একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম। দুজন পাশাপাশি জিম করছে। ট্রেডমিলের ওপর তারা দৌড়াচ্ছে। একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। মেয়েটা নামকাওয়াস্তে দু’টুকরো কাপড় দিয়ে তার ঊর্ধ্বাঙ্গ আর নিম্নাঙ্গ কোনোমতে ‘দেখানোর মতো করে’ ঢেকেছে। আর ছেলেটা একটা টিশার্ট আর হাফপ্যান্ট পড়েছে।

ইউরোপ-আমেরিকার শীতপ্রধান আবহাওয়ায় একটা মেয়ের পোশাকের ধরন তো হওয়া উচিত ছেলেটারই মতো। তা না হয়ে বরং সেখানকার সংস্কৃতি মেয়েটার উপর এক ধরনের কালচারাল বার্ডেন চাপিয়ে দিয়েছে। মেয়ে হওয়ার কারণে তাকে যথাসম্ভব উন্মুক্ত (presentable?) হয়ে থাকতে হবে। এটি সেখানকার ‘ভদ্রলোকদের’ চাওয়া বা সামাজিক প্রচলন। এটি সুস্পষ্ট জুলুম।

অন্যদিকে, আমাদের এখানে এমনকি প্রচণ্ড গরমের দিনেও পর্দানশীন নারীরা আপাদমস্তক বোরকাবৃত হয়ে নিজেকে ঢেকে রাখছে। দৃশ্যত তারা স্বেচ্ছায় এটি পরিধান করছে। আসলে তা নয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের এখানকার নারীরা ব্যতিক্রম বাদে ডমিন্যান্ট রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার চাপিয়ে দেওয়া বাধ্যবাধকতার কারণে এটি পরছে। এই দৃষ্টিতে এটিও অন্যতম কালচারাল বার্ডেন।

যেই পর্দার নামে বোরকা পরার প্রচলন ঘটেছে সেটির উল্লেখ কিন্তু কোরআন-হাদীস বা সুন্নাহর কোথাও নাই। আছে শালীনভাবে চলাফেরা করার কথা। সেটি সালোয়ার-কামিজ-ওড়না পরার মাধ্যমে হতে পারে। মাথায় কাপড় দিয়ে ভালোভাবে শাড়ি পরার মাধ্যমেও হতে পারে । ঘাগড়া-ব্লাউজ-উড়না পরার মাধ্যমেও হতে পারে। স্কার্ফের সাথে ঢিলেঢালা শার্ট/টিশার্ট ও প্যান্ট পড়ার মাধ্যমেও হতে পারে। বোরকা যে পরা যাবে না, তা নয়। কিন্তু বোরকাই যেন পড়তে হবে এবং সেটি প্রেফারেবলি মাত্রাতিরিক্ত তাপ শোষণকারী কালো কাপড়েরই হতে হবে, এমনটা কেন?

জানি, এই প্রশ্ন উত্থাপন করার সাহস অনেকেরই নাই। একজন সমাজকর্মী হিসেবে, বিশেষ করে ফিলোসফির লোক হিসেবে আমি সবকিছুকেই প্রশ্নের মধ্যে আনতে চাই। যদি ব্যাপারটি সত্য হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্নের মাধ্যমে সেটি আরও সুন্দর-সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠবে। আর যদি মিথ্যা হয়ে থাকে তাহলে যুক্তির বাণ ও প্রশ্নের আঘাতে সেটি ভেঙে পড়বে। কালচারাল বার্ডেন হচ্ছে এমন ধরনের ফেইক জিনিস, যেটাকে যুক্তির আঘাতে সহজেই ভেঙে ফেলা সম্ভব।

সমস্যা হলো, অধিকাংশ মানুষ সামাজিক অচলায়তন বা স্ট্যাটাস-কো’র ঘোরতর সমর্থক। অধিকাংশ মানুষ পরিবর্তনকে ভয় পায়। বিশেষ করে নারীরা। বাহ্যত তাদেরকে এডাপ্টিভ এন্ড এগ্রিয়েবল মনে হলেও অভিজ্ঞতা বলে, অন্তর্গতভাবে বিষয়টা ভিন্নতর। অধিকাংশ বয়স্ক লোকেরাও ওভারঅল চেইঞ্জ রেসিস্ট্যান্ট।

কালচারাল বার্ডেন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইজি কন্ট্রাস্ট হিসেবে নারীদের পোশাকের কথাটি আনা হলেও আসলে অযৌক্তিক অপসংস্কৃতির প্রভাব আমাদের জীবনের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একেক করে এগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া জরুরি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টেইলারের দোকানদার শিমুল। তার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে সে খবর দিল। সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আমি দেখতে গিয়েছিলাম। ইউটিউবে দেখেছি। কিন্তু সরাসরি কখনো কাউকে দাহ করতে দেখিনি। সে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পার্শ্ববর্তী রুদ্র পল্লীর শ্মশানে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে শবদেহটি বের করা হতে শুরু করে দাহ করার শেষ পর্যন্ত আমি সেখানে ছিলাম। যা দেখেছি সেটির বর্ণনা সংগত কারণেই এখানে দিচ্ছি না।

একমাস পরে শিমুলের সাথে আবার দেখা। ইতিমধ্যে সে বাবার মৃত্যু উপলক্ষে ছেলে সন্তান হিসেবে যা যা করা দরকার সেগুলো সম্পন্ন করেছে। এখন সে আমাকে ধরেছে যাতে আমি তার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাই। বাবার মৃত্যুর চার দিন পর সীমিতভাবে এবং এক মাসের মাথায় বড় করে তারা ‘ফাতেহা’ আয়োজন করেছে। তিনশ’ জনের খাবারের আয়োজন। তখন আমাকে দাওয়াত দিতে পারে নাই। সেজন্য এখন যাবার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। আমি যেহেতু শ্মশানে উপস্থিত ছিলাম সেহেতু আমাকে খাওয়ানোর জন্য তারা এক ধরনের অবলিগেশন ফিল করছে।

শিমুলের বাবার অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি যে অনুভূতি লাভ করেছি তার মধ্যে দুটি এখানে বলছি। একটি হলো তারা যা কিছু করছে সেগুলোর কোনো যুক্তি নাই। তাদের দিক থেকে তারা কায়মনোবাক্যে সেগুলো করেছে। ভালো মনে করেই করেছে। তাদের বিদেহী পিতার মঙ্গলের জন্যই করেছে। তারা যদি যুক্তি দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করত তাহলে এই অযৌক্তিক কাজগুলো করত না। এটি তাদের ওপর ধর্মের নামে কালচারাল বার্ডেন হিসেবে চাপানো হয়েছে।

দ্বিতীয় যে জিনিসটি আমি সেখানে গিয়ে এবং পরবর্তীতে শিমুলের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম তা হলো, আমাদের আশপাশের মুসলিম সমাজে কারো মৃত্যু পরবর্তী যে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয় সেটি মূলত হিন্দুদের কাছ থেকে এসেছে। আমাদের এখানে মেয়েদেরকে যে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়, তা হিন্দুদের ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রভাবের পরিণতি। আমার এক চাচাতো ভাইয়ের ভাষায়, মেয়েদের জন্য বাপের বাড়ি থেকে প্রাপ্য ‘তরকা’ বা ওয়ারেশি সম্পত্তি গ্রহণ করা হলো আগুনের গোলা গলাধঃকরণের মতো বিপজ্জনক ও অন্যায় কাজ। ‘তরকা’ নাকি মেয়েদের সয় না। আমাদের সমাজে প্রচলিত যে যৌতুক ব্যবস্থা সেটিও হিন্দু সমাজ থেকে এসেছে। ডিভোর্সকে যে মেয়েরা মৃত্যুর চেয়েও বেশি ভয় পায় সেটিও হিন্দু সমাজ থেকে এসেছে।

সম্প্রতি আমি দাম্পত্য জীবন ইত্যাদি নিয়ে লেখালেখি করেছি। এই যে আমাদের এডুকেশনাল সিস্টেম ও স্ট্রাকচারের যে ডমিনেন্ট সোশ্যাল কন্সট্রাক্ট সেটিতে বৈধভাবে কারো সহজাত প্রবৃত্তি পূরণের কোনো ব্যবস্থা নাই। এর উদাহরণ হলো এমন এলাকা যেখানে কোনো ধরনের লেট্রিনের ব্যবস্থা নাই। ফাঁকতালে যে যেখানে যেভাবে পারে সেরে নেয়। এর বিপরীতে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের যে ডমিন্যান্ট ট্রেন্ড এবং এনভায়রনমেন্ট, তাতে নানাভাবে এই ইনোসেন্ট ইয়াংদেরকে উক্ত্যক্ত ও উদ্দীপ্ত করার রয়েছে পর্যাপ্ত ‘সুব্যবস্থা’। সমাজপতি হিসেবে আমরা বড়রা তথা অবিভাবকরা ছেলেমেয়েদেরকে একটা ইনহিউম্যান ফলস বাইনারির সম্মুখীন করেছি– তোমার ক্যারিয়ার অথবা তোমার সংসার, এর একটাকে বেছে নাও!

নিঃসন্দেহে এটি ইলজিক্যাল এন্ড মেলাফাইড কালচারাল বার্ডেন। এই অপসংস্কৃতি থেকে প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য এবং মানুষকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও প্রকৃতিসংগত জীবনযাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিদ্যমান সমাজ কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। তার আগে আমাদের মন-মানসিকতায় আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। বন্ধ করতে হবে সব ধরনের মেকি সামাজিকতা, কৃত্রিম ভদ্রতা ও অবাস্তব সুখিতার অভিনয়।

আমাদের পার্শ্ববর্তী জোবরা, ফতেপুর ও মদনহাটে হরহামেশা ওয়াজ মাহফিল হয়। বড় বড় গরু জবাই করে ফাতেহা করা হয়। মাইকের শব্দদূষণে এখানেও টেকা দায়। এই কাজগুলোর কোনো সত্যিকারের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও সমর্থন নাই। এগুলো নিছকই সংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি। এই ধরনের ওয়াজ মাহফিলে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশি। তাই, অবিলম্বে এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। আলাপ-আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এই দুইয়ের ধর্মীয় সম্মিলন বা রূপ হলো ওয়াজ মাহফিলের কালচার। আমার কথা পরিষ্কার– আলাপ-আলোচনা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানেই হোক না কেন, সেখানে মাইকের ব্যবহার হওয়া উচিত প্রোগ্রামের স্থানে সীমিত।

আজকাল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিরাজমান কালচারাল কনস্ট্রাক্ট এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় যেন গান বাজনার জায়গা। কারণে অকারণে যে কোনো ইস্যুতে এখানে গান বাজনা ও নাচানাচির ব্যাপক আয়োজন করা হয়। আমাদের বাসার উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থিত পাহাড়ের ওপাশে লেডিস হল। তারই পাশে ফ্যাকাল্টি এরিয়া। সেখানে যখন ধুমধারাক্কা অনুষ্ঠান চলে তখন এ পাশের আবাসিক এলাকা থেকেও আমরা এগুলো ‘উপভোগ’ করতে বাধ্য হই। নিজের ভালো লাগাকে অন্যের উপর অযাচিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া ভীষণ অন্যায়, যা ‘বদ্ধমনাদের’ মতো মুক্তমনারাও হরহামেশা করে। এজন্য তারা কখনো কোনো অপরাধবোধ করে না। যে কোনো অযৌক্তিক কাজের বৈধতা দেওয়ার জন্য হাজির হয় সামাজিক প্রচলন নামক অপসংস্কৃতি। সেটি হতে পারে ধর্মের নামে। হতে পারে তথাকথিত মুক্তমনা ও ‘লিবারেল’ আদর্শের নামে।

মূল্যবোধভিত্তিক ও আদর্শ সমাজগঠন করার জন্য সুস্থ সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণ অপরিহার্য। এর পূর্বশর্ত হচ্ছে অপসংস্কৃতির অপনোদন। যতদিন পর্যন্ত আমরা সব ধরনের অযৌক্তিক চাপিয়ে দেওয়া কালচারাল বার্ডেন হতে মুক্ত হতে না পারবো ততদিন পর্যন্ত সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ লাভ ঘটবে না। পানি দূষিত হলে সেখানে যেমন মাছ হয় না, পানিতে মাছ না থাকলে সেখানে যেমন অতিথি পাখিরা আসে না, তেমনি করে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি যখন আমাদের উপর চেপে বসে তখন সেখানে সুস্থ জীবনধারা গড়ে ওঠে না। এবং সুস্থ জীবনধারা ও জীবনবোধ যদি না থাকে সেখানে কোনো মূল্যবোধ ও আদর্শ বিকশিত হয় না। যারা আদর্শবাদী, যারা সমাজকর্মী, যারা বাস্তবিকই কিছু করতে চান তাদের জন্য এ কথাগুলো এভাবে খোলাসা করে বলা।

ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Sabuj Kabir: একটা অত্যন্ত শিক্ষনীয় লিখা। দুয়েকদিন আগে একটা ভারতীয় ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে, যেখানে নায়ক বসে আছে ভারি জ্যাকেট পরে আর নায়িকা কাঁধখোলা পোশাকে। অথচ সেখানে এখন শীতকাল! অনেক বছর আগে খুশবন্ত সিং তার লন্ডনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন যে ভারতীয় হাই কমিশনের একজন রিসেপশনিস্ট সবসময় সর্দিতে ভুগতো। কারণ, তাকে প্রয়োজনীয় গরম পোশাক না পরে খোলামেলা থাকতে হতো। এভাবেই কিছু তথাকথিত কালচার ডমিনেন্ট করছে আমাদের। স্মার্ট শব্দটার আসল অর্থ কী, সেটা আমরা আদৌ বুঝি না। বিপরীতে শালীনতার বিষয়েও রয়ে গেছে মহাসমস্যা। কয়েকদিন আগে একজন আমার এক বোনের বিয়ের ছবি নিয়ে ঝগড়া শুরু করলেন যে তার মুখ খোলা নাকি বেপর্দা! অথচ সে পূর্ণাঙ্গ পর্দানশীনই ছিল। আরো আগে একজনের সাথে বিতর্ক হয়েছিল যে ওড়নার কাপড় মোটা হওয়া নিয়ে। আমি বলেছিলাম কাপড় মোটা হতে হবে, সেটা বাধ্যতামূলক নয়। এমন হতে হবে যেন তার মধ্য দিয়ে দেখা না যায় এবং বুঝা যায়। পাতলা কাপড়ও ঠাসবুননের হতে পারে, যার ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু সে এটাতেই স্ট্রিক্ট থাকল যে হাদীসে নাকি মোটা কাপড়ের কথাই বলা হয়েছে।

Mohammad Mozammel Hoque: এসব অতি ধার্মিক লোকদেরকে যুক্তি দিয়ে কর্নারড করতে হবে। এদের অসহিষ্ণু আচরণ এবং আগ্রাসী মনোভাব থেকে ধর্ম ও আদর্শকে রক্ষা করতে হবে। They shouldn’t get any space in public discourse

Arfeen Islam: স্যার, সালোয়ার-কামিজ-ওড়না-শাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে তো সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে যেটা নিষেধ করা হচ্ছে। কিন্তু বোরকাতেই পরিপূর্ণ শালীনতা হচ্ছে বলে মনে হয়। এখন বোরকার ধরনের ব্যাপারে আপনি বলতে পারতেন বা বলেছেন। সাধারণ মানুষ পর্দা বলতে বোরকাই বুঝে থাকে। পর্দার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন এবং হাদীসের সবগুলো মূলনীতি একসাথে করলে যে পোশাকটা সবচেয়ে শালীন বলে মনে হয় এবং পর্দার ব্যাপারে এই মূলনীতিগুলো পরিপূর্ণ বজায় থাকে সেটা এই বোরকা বলে মনে হয়। এখন এটার ধরন এবং কিছু বিষয়ে বিতর্ক আছে। যেমন– হাত এবং মুখ ঢাকতে হবে নাকি খোলা থাকবে। আসলে আমি বলতে চাই, কুরআন-সুন্নাহর মাপকাঠিতে যে পোশাকাটা সবচেয়ে বেশি ম্যাচিং করে সেটাই নারীদের গ্রহণ করা উচিৎ। ইসলামী মূলনীতি অনুযায়ী কোন পোশাকটা নারীদের বেস্ট হবে সেটা স্যার ক্লিয়ার করলে ভালো হতো। আর শুধু কালচারাল কারণে নয়; তাকওয়া থেকেও এভাবে ঢেকে রাখছে, এরকম অনেক আমি দেখেছি। এই লেখার মেয়েদের পোশাকের অংশটুকু পড়ে মনে হলো– এখানে পর্দা করার ব্যাপারে উৎসাহ নেই। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। ইসলামিক দৃষ্টিতে এত এত কিছু করণীয় বাদ দিয়ে নারীদের পর্দা নিয়ে ইসলামপন্থীদের এত এত উৎসাহ দেখে আমি খুবই বিরক্ত এবং হতাশ।

Sabuj Kabir: বছরখানেক আগে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম যে বাংলাদেশে ইসলাম শুধু পর্দা আর দাড়িতে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এই পোস্টের অনেকগুলো কমেন্ট পড়ে ধারণাটা দৃঢ় হচ্ছে।

Arfeen Islam: স্যার, সত্যি বলতে আপনার মতো জ্ঞানী লোকদের বিরক্ত হওয়া বা হতাশ হওয়া সাজে না বা মেনে নেওয়া যায় না। আপনি অনেকের মন্তব্যে বিরক্ত কেন হচ্ছেন, আমি বুঝতে পারছি না। আপনি শিক্ষক শুধু আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়; স্যোশাল মিডায়া এবং ইউটিউবেও আপনি একপ্রকার গুণী শিক্ষক হিসেবে আছেন। আর আমরা ছাত্র হিসেবে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আপনার লেখা বা ভিডিও থেকে শেখার চেষ্টা করছি। তো ভিন্ন মত তো থাকবেই, সাহাবীদের মধ্যেও ছিলো। আপনিই বলেন যে  ‘আপন আলোই পথ চলা’, ‘কথা বলতে দিতে হবে’ ইত্যাদি। যারা মন্তব্য করছে, তারা যার যার মত প্রকাশ করছে। কিন্তু আপনি যদি বিরক্ত হন তাহলে আমরা হতাশ হয়ে যাই। মন খারাপ হয়ে যায় আরকি।

Mohammad Mozammel Hoque: বিবেচ্য বিষয়ের যে ব্যাপক পরিধি সেটার দিকে নজর না দিয়ে, এমনকি লেখাটার মধ্যে স্পেসিফিক আরো যে ৮টা পয়েন্টে কথা বলা হয়েছে সেগুলোকে কোনোভাবে অ্যাড্রেস না করে, বিশেষ একটা বিষয় নিয়ে একদিকে ছোটা, এটি তো প্রান্তিকতা। এই ধরনের প্রান্তিকতা নিয়ে কারও পক্ষে সমাজকর্মী হওয়া সম্ভব নয়। এবং এক ধরনের প্রান্তিক চিন্তাকে বিপরীত ধরনের প্রান্তিকতা দিয়েই মোকাবেলা করতে হয়। এভাবেই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ফিজিক্সের ক্ষেত্রে সত্য। ম্যাথমেটিক্সের ক্ষেত্রে সত্য। ফিলোসফি এবং রিলিজিয়নের ক্ষেত্রেও সত্য।

যারা সত্য ও ন্যায়ের কথা বলেন, অনেক সময় তারা সমস্যার বিষয়গুলোকে স্পেসিফাইড করেন না। বরং ‘সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে’ ধরনের নীতি অবলম্বন করে এক ধরনের ওভারঅল কথা বলেন। এতে করে লোকেরা এমন একটা ভাব নেয়, যেন সে বুঝে গেছে। অথবা যেন প্রবলেমটা অন্ততপক্ষে তার মধ্যে নাই। অথচ দেখা যায়, অনেকেরই অবস্থা হলো ‘বগলে ইট, কিন্তু মুখে শেখ ফরিদ’ টাইপের।

যে কোনো স্ববিরোধ বা হিপোক্রেসিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়। নচেৎ সেটির সংশোধন কঠিন হয়ে থাকে। কোনো সমালোচনা না করা এবং সব কিছুতে শুধু সমালোচনার বিষয়টাকেই ফোকাস করা, এর কোনোটাই সুস্থ ও স্বাভাবিক সম্পর্কের পরিচায়ক নয়। আমি এর মাঝামাঝি অবস্থানে থাকি। তার মানে এই নয় যে আমি সমালোচনা করি না, অথবা সব সময় সমালোচনাই করি। বরং ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের মানে হলো, কখনো সমালোচনা করা হবে এবং একই সাথে ইতিবাচক দিকগুলোকেও আলোচনা ও বক্তব্যের মেজর পয়েন্ট হিসেবে তুলে আনতে হবে।

এটিই হচ্ছে মধ্যপন্থার মূল কথা। সত্যের সাথেও নাই, মিথ্যার সাথেও নাই– এমন মধ্যপন্থা ইসলাম অনুমোদন করে না। বরং, সত্যকে সত্য বলা এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলা তথা বাস্তবতাকে অনুসরণ করাই হচ্ছে মধ্যপন্থা। যারা ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন তাদেরকে আমি ইতিবাচকভাবে আমার মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছি। মন্তব্যগুলোর উত্তরে আমি যা বলেছি সেটি পড়লেই তা বোঝা যাবে। যারা অহেতুক একদেশদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেই শুধু বিরক্তি এবং হতাশাবোধ করেছি।

আমি মনে করি, এটি তো ঠিকই আছে। অবাস্তব ফ্যান্টাসিতে আচ্ছন্ন রিলিজিয়াস পিউরিটানিস্টদের অযাচিত সমর্থন থেকে নিজেকে উইথড্র করার এটি কার্যকর পদ্ধতি।

Arfeen Islam: আপনার ঐ পয়েন্ট (পর্দা) নিয়ে অনেকে ছুঁটছেন। কারণ হলো ঐ পয়েন্টরে লেখা আপত্তিজনক এবং ইসলামী আদর্শের সাথে মিলছে না বলে আমার মতো অনেকের কাছে মনে হয়েছে, তাই…। আপনাদের মতো লোকদের উচিৎ সব ধরনের মানুষদের বুঝিয়ে এক প্ল্যাটফর্মে আনা। সবার কথার সাথে ইনভল্ব হয়ে তাকে বোঝানো। আমি মনে করে বিশ্বাসীদের মধ্যে কোনো বিচ্ছিন্নতা থাকা একেবারেই উচিৎ নয়। আমার অনুরোধ, আপনি কোনোভাবেই বিরক্ত হবেন না। তাহলে আপনার পারসোনালিটি আরো স্ট্রং থাকবে, আপনার লেখা আরো সুন্দর হবে। (ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। আপনাকে উপদেশ দেওয়ার কোনো যোগ্যতা আমার নেই, আপনার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা থেকে লেখি আরকি)

Mohammad Mozammel Hoque: এই পোস্টের সমর্থনে আজকে আরেকটা নিবন্ধ লিখেছি। এটি পড়তে পারেন। একমত দ্বিমত যা-ই হোক, এতে আমার এ সংক্রান্ত মনোভাবটা জানা যাবে।

জ্ঞানের সমাজতত্ত্ব এবং সমাজ কর্মীদের দায়িত্ব

Laila Arejuman: পর্দা মানেই বোরকা নয়– এমন সাহসী কথাটা আগে শুধু আগে আব্বুর মুখে শুনেছি, দীর্ঘদিন পর আপনার কাছে শুনলাম। আপনারা সত্যি সাহসী মানুষ, অথচ আপনারা দুজনই এমন দল থেকে আসা, যে দলে নিকাব না করার কারণে এখনও মহিলাদের বাইয়াত আটকে থাকে। জানার জন্য একটা প্রশ্ন– শার্ট-প্যান্ট তো অপজিট জেন্ডারের পোশাক, এটা সম্পর্কে আরেকটু জানতে চাই।।

Mohammad Mozammel Hoque: সালোয়ার-কামিজ তো পুরুষরাও পরে। তবে একে সালোয়ার-কামিজ না বলে পাজামা-পাঞ্জাবি হিসাবে বলে। এই তো? বাংলাদেশে তাবলীগের লোকজন বিশেষ করে এবং হুজুরেরা ইন-জেনারেল এই ‘নারীদের পোশাক’ই তো পরে। পাকিস্তানে অবশ্য সবাই-ই এটি পরে।

কিছু কিছু পোশাক হচ্ছেন কমন। যেমন– লুঙ্গি। আবার কিছু কিছু পোশাক হচ্ছে এক্সক্লুসিভলি কোনো একটা জেন্ডারের। কিছু কিছু পোশাক হচ্ছে এক্সক্লুসিভলি কোনো একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর। এই ধরনের এক্সক্লুসিভ পোশাকগুলো অন্যরা পরবে না। ‘মেয়েরা প্যান্ট-শার্ট পরবে না। তারা অন্য কিছু পরবে। প্যান্ট-শার্ট পরবে শুধু ছেলেরা’– এমন ধরনের কথাবার্তার একটা সমস্যা আছে। সেটি হলো– এক সময় এই ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে মুসলমানরা তো প্যান্ট-শার্টকে ইহুদী-নাসারা তথা বিধর্মীদের পোশাক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। প্যান্ট-শার্ট পরাকে হারাম মনে করেছিল। এজন্য ফতোয়া দেয়া হয়েছিল। এখন আমরা বুঝতে পারছি, এগুলা ছিল ওভার রিএকশন। এ ধরনের অতি প্রতিক্রিয়াশীলতার কোনো মানে হয় না।

পোশাকের স্পেসিফিকেশন হলো আইডেন্টিফিকেশন এবং পারসোনালিটি ম্যানটেইনিংয়ের সাথে রিলেটেড। ইসলামিক রিলিজিয়ন আমাদেরকে সেই কাজগুলোই করতে বলে, যেগুলো মানুষের স্বাভাবিক বিবেক, বুদ্ধি ও বিবেচনাবোধ সমর্থন করে। আমি যতটুকু দেখেছি, এভাবেই সব কিছুকে পেয়েছি। এর ব্যতিক্রম পাই নাই।

Laila Arejuman: “পোশাকের স্পেসিফিকেশন হলো আইডেন্টিফিকেশন এবং পার্সোনালিটি ম্যানটেইনিংয়ের সাথে রিলেটেড।” ধন্যবাদ স্যার।

Muhammad Sajal: স্যারের সাথে এই জায়গায় দ্বিমত পোষণ করছি। সিপাহী বিদ্রোহের পর এই রকম অতি প্রতিক্রিয়া না থাকলে আজকে আমরা ইসলাম নিয়ে কথা বলতে পারতাম কি না সন্দেহ আছে। বাই দ্যা ওয়ে, ভৌগোলিক-জলবায়ুগত প্রশ্ন যদি আনা হয় তাহলে সো কলড ফিরিঙ্গি লেবাস শার্ট প্যান্ট অথবা সুন্নতি লেবাস অথবা আরব লেবাস, কোনোটাই টেকে না। বস্তুত, কোনো ফ্যাশানই রাজনীতি বাইরে নয়। আমরা কি পরি না পরি তা ঠিক করে ক্ষমতা কাঠামো। এই যে শার্ট-প্যান্ট মেয়েদের পরতে চাওয়ার আগ্রহ, এই আগ্রহ তৈরি হয়েছে ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট পরতে দেখা থেকে। ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট পরার আগ্রহ তৈরি হয়েছে ব্রাউন সাহিব হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে। আমি বিষয়টাকে পুরোপুরি ক্ষমতা ও রাজনীতির সাথে জড়িত হিসেবে দেখি এবং সেভাবেই ডিল করতে চাই।

Laila Arejuman: Muhammad Sajal, তাহলে তো এটা ও বলা যায় যে, ইসলামী লেবাস বলেও কিছু নেই। নিদিষ্ট কাঠামো দাঁড় না করে ইসলামের মূলনীতি ঠিক রেখে যে যার পছন্দ মতো পোশাক পরতে পারে।

Mohammad Mozammel Hoque: Laila Arejuman, ঠিক তাই। এ প্রসঙ্গে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে নেই। ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও পোশাকের মতো। যে কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাই ইসলামের রাজনীতি সংক্রান্ত মূলনীতি বজায় রাখা সাপেক্ষে ইসলামসম্মত হতে পারে।

Muhammad Sajal: সুন্নতি লেবাস আছে। রাজনীতি ও পোশাক দুটোর ব্যাপারেই কিছু মূলনীতি আছে যেগুলো মেনে চলা হলে তা ইসলামসম্মত হয়, তবে ইসলামী হয় কি না তা বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন।

AbūSamīhah Sirājul-Islām: পুরো লিখাটাই পড়লাম। লিখার উদ্দেশ্যের সাথে এবং এর প্রায় সব কটা প্রপজিশনের সাথেও একমত। তবে নিচের উদ্ধৃতাংশের সাথে একমত নই:

“যেই পর্দার নামে বোরকা পরার প্রচলন ঘটেছে সেটির উল্লেখ কিন্তু কোরআন-হাদীস বা সুন্নাহর কোথাও নাই। আছে শালীনভাবে চলাফেরা করার কথা।”

কুর’আন ও হাদীসে শালীনভাবে চলার কথা সাধারণভাবে বলা হয়নি, বরং নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। সেখানে খিমার ও জিলবাবের কথা বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বাদে বাকীদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এসবগুলোর প্রায়োগিক দিক আমরা কোত্থেকে পাই? রসূলুল্লাহর সহধর্মিনীগণ, তাঁর কন্যাগণ ও তাঁর সময়ের অন্যান্য মুসলিম নারীদের আচরণ থেকে।

কুর’আন ও সুন্নাহতে বুরক্বা শব্দ নেই। কিন্তু কুর’আন ও সুন্নাহতে জিলবাবের কথা পরিষ্কার করে বলা আছে। জিলবাব কী? এটা বুঝতে হলে সে সময়ের মুসলিমরা এটা দিয়ে কী বুঝতেন এবং ক্লাসিক্যাল আরবী অভিধানে কী বলা আছে তা জানতে হবে। জিলবাব সাধারণত একটা বহিরাবরণ, যা সাধারণ পোশাকের অতিরিক্ত এবং এটা সাধারণ পোশাকটাকে ঢেকে দেয়। বুরক্বা একই কাজ করে। বুরক্বা মূলত এই জিলবাবেরই একটা রূপ। এজন্য আমরা যাকে বুরক্বা বলি আরবরা তাকেই আবায়া বা জিলবাব বলে।

হাসান রিয়াদ: স্যার, সব কিছু তো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা বা বুঝানো সম্ভব নয়। আপনিই মেবি একবার বলছিলেন, ধর্মের সবকিছু বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করতে হবে বা অমুক আবিস্কারের সাথে ঐ আয়াতের মিল খুঁজে ধর্মকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে কেন?

পর্দার ব্যাপারে মনে হয় স্ট্রং রেফারেন্স আছে। আমি যতটুকু পড়ছি, খুব স্কলারই মুখ খোলা রাখার ব্যাপারে মত দিয়েছেন।

Mohammad Mozammel Hoque: হাসান রিয়াদ, এখানে আমি মুখ ঢাকা, নেকাব ইত্যাদি কোনো বিষয়ে ইনভলভ হতে চাচ্ছি না। এটাই আমার লেখার মূল বিবেচ্য বিষয় নয়।

হাসান রিয়াদ: আমার পয়েন্টও পর্দা বা নিকাব নয়। আমার আপত্তি পোশাক নিয়ে আপনার উদাহরণটা। মেজরিটি মুসলমানের সমাজে শীত-গ্রীষ্মে বোরকা ব্যাবহারের যে সংস্কৃতি দেখা যায়, সেটা মোটেও অপসংস্কৃতি নয়। সেটার বিপরীতে যেটা দেখা যায়, সেটা অপসংস্কৃতি।

লিখার বাকি সবকিছুর সাথে একমত।

পোশাক সংস্কৃতি প্রসঙ্গে আপনার উদাহরণ হতে পারত ছেলেদের প্যান্ট পরা নিয়ে। হাদীসে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখার চেয়েও কঠিনভাবে টাকনুর নিচ পর্যন্ত প্যান্ট পরতে নিষেধ করা হয়ছে। কিন্তু বাস্তবতা উলটা।

হাঁটুর উপরে প্যান্ট পরা দেখলে যেভাবে পাপবোধ কাজ করে, সেভাবে টাকনুর নিচে প্যান্ট যাওয়া স্বাভাবিক মনে হয়। এটাই তো সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।

দুইটা বাস্তব সত্য বলি–

১) আমার ফুফুদের সম্পত্তিগুলো তারা নিয়ে যাচ্ছে না। ফুফুদের যুক্তি হচ্ছে– এগুলা নিয়ে যাওয়া মহা অন্যায়। আর ফুফাতো ভাইদের যুক্তি হলো– আমাদের কি কোনোদিক দিয়ে কম আছে? এগুলা নিয়ে যাব কেন?

মূলকথা হচ্ছে সমাজ এই ‘তরকা’ নিয়ে যাওয়াকে খারাপভাবে চিত্রায়িত করে রেখেছে।

২) গত বছর আমাদের গ্রামের খুব গরীব একজন মানুষ মারা যান। জানাজার পরবর্তী সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিলো গরু কিনে মেজবানি দেওয়ার। আমি আপত্তি তুলছিলাম। তখন বলা হলো– সবার মেজবানী দেয়া হয়। এদেরটা যদি আমরা সবাই মিলে না দিই, উনার সন্তানদের মন ছোট থাকবে।

এই হচ্ছে সমাজের অবস্থা।

Mohammad Mozammel Hoque: যারা সমাজকর্মী হবে তাদেরকে সোশ্যাল কন্সট্রাক্ট এবং ট্রুথের মধ্যকার পার্থক্যকে ভালো করে বুঝতে হবে। যুগে যুগে যতগুলো সামাজিক অপকর্ম হয়েছে সেগুলোকে ট্রাডিশনের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘সবাই করে সেজন্য আমিও করি’ এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। বলাবাহুল্য, যেটা যুক্তিসংগত নয় সেটার অপসৃতি অনিবার্য। সমস্যা হলো, অযৌক্তিক কোনো কিছুর অপসৃতি কখনো অটোমেটিক্যালি হয় না। বরং, সমাজকর্মীদেরকে সেটার জন্য অকপট ও নিরলসভাবে কাজ করতে হয়।

Hamed Nasrullah: আশ্চর্য! প্রচলিত বোরকার কথা কোরআন-হাদীসের কোথাও নেই? আপনি কি নিশ্চিত হয়ে বলছেন?

Mohammad Mozammel Hoque: উপরের মন্তব্যে একজন আলেমে দ্বীন এটি নিশ্চিত করেছেন ‘কুর’আন ও সুন্নাহতে বুরক্বা শব্দ নেই’। কোরআনে কোনো পোশাকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বরং পোশাক পরিধানের কিছু নীতিমালা বা প্রিন্সিপালের কথা বলা হয়েছে। নীতিমালাকে অনুসরণ করে আপনি যে কোনো ডিজাইনের পোশাক তৈরি করতে পারেন এবং সেটার নাম দিতে পারেন আপনার ইচ্ছামতো। রাসূলুল্লাহ (সা), তাঁর স্ত্রীগণ এবং সাধারণ মুসলিম নারীরা কী ধরনের পোশাক পরতেন সেটা নিয়ে হাদীসে বর্ণনা আছে। এখন আমরা যে ধরনের বোরকা দেখি এটা পরবর্তী কালের উদ্ভাবন। এটি খারাপ কিছু নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি বেশ কনভেনিয়েন্ট। কিন্তু এটাকে যেভাবে মুসলিম নারীদের জন্য কম্পালসারি হিসেবে কেউ কেউ দাবি করেন সেটার ব্যাপারে আমার আপত্তি।

এই পোস্টের আলোচনাতে কালচারাল বার্ডেন থেকে সমাজকর্মীদের মুক্ত থাকার কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। সেখানে বোরকার কথা এসেছে নিতান্তই প্রাসঙ্গিকভাবে। অথচ কোনো কোনো পাঠক শুধু এটাকেই ফোকাস করে এখানে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। এটি আমার মোটেও ভালো লাগছে না। আমাদের এখানে যারা বোরকা পরে তাদের ক’জন সেটা নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অনুসারে করে? আপনার প্রশ্নটাকে আমার কাছে সরল মনে করা বলে মনে হয়েছে। সেজন্য উত্তর দিলাম। ভালো থাকেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

Md Zakaria: অধ্যাপক সাহেব ঠিকই বলেছেন। বোরকা শব্দটি কোরআনে নেই, তবে ‘জালাবিব’ শব্দটি কোরআনের। আমাদের মেয়েরা কালচারাল বার্ডেনের কারণে বোরকা পরে থাকে – এ কথার সাথে একমত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সেটা অবশ্যই ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা থেকেই এসেছে, যা পালনে পৃথকভাবে সকলেই দায়বদ্ধ।

Mohammad Mozammel Hoque: Md Zakaria, কেউ কেউ যে কালচারাল বার্ডেনের কারণে বোরকা পরে, সেটি তো সত্য। আর যদি আমার কর্মক্ষেত্রের কথা বলেন তাহলে তো আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, এখানকার অধিকাংশ বোরকা পরিহিতা নিতান্তই কালচারাল বার্ডেনের কারণে সেটি পরে। তাদের আচার-আচরণ থেকে সেটি স্পষ্ট বোঝা যায়। খুব কমসংখ্যক মেয়ে নিজের স্বাধীন স্বতন্ত্র চয়েস হিসেবে এটি পরিধান করে।

মারদিয়া মমতাজ: ১। পর্দা মানেই বোরকা, এইটা নয়। পর্দা একটা কনসেপ্ট, কাপড়ের স্তুপ নয়। এজন্যই আমাদের চোখও এর বাত্যয় দেখলে প্রতিবাদ করে। যেমন, পর্দা করা কাউকে অকাতরে ছেলেবন্ধুদের সাথে মিশতে বা গায়ে হাত দিতে দেখলে আমি আমার অন্য পর্দা না করা ফ্রেন্ডদেরও অসন্তুষ্ট হতে দেখেছি।

২। বোরকা একটু আকর্ষণীয় হলেই নানান ফতওয়া শুরু হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ এটা ভুলে যায়, মেয়েরা সৌন্দর্যপ্রিয়, তারা এক রকম করেই বের হয়ে যাইতে পারে না সাধারণত। যেমন একটা কিশোরী, যাকে কাপড়ের বোঝা নয়, কনসেপ্ট বুঝানো জরুরি আবার মন থেকে সেটা নিতেই সাহায্য করা দরকার। তাকে হয়ত একটা উজ্জ্বল রঙের কাপড়ে ঢিলেঢালা কাপড় পরতে শেখানো শুরু করা যায়।

৩। আমি ক্লাস ওয়ান থেকে স্কার্ফ পরি। বোরকা পরি সিক্স থেকে। আম্মু প্রথম প্রথম উৎসাহ দিতে ওরকম রঙের বোরকাই বানায় দিতেন। ধীরে ধীরে নিজেই কালো পরি। কারণ, স্কার্ফের রঙ মিলানোর কষ্টটা করতে হয় না। কিন্তু কাপড়ে একটু বৈচিত্র্য রাখি। স্কার্ট টপ, বা গাউন টাইপ। যেন নিজের কাছেই একটু ভালো লাগে। কালোর আরও সুবিধা হলো, অত দৃষ্টি আকর্ষণ হয় না। ছাত্রী অবস্থায় না পরলেও এখন চাকুরিতে এসে কালোই ভালো লাগে। তার মানে আবার এই না যে, কালো না পরলে পর্দা হয় না, এইটা বলছি।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, আপনার কথাগুলো আমার ভালো লেগেছে। খুব বাস্তবসম্মত কথা। ইসলামপন্থীদের সেক্সিস্ট দৃষ্টিভঙ্গিকে আমি স্ট্রংলি অপোজ করি। I am not a populist and I don’t like to have support of all these ultra-conservative ones. উনাদের খাতা থেকে আমার নাম কাটা গেলে বরং আমি কৃতার্থ হই।

মারদিয়া মমতাজ: উনাদেরকে নিয়ে ভাবার কষ্টটাই করার দরকার নাই। কিছু কাজ গোড়া থেকেই শুরু করা উচিত।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, ঠিক তাই। যারা বাস্তবমুখী নন, যারা নানা ধরনের ফেইক ফ্যান্টাসিতে ডুবে আছেন, তাদেরকে নিয়ে দল ভারী করার কোনো মানে হয় না। আমি কাজ করবো ইনশাআল্লাহ। উদার হোক, রক্ষণশীল হোক, যারা বাস্তববাদী ও ময়দানমুখী, যারা একোমোডেটিভ ক্যারেক্টারের, তাদের সাথে থাকবো বা তাদেরকে সাথে নিয়ে নতুন ধারায় কিছু একটা করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।

Faisal Tariq: There is dire need for thorough research on why Bangalees are so obsessed with ‘parda’ issue. You have raised a number of other social issues and no one bothered to talk about those 🙂

Probably it would lead to more fruitful discussion if you would exclude the ‘parda’ issue from the post. 🙂

AbūSamīhah Sirājul-Islām: This is because they probably agreed with other points, and found that this point about parda is extremely misleading and untrue. Also, this point ridiculed certain practice that do come from the Book and Sunnah. 🙂

Faisal Tariq: I understand your point, Siraj vai.

However, the discussion went in wrong direction. one example is the inheritance issue in Chittagong area. This is where people are practicing massively against what Allah has commanded. Yet, I haven’t seen anyone consistently talking about it from Ulama circle and Islamic movement circle.

I remember Mozammel vai raised the issue in the past and had very limited response.

I am pretty much sure from my social media interaction that if you post one status on ‘parda’ problem and another on inheritance problem, the former will sweep away the audience :).

Sourav Abdullah: শুধু ‘ইসলামপন্থী’ নামের বিশেষ গ্রুপ নয়, পুরো বাঙ্গালী মুসলিম মানসই পর্দা, আরো স্পষ্ট করে বললে বোরকা, নিয়ে obsessed! এটা যদি কেউ অস্বীকার করতে চায়, তাহলে বলবো হয় সে এ দেশের মানুষ সম্পর্কে জানে না, না হয় জেনেশুনে মিথ্যা বলছে।

Abu Zafar: সমাজকর্মীর স্ট্যান্স আলাদা হতে হবে কেন?

Mohammad Mozammel Hoque: ইসলামী আন্দোলনের কাজের নানা রকমের ধারা বা প্যাটার্ন থাকা উচিত। সোশ্যাল ওয়ার্ক হচ্ছে একটা ধারা। এছাড়াও হতে পারে রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজের ধারা। হতে পারে ধর্মীয় অঙ্গনে কাজের ধারা। হতে পারে এ রকম ভিন্ন ভিন্ন আরো বিভিন্ন area of contribution and involvement। এগুলোর একেকটার পথ ও কাজের পদ্ধতি, এনভায়রনমেন্ট, ফ্লেভার, সম্পূর্ণ আলাদা। বাস্তবতাকে বুঝার চেষ্টা করলে আমরা এটি সহজেই বুঝতে পারি। ইসলামের সামগ্রিকতাকে অন্তরে লালন করে বাস্তবে প্রত্যেকের কোনো না কোনো সেক্টরে ফোকাস করে কাজ করা উচিত। সেজন্য পলিটিকাল অ্যাক্টিভিস্ট বা ইকনোমিক এক্টর বা রিলিজিয়াস লিডার অথবা নিরাপত্তা বিষয়ক ফাইটারদের চেয়ে সমাজকর্মীদের স্ট্যান্স আলাদাই তো হওয়ার কথা। তাই না?

Abu Zafar: হ্যাঁ। কার্যধারা আলাদা হওয়ার জন্য স্ট্যান্স (দৃষ্টিভঙ্গি অর্থে) আলাদা থাকা জরুরী কিনা?

Mohammad Mozammel Hoque: সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে ফ্লেভার বা আবহ তো ভিন্ন।

Mohammad Mozammel Hoque: কিছু কিছু সম্মানিত পাঠকের red herring fallacy বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনায় মেতে ওঠা দেখে আমি পুরো স্ট্যাটাসটা আবার নতুন করে পড়লাম। এতে আমি মোট ৯টা পয়েন্টে আলোচনা রয়েছে দেখতে পেলাম:

১. পাশ্চাত্য নারীদের ন্যাংটু হয়ে চলার কালচারাল বার্ডেন,

২. এখানকার নারী সমাজের জন্য বোরকা পরার সামাজিক বাধ্যবাধকতা,

৩. সমাজের হর্তাকর্তা, বড়দের মধ্যে পরিবর্তনবিরোধী মানসিকতা,

৪. কারো মৃত্যু উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা,

৫. নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি দিতে না চাওয়া,

৬. যৌতুক প্রথা,

৭. ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দাম্পত্য জীবন যাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা,

৮. ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে শব্দ দূষণ,

৯. উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাচ-গানের সংস্কৃতি।

এরপরে উপসংহারে আমি যেগুলো বলেছি সেগুলোর কথা আর নাইবা বললাম। কেউ যদি মূল লেখাটা না পড়ে শুধু মন্তব্যগুলো পড়ে, তার মনে হবে এই লেখাটাতে বোধহয় বোরকা নিয়ে সাংঘাতিক কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। যেটা নিয়ে উক্ত লেখকের প্রতি সহানুভূতিশীল পাঠকেরা মারাত্মকভাবে স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছেন। তারা ওনাকে যেন লাইনে আনতে চাচ্ছেন।

আমি অবাক হচ্ছি ভীষণভাবে এবং যারপরনাই হতাশাবোধ করছি। মেয়েদেরকে যারা বোরকা পরিয়েই ছাড়তে চান, অন্য কোনো ধরনের পোশাকে তাদেরকে যারা অসম্পূর্ণ মানের বলে মনে করেন, তারা আমাকেই বরং ছেড়ে দিতে পারেন। এটি আপনাদের জন্যও ভালো, আমার জন্যও ভালো।

কারণ, আমি মনে করি না, বোরকা পরতেই হবে। বরং আমি মনে করি নারীদের উচিত যার যার এলাকায় প্রচলিত ধরনের পোশাক কিছুটা মডারেট করে পর্দা রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া। এটি তাদের ভিতর থেকে চয়েস হিসেবে হতে হবে। বড়জোর এ নিয়ে একটা সামাজিক আবহ তৈরি করা যেতে পারে। এর বাইরে সৌদি বা ইরান স্টাইলে ইসলামাইজেশনের ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নাই। আমি মূল লেখাতেই কথাটা পরিষ্কার করে বলেছি।

আমার কাজের প্রায়োরিটি লিস্টে পর্দা বহু পিছনের একটা বিষয়। এ নিয়ে বহু বছর আগে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম: ‘ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা’ শিরোনামে। আমার সাইটে গিয়ে কেউ উৎসাহী হলে সেই লেখাটা আবারো পড়ে দেখতে পারেন।

জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ লোকদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত ও পরিত্যক্ত হয়েছি। আপনারাও যদি আমাকে আনফলো করেন তাতে আপনাদেরই বরং সুবিধা। আমার কাছ থেকে ভুলভাল কথা শুনতে হবে না।

নারী অধিকারের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। আমি একই সাথে এই তিনটি বিষয়ের বিরোধিতা করি:

১. পাশ্চাত্য নারীবাদ,

২. প্রাচ্য পুরুষতন্ত্র ও

৩. এই ধারা দুটির যে কোনো একটির সমর্থনে নারীদের একাংশের মধ্যকার দৃশ্যমান সুবিধাবাদী মানসিকতা।

যারা আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত হতে পারবেন না, তারা আমাকে কেন ফলো করবেন? আমার লেখা কেন পড়বেন? অযাচিত সব মন্তব্য করে কেন আমাকে ক্ষুব্ধ করবেন? আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে কেউ হেদায়েত দিতে আসবেন না। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ। আপনাদের অবস্থান ক্লিয়ার করারও দরকার নাই। নারী অধিকারের ব্যাপারে যারা রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, তারা কী বলতে চান সেটা বহু আগে থেকে আমার কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার। ভালো থাকেন। পারলে আমার জন্য দোয়া করবেন।

Mosaddik Billah: কালচারাল বার্ডেন বলে যা বলেছেন তার সাথে আমি একমত। আর এ কালচারাল বার্ডেন পৃথিবীর প্রতেকটা জাতি ও দেশের মধ্যে ছিল, আছে এবং থাকবে।

আপনার লেখায় সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ কীভাবে ঘটবে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। আপনি শুধু বলেছেন কালচারাল বার্ডেন থেকে মুক্ত থাকতে। কিন্তু এটা থেকে মুক্ত থাকলেই যে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে, সেটার সম্ভাবনা কতটুকু? কারণ, আপনি কালচারাল বার্ডেন থেকে মুক্ত থেকে সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের কোনো ক্রাইটেরিয়া বলেননি।

Mohammad Mozammel Hoque: একটা লেখায় তো সবগুলো বিষয় আসে না। আপনি যেটা বলেছেন সেটা তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটি সম্পন্ন করার পূর্বশর্ত হচ্ছে আমি যেটা বলেছি সেটা আগেভাগে সেরে ফেলা। বলাবাহুল্য, সেটা হচ্ছে আজেবাজে বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত করা এবং খারাপগুলোকে খারাপ হিসেবে আইডেন্টিফাই করা।

Riad Al Goraba: লেখাটার মূল আবেদন না বুঝে শুধু বোরকা নিয়ে টানাটানি। রাসূল (সা.) সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতেন। আর আমাগো মোল্লারা রকমারি জুব্বা পরে। এটা তারা দেখে না!?

Nure Elahi Shafat: “যেই পর্দার নামে বোরকা পরার প্রচলন ঘটেছে সেটির উল্লেখ কিন্তু কোরআন-হাদীস বা সুন্নাহর কোথাও নাই। আছে শালীনভাবে চলাফেরা করার কথা।”

এই কথার কনসেপ্টই বুঝে নাই বৃহৎদাংশ। ধর্মরে তারা স্থির-বদ্ধ-নির্বিচার মনে করেন। চিন্তার মাত্রা যত স্তিমিত ততই চিন্তাবিযুক্ত নার্সিসিস্ট-কনজারভেটিভ-বুদ্ধিহানী শক্তি আসবে। সে হিশাবে হেদায়েতের মোড়কে প্রতিক্রিয়া। ইমাম গাজ্জালী ধর্মদ্রোহী, নাস্তিকদের তুলনায় ধর্মান্ধ কম্যুনিটিকে মোকাবেলায় প্রাধান্য দিতেন। সোশ্যাল রিকনস্ট্রাকশনের জন্যে ধর্মকে সাংস্কৃতিক, নান্দনিক, বৈচত্রিক ও ইন্টেলেকচ্যুয়াল হিশাবে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই চলবে। এ লড়াই থেকে পিছপা হওয়ার সুযোগ নাই।

Badshah FaHad Ali Khan: মেয়েদের পর্দা করা ফর‍য। এখন আমাদের পর্দার কনসেপ্টটা বুঝতে হবে। পর্দা কেনো ফরয করা হলো, এটার পেছনের সাইকোলজি বুঝতে হবে। বোরকা পরলাম আর ছেলেদের সাথে আড্ডা দিলাম, চিল করলাম, এইটা পর্দা হতে পারে না।

বাহ্যিক পর্দা হচ্ছে আপনার সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে না– এমনভাবে ঢেকে রাখা শরীর। এখন এটা কীভাবে করবেন, সেটা আপনি ডিসাইড করুন। যেহেতু বোরকা একটি প্রচলিত ও পরিচিত মাধ্যম, তাই এটাই সবাই ব্যবহার করে। এর মানে যে অন্য কিছু ব্যবহার করা যাবে না, তা নয়।

Mohammed Masud Hassan: অসাধারন লিখনী!! জবাব নেই!! এ ধরনের প্রসংশার ফুলঝুরি ফুটাতে পারলেই সে ভালো ফেসবুক ফ্রেন্ড! আর জুতসই না হলে তার কমেন্ট কীভাবে যেন ভৌতিকভাবে উধাও হয়ে যায়! ফেসবুকের এ কারিশমা কবে যে বোধগম্য হবে, জ্ঞানের পরিসীমায় এখনও আসেনি।

Mohammad Mozammel Hoque: আল্লাহর ওয়াস্তে সঠিক করে বলেন, আমি কি কারো নেগেটিভ কমেন্ট ডিলিট করেছি?

Mohammed Masud Hassan: স্যার, আপনার বিনীত প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ! আপনি এমনভাবে প্রশ্নটি করেছেন যে আপনি যদি তা কখনও জ্ঞাত/অজ্ঞাতসারে ডিলেট করেও থাকেন, তবে কোনো ভদ্র ঘরের সন্তান আপনাকে আর দায়ী করবে না!

আমি আপনাকে ও আপনার ঘরানার সকল সৎ, কর্মঠ, নিষ্ঠাবান ও নীতিবান, আপনার মতো জ্ঞানতাপস শিক্ষকদের সম্মান করি আর ভালোবাসি! আর এটাই দুর্বলতা! শয়তান এই সুযোগটাই গ্রহণ করে জ্ঞানীদের পেছনে সর্বশক্তি বরাদ্দ করে! তার মাথায় এমন একটি বিষয় প্রবেশ করায় যার সম্পর্কে নিরন্তর গবেষণা করে তাঁর চিন্তাশক্তি ব্যয় করে প্রাপ্ত ফলাফল এমনভাবে উপস্থাপন করে যাহা উপভোগ্য! আর অনেকে মজা করে পড়তে পড়তে, কমেন্ট করতে করতে কখন যে কুফুরি উক্তি করার মাধ্যমে পবিত্র দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় সে টেরই পায় না!

আমার ফোনে চার্জ নেই, তাই আপাতত ছোট একটা প্রশ্ন রাখতে চাই!

আপনি কি মনে করেন– যে সকল সম্মানীত পীর মাশায়েখগণ, যারা আজ অব্দি সম্মানিত প্রচলিত পর্দা প্রথা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন, তাঁরা কি মেধা ও প্রজ্ঞায় আপনার চেয়ে অনেক কম অথবা কম বুঝে?

Mohammad Mozammel Hoque: “যেই পর্দার নামে বোরকা পরার প্রচলন ঘটেছে সেটির উল্লেখ কিন্তু কোরআন-হাদীস বা সুন্নাহর কোথাও নাই। আছে শালীনভাবে চলাফেরা করার কথা। … বোরকা যে পরা যাবে না, তা নয়। কিন্তু বোরকাই যেন পড়তে হবে এবং সেটি প্রেফারেবলি মাত্রাতিরিক্ত তাপ শোষণকারী কালো কাপড়েরই হতে হবে, এমনটা কেন?” – এই কথার প্রেক্ষিতে কেউ কাউকে কীভাবে এ প্রশ্ন করতে পারে?

আপনি পর্দা আর বোরকাকে একাকার করে ফেলছেন কেন? বোরকা হলো পর্দা রক্ষার একটা ধরন। হতে পারে সেটি বেটার। বাট নট দ্যা অনলি অপশন। কোরআন-হাদীসে তো হিজাব, জিলবাব আর খিমারের কথা আছে। বোরকা তো নাই। জিলবাব আর খিমার বলতে যা বুঝায় সেটার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে বোরকা। অন্যতম মানে অনেকের মধ্যে একটা। আমার বক্তব্যের মূল কথা হলো, “বোরকা যে পরা যাবে না, তা নয়। কিন্তু বোরকাই যেন পড়তে হবে এবং সেটি প্রেফারেবলি মাত্রাতিরিক্ত তাপ শোষণকারী কালো কাপড়েরই হতে হবে, এমনটা কেন?” এতে কি আমি বোরকা পরা বা পর্দা করার বিরোধিতা করেছি বলে আপনার মনে হয়?

কথাটা ভালো করে বুঝার চেষ্টা করেন। ইসলামী পোশাকের স্পেসিফিক ডিজাইন বলে দেয়া হয়েছে মাত্র দুইটা ক্ষেত্রে। কাফনের পোশাক আর ইহরামের পোশাক। বাদবাকি সব পোশাকই ইসলামী শরীয়াহর পোশাক সংক্রান্ত মূলনীতি বজায় রাখা সাপেক্ষে ইসলামসম্মত।

Mohammed Masud Hassan: স্যার, আমার আমার ছোট একটা প্রশ্ন ছিলো: আপনি কি মনে করেন– যে সকল সম্মানীত পীর মাশায়েখগণ, যারা আজ অব্দি সম্মানিত প্রচলিত পর্দা প্রথা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন, তাঁরা কি মেধা ও প্রজ্ঞায় আপনার চেয়ে অনেক কম অথবা কম বুঝে?

আপনি আবারও সবিনয়ে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন।

আধুনিক বিজ্ঞানীগণ যেসব গবেষণা করেন তা পূর্বযুগের আর্কিডামিস, নিউটন থেকে অনেক ঊর্ধ্বে, তা আমরাও বুঝি! তারপরও পূর্বপুরুষদেরকে মান্য করা, সম্মান দেয়া একটা বিনীত বিষয়! কিন্তু…?

Mohammad Mozammel Hoque: আপনার বুঝজ্ঞানের ঘাটতি দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছি!

যত আগের লোক, কিছু কিছু বিষয়ে তত বেশি বুঝবেন, এটি যেমন ঠিক; তেমনি যত পরবর্তী সময়ের প্রজন্ম, তারা পূর্ববর্তীদের তুলনায় কিছু কিছু বিষয়কে অধিকতর ভালোভাবে বুঝার সুযোগ লাভ করবেন, এটিই তো স্বাভাবিক।

কিছু বিষয়ে কেউ একজন অনেক কিছু জানতে পারেন। সে জন্য তিনি জ্ঞানী। হতে পারে, যিনি সাধারণ, তিনি অন্ততপক্ষে কোনো একটা বা কতিপয় বিষয়ে ওই জ্ঞানীর তুলনায় বেশি বুঝেন বা জানেন। এরই আলোকে বুঝবেন, আপনি যে ধরনের কথাবার্তা বলছেন এটি হলো ফলস বাইনারি বা অপ্রাসঙ্গিক তুলনার বিভ্রান্তি।

Abu Hanif: সবাই দেখি বোরকা নিয়ে পড়ে আছেন। সামাজিক বিভিন্ন বার্ডেনের কথা কারো নজরে আসেনি। স্যারের পুরো বিষয়ের সাথে আমি একমত।

প্রথমত, বোরকা বা পর্দা করা ফরজ বা কেন জরুরি এই বিষয়টা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মানসিকভাবে মেনে নিয়েই শুরু করা উচিত। আর সে যখন পর্দার প্রয়োজনীয়তা বুঝবে তখন বোরকা ছাড়া অন্য কোন পোশাক পড়লে সে নিজেকে সেইভ রাখতে পারবে তা সে নিজে থেকেই ডিসাইড করবে। অনেকে না জেনে, না বুঝেও বোরকা পরে; কিন্তু বোরকা পরার হক আদায় করে না।

Muhammad Akbar Hossain: This is a wonderful writing. God bless you. Please, stay safe because I remember I was announced an atheist many times by my fellow people because of this sort of opinions I made.

Abu Bushra Mamun: আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় প্রফেসর মোজাম্মেল ভাই,

আপনি একজন ফিলোসফির শিক্ষক এবং জীবন ঘনিষ্ট সমাজকর্মী। আপনার লেখায় এমন কিছু নতুন বিষয় নতুন আঙ্গিকে ফুটে উঠে, যে কারণে নিয়মিত পড়ি এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করি। আমার দুঃখ ২০১৮ সালের শুরুতে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যে কয়জন প্রিয়মুখ ও গুণীজনের সাথে দেখা করে এসেছি, তাঁদের মধ্যে আপনিও একজন। আমার অনেক প্রিয় মানুষ আপনার ফেসবুক বন্ধু হলেও আমাকে এখনো ফেসবুক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেননি বলে আপনার প্রতি আমার অনেক অভিমান; তবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মোটেও কমতি নাই।

আপনার এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম এবং আপনার পরপর সব কমেন্টগুলো পড়ে বলতে পারেন ১০টা পয়েন্টের মধ্যে ৯টাতেই সহমত পোষণ করছি। শুধুমাত্র একটা পয়েন্টে কিছুটা দ্বিমত আছে, বলতে পারেন, যে পয়েন্টে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আপনার জন্য খুশির খবর হলো জুমহুরদের মতের বাইরে গিয়ে আপনি হিজাব/বোরকা সংক্রান্ত যে মতামত তুলে ধরেছেন, জগৎ বিখ্যাত বেশ কয়েকজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং ফিলোসোফারও একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ করার মতো হলেন (এরা সকলেই আপনার লিটারেচারের আওতায় বলে আমি বিশ্বাস করি) একসময়ের সুদানের ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং পরবর্তীতে কিছুটা লিবারেল ইসলামের ভাবধারায় প্রভাবিত ড. হাসান আল তুরাবী, সাইয়্যেদ হোসাইন নাসের (ইরানী অরিজিন কিন্তু আমেরিকান অভিবাসী), মুহাম্মাদ হাশিম কামালী (আফগানী অরিজিন কিন্তু মালয়শিয়া সেটল)।

উনারাও মনে করেন “যেই পর্দার নামে বোরকা পরার প্রচলন ঘটেছে সেটির উল্লেখ কিন্তু কোরআন-হাদীস বা সুন্নাহর কোথাও নাই।” হাসান আল তুরাবী যে কয়টা ফিলোসোফিক্যাল থটের জন্য সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন তার মধ্যে একটি হলো হিজাব/পর্দা সংক্রান্ত।

এথিকস অব ডিজএগ্রিমেন্টের (Author: Dr. Taha Jabir Al-Alwani) একটি থিওরি হলো– যে কোনো বিষয়ে ইজতেহাদী দৃষ্টিকোণ থেকে একাধিক মতামত থাকতে পারে। কিন্তু যে বিষয়ে অ্যাবসলিউট এভিডেন্স (নস-এ-কাৎঈ) রয়েছে এবং ইজমা হয়েছে, সে বিষয়ে ভিন্ন একক মত গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে এজন্য একক মতামতদানকারীকে ইসলামের দুশমন বা ক্ষতিকারক ব্যক্তি হিসাবে সনাক্ত করারও সুযোগ নেই।

সবিনয় অনুরোধ– ১: আপনি আপনার জ্ঞান-প্রজ্ঞা দিয়ে যা কল্যাণকর মনে করেন তা বলতে থাকুন এবং লিখতে থাকুন। সমালোচকদের কথায় রিয়েক্ট না করাই হলো সমাজবিপ্লবী-সংস্কারকর্মীদের কাজ। কারণ, আজকে অন্যের কাছে যেটা গ্রহণযোগ্য হয়নি, কালের আবর্তনে সেটা তারা সাদরে গ্রহণ করবে। এটাই হলো ইসলাহ বা সমাজ সংস্কারের (সোশ্যাল মুভমেন্ট থিওরির) অন্যতম কৌশল।

সবিনয় অনুরোধ– ২: হিজাব/পর্দা/বোরকা সংক্রান্ত যতগুলো স্কলারলি লিটারেচার (ক্লাসিকাল ও কন্টেম্পোরারি) তার মধ্যে আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারাদাওয়ীর থটটা comprehensive এবং rational বলে মনে হয়েছে। প্লিজ মনোযোগ দিয়ে শুনুন নিচের লিংকটি–

https://youtu.be/mbG6UsHvX4Y?t=679

(দুঃখিত, পুরা বক্তব্যটি আরবিতে। মালয় ভাষায় স্ক্রিন ট্রান্সলেশন দেয়া আছে। এটা আল জাজিরায় (এরাবিক) বহুল প্রচারিত ‘শরীয়াহ ওয়াল হায়াত’ নামক সাপ্তাহিক প্রোগ্রামে ব্রডকাস্টকৃত। যার দর্শক ছিলো প্রায় ৫ মিলিয়ন আরব-অনারব। প্রোগ্রামটি বর্তমানে বন্ধ)।

MH Monir: এই ধরনের ওয়াজ মাহফিলে যে অকল্যাণ বেশি, এইটা বুঝার মত ভাবনা/বিবেচনা/রুচির আশা করা সুদূরপরাহত। আর এইটা পরিবর্তন করাটা মহাযজ্ঞের শামিল, সবকিছুই ঢেলে সাজাতে হবে।

আর ‘আপাদমস্তক’ কালো, মোটা, নন-সুতি বোরকার ব্যাপারটা আমার মাথায়ও ধরতো না। পরে বুঝেছি, আসলে অনেকেই এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। যেমন– মাদ্রাসার ছেলেরা কাঠফাটা রোদ্দুরের গরমে নন-সুতি মোটা কাপড়ের নিচেও টিশার্ট/মোটা গেঞ্জি পড়ে দিব্বি মাঠে খেলতে নেমে পড়ে। তবে বোরকা বা মেক্সি জাতীয় ঢিলেঢালা পোশাকই মূলত ইসলামী সংস্কৃতির স্বাভাবিক (বা এক অর্থে মিল্লাতে ইব্রাহীমের সিগনেচার) পোশাক এবং যে কোনো রকম রিভিলিং বা দৃষ্টি আকর্ষণকারী এপ্রোচই যে অনৈসলামী এ বিষয়ে আপনার পোস্ট থেকে অস্পষ্টতা (হ্যাঁ, বিনীতভাবে অস্পষ্টতাই বলছি) অকাম্য।

Md. Abu Sufian: অনেকেই আজকাল পর্দা এবং পোশাককে একাকার করে ফেলেছে। অথচ দুটি দুরকম আবশ্যিক ব্যাপার বা ইবাদত। অন্যদিকে অন্যান্য পয়েন্টে মনে মনে এক হলেও বাস্তবে দেখা যাবে আরেক রকম। কঠিন সিদ্ধান্ত ছাড়া যেসব করা সহজ নয় সেসবে আগ্রহ কম, বরং সহজটা নিয়ে যত গলাবাজি। এটাই বড় আফসোস।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *