‘সফট পলিগ্যামি’ কথাটাকে ক্রমান্বয়ে পরিচিত করে তুলতে হবে। যাতে করে ঘুপচিমারা লোকেরা ক্রমান্বয়ে এক্সপোজড হয়ে পড়ে। ইসলামে প্রাইভেসি আছে, সিক্রেসি নাই। তাই তলে তলে যা হচ্ছে তাকে নৈর্ব্যক্তিক বর্ণনার মাধ্যমে সোশ্যাল ডিসকোর্সে নিয়ে আসতে হবে। তাতে করে অসতর্ক লোকেরা সতর্ক হতে পারবে এবং হিপোক্রেসি থেকে সহজেই আত্মরক্ষা করতে পারবে।
মুখে পলিগ্যামির বিরোধিতা করা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপরীত লিঙ্গের নানা জনের সাথে বহুবিধ ও বিচিত্র সম্পর্কের মাধ্যমে এক ধরনের সফট পলিগ্যামি চর্চা করার এই প্রবণতাটাকে রুখতে হবে। সেটা আমি, আপনি বা যে কারো দ্বারাই চর্চিত হোক না কেন। নৈতিকতা, বিশেষ করে ইসলামী মূল্যবোধের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর জাস্টফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড প্রথার মতো, ক্ষেত্রবিশেষে ফেইসবুক ফ্রেন্ড প্রথাও হতে পারে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিধ্বংসী। পর্দা শুধুমাত্র প্র্যাকটিক্যাল ফিজিক্যাল ইন্টিমেসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য– এমন নয়। বরং তা যে কোনো প্রকার যোগাযোগের ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিত্যনতুন সব আজাইরা বিষয়ে সকাল-বিকাল চৌদ্দ জনের সাথে চ্যাট না করলে, যখন-তখন হালকা মুডে চটুল মন্তব্য বিনিময় না করলে আপনি ক্ষ্যাত প্রমাণিত হবেন, আপনার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে– এমন তো না। এসব অপ্রয়োজনীয় চ্যাট ও মন্তব্য-বিনিময় আপনাকে আল্টিমেইটলি সাসটেইনেবল কমফোর্ট এনে দিবে না। সোজা কথায়, নিজেকে পর্দানশীন পুরুষ বা নারী তথা ইসলামপন্থী বা প্র্যাকটিসিং মুসলিম মনে করলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্লার্টিং করা হতে আত্মসম্বরণ করুন। পরিণামে ভালো থাকবেন। বাস্তব জীবনে অধিকতর সুখী হবেন।
উল্লেখ্য, ফ্লার্টিং করা বা অযাচিতভাবে দৃষ্টি আকর্ষণীমূলক কিছু একটা করা মানেই অশ্লীল ও অশালীন কথা, এমনটা নয়। কোনো জেনুইন কারণ ছাড়া বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে খুচরা কথা বলা কিংবা নিজের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা শেয়ার করাও কাইন্ড অব ফ্লার্টিং। যারা রিলেশন করে তারা সব সময় ‘সেইসব’ কথাবার্তা বলে, এমন তো নয়। বরং, তাদের পারস্পরিক সান্নিধ্য-আকাঙ্খার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নানা ধরনের আজাইরা কথা চালাচালির মাধ্যমে।
এখন ব্যাপারটা এতদুর গড়িয়েছে যে, এখন ট্রান্সপারেন্সি বা ওপেননেসের কথা বলাটা আর ততটা কার্যকরী নয়। কেননা, প্রাচ্য সংস্কৃতির অতি রক্ষণশীলতাজনিত ব্যর্থতা আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বল্গাহীন আগ্রাসনের কারণে ইতোমধ্যে লোকজনের লজ্জাশীলতা ও শালীনতাবোধে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রকাশ্যেই লোকেরা এখন একান্ত সম্পর্কসুলভ ব্যাপারগুলোকে কীবোর্ডে তুলে আনছে। নির্দ্বিধায়।
তাই, চিরায়ত সামাজিক মূল্যবোধে যারা বিশ্বাসী, অথচ সোশ্যাল মিডিয়ার একান্ত জনপরিমণ্ডলে সম্পর্ক-সীমাগুলোকে যারা প্রপারলি মেইনটেইন করতে পারে না, তাদের জন্য উচিত হলো এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা। ভার্চুয়াল ফ্লার্টিং হতে বিরত থাকা। সর্বাবস্থায়ই তাকওয়া অবলম্বন করা। প্রয়োজনে সব ধরনের রিস্কি সম্পর্ক এড়িয়ে চলা।
সফট পলিগ্যামি চর্চার চেয়ে বাস্তবে পলিগ্যামাস হওয়া তুলনামূলকভাবে ভালো। যেমন করে দিনরাত হাফ-নেংটু নাচগান দেখা তথা সফট সেক্সের মধ্যে ডুবে থাকার চেয়ে খানিকটা হার্ডসেক্স করা অপেক্ষাকৃতভাবে কম ক্ষতিকর। কেননা, হার্ড সেক্সের আছে বাধ্যতামূলক সমাপ্তি। কিন্তু, অযাচিত যৌনতাচর্চা বা সফট সেক্স চলতে পারে বিরতিহীন। পেট ভরে খাবার আপনি সারাদিন খেতে পারবেন না। কিন্তু সারাদিন আপনি চানাচুর চিবুতে পারবেন। পরিণামে আপনার স্বাস্থ্যহানী ঘটবে।
নৈতিকতার বিরাজমান মেকি আবহের কারণে আজকাল লোকেরা সহজেই ভুল বুঝে। তাই, কথাগুলো কিছুটা ভেঙ্গে বললাম। এটি Sourav Abdullah’র নিম্নোক্ত স্ট্যাটাসে করা আমার মন্তব্য (পরিমার্জিত ও খানিকটা বর্ধিত):
“ফেইসবুক হচ্ছে সফট পলিগ্যামি চর্চার সুন্দর জায়গা! এখানে শুধু পুরুষ নয়, একজন নারীও হতে পারেন একই সময়ে বিচিত্র মাত্রায় পলিগ্যামাস! বরং একজন নারীর জন্য তা আরো বেশি সহজসাধ্য!”