লিজা, অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাদের পরীক্ষার রুমে আমি পরিদর্শনের দায়িত্বে ছিলাম আজকে। ‌‘ইনফরমাল লজিক অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল থিংকিং’ এর পরীক্ষা। ভালো দুইটা টেক্সট থেকে ডিপার্টমেন্টের এক্সপার্ট দু’জন টিচার কোর্সটা পড়ান। আমি যে রুমে ডিউটিতে ছিলাম সে রুমের কোনো স্টুডেন্ট দু’টা টেক্সটের কোনোটাই পড়ে নাই। তারা ‘শীট’ অর্থাৎ সিনিয়র টপারদের নোট পড়ে পরীক্ষা দিতে এসেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরই তাদের সাথে আলাপে এটি জেনেছি।

তাদের মধ্যে একটা মেয়েকে দেখলাম বেশ স্মার্ট। লিজা ওর ডাকনাম। ও বললো, ‍“স্যার, আমরা প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে ভর্তি হই। এরপর নানা কারণে ডিপ্রেসড হয়ে পড়ি। লেখাপড়ায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলি। সাবজেক্টের সাথে তেমন যোগাযোগ গড়ে উঠা ছাড়াই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। স্বভাবতই রেজাল্ট খারাপ করি।

সব কোর্সের টেক্সট সব ইংরেজীতে। পড়ানো হয় মিক্সড ল্যাঙ্গুয়েজে। আমরা পরীক্ষা দেই বাংলায়। অনেক বাংলা প্রতিশব্দ মূল ইংরেজি টার্ম থেকেও কঠিন। খুব রেগুলার আর মেধাবী কিছু স্টুডেন্টই শুধু আপনাদের মতো ভাল শিক্ষকদের কথাবার্তা বুঝতে পারে। আপনার পেপারের জন্যও (আমি পড়িয়েছি এমন পেপারের পরীক্ষা সামনে) আমি শীট জোগাড় করেছি।

আমাদের জন্য কি আপনাদের কিছুই করণীয় নাই?”

আমার ধারনায়, শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, সারা দেশে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থার এটি একটি সামগ্রিক চিত্র।

শিক্ষার ব্যাপারটা একটা সামগ্রিকতার ব্যপার। সুষ্টু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার ব্যাপার।

    1. কেন আমরা পড়াবো?
    2. কী আমরা পড়াবো?
    3. কীভাবে আমরা পড়াবো?
    4. কীভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন (assessment or examination) করবো?
    5. পড়ালেখার পরে শিক্ষার্থীরা কী করবে?

এই পাঁচ কাজের কোনোটাকে বাদ দিয়ে একজন যোগ্য এজুকেটর/টিচার হতে পারে না। এই ৫টা ধাপের কোনো এক বা একাধিক ধাপকে উপেক্ষা বা দুর্বল করে কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই সঠিকভাবে চলতে পারে না।

গণতন্ত্র যেমন বেটার দ্যান এনি আদার অল্টারনেটিভ, তেমন করে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থাও শিক্ষক নিয়োগদান পদ্ধতি হিসেবে এক ধরনের মন্দের ভালো ব্যবস্থা। কেউ মেধাবী হলেই ভালো শিক্ষক হবে, এমন কোনো কথা নাই। ভাল পড়ানো হলো মেধা ও দক্ষতার ফলাফল। শুধু মেধা বা শুধু দক্ষতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভালো পড়ানো অসম্ভব।

স্কুল কলেজের শিক্ষকদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পদে নিয়োগপ্রাপ্তদেরকেও তাদের চাকুরীজীবনের সূচনাপর্বে এবং নিয়মিতভাবে পাঠদান ও মূল্যায়নের ওপর রিগোরাস প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরী। ক্লাস রুমে ইউনিভার্সিটির টিচারদের অনেকেই কী যে অদ্ভূত অদ্ভূত কাজে করে, তা তাদের স্টুডেন্টরা ভালো জানে।

আমরা যেভাবে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা নেই, সেভাবে আমাদের পারফর্মেন্স নিয়েও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিতে কোর্স সমাপ্তিতে মূল্যায়ন হওয়া জরুরী। স্বচ্ছ ও উভয় তরফে জওয়াবদিহিমূলক একটা সিস্টেম দাঁড় করানো ছাড়া উচ্চশিক্ষার এই পতন ঠেকানো অসম্ভব।

কথা খুব পরিষ্কার, শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদেশের কোনো ফর্মূলা এখানে তেমনভাবে কাজ করবে না। সুচতুর লোকজন জায়গামতো ফাঁকফোকর ঠিকই বের করে নিবে। IQAC আর accreditation council ইত্যাদিও কিছু হিসেবনিকেশের চাকচিক্য তৈরীর বাইরে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তেমন ইমপ্যাক্ট ফেলবে না, এমনটা অনুমান করি। HEQEP এর মতো এগুলোকেও লোকজন কায়দামতো ঠিকই ম্যানেজ করে ফেলবে।

তাহলে পথ কী? এক কথায় যদি জানতে চান তাহলে বলবো, উচ্চশিক্ষাকে বাঁচানোর একমাত্র পথ হলো— denial of the problem এর প্রবলেম থেকে বের হয়ে এসে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি তথা অনভিপ্রেত কিন্তু সত্যিকারের বাস্তবতাকে অকপটে মেনে নেয়া।

লিজার প্রশ্ন আমাকে খুব টাচ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এতবড় পরিসরে ‘পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নাই’ – এমন প্রশ্ন করার সাহস বা সুযোগ আমার নাই। ঠিক এ ধরনের মানসিক অবস্থায় বেশ ক’বছর আগে লিখেছিলাম, ‘এক বর্গ কিলোমিটার বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতার মাঝে বসবাস’। লেখাটা পড়তে পারেন।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

মোহাম্মদ শাহ আলম: পাবলিক এক্সামে উত্তীর্ণ হবার পর প্রাপ্ত গ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শর্তপূরণ করার পরও আবার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া কি পাবলিক এক্সামকে ডিসরিগার্ড করা না! তাহলে পাবলিক পরীক্ষার প্রয়োজন কী! এটা ঠিক, যে বিষয়ে একজন ভর্তিচ্ছু গ্রেজুয়েশন করতে চায় সে বিষয়ে তার এপটিচ্যুড দেখা দরকার। সেটার জন্য উর্ত্তীর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নম্বর, গ্রেড এবং ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তার আগ্রহের সমর্থনে লেখা ব্যক্তিগত বিবৃতিতো যথেষ্ট হবার কথা।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: পাবলিক এক্সামে কেউ উত্তীর্ণ হওয়ার পর একই বিষয়ের ওপরে আবার একটা পরীক্ষা নিলে হুবহু একই না হলেও কাছাকাছি ফলাফল হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না। বরং পাবলিক এক্সামে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ উচ্চশিক্ষার ভর্তি পরীক্ষায় খুব খারাপ করে। এতে প্রমাণিত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষায় স্টুডেন্টদেরকে তাদের প্রাপ্য গ্রেডের চেয়ে অনেক বাড়তি গ্রেড, যে কোনো কারণেই হোক, দেয়া হয়। উচ্চশিক্ষা পূর্ববর্তী পাবলিক এক্সাম যদি মানসম্মত হত তাহলে নিশ্চয়ই উচ্চ শিক্ষার জন্য পরীক্ষা, বিশেষ করে বর্তমানে প্রচলিত ধরনের ভর্তি পরীক্ষা থাকতো না, বা থাকার প্রয়োজন পড়তো না।

মিশকাত মারুফ: আসসালামু আলাইকুম স্যার। বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’পক্ষেরই (ছাত্র-শিক্ষক) স্বেচ্ছাচারিতা কি আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জবাবদিহিতার তেমন একটা সুযোগ নেই যেহেতু।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আইনি জবাবদিহিতার বিকল্প হতে পারে সামাজিক মূল্যবোধের চর্চা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে যারা স্বায়ত্বশাসন দিয়েছেন তারা একটা মূল্যবোধ কাঠামোর ভিতর দিয়ে বিষয়টাকে মূল্যায়ন করেছেন, তাদেরই উত্তরসূরিদের হাতে ক্রমে ক্রমে সেই সামাজিক সংস্কৃতি বা মূল্যবোধ কাঠামো আজ ধ্বংসপ্রায়।

মুন্না এম রহমান: প্রিয় স্যার, আসসালামু আলাইকুম। আপনার মত শিক্ষক থাকলে পথ হারাবে না আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রয়োজন ঐক্য, উদ্যোগ ও সিদ্ধান্তের। ইনশাআল্লাহ, আপনার চেষ্টা একদিন সফল হবে। দোয়াকরি আপনার সুস্থতা ও নেক হায়াতের জন্য।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার মত এবং আমার চেয়ে অনেক ভালো শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই আছেন। কিন্তু তারা ডিজঅর্গানাইজড এবং শিক্ষা-সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি। সময় এসেছে মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও যোগাযোগ গড়ে তোলার। এ প্রক্রিয়াকে সর্বতোভাবে রাজনৈতিক বিভেদ ও সংঘাত থেকে দূরে রাখতে হবে।

শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যারা শিক্ষকতা করতে চায় তাদের মধ্যে একটা দৃশ্যমান মোর্চা গড়ে তুলতে হবে। দেখা যাক কী হয় …

মোহাম্মদ ইশা: অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার নিরিখে লিখা। লিখক প্রিয় ভাইকে ধন্যবাদ। কিন্তু ইম্পলিমেন্ট করবে কে? সব নিয়োগ তো স্পইল সিস্টেমের।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এই যে আমরা বুঝতেছি যে সমস্যাটা জেনুইন, এটাই সমস্যাটা আর বাড়তে না দেওয়া এবং সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। একদিনে যেমন সব বরবাদ হয়ে যায় না, তেমনি রাতারাতি সবকিছু ঠিকঠাক করে নেয়া যায় না। বিশেষ করে উন্নয়ন একটা ধীর প্রক্রিয়া। Consistent effort can give sustainable development towards desired change.

মাহবুবুল হক হাসান: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের মেথড অব ইন্সট্রাকশন অনুসরণ করা উচিত। আমার একাডেমিক ক্লাসমেটদের আমি পড়িয়েছি যারা কখনও স্যারদের পড়ানো বুঝতোনা। আবার স্যারদের কাছে বলতেও পারতোনা। যাই হোক, প্রফেশনাল জীবনে তারা আবার মেধাবী অফিসার হিসেবে নিজেকে ফিরে পেয়েছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াই একজন ভালো শিক্ষক হতে পারে যদি তার পেশাগতা কমিটমেন্ট, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আন্তরিকতা ও বিষয়মুখী ঐকান্তিকতা থাকে, যেমনটি ছিলেন আমাদের অনেক প্রবীণ শিক্ষক।

পিংকি চক্রবর্তী: স্যার, আমার মনে হয় যেখানে নিয়ম পরিবর্তিত হয় না, মনমানসিকতা পরিবর্তিত হয় না, আর রেজাল্টাই একটা মূখ্য বিষয়, সেখানে বই পড়া মানে বিলাসিতা৷ কারণ এই বই পড়া ছাড়াই অনেককে ভাল ভাল রেজাল্ট করতে দেখেছি।

থার্ড ইয়ারে দুটো কোর্সে আমি সি+ এর মত পেয়েছিলাম, কিন্তু আমার লেখাগুলো ছিল রেফার করা টেক্সট বুক থেকেই। সেবার দেখেছিলাম, যারা গতানুগতিক শীট যোগাড় করে পড়েছে তারা অনেকেই এ-, এ পেয়েছে। ওরা যদি কখনো না বলতো যে ওরা শীট নিয়ে পড়েছে তাহলে হয়তো আমি এখনো বিশ্বাস করতাম যে কেবল বই পড়েই এই রেজাল্ট করা যায়।

দিনশেষে, থার্ড ইয়ারের রেজাল্টটা আমাদের কতজনকে যে ভুগিয়েছে তা বলার মত না। আমার সামগ্রিক রেজাল্টের মধ্যে এর প্রভাব আছে। তবে সেদিন থেকে একটা বিষয় নিজের মধ্যে ঠিক করেছি যে রেজাল্ট যা-ই হয়ে যাক না কেন, সহজে শীট কালেক্ট করে পড়ি নাই। ফিলসফিক্যাল সাবজেক্টগুলো সব সময়ই মূল বই আর ক্লাস লেকচার থেকেই পড়েছি। রেজাল্টের ধার ধারি নাই আর। তবে যারা রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড তাদের জন্য নিজেরা পড়ার পাশাপাশি শীট সংগ্রহ আর খাতার ওজন বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো উপায় নাই৷ এটাই দুঃখজনক।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তোমার মন্তব্যটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।

সাঈদ আহসান খালিদ: চমৎকার লিখেছেন স্যার। সরকারি ও পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনতিক্রম্য হয়ে ওঠেছে, পারস্পরিক বেশ বিদ্বেষমূলকও যা অনাকাঙ্ক্ষিত।

একজন শিক্ষক ভালো বা খারাপ পড়াতে পারেন। কিন্তু শুধু সেটির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক-কে মূল্যায়ন করে বলে মনে করি না। শিক্ষার্থীরা দেখে, শিক্ষকের মধ্যে চেষ্টা আছে কিনা, একাগ্রতা আছে কিনা, সততা আছে কিনা। এমন শিক্ষক যদি খারাপও পড়ায় তাঁকে শিক্ষার্থীরা অন্তত ঘৃণা করে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অসৎ ও বৈষম্যকারী শিক্ষকের প্রতি ক্ষমাহীন, তাদের প্রতি থাকে বুকভরা ঘৃণা।

শামীম নূর: স্যার, আপনার শিক্ষার্থী আপনার কাছ থেকে কী চাইছে তা পুরোপুরি ক্লিয়ার না। এবং সে যে প্রক্রিয়ায় পড়াশুনা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার গল্প শুনিয়েছে (২ ও ৩ নাম্বার প্যারা) সেটা ক্লিয়ার না হলেও মেক্সিমাম ক্ষেত্রে সেটাই সত্য।

তার কথার সূত্র ধরে বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হাতেগোনা খুব কম সংখ্যক স্টুডেন্ট ছাড়া বাকীরা এমনিতেই নিজেকে নিজে স্পয়েল করে দিচ্ছে। কেউ ইচ্ছে করে আবার কেউ অনিচ্ছায়। মেজরিটি স্টুডেন্ট সারা বছর ক্লাস না করলেও ঠিকই আনপ্রডাক্টিভ খাতে নিজেদের সময় নষ্ট করতে পারেন।

নিজে ফটোকপি করে স্টুডেন্টদের হাতে আর্টিকেল বা রেফারেন্স বুক চ্যাপটার দিয়ে, মেজরিটি স্টুডেন্টদের দিয়ে রিভিউ করাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হতো আমার। সারা বছর ঠিকই ক্লাস না করে বা যেনো তেনো কিছু ক্লাসে এটেন্ড করে, সিঁড়ির নিচের ফটোকপি দোকানের নোট লিখে পরীক্ষা দিতে মরিয়া অনেকেই।

আসলেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকে খুবই সস্তা বানিয়ে ফেলেছি। এসব কাজ বাহিরে জাস্ট অকল্পনীয়। যে ক’বার বাহিরে পড়তে এসেছি, আমার নিজের দেখা, এখানে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনার জন্য দিনরাত খেটে মরে।

তবে এসব কিছুর জন্য আমরাও কম দায়ী না। কিছু শিক্ষক ব্যতীত, অন্য শিক্ষকদের ঠিকমত ক্লাস না নেয়া, মানসম্মত লেকচার তৈরি না করা, নিজে না পড়ে ক্লাসে আসার পাশাপাশি বছর বছর নোট বইয়ের মত এক-দুইটা বই পড়িয়ে যাওয়া – এসব কাজও কোনো অংশে কম দায়ী না।

ফজলে রাব্বি কানন: আমি একটু পোস্ট রিলেটড কিন্তু খানিকটা অফ টপিকে কমেন্ট করতে আসলাম স্যার।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন বিভাগের ২০০’রও অধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি যে ‍‌‘তাদের বিভাগে ম্যাডামরা কেমন পড়ান?’ এই টপিকে ২০০+ শিক্ষার্থীর একই উত্তর, ‌‘শুধু শুধু এনারা শিক্ষকতা করতে এসেছেন। না আছে কোয়ালিটি (শিক্ষার্থীদের কাছে হাই সিজি মানেই কোয়ালিটি নয়), না আছে ক্লাস প্রেজেন্ট করার মত কোনো যোগ্যতা।’

এরকম শত, শত ম্যাডামদের মতো শিক্ষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অন্যদিকে, আমাদের শিক্ষার্থীদেরও কিছু দোষ অবশ্যই আছে। শীটের উপর নির্ভর থাকা, ক্লাসে না আসা, প্রেম, নেশা ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে সময় নষ্ট করা, নিজেদের মূল মটিভ হারিয়ে ফেলা, এক্সাম আসলেই শুধু চিন্তা করা ইত্যাদি।

পরীক্ষায় ঠিকমত লিখতে পারেনি বলেই লিজা এমন প্রশ্ন করেছে। যদি তার সিনিয়রের দেয়া নোট থেকে কমন আসতো এমন প্রশ্ন হয়তো শুনতেন না।

আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সময় সচেতন থাকতো, নিয়োগ দেয়ার পরবর্তীতে শিক্ষকদের পাঠদান সম্পর্কে রেগুলার মনিটরিং করা হতো, কীভাবে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পাঠদান করতে হয় সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতো।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *