চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রফেসর আবদুন নূর চট্টগ্রাম শহরের ‘মেডিক্যাল সেন্টার’ নামের ক্লিনিকে গত রাত হতে লাইফ সাপোর্টে আছেন। প্রচণ্ড খারাপ লাগার কারণে গতকাল রাতে উনাকে ক্লিনিকে নেয়ার আগে দেখতে যাইনি! এমনকি যৌবনোত্তর সময়েও তিনি ছিলেন অত্যন্ত হ্যান্ডসাম, অদম্য ছিলেন একাডেমিক নীতিবোধে। কেমন মানুষ কেমন হয়ে গেলেন! চবি ক্যাম্পাসে স্যারের বাসা ২৩ নম্বর, আমার বাসা ২৮ নম্বর। সালেহ স্যারের কাছাকাছি নূর স্যার ছিলেন আমার অন্যতম মেন্টর। অথচ স্যারকে দেখতে গেছি অন্তত মাসখানেক আগে। স্যার চিনতে পারেন। সবকিছু বুঝতে পারেন। কিন্তু কোনোভাবেই কম্যুনিকেইট করতে পারেন না। ইশারার মাধ্যমেও না। জীবনের কী অসহ্য পরিণতি! সর্বশেষ যখন স্যারের বাসায় গেছি, স্যারের পাশে বসে শুধু কেঁদেছি। মিতুল আমার আর স্যারের কিছু ছবি তুলেছে। কিছু কিছু অনুভূতি এমন যা প্রকাশ করে ব্যথা আরো বাড়াতে মন চাই না। তাই এই পোস্টে কোনো ছবি দিলাম না।
প্রফেসর নূর খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা। এর পাশাপাশি অত্যন্ত সাহসী ও ত্যাগী ইসলামিস্ট। সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র (সিএসসিএস) আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহে স্যার সবসময়ই থাকতেন। উৎসাহ দিতেন। মনে পড়ে, ‘ফেয়ার ফিল্ম সোসাইটি’র ব্যানারে আমরা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করছি। ‘শ্যামল ছায়া’র শেষ দৃশ্যে যখন শাওন গুলি খেয়ে নৌকার উপর পড়ে যায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠে, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কতো প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রু জলে’ – এই গান। স্যার আমার পাশে বসা ছিলেন। দেখি, স্যারের দু’গাল বেয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার আবেগকে সেদিন খুব অনুভব করেছিলাম।
২০০১ সালের পর শিক্ষা, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে বিকল্পধারায় কিছু একটা করার মানসিক তাড়না অনুভব করছিলাম। ক’জন সুহৃদও বারম্বার তাগাদা দিয়ে যোগাযোগ করলেন। তাদের প্রত্যাশা, আমি যেন মুক্তজ্ঞান চর্চা টাইপের কিছু একটা করার উদ্যোগ নেই। তখন আমি প্রীতিলতা হলের প্রভোস্টের জন্য নির্ধারিত বাড়িটিতে থাকি। প্রথমেই যে দুজনের কাছে ছুটে এসেছিলাম তার একজন হলেন নূর স্যার। একবার প্রগতিশীল এক তরুণ শিক্ষকের উদ্যোগে লাইব্রেরি মিলনায়তনে চবির তাবৎ ‘মুক্তমনাদের’ মিলনমেলা হলো। বিষয়: রবীন্দ্রনাথের জীবনের নানা দিক। ‘মোহাম্মদের (সা) জীবনের নানা দিক’ বিষয়ে দিনব্যাপী সেমিনার করার জন্য নূর স্যার উদ্যোগ নিলেন। কিছু দিনের মধ্যে ‘ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক ফোরামের’ উদ্যোগে সেই লাইব্রেরি অডিটরিয়ামেই হয়ে গেলো সিরাতুন্নবীর (সা) উপর জমজমাট সেমিনার। একবার ড. আফতাব উদ্দীন স্যার জাতীয় সংগীতের ভাবমর্যাদা নিয়ে পত্রিকায় পর্যালোচনামূলক কলাম লিখলেন। যথারীতি মৌচাকে ঢিল ছোঁড়ার মতো তিনি গণমাধ্যমের ব্যাপক আক্রমণের শিকার হলেন। দেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একমাত্র নূর স্যারই আফতাব স্যারের পক্ষে কলম ধরলেন। তথ্যবহুল প্রবন্ধ লিখলেন। কোনো বিষয়কে সঠিক মনে করলে, কে কী বললো, তার পরোয়া না করে ন্যায় ও সত্যকে সমর্থন করার মতো তাকত খুব কম লোকেরই হয়, ছিলো। নূর স্যার ছিলেন তেমনই একজন।
তিনি ছিলেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত ‘সাদা দলের’ প্রতিষ্ঠাতা-শীর্ষনেতাদের অন্যতম। ব্যাপার হলো, মাঝে মাঝে তিনি বিএনপি-জামায়াত উভয় দলেরই গঠনমূলক সমালোচনা করতেন। ফল হলো, উভয় পক্ষ হতে উনার বদনাম ও সমালোচনা করা হতো। আজীবন বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে ভূমিকা পালন করলেও কোনো পক্ষ উনাকে তেমনভাবে আপন মনে করে না। এসব বিষয়ে তিনি ছিলেন নির্বিকার। সাদা দলের রাজনীতিতে মূল্যবোধের সংকট তৈরি হলে তিনি রাজনীতি হতে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ২০০০ সালের দিকে তরুণ শিক্ষকদের একাংশ রাজনীতি না করার ক্যাম্পেইন শুরু করে। তাঁরা লাইব্রেরি মিলনায়তনে উভয় দলের নেতৃবৃন্দসহ নিরপেক্ষ শিক্ষকদেরকে একত্রিত করে সেমিনার করেন। নিজেরা নিজেরা অনেক মিটিং করেন। প্রচলিত রাজনীতিতে নোংরামির কারণে রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ এই তরুণ শিক্ষকদের সাথে যে কয়েকজন সিনিয়রমোস্ট শিক্ষক একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন, নূর স্যার ছিলেন তাদের অন্যতম। পরবর্তীতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে চার দলীয় জোট ক্ষমতাসীন হওয়ায়, অদৃশ্য কারণে, প্রধানত তরুণ বামপন্থী শিক্ষকদের এই উদ্যোগ চাপা পড়ে যায়। নির্দ্বিধায় বলা যায়, রাজনীতি করে তিনি যা পেয়েছেন, তারচেয়ে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে তিনি যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তা অনেক বেশি। রাজনীতি না করলে উনার একাডেমিক নামডাক আরো অনেক বেশি হতো, হয়তোবা।
সিনিয়র স্যারেরা নিজের স্পেশালাইজেশানের ব্যাপারে ভিন্নমত শোনার ক্ষেত্রে সাধারণত খুবই অসহিষ্ণু হয়ে থাকেন। নূর স্যার ছিলেন এর ব্যতিক্রম। ইসলামাইজেশান অব নলেজ (IOK) বিষয়ে স্যারের সাথে যখনি আমি সমালোচনামূলক কথা বলেছি, তিনি একপর্যায়ে বলে ফেলতেন, আমি এর বাইরে জানি না, তোমার এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নাই। কখনো তিনি সবজান্তার ভাব ধরতেন না। সিনিয়র অনেক স্যারই যেমনটি করেন। আবদুন নূর স্যার ইসলামিক এপিস্টোমোলজির ওপর বিআইআইটি থেকে একটা সংকলন বের করবেন। আমার সাথে তিনি এ বিষয়ে অনেক আলাপ করেছেন। এমনকি আমার পরামর্শ মোতাবেক বইয়ের টাইটেলও শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন করেছেন। একদিন দক্ষিণ ক্যাম্পাস মসজিদ হতে বের হয়ে অনেকের সামনে তিনিই আমাকে সেই মোস্ট ইন্টেলিজেন্ট প্রশ্নটি করেছিলেন, “আচ্ছা, বলো তো, ইসলামী রাষ্ট্রের কোনো ঘোষণা না দেয়া সত্ত্বেও এবং ইসলামী আইনকে একমাত্র রাষ্ট্রীয় আইন হিসাবে বলবৎ না করা সত্ত্বেও মদীনা সনদের মাধ্যমে গঠিত সরকারব্যবস্থাকে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ বলা হচ্ছে কেন?” সেদিনকার আলোচনার সূত্র ধরে এ বিষয়ে আমি একটা সাড়া জাগানো পোস্ট দিয়েছিলাম। তিনি ইসলামী সংগঠনবিশেষ আর স্বয়ং ইসলামকে কার্যত একাত্ম করে ফেলাকে ভুল মনে করতেন। রূঢ়ভাবে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করতেন। তাঁর এই ধরনের কথাবার্তাকে, সত্যি কথা হলো, আমরা তখন আপসকামীতার বহিঃপ্রকাশ মনে করতাম। অথচ, এটিই এখন আমার কাছে অতীব যৌক্তিক মনে হয়। প্রায়ই বলি, “অমুক ইসলাম = ইসলাম” – এমন মনোভাব পোষণ করা ঠিক নয়।
অনেক সংগ্রাম করে, রীতিমতো আন্দোলন গড়ে তুলে লোকপ্রশাসন বিভাগে ‘ইসলামিক পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশান’ পেপার খুলেছেন। জার্নাল বের করেছেন। এই জার্নালের জন্য বৈরী প্রশাসনের কাছ হতে শোকজও পেয়েছেন। আইআইইউসির উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। প্রফেসর সালেহ স্যার, আবদুন নূর স্যারসহ কেউ কেউ শুরুর দিকে বিনা সম্মানীতে সেখানে পড়ানোর পক্ষে ছিলেন। তখন অনেক সম্মানিত স্যারই সম্মানী ছাড়া ক্লাস নেয়াটাকে সমর্থন করেন নাই। এই মতবিরোধের কারণে এ দুজন সেখানে ক্লাস নেন নাই। ইসলামী সংগঠনের একজন পরিচিত শীর্ষতম ব্যক্তি আইআইইউসিতে ছাত্রী ভর্তির বিরোধিতা করেছিলেন। চোখে ভাসছে, দক্ষিণ ক্যাম্পাস মসজিদের অজুখানায় স্যার আর আমি পাশাপাশি বসে অজু করছি। স্যার বলছেন, মোজাম্মেল দেখো, তোমাদের অমুক নেতা ট্রাস্ট মিটিংয়ে ছাত্রী ভর্তির প্রবল বিরোধিতা করেছেন। এতে নাকি এর ইসলামী চরিত্র নষ্ট হবে। অথচ, এখন ছাত্রী ক্যাম্পাস আইআইইউসির সুনাম ও আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। আইআইইউসির সিলেবাসে ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসাবে যাদের নাম ছাপিয়ে প্রথম সেখানে ছাত্র ভর্তি করানো হয়, তাদের অন্যতম ছিলেন নূর স্যার। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে স্যারও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে শোকজ পেয়েছিলেন। অন্যরা তো ছিলো একটি নির্দিষ্ট দলের নেতাকর্মী। স্যারই ছিলেন একমাত্র শিক্ষাবিদ যিনি এর উদ্যোক্তাদের দলের লোক ছিলেন না।
শুধু ইসলামের জন্য কেন, যে কোনো ভালো কাজে, বিশেষ করে লেখাপড়ার কোনো কাজে স্যারের অংশগ্রহণ ছিলো অতি পরিচিত ব্যাপার। বায়তুশ শরফের সেমিনার থেকে শুরু করে চবি – যে কোনো পাবলিক সেমিনারে প্রফেসর আবদুন নূর ছিলেন কমন পারটিসিপেন্ট। স্যার মাত্র এক বছর চবির একটি ছাত্রী হলের প্রভোস্ট ছিলেন। বিশিষ্ট নারীবাদী প্রফেসর হামিদা বানু ম্যাডামের নেতৃত্বে ব্যাপক আন্দোলন করে স্যারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। আমার স্ত্রী তখন সেই হলের ছাত্রী ছিলেন। তার কাছ হতে শুনেছি, ছাত্রীদের প্রেয়ার রুম হতে শুরু করে পানির ট্যাংক, মেধাভিত্তিক সিট বন্টন হতে শুরু করে নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি, এক বছরের মধ্যে তিনি যা করেছিলেন, পূর্ববতী ও পরবর্তীদের কেউই তেমনটা পারেননি। পিএইচডি ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও স্যারকে দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা চেনে, মেধাবী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। স্যার কখনো ব্যাগ বহন করতেন না। স্যারের দেখাদেখি আমিও একগাদা বই-পুস্তক হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে পছন্দ করি। একজন শিক্ষকের হাতে বই থাকার চেয়ে সম্মানের বিষয় আর কী হতে পারে?
নূর স্যারের চাটগাঁর লোকজনের প্রতি কিছুটা বেশি টান আর অবিরত ধূমপানকে আমি সংগত কারণে সমর্থন করতে পারি নাই। যা হোক, সাদা দলের স্টিয়ারিং কমিটির মিটিংয়ে অধূমপায়ীরা ধূমপায়ীদের নিয়ে মাঝেমধ্যে ঠাট্টা-মশকরা করতেন। তখন সব মেগাস্টারগণ ছিলেন কমিটির মেম্বার। প্রত্যেকেই একটা কিছু হয়েছেন। নূর স্যার ছাড়া। একবার আমাদের সামনে থেকেই ইউসুফ শরীফ স্যারের মেয়ে এসে উনার সিগারেটের প্যাকেটটা ছো মেরে নিয়ে গেলো। যা হোক, নূর স্যার বলতেন– দেখেন, আমার ওয়াইফের কিন্তু আমার ধূমপানের বিষয়ে আপত্তি নাই। সে বরং মনে করে, পুরুষ মানুষ সিগারেট খেতেই পারে। বিষয়টা কতটুকু ঠিক, জানি না। ভাবীকে কখনো জিজ্ঞাসা করি নাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আপাদমস্তক নায়কের দেখতে শিক্ষক ছিলেন দুজন– প্রফেসর আসলাম ভূঁইয়া স্যার এবং প্রফেসর আবদুন নূর স্যার। আসলাম স্যার অবশ্য নন-স্মোকার ছিলেন।
যা হোক, স্যার একদিন বায়না ধরার মতো করে বললেন, মোজাম্মেল তোমার প্রজেক্টরটা দিয়ে একদিন মোঘল-ই-আজম দেখাও না! একদিন দুপুরের পরে চবি ক্যাম্পাস ক্লাবে স্যার, আমি আর ইয়াসীন সাহেব (উচ্চশিক্ষা সেলের প্রধান), এই তিন জন মিলে সিনেমাটা দেখলাম। সত্যি কথা হলো, বিখ্যাত সিনেমা হিসাবে এটির একটি ডিভিডি কপি আমি সংগ্রহ করে রাখলেও তেমন ভালো করে দেখি নাই। স্যারের সাথে সিনেমাটা দেখার পরে বাসায় এসে থেমে থেমে আবার দেখলাম। সেই থেকে মুঘল-ই-আজম আমার প্রিয় সিনেমা। হজ্ব থেকে আসার পর আমার বাসায় স্যারের সৌজন্যে একটা মতবিনিময় ও সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করলাম। স্যার পরিষ্কার করে বললেন– দেখলাম, হজ্বকে সবাই একটা রিচুয়্যাল হিসাবেই নিচ্ছেন। এটি হজ্বের স্পিরিটের খেলাফ। বিশ্ব-মুসলিম চেতনা বাদ দিয়ে হজ্ব অনুষ্ঠানের সার্থকতা নাই। অন্যান্যদের মতো করে তিনি শাহী ব্যবস্থাপনার প্রশংসায় লিপ্ত না হয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে উম্মাহর হক্ব নষ্ট করে তাদের প্রাসাদ নির্মাণ, বাহুল্য ব্যয় ও অপচয়ের দিকগুলো তুলে ধরলেন। স্যার ছিলেন সব সময়েই ব্যতিক্রমী। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দেখেছি, স্যারকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করতে। উনার কিছু প্রাক্তন-ছাত্র-সহকর্মী ছিলো এর ব্যতিক্রম। উনার বিভাগের কারো কারো ‘গুরু মারা বিদ্যা’ চর্চার ডিটেইলসে আমি যেতে চাচ্ছি না। সেটি আমার কনসার্নও নয়।
প্রফেসর নূর স্যারের ছাত্ররা স্যারকে গভীরভাবে ভালোবাসে। একজন শিক্ষকের জীবনে এটি শ্রেষ্ঠ পাওয়া। তাদের সেই টপমোস্ট স্মার্ট ও কমপিট্যান্ট প্রিয় নূর স্যার ঝড়ে বিধ্বস্ত নীড়হারা পাখির ছানার মতো আজ নিতান্ত অসহায়, দিশেহারা, অচেতন, লাইফ সাপোর্টে জীবন্মৃত। একজন প্রফেসর ড. আবু সালেহকে আমরা হারিয়েছি। দুঃখ হলো, একজন আবু সালেহ আর হয় নাই। একজন প্রফেসর ওয়াহিদুর রহমান আর হয় নাই। একজন প্রফেসর ইউসুফ শরীফ আহমেদ খান আর হয় নাই। একজন প্রফেসর আবদুন নূরও খুব সম্ভবত আর হবে না। স্যার আরো কিছু দিন বেঁচে থাকলেও উনার কর্মজীবনের, বলা যায়, একপ্রকার সমাপ্তি ঘটেছে। এই মাসে স্যারের পঁয়ষট্টি বছর পূর্ণ হওয়ার কথা। সে হিসাবে এই জুনেই উনার অবসর জীবন শুরু। মনে পড়ে, একদিন বিআইআইটির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্যারের একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। সেখানে এরকম কথা ছিলো, খুব সম্ভবত– “আমার মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর হুকুম হলো আমি আর কিছু করতে পারবো না। আমার নিবেদন, বিআইআইটির এই ফ্ল্যাটটির জন্য আপনারা ফান্ড কালেকশান করুন।” হ্যা, এরই মধ্যে শ্রদ্ধেয় ড. এনায়েত উল্যাহ পাটওয়ারী ও প্রফেসর আ ক ম আবদুল কাদেরের নিরলস শ্রমে অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কলেজের পাশে বিআইআইটির চট্টগ্রাম শাখার নিজস্ব অফিস হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই সেখানে উঠেছেন। এই রমজানে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে সেটির উদ্বোধন হওয়ার কথা। এর অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা প্রফেসর আবদুন নূর পূর্ণ সুস্থতা লাভ করে সেই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে পারবেন, এতটা আশা না করলেও, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাঁর হায়াতের নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেন! আমীন…!
আপডেট: ০৬/০৬/২০১৫ রাত ১১টা, দক্ষিণ ক্যাম্পাস, চবি //
একটু আগে নূর-ভাবী শহর থেকে ফিরলেন। জানালেন, স্যারের শারীরিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। সেন্স ফিরে এসেছে। কাছের লোকদেরকে চিনতে পারছেন, এটুকু বুঝা যাচ্ছে। লাইফ সাপোর্ট এখনও আছে। আলহামদুলিল্লাহ! অগণিত শুভাকাংখীদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন।