নারীপুরুষের যৌনতা, সেই সুবাদে বিয়ে পরিবার ইত্যাদি কিছু বুঝার জন্য ফিমেইল হারপারগেমির মতো আরেকটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো sexual dimorphism।

যৌনাঙ্গের গঠনগত ভিন্নতার বাইরেও mating selection এর কারণে যখন কোনো প্রাণীর male এবং female জেন্ডারের মধ্যে শারীরিক বৈশিষ্ট্যগত উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায় তখন আমরা এই প্রাণীটিকে সেক্সুয়ালি ডাইমর্ফিক হিসেবে চিহ্নিত করি।

এই পার্থক্য দেখা যাবে বাহ্যিক আকার-আকৃতি ও সাজসজ্জায়। একইসাথে এর এক্সপ্রেশন থাকবে শরীরের অভ্যন্তরীণ হরমোনের ধরন, মাত্রা ও অঙ্গসংগঠনে। সংগত কারণেই এই পার্থক্য উভয় সেক্স বা জেন্ডারের মধ্যে আচরণ ও অভ্যাসগত নানা রকমের পার্থক্য সৃষ্টি করবে।

সংশ্লিষ্ট প্রজাতিটির মেইল ফিমেইল উভয়ের শারীরিক আকার যদি একই হয় তাহলে ধরে নিতে পারেন, তারা উভয়েই মনোগেমাস হবে। তারা ওয়ান-টু-ওয়ান পেয়ার বন্ডিং করবে। সেক্ষেত্রে এই প্রাণীটি সেক্সুয়ালি ডাইমর্ফিক নয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করবেন।

কোনো প্রজাতির পুরুষ যদি সংশ্লিষ্ট প্রজাতির স্ত্রীর তুলনায় অনেক বড় হয় তাহলে সেই প্রজাতির কোনো পুরুষ একটামাত্র নারী যৌনসঙ্গী নিয়ে সন্তুষ্ট হবে না। সে নারীদের একট হারেম প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে। যেমন, সী লায়ন।

শর্ত হলো তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষদের সাথে টেরিটরিয়াল ফাইটে জিততে হবে এবং বিজয়ী হিসেবে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হবে। 

একইভাবে কোনো প্রজাতির পুরুষদের তুলনায় সংশ্লিষ্ট প্রজাতির স্ত্রী যদি আকারে অনেক বড় হয় তাহলে সেই প্রজাতির একটা স্ত্রীর থাকবে পুরুষ যৌনসঙ্গীদের একটা হারেম। যেমন, রাণী মৌমাছি।  

সেক্সুয়াল ডাইমর্ফিজমের নিয়ম এমন, যেই সেক্স বা জেন্ডারের অধীনে একটা হারেম থাকবে, সেই সেক্স বা জেন্ডারের একাংশ শুধু এই সুবিধা পাবে। ডমিনেন্ট সেক্স বা জেন্ডারভূক্তদের মধ্যে যারা মেইটিং কম্পিটিশন এবং ফাইটে জিতবে না, তারা সেক্স করার সুযোগ থেকে এবং এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে প্রজননসুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

যে সিংহ প্রতিদ্বন্দ্বী সিংহদের সাথে লড়াইয়ে জিতবে তার অধীনে সিংহীদের একটা প্যাক থাকবে। যে সিংহ জিতবে না, সে সেক্স করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এই বঞ্চনা সিংহদের ‘কপালের লিখন’। প্রাকৃতিক নিয়ম।

সিংহীদের কপাল কিন্তু কখনো পোড়ে না। ওই এলাকায় যত সংখ্যক সিংহী থাকুক না কেন, তাদের প্রত্যেকেই কিন্তু সেক্সের মাধ্যমে রিপ্রডাকশনের রিওয়ার্ড পাবে; যদি ওই এলাকায় একটা সিংহও থাকে।

সেক্সুয়াল ডাইমর্ফিজমের এই স্কেলে মানুষের অবস্থান মাঝামাঝি। মানুষ প্রজাতি সেক্সুয়ালি কিছুটা ডাইমর্ফিক।

তাই ইতিহাস শুরুর পূর্বসময় থেকে আজ অবধি প্রায় সকল মানব সমাজেই পুরুষরা ইনহারেন্টলি পলিগেমাস বা বহুগামি। অপরদিকে, সী লায়নের মতো মানুষপ্রজাতি ততটা স্ট্রীক্টলি ডাইমর্ফিক না হওয়ার কারণে অধিকাংশ কিংবা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষ একগামি বা মনোগেমাস হিসেবে জীবন কাটিয়ে দেয়। বা দিতে পারে।

Why people do what they do?

– এই প্রশ্ন যদি আমার মতো আপনাকেও খুব অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেয়; নারী ও পুরুষের আচরণ ও স্বভাবগত বৈপরীত্য যদি আপনাকেও (cognitive dissonance অর্থে) গোলমালের মধ্যে ফেলে দেয়; আপনার জন্য বিবর্তনবাদী মনোবিদ্যার প্রাথমিক পাঠ হতে পারে একটা যুক্তিসংগত উপায় বা ওয়ে-আউট।

কেন পুরুষেরা এমন? নারীরা কেন এমন করে?

আপনার এ’ধরনের সকল খটকা, প্রশ্ন, দ্বন্দ্ব ও ধাঁধাঁর উত্তর পেয়ে যাবেন সেক্সুয়াল ডাইমর্ফিজমের এই ফর্মূলার আলোকে।

শীতের এই সন্ধ্যায় আপনার সময়টুকু উষ্ণতর হোক কাছে থাকা প্রিয়জন সান্নিধ্যে। শুভ কামনা।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

১. Yahia Amin: Evolutionary psychology te aita akta significant factor

Mohammad Mozammel Hoque: It’s very nice to see that you have read my post. thank you very much.

২. মোঃ আল আমিন: ভাষা মানুষকে প্রাণিজগতের অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। অন্যকথায় মনের হুশ যদি না থাকে তাকে মানুষ বলা যায় না। সুতরাং অন্যদের সাথে তুলনা মানুষের জন্য মানানসই নয়। মানুষ যে তার নিজস্ব বাউন্ডারি বা সীমানা তৈরি করেছিল বা করেছে বা সামনে করবে তার আলোকেই তাকে ব্যাখ্যা করতে হবে। এমনকি যৌনতাও এর বাইরে নয়।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *