ইদানীং আমি লম্বা চুল রেখেছি। কাঁধ প্রায় ছুঁই ছুঁই। মাঝে মাঝে ছোট্ট একটা রাবার বেন্ড দিয়ে ঝুঁটি বেঁধে রাখি। কেউ কেউ প্রশংসা করে। কেউ কেউ আপত্তির কথা জানিয়েছে। ইটস ওকে, যার যার পছন্দের ব্যাপার।
আমাদের এক সহকর্মী। ইসলামিক স্টাডিজের প্রফেসর। এক সময়ে দেশের নামকরা একটা মাদ্রাসায় মুফতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর সাথে আমি কিছু বিষয়ে কথা বলছিলাম। এক পর্যায়ে তিনি আমার ঝুঁটির ব্যাপারে আপত্তি জানালেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে আমি বললাম, আল্লাহর রাসূলও (স.) তো চুলে বেণী করেছেন। এ রকম হাদীস আমি পড়েছি। তখন তিনি হাদীসের সাথে সুন্নাহর পার্থক্য তুলে ধরে আমাকে কাউন্টার করার চেষ্টা করলেন। সাহাবীগণ ঝুঁটি বাঁধতেন না এবং ঝুঁটি বাঁধা অনুমোদন করতেন না, এমনটা বললেন।
আরো কিছু আলেম পর্যায়ের সহকর্মীর সাথে এ নিয়ে কথা বললাম। দেখলাম তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একজন বললেন, ‘ঝুঁটি বাঁধলে নারীর সাথে সাদৃশ্য হয়। তাই ঝুঁটি বাঁধা যাবে না।’ দেখেন, কালচার কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে। একটা নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক আবহের প্রভাবে উনি বুঝতে পারলেন না, এই অভিযোগটা শেষ পর্যন্ত স্বয়ং আল্লাহর রাসূলের (স.) ওপরও গিয়ে পড়ে।
প্রথমে যার সাথে আলাপ করলাম সেউ প্রফেসর ড. মুফতি মাওলানা সাহেব রাসূলের (স.) চুলে ঝুঁটি বাঁধা অথবা বেণী করাকে রাসূলের (স.) চারের অধিক বিয়ে করার বিশেষ অনুমতির সাথে রিলেট করে বললেন, ‘এটি শুধু রাসূলের (স.) জন্য খাস। তাই আমারা চুলে ঝুঁটি বাঁধতে কিংবা বেণী করতে পারবো না।’
লক্ষ করেছি, ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজন নানা দিক থেকে একটা ভারতীয় উপমহাদেশীয় ইসলাম পালন করে। এখানকার হালনাগাদের মাইন্ডসেট হলো, চুল লম্বা রাখে বখাটে ছেলেরা আর বাজে ধরনের পুরুষেরা। অথচ ছোট চুল রাখা হলো অনুমতি। আর কানের লতি, ঘাড়ের অর্ধেক অথবা কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত চুল রাখাটা ছিল সাহাবীদের জামানায় সামাজিক রীতি।
চুল নিয়ে নিবন্ধ লিখার জন্য আমি লিখতে বসি নাই। গতরাতে হাদীসের অনেকগুলো বইয়ের সংশ্লিষ্ট রেফারেন্সগুলো (কিতাবুল লিবাস থেকে) পড়েছি। সেখান থেকে একটা রেফারেন্স এখানে দিচ্ছি। এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশান কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ বুখারীর ৫৪৯৪ নং হাদীস। পরিচ্ছেদের শিরোনাম: চুলের ঝুঁটি।
“ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা মায়মূনা বিনতে হারিসের (রা.) নিকট রাত যাপন করছিলাম। ঐ রাতে রাসুলুল্লাহও (স.) তাঁর কাছে ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) উঠে রাতের সালাত আদায় করতে লাগলেন। আমি তাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমার চুলের ঝুঁটি ধরে আমাকে তাঁর ডান পাশে নিয়ে দাঁড় করালেন।”
আমার কাছে যদি হাদীসের অনেক বইপত্র না থাকতো, আমি যদি সেগুলো রিচেক না করতাম, তাহলে আমিও আলেম ভাইদের মুখস্ত বলে দেয়া কথার ওপর নির্ভর করে বসে থাকতাম। আমাদের আলেম ওলামারা এ’রকম কতো বিষয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে, তা নিয়ে আর না বলি। বললে ….. !
আলেমদের হওয়ার কথা ছিল জ্ঞানী, গুণী ও বুঝদার মানুষ। তা না হয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা হয়ে উঠেছেন priest class বা ধর্মযাজক শ্রেণি। বাংলাদেশে এত লক্ষ লক্ষ আলেম থাকার পরেও সমাজে তারা তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারছেন না। এর কারণ হচ্ছে তারা নিজেরা অনুসরণ করেন সর্বনিম্ন আইনী অনুমোদনমূলক ব্যবস্থা। এর ইসলামী পরিভাষা হচ্ছে রোখসত। বিপরীতে জনগণের কাছে তারা ডিমান্ড করে সর্বোচ্চ নৈতিক মান। ইসলামি পরিভাষায় যাকে বলা হয় আযিমত। যেমন বৃক্ষ তেমন ফল।