কথা ছিল আজ এই সময়ে ‘মুক্তিযোদ্ধার মা’র মরণোত্তর ‘চাইর দিন্না’ খেতে যাবো।

না,  শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের ছোট ভাই নুরুল আলমকে উনার মায়ের এই তথাকথিত  জেয়াফতে যাওয়ার ওয়াদা করি নাই। মনে কষ্ট পাবে মনে করে সরাসরি ‘না’-ও বলি  নাই। তাই কথা ছিলো মানে উনাদের পক্ষ হতে বার বার জোর দিয়ে বলছিলো।

আমার স্ত্রী-কন্যাদের কাছে ফতেহপুর নিবাসী মরহুমা নাজমা বেগম চাচী, মুক্তিযোদ্ধার মা হিসাবে পরিচিত  ছিলেন। ছবিতে যেমনটা দেখছেন, তিনি চাটগাঁইয়া মহিলাদের আদি পোষাক,  সেলাইবিহীন থামি, ব্লাউজ ও বড় উড়না পরতেন। মিতুল আর আমি ছিলাম উনার মুখ  ডাকা পুত আর (পুতের) বউ। বাচ্চারা নাতি।

প্রতি শুক্রবারে জুমার আগে  আসতেন। তেমন একটা খেতে চাইতেন না। এটা-ওটা চেয়ে নিতেন। নামাজ শেষ হওয়ার আগে  করে মসজিদের সামনে অন্যান্যদের সাথে সারিতে বসে ভিক্ষা নিতেন।

যাচাই  করে দেখেছি উনার বড় ছেলে শাহ আলম সত্যিই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল  রেজিমেন্টে সদ্য যোগদানকারী জওয়ান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নিহত হন। সে হিসাবে শাহ আলমের মা ক্যান্টনমেন্ট হতে ভাতা পেতেন। কয়েক মাস পর পর সেটা তুলতেন।  যতদুর জেনেছি, ছেলের ওপর রাগ করে টাকাগুলো মেয়ের কাছে দিয়ে দিতেন। যার  কারণে, উনার অভিযোগ মোতাবেক, ছেলের বউ উনাকে জ্বালাতন করতো। খাওয়াতো না। সে  জন্য উনি ভিক্ষা করতেন।

প্রসংগত: উল্লেখ্য, কাউকে সাহায্য দিলেই হবে  না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উক্ত সাহায্যকে কাজে লাগাতে সক্ষম কিনা, তাও দেখতে  হবে। অর্থাৎ ডোনেশানের সাথে সাথে ডোনেশানের ম্যানেজমেন্টও সমপরিমাণে  গুরুত্বপূর্ণ। যাহোক।

গত ৪ দিন আগে উনি মারা  যাওয়ার আগে ব্রেইন স্ট্রোক করেন। মাঝখানে একবার হুঁশ আসার পরে বার বার আমার  কথা নাকি বলছিলেন। উনার নাতনি টুনটুনি আমাকে ফোন করে খবর দেয়ার পরে পরের দিন দুপুরে আমার ছোট মেয়ে রাহনুমাকে নিয়ে উনাকে দেখতে যাই।

দেখলাম উনি অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। বাম পাশ অবশ। ডান হাত নাড়াচড়া করছেন। অনেক মহিলা  ভীড় করে আছে। তারা আমাকে বললো, উনার নাকি ‘ছাখারাত’ (মৃত্যু যন্ত্রণা)  চলছে। আমি যেন উনাকে চামুচে করে পানি খাওয়াই। আমি কয়েক চামুচ দুধ ও কয়েক  চামুচ পানি মুখে দিলাম। তিনি ঢোক গিলে সেগুলো খেলেন। আমাকে চিনতে পেরেছেন  কিনা জানি না। রাহনুমা খানিকটা কাঁদলো।

খানিক পরে আমাদেরকে নিয়ে সামনের রুমে বসানো হলো। অনেক ফল কেটে দেয়া হলো। চা দেয়া হলো। রীতিমতো আপ্যায়ন। পাশে কোথাও অনুষ্ঠিত হওয়া ওরশের ‘তবরুক’ খাওয়ার জন্য তারা অনেক  জোরাজুরি করলো। নুরুল আলমের বউ বার বার বলতে থাকলো, “ভাবী (মানে আমার বউ  মিতুল) তো ওরশের জন্য চাঁদা দিছে। খান। অল্প করে হলেও খান।” হতে পারে, শাহ আলমের মা চাইছে বলে সাহায্য হিসাবে আমার ওয়াইফ কিছু টাকা দিয়েছে।

যাহোক, উনাদের বললাম, উনাকে তো খাওয়াতে হবে। না হলে দুর্বলতার কারণেই উনি মারা  যাবে। তারা বললো, একজন ডাক্তার আনছিলেন। ‘এ অবস্থায়’ আর ‘টানা টানি না করার’ জন্য নাকি ডাক্তারই বলেছেন। তারা চামচ দিয়ে পানি খাওয়াচ্ছেন। একজন হুজুর এনে ‘ঝাড়াইছেন’। যতক্ষণ হায়াত আছে, পাশে থেকে উনারা ‘সেবা-শুশ্রষা’ করছেন।

২.

খুব খারাপ লাগলো। তারা সবাই  অপেক্ষা করছেন কখন উনার ‘ছাখারাত’ শেষ হয়। এটি উনার ফার্স্ট স্ট্রোক। সাথে  সাথে হসপিটালে নিলে আংশিক প্যারালাইজডও হয়তোবা হতো না। মানুষ সাধারণত ৩য় বা  ৪র্থ স্ট্রোকে মারা যায়। স্ট্রোকের সাথে সাথে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে ঘাড়ের  মধ্যে ইনজেকশান দিতে হয়।

এই মহিলার ছেলে-মেয়েরা তাঁকে একটা স্যালাইন  দেয়ারও প্রয়োজনীয়তা বোধ করে নাই। অথচ, ৫০০ লোকের খাওয়ার আয়োজন করে মায়ের  মৃত্যুতে ‘মেজ্জান’ (জেয়াফত) দিচ্ছে। অসুস্থ এই মহিলা কখন মারা যান সে জন্য  এলাকার লোকেরা অপেক্ষা করেছে। মাকে কেন হাসপাতালে নেয় নাই, সাধ্যমতো  চিকিৎসা করে নাই সে জন্য নুরুল আলমকে কেউ ব্লেইম করছে না।

সামর্থ্য  না থাকা সত্বেও নুরুল আলম কেন এ রকম একটা অমানবিক খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান  আয়োজন করেছে? সওয়াবের জন্য নয়, নিশ্চয়। কারণ, তারা নিজেরাই গরীব। আর শুধু  গরীবদেরই খাওয়াচ্ছে না। আত্মীয়-স্বজনসহ বাড়ির সবাইকে খাওয়াচ্ছে।

এ  ধরনের মেজবানে নিজ বাড়ির সবাইকে আর পাশ্ববর্তী বাড়ি ও পাড়ার সবাইকে বলতে না  পারলে অন্তত: প্রতি ঘর হতে একজন করে বলতে হয়। ডেকোরেশানের চেয়ার-টেবিল,  বয়-বাবুর্চি, প্যান্ডেল ও সাজ-সজ্জ্বা করা হয়। মৃত্যু উপলক্ষ্যে এ ধরনের খাওয়া-দাওয়ায় অংশগ্রহণ করার বিষয়টাকে ধনী-গরীব সবাই ‘অধিকার’ জ্ঞান করে।

যে  ঈসালে সওয়াবকে উপলক্ষ্ করে এই আয়োজন, তার কিছুই এখানে হয় না। কোনো দোয়া-দরূদ ইত্যাদি কিছুই হয় না। সিম্পলি আর দশটা উৎসব আয়োজনের মতো একটা অনুষ্ঠান। হৈ-হুল্লুড়, হাসি-খুশি আদর-আপ্যায়ণের আনন্দ অনুষ্ঠান।

কি নিদারূণ বিকৃত মন-মানসিকতা…!

অর্থহীন এই সামাজিক প্রথা ধর্মের নামে আচরিত হয়। টাকা না থাকলে অকাতরে ঋণ দেয়া হয়।

নুরুল আলমদের বেড়ার ঘরটার লাগোয়া ঘরটা পাকা দালান। ধারণা করছি, এরা  মুক্তিযোদ্ধার মা সাজেদা বেগমের কুলখানি উপলক্ষ্যে মেজ্জান দেয়ার জন্য উনার ছেলেকে টাকা ঋণ দিয়েছে। যদিও মৃত্যু পথ যাত্রী এই বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য  কিছু করার গরজ তারা অনুভব করে নাই।

আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, মৃতকে  মাটিতে শোয়াতে হয়, হয়তো এই বিবেচনায়, যে কোনো সময়ে মারা যাবেন বলে অচেতন এই  বৃদ্ধাকে মাটির উপর পাটিতে কাঁথা দিয়ে শোয়ানো হয়েছে। সেই রুমের খাটটা  দেখলাম খুলে বাইরে রাখা হয়েছে।

৩.

যারা ‘টপ-ডাউন এপ্রোচে’ ‘দ্বীন কায়েম’-এ বিশ্বাস করেন, তারা বলুন, এ ধরনের  ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যার সাথে রাজনীতির সম্পর্ক কী? ঢাকায় কোন দল সরকার  ক্ষমতা গ্রহণ করলে এ সবের অবসান হবে?

ইসলামী আদর্শের নিরিখে যারা জীবন যাপনের চেষ্টা করছেন, সে জন্য অনুকূল পরিবেশ ও কাঠামো গড়ে তোলার কাজে শরীক আছেন তাদেরকে বলছি–

বাস্তববাদী হোন। ক্রমধারায় কাজ করুন। মক্বী যুগের ভিত আগে রচনা করুন। মানুষকে তাওহীদের বুঝ-জ্ঞান দিয়ে সমাজ গড়ার কাজকে অগ্রাধিকার দিন। মনে রাখবেন, আদর্শমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভার বহন করার জন্য মানবিক ও শক্তিশালী সমাজ ব্যবস্থার পূর্ব-প্রতিষ্ঠা জরুরী। যে কোনো আদর্শ, যে কোনো সমাজ ও যে কোনো  রাষ্ট্রের জন্য এটি সত্য।

এর বিকল্প হলো, নিবর্তনমূলক ও সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পত্তন। কম্যুনিস্টরা যা করেছে। অধিকাংশ পলিটিক্যাল ইসলামিস্টরা যা করতে চান।

যারা অস্ত্র হাতে নিয়েছে শুধু  তারাই আধুনিক খারেজী ISIS বা তালেবান নন। ‘টপ-ডাউন এপ্রোচে’ যারা রাষ্ট্র ও  সমাজ গড়তে চান, আক্বীদার পরিবর্তে রাষ্ট্র সংস্কারে যারা বেশি মনোযোগি,  মন-মানসিকতায় তারা সবাই-ই আইসিস-তালেবান।

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Mohammad Abdullah Arafat: শেষ পর্যন্ত এই লেখাটি কারা পড়বে? যারা সমাজের Root লেভেলে থাকে (ব্লগ…..) পড়ছে না তারা কি এগুলা শুনবে? এখানে সবচেয়ে ভাল কাজটাই করতে পারে যারা ওয়াজ-মাহফিল করে ওরা। কিন্তু তারা নীরব এবং আমরাও নীরব। আমার কাছেও ‘ফলার/চাইরদিন্নে’ ব্যাপারটা অসহনীয়।

Mohammad Mozammel Hoque: বলাবলি করতে করতেই তো কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়, নতুন কিছুর প্রচলন হয়। তাই না?

Mohammad Abdullah Arafat: এখানে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, আমি যখন কিছু বলতে যাই তখন ওরা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে আমি হুজুর না। আর আমরা যা দর্শন পড়ি তাকে আরবিতে মানতিকের সমপর্যায় ধরা হয়। আবার নাকি মানতিক পড়া সবার জন্য নয়…! এখন কোনদিন দর্শন না পড়ে আসা আমরা হঠাৎ এইগুলা বললে তারা শুনতে ইচ্ছুক না। অধিকাংশ মানুষ বলে এটা নাস্তিকের সাব্জেক্ট। সেই এক মজা এটার। ☺…

তবে স্যার, মধ্যবর্তী সমাজ কন্সেপ্ট’টা দারুন। দুপুরে চিন্তা করতেছি, আমাদের কোন দল যদি বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি করে আমি ওঠাতে অংশগ্রহন করবো।

Mohammad Mozammel Hoque: ‘বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি” কথাটাই ভুল। সঠিক হলো “বুদ্ধিবৃত্তি” অথবা “রাজনীতি”।

Mohammad Abdullah Arafat: আমার নিজের কুরানে হাফেজ কাজিনকে বলছিলাম, এই তোমরা মাহফিল বা ওয়াজে যাওয়ার সময় ‘আমাকে এত টাকা দিতে হবে’ বলে যে পলিসি আগে থেকে ঠিক করেছ, ওটা ভাল না। কাজিন আমাকে বলে, তোমাদের প্রফেসররা যে কলমের সিগ্নেচারে হাজার হাজার টাকা খেয়ে ফেলে তখন কী হয়? আমি বললাম, হুজুরদের অবস্থান তো প্রফেসরদের লেভেলে না? তাও মানতে ইচ্ছুক না।

Mohammad Mozammel Hoque: ইসলামের দাওয়াত দিয়ে সুবিধা নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। কিন্তু দ্বীন শিক্ষার বিনিময়ে সুবিধা নেয়া জায়েজ। প্রথমটার উদাহরণ ওয়াজ মাহফিল। দ্বিতীয়টার উদাহরণ মাদরাসার চাকরি।

Ahsanol Hoque: মোল্লারা খাওয়ার জন্য মেজবান চালু করেছে। আসলে মেজবান তো ইসলামী কালচার না। আমি মনে করি, মেজবান এক প্রকার জুলুম।

Mohammad Mozammel Hoque: মৃত্যু পরবর্তী মেজবান শুধুমাত্র “এক প্রকার জুলুম” না, এটি চরম জুলুম ও অমানবিক সামাজিক কুপ্রথা। কোত্থেকে যে এটি এলো, আশ্চর্য ব্যাপার…!

AbūSamīhah Sirājul-Islām: ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কাজ “টপ-ডাউন”ও নয় আবার “বটম-আপ” এপ্রোচও নয়। এটা একটা কম্প্রিহেন্সিভ এপ্রোচ। এটা গোড়াতে যেমন সংশোধন চালাতে চায় ঠিক মস্তিষ্ককেও পরিশুদ্ধি করতে চায়। খালি একটার দিকে খেয়াল দিলেই আরেকটা চলবে না।

Didar Khasru: আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। সমাজ বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসংগের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তবে একটা কথা, এজন্য কোন সংগঠনের সমালোচনা করতে হবে কেন?

Mohammad Mozammel Hoque: কোনো সংগঠনের নাম তো নেয়া হয় নাই।

যারা top-down পদ্ধতিতে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী, আমি তাদেরকে ভুল মনে করি। বিরোধিতা করি। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিত কোনো সরকার টপ-ডাউন এপ্রোচে কাজ করতে পারে। নাগরিক সমাজের কাজ সরকারের কাজ হতে স্বতন্ত্র, যদিও নাগরিকদের একাংশ সরকার গঠন ও পরিচালনা করে। যদিও ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সরকার বিশেষকে নাগরিক সমাজের কোনো অংশ পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। পক্ষের সরকারের উপস্থিতিতেও নাগরিক সমাজের কাজ bottom-up এপ্রোচেই হতে হবে।

মোট কথা হলো, যে কোনো সামাজিক উদ্যোগ সমতলধর্মী কিম্বা উর্ধমুখী। রাষ্ট্র ও সরকার মাত্রই, নাগরিকদের সাথে সম্পর্কের নিরিখে নিম্নগামী, যাকে আমরা টপ-ডাউন এপ্রোচ বলছি। আশা করি আমি যা বলতে চেয়েছি তা বুঝাতে পেরেছি।

Saima Shams: কী লাভ ১০০০ মানুষকে এক বেলা ভাল করে খাওয়াই? যে মানুষটা আজকে এক বেলা ভাল করে খেয়ে গেল সেই গরিব মানুষটা তো কালকে আবার না খেয়েই দিন কাটাবে। তার চেয়ে বরং ৫ জন মানুষকে যদি এই টাকা দিয়া ভাল করে বাচার জন্য কিছু একটা কাজ ধরাই দেই তাহলে অই মানুষগুলকে আর খাওয়ার জন্য লাইন দিতে হবে না।এভাবে মানুষ কেন ভাবে না আমার জানা নেই। এইসব অনুষ্ঠানে গরিবদের থেকে বেশি অবস্থাবান মানুষই থাকে। এইসব অনুষ্ঠান get together ছাড়া আর কিছু না।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

One Comment

  1. আসসালাম….. বারাকাতুহ
    সুদীর্ঘ সময় ধরে আপনার লেখা ও দর্শনের সাথে পরিচিত আছি! আপনার বক্তব্যের সাথে মন সাড়া দেয়না বা ভাবায়না- এমনটা খুব কমই ঘটে! সেটা অস্বাভাবিকও নয়! যদিও আপনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করা বা আপনার লেখার বিষয়বস্তুর তাত্ত্বিক পর্যালোচনা করার যোগ্যতা বা দুঃসাহস কোনটাই রাখিনা!

    তবে আজকের লেখাটি পূরোটা পড়ার পর শিরোনাটা কেন যেন আমার কাছে অসংগত মনে হলো! বিদ্যমান এমনতর বহুবিধ সামাজিক অসংগতি দূরীকরণে “ইক্বামতে দ্বীনের সহী তরীকা”র আদৌ কোন সক্ষমতা আছে কিনা তা পূণর্বিবেচনার দাবী রাখে!

    আপনার লেখায় দুটো বিষয় উঠে এসেছে মনে করি-
    (১)মুক্তিযোদ্ধার মায়ের চিকিতসা না করানো এবং (২)”চাইর দিন্না” প্রসংগ
    প্রথমটি সামাজিক দায়িত্ব পালন না করা এবং দ্বিতীয়টি ধর্মীয় অপসংস্কৃতি বা বিচ্যূতি!

    প্রথমটির জন্য যে মানবিক মূল্যবোধ থাকা প্রয়োজন তা ক্রমশঃই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে- একথা অস্বীকার করার পথ নেই! ইকামাতে দ্বীনের সংগঠনগুলো এদিকে তাদের নজর তীক্ষ্ণ করা উচিত!
    কিন্তু এর সাথে রার্ষ্ট্রীয় ও স্থানীয় সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বও সমধিক!

    তবে দ্বিতীয় বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্যরকম! আমি যেমনটা মনে করি-
    বটম-আপ-এপ্রোচের সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই! কিন্তু সমাজের যেসব অসংগতির সাথে স্বার্থবাদী মহলের সংশ্লিষ্টতা ও রাষ্ট্রপরিচালনা কর্তপক্ষের সমর্থন সুনিশ্চিত, সেখানে কোন আদর্শিক আন্দোলনের জন্যই মূল বাদ রেখে ডাল-পালা কাটার কাজে মনোনিবেশের যৌক্তিকতা থাকার কথা নয়!

    অপরাজনীতির সাথে ধর্মব্যবসার সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর আঁতাতের শিকড় সমাজের গভীরে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বিকৃত ইসলামের যে মহীরূহ বাংলাদেশকে ছায়াচ্ছন্ন করে ফেলেছে তাকে উপেক্ষা করেই ‘দ্বীন কায়েম’-এর কাজকে এগিয়ে নিতে হবে!

    “চাইর দিন্না” বা “চল্লিশা” বর্তমান বাংলাদেশে সামাজিকভাবে যে অবস্থানে আছে (সারা দেশে নয়, বরং বিশেষ কিছু অঞ্চলে) তা সরকারী নিষেধাজ্ঞা ও খবরদারী ছাড়া বিলুপ্তির সম্ভাবনা আতিশয় ক্ষীণ মনে করি!

    সমাজের মন্দস্রোত রুখে দাঁড়ানের হিম্মতওয়ালা জনশক্তি ছাড়া শুধুমাত্র জ্ঞান বা নসীহত কার্যকর হবার সম্ভাবনা অতি সামান্য! কারণ জ্ঞানওয়ালা স্বার্থান্ধরাই এসবের প়ৃষ্ঠপোষক!

    অনুরূপ আরেকটি বিষয় “বিয়ে-শাদীর আনুষ্ঠানিকতা”! বিশেষতঃ বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে (চট্টগ্রাম ও সিলেট এলাকায়) এটাকে এমন এক ব্যয়বাহূল্যতায় পৌঁছানো হয়েছে যা ভুক্তভোগী বা প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া অন্যদের জন্য কল্পনা করাও দুঃসাধ্য!

    যাঁরা এসব সামাজিক অসংগতির সমর্থক ও প়ৃষ্ঠপোষক তাঁদের অধিকাংশই তথাকথিত শিক্ষিত ও বিত্তশালী! দুর্বলেরা এসব আনুষ্ঠানিকতার জাল ছিঁড়ে ফেলার শক্তি রাখেননা অথবা আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করে সমাজচ্যূত হবার হিম্মত রাখেননা!

    আপনি একটি প্রশ্ন করেছেন-
    “”ঢাকায় কোন দল সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে কি এ সবের অবসান হবে?””

    আমারও মনে প্রশ্ন জাগে-
    “”রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত এসব ধর্মীয় অপসংস্কৃতি বা বিকৃতি/বিচ্যূতি শক্তিশালী সামাজিক প্র্তিরোধ ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা (কমপক্ষে নিস্ক্রিয়তা) ছাড়া শুধুই দাওয়াতী প্রচেষ্টায় দূরীভূত হওয়া কি আদৌ সম্ভব?!””

    কি জানি, হয়তো আমি-ই ঠিকমত বুঝতে পারছিনা- আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *