দিন দুয়েক আগে এক ছাত্রী আমার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে অভিযোগ করেছে, পাবলিক প্লেইসে সোশ্যাল নর্মস এন্ড ভেলু মেনটেইন করার জন্য আমি তাকে বলেছি; অথচ সে কোনো সোশ্যাল নর্মস এন্ড ভেলু ভঙ্গ করে নাই। তাই তাকে এভাবে অযাচিতভাবে পরামর্শ দেয়াটাকে সে পজেটিভলি নেয় নাই। বরং অফেন্ডেড ফিল করেছে। সে কারণে সে জানতে চাচ্ছিল, স্পেসিফিকেলি ঠিক কোন জায়গায় এবং কীভাবে সে নর্মস এন্ড ভেলু ভায়োলেট করেছে।

আমি স্পেসিফিকেশনের এই ট্র্যাপটা এড়িয়ে গেছি। তৎপরিবর্তে তাকে বারম্বার বলেছি, তুমি বোঝার চেষ্টা করো, অবশ্যই বুঝতে পারবে। আসলে সে বুঝেছে ঠিকই, কিন্তু মানতে পারছিল না। অনুচ্চারিত ভাষায় যেন বলতে চাচ্ছিল, ‘আপনি যতটুকু এক্সপোজারকে সোশ্যাল নর্মস এন্ড ভেলু পরিপন্থী বলে দাবী করছেন তা আমার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য। তাই আপত্তি করার মতো ইনডিসেন্ট কিছু নয়।’

আসলে পোষাক কিংবা বৃহত্তর অর্থে যে কোনো মূল্যবোধ-ব্যবস্থাই সামাজিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিনির্ভর। এরসাথে আছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সমাজের ডমিনেন্ট ওয়ার্ল্ড-ভিউর সুগভীর সম্পর্ক। প্রথমে আমি ভাবছিলাম, এটা স্টুডেন্ট-টিচার ভেলু কনফ্লিক্ট। আমার এ’ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কীভাবে, তা বলছি।

নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসার কারণে শিক্ষকরা ওভারঅল রক্ষণশীল মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এমনকি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদেরও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের দিক থেকে কম-বেশি রক্ষণশীল। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে এসে বিশেষ করে নন-একাডেমিক এরিয়াগুলোতে খানিকটা ঘোরাফেরা করে যে কারো মনে হতে পারে, স্টুডেন্টরা ইন জেনারেল, সেক্সুয়াল মোরালিটির ব্যাপারে আধুনিক এবং প্রগতিশীল।

ছাত্রীটা আমার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে যে পোস্ট দিয়েছে সেটা সে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের একটা বড় গ্রুপে পোস্ট করেছে। সেখানে দেখলাম, সর্বস্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা তার বিপক্ষে ব্যাপকভাবে কমেন্ট করেছে। কমেন্টস পড়ে আমার মনে হলো, নানা কারণে চুপচাপ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী এখনো, মোর অর লেস, রক্ষণশীল সামাজিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী।

আমার বাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রধান সড়কের সাথে একেবারেই লাগোয়া। বাসার গেইটের পাঁচ ফুট দূরত্বে রাস্তার বিটুমিন। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে, বাসার সামনে একটা সাইনবোর্ড টাঙ্গাই, যাতে লেখা থাকবে—

passing road, not a flirting zone

এর নিচে ছোট হরফে লেখা থাকবে, ‘আশপাশে তোমাদের মা-বাবার বয়সী লোকজন সপরিবারে বসবাস করেন। কারো কাণ্ডজ্ঞান আর আত্মমর্যাদাবোধে ঘাটতি থাকলে তাকে কিছু বলার নাই।’

ওইদিন দুপুরে মেয়েটার সাথে যখন আমার কথা কাটাকাটি হচ্ছিল তখন সেখানে একজন গার্ড উপস্থিত ছিলেন। তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজন রিক্সা ড্রাইভারও ঘটনাটা দেখছিলেন। ছেলেমেয়েগুলো চলে যাওয়ার পরে তারা আমাকে প্রতিক্রিয়াতে যা বললো তা বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট সকলের জানা কথা।

উল্লেখ্য, উক্ত বয়স্ক প্রহরীর বাসা জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের RCMPS আর বোটানিকেল গার্ডেনের মাঝামাঝি এলাকায়। দিনের বেলাতেই সেখানে যে কেউ জোড়ায় জোড়ায় কোর্টশিপ/ফোরপ্লে-তে মগ্ন লোকজন দেখতে পাবেন, রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চেয়ে আউটসাইডারদের উৎপাত অনেক বেশি।

উক্ত গার্ড বললেন, স্যার, এগুলো দেখে দেখেই ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদেরকে এখানে বসবাস করতে হচ্ছে। কী করবো বলেন? না, এ’ মুহুর্তে (উনাদের) চেয়ে চেয়ে না দেখার ভান করা ছাড়া বলার কিছু নাই।

‘ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, উগ্রবাদী মন্তব্য করা ও নারীর সাথে নির্যাতনমূলক আচরণ’ এর কারণে খুব সম্ভবত নরসিংদী রেল স্টেশনের প্রতিবাদী মহিলার পরিণতির সম্মুখীন আমি হতাম, খুব সম্ভবত; যদি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বয়োজেষ্ঠ শিক্ষক না হতাম।

এই যে উপস্থিত গার্ড ভাইটার নাম এখানে বলতে পারলাম না, কেন জানেন? নাম বললে সমূহ আশংকা আছে, মেয়েটার পলিটিকাল ছেলেবন্ধুরা ওই গার্ডের বাসাবাড়িতে হামলা করবে। এরপর প্রক্টর অফিস গার্ডটাকেই বরং দোষী সাব্যস্ত করবে কেন সে ‘নির্যাতিত’ মেয়েটার পক্ষ না নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল এবং স্যারকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ‘অমর্যাদাকার’ কথা বলেছে, এই অভিযোগে।

অনেকেই জানেন না, সেভেন্টি-থ্রি এক্ট অনুসারে বৃহত্তর পরিসরে সকল শিক্ষকেরই প্রক্টরিয়েল পাওয়ার এবং ডিউটি রয়েছে। অবশ্য এক্টে কী আছে তা কোড করে কথা বলা এখন সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে এক্ট, রেগুলেশেন এবং ট্রাডিশন ভায়েলেশনের মহোৎসব। অনিয়মই এখানে নিয়ম। নীতিনৈতিকতার কথা এখানে বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছু নয়। দীর্ঘদিন চর্চিত না হওয়ার কারণে আসল নিয়মটা এখানে অজ্ঞাত কিংবা গুরুত্বহীন। তুচ্ছ কারণে ইচ্ছামতো পরিবর্তনযোগ্য।

প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, আমরা আসলে এজ আ নেশন গণতন্ত্রের জন্য উপযুক্ত নই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছাড়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতি খুব সহজেই হয়ে উঠে ইনট্রিনজিকেলি অটোক্রেটিক। তাই খুব সহজেই আমাদের কাছে আইনি বিধান হয়ে উঠে সিলেকটিভ প্রয়োগের মাধ্যমে নিবর্তন ও ক্ষমতাচর্চার হাতিয়ার। অন্তত এই ক্ষেত্রে, অর্থাৎ সমাজ ও রাষ্ট্র অধ্যয়নের ক্ষেত্রে মনে হয় মার্কসিস্ট ইন্টারপ্রিটেশানই সঠিক।

ব্রিটিশ ভারতে সাদা চামড়ার লোকজন পাবলিক প্লেসে তাদের ব্যক্তিগত মূল্যবোধ অনুসারে চলতো। এজ ইউ এশিউম, তারা যা মন চাইতো তাই করতো। নেটিভ ইনডিয়ানদের তারা গণ্যযোগ্য মানুষ মনে করতো না। অনফরচুনেটলি বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়াতেও এখন তেমনটাই ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় তেমনভাবেই চলছে। এখনকার এলিটরা এখনকার নেটিভদেরকে ঠিক সেই দৃষ্টিকোণ হতেই দেখে ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশরা ইন্ডিয়ানদেরকে যে দৃষ্টিতে দেখতো।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের দিক থেকে ছাত্ররা নেটিভ। টিচাররা বাদে সব ক্যাটাগরির নন-স্টুডেন্টরা স্টুডেন্টের দৃষ্টিতে আনকালচার্ড নেটিভ। ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদেরকে এডুকেশন স্টেকহোল্ডার মনে করা তো দূরের কথা, মানুষ বলেই তারা মনে করে না। অধিকাংশ শিক্ষকদের জন্য এই মন্তব্যটি প্রযোজ্য।

একইভাবে, এখানকার উগ্র লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসনিবাসী কর্মচারী, দোকানদার, রিক্সাওয়ালা, উত্তরা ও পাহাড়িকা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী লোকজন, এদেরকে গণ্য করার মতো মানুষ মনে করে না। নানা ফরমেটে রিলেশনচর্চা করার সময়ে আশপাশের কে কী মনে করলো না করলো তাতে ভ্রুক্ষেপ করার কোনো গরজ তারা বোধ করে না।

মাস দু’য়েক আগের এক বিকেলে। চা খাওয়ার জন্য গেছি চবি রেল স্টেশনের দক্ষিণ পাশে। সাথে ছিল দু’জন ছাত্র। যেমনটা ধারণা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গাতেই আমি কেজুয়েলি, এবং স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াই। ছাপ্পান্ন বছরের এই জীবনকালের বিয়াল্লিশ বছরই কেটেছে এই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন লোকেশনে। বিশ্ববিদ্যালয় যেন আমার ঘরবাড়ি। আমাকে যারা চিনে না, ধরে নিতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা নবাগত। গ্রামের বাড়ি নাজিরহাট। শহরের বাড়ি নতুনপাড়া এলাকায়, বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি সংলগ্ন। দু’টাই বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে।

সে যাই হোক, চবি রেল স্টেশনের সেই চায়ের দোকানে আমাদের সামনের টেবিলে দেখলাম এক ছেলে ধুমাইয়া গাঁজা টানতেছে। দেখলাম আমাদের পেছনের টেবিলে বসা এক মেয়ে। সেই মেয়ের জামাতে অর্ধবক্ষের উপরের দিকে দু’টা ফিতা ছাড়া আর কিছু নাই।

কার জামাকাপড় কী রকম সেই আলোচনা সুপারফিশিয়াল। তাই আসেন মূল প্রসঙ্গতে একটু ফোকাস করি। মূল্যবোধ ও শালীনতার তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে খানিকটা বলি। কারো জন্য চার আনা এক্সপোজার ডিসেন্ট, কিন্তু ছ’আনা ইনডিসেন্ট। কারো জন্য ছ’আনা এক্সপোজার কোয়াইট ডিসেন্ট বাট আট আনা প্রদর্শনী আনএক্সেপটেবল এন্ড ইনডিসেন্ট। এভাবে আলোচনা করতে থাকলে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগবে, আসলেই কি নৈতিকতার কোনো অবজেক্টিভ বেসিস আছে?

এই প্রশ্নের উত্তরে আমার কিছু বলার আছে। নৈতিকতার শূণ্য মানদণ্ড নীতি – এই শিরোনামের লেখাটাতে সে বিষয়ে খানিক টা আলোকপাত করেছি। এ’নিয়ে এখনি এখানে কিছু বলতে চাচ্ছি না। ফেইসবুক পোস্ট হিসেবে লেখাটা অলরেডি অনেক বড় হয়ে গেছে, তাই।

বরং বলবো, আসেন। আলাপ আলোচনা করি প্রকাশ্যে এবং সিস্টেমেটিকেলি। বোঝার চেষ্টা করি, সামাজিক মূল্যবোধ নামক জিনিসটা আসলে কী, কতটুকু এবং কোথায় কীভাবে প্রযোজ্য।

আমি ফিলসফির মানুষ। তাই, এত বড় একটা জাতীয় প্রতিষ্ঠান, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ আলোচনা করার মতো হেলদি এনভাইরনমেন্ট নাই, এই যে চরম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, এটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগে।

সমস্যা যত জটিল হোক কিংবা বিরোধ যতই তীব্র ও সংবেদনশীল হোক, বিশ্বাস করি যুক্তিবোধেই সুরাহা হতে পারে সব সমস্যার, মিটতে পারে সব বিরোধ। বিশ্বাস করি, পারষ্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ পরিবেশে প্রাসঙ্গিক সামাজিক ইস্যুতে আলাপ আলোচনার নাই কোনো বিকল্প।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

হাফসা হোসেন: জানিনা কমেন্টটা অপ্রাসঙ্গিক কিনা। তবুও একটু বলছি…

স্যার, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকাব পরে পরীক্ষা দেয়াকে আপনি কেমন চোখে দেখেন? ভেরিফিকেশনের জন্য কি এক্সাম, ভাইভা, প্রেজেন্টেশনে কি নিকাব খুলতেই হয়? পোশাকের স্বাধীনতা তো সবারই আছে। ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনে ডিপার্টমেন্টের ম্যামরা হয়তো দেখতে পারেন। অথবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা! স্যাররা আমাদের পিতৃতুল্য ঠিকই, কিন্তু নন-মাহরাম!

অপ্রাসঙ্গিক কমেন্ট করার জন্য দুঃখিত। আপনার মতামত জানার জন্যই কমেন্ট করা। আপনি একজন সিনিয়র টিচার, এই ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন সেটা জানতে ইচ্ছে করছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হাফসা হোসেন, ভেরিফিকেশন এর জন্য চেহারা দেখাতেই হবে। তবে ভেরিফিকেশন কখন কীভাবে কে করবে বা করতে পারে সেটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন থাকতে হবে, যাতে করে আইনের একটা ভেগ এক্সারসাইজ তথা অপব্যবহার কেউ করতে না পারে।

অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কানসহ সম্পূর্ণ মুখ পরীক্ষার সময় খোলা রাখার জন্য যারা বলে তারা সবাই মহিলা শিক্ষক।

কই পর্দানশীন নারীরা তো তাদের নিজেদের ব্যাপারে কখনো সেভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে নাই। ঝামেলা দেখলে তারা চুপচাপ কেটে পড়ে। মাঝে মাঝে একটু একটু ফেইসবুকে লেখালেখি করে। এসব দিয়ে তো সমাজ পরিবর্তন হবে না। আমি জানিনা তুমি সোশ্যাল ওয়ার্কে কতটুকু এক্টিভ, তবে নামের সাথে সাথে কাজেও হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার মতো হতে হবে। দিস ইজ আওয়ার এক্সপেক্টেশন ফ্রম ইউ গার্লস উইথ কনজারভেটিভ ভ্যালুস!

আহসান উল্লাহ হৃদয়: স্যার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূখ্য উদ্দেশ্য যদি কাইন্ডলি বলতেন উপকৃত হতাম! কারণ, যা দেখছি এবং শুনছি এজন্যই কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞান উৎপাদন বা সৃজন এবং একই সাথে সেই উৎপাদিত তথা সদ্য লব্ধ জ্ঞানের বিতরণ। এক কথায় গবেষণামূলক শিক্ষা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বৈশিষ্ট্য এবং প্রধান দায়িত্ব। বাদবাকি সবকিছু হচ্ছে এই বৈশিষ্ট্যকে অর্জন করার জন্য।

উম্মুল আখয়ার: স্যার, ঐ পোস্টটা আমিও দেখেছি। আপনার সাথে সেদিন দেখা হলো তার পরপরই। তারপর কমেন্টগুলো হালকা পড়ে বুঝতে পারলাম ঘটনা কী। কেউ কিছু বললে আরেকদল আসে ভিক্টিম ব্লেমিং হচ্ছে ইত্যাদি বুলি নিয়ে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ আসলেই পরিবারের কারো সাথে হাঁটার মতো না। যারা এমন চলে তারা নিজেরাও নিজেদের পরিবারের কাউকে মনে হয় না এই পরিবেশে আনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।

ব্যক্তিস্বাধীনতা অবশ্যই আছে, তার মানে অবশ্যই এটা না যা মন চায় তা করবে পাবলিক প্লেসে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: উম্মুল আখয়ার, my daughter, actually I am strongly in favor of women empowerment. একটা হলো চলাচলের অধিকার, ঘুরে বেড়ানোর অধিকার, যা অবশ্যই থাকতে হবে। আরেকটা হলো যে কোনো জায়গায় যে কোনো মাত্রায় সম্পর্ক চর্চা করার অধিকার(?), যা কোনক্রমেই অনুমোদনযোগ্য নয়।

একটু আগেই তিনটা মেয়ে আমার বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তারা বাইরের বাগানের ছবি তুলছিল। আমাকে দেখে একটু সংকোচ বোধ করছে। কিন্তু আমি তাদেরকে এনশিওর করেছি যে নো প্রবলেম। এমনকি বাসার ভিতরের বাগানে এসে তাদেরকে ছবি তুলতে দিয়েছি। তারা খরগোশের ছবিও তুলেছে।

একজোড়া বুলবুলি পাখি সামনে ছিল। সেগুলো দেখে তারা অবাক হয়ে গেছে। পাখিগুলো এক ধরনের ঝোপ আছে ভিতরে, সেটার গোটা খেতে পছন্দ করে। তারা কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট। কোন ইয়ার জিজ্ঞেস করি নাই।

এভাবে অনেক অপরিচিত লোকজনকেও আমরা এন্টারটেইন করি, except couples passing with doing flirting.

শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা ফেকালটি এরিয়ার মত একাডেমিক এরিয়া না হলেও সেই স্ট্যাটাসের, এটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক চর্চাকারীদের অনেকেই খেয়াল করে না, অথবা মানতে চায় না।

অন্যান্য শিক্ষকদের মতো আমি যদি গোবেচারা টাইপের হতাম অথবা ভয়ে-ডরে চুপ করে থাকতাম তাহলে কোনো সমস্যাই হতো না। যেখানে-সেখানে এবং অবাধে সম্পর্কচর্চাকারী ছেলেমেয়েগুলো সম্পর্কে সেখানে উপস্থিত কর্মচারী ভাইয়েরা যা বলেছে, সেটা মোটেও ভালো কিছু নয়। দারোয়ান ভাইটার কিছু কথা তো আমি পোস্টেই উল্লেখ করেছি।

এসব ডেসপারেট ছেলেমেয়েরা শিক্ষক ছাড়া অন্যদেরকে মানুষই মনে করে না। অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসকারী প্রত্যেকটা কর্মচারী ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ভালো ডিপার্টমেন্টে পড়ে। পরিস্থিতি এমন, তারা কিছু বলতে পারছে না।

প্রসঙ্গক্রমে তোমাকে বলছি, ওই মেয়ে বা কোনো মেয়ের ব্যাপারে আমার আপত্তি ওড়না পরা কিংবা না পরা নয়। আমাদের পাহাড়ি মেয়েরাসহ অনেক মেয়েরাই ওড়না পরে না, রেগুলারলি অথবা মাঝে মাঝে। কিন্তু খেয়াল করেছি, পাবলিক প্লেসে তারা এমন ঢিলেঢালা কাপড়-চোপড় পরে যা কোনোক্রমেই ততটা অশালীন নয়।

শফিকুর রহমান: জানিনা স্যার বিশ্বাস করবেন কিনা। আমি ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে গিয়েছি। নিজেও লন্ডনের একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলোতে যাই। আমি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে পড়তাম। বাংলাদেশের বড় মাপের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো বাদ দিয়ে দিলাম। সাধারণ মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসেও যে বেহায়াপনা দেখেছি ইউকে বা ফ্রান্সের ঐ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ঐরকম বেহায়াপনা দেখিনাই।

এমনকি ঐসব ক্যাম্পাসে স্টুডেন্ট আছে কিনা তা বাহিরে থেকে উপলব্ধি করা যায়না। ওরা বেহায়াপনা করে, তবে সব জায়গায় নয়। ওরা মদ পান করলে নির্দিষ্ট জায়গায় মদ পান করে। বেহায়াপনা করলে নির্দিষ্ট জায়গায় বেহায়াপনা করে।

খন্দকার আহমেদ জাকারিয়া: যাদের কথা বলছেন এরা অধিকাংশ নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের। এরা যে কালচার চালু করেছে বা ভোগ করছে তা কিন্তু তাদের পরিবার বা সমাজের নয়। এরা হঠাৎ প্রাপ্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা অপব্যবহার করছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে হয়তো অধিকাংশই এ পথে চলবে না এমনকি কেউ কেউ এ অবস্থার বিরোধিতা করবে – এটা আমার ধারণা। প্রশ্ন হলো তাদের কে গাইড করবে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি পরিবেশ কে তৈরি করবে যেখানে তারা জ্ঞান, গবেষণা ও সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকবে? প্রশ্নের উত্তর সহজ, আমি আর উল্লেখ করছি না। সমস্যা হলো যাদের দায়িত্ব ছিল তারা বরং এসব উস্কে দিচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ ছাড়াও নানা কারণে তারা এই উস্কে দেয়ার কাজটা করছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতনতার অভাবও একটা বড় কারণ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এ জন্যই মেয়েটাকে আমি বার বার বলেছি, এখন না বুঝলেও আগামীতে আশা করি তুমি বুঝতে পারবে। ও ইংরেজীতে বলছিল। তাই আমিও ইংরেজীতে বলেছি। এখানে এবং পাশ্চাত্যে যেসব নারীদেরকে নারীবাদবিরোধী হিসেবে দেখছি, তারা প্রায় সকলেই আর্লি লাইফে ছিলেন নারীবাদী। ভেলুকে ভেলু করা শিখতে হয়। তারুণ্যের উদ্দামে অনেক সময় রিজনিং প্রসেস এন্ড ক্যাপাসিটি ঠিকমতো কাজ করে না। গাইডেন্সের প্রসঙ্গটা তাই এতটা জরুরী।

রিয়াদ মো: আরেফিন সোহান: আমিও ঐ পোস্টে আপনার নাম দেখে অবাক হয়েছিলাম, খুঁতখুঁত লাগতেছিল, এখন আপনার পোস্ট দেখে আসল কাহিনী বুঝতে পারলাম।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মেয়েটাকে আমার কাছে সাহসী ও সৎ বলে মনে হয়েছে। she holds or belongs a different paradigm. according to her value system, she is right; though it contradicts with our social value system. I asked her to try to honor the social norm, even though she differs with the standard of public decency. অনেকেই যেভাবে তাকে খারাপ মনে করছে, এটলিস্ট আমি তাকে ওরকম কিছুতে পাই নাই। ওর প্রসঙ্গে আমি কিছু ওভারঅল এক্সপেরিয়েন্স এন্ড ওপিনিয়ন নিয়ে বলেছি। but these should not be labelled on her.

পোস্টে যেমনটা বলেছি, এসব নিয়ে ডায়ালগ হওয়া উচিত। কিন্তু সেই পরিবেশ এখানে নাই। এখনকার এনভায়রনমেন্টে যারা কনজারভেটিজমের কথা বলবে তারা মাইর খাওয়ার চান্স আছে। আবার যেসব জায়গায় কনজারভেটিভ ভেলু সিস্টেম ডমিনেন্ট সেখানে যারা লিবারেলিজমের পক্ষে বলবে তারা মাইর খাওয়ার পসিবিলিটি প্রবল। এই মার মার কাট কাট পরিবেশ ও পরিস্থিতি, এটা কোনো সুস্থ সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

আরেফিন মোহাম্মদ: মেয়েটার পোস্টটা আমি পড়েছি। তার বক্তব্য একপাশে যদি রেখেও দেই, আমি নিজে কখনোই চাইবো না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক বা যে কেউ, যে কিনা আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত নন, তিনি আউট অফ নোহোয়ার আমাকে এসে অযাচিতভাবে পাবলিক নর্মসের সবক দিবেন। এটা কেন বলছি? কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাত্রই ‘জাতির বিবেক’ হইয়া উঠা বা ‘সিনিয়র সিটিজেন’ মাত্রই তার নসীহত করার যেই অথরিটি, আমি এই ধারণাকে buy করি না। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা কী পরবে, কী পরবে না, সেটা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলতে পারবে না?

অবশ্যই বলতে পারবে, তবে আ’মভাবে বলতে পারবে। তার ক্লাসে বলতে পারবে। ফেসবুকে পোস্ট করে বলতে পারবে। ভিডিও বানায়া বলতে পারবে। কিন্তু স্পেসিফিক্যালি ইন্ডিভিজুয়ালকে, যে তার সরাসরি স্টুডেন্টও নন, তাকে দাঁড় করিয়ে, শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এই অথরিটির জন্য বলতে পারবে না। কারণ এতোটা ইন্ডিভিজুয়াল ক্ষমতা ও অথরিটি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা সিনিয়র সিটিজেনের হোক, সেটা আমি চাই না

উসমান মাহাদী: আরেফিন মোহাম্মদ, স্যারের পোস্টে স্পষ্ট করে বলা আছে সেভেন্টি থ্রি এক্ট অনুসারে প্রত্যেক শিক্ষকেরই প্রক্টরিয়াল পাওয়ার ও ডিউটি আছে। তাছাড়া একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে জুনিয়র সিটিজেনকে নর্মস এন্ড ভ্যালুস বিষয়ক সতর্কতা প্রদান সামাজিকভাবেও স্বীকৃত।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *