গতকালকের ঘটনা। চবি সেন্ট্রাল ফিল্ডে গাড়ী চালানো শিখাচ্ছি ভাগিনা-বউকে। ভাগিনা-বউ বড় সার্জন। তার খুব ইচ্ছা গাড়ী চালানো শিখবে। ওরা থাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮/১০ কিলোমিটার দূরে নতুনপাড়া এলাকায়।
বিকেলে আমার পুরানো গাড়ীটা দিয়ে রব হলের ওপাশটায় প্র্যাকটিস করিয়েছি। সন্ধ্যার পরে ফাঁকা থাকবে এই ধারণায় বাসা হতে নাস্তা-পানি করে সেন্ট্রাল ফিল্ডে আসলাম ভাগিনার নতুন গাড়ীটা নিয়ে। সাথে ছিল ওদের ড্রাইভার, ওরা দু’জন আর আমার ওয়াইফ। মিতুল ম্যাম।
মাঠের মধ্যে দেখলাম তখনো অনেক লোক। জায়গায় জায়গায় যুগল আর জটলা। একটা যুগলকে দেখা গেল খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। মেয়েটার চুল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে তার ছেলেবন্ধু। ভাগিনা বললো, ‘ও ওর বান্ধবীর মাথায় উকুন বাছতেছে।’ গাড়ীর হেডলাইটের তীব্র আলোতেও তারা নির্বিকার। ব্যস্ত।
রাত তখন আটটা সাড়ে আটটা হবে।
অনেক আগের কথা। তখন দেশে সামরিক শাসন। ঢাকা শহরে রাতের কার্ফিউ চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র গভীর রাতে সরকারের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখনের জন্য বের হয়ে সশস্ত্র বাহিনীর টহলের মুখে পড়ে। তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তারা বললো, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে পড়ি। প্র্যাকটিকেল করার জন্য আমাদের চিকা দরকার। তাই আমরা চিকা মারতে বের হয়েছি।’ এ’কথা শুনে মিলিটারিরা তাদেরকে ছেড়ে দিলো।
শুনেছি, দেয়াল লিখনকে চিকা মারা বলার বিষয়টি এরপর হতে প্রসিদ্ধ হয়ে পড়ে। এই কাহিনীর সূত্রে ভাগিনাকে বললাম, হতে পারে তোমার এই কথাটাও একসময়ে প্রসিদ্ধি লাভ করবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। ‘খোলামেলা’ পরিবেশের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা হতে তরুণ-তরুণীরা গণহারে এখানে ‘বেড়াতে’ আসে। মাসের তিরিশ দিন। এত লোকের অবাধ সম্পর্ক চর্চার ভার বইবার ক্যাপাসিটি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে? অথচ, দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছে।
কাপলদেরকে কোনোভাবে ‘ডিস্টার্ব’ করা যাবে না, এটা হলো এখানকার সামাজিক সংস্কৃতি। কেউ ডিস্টার্বড ফিল করলে, আকাশ-বাতাস দেখা আর হাওয়া খেতে বসা কাউকে কেউ কোনো ‘অসংগত’ কথা বললে ডিস্টার্বকারীর খবর আছে। নরসিংদী রেল স্টেশানের ঘটনা মনে আছে? থাকলে আর বলার দরকার নাই। একটু হিন্টস দিতে পারি।
এখানে আপনি যা করবেন, একটু ম্যানেজ করেই করবেন। অসুবিধা নাই।
স্বাধীনতাচর্চাকারী তরুণ বা তরুণী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টই না হয়, তাতেও কোনো অসুবিধা নাই। এলাকার পাতি নেতাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো গ্রুপের পলিটিকাল কোনো বড় ভাইয়ের সাথে থাকে হট কানেকশান। ফোন পাওয়ার সাথে সাথে মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে তারা হাজির হয়ে যাবে।
তাই এখানে নির্বিঘ্নে চলে উকুন বাছার কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অগুণিত মশার সখ্যতা সহ্য করে রাতের অন্ধকারে খেলাধূলায় আগ্রহী ছেলেমেয়ের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও এ ধরনের ‘সাহসী’ কর্মকাণ্ডের প্রতি এখানকার ডমিনেন্ট সোশ্যাল মাইন্ডসেট কিন্তু যথেষ্ট পজিটিভ অ্যান্ড সাপোর্টিভ।
এখানকার গণসম্মতির পাল্লা ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশার দিকে অনেক বেশি ভারী।
প্রেম শব্দটা এখন অনেকটাই অচল। রিলেশনশীপ, ডেট, হ্যাংআউট, মেকআউট, ব্রেকআপ, মুভ অন, কতো কী টার্ম। এগুলোতে বাধা দেয়ার পরিণতি খুব খারাপ। জানি। তবুও লিখি।
আমার এসব রক্ষণশীল লেখালেখির সমালোচনা যারা করে, তাদের ভাষা আর শব্দচয়নই প্রমাণ করে, যে কথা আগেই বলেছি, এ’দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে যৌনবিপ্লবের প্রাথমিক পর্যায় ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আমাদের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের দৃষ্টিতে যৌনতার এ ধরনের চর্চা ও বহিঃপ্রকাশ অগ্রহণযোগ্য। এবং এই অর্থে অন্যায় ও অনৈতিক।
অনৈতিক বা বিরুদ্ধ কাজ প্রত্যেক সমাজে নানা মাত্রায় থাকে। সেটা বড় সমস্যা নয়। বরং, অন্যায়কে অন্যায় মনে না করা, এবং অনৈতিকতার ব্যাপারে সামাজিক গণপরিসরে সমর্থনমূলক দৃষ্টিভঙ্গী ডমিনেন্ট হয়ে উঠা, এটাই হলো বড় সমস্যা।
পাশ্চাত্য থেকে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশেষ করে আমাদের উচ্চশিক্ষা কাঠামো গড়ে উঠেছে পাশ্চাত্য আদলে। অথচ আমাদের সামাজিক কাঠামো স্বতন্ত্র। অনেক ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য ধাঁচের বিপরীত। এমতাবস্থায় শীত প্রধান দেশের পোশাক গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে চালু করা বা গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের পোষাক শীত প্রধান অঞ্চলে প্রচলন করতে চাওয়ার মতো কিছু ভুল আমরা বুঝে বা না বুঝে করে যাচ্ছি।
আনলাইক ওয়েস্ট, আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা-মায়ের পোষ্য হিসেবে এবং তাদের অভিভাবকত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। পড়ালেখা শেষ করে তারা পরিবারের কাছে ফিরে যায়।
আনলাইক ওয়েস্ট, বিয়ে হচ্ছে এখানে সেক্স করার একমাত্র সমাজস্বীকৃত পদ্ধতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদের একাংশ এবং ‘সিইউ-তে ঘুরতে আসা’ কোমলমতি যুগল-অতিথিরা যদি এ’রকম গ্রোয়িং রেশিওতে এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার চর্চা করতে থাকে, তাহলে এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে? আপনার ধারণা?
আমার ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে ক্যাম্পাসে ব্যাপক অরাজকতার সৃষ্টি হবে। যতই নিয়মকানুন করা হোক, ইনসিডেন্ট ঠেকানো যাবে না। অনিবার্য এই বিশৃঙ্খলার ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে বৃহত্তর সমাজে।
অবশ্য তাতে করে যৌন বিপ্লবের এই ঢেউ যে পাশ্চাত্যের মতো সফলতা পেয়ে যাবে, এমনটা নয়। আবার এটি যে একেবারে ব্যর্থ হয়ে যাবে, এমনটাও নয়।
আলটিমেটলি একটা কেয়টিক সিচুয়েশন ক্রিয়েট হবে।
পাশ্চাত্য যৌনবিপ্লব এখানে সফল না হওয়ার কারণ হলো, ওয়েস্টের সাথে আমাদের সিভিলাইজেশনাল কনফ্লিক্ট।
পাশ্চাত্য সভ্যতা দুনিয়ার একমাত্র সভ্যতা হয়ে উঠবে এবং এভাবে ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটবে – এ ধরনের একটা দৃষ্টিভঙ্গী কিছু লোকেরা পোষণ করে। তাদের এই চিন্তা ভুল।
আমার ধারণায়, কোনো সভ্যতা কখনো দুনিয়ার একমাত্র সভ্যতা হয়ে উঠে না। ইতিহাস আমাদেরকে তাই বলে। হতে পারে বিশেষ কোনো সময়ে বিশেষ কোনো সভ্যতা ডমিনেন্ট হয়ে উঠেছে। যেমন, সমকালীন পাশ্চাত্য সভ্যতা বর্তমান বিশ্বে ডমিনেন্ট হয়ে উঠেছে।
লক্ষ করার ব্যাপার হলো, দুনিয়ার যেসব অংশ হতে বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে ইতোমধ্যে, তার মধ্যে এই বাংলাদেশও অন্তর্ভূক্ত। কীভাবে তা খুব সংক্ষেপে বলছি।
তিনটা জিনিস সমাজ ও সভ্যতা গড়ে তোলে। এই তিনটা জিনিসের আলোকে এক একটা সমাজ ও রাষ্ট্র তার নিজের মতো করে গড়ে উঠে।
টাকা-পয়সার দিকে থেকে আমরা গরীব হলেও জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী ও পারিবারিক মূল্যবোধের দিক থেকে আমরা পাশ্চাত্যবাসীদের তুলনায় অনেক ঋদ্ধ। ক্লাসিকেল ভেলূজের দিক থেকে আমরা অনেক রিচ। এখানকার জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে এটি সত্য।
আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা লেখাপড়ার নামের ছেলেমেয়েদের জিম্মি করে রেখেছি। তাদের কাছ হতে কেড়ে নিচ্ছি তাদের জীবনের অমূল্য সময়। তাদেরকে আমরা আত্মবঞ্চিত হতে বাধ্য করছি।
এর পরিণতি হলো, বেপরোয়া হয়ে তারা তাই করছে যা তাদের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে মানানসই। আমরা বড়রা তাদের অভিভাবকরা এটি স্বীকার করতে চাই না, অথচ এটি সত্য, আমরা বাধ্য করছি আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে প্রকৃতিবিরুদ্ধ অস্বাভাবিক জীবনযাপনে।
এ ধরনের বিষয়ে আমি সাম্প্রতিক অতীতে লেখালেখি করেছি। আবারো লিখলাম। আমার বিরোধিতা করে এমন কিছু স্টুডেন্টের মতে, স্যার শুধু সেক্স নিয়ে লেখে। তারা ভেবে পায় না, পোলাপান সেক্স করবে, তাতে স্যারের আপত্তি কেন? অথবা, এত তো বেশি কিছু করছে না। এতটুকুতেই কেন এত আপত্তি ….?
না ভাই, আমি শুধু সেক্স নিয়ে লিখি না। কারো সেক্সুয়াল চয়েস বা সেটিসফেকশান নিয়েও আমার আপত্তি নাই। সমস্যা অন্য জায়গায়। সেক্সের মতো জিনিসকে আমি ওয়ান-টু-ওয়ান পারসনাল বিষয় হিসেবে দেখি না। সেক্সুয়ালিটি এক জিনিস আর সেক্সুয়াল প্রমিসকিউটি অন্য জিনিস। এতটুকু যিনি বুঝছেন, তিনি বুঝতে পারবেন, আমার আপত্তি ঠিক কোন জায়গায়।
সমাজ হলো কিছু মানুষ কিছু অভিন্ন স্বার্থে একসাথে একটা মোটাদাগে মতৈক্যের মধ্যে বসবাস করা। এক হয়ে থাকা। একসাথে নিয়মনীতি মেনে চলা। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা হতে আমরা কখনো নিজেদেরকে মুক্ত ভাবতে পারি না।
আমি বিশ্বাস করি, freedom must be balanced with due responsibility। আমি বিশ্বাস করি, happiness must be holistic। তাই, unconditional freedom is meaningless anarchy।
হোন আপনি কারেন্ট স্টুডেন্ট অথবা বিশ্ববিদ্যালয়-ফারেগ, ঠাণ্ডা মাথায় ভাবেন। আলোচনা করেন। গবেষণা করেন। বুঝার চেষ্টা করেন। চেষ্টা করলে বুঝবেন, বৈবাহিক ব্যবস্থা একটা নারী-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপার। পুরুষের জন্য বৈবাহিক সম্পর্ক এক অর্থে একটা বার্ডেন। সমাজ আরোপিত শর্ত।
বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে মূলত নারীপক্ষ দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা পেয়ে থাকে। বিয়ের মাধ্যমে নারীরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পেয়ে থাকে। তাই নারীমাত্রই হয় হাইপারগেমাস আর পুরুষমাত্রই হয় পলিগেমাস। ক্রস কালচারালি এটি সত্য। না জানলে বিবর্তনবাদী মনস্তত্ত্ব পড়ে জেনে নিতে পারেন।
কয়েক দশকের প্রকৃতিবিরুদ্ধ বিপ্লব-চেষ্টার মাধ্যমে হাজার-লক্ষ বছরের ইতিহাস ও আপদমস্তক বায়োলজিকে ভুল প্রমাণ করা যায় না। এ ধরনের ব্যর্থ চেষ্টার মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তিই শুধু বাড়ে।
এতবড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কতো কিছু হয়। হয় না শুধু সামাজিক নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা। মোস্ট আনফরচুনেট বাট ট্রু, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হয় দলদাস অথবা ছাপোষা চাকুরীজীবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরটা যে এতটা ফাঁপা তা বাহির থেকে ততটা বুঝা যায় না।
অনেক আগে গভীর মর্মবেদনা নিয়ে লিখেছিলাম একটা লেখা, যার শিরোনামটা ছিল, ‘এক বর্গ কিলোমিটার বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতার মাঝে বসবাস’। পড়তে দেখতে পারেন।
এখানে কাউকে যেন কিছু বলা যাবে না, এমন অলিখিত নিয়ম। বিবেকবুদ্ধি দিয়ে কথা বলা এখানে পলিটিকেলি ইনকারেক্ট। কথা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় স্বাধীন মতের চর্চা হবে। যুক্তির শাণিত ব্যবহার হবে নন্দিত। হয়েছে তার উল্টো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে অ-প্রগতিশীল ধ্যানধারণা লালন করা যেন হেরেটিক। রীতিমতো ধর্মদ্রোহিতার মতো মারাত্মক অপরাধ।
কথা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় হবে উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। হবে মানবিক উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল। বাস্তবে তা হয়েছে নিছক সনদ অর্জন আর দেশীয় ঐতিহ্য আর মূল্যবোধ ধ্বংসের উর্বর ক্ষেত্র।
HECAP, IQAC আর OBE উপর থেকে না নাড়াইলে এখানকার কারো বিবেকবুদ্ধি এতটুকু নড়ে না। কোনো বিষয়েই সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা এখানে নাই। সবকিছু হাইলি পলিটিসাইজড।
কোয়ান্টিটেটিভ গ্রোথ বাট কোয়ালিটেটিভ শ্লো ডেথ, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এটি আমার মর্মান্তিক উপলব্ধি। কেন এ অবস্থা, সেটি ভিন্ন আলোচনার বিষয়। আপাতত খেলার মাঠের ঘটনা দিয়ে শেষ করি।
রাত্রির অন্ধকারে বান্ধবীর মাথায় কয়টা উকুন পেলে, এটি ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করি, এতটুকু সাহস আমার হয়নি। ‘তোমাদেরকে কি মশায় কামড়ায় না’ – এই প্রশ্নটা করার মতো হিম্মতও আমার হয়নি। যা দেখার দেখে ফেলেছি, এরপর কালবিলম্ব না করে আপসে কেটে পড়েছি।
প্রসঙ্গক্রমে একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে সেদিন এক শিক্ষক বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের প্রক্টরিয়াল পাওয়ার আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন দশক চাকুরীর সুবাদে জানি, কথাটা সত্য।
কিন্তু এ’ মুহুর্তে আমি ভাবছি, থাকুক এমন কতো সত্য কথা কাগজে কলমে অথবা নিয়মে, রীতিতে। আগে জানটা তো বাঁচুক। হন্তারক এই সময়ে বেঁচে থাকাটাই বড় সফলতা।
উকুন বাছার কাহিনীটা তাজা। তাই শেয়ার করলাম। এবং এই সুবাদে কিছু প্রাসঙ্গিক কথাও বললাম। প্রার্থনা করি কায়মনোবাক্যে, এই বিরুদ্ধ সময়ে রেডপিল নেয়া সাহসী কিছু লোকজন অন্তত বেঁচে থাকুক আগামী সূর্যোদয় অবধি।
মন্তব্য
ফারদিন: এখানে মূল সমস্যাটা হলো, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজে সন্তানদেরকে সার্টিফিকেটভিত্তিক ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে বাধ্য করে তাদেরকে জোর করে বৈধ উপায়ে যৌন চাহিদা মেটানো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এই দুটো সমাজে সার্টিফিকেটভিত্তিক চাকরি বাদে বাকী সকল কাজকে খুবই ঘৃণার চোখে দেখা হয়, আর সন্তানদেরকে শিক্ষাজীবন শেষ করার আগ পর্যন্ত নিজের পায়ে দাঁড়াতে দেয়া হয় না।
এইভাবে তাদের মৌলিক চাহিদা থেকে একদিকে বঞ্চিত রাখা হয়, আবার অপরদিকে একটা নৈতিক শিক্ষা বিবর্জিত লিবারেল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত করা হয়। তার সাথে যোগ করা হয় সহশিক্ষা। ফলে এই সন্তানদের একদিকে যেমন থাকে প্রচণ্ড যৌনক্ষুধা, তেমনি মনস্তাত্ত্বিকভাবে তারা বিপরীত লিঙ্গের অবৈধ সংশ্রব লাভেও তেমন বাধার সম্মুখীন হয়না – লিবারেল চিন্তাধারায় বেড়ে ওঠার ফলে।
এখন আপনি সমালোচনা করেন বা বাধা দিতে যান, যেটাই করেন না কেন আপনাকে আগে সমস্যার গোড়ায় হাত দিতে হবে। আপনি একটা প্রচণ্ডরকমের ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে খাবার মেলে ধরবেন, আর সে অনুমতি ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূত উপায়ে সে খাবার খেয়ে নিলে তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে কোনো লাভ হবে না।
উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজকে এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে এই ২০-৩০ বছরের লম্বা শিক্ষাজীবন শেষ করার আগে সন্তানের কোনো ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোটা অপরাধ। এই ট্যাবু ভেঙ্গে তাদের সন্তানদেরকে নিম্নবিত্ত সমাজের সন্তানদের মত দ্রুততম সময়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবার রাস্তা করে দিতে হবে যাতে করে সে বৈধ উপায়ে অর্থাৎ বিয়ে করে নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে।
যৌনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। অনেকে সন্তানকে Only Boys/Girls শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়ে যৌনতার বিষয়টাকে পাশ কাটাতে চান। কিন্তু শেষমেশ এটা আরো ভয়ঙ্কর দিকে মোড় নেয়। বিপরীত লিঙ্গের সংস্পর্শের অভাবে তারা (কেউ কেউ) যৌন চাহিদা মেটাতে সমকামী কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত হয়।