মজা যারা ব্যবহার করেছেন তারাই বুঝতে পারবেন। এখনকার সময়ে আধুনিকতার দাবি, রুমের মধ্যে মশারির স্ট্যান্ড থাকবে না। আলনা থাকার তো প্রশ্নই উঠে না। এরপরে দেখা যায় চেয়ারের হাতলে, দরজার পিছনে বাথরুমে, সব জায়গাতে কাপড় ঝুলানো। আধ ভেজা বা ঘামে ভেজা কাপড় তো আর ওয়ার্ড্রোবের মধ্যে রাখা যায় না।

যদ্দুর দেখেছি লোকজনের প্রধান বিনোদন হলো পদ্মার পাড় ধরে হাঁটা। রাজশাহীর লোকেরা ভাজাপোড়া ফাস্টফুড খুব পছন্দ করে। তেলছাড়া পরোটা নামক জিনিসটার সাথে ওরা যেন অপরিচিত। রাজশাহী যাওয়া মানে মালাই চা খাওয়া। চমৎকার স্বাদ। রাজশাহীতে লোকেরা চা খায়। সিগারেটও বেশ চলে। এজন্য বোধ হয় রাজ্জাক হুজুর সিগারেট খাওয়া হারাম করেছেন।

বার্ধক্যকালে কাউকে দেখে তার যৌবনকাল কল্পনা করার মতো বিস্তীর্ণ চরপড়া পদ্মাকে দেখে বুঝার চেষ্টা করছিলাম, এক সময় এটি ছিল প্রমত্তা। প্রবল। সুবিশাল। সমুদ্রতুল্য। ওখানকার পানিতে আয়রন অনেক বেশি। বুঝতে পারছিলাম না, ওখানকার সুন্দরীরা কুন্তলচর্চা কীভাবে করেন। হতে পারে ওরা পুকুরের পানি ব্যবহার করে।

ইন্ডিয়া তাদেরকে পানিতে মারছে, অথচ সেখানকার লোকদের মধ্যে এন্টিইন্ডিয়ান মনোভাব দেখি নাই। কাউকে রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলতেও শুনি নাই। আমাদের চট্টগ্রাম অঞ্চলে সব জায়গাতেই শুনবেন, মানুষ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে এরে ওরে সমানে গালাগালি করছে। কাউকে কাউকে মেয়রের খুব প্রশংসা করতে শুনলাম। পুরো শহর জুড়ে মেয়র আর উনার পিতার ছবি। মনে হলো রাজশাহী উনাদেরই শহর।

রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে উন্নয়নের কাজ চলছে। কয়েক বছর পরে রাজশাহী শহরকে চিনতে কষ্ট হবে। ওখানকার সামাজিক পরিস্থিতি অনেক উন্নত। অপরাধমূলক কাজ খুব কম হয়। বলা যায়, রাজশাহী একটা নিরাপদ নগরী।

অভিজ্ঞতায় দেখেছি, উন্নয়ন একটা ফাঁদ। জীবনমানের উন্নয়ন মানে মূল্যবোধ ব্যবস্থায় ধ্বস। মূল্যবোধ হলো গরীবের আত্মপরিচয়, বড় লোকের ফ্যাশন। উন্নয়নের সাথে মূল্যবোধের সম্পর্ক বিপরীত অনুপাতের।

পাশ্চাত্য থেকে আমদানী করা অপমূল্যবোধের বিচিটা ফেলে দিয়ে উন্নয়নের মিষ্টিটা কীভাবে খাওয়া যায়, সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র সেই ফর্মূলা বের করা এবং একে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে।

যাহোক, প্রথম দিন সকালে গেছিলাম বরেন্দ্র মিউজিয়াম দেখতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেপুটি রেজিষ্ট্রার এটি পরিচলনা করেন। ভদ্রলোক আমাদের যথেষ্ট সম্মান করলেন। চা খাওয়ালেন। তিনিও নিশ্চিত করলেন, রাবি, রুয়েটএর টিচাররা রাজশাহীতে এলিট, বড়লোক।

চট্টগ্রামে আমরা বড়জোর উচ্চ মধ্যবিত্ত। আমাদের একজন টিচার ছিলেন রাজশাহী অঞ্চলের। তিনি বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকে শুনে এসছেন এ’রকম কথা ‘পড়াশোনা করে একটা সরকারী চাকুরী খুঁজে নাও। সারা বছর ঘি দিয়ে ভাত খাও।’ একটা সরকারী চাকরী পাওয়া রাজশাহী অঞ্চলের লোকদের এখনো সর্বোচ্চ চাওয়াপাওয়া।

বরেন্দ্র মিউজিয়াম দেখে যে কারো মনে হতে পারে, রাজশাহী সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের আবাসস্থল। যে কোনো জাদুঘরে আপনি যান, দেখবেন সব মূর্তি। যেন ওই অঞ্চল মূর্তিপুজারীদের। হাতে লেখা কিছু কোরআন আর কিছু মুদ্রা ছাড়া মুসলিম নিদর্শন খুব একটা দেখলাম না। হতে পারে, ইসলাম প্রতীকবিরোধী ধর্ম, এটি তার কারণ।

বড় বড় কিছু তরবারি দেখে আমার মেয়ে খুব অবাক হয়ে জানতে চাইলো, এগুলো লোকেরা বহন করতো কীভাবে? তাকে বললাম, সম্মুখযুদ্ধের কল্পনা করতেও এখনকার পুরুষরা ভয় পায়। আগেকার পুরুষেরা এখনকার পুরুষদের মতো দুর্বল, ভীরু ও স্বাস্থ্যহীন ছিল না। তারা ছিল পরিশ্রমী, শক্তিশালী ও সাহসী। মারো অথবা মরো এই ছিল তাদের নীতি।

বরেন্দ্র মিউজিয়ামের কিউরেটর মহোদয় বললেন, এখনকার টিচারেরা ক্বদাচিৎ লাইব্রেরীতে আসেন। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, দেশবরেণ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের লাইফটাইমে গড়পরতা লেখার সংখ্যা ছিল ২০ থেকে ২৫টি। আর এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা খুব দ্রুত প্রচুর গবেষণা প্রবন্ধের লেখক বনে যান। এই পার্থক্যের কারণ, আগেকার শিক্ষকগণ ছিলেন আপদমস্তক শিক্ষক। তারা যতটুকু জানতেন তার ক্বিয়দাংশ লিখতেন।

এখনকার শিক্ষকগণ মূলত চাকুরীজীবী। জ্ঞানার্জন তাদের কাছে তুচ্ছ, অজুহাত মাত্র। পয়েন্ট অর্জন করা তাদের টার্গেট। আমাদের পূর্ব প্রজন্মের সাথে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষকদের এই গরমিলের কারণ Dunning–Kruger effect। যে যত কম জানে তার এক্সপোজার এবং আত্মবিশ্বাস তত বেশি হয়।

আগেকার শিক্ষকগণ দল সমর্থন করতেন মূল্যবোধের একটা সীমার মধ্যে থেকে। ব্যতিক্রম বাদে এখনকার শিক্ষকগণ ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দর। তাদের পরীক্ষা পদ্ধতিও প্রশংসনীয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সেরা। রাবি’তে ৯টা থেকে ১০টা একটা পরীক্ষা, ১১টা থেকে ১২টা আরেকটা পরীক্ষা, ১টা থেকে ২টা এরপরের শিফটের পরীক্ষা, ৩টা থেকে ৪টা নেক্সট শিফট। এভাবে ৩দিনে তিন গ্রুপে সর্বমোট ১২টা শিফটে সব পরীক্ষা শেষ।

অভিভাবকদের বসার জন্য প্রত্যেকটা ফ্যাকাল্টি বিল্ডিংএর সামনে ত্রিপল আর প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে বসার ব্যবস্থা। বিল্ডিংয়ের সামনে পর্যন্ত রিক্সা যেতে পারে। খুব অল্প সময়ের জন্য কয়েকটা রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে।

শেষের দিনে একটা ছেলের সাথে পরিচয় হলো। রাজশাহী কলেজে মাস্টার্স পড়ছে। পরীক্ষার গ্যাপে গ্যাপে পড়ে সে অনার্স পাশ করেছে। পলিটিকাল সায়েন্সে। প্রায় ৩ বছর থেকে সে ফ্রিল্যান্সিং করে। মূলত ওয়েব ডিজাইনের কাজ। মাসে অন এন এভারেজ এক হাজার ডলার ওর ইনকাম। সে যে এত টাকা ইনকাম করে সেটা সেই কাউকে বলে না। সবাই জানে সে নিজের টাকায় চলে, ব্যস এতটুকু।

আমাদের এখানে তো পরিবারের কোন সদস্য কত টাকা ইনকাম করে, সেটা আশপাশের অনেকেরই মুখস্ত। যৌথপরিবার ব্যবস্থা এর কারণ খুব সম্ভবত।

তথাকথিত পড়াশুনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা ওই ছেলেটার মাস্টার্স ক্লাসে শ’ তিনেক স্টুডেন্ট। এক-দেড়শো ক্লাস করে। বাকীরা এডমিশন নিয়ে শুধু পরীক্ষা দেয়। ক্লাসে যারা যায় তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি।

৬ ভাইবোনের মধ্যে সে ছোট। অবিবাহিত। সে তার বাবা-মাকে দেখাশোনা করে। বড়রা কোনো খোঁজ খবর নেয় না। আরেকটা ছেলে অটো নিয়ে বসে ছিল। সেও রাজশাহী কলেজে পড়ে। তারসাথেও পরিচয় না দিয়ে অনেক কথা বলেছি। সেও জানালো, এখানকার লোকেরা his his whose whose অর্থাৎ যার যার তার তার নীতিতে অভ্যস্ত। নিজের বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকতে পছন্দ করে। ইন জেন্রেল আত্মকেন্দ্রিক।

বলতে ভুলে গেছি। পদ্মার পাড় ধরে হাঁটার সময়ে নদীর দিকে মুখ করে বসে থাকা একটা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই, পানি কোনদিক থেকে কোনদিকে যাচ্ছে?’ ও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। বললো, আমি যদি ভুল না করে থাকি আপনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার…!

আমি পরিচয় দিলাম। ওর পরিচয়ও জানলাম। সে রাবি’র ছাত্র। পাশে একজন স্কার্ফ পড়া সুন্দর মেয়েকে দেখলাম। সেও রাবি’র স্টুডেন্ট। নাম ফাতিমা। তারা পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছে দেড় বছর হলো। তাদের স্ব স্ব পরিবার এখনো তাদের খরচ বহন করে।

আগামীতে কোনোদিন এ’রকম কারো অতিথি হয়ে এক্সক্লুসিভলি সামাজিক আন্দোলনের কাজে আবারো রাজশাহী যাওয়ার ইচ্ছা আছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে চাপাই গিয়ে আমবাগান দেখে আসা হয়নি। নেক্সট টাইম ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

মিরানা লিপি: আমার প্রিয় শহর আমাদের শহর রাজশাহী।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: রাজশাহীতে সব লেভেলের লোকেরা দৃশ্যত সুখেই আছে। টাকা-পয়সা থাকলে তো থাকার জন্য রাজশাহী শহর আসলেই একটা অসাধারণ জায়গা। রাস্তার পাশে এবং মাঝখানের আইল্যান্ডে রাজশাহীর মত এরকম ফুল ইত্যাদি থাকলে আমাদের এখানকার লোকেরা এক রাতের মধ্যে সব ছিঁড়ে ফেলত। রাজশাহী শহরের লোকেরা নিজেদের শহরকে যত্ন করে। আপন মনে করে। তাদের মাছ রান্না ভালো। গোশত রান্না ততটা ভালো লাগেনি।

মো: আলাউদ্দিন মজুমদার: এই জিনিষটা আমাকে বেশি টানে রাজশাহী শহর যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। যত্রতত্র ময়লা ফেলার বদভ্যাস ওখানকার লোকদের নাই। লোকজন খুবই হাম্বল। কোঅপারেটিভ।”

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আলাউদ্দিন ভাই, এমনকি তারা যে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে রিকশা ভাড়া বেশি নিচ্ছে সেটাও কিন্তু স্বীকার করছে। বলে, ‘বুঝেন তো, এখন ভর্তি পরীক্ষা। সেজন্য একটু বেশিই নিতে হচ্ছে। রাস্তায় অনেক ঝামেলা ভিড় …!’ রাজশাহীর লোকজন আসলেই বিনয়ী, আমাদের চট্টগ্রামের মত গাদ্দার টাইপের না।

মোহাম্মদ তৌহিদ রাফি: স্যার এই তলোয়ারগুলা প্যারেড সোর্ড, যুদ্ধে ব্যবহৃত তলোয়ার বেশি ভারি হয় না, মধ্যযুগ আর রেনেসাঁসের ইউরোপীয় তলোয়রের ওজন সাধারণত এক হাতে ব্যবহৃত আর্মিং সোর্ডের ক্ষেত্রে ১ কেজি আর দুই হাতে ব্যবহৃত লংসোর্ডের ক্ষেত্রে দেড় কেজি হতো, গ্রেট সোর্ড ২ বা সর্বোচ্চ আড়াই কেজি হত। তলোয়ার ব্যবহার শক্তির তুলনায় মূলত টেকলিকাল স্কিল আর মাসকুলার এন্ডিউর‍্যান্সের ব্যাপার, যেহেতু তলোয়ার ব্লান্ট ট্রমা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত অস্ত্র না, কাট এন্ড থ্রাস্ট ওয়েপন, তাই সাধারণত তলোয়ারের ক্ষেত্রে আঘাতের ওজনের চেয়ে গতি এবং একুরেসি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বাহ এতো কিছু তো জানতাম না। তবে এই যে সম্মুখ যুদ্ধ তথা কমবেট ফাইটিং এইটা তো অত্যন্ত উচ্চমানের ফিজিক্যাল ফিটনেস এবং একটা বিশাল সাহসের ব্যাপার, যা আগেকার লোকদের অনেক বেশি ছিল।

শাহ আজিজ ইমন: রাজশাহীর পানি আর গরম বাদ দিয়ে সবকিছুই সুন্দর। স্যার সুযোগ হলে আমাদের রংপুর একবার ঘুরে আসবেন। ভালো লাগবে আপনার

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সামাজিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য আমরা ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ cscs এর প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি। এই কাজে তো সারাদেশে ঘুরে বেড়াতে হবে। সেই সুবাদে রংপুর তো অবশ্যই যাবোই যাবো, ইনশাআল্লাহ!

জাহিদ হাসান হৃদয়: আমি গত বছর গেছিলাম রাজশাহী। ওখানকার পরিচ্ছন্নতা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। আমি গেছিলাম শীতে, অফিসিয়াল কাজে। গরমের মতোই ওদের শীতও তীব্র। টুকটাক পদ্মার পাড়ে হাটা, খাওয়াদাওয়া হয়েছে; বরেন্দ্র জাদুঘরে গিয়েছিলাম, দেখেছিলাম তাদের বিদ্যায়তনও। কিন্তু মাত্র দুইদিনের সফরে ওখানকার মানুষদের জীবনাচার সম্পর্কে জানার খুব একটা সময়-সুযোগ মেলে নি। আপনার লেখায় বেশ ভালোই ইনসাইট পেলাম।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমিও মাত্র তিন দিন ছিলাম সেখানে। কিন্তু আমি খুব সূক্ষ্মভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি সেখানকার মানুষের মন-মানসিকতা, সমাজকাঠামো, তাদের সেন্স অফ পলিটি, লাইফ স্টাইল ইত্যাদি। আমার পর্যবেক্ষণ সময়ের পরিসরে সীমিত হলেও সেখানকার লোকজন আমার অবজারভেশনগুলোকে অথেন্টিকেইট করেছে, এটা দেখে ভালই লাগছে। বলাবাহুল্য, একজন বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজকর্মী হিসেবে আমি যখনই যেখানে যাই যার সাথে মিশি অথবা যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমি বোঝার চেষ্টা করি, why people do what they do?

নুসরাত জাহান: আসসালামু আলাইকুম, স্যার। আমাদের বাড়ি রাজশাহীতে। শহরে থেকেছি প্রায় ১২ বছর। আপনার সফরনামা পড়ে নিজের চিরচেনা শহরকে আরো বেশি সুন্দর লাগলো। পরেরবার আসলে চেষ্টা করবেন অপেক্ষাকৃত কম গরম সময়ে আসতে আর এডমিশনের সময় না আসতে। কারণ এ সময় রাজশাহীর স্বাভাবিক গতি একটু ধীরগতির হয়ে যায়। রাজশাহী কলেজ ঘুরে দেখার অনুরোধ থাকলো, অবশ্যই ভালো লাগবে আপনার। রাত ১০ টার দিকে রিকশায় ঘুরতে পারার সুযোগ হলে খুবই অসাধারণ সময় কাটবে আশা করি। আর কুন্তলচর্চার ব্যাপারে রাজশাহীর প্রায় সব মেয়েরাই অত্যধিক চিন্তিত থাকে!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: try to see the big picture beyond the scenario of discrete and particular events. I always do it, and try to enjoy my time with anyone, whoever he or she is. I approach people the way they are, not the way that I prefer.

এক ভুট্টা বিক্রেতা মহিলার সাথে এক সন্ধ্যায় আমাদের দেখা হয়েছিল। কোনো এক রাস্তার ধারে। জায়গার নামটা ঠিক মনে নাই। সে কয়লার আগুনে একটা ভুট্টার স্টিক খোসা ছাড়াইয়া আমাদেরকে পোড়াই দিয়েছিল মাত্র ১৫ টাকার বিনিময়ে। তার ছেলে মেয়েদের গল্প করছিল আমাদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেনে স্মৃতিচারণ করছিল , সে ছোটবেলায় রাঙ্গামাটি গিয়েছিল। সেখানে অনেক বড় বড় পাহাড় দেখেছে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আঙ্কেল, ওই পাহাড়গুলো কি এখনো সেখানে আছে?

আমরা যেখানে ফিরব সেখানে কিভাবে যাব, অটোতে গেলে কত টাকা নিবে, সরাসরি রিকশায় গেলে কত টাকা লাগবে, এগুলো সে আমাদেরকে বলে দিল। রাজশাহীর মানুষদের সরলতা, অকপটতা এবং আতিথিয়তার তুলনা হয় না।

ফয়সাল তারিক: Wonderfully written. Loved the flow and observation. I was born in RU campus and grew up inside and the RU neighbourhood.

University staffs do not earn in the upper band anymore but there lifestyle has changed remarkably thanks to the practice of using credit cards and other loan facilities. Also, another remarkable difference is that in most families both husbands and wives now work which make a significant improvement in family income.

Law and order deteriorated massively but since this is one party rule for more than a decade, people adjusted quickly. People are very anti Indian but they do not express it in general.

মো: ইমরানুল হক নরী: পরিচ্ছন্ন এক শহর, রাজশাহী। রেল স্টেশনের দিকে যাওয়া রোড, পদ্মা পারের প্যারিস রোড,সবুজের বুক চিরে বানানো আন্তঃজেলা বাস চলাচলের রোড, তারই পাশ দিয়ে সরু রোড দিয়ে ভ্যান চলাচল,সাত সকালে ভ্যান দিয়ে মানুষের কর্মস্থলে যাওয়ার ছুটাছুটি, ভ্যানের উপর বসে পা দুলিয়ে সবুজের সৌন্দর্য্য উপলব্ধি, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া, সব মিলিয়ে অসাধারণ। রাস্তার ধারে বসে বয়স্ক মহিলাদের স্বহস্তে বানানো গমের রুটি বিশেষ রেসিপি দিয়ে খাওয়া, সেখানকার মানুষের অনাড়ম্বর জীবন যে কাউকে মুগ্ধ করবে । একবারের জন্যও মনে হয়নি, এটা কোন যান্ত্রিক শহর।

মোহাম্মদ আফিফ ইব্রাহীম ইকরা: চট্টগ্রামের মতো ব্যস্ত শহরের বাসিন্দা হিসেবে রাজশাহী আমার মনে না ধরারই কথা ছিলো। কিন্তু তবুও জানি না কেনো, রাজশাহীকে আমি ভালো না বাসতে গিয়েও ভালোবেসেছি ফেলেছি।

স্যার, কী চমৎকারভাবেই না লিখলেন আপনি!! লেখাটা পড়ে আজ থেকে প্রায় দু’বছর আগে ফিরে গেলাম যেনো। সেবারে আমিও গিয়েছিলাম ভর্তিচ্ছু হিসেবে পরীক্ষা দিতেই, থেকেছিলাম সপ্তাহখানেক।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *