নামাজে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন কিনা, এ বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের রেফারেন্সগুলোকে একত্রে বিবেচনা করলে প্রতীয়মান হয় ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠই মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট। কেউ যদি ইমামকে নামাজের শুরু থেকে না পান, তাহলে তার পক্ষে সূরা ফাতিহা পাঠ সম্ভব নাও হতে পারে। মনে করুন, কোনো ব্যক্তি ইমামকে ক্বিয়াম অবস্থায় পেয়ে তাকবীর উচ্চারণ করে জামায়াতে শরীক হলো। দোয়া/সানা পড়ে তিনি ফাতিহাতুল কিতাব পড়া শুরু করতেই ইমাম রুকুতে চলে গেলেন। এমতাবস্থায় উক্ত মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ না করলে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। কারণ, তিনি সূরা ফাতিহা পড়া শেষ করে রুকুতে যাওয়ার আগেই ইমাম দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। তিনি যদি সূরা ফাতিহা পাঠ সমাপ্ত না করে ইমামের অনুসরণ করে রুকুতে চলে যান, তাহলে তার তেলাওয়াত অসমাপ্ত থাকা সত্ত্বেও নামাজের উক্ত রাকাত কাউন্ট করা হবে।

আবার কোনো মুসল্লী যদি ইমামকে রুকুতে পান তখন তাকে মসবুক বলা হয়। এই মসবুক মুসল্লী আদৌ ক্বিয়াম পাননি। অন্যদিকে, রুকু ও সিজদায় কোরআন তেলাওয়াত না করার কথা বলা হয়েছে। রুকুতে সূরা ফাতিহা পাঠের সময় ও প্রভিশন নাই। সহীহ হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম রুকুতে থাকা অবস্থায় জামায়াতে শামিল হওয়া মুসল্লির সংশ্লিষ্ট পূর্ণ রাকাত কাউন্ট হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট না হলে মসবুকের রাকাত কাউন্ট হতো না।

তাই, রুকুর অব্যবহিত পূর্বে বা রুকু চলা অবস্থায় জামায়াতে শামিল হওয়া ও সংশ্লিষ্ট রাকাত গণনায় আসার বিষয়টি হতো না যদি ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠকে মুক্তাদীর পক্ষ হতে আদায়কৃত হিসাবে বিবেচিত না হয়। কতিপয় কাজ ইমাম ও মুক্তাদী উভয়কেই করতে হয়, যেমন– তাকবীরে তাহরীমা বলা, রুকু, সিজদা ও জলসা করা। ইমামের এক্তেদা করলে আদায় করতে হয় এমন কতিপয় অত্যাবশ্যকীয় কাজ একাকী নামাজের সময় আদায়ের দরকার হয় না।

ইমামের পূর্ণতা তাকবীরে তাহরীমা, রুকু, সিজদা, জলসা, ক্বিবলামুখীনতা ও তাহারাত ব্যতীত মুক্তাদীর অপরাপর সকল অপূর্ণতাকে মিটিয়ে দেয়। ইমামের সামনে সুতরা বা আড়াল থাকলে জামায়াত যত বড় হোক না কেন, সকল কাতার ও মুসল্লীর জন্য তা যথেষ্ট হিসাবে গণ্য হবে। ব্যক্তিগত নামাজে অত্যাবশ্যক হলেও রুকু ও সিজদায় যাওয়া বা উঠার সময় মুক্তাদীকে তাকবীর উচ্চারণ করতে হয় না।

সিররী বা নিঃশব্দের নামাজে মুক্তাদীগণ দোয়া হিসাবে সূরা ফাতিহা সম্পূর্ণ বা সময়ের অভাবে এর কিছু অংশ পাঠ করতে পারবেন, যা কোনো কোনো সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল থেকে প্রমাণিত। ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠকে নিজের জন্য যথেষ্ট মনে না করে কোনো মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পাঠকে তাকবীরে তাহরীমার মতো নিজের জন্য ফরজ/ওয়াজিব হিসাবে গণ্য করলে সেটি ইমামের মুখালাফা বা বিরোধিতা হিসাবে গণ্য হবে।

যারা বলেন, একাকী হোক, ইমাম হিসাবে হোক, ইমামের পেছনে হোক, যাহরী নামাজ হোক, সিররী নামাজ হোক– সর্বাবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে, অন্যথায় নামাজ হবে না; তারা ‘সূরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ নাই’ মর্মে বর্ণিত সহীহ হাদীসটির ভুল ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে পড়াশোনা ও আলাপ-আলোচনা করে আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।

দেখুন:

১। সূরা আরাফ, ২০৪ নং আয়াতের শানে নুযুল (প্রামাণ্য তাফসীরসমূহ দ্রষ্টব্য, বিশেষত তাফসীরে ইবনে কাসীর)।

২। সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত), হাদীস নং ৬৮৮, ৮৩৮, ৭৩৯।

৩। সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত), হাদীস নং ৭৮২, ৭৯৯, ৮৯৬, ৮৯৯, ৯০৬, ৯১৬, ১১৮৬।

৪। মুয়াত্তা ইমাম মালিক, ১ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত), হাদীস নং ৬/২৯, ৮/৩৮, ১০/৪৩-৪৪।

৫। সুনানে আবু দাউদ, ২য় খণ্ড (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত), হাদীস নং ৮২৬, ৮২৭, ৮২৮, ৮২৯।

এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

আব্দুল্লাহ শাহেদ: “ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট…।” এটি দলীলবিহীন কথা। ইবাদতের ক্ষেত্রে এমন কথা গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূল (সা) ইমাম, মুক্তাদী এবং একাকী সকল শ্রেণীর নামাযীকে সূরা ফাতেহা পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: সূরা ফাতেহা ছাড়া কোনো নামায নেই। (বুখারী)

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: উপরে তো একটা কোরআনের আয়াত ও সিহাহ সিত্তাহ হতে ১৮টা হাদীসের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কী করবেন? একটু কষ্ট করে (আবার) পড়ে দেখুন না, ভাই!

আব্দুল্লাহ শাহেদ: মন্তব্যের ঘরে সেই হাদীছটি নিয়ে এসে রেফারেন্স দিন।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বোখারী শরীফের কিতাবুল আযান অংশে ‘নামায শুরু করার সময় তাকবীর বলা ওয়াজিব’ শিরোনামে আনাস (রা) ও আবু হুরাইরার (রা) রেওয়ায়েতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলছেন, ইমাম এজন্য নিযুক্ত হয় যে, তাকে অনুসরণ করা হবে। সুতরাং, ইমাম তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে…।

কই, এখানে তো ‘ইমামের সাথে তোমরা সূরা ফাতিহা পড়ো’ এ কথা বলা হয় নাই! অবশ্য আবু মুসা আশআরীর (রা) সূত্রে মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে ইমাম ‘গাইরিল মাগদুবী আলাইহিম ওয়ালাদ দোয়াল্লিন’ বলার পর ইমাম সাহেবের সাথে আমীন বলার জন্য বলা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ শাহেদ: “ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট।” আমি জানতে জাচ্ছি আপনার এই কথাটি হাদীছের কোন কিতাবে আছে? বুখারীতে না মুসলিমে? হাদীছ নম্বর কত? বুখারী বা মুসলিমে না থাকলে কোথায় পাওয়া যাবে? এবং তা সহীহ কি না?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: “ফা-ইজা ক্বারাআ, ফা-আনছিতু” –ইমাম আবু মুসলিম এটিকে সহীহ বলেছেন। নাকি বলেননি? বুখারী শরীফে আমীন বলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো দেখুন। সেখানে ইমামকেই শুধুমাত্র পাঠকারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। মুক্তাদীকে ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠের পর আমীন বলতে বলা হয়েছে।

মুয়াত্তার সালাত অংশে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বর্ণিত হাদীসটি দেখুন।

সামাদ: জনাব, বিষয়টি নিয়ে ইমামদের মাঝেই বিভেদ আছে। ইমাম মালেকের (রহ) মতটাই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। তা হলো, যে নামাজে ইমাম চুপি চপি সূরা-কেরাত পড়বেন, সেই নামাজে মোক্তাদীও সূরা ফাতেহা পড়বেন, যখন ইমাম শব্দ করে পড়বেন,তখন মোক্তাদী ‘অ-ইজা কোরেয়াল কুরআনু ফাসতামেয়ু ওয়া আনসিতু’ নীতি অবলম্বন করবেন। যদি ইমামের পিছনে এক্তেদা করছি বললেই সব হয়ে যেত, তবে দরুদ-তাশাহুদ কিছুই না লাগার কথা। ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কিছু কাজ আছে ইমামের পিছনে ইক্তেদা করলেও করতে হবে। হাদীসে সেসব বর্ণিত হয়েছে। আর কিছু কাজ আছে যেগুলো না করলেও নামাজ হবে।

হাদীস পড়তে হবে কম্প্রিহেনসিভলি অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো হাদীসের অথেনটিসিটি নিয়ে ছুটলে হবে না। আসুন না আমরা কিতাবুস সালাতের চ্যাপ্টারগুলো হতে এক একটি আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট রেফারেন্সগুলো একসাথে মিলিয়ে পড়ে বোঝার চেষ্টা করি!

আব্দুল্লাহ শাহেদ: জ্বী জনাব, আমরা একসাথে মিলিয়েই বলছি। সবগুলো একসাথে মিলালে দেখা যায় অবশ্যই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। এটিই আয়েম্মায়ে ছালাছার মত।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাহলে মসবুকের রাকাআত কাউন্ট হবে কীভাবে?

গরিব মানুষ: যুক্তি নয় দলিল চাই। সরাসরি হাদীস দেখালে খুশি হবো ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: দেখুন, টাইটেলের নিচে কতকগুলো রেফারেন্স দিয়ে শেষ করলে সুন্দর লাগে না। সেজন্য কিছু প্রারম্ভিক আলোচনা করেছি। রেফারেন্স তো কিছু দেয়া হয়েছে। দয়া করে সেসব কষ্ট করে পড়ুন। অন্তত আপনার হাতের কাছে থাকা যে কোনো মূল হাদীস গ্রন্থের কিতাবুস সালাতের সংশ্লিষ্ট অংশটুকু পড়ুন। পাঠকের সুবিধার জন্য আমি কিছু রেফারেন্স দিয়েছি।

মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়ার অপরিহার্যতার পক্ষে সুনানে আরবাআর যেসব রেফারেন্স দেয়া হয়, সেখানেও একই সাথে ইমামের পিছনে ফাতিহা না পড়ার হাদীস বর্ণিত আছে, যেগুলোকে আমাদের কথিত হাদীসপন্থী ভাইগণ বেমালুম চেপে যান! গতকাল সিরাজগঞ্জে বাড়ি এমন এক সহকর্মী বিস্মিত হয়ে বললেন– বুখারী, মুসলিম ও মুয়াত্তা শরীফের এই হাদীসগুলো সম্পর্কে আমাদের অঞ্চলের আলেমরা তো কখনো আমাদের কিছু বলেন নাই!!!

আব্দুল্লাহ শাহেদ: আমিও গরীব মানুষের সাথে একমত। যুক্তি যুক্তি মানি না। যুক্তি ও চুক্তিবাদীরা ইসলামের সর্বনাশ করে যাচ্ছে।

মোসাফির: সূরা ফাতেহা ছাড়া কোনো নামায হয় না। (বুখারী) তাই সব নামাজে সূরা ফাতেহা পড়তে হবে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এটি একাকী পড়া ব্যক্তি ও জামায়াতের ইমামের জন্য প্রযোজ্য। হাদীসকে বুঝুন সামগ্রিকভাবে। সমপর্যায়ের অপরাপর হাদীস হতে বিচ্ছিন্ন করে হাদীস বিশেষকে নিয়ে ছুটলে তো হবে না।

আচ্ছা, যিনি জামায়াতে শরীক হয়ে সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করলেন, তার পর পরই ইমাম রুকুতে চলে গেলেন। তিনি কী করবেন?

আব্দুল্লাহ শাহেদ: যা জানেন না, তা নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। যারা জানে বিষয়টি তাদের উপর ছেড়ে দিন।

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার পক্ষে অনেকগুলো সহীহ হাদীছ বিদ্যমান। বুখারী ও মুসলিমেই রয়েছে কয়েকটি হাদীছ। আপনি কি এখনও এক নং মন্তব্যটি চোখে দেখেননি?

সর্বোপরি ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কিরআত পড়া না পড়ার ব্যাপারে বিশাল মতভেদ রয়েছে। আর আপনি কয়েক লিখেই ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ক্যানসেল করে দিতে চাচ্ছেন? বলতে পারেন হানাফী মাজহাবে ইমামের পিছনে কিরাতে পড়তে হয় না। হানাফী আলেমদের অনেকেই ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠের পক্ষে। আপনি দেখছি সে সম্পর্কেও জানেন না।

আশা করি কোনো পোস্ট দিলে তার হক আদায় করে আরবীতে কুরআন ও হাদীছের আয়াত দিবেন। বাংলা মুহাদ্দিছ হলে চলবে না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নতুন কথা (টার্ম) শিখলাম– বাংলা মুহাদ্দিছ!!!

হ্যাঁ, রাসূল (স) বলেছেন, সূরা ফাতেহা ছাড়া কোনো নামায নেই। এ কথা দ্বারা মুক্তাদীর জন্যও যদি সূরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট মুক্তাদী জেহরী নামাজে সূরা ফাতেহাও সশব্দে পড়বেন, তাই না? তাহলে তিনি ইমাম কর্তৃক কোরআন তেলাওয়াতকে শুনবেন ও চুপ থাকবেন কীভাবে? হাদীস মানতে গিয়ে কোরআনের বিরোধিতা হয়ে গেলো নাকি?

আচ্ছা ভাই, “রাসূল (সা) ইমাম, মুক্তাদী এবং একাকী সকল শ্রেণীর নামাযীকে সূরা ফাতেহা পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন।” – এ কথাটা আপনি কোথায় পেয়েছেন?

জেড ইসলাম: জনাব আব্দুল্লাহ শাহেদ, জানি না আপনি কোন মাপের স্কলার। তবে আপনার কথার ধরন শুনে মনে হচ্ছে, ইমাম আবু হানিফাকে (রহ) নহে, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আপনি এখন ইমামে আজম হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন।

যেভাবে আপনি ভুল ধরছেন, তাতে মনে হচ্ছে ইমাম আবু হানিফাকে (রহ) ইমামে আজম হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়াটাও সে সময়কার স্কলারদের জন্য বিরাট ভুল ছিল। আমার মনে হয় আপনি কোনো আত্মম্ভরিতায় আচ্ছন্ন হয়েছেন।

শাহ আরকামী: উনার লেখা পড়ে মনে হলো, উনি সত্যিই বাংলা মুহাদ্দিছ। ঠিক বলেছেন শাহেদ ভাই। আমার জানা মতে, সিররী বা নিঃশব্দের নামাজে ইমাম ও মুক্তাদীর উপরে সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ। এ ব্যাপারে অধিকাংশ আহলুল ইলম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আর জেহরী নামাজে সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ নয়। কেননা, ইমামের কেরাতই মুক্তাদীর কেরাত বলেই প্রযোজ্য হবে। তবে ইমামের কেরাতকে কান পেতে মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জনাব আবদুল্লাহ শাহেদের মন্তব্যের সাথে আপনার বক্তব্য সাংঘর্ষিক হলো কিনা!? তিনি বলেছেন, “রাসূল (সা) ইমাম, মুক্তাদী এবং একাকী সকল শ্রেণীর নামাযীকে সূরা ফাতেহা পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন।” এখানে জেহরী ও সিররী’র ভাগ করার ভিত্তি কী?

সিররী নামাজে জামায়াতে শরীক মুসল্লী সূরা ফাতিহা পড়ার আগেই ইমাম রুকুর তাকবীর দিলে তিনি কী করবেন? সূরা ফাতিহা পড়ার ফরজ আদায়ে রত থাকবেন? ইতোমধ্যে যদি ইমাম সাহেব রুকু হতে উঠে দাঁড়ান?

আব্দুল্লাহ শাহেদ: মুজাম্মেল সাহেব! দয়া করে লিংক খুলে লেখাটি পড়ুন– ‘ইমামের পিছনে মুক্তাদী কি সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার পোস্টটা পড়লাম। আসুন আমরা বুঝার চেষ্টা করি, বিতর্ককে এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন যখন ঐতিহ্যবাহী ফিকহী বিষয়ে মতভেদসমূহ নিয়ে টানাটানি করে তখন খারাপ লাগে। কোনটা সহীহ, কোনটা নয়– তা নিরসন করা মোটেও কঠিন কিছু নয়। এখন তো হাদীসের যাচাই-বাছাই সব সমাপ্ত। তাহলে এখন কেন বিতর্ক? কারণ, ওই চমক দেখানোর প্রবণতা। আমি তো বুখারী, মুয়াত্তা ও মুসলিম শরীফ থেকে রেফারেন্স দিয়েছি। আরবী ও বাংলাতে বিস্তারিত উল্লেখ করি নাই। এজন্য আপনি আমাকে বাংলা মুহাদ্দিছ আখ্যা দিয়েছেন!! এ ধরনের কমেন্ট করা সমীচীন মনে করি না।

ধূমকেতু১০: বিশ্লেষণমূলক আলোচনা ও বিতর্ক ভালো লাগলো। তবে আমি মনে করি, ইমামের পেছনে মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পড়া ঐচ্ছিক বিষয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ ভাই, কথিত হাদীসপন্থীদের সমস্যা হলো ইনারা ফিকাহপন্থীদের চেয়েও অধিক গোঁড়া। যে হাদীসটি শুনেছেন তা-ই শুধু আওড়াতেন থাকেন। কোনো আমল সাব্যস্ত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহকে কনসিসটেন্টলি বুঝতে হবে। যেটি উনারা বুঝতে চান না।

Salam: বস, আপনি ফিকহী মতভেদ সংক্রান্ত একটি ছোট বিষয় নিয়ে লিখতে গেলেন কেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। প্রথম যুগে এ ধরনের ছোট ছোট বিতর্কের আংশিক একটা দিককে অতি গুরুত্বারোপ করে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বানিয়ে ফেলার ফলশ্রুতিই বোধহয় আজকের বহুধাবিভক্ত মুসলিম উম্মাহ। বিভক্ত ফিকাহকে ইউনিফাইড বা ইন্টেগ্রেটেড করা যায় কিনা, গেলে কীভাবে, তা নিয়েই তো বিরাট বিতর্ক হতে পারে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: () ইদানীং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে একটা অনাকাংখিত প্রচারণা লক্ষ্য করছি। রাসূলূল্লাহর নামাজ, প্রচলিত নামাজ ও সুন্নাত মোতাবেক নামাজ, রাসূলুল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ধরনের বইপত্র, টিভিতে প্রশ্নোত্তর ইত্যাদির মাধ্যমে কেউ কেউ এ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছে যে, ফিকাহর নামে যা প্রচলিত এর অনেক কিছুরই হাদীসের ভিত্তি নাই। আমাদের সমাজে প্রচলিত অনেক বিদআত ও খিলাফই সুন্নাতের মতো মর্যাদা দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের অনুসারীরাও ফিকাহর নামে অন্ধ-অনুসরণ করে যাচ্ছেন!?

() এ ধরনের প্রান্তিক ও একদেশদর্শী মনোভাব যে ভুল, ফিকহী মাসআলাসমূহের যে হাদীসের ভিত্তি রয়েছে, সেগুলোও যে যথেষ্ট মজবুত– সেটি দেখানো এই আলোচনার উদ্দেশ্য।

() অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, ইসলামী আন্দোলনের যে ঐতিহ্যবাহী ধারা এ যাবতকাল প্রচলিত ফিকহী মতভেদসমূহে এড়িয়ে চলছিল, তারই বিভিন্ন প্রকাশনা ও মিডিয়ার সহযোগিতা নিয়ে হানাফী ফিকাহর অনুসারীদের শাফেয়ী ফিকাহর অনুসারী বানানোর একটা অনাকাংখিত প্রচেষ্টা ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারা এমনটি করছেন তারা মূলত আহলে হাদীসপন্থী ও মধ্যপ্রাচ্য ফেরত। এমনকি মাওলানা মওদূদীর মতো আলেম স্বীয় ‘রাসায়েল ও মাসায়েল’ গ্রন্থে ফিকহী বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহে যেসব মতামত দিয়েছেন, কোনো বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া ইনারা তাও নাকচ করে দিচ্ছেন। ইমামের পেছনে কেরাত, তারাবীর নামাজের রাকাত ইত্যাদি বিষয়ে আপনি যাচাই করে দেখতে পারেন।

() আমার মতে, ঐক্য প্রচেষ্টা হলো যেখানে যে মত প্রতিষ্ঠিত আছে তা নিয়ে নিতান্তই একাডেমিক পরিবেশের বাহিরে সর্বসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তিমূলক কথা না বলা বা বললে সকল সহীহ মতকে তুলে ধরা।

() আমাদের সবারই উচিত সরাসরি মূল হাদীসের কিতাবসমূহ হতে অধ্যয়ন করা। ডিকশনারী ও এনসাইক্লোপিডিয়াসমূহ যেভাবে ব্যবহার করা হয় সেভাবে।

এসবি ব্লগ লিংক

২ Comments

  1. চুক্তি দিয়ে ধর্ম চলেনা, ধর্ম চলে রাসুলের কথায়৷ সুরা ফাতিহা সালাতে পড়তে হবে৷ হাদিস দ্বারা সাবেত৷ যে ব্যাক্তি সুরা ফাতিহা পেল না তার হুকুম বিন্ন৷ তার সাথে যে পেয়েছে তার হুকুম এক করা আর ইলমে ফিকহের জ্ঞান না রাখা একই৷ যে যেই অবস্থায় সালাতেে শরিক হবে সেখান থেকেই তার সালাত আদায় করবে সুুুুরা ফাতিহা পেলে পড়বে না পেলে ছেড়ে দিতে হবে৷ কারণ কিরআত শুনা ওয়াজিব৷ ভ্রান্ত যুক্তি দঁাড় করানো হানাফিদেরই কাজ৷ ওটা যদি হয় ওটার হুকুম কি হবে৷ কোথায় কোন হুকুম হবে৷ তা রাসুল সাঃ বলে দিয়েছেন ৷ আশাকরি হাদিসে যেভাবে আছে সেভাবেই মানার চেষ্টা করবেন৷ এক অবস্থার হুকুমের সাথে অন্য অবস্থার হুকুম তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন না ৷

  2. সুরা আরাফের ২০৪ নং আয়াতের যখন কোরআন তেলাওয়াত হয় তখন তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর ৷ এই হুকুম সুরা ফাতিহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ কারণ, আল্লাহ তায়ালা সুরা ফাতিহাাা বরকত কে আলাদা করে দিয়েছেন ৷ তাই তো এই সুরা প্রতি রাকাতে বার বার পড়া হয়৷ দেখুন সূরা ১৫. আল-হিজর
    আয়াত নং ৮৭

    وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ ﴿۸۷﴾

    অনুবাদঃ
    আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন।
    এখানে আল্লাহ তায়ালা ফাতিহাকে কুরআন থেকে আলাদভাবে বর্ণনা করেছেন! তাই সুরা ফাতিহার হুকুম কিরআতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ সুরা ফাতিহা বার বার পড়া হয় কোরআন নয়৷ সুরা ফাতিহা- প্রার্থনা, আর সালাত মানে প্রার্থনা৷ কিরআতের ফজিলত ও সুরা ফাতিহার ফজিলত জানুন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *