১৯৭৫ সাল। চাচাদের কারো কারো কাছ থেকে বিরূপ আচরণের সম্মুখীন হয়ে আমার বাবা আমাদেরকে নাজিরহাট সংলগ্ন বাবুনগর গ্রাম থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাস সংলগ্ন নতুনপাড়া এলাকায় একটা কাঁচাপাকা বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নিয়ে আসেন। আমি এবং আমার ছোট ভাইবোনদের সবাইকে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি ক্লাস ফোরে ভর্তি হই।
আমাদের পূর্বে সেখানে আরও তিনটি পরিবার বাইরে থেকে এসে বাড়ি তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেছেন ততদিনে। তেমনি একজন নিবাসী ছিলেন হাজী এম এ জলিল।
খালুজি ছিলেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের এসডিও। অবসর গ্রহণের পর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন কাজে ঠিকাদারির ব্যবসা করতেন। তখনকার সময়ে তিনি ছিলেন যথেষ্ট বড়লোক। উনাদের নিজস্ব জিপ গাড়ি ছিল। পাশের বিলে খালুজি যখন বন্দুক নিয়ে বক শিকার করতে যেতেন, তখন আমরা যারা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছিলাম, তাদের মধ্যে তখন এক ধরনের উৎসব-উৎসব ভাব চলে আসতো।
এলাকার যে কারো অসুবিধায় উনারা আন্তরিকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। উনাদের গাড়িতে সবাইকে চড়াতেন। উনাদের ঘরে ছিল সবার যাতায়াত। এলাকাতে বিদ্যুতের লাইন আনাসহ সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে উনারা ছিলেন অগ্রণী।
উনার সেজো ছেলে বাবুর সাথে ছিল আমার ভীষণ বন্ধুত্ব। উনার বড় ছেলে অ্যাডভোকেট রিজওয়ান ভাইয়ের সাথে ছিল আমার বড় ভাইয়ের বন্ধুত্ব। উনার বড় মেয়ে ঝর্না আপার সাথে ছিল আমার বড় আপার হৃদ্যতা। খালাম্মার সাথে ছিল আমার আম্মার খুব খাতির। আমাদের উভয় পরিবারের প্রত্যেকে উভয় পরিবারের ছোটদেরকে নিজের ছোট ভাই বা বোন হিসেবে স্নেহ করতো, এবং বড়দেরকে নিজের বড় ভাই বা বোন হিসেবে সম্মান করতো।
একই এলাকার শিক্ষিত ও অভিজাত পরিবার হিসেবে আমাদের উভয় পরিবারের মধ্যে ছিল খুব ভালো সম্পর্ক। খালু, আলহাজ্ব এম এ জলিল ইন্তেকাল করেছেন বহু বছর আগে। খালাম্মা এখনো আমাকে নিজের ছেলের মতো মনে করেন। তিনি খুব অসুস্থ। শুনে, আমরা তিন ভাই গত পরশু রাতে চট্টগ্রামের মেহেদিবাগে অবস্থিত ম্যাক্স হাসপাতালে উনাকে দেখার জন্য যাই।
আল্লাহর কী রহমত, উনার ৬ ছেলেমেয়ে ও তাদের পরিবারের লোকজন সবাইকে একসাথে দেখে দুপুর থেকে নাকি তিনি বেশ সুস্থবোধ করছিলেন। আমাদের সাথে তিনি মৃদু স্বরে কথা বললেন। আমাদের ছেলে মেয়েদের খোঁজখবর নিলেন। উনার সাথে ছবি তুললাম। খুব ভালো লাগলো।
১০ বছর আগে মাকে হারিয়েছি। চাই, মাতৃতুল্য এই মহীয়সী রত্নগর্ভা নারী যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন, বেঁচে থাকেন আরও অনেক অনেক দিন।
ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Dil Afroz: টিটু, আন্তরিক কৃতজ্ঞতা তোমরা সবাই মাকে দেখতে আসার জন্য।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: খালাম্মাকে হাসিখুশি দেখে আমাদের কত যে ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়!
Motaher Shapan: টিটু, ধন্যবাদ। তোর সাথে আমি একমত, আল্লাহ পাক খালাম্মাকে সুস্থ করে দিন
Afroz Rozy: তোমার বর্ণনায় অনেক বছর আগে ফিরে গেলাম। সেদিন তোমাদের সবাইকে দেখে ভীষণ ভালো লেগেছিলো। ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে, এমন নিখাদ ভালোবাসা আর অনুভূতির জন্য।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আরেকটু ডিটেইলস লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় সবকিছু ঠিক মতো মনে করতে পারি নাই। একবার ভাবছিলাম আপনাদের কারো সাথে ফোন করে কিছু তথ্য জেনে নেবো। এরপরে লিখবো। পরে ভাবলাম, নাহ, লিখেই ফেলি যা কিছু মনে আছে। সেটা খুব সাজানো-গোছানো না হলেও তাতে নিশ্চয়ই অন্তরছোঁয়া এই অনুভূতির একটা ছাপ থাকবে।
আমাদের নতুনপাড়ার বাসায় আজকে আমি এটা সবাইকে পড়ে শুনাইছি। এটা লিখতে গিয়ে আমি নিজেও কেমন জানি ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। অনেক কিছুই তো লেখার ছিল!
Afroz Rozy: সত্যিই তাই। টিটো, এগুলো খুব নস্টালজিক অনুভূতি। আমাদের সেই দিনগুলোকে এত অল্পে শেষ করা কঠিন। তাছাড়া যারা আমাদের সেই দিনগুলো দেখেনি, তাদের কাছে রূপকথার মতো মনে হবে। ধন্যবাদ তোমাকে ভাইয়া।
Kauser Parvin: বাসা চিনি না। নয়তো আমিও চলে আসতাম। আল্লাহ খালাম্মাকে সুস্থ করে দিন। আমিন।
Dil Afroz: আপা ওরা ঈদের দিন রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলো। গতকাল মাকে বাসায় নিয়ে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেকটা ভালো বোধ করছেন। দোয়া করবেন।