উচ্চশিক্ষায় বাংলাকরণের কথা যারা বলেন তাদের সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে আমি স্ল্যাং ইউজ করে কথা বলি। সঙ্গতকারণে এখানে তা বলা যাবে না। এসব ভাষা-নাৎসীরা বিশেষ করে ফিলসফির মতো সাবজেক্টে বাংলাকরণের যে হাল করেছেন তা শুনলে আপনারা কাঁদবেন না হাসবেন, দিশকূল পাবেন না।
উদাহরণ হিসেবে বলছি,
Universal-এর বাংলা করেছেন ‘সামান্য’। universalization-এর বাংলা করেছেন ‘সামান্যীকরণ’। infinite regress এর বাংলা করেছেন ‘অনাবস্থা দোষ’। অথচ ‘অন্তহীন পরম্পরা’ বললে সহজেই লোকেরা বুঝতো, এখানে একটা endless chain এর কথা বলা হচ্ছে।
Space-time-এর বাংলা করেছেন দেশ-কাল। অথচ, স্পেইস-টাইমের বাংলা স্থান-কাল করলে আমরা আরো সহজে বুঝে নিতে পারতাম। দেশ বললে আমাদের মাথায় country শব্দটা পপআপ করে। উনারা Fallacy’র বাংলা করেছেন ‘অনুপপত্তি’। অনুপপত্তির বদলে ‘ভুলযুক্তি’ বললে সাধারণ লোকেরা সহজে বুঝে যেত।
এভাবে বললে অনেক কথা বলা যায়।
আমার কাছে লোকজন হরদম জানতে চান, তারা ফিলসফি শেখার জন্য কোন কোন বই পড়বে? আমি সাধারণত নিরুত্তর থাকি। কেউ খুব চাপাচাপি করলে বলি, ফিলসফির ওপর বাংলা বই না পড়ে সরাসরি ইংরেজী থেকে পড়াই ভাল। জন্মগতভাবে বাঙালীরদের কাছে যে বাংলা পরিভাষা, মূল বিদেশি টার্মের চেয়েও কঠিন, তা শেখার কী দরকার?
বাংলা কি আদৌ উচ্চমানের দর্শনচর্চার জন্য উপযোগী?
মাফ করবেন, আমি অন্তত এ’ব্যাপারে আশাবাদী নই। একটা উপায় আছে। টেবিল-চেয়ার আর অক্সিজেন-হাইড্রোজেনের মতো করে পরিভাষাগুলোকে as such গ্রহণ করে নেয়া।
আমি ভাষাগত শুদ্ধতাবাদিতার (linguistic puritanism) বিরোধী। ভাষাকে পানির স্রোতের মতো বইতে দেয়া উচিত।
জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় জাস্টিফিকেশন ক্রাইটেরিয়া প্রসঙ্গে evidence-এর কথা বার বার আসে। বাংলাকরণবাদী ভাষাজঙ্গীদেরকে জব্দ করার জন্য আমি তাদেরকে এভিডেন্স-এর বাংলা করার কথা বলি। হরেক রকমের বিশেষজ্ঞদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি। কেউ সদুত্তর দিতে পারে নাই।
স্মরণে রাখতে হবে, এপিস্টেমিক স্কেলে এভিডেন্স হলো প্রমাণ বা proof এর চেয়ে কম, সাক্ষ্য বা witness এর চেয়ে বেশি কিছু। এবার বলেন, evidence এর বাংলা পরিভাষা কী হবে?
ইন ফ্যাক্ট, ভাষা নিয়ে বাতচিত করার জন্য এই বিকেলে আমি লিখতে বসি নাই। এভিডেন্স আর ট্রুথ/ফ্যাক্টের পার্থক্য বোঝানোর জন্য একটা ছোট্ট গল্প আমি স্টুডেন্টদেরকে বলে থাকি। আপনাদেরকে স্বরচিত এই গল্পটা শোনাতে চাচ্ছি –
Somebody has been murdered, but nobody is found murderer.
ব্যস, গল্প শেষ। গল্প একবাক্যে শেষ হলেও গল্পের তাৎপর্য গুরুতর।
এই গল্পে ট্রুথ বা ফ্যাক্ট হলো, লোকটি যেহেতু নিহত হয়েছেন; অতএব কমপক্ষে একব্যক্তি তার হত্যাকারী। অথচ, এভিডেন্স-বেইজড ‘বাস্তবতা’ হলো, কেউ লোকটিকে হত্যা করেনি।
সত্যতা আর বৈধতার এই দ্বন্দ্ব নৈতিকতা ও আইনের বিরোধে প্রকাশিত।
যুক্তিবিদ্যায় সত্যতার কোনো আলোচনা নাই। যুক্তিবিদ্যা হলো বৈধতা পরখ ও যুক্তি নির্ণয়ের ব্যাপার। এর বিপরীতে, জ্ঞানবিদ্যার পুরো কায়কারবার সত্যতা (true by itself) এবং সত্যতা নির্ণয়ের সমস্যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় এভিডেন্স আসে সত্যতা নির্ণয়ের উপায় হিসেবে।
এরসাথে প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো প্রমাণ বা proof। প্রুফ নিয়ে কথা বলাটা বিপদজনক। কাউন্টার-ইনটিউটিভ, ইন আ সেন্স। একটু হিন্টস দেই,
ফিলসফিতে প্রমাণের কোনো বালাই নাই।
এ নিয়ে আরেকদিন কথা হবে। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের একটুখানি বিজ্ঞানের মতো একটুখানি দর্শনের এই আলোচনা আপনার কেমন লাগলো?
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
১। Mahammad Rasel Ahmed: সলিমুল্লাহ খান স্যার সব সময় উচ্চশিক্ষা বাংলা করণের ব্যাপারে বলেন। ওনাকে শোনার পর ভাবতে থাকি উনি ঠিক বলেন। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে ফিলসফি বাংলায় পড়া খুবই দুষ্কর অধিকন্তু অনিরাপদ।
Mohammad Mozammel Hoque: স্যার তো পণ্ডিত মানুষ। আইনের শিক্ষক। উনি তো ভালো বলতে পারার কথা evidence-এর বাংলা কী হতে পারে। উনার পক্ষ থেকে কেউ আমাকে বলতে পারবেন? এ ধরনের ভাষা এবং পরিভাষাগত সমস্যা ফিলসফিক্যাল ডিসকাশনে আমরা সবসময়ে ফেইস করি।
২। Hasan Mahmud: চিকিৎসাবিদ্যার একই অবস্হা। বাংলা করলে তা আর বাংলা থাকে না, হয়ে যায় সংস্কৃত। এর চেয়ে ইংরেজি বহু গুণ সহজ।
Mohammad Mozammel Hoque: এ ধরনের বাংলাকরণবাদীদের ধারণা, সংস্কৃত শব্দের অনুস্বরটা (ং) কেটে দিলে শব্দটা বাংলা হয়ে যায়। যেমন করে বিবর্তনবাদের পক্ষের কারো এমন ধারণা থাকতে পারে, বানরের লেজ কেটে তাকে ভালো করে ফিজিওথেরাপি করালে সে মানুষের মতো হাঁটবে এবং একপর্যায়ে মানুষ হয়ে উঠবে।
৩। Rakibulla’h: One of your best takes of our pedagogical circus. Forcing students who follow the syllabus in English to memorize redundant bullshit Bangla terminologies (which just makes the learning process overtly troublesome and most professors not being well versed in English terminologies added more insult to this issue). For first year we have witnessed faculty members giving lip services to the talks of incorporating the pedagogical system more English friendly but we didn’t see any tangible change in that aspect.
Mohammad Mozammel Hoque: Most of the university teachers, I mean, public universities, are very weak in English. Their listening skill is also very weak. I had very good relations with senior teachers of English and Bangla, in CU. Every one of them was very good in both English and Bangla.
Those who are weak in English, are also weak in Bengali. Teachers try to hide their weaknesses by condemning the students and authority. most of them have no seriousness to develop their communicative skill.
Shame!
৪। Shamim Noor: স্যার, সালাম নিবেন। আপনার পোস্টটি পড়লাম। এখানে আপনি এভিডেন্স এর পরিভাষা জানতে চেয়েছেন। এটা যেহেতু পুরোপুরি প্রমাণ বা সাক্ষ্য নয় সেহেতু এটাকে “ঘটনা সম্পর্কিত আলামত” বলা যায় কিনা? যেটি প্রমাণের মত শক্তিশালী নয়, আবার সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শীর চেয়ে কিছুটা জোড়ালো (সাক্ষীর ক্ষেত্রে যেহেতু পক্ষপাতের বিষয় থেকে যায়)। এ কারণে জোড়ালো যে ওটা দিয়ে কোনকিছু প্রমাণ করার বিষয়টাকে সহায়তা করা যাবে। তবে সাক্ষ্য দিয়েও প্রমাণের কাছাকাছি যাওয়া যায় হয়তো। কিন্তু এভিডেন্সটা মনে হয় সরাসরি মনুষ্য বিষয় কোন স্বত্তাকে নির্দেশ না (non -human related) করে বরং objects/deeds/elements এসবকে নির্দেশ করে।
Mohammad Mozammel Hoque: evidence-এর বাংলা আলামত করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে indication এবং এ ধরনের (synonymous) শব্দগুলোর বাংলা কী হবে, তা নির্ণয় করতে হবে।
শ দিয়ে শামীমও হতে পারে, শওকতও হতে পারে। কিন্তু শ না বলে কেউ যদি শামীম বলে, এবং শামীম বলতে শওকতও বোঝায়, এমন বলে, তাহলে তো সমস্যা।
কনটেক্সট দিয়ে যদি বুঝতে হয়, কখন শ দিয়ে শামীম হবে, কখন শওকত হবে, তাহলে মানতে হবে, সংশ্লিষ্ট ভাষাটি শব্দ-সংকটে ভুগছে। সেক্ষেত্রে উচিত কাজ হবে সংশ্লিষ্ট বিদেশি শব্দটাকে আত্মীকরণ করা।
যেভাবে ভারতীয় গুরুকে ইংরেজীতে আত্মীকরণ করা হয়েছে। জিহাদ, শরীয়াহ ও শহীদকে নন-ইসলামিক ভাষাগুলোতেও as such গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে। আমরা যেভাবে বাংলাতে অনেক বিদেশি শব্দকে আত্মীকরণ করে নিয়েছি।
এই সহজ কাজটা না করে সব কিছু ‘বাংলাকরণ’ করার চেষ্টাকে আমার কাছে পরিণত বয়সে খৎনা করার মতো ভয়াবহ বলে মনে হয়।