১. নারীবাদীরা অসহিষ্ণু। অশ্লীল গালিবাজ। যে কোনো উপায়ে বিরুদ্ধ মতের টুঁটি চেপে ধরতে চায়। তারা cancel culture-এ বিশ্বাসী। জোর করে মানুষকে তাদের মত গ্রহণ করতে বাধ্য করে। লিবারালিজমের কথা বললেও তারা চরমমাত্রায় ডগমেটিক এন্ড ফ্যানাটিক ইললিবারেল।
আমি মানুষের কথা বলার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এমনকি সেকথা ভুল হলেও। চিন্তার স্বাধীনতা নিয়ে আমি বই লিখেছি। ‘কথা বলতে দিতে হবে | চাই প্রশ্ন করার অধিকার’ – এই শ্লোগান কভার ফটো হিসেবে আমার ফেইসবুক ওয়ালে টানিয়ে রেখেছি গত চৌদ্দ বছর।
২. নারীবাদী বয়ান অনুসারে মানব সভ্যতার ইতিহাস একাট্টাভাবে নারীর ওপর পুরুষের অন্যায়, জুলুম ও নিবর্তনের ইতিহাস।
আমি এমনটা মনে করি না। আমি মনে করি, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যেসব নেতিবাচক দ্বন্দ্ব ও বিরোধ আমরা দেখতে পাই তা মূলত নৈতিক বা নীতিগত।
ফিজিকেল কোনো শ্রেণী একচেটিয়াভাবে ভাল ছিল বা খারাপ ছিল, সুবিধাপ্রাপ্ত ছিল বা নির্যাতিত ছিল, এমনটি আমরা দেখতে পাই না।
আমি মনে করি, খোদা বা প্রকৃতি যাকে যে কাজে যেভাবে বানিয়েছে, সেটাই পারফেক্ট। এই প্রকৃতিগত ভারসাম্যকে বজায় রাখাই হচ্ছে ন্যায় বা জাস্টিস।
দীর্ঘ ৩০ বছর ফিলসফি, বিশেষ করে অধিবিদ্যা ও জ্ঞানবিদ্যা পড়িয়ে আমি বুঝেছি, physics determines metaphysics, and metaphysics determines rest of the things।
তাই নারীাবদী সোশ্যাল কনস্ট্রাকশান থিওরিকে আমি কখনোই সিরিয়াসলি নেইনি। একটা বাউন্ডারির ভিতর, একটা সুনির্দিষ্ট সীমিত পরিসরে আপনি কিছুটা অদলবদল করতে পারলেও (সোশ্যাল) ইঞ্জিনিয়ারিং করে কোনো এনটিটির মধ্যে বেসিক বা ম্যাক্রো লেভেলের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবেন না। জোর করে কোনো কিছুকে আপনি ভাঙতে পারবেন, কিন্তু রেডিকেলি রিকন্সট্রাক্ট করতে পারবেন না।
৩. নারীবাদ পরিবারপ্রথার বিরোধী।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, বিয়ে ও পরিবার গঠনের মাধ্যমে মানুষ সেক্সুয়াল কনফ্লিক্টকে একটা ম্যানেইজমেন্টের মধ্যে নিয়ে এসে সেক্সুয়াল ভায়োলেন্সকে মিনিমাইজ করেছে।
বিয়ের সকল প্রয়োজনকে নারীবাদ আন্দোলেন আউটসোর্সিং-এর আওতায় নিয়ে এসছে। পরিবার ব্যবস্থাকে তারা নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে বাধা বলে মনে করে। অথচ, পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি মূলত শিশু ও নারীস্বার্থ সংশ্লিষ্ট একটা বিষয়।
৪. নারীবাদ নারীত্বকে (ফেমিনিনিটি) অবমাননাকর বলে মনে করে। নারীকে পুরুষসদৃশ বানাতে চায়।
সামাজিক জনপরিসর ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় নারীবাদ ডমিনেন্ট হওয়ার কারণে নারীরা তাদের সহজাত নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে গিলটি ফিল করে। বিব্রতবোধ করে। লজ্জিত হয়। এর ফলস্বরূপ সেগুলোকে যথাসম্ভব লুকাতে চায়। ফিমেইল পারসনদেরকে তাদের ইনহারেন্ট ফেমিনিনিটি বা ফিমেইলনেস নিয়ে এশেইমড করা, ভাবতে পারছেন, এইটা কত বড় একটা জুলুম?
৫. নারীবাদ মাতৃত্বকে ঘৃণা করে, এটলিস্ট বোঝা বলে মনে করে এই প্রকৃতিপ্রদত্ত দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নিদেনপক্ষে একে যথাসম্ভব ডিলে এবং মিনিমাইজ করার চেষ্টা করে।
ক্ষমতায়িত নারীর ক্যারিয়ারে প্রধান বাধা মাতৃত্ব। তাই তারা মা হওয়াটাকে যথাসম্ভব ডিলে করাতে চায়। অথচ, বিলম্বমাতৃত্বজনিত শারীরিক ও মানসিক সব কষ্ট তাকে একাই পোহাতে হয়। নারীবাদ যে একটা বিধ্বংসী ফাঁদ, এটি বুঝতে মেয়েদের অনেক দেরি হয়ে যায়। এ’জন্যই দেখবেন, অল্পবয়েসী নারীদের মধ্যে নারীবাদ যতটা প্রিয়, পরিণত বয়েসী নারীদের মধ্যে নারীবাদ ততটা প্রিয় নয়।
৬. নারীবাদ জনশক্তির জন্য বড় ধরনের হুমকী।
মাতৃত্ববিমুখ হওয়ার কারণে নারীবাদের প্রভাবে দেশে দেশে তৈরী হয়েছে আশঙ্কাজনক বার্থ গ্যাপ। উন্নত বিশ্ব পারিবারিক মূল্যবোধে দেউলিয়া রাষ্ট্রগুলো জনসংখ্যার এই গ্যাপ কোনোক্রমেই পূরণ করতে পারছে না। এমনকি রিপ্লেসমেন্ট রেইটের উপরেও নিতে পারছে না। কোনো ইনসেন্টিভেই কাজ হচ্ছে না। এই দৃষ্টিতে নারীবাদ মানব সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
৭. নারীবাদীরা সমাজের চেয়ে রাষ্ট্রকে বড় করে দেখে। মূল্যবোধ উন্নয়নের চেয়ে তারা আইনকে প্রাধান্য দেয়। যুক্তির চেয়ে শক্তির ওপর বেশি ভরসা করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেখানে ধর্ষণবিরোধী আইন যত কড়া, লক্ষ্য করলে দেখবেন, সেখানকার পরিবেশ তত বেশি ধর্ষণ-উপযোগী। প্রলুব্ধকর। শক্তিশালী পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার পরিবর্তে নারীবাদীদের ফোকাস থাকে নিত্যনতুন আইন তৈরীর ওপর।
আইন এবং আইনের প্রয়োগ অপরিহার্য হওয়া সত্বেও সামাজিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সম্পূরক ব্যবস্থা ছাড়া নিছক আইনী ব্যবস্থা কখনো ফলপ্রসূ হয় না। অভিজ্ঞতা আমাদেরকে এমনটাই বলে।
নারীবাদ প্রভাবিত রাষ্ট্রে ব্যক্তি সরাসরি রাষ্ট্রের সাথে কানেক্টেড থাকে। এতে করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ওপর অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি হয়। অথচ বিরোধমিমাংসা এবং অপকর্মকে ঠেকানোর জন্য রাষ্ট্রীয় আইনের চেয়েও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর সংস্থা হচ্ছে পরিবার ও সমাজ। অতিগুরুত্বপূর্ণ এই দুই প্রতিষ্ঠানকে নারীবাদ অবমূল্যায়ন করে।
৮. প্রকৃতিবিরুদ্ধ ধ্যানধারণা পোষণ ও জীবনযাপনের কারণে নারীবাদ প্রভাবিত নারীরা অধিক হারে মানসিক রোগ ও জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
নারী স্বাধীনতা নারীর ওপর অকল্পনীয় মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ইতিহাসবিশ্রুত স্বাধীনতা পেয়েও আজকাল অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। দেশে দেশে। এত স্বাধীনতা পেয়েও তারা নিজেদেরকে সুখী মনে করছে না। subjective well-being নিয়ে equality paradox-এর এই নির্মম বাস্তবতাগুলোকে নারীবাদীরা যথাসম্ভব চেপে যায়। পারলে অস্বীকার করার চেষ্টা করে।
৯. নারীবাদ যৌন যথেচ্ছাচারে (পার্ভার্শান) বিশ্বাসী।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, গত ৫০-৬০ বছরে যৌনমিলনের হার এবং যৌনতৃপ্তি কমছেই তো কমছে। অবশ্য, যৌনতার প্রকৃতিসঙ্গত ও সুস্থ চর্চা যেখানে যত কম সেখানে যৌনবিকৃতির নানা অনুষঙ্গ তত বেশি হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
মানব সভ্যতার শুরু থেকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে নারীদের যৌন আচরণ হিসেবে নারী-সমকামিতার অস্তিত্ব ছিল না। ফিমেইল মাস্টারবেশনও ছিল না এতটা ব্যাপক ও স্বীকৃত যৌনাচার।
ফিমেইল মাস্টারবেশন নেশার মতো। এতে সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমলেও নারী যৌনতার অপরিহার্য অনুষঙ্গ তার ইমোশনাল কানেক্টেডনেস তথা আবেগগত চাহিদা পূরণ হয় না। ফলে ইমিডিয়েট আফটার একটা সর্বগ্রাসী সঙ্গশূন্যতা তাকে পেয়ে বসে। এটি তার মধ্যে হতাশা তৈরী করে। এজন্য দেখবেন, যত বেশি নারীবাদী নারী, তার ছেলেবন্ধুর সংখ্যাও ততবেশি। সেক্সুয়াল প্রমিসকিউটি তার মধ্যে তৈরী করে বঞ্চনাবোধ ও নিঃসঙ্গতা।
চুরি সব সমাজেই ছিল। কিন্তু কোনো সমাজ ও রাষ্ট্র চুরিকে কারো জন্য এমপাওয়ারিং বা গৌরবজনক কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। যৌনতা নিয়ে প্রত্যেক সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা ধরনের সমস্যা সব সময়েই ছিল। সেসব সমস্যা মেটানোরও নির্দিষ্ট উপায় ছিল। কিন্তু যৌন যথেচ্ছাচার ও বিকৃতিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার এমন ব্যবস্থা অতীতে কখনোই ছিল না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কোনো সূত্র বা নিয়মের কোনো বিরুদ্ধ-উদাহরণ থাকতে পারে না। এর বিপরীতে, সমাজে সব কিছুতে সব সময়ে একাধিক স্ট্রীম থাকে। বিরুদ্ধ উদাহরণ ছাড়া কোনো সোশ্যাল এনটিটি থাকে না। তাই, সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোনেকিছুকে ডিফাইন করা হয় এর প্রধান ধারাকে অনুসরণ করে।
মানে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষেরা সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে কী করেছে, সেটার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়কে কী বলা হবে। কিছু বিচ্ছিন্ন উদাহরণ দিয়ে সমাজবিজ্ঞানের কোনো আলাপ হয় না।
১০. নারীবাদ ধর্মবিরোধী।
নারীবাদের দৃষ্টিতে ধর্মমাত্রই পুরুষের রচনা, ঈশ্বরের নামে পুরুষতন্ত্রের রটনা। এটি এতটাই প্রকাশ্য ও দালিলিক বিষয়, এ’ ব্যাপারে ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
১১. নারীবাদ পুরুষবিদ্বেষী।
পুরুষ, পৌরুষত্ব, পুরুষসুলভ যত বৈশিষ্ট্য, তার সবগুলোকেই নারীবাদীরা টক্সিক বলে মনে করে। জীবনে আপনি টক্সিক ম্যাসকিউলিনিটি কথাটা খুব সম্ভবত অনেকবার শুনেছেন। টক্সিক ফেমিনিনিটি কথাটা বোধহয় একবারও শোনেন নাই। নারীবাদ চায় পুরুষেরা নারীদের মতো হোক, আর নারীরা হোক পুরুষের মতো। পুরাই উল্টাপাল্টা ব্যবস্থা।
১২. নারীবাদ একচোখা মতবাদ।
নারীবাদীরা নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের কথাই শুধু বলে। পুরুষরাও যে বৈষম্যের শিকার হতে পারে, তা তারা মানতে নারাজ। কোনো নারীবাদীর কোনো লেখা ও বক্তব্যে আমি পুরুষের বিরুদ্ধে বৈষম্য নিয়ে তারা কিছু বলেছেন বা লিখেছেন এমন কিছু পাই নাই। পুরুষের প্রতি ১৩টা উল্লেখযোগ্য বৈষম্য নিয়ে আমি একটা পোস্টার করেছি।
১৩. নারীবাদীদের কথাবার্তায় মিল নাই। তাদের যেসব শ্লোগান ও রেটরিকের ব্যাপারে তাদের মধ্যে মিল দেখা যায়, যেমন সমতা, সে’গুলোর ইন্টারপ্রিটেশন এবং আন্ডারস্ট্যান্ডিং নিয়ে তাদের মধ্যে মতৈক্য নাই।
বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নাই বিধায় খুব সংক্ষেপে সমতা নিয়ে এখানে একটু বলি। Equality of opportunity এবং equality of outcome, এই দুই ধাঁচের equality-কে তো আপনি একইসাথে এনফোর্স করতে পারবেন না। পদ্ধতিগতভাবেই এটি অসম্ভব। অতএব, সমতার এতদুভয় ধারণার মধ্যে আপনি কোনটাকে চান? – এ’ধরনের প্রশ্নে তারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
তারা বোকার মতো মনে করে, দুইটা ভিন্ন গঠনের এনটিটিকে একই সুযোগ দিলে তারা একই ফলাফল দিবে। তাদের বোকামিপূর্ণ কথা যদি সঠিক হতো, তাহলে একই সূর্যের নিচে একই মাটির উপরে একসাথে পাশাপাশি বেড়ে উঠা সব গাছ সমান হয়ে উঠতো, একই ফল দিতো…!
১৪. নারীবাদীরা প্রচুর মিথ্যা কথা বলে।
কিছু লোকাল বাট জেনুইন ইনজাস্টিস এবং সামাজিক অসঙ্গতিকে হাইলাইট করে তারা সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে ইয়াং মেয়েদেরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। উদাহরণ হিসেবে তথাকথিত জেন্ডার পে গ্যাপের কথা বলা যায়। জেন্ডার পে গ্যাপ বলতে আপনি কী বুঝেন?
কাঙালীনী সুফিয়াকে নিয়ে তৈরী করা ভিডিওর মতো, “সুফিয়া, তুমি পাবা ৮০ টাকা। আবু সুফিয়ান, তুমি নাও ১০০ টাকা” জেন্ডার পে গ্যাপ বলতে এমনটা বোঝেন? যদি তাই মনে করেন তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। এখানে আর বিস্তারিত বললাম না।
১৫. নারীবাদ নৈরাজ্যবাদের সমর্থক। দার্শনিক তত্ত্ব হিসেবে প্রতিক্রিয়াশীল ও দুর্বল।
কিছু মতবাদ আছে যা অন্যকোনো মতবাদের প্রতিক্রিয়া বা সমালোচনা হিসেবে আলোচনার যোগ্য হলেও একটা ইনডিপেন্ডেন্ট থিওরি হিসেবে আলোচনার ময়দানে টিকে থাকতে পারে না। তেমনই একটা মতবাদ হলো নারীবাদ। এটি একটি পরজীবী মতবাদ। সেজন্য একে এমনকি দুর্বলও বলা যাবে না। কারণ, দুর্বল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্যও কোনো থিওরি বা কনসেপ্টের মধ্যে জগত ও জীবনের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে সেইটার কিছু না কিছু বক্তব্য থাকতে হবে।
দর্শনের প্রধান আলোচ্য বিষয়সমূহের কোনোটি নিয়েই নারীবাদের কোনো স্বাধীন ও স্বতন্ত্র বক্তব্য নাই। বরং প্রতিষ্ঠিত দার্শনিক মতগুলোর ব্যাপারে নারীবাদী কিছু দৃষ্টিভঙ্গী ও ব্যাখ্যা আছে। সিরিয়াস ফিলসফিকাল এনালাইসিস আর ডিসকাসশনে সেসব গাজোয়ারি বয়ান আর বিবৃতি কোনো পাত্তাই পাবে না। আই চেলেঞ্জ।
১৬. নারীবাদ নারী নামক এই প্রপঞ্চটিকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না।
নারীবাদ নারীর স্বার্থ নিয়ে কাজ করে। অথচ সে নারীর সংজ্ঞায়ন করতে অপারগ। ‘what is a woman?’ এই প্রশ্ন নিয়ে ম্যাট ওয়ালেশ নারীবাদীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কোনো সুস্পষ্ট ও সদুত্তর তিনি পান নাই। এ’নিয়ে তার ডকুমেন্টারিটা এখনকার সময়ে সবচেয়ে বেশি ভিউড ডকুমেন্টারি। চেক করে দেখতে পারেন।
১৭. নারীবাদ একটা ক্ষতিকর পাশ্চাত্যমতবাদ।
দিনরাত যারা বাঙালি জাতীয়তার কথা বলে, আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো তারাই দেখি নারীবাদের ঘোরতর সমর্থক। অথচ, হালনাগাদের পাশ্চাত্য নারীবাদ মোটাদাগে এ’দেশীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের বিরোধী।
লিবারেলিজম, সেকুলারিজম, মেটেরিয়ালিজম, ক্যাপিটালিজম ও কমুনিজম এই পাঁচ অপমতবাদের যৌথ প্রডাকশান হলো ফেমিনিজম।
নৃতাত্ত্বিকভাবে কেউ যদি বাঙালি হয়ে থাকেন, হোন তিনি মুসলিম, সনাতনী কিংবা বৌদ্ধ তার পক্ষে এ’ দেশীয় ঐতিহ্য, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী এই পাশ্চাত্য মতবাদকে গ্রহণ করা কীভাবে সম্ভবপর হতে পারে?
আমার সাম্প্রতিক পোস্টে করা তাদের মন্তব্য, তাদের পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে দেয়া কাউন্টার-পোস্ট, তাদের বেহেভিয়ার এবং
তাদের লিজেন্ডারি ফিগারদের লেখা ও বক্তব্যের মাধ্যমে নারীবাদের বিরুদ্ধে আমি যতগুলো অভিযোগ উত্থাপন করেছি তারা নিজেরাই সেগুলোকে সঠিক প্রমাণ করেছে।
নারীবাদ এমনভাবে আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র সবকিছুতে এমনভাবে গেড়ে বসেছে, তাদের অগ্রযাত্রা রোধ করা যে কারো পক্ষে অসম্ভব। আমি সে চেষ্টা করছি না। আপনারা জানেন, ক্লাসিকাল সোশ্যাল ভেল্যুজের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য আমি ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ (সিএসসিএস) প্রতিষ্ঠা করেছি সেই ২০০১ সালে। নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে এ’পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি নিরবচ্ছিন্নভাবে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিতে যারা বিশ্বাসী, অথচ না বুঝে বা ভুল বুঝে নারীবাদ দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন, তাদের কাছে আমি নারীবাদকে এক্সপৌজ করতে চাচ্ছি।
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য আপনার নারীবাদ সমর্থক হওয়ার দরকার নাই। শব্দের মধ্যে অনেক রাজনীতি থাকে। আমার ছেলে-মেয়েরা, তোমরা বোঝার চেষ্টা করো। নিরপেক্ষভাবে খোঁজ খবর নাও। যা করতে চাও, করো; কিন্তু বুঝেশুনে করো।
নারীবাদী স্বাধীনতা হলো নগদ মার্শমেলো। পারিবারিক বন্ধন হলো ডিলেইড গ্রাটিফিকেশনের মাধ্যমে পাওয়া ডাবল মার্শমেলো। তুমি কি ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’ এই নীতি(?) মেনে চলবা? নাকি হিউম্যান বন্ডিংয়ের টেকসই সুখ ও শান্তি অর্জনের চেষ্টা করবা? ভেবে দেখো। জীবন তোমার।
তোমার পিতৃতুল্য একজন শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষক
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক
এসই-১৫, দক্ষিণ ক্যাম্পাস, চবি।
One Comment