১. পড়ালেখা। পড়া, লেখা, শোনা ও বলা – পর্যায়ক্রমে।

২. পছলাপছলি।

অর্থাৎ প্রিয়জনের সাথে ঘেষাঘেষি, ডলাডলি, মাখামাখি। জ্বী না। ‘ওই কাজ’এর সিরিয়াল আরো পরে।

ছোট মেয়েটা যখন আলাদা থাকাকে প্রেফার করা শুরু করল, তখন ওকে আমার সাথে থাকার জন্য ঘুষ দেয়া শুরু করলাম। পাঁচ টাকা দিয়ে শুরু করে শেষ পর্যন্ত বাড়তে বাড়তে সেটা পঞ্চাশ টাকায় গিয়ে ঠেকলো। একপর্যায়ে ঘুষে আর কাজ হলো না। এরপর হতে বাচ্চাদের সাথে নিয়ে ঘুমানোর মজা হতে আমরা বঞ্চিত।

আর বউয়ের কথা?

উনার নিদ্রাহীনতার সমস্যা। তাই সুবোধ বালকের মতো অল্পতুষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে পড়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

এটি অনস্বীকার্য, ননস্টপ ভালবাসাপ্রবণ একটা মানুষের সাথে তিন দশক টিকে থাকা, এটি মোটেও সহজ কাজ না। তারপরও তো আছেন, রেখেছেন আমাকে ওভারঅল সুখশান্তিতে। আলহামদুলিল্লাহ!

৩. কোলাহলমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো।

নির্জন পরিবেশে গিয়ে যারা মাইক লাগিয়ে গানবাজনা করে তাদেরকে আমার কাছে রীতিমতো পারভার্ট বলে মনে হয়।

৪. সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে তুমুল মোকাবেলায় নির্ভয়ে এগিয়ে যাওয়া। জিপার না খুলে অরগাজমের চেয়েও বেশি সুখ পাওয়ার মতো ব্যাপার। পরিস্থিতি যত উত্তপ্ত হয় আমার মাথা তত ঠাণ্ডা হয়। ঝামেলায় থাকলে ভালো থাকি। সুখে থাকলে ক্লান্তি বোধ করি। অনেক দিক থেকেই মনে হয় আই অ্যাম আ ব্লেজড বয়, আলহামদুলিল্লাহ!

৫. বলাই বাহুল্য, ‘সেই কাজ’ করা একটা প্রিয় অভ্যাস। এ নিয়ে আপাতত কিছু না বলি। পাবলিকলি এই এজেন্ডায় যত কম কথা বলা যায় ততই ভাল।

৬. মানুষের সাথে সময় কাটানো।

বাবার মতো আমারও শিশুদের সাহচর্য খুব ভাল লাগে। মাহবুব সাহেব (আমার বাবা) একমাত্র স্ত্রীর সাথে ৪০ বছর সংসার করে ১০ সন্তানের পিতৃত্ব অর্জন করেছিলেন। উনার অন্যতম প্রিয় ডায়লগ ছিল, ‘এই ফোয়ার ঝাঁক …(এই যে ছেলেমেয়ের ঝাঁক …)’।

আমার জেনারেশানের সবার মতো আধুনিকতা আর নারীবাদের শিকার। ট্রেপড। মাত্র এক জেনারেশানের মধ্যে পরিবারের বাচ্চা কাচ্চা সংখ্যা ১০ থেকে ২এ নেমে এসছে। কিছু বলার নাই, হায় আফসোস করা ছাড়া। তবে আমার চেয়েও বেশি আফসোস করেন তিনি।

ইয়াং ছেলেমেয়েদের সান্নিধ্য ভাল লাগে। এরা সুন্দর। সরল। কমিটেড। তুলনামুলকভাবে নির্লোভ। সাহসী। শক্তিশালী। সবচেয়ে বড় কথা ধর্ম ও মতাদর্শ নির্বিশেষে এরা জীবনবাদী।

বয়স্কদের ভাল লাগে আলাদা কারণে। এক একজন পরিণত বয়সের পুরুষ বা মহিলা যেন এক একটা বটবৃক্ষ, মাথার উপরে বিস্তৃত ছায়া। যেন নির্ভার আশ্রয়। সাগরসঙ্গম সন্নিকটস্থ যেন এক একটা ভরপুর নদী।

তাদের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা আর জীবন সংগ্রামের গল্প শুনতে ভাল লাগে। তাদের ঢিলেঢালা চামড়াগুলো ধরে ধরে দেখতে ভালো লাগে। মৃত্যু যবনিকার ওপারে হারিয়ে ফেলা আপনজনদের খুঁজে পাই বয়োবৃদ্ধদের মাঝে।

৭. গান যতটা ভাল লাগে তারচেয়ে বেশি ভাল লাগে সুর। আনুস্কা শংকরের সেতার শুনতে সবচেয়ে ভাল লাগে। নজরুল সঙ্গীত বেশি প্রিয়। ভালো লাগে কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি শুনতে।

৮. পশু-পাখি পালতে ভাল লাগে।

ছোটবেলায় গরু পালতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন হল থেকে বাসায় গেলে কাঁচি নিয়ে গরুর জন্য ঘাস কাটতে বের হতাম। এখনো বাসার সামনে থেকে ভোরবেলায় খরগোশের জন্য ঘাস কাঁটি। প্রতিদিন এক মুঠো। হাঁস, মুরগী, কবুতর, খরগোশ, পাখি পালন করি।

একসময়ে আমার বাসা ছিল একটা ছোটখাটো ফার্মহাউজ। এখনকার বাসায় সামনের পেছনের জায়গা কম। তাই পশুপাখির সংখ্যাও কম। ঘোড়া পালার সখ হয়তো ইহজীবনে পূরণ হবে না। ছাগলের জন্য খুব মায়া। মেয়েদের পোষা বিড়াল আমার পিছে পিছে ঘুরে।

৯. কৃষিকাজ খুব প্রিয়।

শিক্ষক না হলে কৃষক হতাম। বিসিএস দিতাম না। দেইনি। দিলেও পাশ করতাম না নিশ্চিত। মিডিওকারেরাই বিসিএস পাশ করে। মেধাবীরা সবজান্তা হয় না। যারা এভারেইজ ক্যালিভারের তারাই বিসিএস পাশ করে। সাধারণত।

আমাদের এন্টায়ার গোষ্ঠীতে ব্যবসায়ী নাই। আমার বাবা নাজিরহাট বাজারে দুই বছর কাপড়ের দোকান দিয়ে ফতুর হয়েছিলেন। আমরা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। মাসের শেষে বেতনের টাকায় হিসাব করে চলি।

রোগীর সেবা করার মতো নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করা আমার অন্যতম প্রিয় অভ্যাস।

১০. নয় নাম্বার পয়েন্ট থেকেই বুঝছেন, রোগীর সেবা করতে আমার খুব ভাল লাগে। রোগীকে নিয়মিত ঔষধ খাওয়ানো, পয়-পরিষ্কার করার মধ্যে এক ধরনের প্রফাউন্ড সেটিসফেকশান আছে। সেবাশুশ্রষায় কাউকে সেরে উঠতে দেখতে খুব ভাল লাগে।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

ফয়সাল মুহাম্মদ: এসবের মধ্যে দিয়েই প্রতিটি দিন পার করছি। শুনছি, বলছি, দেখছি, উপলব্ধি করছি। যতটুকু কাছে গেলে সত্যিই কাছে যাওয়া বলে তাই তো আছি। ভালোবাসাটা বেঁচে থাকুক। স্বপ্নগুলো পূরণ হোক।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমাদের স্বপ্নের মাঝেই আমরা আসলে বেঁচে থাকি যদি আমরা হই স্বপ্নপূরণে একনিষ্ঠ।

নয়ন মজুমদার: আমি চাকরি না করলে বিজনেস করতাম।সম্পূর্ণ পরিবার বিজনেস নির্ভর। সুযোগ পাইলে যে কোন সময়ে নেমে যাবো। পশু পাখি পালার শখ আছে।ছোটকালে মুরগি পালতাম। ১০/১২ টা দেশী মুরগী ছিলো।ছাগল পালা হয় নাই।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ব্যবসা সবচেয়ে নোবেল প্রফেশন। যদিও অনেকের সেটা সয় না।

তামান্না: স‍্যার আপনার প্রতিটি পোস্টের লেখার ধাচ থেকে শুরু করে সব কিছু আমার খুব ভালো লাগে। আপনি শিক্ষক হিসেবে যেমন আদর্শবান একজন পিতা হিসেবে ও আদর্শবান।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: Teaching is my passion, more than profession.

তৌহিদুল হাসান: বড়দা! আপনার ভালো লাগার পয়েন্ট মাত্র ১০ টা! অথচ একজন পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষের ভালো লাগার পয়েন্ট ২০০- ৫০০ হতে পারে!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভালোলাগার সংখ্যা যত বেশি হোক, সব ভালোলাগা সমান পর্যায়ের হয় না। ইন্টেনসিটির পার্থক্য না থাকার কথা নয়।

মোতালেব পারভেজ: আসসালামু আলাইকুম স্যার। আশা করি সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।

৭ নম্বরের প্রথমটুকু মিলে গেছে। আমার কাছে গানের সুরই গানের প্রাণ। সুর ভালো হলে গানকে বেহেশতি কোনো ব্যাপার বলে মনে হয়। বেহালার সুর ভালো লাগে। আবৃত্তি নিজে করতে ভালো লাগে। মূলত আবৃত্তির নেশা বাড়ছে প্রেম করার পর থেকে।

৮.পশুপাখির মধ্যে ঘোড়া আর ছোট নির্বিষ রঙিন সাপ খুবই প্রিয়। কখনো সুযোগ হলে এই দুইটা প্রাণী পুষব।

৬.মানুষের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে। মানুষকে জানতে ভালো লাগে। তবে এখন মানুষের নাম ঠিকানা বেশি জানা হয়, মানুষকে জানার সুযোগ কমে গেছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সুর হলো গানের প্রাণ। গানের কথা হল বাহ্যিক সৌন্দর্যের মতো।

ওহিদুল আলম: ভালই লাগলো। কিন্তু দুই নম্বর পয়েন্টের “ওই কাজ” আর পাঁচ নম্বর পয়েন্টের “সেই কাজ” এই দুই কাজ বুঝিনি! আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টের সবাই তো আর আপনার মত প্রফেশনাল দার্শনিক না। আমার মত অনেক সাধারণ মানুষ আছে। তাদের জন্য একটু বুঝিয়ে বলতে হবে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যা বুঝিয়ে বলা লাগে না তাই ‘সেই কাজ’। অথবা বলা যায় ‘ওই কাজ’। এতোটুকুতেও যারা বোঝে না তারা হয়তো বুঝেও না বোঝার ভান করছে। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে বোঝানোর দরকার নাই। অথবা তাদের এখনো বোঝার বয়স হয় নাই। তাই বড়দের ব্যাপার স্যাপার তাদের না বুঝলেও চলবে।

শফি এম.: স্যার- ১. পড়ালেখা এতো ভালো লাগলে দর্শনে অনার্স-মাস্টার্স! পিএইচডি? ২. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জামাত-শিবিরের প্রভাবে শিক্ষক হয়েছেন।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: পড়ালেখা ভালো লাগে। তাই তো পড়াশোনা করি। আপনার জানা থাকার কথা, ডিগ্রি অর্জন এবং জ্ঞান অর্জন, দুইটা এক জিনিস এক না। মোরওভার formal and institutional education and position often regards as certified ignorance. আমরা যখন পড়ালেখা করি তখন হরে দরে গণহারে লোকেরা ভালো রেজাল্ট করত না। বরং যারা আসলেই ভালো তারাই শুধু ভালো রেজাল্ট পেত এবং কন্সিস্টেন্টলি ভালো করত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণি পেয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভের আগে মেট্রিক ও ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে আমি দুটোতেই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলাম। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলসফি ডিপার্টমেন্টে যা কিছু পড়ানো হয় সেগুলোতে আমি একটি স্বতন্ত্র ধারা। আমি যে বিষয়গুলো পড়াই সেগুলো পড়ানোর জন্য তেমন যোগ্যতা লাগে। অন্তত দুইটা বিষয়ে বাংলাদেশে আমি একমাত্র/অগ্রগণ্য শিক্ষক: ফিলসফি অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং কনটেম্পরারি এপিসটিমোলজি।

ছাত্রজীবনে আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিলাম। কর্মজীবনের শুরুর এক দশক আমি সাদা দলের শিক্ষক নেতা ছিলাম। আমার এই অতীত নিয়ে আমি কখনো অনুশোচনা করি না। কারণ জ্ঞানত এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো অন্যায় করি নাই। আমাদের অনেক সাংগঠনিক ভুল ছিল, সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এগুলো কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। আপনার ভালো লাগে না, সেটা আপনার ব্যাপার।

আমার সেই রকম গাটস আছে বলেই আমি স্বেচ্ছায় সেই নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ত্যাগ করে একটা স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেছি, আপনি হয়তো জানেন না। বর্তমানে আমি ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র (সিএসসিএস)’ এই নামের একটা প্লাটফর্মে কাজ করি। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন বাংলাদেশে ক’জন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক আছেন।

ছাত্রজীবনেও আমি নেতা ছিলাম, যখন শিক্ষক রাজনীতি করেছি তখনও নেতা ছিলাম। এখনো আমি সামাজিক আন্দোলনে একটা নেতৃস্থানীয় ভূমিকাপালন করছি। From my early life till today, my existence is meant for leadership, try to know. বলা বাহুল্য, যারা কোনোকিছুতে উল্লেখযোগ্য এবং নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় থাকে তাদের ব্যাপারে বিরোধীপক্ষের অনেক ধরনের প্রচারণা থাকে। নৈতিক সততাসম্পন্ন যে কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে যে কোনো শোনা কথা বিশ্বাস করার আগে খোঁজখবর নেওয়া।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *