সব ছেড়ে একদিন যেতে হবে, থাকবে শুধু কিছু স্মৃতি। থেকে যাওয়া প্রিয়জনদের সমবেদনা জানানোর ভিড়ে, হারিয়ে যাবে খানেক আগে নাই হয়ে যাওয়া জলজ্যান্ত মানুষটি। সবাই বলবে, এখন কী হবে ওর স্বামী বা স্ত্রীর, আর পুত্র-কন্যাদের?

পরিবারের কোনো সদস্য অকস্মাৎ চলে যাওয়ার পরে, যারা থেকে যায় জীবনের এই পাড়ে, তাদের অনেকখানি ক্ষতি। যে চলে যায়, তার ক্ষতি শতভাগ।

জীবনের এই অনিবার্য পরিণতি ক্ষণে ক্ষণে ভাবিয়ে তোলে আমাকে। বিশেষ করে যখন দেখি, বয়সে নবীন কোনো ভাই বন্ধু প্রতিবেশী, কেউ একজন চলে যায়, তখন কি জানি কেন, নিজেকে মনে হয় অপরাধী।

কাল রাতে, তখন ঘুমিয়ে পড়েছি ইতোমধ্যে, ফোন করে জানতে চাইলো পরপর, দু’জন সহকর্মী, আমাদেরই বহু বছরের এক প্রাক্তন প্রতিবেশী, কামরুল হুদা, সে নাকি মারা গেছে, আমি শুনেছি কিনা। এমন কোনো ঘটনাকে অসম্ভব বলে মনে করে আমি বলেছি, ‌‘আমি জানি না। তেমন কোনো খবর পেলে জানাবেন।’

তারা কিছু বলেনি আর। আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে উঠে পেলাম নিশ্চিত খবর, শায়ানের বাবা আর নেই। শায়ান, আমার সন্তানতুল্য। বড় হয়েছে আমাদের হাতে। রাতে শুধু থাকতো তাদের বাসায়। ২৮ নম্বর বাসা ছিল তার সারাদিনের ঠিকানা। তাকে নিয়ে আমার একটা লেখা আছে, ‌‘শায়ানের স্বপ্ন’। আবেগমথিত লেখা।

ওর বাবা একদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবে, এই আমি ভাবতাম। আমার বছর কয়েকের ছোট, অথচ তিনিই আজ সন্ধ্যার আগে হয়ে যাবেন কবরবাসী। এরপর হয়তো দেখা হবে সহস্রকোটি বছর পরে, হাশরের ময়দানে।

কথা হবে না সেদিন, সেটি নিশ্চিত জানি। প্রত্যেকে সেদিন পালিয়ে বেড়াবে। ব্যতিব্যস্ত থাকবে অন্য কারো দায় থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টায়। এরপর সব স্থিত হওয়ার পরে, দয়াময় যদি স্থান দেন আমাদের, তাঁর রহমতের ছায়ায়, জান্নাতের বাগানে, হয়তোবা তখন দেখা হবে, কথা হবে, জিজ্ঞাসা করবে স্বজ্জন ভঙ্গিতে ‌‘কেমন আছেন?’ হয়তোবা।

গতকাল সকালে, ঠিক এমন সময়ে, জীবন আর মৃত্যু নিয়ে একটা লেখা লিখেছি। আপনারা হয়তো পড়েছেন। অশ্রুভেজা কোমল হাতে, কাঁপা কাঁপা স্বরে, আজকের সকালেও লিখবো, আরেকটি লেখা, অনুরূপ উপজীব্য নিয়ে, ভাবিনি এতোটুকু।

সেই যে কবে লিখেছিলাম, এখনো মনে পড়ে, মাঝে মাঝে সেই কথাগুলো—

জীবনের পরিণতি অনিবার্য,
তবুও স্বপ্ন,
তবুও স্মৃতি,
তবুও বিস্মৃতি
বাঁচিয়ে রাখে আমাদের।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *