প্রতিদিনকার মতো এসবি ব্লগ খুলে কিছু পোস্টে নজর বুলিয়ে পেইজটা বন্ধ করার আগে ‘সর্বাধিক পঠিত’ ট্যাবে ক্লিক করে দেখলাম। সকাল পৌনে দশটা। বাংলাদেশ সময়। মোট ২০টা পোস্ট আছে ফার্স্ট পেইজে। তারমধ্যে ৮টি হলো নারীর অনাকাঙ্খিত যৌনতা সংক্রান্ত। বিষয়টা অন্য সময়েও খেয়াল করেছি। ইসলামপন্থীরা, বিশেষ করে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের বিশেষজ্ঞরা নারীর যৌনতা বিষয়ক কোনো ম্যটেরিয়্যাল পেলে ‘পরিশুদ্ধি’ ও ‘নিন্দা’র জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুঃখিত, কাউকে হেয় বা আহত করার জন্য এটি বলিনি। এটি আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ। যৌনতা বিষয়ে দৃশ্যমান এই অতি সংবেদনশীলতা দেখে ভাবতে থাকি, বাম/নাস্তিকরা কেন আমাদের মতো ইসলামিস্টদেরকে ‘সেক্সিস্ট’ বলে গালি দেয়!?

যৌনতা বিষয়ে কনসার্নড হওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক। কোরআন শরীফেও এসব বিষয়ে সাবলীলভাবে প্রত্যক্ষ অর্থবোধক শব্দাবলী ব্যবহৃত হয়েছে। তাই প্রসঙ্গক্রমে সেসব নিয়ে কথা বলা বা আলোচনা করার মধ্যে দোষের কিছু নাই। সমস্যা বা আপত্তির বিষয় হলো অনাকাঙ্খিত বা অননুমোদিত যৌনতা বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে এক ধরনের বিকৃত যৌন চর্চা করার প্রবণতা।

ব্লগে নানা বিষয়ে পোস্ট আসে। যার যেটি ভালো লাগে। প্রত্যেক পত্রিকার যেমন সম্পাদকীয় নীতি থাকে তেমনি প্রতিটা ব্লগেরও কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। সামহোয়্যারইন ব্লগে যে হারে ১৮+ ধরনের পোস্ট থাকে এসবি ব্লগে তা থাকে না। যে কারণে আমি ও আমার মতো অনেক শালীনতাপন্থী ব্লগার বর্তমানে এসবি ব্লগের নিয়মিত, বলা যায়, পারিবারিক ব্লগার। আমার ‘আন্ডারম্যাট্রিক’ (এখনো এসএসসির রেজাল্ট বের হয়নি, তাই) মেয়েটি যখন ল্যাপটপে বসে দেখে, সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলোর ফার্স্ট পেইজের এক-তৃতীয়াংশ পোস্ট হলো মানবজমিন টাইপের ট্যাবলয়েড পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের মতো মূলত বাণিজ্যিক ধরনের লেখা, তখন আমার কেমন লাগতে পারে ভাবুন তো!

আসলে যৌনতা নিয়ে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে এক ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা বা ধারা ঐতিহ্যের নামে প্রভাব বিস্তার করে আছে। আমার দৃষ্টিতে কওমী ও সরকারী মাদ্রাসা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগসমূহ হলো প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাবলীগ জামায়াত, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্রী সংস্থা, হিযবুত তাহরীর ইত্যাদি হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রকাশ্য সিলেবাস কোরআন-হাদীসভিত্তিক হলেও পরস্পর হতে ভিন্নমুখী। কিছু বিষয়ে এই সবগুলো প্রতিষ্ঠানের অভিন্ন অপ্রকাশ্য বা হিডেন সিলেবাস রয়েছে। যৌনতা বিষয়ে অতি সংবেদনশীলতার নামে নারীবিরোধী নীতির ব্যাপারে ইনারা সবাই স্পষ্টতই একমত। উনাদের নারী বিষয়ক বক্তব্য কী হবে তা মুখস্ত বলে দেয়া যায়!?

যৌনতা হলো খারাপ, অন্তত ক্ষতিকর! তাই, এ কাজ যত কম করা যায়, যত দমন করা যায়, যত দমিয়ে রাখা বা ঠেকানো যায় – ততই ভালো! যৌনতা হলো মেয়েদের প্রথম বৈশিষ্ট্য! মুসলিম নারীর প্রথম (এবং একমাত্র?) দায়িত্ব হলো ‘নৈতিক পবিত্রতা’ তথা যৌন অবদমন! নিজেকে ‘বাঁচানো’! এ-ই হলো ইসলামিস্টদের যৌনতা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি। আমার অভিজ্ঞতায়।

এ জন্য দেখি প্রায় সকল পর্দানশীন নারী এমন আচরণ করেন যাতে মনে হয় উনারা পুরুষমাত্রকেই সম্ভাব্য রেপিস্ট, অন্ততপক্ষে পটেনশিয়াল পার্টনার মনে করেন!? এ ধরনের সদাসতর্ক তথা অতি সংবেদনশীল নারীদেরকে ইসলামিস্ট পুরুষরা বেশ পছন্দ করেন। তাদের আলোচনার এটিই মূল সূর।

অনেক আগে কৃষণ চন্দরের একটা ছোট গল্প পড়েছিলাম। কাচরা বাবা। অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সাধু বাবা সামাজিক অভিযান চালাচ্ছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে বুঝাচ্ছেন। অশ্লীল বই-পুস্তক পোড়াচ্ছেন। একবার এ রকমের এক অগ্নি-উৎসবে তাঁর এক তরুণ শিষ্য এক নারীর স্নানের দৃশ্য সম্বলিত একটা বই দেখে সেটি হস্তগত করার খুব লোভ করলো। সে পোড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে বইটা খুঁজছে। কোনো হদিস পাচ্ছে না। হঠাৎ সে দেখলো সাঁই বাবার ঝোলার মধ্যে কিছু একটা ঝুলছে। ঠিক যেন সে বইটার মতো সাইজ!

খ্রীস্টান রোববারে গীর্জায় গিয়ে সমবেত প্রার্থনার আগে একটা ছোট রুমে গিয়ে পাদ্রীর কাছে গত সপ্তাহে নিজ কৃত গুনাহের বর্ণনা দেয়। এ রকমের এক কনফেশনে এক লোক বলছে, ফাদার, আমি ভীষণ অন্যায় করে ফেলেছি! আমি পতিতার কাছে গিয়েছি! তখন পাদ্রী জিজ্ঞাসা করছেন, তুমি কোন পতিতার কাছে গিয়েছো? অমুকের কাছে? না। অমুকের কাছে? না। অমুকের কাছে? অতঃপর পাদ্রী বললেন, যাও, বেঞ্চে গিয়ে বসো। প্রার্থনা শেষে গীর্জা থেকে বের হওয়ার সময় সে লোক ভাবলো– যাক, আরো কিছুর সন্ধান পাওয়া গেল!!!

আমাদের তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বশীল হামিদ হোসাইন আজাদ ভাই বলেছিলেন– দেখেন, ম্যডাম কতটুকু বেপর্দা বা মেয়েটি কতটুকু বেপর্দা এটি দেখতে গিয়েই সবচেয়ে বেশি পর্দা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। আমার এক ভাগ্নি বললো– মামা, একটা ছেলে আমাকে ডিস্টার্ব করে। কী করবো? তাকে বললাম– তুমি যদি ছেলেটাকে আসলেই অপছন্দ করো, তাহলে তাকে যে তুমি পছন্দ করো না সেটিও তুমি তাকে বলবে না। কারণ, না বলাটাও এক ধরনের বলা, যা হ্যাঁ হয়ে যাওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়!!

এসবি ব্লগের এসব ‘হিট’ পোস্টের প্রতিপাদ্য যে উল্টাপাল্টা, খারাপ মেয়েরা বা মেয়েদের যে খারাপ দিক– সেসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার মধ্যে বিষয়টা উপভোগ করার এক ধরনের অবচেতন পর্যায়ের (বিকৃত!) আনন্দ ও সুখ আছে। যৌনতা জীবনের অংশ। এ ব্যাপারে সহনশীলতা থাকা দরকার। অবদমন অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পাশ্চাত্যের বল্গাহীন ভোগবাদিতা আর প্রাচ্যের অযৌক্তিক অবদমন – এ দুই চরমপন্থার মধ্যবর্তী ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের গড়ে তুলতে হবে।

জানি না, কোন নিয়মে সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলোকে নির্বাচন করা হয়। এসবি ব্লগের পরিবেশকে শালীন রাখার জন্য যৌনতা বিষয়ক নেতিবাচক পোস্টগুলোর আধিক্যকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি মনে করছি।

এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

মেধাবিকাশ: হুজুরদের ব্যপারে একটু বেশি বলা হলেও একমত। আমাদের ব্লগেও আইসেন।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আরো বলার ছিল…! আমি চিটাগাংয়ের লোক। বাড়ির আশেপাশে সব বড় বড় নামকরা সরকারী ও বেসরকারী মাদ্রাসা। আলোচ্য বিষয়ে সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে জানা আছে। বুদ্ধিমানদের অল্প স্বল্প বললেই হয়! যখন আমরা বুঝি যে ব্যাপারটা আসলেই কী, তখন অযথা বিতর্ক বাড়িয়ে লাভ কি? মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

শিশির ভেজা ভোর: সবই আলোচনা করতে হবে তবে দেখতে হবে সেটা যেন বাড়তি না হয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আলোচনা হলো ইতিবাচক পদ্ধতি। আর চর্চা হলো, বলা যায়, নেতিবাচক ব্যাপার। তাই, আলোচনা হতে পারে, চর্চা নয়।

বিবি খাদিজা: “এসবি ব্লগের এসব ‘হিট’ পোস্টের প্রতিপাদ্য যে উল্টাপাল্টা, খারাপ মেয়েরা বা মেয়েদের যে খারাপ দিক– সেসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার মধ্যে বিষয়টা উপভোগ করার এক ধরনের অবচেতন পর্যায়ের (বিকৃত!) আনন্দ ও সুখ আছে। যৌনতা জীবনের অংশ। এ ব্যাপারে সহনশীলতা থাকা দরকার। অবদমন অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পাশ্চাত্যের বল্গাহীন ভোগবাদিতা আর প্রাচ্যের অযৌক্তিক অবদমন – এ দুই চরমপন্থার মধ্যবর্তী ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের গড়ে তুলতে হবে।”

I appreciate your brilliant presentation.

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ভোগবাদিতার খারাপ দিক সম্পর্কে আমরা বেশ সোচ্চার । কিন্তু প্রাচ্যের অযৌক্তিক ও অমানবিক অবদমনও যে সমপর্যায়ের ভুল ও বাতিলপন্থা – সেটি আমরা প্রায়শই এড়িয়ে যাই। অ-স্বাভাবিক অবদমনের কারণে ব্যক্তির অবচেতনে এক ধরনের মাত্রাতিরিক্ত সংবেদনশীলতার (সেনসিটিভিটি) সৃষ্টি হয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং: sex is the important part of the human life and society but it is not acceptable without marriage. education on sex is very necessary and important for human life.

কিছুদিন ধরে ছাত্রীসংস্থা, নিকাব ও বিয়ে নিয়ে ভাবছি। ছাত্রীসংস্থাকে আমার কাছে একটি অথর্ব সংগঠন মনে হয়। নিকাব একটি অযৌক্তিক বাড়াবাড়ি। আর শিবির নেতাদের তাড়াতাড়ি বিয়েতে অনুৎসাহ নিয়ে ভাবছি। স্যারের মতামত আশা করছি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: Look, whenever the very word ‘sex’ is uttered, most of the Islamists do feel some sort of extra-sensitivity. Isn’t it? Why? Whatever the cause, it is not normal, not natural, not Islamic! The holy Quran and the great Hadith collection has no ‘private section’. Amongst 5 hadith on azal (a primitive birth control system), 3 are narrated by the mother to her son that his father did it to her! This is only one example of sexuality in Islam!

অভিযাত্রিক: “যৌনতা হলো খারাপ, অন্তত ক্ষতিকর! তাই, এ কাজ যত কম করা যায়, যত দমন করা যায়, যত দমিয়ে রাখা বা ঠেকানো যায় – ততই ভালো! যৌনতা হলো মেয়েদের প্রথম বৈশিষ্ট্য! মুসলিম নারীর প্রথম (এবং একমাত্র?) দায়িত্ব হলো ‘নৈতিক পবিত্রতা’ তথা যৌন অবদমন! নিজেকে ‘বাঁচানো’!”

চমৎকার পর্যবেক্ষণ। সত্যি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলামী সংগঠনসমূহের নারী সদস্যগণ সাধারণ নারীদের যতটা সতীত্ব রক্ষার কথা বলেন, তার সামান্যতমও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার অপরিহার্য দায়িত্বের কথাটা বলেন না। ইসলামী ছাত্রীসংস্থার ঘোষিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে ইকামতে দ্বীনের বিষয় নাই। ভাবখানা এমন যেন নারীরা হলো ইকামতে দ্বীনের সহায়ক শক্তি, সমমর্যাদা ও দায়িত্বের মূল শক্তি নয়! তাই তাদের দায়িত্ব হলো পুরুষকে সাহায্য করা!

যে কোনো মানুষই হয়তো পুরুষ নয়তো নারী। শুধু মানুষ তো নাই। তাই মানুষ হলো সে, যে নিজেকে প্রথমেই পুরুষ বা নারী মনে করে না। বরং তার মনুষ্যত্ব, মানবিক দায়িত্ব ও মর্যাদা তথা ব্যক্তিত্বকেই সর্বদা সর্বোচ্চ স্থান দেয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

অভিযাত্রিক: “যে কোনো মানুষই হয়তো পুরুষ নয়তো নারী।”

এই কথাটা যদি বুঝে আসতো তাহলে তো আর কথাই ছিলো না।

এ সমস্যার একটা কারণ হলো, আমাদের উপমহাদেশীয় মানসিকতায় ব্যাক্তিগত আর সামষ্টিক বিষয়ের পার্থক্যের সীমারেখার অভাব। বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশীয় সীমাবদ্ধতা থেকে বেরুতে পারেনি কখনো।

শায়খ মনযুর আহমেদ নোমানীর একটা বই পড়ছিলাম শায়খ মওদুদী সম্পর্কে। জানার জন্য পড়া শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত বিনোদনে পর্যবসিত হয়। তিনি মওদুদীর দাড়ি এবং চুল নিয়ে যে পরিমাণ বিচলিত হয়েছেন তাতে আমি শুধু মনে মনে বলেছি, আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন। এভাবে বিভিন্ন বিষয় জমে জমে দ্বীন পালনের সাথে ব্যাক্তিগত জীবনে ‘পুলিশিং’ করা একটা অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ হয়ে দাড়ায়। আর পুলিশিং কর্মকাণ্ডের জন্য নারী সবসময় সবখানে গুরুত্বপূর্ণ ‘একটা’ উপাদান।

এবং এর ফলাফল হলো, অবদমনের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া। যা কহতব্য নহে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কোনো লেখায় আমি এর একটা নাম দিয়েছি– সেক্যুলার সুন্নাহচর্চা, খেয়াল করে থাকবেন হয়তো। বর্তমান সৌদী আলেমরাসহ আমাদের এই তথাকথিত আলেম সমাজ ও ইসলামপ্রিয় জনগণ এই সেক্যুলার সুন্নাহচর্চার রোগে ভুগছেন। জন্ডিস রোগী নাকি সবকিছু হলুদ রংয়ের দেখে! এসব ধর্মবাদীরা তেমনি সব কিছুতে বিশেষ করে নারীদের যে কোনো প্রসঙ্গে অবৈধতা ও অশ্লীলতা খুঁজে পান। আপনার সুযোগ্য পিতার একজন প্রাক্তন প্রধান সহকারী একদিন নারী প্রসঙ্গে আমাকে এ ভাষায় বললেন, “.. বিষ! নারী বিষের মতো! এদের (মানে, নারীদের) সবকিছুর মধ্যে রয়েছে যৌনতার বিষ!” আমাকে ক্ষমা করবেন! আমার মনে হয়েছে, মাদ্রাসার বাতাস লেগে উনার এ অবস্থা হয়েছে!? পুনরায়, ক্ষমা চাইছি! কারণ, অনেক লেখক-পাঠকই মাদ্রাসার ছাত্র। আমার বাবা ও নানা ইংরেজি লাইনে পড়ার আগে মাদ্রাসায় পড়েছেন। তাঁরা (হয়তোবা) ব্যতিক্রমী ছিলেন। কাউকে আহত করলে মাফ চাইছি।

অভিযাত্রিককে পুনর্মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ।

পার্টিশন৪৭: I appreciate your brilliant presentation.

মডুরা যে কী চায় বলা খুব মুশকিল। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-পাতিনেতাদের নিয়ে সমালোচনা করলেই হলো। নোটিশ। পোস্ট মুছে দেয়া। বহুবার বহুজনের সাথে আমিও বলেছিলাম, কেবলমাত্র অশ্লীলতাকে নিয়ন্ত্রণ করলেই ব্লগ সুন্দর ও পপুলার থাকবে। কে শোনে কার কথা।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যৌনতা বিষয়ে গঠনমূলক ও নির্দোষ আলোচনা এক কথা। আর কোন পারফর্মারের কোথায় কোন গোপন ভিডিও বের হলো ইত্যাদি ধরনের প্রভোকিং ক্যাচাল আরেক কথা। এক সময় সামুতে নিয়মিত লিখতাম। সমাজকর্মী হিসাবে সব সময়ে মূলধারার সাথে থাকার চেষ্টা করি। সেখানকার নাস্তিকতা ও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে আমি ততটা নিগেটিভ হিসাবে দেখিনি। শুধুমাত্র অশ্লীলতার জন্য সামহোয়্যার ছেড়েছি। চাই, এসবি ব্লগটা অন্তত এদিক থেকে সুন্দর থাক। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং: আমাদের ছাত্রীসংগঠন কেমন হওয়া উচিত এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই বা লিখা চাই।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: একটি ইসলামী সংগঠন যেমন হওয়া উচিত, ছাত্রীদের মধ্যকার ইসলামী সংগঠনও তেমনই হওয়া উচিত। জামায়াত বা কোনো মুরুব্বী সংগঠনের অংগসংগঠন হিসাবে নয়। যেমন, ইসলামী ছাত্রশিবির। অন্ততপক্ষে যেমনটা ছিল আমাদের ছাত্রজীবনে। ১৯৯২ পর্যন্ত বলতে পারেন।

ইসলামী সংগঠন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ইতোপূর্বে আমার বিভিন্ন মন্তব্য ও লেখায় আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনার আগ্রহ দেখে অতি সংক্ষেপে তা পুনর্ব্যক্ত করছি–

বাংলাদেশে বর্তমানে ইসলামী সংগঠনের কাঠামো হচ্ছে ট্রি-মডেল। উদাহরণ হিসাবে আমরা যদি জামায়াতকেন্দ্রিক সেটআপকে বিবেচনা করি তাহলে দেখবেন, এর মূল কাণ্ড হচ্ছে জামায়াত। শাখা হচ্ছে শিবির, সংস্থা, চাষী কল্যাণ, শ্রমিক কল্যাণ, আইনজীবী ফোরাম, শিক্ষক পরিষদ ইত্যাদি।

এই পদ্ধতির অসুবিধা হচ্ছে, এতে ক্যাপাবল লিডারশীপ গড়ে উঠে না। কারণ, মূল সংগঠন শাখা সংগঠনে নেতৃত্ব নাযিল করে। শাখাবিশেষ যত শক্তিশালীই হোক না কেন তা মূলকাণ্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। এ রকম কোনো পরিস্থিতিতে বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। যেমন– শিবির বনাম জামায়াতের ১৯৮২ ও ২০১০ সালের গণ্ডগোল, সাঈদীর সাথে জামায়াতের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। ট্রি-মডেল এটি একটি সর্বাত্মকবাদী ব্যবস্থা। এতে মানুষের সৃজনশীল ব্যক্তি উদ্যোগ বিকশিত হয় না। এতে কঠোর আমলাতন্ত্র ডেভেলপ করে। সংগঠনটা একটা চাকরির মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মূল শাখার যে কোনো অসুবিধা এর সব শাখা-প্রশাখাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। যেমনটা যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে এখন হচ্ছে।

আমার প্রস্তাবনা হলো, ফরেস্ট-মডেল। বন-জঙ্গলের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশে, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় সবাই যার যার কাজ করবে। তাহলে, কোরআন-হাদীসে বার বার যে ঐক্য ও একতা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে, তার কী হবে? হ্যাঁ, ঐক্য ও একতা বজায় রাখতে হবে। পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। কিন্তু এই ঐক্যবদ্ধতা স্ব স্ব শ্রেণী, সমাজ (কম্যুনিটি অর্থে), এলাকা ও সংগঠনের (কাঠামোগতভাবে) জন্য প্রযোজ্য। সহযোগী সংগঠনসমূহের সাথে সম্পর্ক হবে নিতান্তই সহযোগীসুলভ, নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে নয়। কারো কোনো কাজ কেউ করে দিলে তারা কখনো সেটা শিখতে পারবে না।

ওয়াতাছিমু বিহাবলিল্লাহি জামিয়া’র মানে একজন অপরজনের হাত ধরা নয়। বরং সবাই মিলে একই আদর্শকে আপহোল্ড করা। একটি বাগানের সব গাছ একই মাটির উপর ও একই আকাশের নিচে পুষ্টি লাভ করে। তেমনি পেশা, এলাকা ও শ্রেণীভিত্তিক সংগঠনগুলো নিজ নিজ পরিমণ্ডলে স্বকীয়তা বজায় রাখবে।

একটি নির্দিষ্ট পেশা, এলাকা বা শ্রেণীতে শুধুমাত্র একটাই ইসলামী সংগঠন থাকবে এমন নয়। একাধিক থাকতে কোনো অসুবিধা নাই।

ইসলামী সংগঠন ও ইসলামী প্রশাসন এক নয়। প্রশাসনে স্বাভাবিকভাবেই সিঙ্গুলারিটি ইজ এ মাস্ট। কোরআন-হাদীসে বর্ণিত সিঙ্গুলারিটিকে এ অর্থে বুঝতে হবে।

বুলেন: “যৌনতা হলো খারাপ, অন্তত ক্ষতিকর! তাই, এ কাজ যত কম করা যায়, যত দমন করা যায়, যত দমিয়ে রাখা বা ঠেকানো যায় – ততই ভালো! যৌনতা হলো মেয়েদের প্রথম বৈশিষ্ট্য! মুসলিম নারীর প্রথম (এবং একমাত্র?) দায়িত্ব হলো ‘নৈতিক পবিত্রতা’ তথা যৌন অবদমন! নিজেকে ‘বাঁচানো’! এ-ই হলো ইসলামিস্টদের যৌনতা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি। আমার অভিজ্ঞতায়।”

কয়েক লাইনে কয়েক দশকের মনমানসিকতা সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের এই মানসিকতা মনে হয় তাবলীগ, ইসলামিস্ট, কওমী, সালাফী সবাইকে এক ঘাটের জল খাওয়ায়!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যৌনতা সম্পর্কে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে বিভিন্ন রকমের প্রান্তিকতার প্রাধান্য দেখা যায়। রাসূল (সা) এবং সাহাবীদের যৌনজীবন পর্যালোচনা করলে সেখানে আমাদের সমাজে বিদ্যমান ‘ধর্মীয়’ অবদমনের চিহ্নও পাওয়া যাবে না। যৌনতার বর্ণনা সম্বলিত কিছু হাদীস সহীহাইনে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও সেগুলোর অথেনটিসিটি নিয়ে কিছু লোক আপত্তি জানিয়ে মাওলানা মওদূদীর কাছে চিঠি লিখেন। রাসায়েল ও মাসায়েলে তিনি আপত্তিকারীদের উত্থাপিত অশ্লীলতার অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে সেসবের জবাব দিয়েছেন। আপনি জানেন, খারেজীরা এমনকি সূরা ইউসুফকে প্রক্ষিপ্ত বলে মনে করতো! সেটিকে তারা কথিত ‘অশালীন’ প্রেম কাহিনী বলে মনে করতো!

আমার বক্তব্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক প্রচলিত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রসমূহে যৌনতাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে শিক্ষাদানের ফলশ্রুতিতে যৌন-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ইসলামিস্টদের সাধারণ প্রবণতা হলো নেতিবাচকতার আড়ালে এক ধরনের অতি কৌতুহলী মনোভাব এবং এ সম্পর্কে অস্বাভাবিক আচরণ!

পোস্টটির ব্যাকআপ লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *