অবাধ ব্যক্তি-স্বাধীনতার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। দুর্বল হয়েছে সেখানকার সামাজিক বন্ধন। ধর্ম সেখানে অপাঙ্ক্তেয়। তাই তাদের বাচ্চাদেরকে সবকিছু স্কুলে শেখাতে হয়। তাদের মূল্যবোধ ব্যবস্থা আইন নির্ভর।
আমাদের এখানে বিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের সামাজিক সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। মূল্যবোধ শিক্ষার মূল জায়গাটা হচ্ছে আমাদের শক্তিশালী পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থা।
যেভাবে শুরু হয়েছে, বাচ্চাদেরকে সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস ইত্যাদি পড়ানোর উপর গুরুত্ব না দিয়ে স্কুলে লাইফস্টাইল আর তথাকথিত সৃজনশীলতা শিখানো শুরু হলে, এর পরিণতিতে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দুর্বল হয়ে পড়বে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক কাঠামো। অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে ধর্মীয় মূল্যবোধব্যবস্থা।
এভাবে চললে বছর কয়েকের মধ্যে দেখবেন, স্কুল কারিকুলামে এলজিবিটিকিউ সেট করে দেয়া হয়েছে। বাধাহীন পানি প্রবাহ যেমন উপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসে তেমন করে উন্নত বিশ্বে চলমান জেন্ডার-নৈরাজ্যের সবকিছু দেখবেন এখানে অটোমেটিক্যালি চেপে বসেছে। একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে দেখবেন আপনার-আমার বা কারো কিছু করার থাকবে না।
তাদের দৃষ্টিতে তাদের মত করে জেন্ডার কম্প্লায়েন্ট না হলে আপনার তৈরি পোশাকও তারা কিনবে না, আপনাকে কোনোরকমের সহযোগিতাও তারা করবে না। আপনার ঐতিহ্যবাহী ও চিরায়ত মূল্যবোধের বিনিময়ে আপনাকে নিতে হবে ওদের মতো করে ‘উন্নয়ন’।
কেরাম বোর্ড খেলায় স্ট্রাইক করা হয় একদিকে, লক্ষ্য থাকে অন্যকিছু। অপরপক্ষের গুটি ঠেকিয়ে নিজের গুটি পার করার পথ পরিষ্কার করা। Paradigmatic conflict বা মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব হলো কেরাম বোর্ড খেলায় স্ট্রাইক করার মত কৌশলী ব্যাপার।
আপনি যদি গেইম থিওরি না বুঝেন, সবকিছুকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি ঠকবেন। আপনার পরাজয় নিশ্চিত। অনিবার্য। অযোগ্য হওয়ার কারণে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও আপনাকে সাহায্য করবেন না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা মনে করেছি বাবার নামের সাথে মায়ের নাম সংযুক্ত করার নিয়ম চালু করার হয়েছে। বাহ্, ভালোই করেছে। অসুবিধা কী? কিন্তু এটা আমরা বুঝতে পারিনি, আই মিন অনেকেই বুঝতে পারেননি, এটা হচ্ছে বাবার নাম-পরিচয় বাদ দেওয়ার প্রস্তুতিমূলক পূর্ব-পদক্ষেপ।
তারা চায় পাশ্চাত্যের মতো পিতৃহীন (fatherless) ব্যবস্থা কায়েম করতে। পারিবারিক ব্যবস্থা, বিশেষ করে মাতৃত্বের সব অনুষঙ্গকে একে একে আউটসোর্সিং-এর আওতায় নিয়ে আসতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা অলরেডি সফল। একটু চোখ বুলিয়ে দেখলেই, তরুণদের মন-মানসিকতা বোঝার একটুখানি চেষ্টা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন।
রাজনীতির দৃষ্টিতে সব কিছু দেখার পরিবর্তে সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে যে রাজনীতি লুকিয়ে আছে ঠান্ডা মাথায় সেটা বোঝার চেষ্টা করেন। নচেৎ নদীপাড়ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে আপনার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। খুব সম্ভবত ইতোমধ্যেই কোথাও কোথাও ঠিক এমনটাই ঘটেছে।
নদী পাড়ে কী হয়?
বর্ষাকালে বন্যার সময় নদীর পাড়ে অনেক সময়ে উপরের সবকিছু ঠিক থাকে, কিন্তু নিচের মাটি সরে যায়। নদীর পানি তলে তলে বাড়িভিটার নিচ পর্যন্ত চলে আসে। হঠাৎ করে সবকিছু নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। আগেভাগে সতর্ক না হলে শেষ মুহূর্তে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকে না।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গ, হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় সম্পর্কে পরীক্ষামূলক দর্শনচর্চা।
Miraj Hossain: সুলতানের শাসনে বা রাজারা যে খাসমহলের জন্য লোকদের খোজা করাতো সেটা কি জায়েজ ছিল?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হাদিসে পড়েছি। জিহাদ এর সফর উপলক্ষে সাহাবীরা অনেক সময়ে দূরদূরান্তে যেতেন। কিংবা আর্থিক অনটনের কারণে বিয়ে-শাদী করতে পারতেন না। তখন তাদের কেউ কেউ অনুমতি চাইলেন যেন তারা খোজা হয়ে যায়। তাদের এ ধরনের চিন্তাভাবনায় রাসূল (স) খুব রাগান্বিত হলেন এবং খুব কঠোর ভাষায় নিষেধ করলেন। ব্রডলি বলতে গেলে, কোনো প্রকারের অঙ্গহানিকে ইসলাম সমর্থন করে না। কোন অবস্থাতেই না। বুঝতে হবে, অঙ্গহানি বলতে আসলে আমরা কী বুঝছি বা বোঝাতে চাইছি।