একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য ঢাকা যেতে হলো। বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ। শনিবার রাতে বিয়ে। মাঝখানে দু’দিন ফ্রি। এই অবসরে গেলাম শিবচর। পদ্মা সেতুর ওই পাড়। গ্রামের নাম পাঁচ চর (প্রচলিত উচ্চারণে পাঁচ্চর)। সিএসসিএস-এর অধ্যয়ন সহকারী ফয়সালদের বাড়ি। জেলা মাদারীপুর।

ফয়সাল স্বচ্ছল কৃষক পরিবারের সন্তান। তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত হয় সবকিছু। ধান, গম, ভুট্টা, পেয়াজ, রসূন। হোয়াট নট? কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো দোতলা টিনের ঘর। প্রবেশমুখে সামনের বারান্দা। এরই একপাশে আমি ছিলাম। আরেকপাশে একটা বড় খাটের উপর পাটের বিশাল স্তুপ।

ফয়সালের বড় ভাই পার্শ্ববর্তী একটা স্কুলে চাকরী করে। নাম ফজলু। রাত তখন সাড়ে তিনটা। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম ফজলু উঠে জ্যাকেট গায়ে দিয়ে পাটের আঁটি মাথায় তুলে নিয়ে ভ্যানে লোড করছে। সকালে দেখলাম উঠোনে ওর মায়ের সাথে চুলার পাশে ফজলু বসে আছে। মুখে ক্লান্তির ছাপ নাই।

জিজ্ঞাসা করে জানলাম, ফরিদপুরের একটা বাজারে ওই পাঠ বিক্রী করে সে ভোর হওয়ার পরে ফিরে এসেছে। মাঠের কাজে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেই জন্য এ’ধরনের বাজার বসে খুব ভোরে।

ফয়সালরা চার ভাই। সবার ছোট ফখরুদ্দীন। বারো পারা হেফজ করে এখন বাসায়। ফখরুদ্দীন খুব ভোরে বাজারে গিয়ে সাত লিটার দুধ বিক্রী করে আসলো। ওদের দুধের গাই দুইটা। আসার পথে আমার জন্য খেজুরের রস কিনে আনছে।

পারিবারিক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ঢাকায় লোকজনের সাথে দেখাসাক্ষাতে সময় না দিয়ে আমি প্রেফার করেছি গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য দেখাকে। প্রচণ্ড শীতে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমালাম। ফজরের পরে আবার ‘সুন্নতি ঘুম’। উঠেছি বেলা আট-সাড়ে আটটায়। কম্বল থেকে মুখ বের করতেই জানালা দিয়ে দেখলাম যেন একটা হলুদের চাদর। সমুখের মাঠ জুড়ে সরিষার ক্ষেত।

সাম্প্রতিক সময়ে মাদারীপুরে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে অকল্পনীয়। ব্যাপক অবনতি ঘটেছে পানি প্রবাহের। স্থানীয়দের ধারণা, পদ্মা ব্রীজের কারণে এমন হয়েছে। ওদের বাড়ির পাশের ময়নাকাটা খালে ঘোর বর্ষাতেও বেশি পানি ছিল না। এ’কারণে পাট পঁচাতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

ফয়সালদের বাড়ি যেখানে সেখানে পদ্মার ব্যাপক স্রোতের কারণে মাঝে মাঝে লঞ্চডুবি হতো। এখন সেখানে জেগে উঠা বিস্তীর্ণ চরে লোকেরা ঘরবাড়ি বানানো শুরু করেছে।

মাদারীপুর আমার স্বপ্নভূমি। ছাত্রজীবনে নানাকারণে প্রেম করা হয়ে উঠেনি। পরিণয়সূত্রে আমার জীবনে আসে প্রেম-ভালোবাসা-নারীসঙ্গ ইত্যাদি।

মাদারীপুর থেকে এক স্কুল শিক্ষকের মেয়ে পড়তে এসেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভালো রেজাল্ট করায় চবিতে তার চাকুরী হয়ে যায়। সেই সুবাদে আমার সাথে ঘটে যায় তার গাঁটছড়া বাঁধা। নদীপাড়ের মেয়ে স্থিত হয় সমুদ্রসন্নিকটে ।

বিয়ের পরই প্রথম ঢাকা পেরিয়ে আমি ওদিকটায় গিয়েছি। সেটা ১৯৯৪ সালের শুরুর দিকে। ভ্যানের উপরে গাছের কাঁঠালের মতো মানুষ ঝুলছে, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, গাট্টি-বোচকা সব নিয়ে, এ’দৃশ্য আমাদের জন্য ছিল অদ্ভূত সুন্দর একটা দৃশ্য।

মাদারীপুরের লোকজন সহজ সরল। অতিথিপরায়ণ। মেয়েগুলো দেশী গোলাপের মত আকার আর উচ্চতায় পরিমিত। কিন্তু তাদের আকর্ষণ দুর্নিবার।

মাদারীপুর শহরের উপকণ্ঠে আমার শ্বশুরবাড়ি। বাড়ির পাশে ছিল উনাদের ঘন সবুজ কলুই-এর বিশাল ক্ষেত। মূল ঘরের দুইপাশে দুইটা পুকুর। বাড়ির পিছনে বিশাল বাঁশঝাড়। বাঁশের আগা বিল্ডিংয়ের ছাদে চলে আসতো। পুরো বাড়ি জুড়ে ছিল ছোট-বড় সব ধরনের অনেক গাছ। গাব গাছ, বেল গাছ, চালতা গাছ, জোড়া তাল গাছ, সারি সারি সুপারি গাছ, নারিকেল গাছ। কী ছিল না সেখানে?

রান্নাঘরে চুলার পাশে বসে শাশুড়ি, জেঠশ ওদের সাথে চুলাতে পাটখড়ির জ্বাল দেয়া ছিল আমার অন্যতম ফেভারিট কাজ। ভোর বেলা বাজারে গিয়ে আমার শ্বশুর নিয়ে আসতেন আড়িয়াল খাঁ নদীর বিশাল সাইজের আইড় মাছ। জামাই আসলে উনি পুকুরে জাল দেয়ার জন্য জেলেদের ডাকতেন। মাছ রান্না করতেন নিজের হাতে। সরিষার তেলের রান্না। আমার সুবিধার জন্য তরকারীতে কমানো হতো লবণের পরিমাণ।

কী যে সুন্দর ছিল জীবনের সেই সময়গুলো।

মাদারীপুরে গেলে কেন জানি সেখানকার সব কিছুকে এখনো আমার খুব ভাল লাগে। অথচ ফুড হেবিট হতে লাইফস্টাইল, বাড়িঘর অনেককিছুতে আমাদের চট্টগ্রামের সাথে মাদারীপুরের ব্যাপক তফাৎ। তবুও মাদারীপুর আমার কাছে ভীষণ ভালোলাগার জায়গা। মাদারীপুরের প্রতি আমার এ’দুর্বলতা বোধকরি কাটবেনা কখনো। 

আমার ওয়াইফ বাসে চড়তে পারে না। ওর প্রচণ্ড মোশন সিকনেস। তাই ট্রেনে করে ঢাকা গিয়ে সদরঘাট হতে লঞ্চে করে মাদারীপুর যেতাম। সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে পরদিন বেলা নয়টা-দশটায় পৌঁছতাম। কখনো বাসে গেলে গাবতলী হতে উঠতাম। মাওয়া ঘাটে নেমে গাট্টিবোচকা সব সাথে নিয়ে একাত্তরের রিফিউজিদের মতো নদীর পাড় ধরে বালুর উপর দিয়ে অনেক দূর হেঁটে লঞ্চে উঠতে হতো।

লঞ্চ ঘাটে আমাদেরকে পার করানোর যে লঞ্চ তার লোকজন আমাদের বাসের নাম ধরে ডাকতে থাকতো। ঘণ্টাখানেক সময়ের লঞ্চযাত্রার পরে ওপারে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছতাম। আবার জিনিসপত্র নিয়ে বালির উপরদিয়ে অনেকখানি হেঁটে একই কোম্পানীর আরেকটা বাসে আগের সিটপ্ল্যান অনুযায়ী বসে পড়তাম।

ছুটি পেলেই ছুটতাম মাদারীপুর। ফ্রিকোয়েন্টলি যাওয়া-আসা করার কারণে তরীকা লঞ্চের কেবিনবয় সালামের সাথে হয়ে গিয়েছিল বিশেষ খাতিরের সম্পর্ক। বাস সার্ভিস ছিল চন্দ্রা আর সার্বিক নামে। তাদের ড্রাইভার-কন্ডাক্টরদের সাথে খানিকটা পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম।

বায়ান্ন সীটের বাস। রীতিমতো একটা জমজমাট পরিস্থিতি। তখনকার সময়ে বাসে সামনের দু’সারি শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত খালি রাখা হতো ডিসি অফিস হতে অনুমোদনপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য।

যখন চলার বেগ ছিল শ্লথ, তখন হৃদয়ের আবেগ ছিল উত্তাল। এখন যোগাযোগের উন্নতি হয়েছে। বেড়েছে গতি। হারিয়েছে সেই মানবিক সময়গুলো। হারিয়েছে লঞ্চে বসে চাঁদ দেখার অবসর। নদীর ভাঙ্গন আর পাট ক্ষেত দেখার সুযোগ। মুদী দোকানের বস্তা আর ছাগল বোঝাই লঞ্চে নতুন বউ ঘোমটা দিয়ে লঞ্চের ডেকে পাতানো চাদরে বসে আছে, হারিয়ে গেছে এমন বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ।

লঞ্চের গতি আর নদীর পাড় ধরে হাঁটতে থাকা মানুষের চলার গতি ছিল প্রায়-সমান। স্বজনকে বিদায় দিয়ে কেউ কেউ নদীর পাড় ধরে লঞ্চ বরাবর জোরে জোরে হাঁটতো কতটুকু। আহা, সেই দিনগুলো…!

উন্নয়নের প্রবল জোয়ারে হারিয়ে গেছে আমার সেই স্বপ্নভূমি। এখন সেখানে সব প্রশস্ত নতুন পিচঢালা রাস্তা। ভরাট মাটিতে সব উঁচু উঁচু দালান। ক্ষমতার জোর আর প্রবাসীদের আয়ে সেখানে হয়েছে জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন। এর বিপরীতে ততোধিক হারে সেখানে ঘটেছে মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেড়েছে সামাজিক সংকট, দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতির সব উপকরণ।

তবুও আমার হৃত-যৌবনের নিঃসঙ্গ স্বপ্নে আমি ফিরে যাই বারে বারে সেই বাড়িতে সেই ঠিকানায়- জামান মঞ্জিল, ১৮০, পানিছত্র আ/এ, নতুন শহর, মাদারীপুর।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

১। Din Islam: অসাধারণ শৈল্পিক অনুভুতি! গ্রামের প্রকৃতি আমাকেও অনেক টানে। কিন্তু ছোটবেলায় উন্নত পড়াশোনার জন্য পরিবারসহ শহরে চলে আসা। তবে গ্রামের পরিবেশে বড় না হওয়ার আফসোস আমার সারাটা জীবনই রয়ে যাবে।

Mohammad Mozammel Hoque: মাটির একটা ঘ্রাণ আছে। একেক জায়গার একেক ধরনের মাটির একেক ধরনের ঘ্রাণ। গাছের একটা ঘ্রাণ আছে। একেক গাছের একেক ধরনের ঘ্রাণ। ফসলের একটা ঘ্রাণ আছে। একেক ধরনের ফসলের একেক ধরনের ঘ্রাণ। তেমনি এলাকারও একটা ঘ্রাণ আছে। একেক এলাকায় একেক ধরনের মানুষ একেক ধরনের সংস্কৃতি, একেক ধরনের ফ্লেভার। এটি যারা শহরে-নগরে সবসময় বসবাস করে, তারা কখনো অনুমান করতে পারে না।

২। Sakib Khan: মাদারিপুর আড়িয়াল খাঁ ব্রিজের পাশের সরিষা বাগান। কয়েক বছর আগে প্রথম এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে চট্টগ্রাম থেকে মাদারিপুর গিয়েছিলাম। তখন পদ্মাসেতু উদ্বোধন হয়নি। চাঁদপুর ফেরিঘাট হয়ে যেতে হয়েছিলো। এরপর প্রতিবছরই যাওয়া হতো। ওই শহরের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। খিচুড়ি, গুড়, লেকপাড়। তিনবার যাওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত।

Mohammad Mozammel Hoque: পাঁচ্চর বাজারে সন্ধ্যা হতে রাত বারোটা পর্যন্ত কয়েকজন দোকানি খিচুড়ি বিক্রি করেন। প্রতিদিন ১০-১২ ডেগ খিচুড়ি তৈরি করে। সব বিক্রি হয়ে যায়। আমরাও খেয়েছি। খুব ভালো মানের গরুর গোশতের খিচুড়ি।

৩। Shakil Hasan: মাদারীপুর নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন।

Mohammad Mozammel Hoque: মাদারীপুর যদিও একটা সাধারণ জেলা, আমার কাছে এটি যেন খুব সুখকর এক স্মৃতির দ্বীপ। সত্যি কথা হলো, এই নাম নিয়ে আমার ওয়াইফকে আমি বহুদিন ক্ষ্যাপাইছি। অথচ, এই নামটা শুনলেই একরাশ মুগ্ধতা আমাকে আচ্ছন্ন করে। কারণটা লেখায় বলেছি, আমার জীবনে রোমান্টিকতার পর্ব শুরু হয়েছে মাদারীপুরে। তখন আমার সাতাশ বছর বয়স। আমার শ্বশুরবাড়িটা ছিল রীতিমতো একটা বাগানবাড়ি। আমি ছিলাম সেখানে চট্টগ্রাম থেকে আসা এক রাজপুত্রের মতো।

গতবছরও ফয়সালের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখান হতে জামান মঞ্জিলে গিয়েছিলাম খানিক সময়ের জন্য। প্রতিটা গাছ ধরে ধরে, দেয়াল ধরে ধরে আর কবরের পাড়ে আমি অঝোরে কেঁদেছি।

আমার বাবা-মায়ের মতো আমার শ্বশুর-শাশুড়িকেও আমি নিজ হাতে দাফন করেছি। আমি চট্টগ্রাম থেকে খবর পেয়ে গিয়েছি। আমি না যাওয়া পর্যন্ত দাফন হয়নি। উনারা দুই বছরের ব্যবধানে ইন্তেকাল করেছেন। আজ থেকে বছর দশেক আগে। এরপরে গতবছর গিয়েছি।

৪। M Hedayatul Islam Mamun: আপনি যতবার মাদারীপুর নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ততবারই আমি খুব আবেগ আপ্লুত হয়েছি। আমার শৈশবের একটি বছর কেটেছিল ঐ মাদারীপুর শহরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

যেহেতু আপনি ভ্রমণ পিয়াসি মানুষ এবং মাটি ও মানুষের ফিতরত নিয়ে গবেষণা করেন এবং আমাদের সাথে শেয়ার করেন তাই আপনাকে এবং Shamsun Nahar Mitul আপাকে দাওয়াত করেছিলাম মালয়েশিয়াতে বেড়াতে যেতে। আপনাদেরও সময় হয়নি আর আমারও থাকা হয়নি।

এবার সিরিয়াসলি দাওয়াত দিচ্ছি ইংল্যান্ডে বেড়াতে আসতে। আপনার পছন্দের বিষয় মাটি, মানুষ এবং দর্শন সম্পর্কে নতুন কিছু ধারণা এবং অভিজ্ঞতা হবে। মানুষ এবং আপনার প্রিয় ছাত্ররা আরো বেশি উপকৃত হবে আপনার কাছে থেকে ইনশাআল্লাহ।

আপনার লেখাটি অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। অনেক কিছু জানতে পেরেছি এবং শিখেছি। অনেক ধন্যবাদ।

Mohammad Mozammel Hoque: ইউনাইটেড স্কুলে আমার শ্বশুর শিক্ষক ছিলেন। আপনারা পান নাই। আমি খানিকটা ইমানুয়েল কান্টের মতো। তিনি কনিসবার্গ শহরের বাইরে কখনো যান নাই। আর আমি চট্টগ্রামের বাহিরে কোথাও কোথাও গেলেও তুলনামূলকভাবে আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা খুব কম।

চট্টগ্রামের লোক হওয়া সত্ত্বেও আমার এখনো সাজেক, বান্দরবান কিংবা সেন্টমার্টিন যাওয়া হয়নি। আমার এক রুমমেট সিঙ্গাপুরে থাকেন। মালয় মেয়ে বিয়ে করে ওখানে সেটেল্ড। ভাল যোগাযোগ আছে। সেখানেও যাওয়া হয়নি।

আমার ঘোরাফিরা করার খুব ইচ্ছা। নানা কারণে যাওয়া হয় না। আল্লাহ চাইলে নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও দেখা হবে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪। Sharmin Shathi: আমার নানা বাড়ী মাদারীপুর। প্রতি বছর ডিসেম্বরে আমরা ঢাকা থেকে বেড়াতে যেতাম। রান্না ঘর, যাকে বলত ওস্বা ঘর, সেখানে আমরাও নানীর সাথে বসে জ্বাল ঠেলতাম। নানা মাছ, রস কিনে আনতো। নানাও লঞ্চ ছেড়ে দিলে অনেকটা পথ হেঁটে আসত। খুব কাঁদতাম আমরা ভাইবোনেরা। আপনার লেখা পড়ে সেই দিন গুলোতে হারিয়ে গেলাম!

৫। Md. Omar Faruk: আপনার এই কথাগুলো একদম সত্য। “উন্নয়নের প্রবল জোয়ারে হারিয়ে গেছে আমার সেই স্বপ্নভূমি। এখন সেখানে সব প্রশস্ত নতুন পিচঢালা রাস্তা। ভরাট মাটিতে সব উঁচু উঁচু দালান। ক্ষমতার জোর আর প্রবাসীদের আয়ে সেখানে হয়েছে জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন। এর বিপরীতে ততোধিক হারে সেখানে ঘটেছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। বেড়েছে সামাজিক সংকট। দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতির সব উপকরণ।”

আমি শিবচরের মানুষ। ছোটবেলার শিবচর আর এখনকার শিবচর মেলাতে পারি না। অধিকাংশ খাল ভরাট করে ফেলছে মানুষ। আগের মত মাছ পাওয়া যায় না, পাট জাগ দেয়া যাচ্ছে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট খুব একটা পরিকল্পিতভাবে করা হয় নাই। শিবচর-মাদারিপুরের অবস্থা টঙ্গি/গাজিপুর হতে বেশি বাকি নেই।

৬। Moinul Islam Nishat: আপনার বস্তুনিষ্ঠ লেখনীর প্রেমে পড়ি বরাবরই। তবে এবার আমি কেন জানি কনফিউজড হচ্ছি। আপনি কি সত্যিই গ্রামীণ পরিবেশে মুগ্ধ, নাকি আপনার পাকা হাতের লেখার ছোঁয়ায় ম্যামের এলাকার প্রশংসা করে উনাকে দুর্বল করে তুললেন? যদিও আপনি সাদা কে সাদা, আর কালো কে কালো বলতে অভ্যস্ত।

Mohammad Mozammel Hoque: আমার হারানো যৌবন আর উচ্ছ্বল তারুণ্যের সময়গুলোকে আমি খুঁজে পাই যেখানে, ঘটনাক্রমে তার নাম মাদারীপুর।

আমার শ্বশুরবাড়ির একপাশের দেয়ালে ইটের একটা টুকরা দিয়ে লিখেছিলাম, ‘এই বাড়ি আমার স্বপ্নভূমি’। আমার শ্বশুর দেয়ালের সেই অংশে চুনকাম করাতেন না। ক্ষয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লেখাটা ছিল সেখানে।

৭। Al Amin: পুরো বিবরণ পড়লাম। এমন ভ্রমণকাহিনি আরও হতে পারে। আপনার একটা আত্মজীবনী লেখা উচিত। সেখানে থাকবে এমন টুকরো জীবনকথা, ভ্রমণকাহিনি, জীবনদর্শন ইত্যাদি।

৮। Roman Ahamed Roman: শেষ পর্যন্ত পড়লাম। চমৎকার লেখনী! হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস পড়লে মনে হতো এরপর জানি কি লিখেছেন। শেষ পর্যন্ত না পড়তে পারলে কেমন জানি লাগতো। আপনার লেখনীতে সেটা অনুভব করলাম। ভ্রমণকাহিনি লিখেন, স্যার।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *