চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস। একজন নিবাসী হিসেবে এখানকার ভালো-মন্দ দেখার সুযোগ পেয়েছি গত দুই যুগ। বাংলাদেশের মধ্যে যে গুটিকতেক জায়গায় সর্বোচ্চ সংখ্যক জ্ঞানী-গুণী লোকেরা থাকে, এটি তার অন্যতম। এখানকার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সাথে, কথার কথা পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী এলাকার পার্থক্য হলো, এখানে নানা মত, পথ ও ডিসিপ্লিনের লোকজন একসাথে থাকে। হাটহাজারী সদরে হাটহাজারী মাদ্রাসা অবস্থিত। এখানে রয়েছে শেরে বাংলার মাজারসহ সুন্নীদের ওয়াদুদিয়া মাদ্রাসা। আলটিমেইটলি এগুলো সব ইসলামী প্রতিষ্ঠান। তাই, কিছুটা দ্বিমত থাকলেও ওভারঅল এক লাইনেই, অর্থাৎ ইসলামি লাইনেই তাদের ভাবনা-চিন্তা।
এর বিপরীতে চবি হলো একটা সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান। উদাহরণ হিসাবে বলছি, কলা ভবনের ১২০ নং কক্ষ সংগীত বিভাগের। এর পাশের ১২১ নং কক্ষটি আরবী বিভাগের। এক রুমের বাইরে সব স্যান্ডেল। ভেতর থেকে হারমোনিয়ামের আওয়াজ। পাশের রুমে তখন ছোট-বড় সব মাওলানা সাহেব গুরুগম্ভির আলোচনাতে ব্যস্ত। চবি দক্ষিণ ক্যাম্পাসটাও এ রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ সহাবস্থানের জায়গা। পার্শ্ববর্তী পাহাড়িকা আবাসিক এলাকাসহ এই এক বর্গকিলোমিটার পরিসরে প্রায় শ’দেড়েক শিক্ষক বসবাস করেন।
এখানকার শিক্ষকগণ জ্ঞান-গবেষণার কাজ করেন ফ্যাকাল্টি এলাকায়, অফিসে। আমরা ধারণা করতে পারি, গোলাপ গাছেরই নিচের মাটিও গোলাপের সুরভি কিছুটা পায়। হাফেজ সাহেবের বিড়ালও নাকি কয়েক সিপারা কোরআন মুখস্ত পারে। একইভাবে, কথা ছিলো, এখানকার বুদ্ধিজীবীগণ কিছুটা হালকা মুডে হলেও এখানে কিছুটা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করবেন। বিশেষ করে, কলা ও মানববিদ্যা এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলোর লেখাপড়া প্রত্যক্ষভাবে মানুষ ও সমাজকে নিয়ে। বিজ্ঞান অনুষদের মতো তাদের ল্যাব সুবিধা পাওয়ার অপরিহার্যতা নাই।
ক্লাব, মসজিদ, বাজার ও দোকানে কেনাকাটা, বৈকালিক হাঁটাচলাসহ নানা ধরনের সামাজিক সম্পর্কের সুযোগে মাঝে মাঝে প্রসঙ্গক্রমে তাদের মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবিনিময় (inter disciplinary exchange of views) হওয়ার কথা। বুদ্ধিজীবী হলে যত্রতত্র বুদ্ধিজীবিতা ফলাতে হবে, তা নয়। কিন্তু জ্ঞানীদের সব কাজেই তো জ্ঞানের কিছুটা সুবাস বা ফ্লেভার থাকার কথা।
বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষকবৃন্দেরও নানা ধরনে উভয় পাক্ষিক, জ্ঞানগত, সামাজিক ও মতাদর্শগত দায়বদ্ধতা থাকে। অতীব দুঃখের বিষয় হলো, যে এক বর্গ কিলোমিটার জায়গা হতে পারতো জ্ঞানচর্চা এবং যুক্তিনির্ভর মত ও পথ অনুসরণের কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যে আবাসিক এলাকা হতে পারতো দেশ ও জাতির জন্য সহনশীলতা, উদারতা, উৎকর্ষতা ও মননশীলতার মডেল, সেই এলাকা নিছকই নিম্নমানের একটা অভিজাত এলাকা। এর একপাশ হতে ওপাশে হেঁটে গেলে কেউ দেখবে না, দুজন বা একদল শিক্ষক একাডেমিক বা কোয়াজি-একাডেমিক কথোপকথনে লিপ্ত।
যদ্দুর মনে পড়ে, এই এত বছরের মধ্যে সম্প্রতি মালয়েশিয়া ফেরত আরবী বিভাগের একজন শিক্ষক একবার আমাকে মুসলিম দর্শন ও পাশ্চাত্য দর্শনের বস্তুবাদী ধারা নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। আমার একজন ক্যাম্পাস নিবাসী বিভাগীয় সহকর্মীর সাথে আমার আগ্রহে একাডেমিক বিষয়ে মাঝেমাঝে কথা হয়। বুঝতেই পারছেন, বুদ্ধিবৃত্তির সামাজিক দায়বোধের নিরিখে এগুলো নিতান্তই অনুল্লেখযোগ্য। অবশ্য শিক্ষকগণ সুযোগ পেলেই নানা ধরনের বিভাগীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুপস্থিত পক্ষের সমালোচনায় মেতে উঠেন। পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের রসায়ন আর বুদ্ধিবৃত্তি বা বুদ্ধিজীবিতা তো এক না।
অন্যান্য উঠতি অভিজাত এলাকার মতোই এখানকার এলিটরা নিতান্তই ছাপোষা টাইপের। ফ্রি টাইমে নিজেদের নানা রকমের অর্জন আর অপ্রাপ্তি নিয়ে আলোচনায় তারা আগ্রহী। তাদের দেশভাবনা অনেকটাই ইন্টেলেকচুয়াল ফ্যাশন। এবং এর মূল এজেন্ডা হলো বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে নিয়ে নিম্নরুচির লোকদের মতো খিস্তি-খেউড় করা। বিশ্বাস্য না হলেও এটি সত্য, এখানে কোনো বইয়ের দোকান নাই। অথচ, এখানকার যে কোনো মুদি দোকানে দামী ও ‘ভালো’ জিনিসগুলো কিনতে পাওয়া যায়।
এখানকার এটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এখানে বসবাসকারী শিক্ষকদের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে নিয়মিত বা প্রায়-নিয়মিত মুসল্লী। এদিক থেকে, বাংলাদেশের কোনো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এমন কনসলিডেইটেড ও কোয়ালিটেটিভ কমপোজিশন বোধহয় নাই। তারা যার যার ডিসিপ্লিনের ব্যাকগ্রাউন্ড হতে ইসলামকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শক্তিশালী করবেন, এমনটাই তো ছিলো প্রত্যাশা। না, বাস্তবচিত্র এর উল্টা। অনিচ্ছুক ঘোড়াকে জোর করে পানি খাওয়ানোর ব্যর্থতার মতো উনাদেরকে দলীয় মনোবৃত্তির বাইরে স্বাধীন চিন্তা ও ক্রিটিক্যাল ডিসকাসশনের সিস্টেমে আনা যায় নাই। মসজিদের সামনে সিসি ক্যামরার নিচে দাঁড়িয়ে পেপার ও ফেইসবুক পর্যালোচনার বাইরে কোনো বিষয়ে একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গি হতে সিরিয়াসলি এনগেইজ হতে উনাদেরকে দেখা যায় না।
এখানকার মসজিদটিতে এসি লাগানো হয়েছে। দুই ফুট বাই দুই ফুট টাইলস তো আছেই। তাবলীগের লোকেরা এখানে নিয়মিত বয়ান করে। এটুকুর বাইরে এই ‘সংগঠিত মসজিদটিতে’ ইসলামের খেদমত হিসাবে কোনো সার্ভিস চালু নাই। তেমন কিছু করার সুযোগও এখানে নাই। বাংলাদেশের যে কোনো মসজিদের মতোই এটি শুধুমাত্র নামাজের জায়গা। তাও শুধু পুরুষ মুসল্লীদের। অন্য কোথাও না হোক, নারীদের প্রবেশাধিকার, পাঠাগার, কোরআন ক্লাস, সেমিনার, প্রদর্শনী, বাচ্চাদের খেলার জায়গা (kids’ corner) ইত্যাদি ইত্যাদি ইস্যুতে অন্তত এখানে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিতদের এই এলাকার মসজিদটাকে সোশ্যাল কানেকটিভিটির হাব তথা মডেল হিসাবে গড়ে তোলার কথা এখানকার প্রফেসর স্যারেরা কখনো ভাবেন না।
জানি, কেউ কেউ বলবেন, এখন পরিস্থিতি প্রতিকূল। ইত্যাদি। এই প্রতিকূলতা তথা নিরাপত্তা-ঝুঁকির অজুহাত খুবই ঠুনকো। বাস্তবতা হচ্ছে, বিদ্যমান এই ‘প্রতিকূলতা’ যতটা ইসলামের জন্য প্রযোজ্য, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি বিশেষ একটা ইসলামী রাজনৈতিক দলের জন্য প্রযোজ্য। এটি আসলে রাজনীতির খেলা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ইসলাম এখনো আমাদের মূলধারার সামাজিক শক্তি। দলীয় চশমা খুলে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে তা তারা অনায়াসেই বুঝতে পারবেন। অতীতে যখন অপরিমেয় অনুকূলতা ছিলো তখনও দলীয় স্বার্থের বাইরে সমাজের সাধারণ স্বার্থে তেমন কিছু করার তওফিক তাদের হয় নাই, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিশ্চিত বলতে পারি, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোনো অনকূল পরিবেশেও তারা দলীয় স্বার্থ বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে নিছক ইসলামের স্বার্থে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে সক্ষম হবেন না।
অবদান রাখতে পারা, দায়িত্ব পালন করা, এক কথায় কিছু করা বা করতে পারা, এটি যতটা সামর্থ্যের তারচেয়ে বেশি মানসিকতা ও চর্চার ব্যাপার। সব ক্ষেত্রেই দেখবেন, যারা করে তারা সব সময়েই কিছু না কিছু করে। কিছু করার উদ্যোগ ও ঝুঁকি নেয়ার বিষয়ে যারা পিছটান, অলওয়েজ লিপ সার্ভিস বা বকোয়াজগিরি যাদের স্বভাব, দেখবেন সবচেয়ে সম্ভাবনাপূর্ণ সময়েও তারা উদ্যোগ নেয়ার মতো কোনো কিছু খুঁজে পায় না। অলস, অনিচ্ছুক ও স্বার্থবাদীদের দেখবেন, তাদের অজুহাতের অভাব নাই, অভিযোগের তাদের শেষ হয় না।
এখানকার নাস্তিক, সেমিনাস্তিক, কেমন যেন প্রমিত ভাষায় সব সময়ে ‘কাব্য করে কথা বলা’ প্রগতিশীল ও সেক্যুলারদের বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা শূন্যের কাঁটা পেরিয়ে এখন অনেকখানি নেগেটিভ। নেগেটিভ এ কারণে বললাম, তারা যে মুক্ত জ্ঞানচর্চার কথা বলে তাতে ভিন্নমত পোষণ করার সুযোগ নাই। ভিন্নমত শোনার সময় তাদের নাই। ভিন্নমত প্রকাশের ন্যূনতম স্বাধীনতা কাউকে দিতে তারা নারাজ। পূর্বেকার খ্যাতিমান শিক্ষকেরা চলে যাওয়ার পর ক্যাম্পাসে বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার পুরো ব্যাপারটা এখন চরম দলীয়করণের রাহুগ্রাসে বিলুপ্ত। বামপন্থী আঁতেলেরা সুযোগ পেলেই ‘ধর্ম-ব্যবসায়ী’ হুজুরদের নির্দয় সমালোচনা করেন। অথচ তারা নিজেরাই যে দিনশেষে এক একজন ধান্দাবাজ বুদ্ধি-ব্যবসায়ী আপদমস্তক বুর্জোয়াতে পরিণত হয়েছেন তা তারা নিজেরা কতটুকু বুঝতে পারেন, জানি না।
একটা অভিজাত আবাসিক এলাকায় যেসব ন্যূনতম সুবিধা থাকা জরুরী সেগুলো এখানে উল্লেখযোগ্য হারে অনুপস্থিত। এ নিয়ে কথা বলারও কেউ নাই। সবাই বড় বড় পদ, পদবি, অবস্থান ও স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত। এখানে অভিজাত লোকেরা থাকে, শুধু এই অর্থে একে অন্যতম অভিজাত এলাকা বলা যেতে পারে।
এটি হতে পারতো দেশের জন্য মুক্ত জ্ঞানচর্চার একটা মডেল। তা না হয়ে এটি হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতার একটা বিরান ভূমি। সংশ্লিষ্ট কোনো প্রশ্নের জওয়াব পাওয়ার জন্য কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা মাঝে মাঝে খুব অনুভব করি। সাহস হয় না, তেমন কাউকে জিজ্ঞাসা করি। অতীত সম্পর্কের কারণে কেউ কিছুটা রেসপন্স করলেও যেমনটা আশা করি, তেমনভাবে এনগেইজ হন না। গবেষণা ও শিক্ষাদান উনাদের পেশা। লক্ষ্য হলো পদোন্নতি। আখেরে বেতনবৃদ্ধি। অর্জিত জ্ঞানকে যদি তারা আপন করে নিতেন তাহলে এতটা নির্লিপ্ত হওয়া তাদের পক্ষে কখনো সম্ভব হতো না।
সত্যিকারের জ্ঞান মানুষকে বৈষয়িক সুবিধার বাইরে প্রচণ্ড ভালোলাগা বা passion’এর পর্যায়ে নিয়ে যায়। বলাবাহুল্য, passion আর profession – দুটো আলাদা বিষয়। এর একটি অন্যটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একটির ওপর ফোকাস করলে অন্যটা ঝাপসা হয়ে পড়বে। এমনকি এর একটা অন্যটাকে হত্যাও করতে পারে।
উর্বর নারী যেমন সন্তান ধারণ করতে চাইবেই, সন্তান ধারণ করলে যেমন করে সে মাতৃত্বকে প্রকাশ করবে বা করতে বাধ্য হবে, সন্তানকে যেমন করে সে নিজের হিসাবে ক্লেইম করবে, রক্ষা করবে, লালন-পালন করবে, তেমন ধরনের ব্যাপার হলো জ্ঞানপিপাসুর হৃদয়, অর্জিত জ্ঞান ও এর কর্মগত বহিঃপ্রকাশ বা বাস্তবায়নের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। নিছক দক্ষতা নয়, মুখস্তবিদ্যা নয়, যে জ্ঞান সত্যিকারের জ্ঞান, তা সক্রিয় হয়ে পড়া পারমাণবিক বিক্রিয়ার মতো অদম্য। যে দেশের বুদ্ধিজীবীরা নির্লোভ জ্ঞানপিপাসু নয়, যারা জ্ঞান আহরণ ও বিতরণকে আর দশটা ব্যবসার মতো নিছক আয়-উন্নতির ব্যাপার হিসাবে দেখে, সে দেশের অবস্থা কেন খারাপ হবে না বা কেন এর চেয়ে উন্নত হবে, তা আমার বুঝে আসে না।
ফেসবুকে প্রদ্ত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Paradox Arabi: এক নিশ্বাসে পড়ে গেলাম। অনেক কিছু বলার ছিলো- এলাকা আয়ত্বের বাইরে- বলা উচিত নয়। তবে ঢাবি আবাসিক এলাকা বললে যতটা আভিজাত্য ভাসে, চবি দক্ষিণ ক্যাম্পাস মনে হয় ঠিক ততটা উলটো। জোবরা বললে তারচে’ বেশি এলিটিজম আসে।
আসিফ চৌধুরী: আমাদের সমাজও ভাবে, ছেলেটা এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, নিশ্চয়ই অনেক বড় চাকরি করবে। অর্থাৎ, বিদ্যার (পড়ুন সার্টিফিকেট) সাথে অর্থচিন্তা বা ব্যক্তিগত স্বার্থই জড়িত। আমার এলাকার এক মুরুব্বি আমি পড়াশোনা শেষ করে কি করব জানতে চাইলে “দাদার জমিতে কৃষিকাজ করব” বলাতে তিনি সেটা অসম্ভবই ধরে নিয়েছেন কিংবা মনে করেছেন আমি উনার সাথে মশকরা করেছি!! স্যার, অসম্ভব ভাল লেগেছে লিখাটা। অনেক ভাবনার জন্ম দিল এই লিখা।
Bhuian Monoar Kabir: ১. ব্যতিক্রম আছে। সেগুলো নজরে রাখলে মন্দ হতোনা।
২. দেশের সার্বিক শিক্খার ও রাজনৈতিক অবস্থার নিরিখেই নির্মোহভাবে বিষয়টি দেখাই সঙ্গত।
৩. এ বিষয়টি দীর্ঘদিনের। বাসিন্দাগন এখানে কার বা কাদের দায় কতটুকু তা কম বেশী জানেন।
৪. নিজেদের এলাকার বিষয় নিয়ে নিজেরা কখনো আলোচনা করা হয়না বললে বাহুল্য হবে কি!
৫. আমার মনে হয়, সাউথ ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের আলোচনা না করাই বহেতর। হ্যা, সমাজিক সৌহার্দ্য আরো বাড়ানোর ব্যাপারটা গুরুত্ব পেতে পারে।
৬. সর্বোপরি, পুরো বিষয়টি ফেসবুকে না আনলে কি হতোনা!
সবার প্রতি শুভ কামনা ও ঈদ মোবারক।
Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আজ সকালে নাস্তা করার সময় হিস্ট্রী অব মানি নিয়ে একটা ডকুমেন্টারী দেখছিলাম। এ নিয়ে আমি আমার মতো করে অনেক চিন্তাভাবনা ও পড়াশোনাও করেছি। এরাবিক, ইসলামিক স্টাডিজ, ফিন্যান্স আর ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের কারো কারো সাথে ফ্যাকাল্টিতে তখন কথাও বলেছিলাম। আজ একজনের সাথে এ নিয়ে কথা বলতে গেলাম। তেমন রেসপন্স পেলাম না। প্রায় সময়েই এমন হেল্পলেসনেস আর ভ্যাকুয়াম ফিল করি।
মুসলিম হিসাবে মনে করি, জীবনের জন্য জ্ঞান। জ্ঞানকে যারা ব্যবসা হিসাবে নেয়, মনে করি, নৈতিকভাবে সেটা দোষণীয়। গ্রিক ফিলোসফিতে সফিস্টরা এ কাজ করতো।
তৃতীয়ত: স্যার, এটাও মনে করি, জ্ঞানীদের উচিত “until I am asked for properly, I will remain silent” – এই নীতিকে পরিহার করা। কারণ, জ্ঞান আল্লাহর নেয়ামত। অপরাপর নেয়ামতের মতো, জ্ঞানও সম্পদ। এবং প্রত্যেককে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
স্যার, আমার প্রতি আপনার বিশেষ স্নেহের ওপর আস্থা রেখে বলছি, আমি ব্লেইম গেইমে বিশ্বাস করি না।
স্যার, সাউথ ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে যতটা মুগ্ধ করে। এতদিনেও আমি ক্লান্ত হই নাই। তাইতো, মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে নিজের বাড়ি ফেলে এখানে থাকি। কিন্তু এর অব্যবস্থাপনা, এখানকার অধিবাসীদের আত্মকেন্দ্রিকতা, নগ্ন দলীয়পনা ও দৃশ্যমান সামাজিক বুদ্ধিবন্ধ্যাত্ব আমাকে হতাশ করে। যা আমার লেখায় উঠে এসেছে।
Bhuian Monoar Kabir: আমার পয়েন্টগুলো একটু মনোযোগের সাথে দেখলে দেখবে, আমি কি বলতে চেয়েছি। খুব ভিন্ন কিছু বোধ হয় বলিনি। কিন্তু কি নিয়ে কোন্ প্ল্যাটফরমে কেমন ডিসকোর্স হতে পারে বা না পারে, সেটা আমার কাছে অনেক সিরিয়াস ব্যাপার। ব্লেমগেমে যাওয়া আমি hate করি। কিন্তু দায় অন্তত মনে মনে চিন্তা করাটা ভাল। ভাল থেকো।
Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আমি কখখনো কারো এক্সপারটাইজ নিয়ে প্রশ্ন তুলি নাই। সেটা আমার কাজও না। আমি বুদ্ধিজীবীতার যে সামাজিক দায়বোধ, তার দিকে লক্ষ করে যা কিছু বলেছি। যা কিছু লিখেছি তা আমার অভিজ্ঞতা হতে লিখেছি। হতে পারে তা খণ্ডিত, ব্যক্তিগত বা একপাক্ষিক। আমার কোনো কথায় মনোকষ্ট নিবেন না, স্যার। অনুরোধ।
Jahid Limon: স্যার, লিখার আগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনার পয়েন্টগুলো অযুক্তিক বলবো না। তবে স্যার এ লেখার প্রেক্ষিতে আপনার পয়েন্টগুলোর বিপরীত পয়েন্টগুলো আমার খুদ্র বুদ্ধিতে এভাবেই ধরা দেই,
১.ব্যতিক্রম যে নাই তা স্যার একবার ও বলেন নি। স্যার নিজেই ত তার ব্যতিক্রম।
২. দেশের সার্বিক অবস্থায় যদি বুদ্ধিবৃত্তিকতা চাপিয়ে রাখতে হয় তাহলে স্যারের লেখাই উঠে আসা ক্ষোভ কোন অংশেই অপ্রাসঙ্গিক নয়।
৩. বিষয়টা দীর্ঘদিনের বলেই ত এমন সংস্কৃতি প্রতিদিনের হয়ে গেছে। বাসিন্দারা দায়িত্বজ্ঞানহীন স্যার বোঝাননি। তবে দায়িত্বহীন মানুষে সরগরম সাউথ ক্যাম্পাস সে বেপারে দ্বিমত পোষণ করার মত শক্ত অবস্থানে স্যার আপনি আছেন কি?
৪. নিজের এলাকা নিয়ে বলা হয়না বললে আবশ্যই বাহুল্য হবে। কিন্তু ঐ এলাকার প্রকৃত অবস্থা আর আদর্শগত পার্থক্য তুলে ধরা কি বাহুলতা!?
৫. সাউথ ক্যাম্পাস যদি শুধু একটা আবাসিক জায়গা হত তাহলে না লেখাই উত্তম ছিল। কিন্তু এটা ষোল কোটির একত্রিত বিবেক। ষোল কোটির বুদ্ধিবৃত্তিক দায়িত্বর দায়বদ্ধতা তো কখনোই ব্যাক্তিগত হতে পারে না।
৬. স্যার, এই বিষয়টি আমি বুঝিনি। আপনি কি অন্য কোন মাধ্যমে প্রকাশ করার ধারণা দিলেন? নাকি স্যারকে (লেখক) তার ব্যক্তিগত মতাদর্শ ব্যক্তিগত ডায়রিতে আবদ্ধ করে রাখতে উপদেশ দিলেন?
ক্ষমার চোখে দেখবেন স্যার (মনোয়ার কবির স্যার)
Bhuian Monoar Kabir: প্রিয় মোজাম্মেল, ফেসবুকে বিস্তারিত লেখার সুযোগ ও সময় ও যোগ্যতা না থাকাতে যেকোন সিরিয়াস বিষয়ে কিছু মন্তব্য করলে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
তুমিসহ যাঁরা আমার লেখার উপর মন্তব্য করেছেন, তাঁদেরকে অশেষ ধন্যবাদ। তবে, আমার বক্তব্যটা হয়তো আমি নিজেই বুঝাতে পারিনি। আমিতো সব সময় বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা নিয়ে কথা বলেছি।
Expertise নিয়ে তুমি কিছু বলেছ, তা আমিও বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি, এ বিষয়টাকে সার্বিকভাবে, রাজনৈতিক, ও লেখাপড়ার ও আদর্শিক দৈন্য অবস্থার আলোকেই সৎ সাহস সহ যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব অন্ততঃ মনে উপলব্ধি করা ভাল। উটপাখী সিনড্রম থেকে বের হওয়াই ভাল।
এর যে পটভূমি ও অতীত আছে, আজকেতো তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া কঠিন।
তদুপরি, collective academic engagement সাউথ ক্যাম্পাসে যদি নাই থাকে, তবুওতো ব্যক্তিগত লেভেলে তো বিদ্যাচর্চাতো চালিয়ে নেয়া যায়।
যাই হোক, বিতর্ক আমার কোনদিনও কাম্য বিষয় না। শুধু কিছু বিষয়ে কিছু মত ব্যক্ত করতে চেয়েছি মাত্র।
আমার কাউকে কোনদিন কারো ব্যক্তিগত মতদর্শ নিয়ে অযাচিত পরামর্শ দেইনা। এটার ব্যাপারে আমি প্রত্যেকে স্বাধীন সিদ্ধান্তের এখতিয়ারকে শ্রদ্ধা করে এসেছি, কারো আদর্শের সাথে ঘোরতর দ্বিমত সত্বেও। অন্য অনেকেই কি করেন, কে কি করেন, ছোট কমিউনিটি হিসাবে সেটা সবারই জানা।
বিষয়টার সামগ্রিকতা বিবেচনায় না নিয়ে, এর পটভূমি বাদ দিয়ে দিলে লেখাটা ahistoric হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
সবশেষে, স্নেহের কারো ব্যাপারে যেমন, এ বিষয়েও তেমন। আমি কারো critique লিখিনি। শুধুই আমার ছোট্ট বুদ্ধি অনুযায়ী কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছিলাম সম্পুরক/পরিপূরক হিসেবে।That’s all.
আল্লাহ্ আমাদের সবার মঙ্গল করুন। স্নিগ্ধ সকালের শুভ কামনা রইল সবার প্রতি।
Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আপনার মতো সিনিয়র ও স্কলার মানুষ লেখাটা পড়েছেন, মন্তব্য করেছেন, প্রতিমন্তব্যের সুন্দর ও টু দ্যা পয়েন্ট উত্তর দিয়েছেন, পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে অপ্রত্যাশিত, বড় পাওয়া। এখানকার অন্য মন্তব্যকারীদের তরফ থেকেও আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, তাদের ভাষা ও মন্তব্যের জন্য।
স্যার, ফেইসবুক বা ব্লগে লোকেরা অনেক সময়ে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে ঢালাও মন্তব্য করে। হয়তোবা, আমিও এর ঊর্ধ্বে নই। এ জন্য সিনিয়রেরা অনেক সময় এখানে তেমন ইজি ফিল করেন না।
আমি মনে করি, আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ভালো জানেন বলেই বিষয়টার ওপর যা কিছু বলা দরকার মনে করেছেন তাই বলেছেন। আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে সহমত পোষণ করছি। আপনার পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাগুলোকে গ্রহণ করছি। স্যার, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
Abu Hanif: স্যারকে অনেক ধন্যবাদ সময়োপযোগী লেখার জন্যে, তারপরেও যদি কারো চেতনা জাগ্রত হয়!!
Mohammad Mozammel Hoque: চেতনা তাদের জাগ্রত হবে না। জানেন তো, ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায়, কিন্তু…! এই লেখা পড়ে এখানকার লোকজন ক্ষুব্ধ হবে। তাতে কী করার আছে? এক একটা সময় এক একটা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি। সেসব নিয়ে কারো সাথে কথা বলার স্কোপ পাই না। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যারা একাডেমিক স্কলার তারাও জিজ্ঞেস করলে হু-হ্যাঁ করা ছাড়া সিরিয়াসলি এনগেইজ হতে চান না। এমনি একটা বিষয়ে গতকাল একজনের সাথে কথা তোলার পরে উনার রেসপন্স দেখে ভীষণ হতাশ হয়েছি। তাই, ভাবলাম, সে জায়গা হতে পারতো স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তির কেন্দ্র, তা তা না হয়ে, হয়েছে জ্ঞান-গবেষণার নামে সুবিধাবাদ চর্চার আখড়া।
ওই যে নজরুলের কবিতা, “দেখিয়া শুনিয় ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে”।
Nazamul Hoque: It is not only the problem of South campus or North campus of CU. Rather, it is the common scenario of all the universities of Bangladesh. Intellectual discourse is almost absent everywhere. University teachers are either engaged with some money marking activities or they are involved in some unproductive and valueless discussion or gossiping. That’s why the ranking of our universities are gradually declining. Let us start a movement for intellectual, thought provoking, functional, and life oriented discourse.
Mohammad Mozammel Hoque: “University teachers are either engaged with some money making activities or they are involved in some unproductive and valueless discussion or gossiping. Let us start a movement for intellectual, thought provoking, functional and life oriented discourse.” – Simply fantastic!!!!
But Nazamul Hoque, you know, I’ve failed to do it, with all of my potentialities and all out efforts. This claim is definitely applicable on the Islamist camp, that I belonged for last three decades around.
Mohammad Belal Uddin: University is the ultimate breeding center of creating knowledge but practically we r 2 observe shocking scenario in our daily professional life/working place. Most of the time those… National Guardians are too much engaged themselves with silly monetary affairs or the silly affairs for which they r not asked/assigned/jobed/duty or leads them to make responsible.
Khalid Bin Owalid: আপনার লেখা সব সময়ই চিন্তার গভীরতা প্রকাশ করে, চিন্তাকে গভীরতায় ধাবিত করে। তবে মাঝে মাঝে কিছু বিষয় লেখার মূল স্রোতোর সাথে রিলেট করতে ব্যর্থ হই। এই লেখায় যেমন হাটহাজারি মাদ্রসা এলাকার বিষয়টা।
Mohammad Mozammel Hoque: ঠিকই বলেছেন। লেখায় কতটুকু প্রসংগ-বিষয় আনা যথার্থ হবে তা অনেক সময় আমি বুঝতে পারি না। গুছিয়ে লিখতে গিয়ে অনাবশ্যক জটিলতা এসে যায়। এটি মাস্টারির কুফল। তথাকথিত একাডেমিক এপ্রোচ হচ্ছে যথাসম্ভব নন-কনক্লুসিভ করে লেখা বা দ্বিমত করার জায়গা রেখে কথা বলা।
এখানে হাটহাজারী মাদ্রাসার কথা আনছিলাম এ কথা ভেবে, ওখানেও তো অনেক জ্ঞানীগুণীজন আছে। এরই পাশে হাটহাজারী বাজারের দক্ষিণে সুন্নীদেরও মাজার-মাদ্রাসা আছে। সেখানেও জ্ঞানীগুণী আলেমেগণ আছেন। তৎসত্ত্বেও তারা সবাই মোটাদাগে ইসলামী পণ্ডিত। সে হিসাবে একই ধাঁচের।
এর বিপরীতে তিন কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী, অ-ইসলামী ও ইসলামবিরোধী সব পণ্ডিতের সমাবেশ। মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা করার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসার তুলনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেক বেশি উপযোগী ও উর্বর জায়গা। এটুকু বুঝাতে চেয়েছিলাম।
এতবড় লেখা পড়েছেন। তদুপরি সুন্দর মন্তব্যও করেছেন। তাই, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। never hesitate to put any query or suggestion, please!
M.m. Hoque: স্যার, অনেক ধন্যবাদ। আপনার পর্যবেক্ষণ যথার্থ। জ্ঞানচর্চা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। তাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রমোশনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু লেখালেখি হয়। আবার পত্রিকায় এ লেখালেখি নিয়েও নানা কথা দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি জ্ঞান সৃষ্টির বিষয়টি যেন অনেকেই বেমালুম ভুলে গেছে।
২ Comments