নারীরা বিয়ের কাজী কেন, প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান হতে ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা দেখি না। ‌‘নারী অধিকার প্রসঙ্গে শরীয়াহর নির্দেশ বনাম নির্দেশনা’ — এই লেখাটা পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ‍“তুয়াদ্দুল আমানাতা ইলা আহলিহা” (পাওনাদারকে তার প্রাপ্য আদায় করে দাও)। আপনারা মানে পুরুষতন্ত্রী পুরুষেরা নারীদের যেসব অধিকার যুগ যুগ ধরে হরণ করে নিয়ে সমাজ ব্যবস্থা সাজিয়েছেন, তাদের সেসব অপহৃত মানবিক ও ইসলামসম্মত অধিকার আপসে ফিরিয়ে দেন। তাতে করে আপনাদের মূল্যবোধ কাঠামো বা প্যারাডাইমের মধ্যে তারা নিজেদেরকে এডজাস্ট করে নেবে। অন্যথায়, তারা সুইসাইডাল হয়ে উঠবে। এর পরিণতি হলো, পাশ্চাত্য উগ্র নারীবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা ‌‘স্বাধীনতা’ ও সুখ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবে। ধর্মবাদীতার বালির বাঁধ দিয়ে তাদের এই আগল ভাংগার মনোবৃত্তিকে আপনারা কিছুতেই ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না।

মনে রাখবেন, ventilation prevents explosion।

পক্ষ-বিপক্ষের হাইপার একটিভরা যাতে আমাকে এবং আমার কাজকে ভুল না বুঝে বসেন সেজন্যে নারী অধিকার প্রসঙ্গে ‌‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’র (সিএসসিএস) দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটা পোস্টার শেয়ার করে মূল কথাটা আপাতত এখানেই শেষ করছি।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

 

বাপ্পা আজিজুল: বিআইআইটি’র ১৬ সালের জার্নালে সম্ভবত ইসলামে নারীদের নেতৃত্ব নিয়ে গবেষণামূলক একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়, সেখানে উঠে আসে নারীদের সরকারপ্রধান বা অন্য অথরিটি বা এডমিনিস্ট্রেটিভ দায়িত্ব পালন হারাম নয়, মুবাহ। যে হাদিস নিয়ে বেশি কথা হয়, সেটি তৎকালীন ঐ জনপদের জন্য খাস ছিলো।

বাপ্পা আজিজুল: ‍‍“The Muslim scholars are in general agreement that women are not entitled to hold the topmost public office of a nation. Is that due to certain provisions in the Qur’an and Prophetic traditions (ahadith) or is it due largely to socio-cultural and economic settings of a country? The Qur’an urges women not to make dazzling display publicly as practiced during Jahiliyyah (33:33). It also asserts that men are the protectors and maintainers of women (4:34). The Prophetic tradition commonly cited in this regard is the saying attributed to him which proclaims: ‍“No nation will ever prosper if a woman is assigned to its highest public office.” (Bukhari, no. 4073, 6570). On the other hand, the Qur’an acclaims the Queen of Sheba for her just rule. Hence, some prominent scholars such as Imam Abu Hanifah, Tabari and Ibn Hazm support that women could hold the topmost judicial position. Ibn Hazm also asserts that in principle, it is conceivable that women can carry out the mission of Prophethood, and if they could be Prophets, they would also be leaders, for the Prophets are leaders. The present research is carried out to deal with this issue. It would primarily depend on the Qur’anic ayat, Prophetic traditions, heritage of Islamic Caliphs and the verdicts of Muslim jurists. The research will critically evaluate the validity of the quoted hadith, and examine the circumstances surrounding the said hadith to know its real perspective. It will make a comparative analysis between the classical and the contemporary scholars to see how the changing realities affected their stand on this crucial issue and what should be the objective standpoint on the political role of Muslim women.” (The Political Role of Muslim Women in Shariáh: An Analysis by Prof. Noor Mohammad Osmani, published on December, 2014. BIIT Journal, vol. 10, no. 14)

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: Thanks for the sharing.

Riaz Hasan: Moreover, in this article, the author claimed that Imam Abu Hanifa opined that, women can be chief of state or chief qadhi unless she needs to execute Hudud or Kiyas! This is in itself very contradictory and weird. Isn’t it? Who in the world can unleash the role of a chief of state or chief justice without implementing Hudud or without doing Kiyas!?

The main function of a justice is doing Kiyas, looking for analogy and then give verdict in majority cases. So, if you take these two weapons from them, how can they be successful justice or chief of state?!

If you think about these questions, you will easily understand the original fatwa of Hanafi School has been understated here! Just think and your aql will dictate you to the truth.

Riaz Hasan: “It is conceivable that women can carry out the mission of Prophethood” — from where Imam Ibn Hazm got it? Women can carry out the mission of prophethood? Seriously!?

This shows how much silly the opinion is. All the verses and hadith the articles mentioned shows the opposite conclusion. But after mentioning those (for example not to do dazzling public display, men being protectors etc.), somehow he opined in his own way!

How silly the way he or the article author reached the conclusion! No intelligent coherence of logic at all! Very poor!

Riaz Hasan: Imam Abu Hanifa supported it — this is an understatement. The truth is, according to hanafi school, it is maqruh tahrimi. Now, you can cross check which one is true. Secondly, Ibn Hazm is disputed for many reasons. But still, his opinion has some scholarly weight. And there is no problem in discussing his opinion in light of thousand other scholars’ opinions, who were in vehement opposition of his opinion. And we know a principle that, ijma-e-ummat has more weight than an individual opinion.

I already disputed the point that Saba’s queen was glorified in Quran. I read those verses and can you please point out to me specifically which verse is glorifying her authority being a queen!?

Shifa Binte Abdullah was assigned the duty of market controller. That does not tell us the duty of a chief of state can also be assigned! This can merely tell us that any public duty can be assigned to a competent woman with the exception of chief of state as agreed by majority Islamic scholars, organizations both in old time and modern world!

Moreover, as it goes against the brute majority opinion (including the main 4 schools), so at least you have to agree that your opinion is a very small minority and has of course thus less weight in the light of fiqh!

And lastly, taking into views the opinion of modern time scholars needs careful review as Mawlana Moududi and many others have opined as we are living under a world order after 1920’s, which in all sense, is taking us further apart from Islamic values. And we are not in authority for last 100 years. So, please consider these factors and take the modern opinion with a grain of salt!

উম্মে সালমা: একটি তথ্য শেয়ার না করে পারছি না। আপনি হয়তো জেনে থাকতে পারেন। আইআইইউসিতে নারী শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী Head of the department বা Dean হবার নিয়ম নেই (আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা)। এটা কি তবে ‍“মেয়েরা কাজী হতে পারবে না” সেই একই ভাবধারার উপর রচিত? আপনার মতামত আশা করছি।‌

ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যাপারটি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা। এটাকে আমার মহিলা শিক্ষকসহ পুরো ফিমেল ক্যাম্পাসকে structurally and functionally subordination, deprivation and suppression এর একটি উপায় বলে মনে হয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এটি আমি জানতাম না। আপনার কাছ থেকে এই প্রথম শুনলাম এবং খুবই আশ্চর্য হলাম।

উম্মে সালমা: সত্যি! আমিও আশ্চর্য হলাম। আমাদের ডিপার্টমেন্টে এধরনের কথা আমাদের প্রায়ই শোনানো হতো। দেয়া হতো শুধু ফিমেলের কোঅর্ডিনেটর পোস্ট, যাও আবার হেডের আন্ডারে। যেখানে নিজেকে ‍“কলুর বলদ” ছাড়া কিছুই মনে হতো না। No scope to exercise one’s agency.

আমি অনেকবার চেয়েছি জানতে, এটা কি IIUC প্রতিষ্ঠার বেসিক মূলনীতি, নাকি একটা অলিখিত প্রাকটিস। পারিনি। আমার সবসময় মনে হয়েছে, ফিমেল ক্যাম্পাস কনসেপ্ট আর প্রাকটিসে একটি discriminatory process.

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবদুন নূর স্যারের কাছ থেকে শুনেছি। স্যার ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার। মাওলানা শামসুল ইসলাম হলেন স্যারের সরাসরি ছাত্র। শামসু ভাইসহ কয়েকজন নাকি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তি করানোর ব্যাপারে ঘোরতর বিরোধী। বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার মাওলানা আব্দুল জব্বার, আব্দুন নূর স্যারসহ কয়েকজন ছিলেন ছাত্রী ভর্তি করানোর পক্ষে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস মসজিদে ওযু করার সময় পাশাপাশি বসে স্যার আমাকে এসব কথা বলছিলেন, আমার এখনো চোখে ভাসে।

স্যার বলছিলেন, দেখো এরা মেয়ে ভর্তির বিরোধিতা করছিল। অথচ এখন ফিমেল ক্যাম্পাস হচ্ছে তাদের ইনকামের প্রধান উৎস। তথ্যটি খুব তুচ্ছ কিন্তু যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

উম্মে সালমা: কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছে বোধহয়। education industry।

Aminul Islam Samim: পুরোটা পড়লাম। পাশ্চাত্য নারীবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আপাতত স্বাধীনতার সুখ খুঁজতে থাকবে এই কথাটা একদম সত্য

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: প্রত্যেক মানুষের মানবিক অধিকারকে স্বীকার করে নিতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে দিতে হবে সুযোগের সমতা। মনে রাখতে হবে, সুযোগের সমতা মানে কোনো কিছু হয়ে ওঠার সমতা, ব্যাপারটা এমন নয়। অর্থাৎ কথাটা যদি ইংরেজিতে বলি, শ্রদ্ধেয় প্রফেসর Jordan Peterson এর ভাষায় equality in the opportunity does not mean the equality in the outcome।

সমান সুযোগ দেয়া হলে দেখা যাবে প্রত্যেকে যে যার প্রাকৃতিক গঠনগত শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে নিজস্ব কর্মক্ষেত্র বেছে নেবে। তারমানে, নারীরা সবকিছু হতে পারবে এই কথার মানে এই নয় যে তারা শেষ পর্যন্ত সবকিছুতে পুরুষের সমকক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠবে।

আপনি যদি প্রত্যেককে মুক্তভাবে ছেড়ে দেন তাহলে দেখবেন প্রত্যেকে যার যার পটেনশিয়ালটি অনুসারে তার বিচরণ ও কর্মক্ষেত্রকে একচুয়ালাইজ করবে। সুতরাং নারী-পুরুষের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটাকে স্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠতে দিতে হবে। কৃত্রিম সমতা কিংবা আরোপিত বৈষম্য তথা artificial equality or imposed discrimination — এই দুইটাকেই সমানতালে পরিহার করতে হবে। লেখাটা পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন, সেজন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Riaz Hasan: আপনার এই বক্তব্যের সাথেও দ্বিমত করছি। অবশ্যই ইসলাম নির্ধারিত বাউন্ডারি বলতে হবে, থাকতে হবে। বরং, ইতিহাস বলছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে, মুসলিম কি অমুসলিম, সকল নারীরাই গৃহকে মেইন কর্মক্ষেত্র হিসেবে নিতো। বাইরে কাজ করতে যাওয়াটা সব যুগেই ছিল খুব ছোট মাইনরিটি হিসেবে। সো, ইসলাম নারীদেরকে মসজিদে যেতে দেয়, কিন্তু বলে দেয়, ঘরে পড়াই উত্তম। ইসলাম প্রয়োজনে বাইরে কাজ করতে দেয়, কিন্তু বলে দেয়, home making-টাই তাদের জন্য ফিতরাত অনুযায়ী উত্তম কাজ! এইসব সাধারণ নির্দেশনার সাথে সাথে কিছু বাউন্ডারি কন্ডিশনও দেয়। যেমনটা রাষ্ট্রপ্রধান বা কাজীর ক্ষেত্রে। এটাই মেজরিটি (মানে অলমোস্ট ৯৯% স্কলারের অভিমত) যদি আমি শুধু প্রি ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ারের স্কলারদের দেখি। পোস্ট ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ারের স্কলারলি ওপিনিওয়ন (অন্তত পরিবার বিষয়ে বা নারী পুরুষ বিষয়ে) আমি গ্রেইন অফ সল্ট ছাড়া নেই না, কারণ পরাজিত রাজনৈতিক আম্ব্রেলাতে মতামত অবশ্যই ডাইলিউটেড হতে পারে এবং হয়।

পুরাপুরি মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া নয়, বরং অল্প কিছু বাউন্ডারি কন্ডিশন (যেগুলা ক্লিয়ারলি এবং মেজরিটি ফুকাহা দ্বারা গৃহীত) সেট করে তারপরে মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া উচিত। পুরাপুরি মুক্তভাবে কাউকেই ইসলাম ছেড়ে দেয় না, কিন্তু লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার এসে আমাদেরকে এটা গিলাইছে। ফলস্বরূপ, বাবা-মা ছেলে-মেয়েদেরকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ছেলে-মেয়ে এখন বাবা-মায়ের উপর বস হয়ে উঠছেন (যেমনটা রাসূল (সঃ) হাদীসে বলেছেন যে কিয়ামতের অন্যতম আলামত হল, মা যেন তার মনিবকে প্রসব করবে)। সো, লিবারেলিজমের এই বিষফল তো দেখাই যাচ্ছে অন্তত ছেলে-মেয়ে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে। সো, সেটাকে ব্লাইন্ডলি পরিবার ব্যবস্থাপনায় বা নারী-পুরুষ জেন্ডার রোলের মধ্যেও টেনে আনলে একই আউটকাম হবে। ছোট ছোট অল্প কিছু রিজিড বাউন্ডারি কন্ডিশন ইসলাম দেয়, সেগুলো মেনেই তারপরে বাকি স্বাধীনতা — এটা সত্য কি পুরুষ কি নারী, কি বৃদ্ধ বা বাচ্চার জন্য।

মুক্তভাবে ছেড়ে দিলেই সবাই ফিতরাত কর্তৃক নির্ধারিত রোলে চলে যাবে আর ক্যাওস হবে না — এই কথার পিছনের এজাম্পশন হইলো শয়তান বা শাহওয়াত বা নাফসে আম্মারা বলতে কিছু নাই!!! তাছাড়া জেন্ডার রোল বা নারী-পুরুষ সম্পর্কের মধ্যে যে একটা বিপর্যয় হবে— সেরকম কিয়ামতের আলামত অধ্যায়ে অসংখ্য হাদীস আছে, সেগুলাকেও এই আলোচনায় আমলে নিতে হবে। তাইলে বুঝা যাবে যে ওয়েস্টার্ন ইসলাম কর্তৃক আরোপিত ডাইলিউশনটা কি আসলেই মূলগতভাবে ছিল, নাকি বিশ্ব ব্যাবস্থাপনায় খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা!

Riaz Hasan: (মন্তব্য পার্ট- ১) পড়েছি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে। এবং কোনো বায়াস না নিয়েই কিছু বিষয় যাচাই এবং বোঝার চেষ্টা করেছি একাডেমিক্যালি। কয়েকটা প্রশ্ন— ১. বিচারক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে আপনি ৪ মাযহাবের ওপিনিওনের সাথে ইমাম ইবনে হাযমের মতামত এনেছেন। প্রথমত ইমাম ইবনে হাযম কোনোভাবেই উপরোক্ত ৪ ইমামের সাথে তুলনীয় নয়, না ঐতিহাসিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে, না উম্মাহর কাছে সার্বিকভাবে accepted school of thought হিসেবে। তারপরেও তিনি একজন বড় ইমাম এবং তার ওপিনিওয়ন উদ্ধৃত করা যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে ইমাম ইবনে হাজমের সাথে তুলনীয় (মানে একই লীগের) আরো কয়েকশ ইমামের মতামত এনে স্ট্যাটিস্টিক্যালি দেখা যেতে পারে, ব্রুট মেজরিটি অফ স্কলারস কি ভাবতেন। আর ইমাম আবু হানিফার মতটা চেক করলাম। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতওয়া বলছে যে, নারীকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায়েজ, তবে মাকরুহ তাহরীমি পর্যায়ের গুনাহ হবে যে নিয়োগ দিবে তার। আমি জানি না, আমার তাহকীককৃত তথ্য বেশি সত্য, না আপনার উদ্ধৃত মন্তব্য। দয়া করে আরেকবার যদি এটা মাল্টিপল সোর্স থেকে যাচাই করতেন। ২. নারী শাসনকর্তা নিয়োগ সংক্রান্ত হাদীসটাকে যেভাবে আপনি রাজতান্ত্রিকতার সমালোচনা হিসেবে এনেছেন, তা নিতান্তই খেলো যুক্তি মনে হয়েছে দুই কারণে— প্রথমত, রাজতন্ত্রের সমালোচনার জন্য খোলাখুলি ঐ বিষয়ের অর্থাৎ বংশ পরম্পরায় ক্ষমতা গ্রহণ যে খারাপ, তা না বলে ‍“নারী” বিষয়কে ফোকাস করে হাদীস বললে তো রাসূলকে (সঃ) অর্থহীন জটিলতা সৃষ্টি করে কথা বলার দোষে দুষ্ট করা হবে। দ্বিতীয়ত, আপনার এই মতের স্বপক্ষে কোনো পূর্বোক্ত ফুকাহার মতামত দেয়া হয়নি যে বা যারা হাদীসটাকে এভাবে বুঝেছেন। ৩. কাঠামোগত নির্দেশ বনাম নির্দেশনার যে বিভাজন আপনি করেছেন এমনটার নিদর্শন অবশ্যই শরীয়ায় আছে। যেমন, দাড়িতে খিজাব লাগানো এই পর্যায়ের নির্দেশনা। কিন্তু, আমার প্রশ্ন হলো, নির্দেশ বনাম নির্দেশনার এই তীর ছোড়ার আগে পর্যাপ্ত সতর্কতা নেয়া হয়েছে কিনা? উসুল আল ফিক্বহে যেমন অনেকগুলা টুলস আছে, এবং একটা পর্যায়ে মাকাসিদুশ শরীয়াহও এপ্লাই করা যায়, কিন্তু তার আগের ধাপগুলো পার হয়ে তারপরে। আবার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাকাসিদ এপ্লাই করার জন্যও হাদীসের দলীল লাগে। যেমন, টাকনুর নিচে কাপড় গেলে জাহান্নামে জ্বলবে, এটার মাকাসিদ কেউ কেউ বলেছেন অহংকারের কারণে, যেহেতু ঐ মাকাসিদটাও হাদীস থেকে প্রমাণিত। অর্থাৎ, মাকাসিদ উল্লেখ করলেও তা হাদীস থেকে দলীল দিয়ে। আপনার এই নির্দেশ বনাম নির্দেশনার ক্লাসিফিকেশনটা কয়েক মগ পানি আনার জন্য ফ্লাডগেইট ওপেন করে দেয়ার মত ডেইঞ্জারাস হতে পারে! তবে অবশ্যই কিছু পয়েন্ট আপনি এনেছেন যা যৌক্তিক। যেমন, গৃহাভ্যন্তরে নামাজ উত্তম, কিন্তু মসজিদে যেতে মেয়েদেরকে বারণ করা হয়নি। সেখানে গৃহাভ্যন্তরে নামাজ পড়াকে উতসাহিত করা হলেও বাধ্য করা হয়নি। নির্দেশাত্নক বাক্য ব্যবহৃত হয়নি। আর শিফা বিনতে আবদুল্লাহকে বাজার ব্যবস্থাপক বানানোটা প্রমাণ দেয় যে, যোগ্যতার সাপেক্ষে মেয়েদেরকে পাবলিক ডিউটি দেয়া যাবে। কিন্তু প্রমাণ দেয় না রাষ্ট্রপ্রধান বা বিচারক, সেনা প্রধান হবার।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার মূল লেখাটা পড়েছেন এবং সেটার উপর পর্যালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, সেজন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

একজন মন্তব্যকারীকে আমি এই কথাগুলো বলেছিলাম, ‍“আপনি যদি প্রত্যেককে মুক্তভাবে ছেড়ে দেন তাহলে দেখবেন প্রত্যেকে যার যার পটেনশিয়ালটি অনুসারে তার বিচরণ ও কর্মক্ষেত্রকে একচুয়ালাইজ করবে। সুতরাং নারী-পুরুষের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটাকে স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠতে দিতে হবে। কৃত্রিম সমতা কিংবা আরোপিত বৈষম্য তথা artificial equality or imposed discrimination — এই দুইটাকেই সমানতালে পরিহার করতে হবে।” আপাতত এর বাইরে আর নতুন করে কিছু বলতে চাচ্ছি না। ভাল থাকবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

Riaz Hasan: আপনার ঐ লেখার সাথেও দ্বিমত করেছি উপরে। অবশ্যই আল্লাহ যেন সবাইকে ভাল রাখেন।

Riaz Hasan: (মন্তব্য পার্ট– ২) আর একথা তো গৃহীত অন্তত মূলধারার ইসলামপন্থীদের মধ্যে যে, নারীরা প্রপার এটমোস্ফিয়ারে থেকে যেকোন দায়িত্ব পালন করতে পারবে এক্সেপ্ট রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধান বিচারপতি। কিন্তু আপনার লেখা থেকে এই বিষয়কে খণ্ডন করার মতো শক্তিশালী দলীল বা যুক্তি পাওয়া যায়নি। পূর্বের যুগের বলতে শুধু ইমাম ইবনে হাজমের মত এনেছেন (যাকে উনার আমলের অনেকেও মডার্নিস্ট বলতো, যদিও সেদিকে আমি যাবনা)। বিপরীতে হাজার বছর ধরে লেজিটিম্যাসি পাওয়া মেজর স্কুল অব থট এবং অন্যান্য মেইনস্ট্রীম স্কলারদেরকে হালকা করেছেন। আর দলীল বলতে, নির্দেশ বনাম নির্দেশনা তত্ত্ব পেশ করেছেন যদিও সেটা রাষ্ট্রপ্রধান বা বিচারক হবার জন্য কোনো শক্তিশালী দলীল বা যুক্তি আনতে পারেনি। সাবার রাণীর বিষয় এনেছেন, যেখানে কুরআন বলেছে যে সাবার রাণী কুফরীর উপর ছিলেন এবং সুলাইমানের (আঃ) দাওয়াতে পরে ঈমান আনেন। তারপরেও সাবার রাণীকে ইসলাম গ্রহণের আগে গ্লোরিফাই করা হইছে কীভাবে তা বোধগম্য নয়? আবার যদিও তার এক দুইটা কথোপকথন মেনে নিলাম তর্কের খাতিরে যে বুদ্ধিদীপ্ত ছিল, তার দ্বারা কি ক্লিয়ার কাট কোনো রুলিং নালিফাই করা যায় উসুল আল ফিকহে? এক দুইটা বাক্যে বুদ্ধিদীপ্ত এন্সার দেয়া আর পুরা জাতির দায়িত্ব ঘাড়ে নেয়া তো সমান কথা না। না যুক্তিতে বুদ্ধিতে সমান, না কিয়াস হবার মত এনালজি? তাছাড়াও সাবার রাণীর কথাগুলা আবার পড়লাম এই মন্তব্য লেখার সময়। আয়াতগুলো থেকে কীভাবে আপনি এটা পেলেন যে, আল্লাহ স্বয়ং সাবার রাণীর শাসনযোগ্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছেন?!

শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রাঃ) বাজার ব্যবস্থাপক হওয়াটাও রাষ্ট্রপ্রধান বা বিচারক হবার স্বপক্ষে দলীল নয়। এটা বড়জোর পাবলিক ডিউটি দেয়ার দলীল (except রাষ্ট্রপ্রধান বা কাজী)।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *