গত ৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখের লং মার্চ অত্যন্ত সফলভাবে উদযাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বেসরকারী মাদ্রাসসমূহের সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলামী’র গ্লোরিয়াস অভিষেক সম্পন্ন হয়েছে। তাদের এই প্রবল অরাজনৈতিক রাজনৈতিকতা এ দেশের প্রকাশ্য ও অসচেতন – এই  দুই শ্রেণীর ইসলামবিরোধীদের মধ্যে ব্যাপক টেনশন সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে আমি বামপন্থী কম্যুনিস্ট ভাবাপন্নদেরকে প্রকাশ্য ইসলামবিরোধী এবং ইসলামের রাজনৈতিক প্রায়োগিকতার বিরোধীদেরকে অসচেতন ইসলামবিরোধী হিসাবে গণ্য করছি।

‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়’ বলে যারা মনে করেন তারা ধর্ম বলতে কী বুঝেন, ধর্ম কী কাজের জন্য তা ঠিক করুন। অতঃপর রাজনীতি বলতে কী বুঝেন, রাজনীতির কাজ বা দাবি কোন্ কোন্ বিষয়ে – তাও ঠিক করুন। এরপর ‘ইসলাম’-এর আদর্শগত অথরিটি তথা কোরআন ও হাদীসের আলোকে, সুন্নাহর মাপকাঠিতে যাচাই করে দেখুন, রাজনীতির কোনো কমন এজেন্ডা ইসলামে আছে কিনা। দেখবেন, রাজনীতির সব কমন ইস্যু বা এজেন্ডাগুলো ইসলামের মৌলিক কাঠামোর মধ্যে প্রোথিত। এ দৃষ্টিতে, যারা ইসলামের রাজনৈতিকতাকে অস্বীকার করেন বা এর প্রয়োগযোগ্যতার বিষয়ে মোটাদাগে সন্দেহ পোষণ করেন, তারা ইসলামকে ভালোভাবে জানতে বা বুঝতে পারেননি – এ ছাড়া আর কী বলা যায়?

ইসলামের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধানাবলীর প্রয়োগযোগ্যতার ক্ষেত্রে মাত্রা ও ক্রমধারা বিবেচনার বিষয়টি অবশ্য ভিন্ন প্রসংগ।

দেওবন্ধপন্থীদের অরাজনৈতিক রাজনৈতিকতার পথযাত্রা:

তাই হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দ যতই নিজেদেরকে অরাজনৈতিক হিসাবে দাবি করুন না কেন, ইসলামের নামে যারাই ময়দানে নামবেন, তারাই অপরিহার্যভাবে নিজেদেরকে রাজনীতিতে জড়াবেন। হতে পারে তারা এক পর্যায়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে নামবেন, অথবা অপ্রকাশ্যভাবে কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তিকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাবেন।

সায়্যিদ আহমেদ ব্রেলভীর নেতৃত্বাধীন বালাকোট যুদ্ধে পরাজয় ও সিপাহী বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর তৎকালীন বৃটিশ ভারতে মুসলমানদের ঈমান ও ইসলাম রক্ষার জন্য দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ সব কওমী মাদ্রাসা এই ধারাবাহিকতারই অংশ। পাকিস্তান মুভমেন্টে দেওবন্দ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ইসলামী শক্তির মূল অংশ ভারতীয় কংগ্রেসকে সমর্থন করে প্রকারান্তরে পরাজিত হয়। অতঃপর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিদ্রাকালীন সময়ে তারা স্বাধীন ধর্মীয় শিক্ষা-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামাজিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করার পরে এক পর্যায়ে মাঠে নেমেছেন। যে ১৩ দফা দাবি তারা দিয়েছেন তা ইসলামী রাজনীতির একটি চিত্র বৈ ভিন্ন কিছু নয়। জামায়াত শুরু থেকেই এসবকে রাজনৈতিক বিচেনায় এজেন্ডা হিসাবে দাবি করে আসছে। যেভাবেই হোক না কেন দৃশ্যত জামায়াতবিরোধী ধর্মীয় পক্ষসমূহ অবশেষে অঘোষিতভাবে জামায়াতের (রাজনৈতিক) এজেন্ডাসমূহকে আপহোল্ড করছে। নিঃসন্দেহে এটি জামায়াতের মতাদর্শগত বিরাট বিজয়। কথা হলো জামায়াত এই বিরাট প্রাপ্তিকে আত্মস্থ করতে পারবে কি না।

জামায়াত কি আদৌ বিপ্লব চায়?

জামায়াত যদি আদৌ বিপ্লবে বিশ্বাস করতো বা (ইসলামী) বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত থাকতো, তাহলে ২০১৩ সালেই তারা সেটি করতে পারতো। বাহ্যত তাই মনে হয়। বিপ্লব আগাম জানান দিয়ে আসে না, ঘোষণা দিয়ে হয় না; সাইক্লোন বা টর্নেডোর মতো হঠাৎ করেই কোনো তুচ্ছ কারণে এক বা একাধিক ক্ষমতাকেন্দ্র অপ্রত্যাশিতভাবে পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। হতে পারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি, যাকে আমরা আমজনতা বলি, চরমভাবে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে, জেগে উঠে বিদ্যমান কাঠামোকে ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়।

নিছক সামাজিক অরাজকতা ও বিশৃংখল পরিস্থিতিতে অরাজকতা-উত্তর সময়ে পূর্ব সমাজ-কাঠামোকে দ্রুত মেরামত বা নির্মাণ করা যায়, যা বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতিতে সম্ভব হয় না। বিপ্লবের জন্য ‘লোক তৈরি’র জামায়াতী ফর্মূলা তাত্ত্বিকভাবে সঠিক হলেও তাদের গৃহীত কর্মপন্থার সামগ্রিক মূল্যায়নে এই অন্তহীন ‘লোক তৈরি’র প্রক্রিয়া তাবলীগ জামায়াতের কর্মপন্থার মতোই ইউটোপিয়ান তথা অবাস্তব। এই প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রনির্ভর লক্ষ্যহীন ‘বিপ্লব-প্রস্তুতি’র পথচলা (জামায়াতের ভাষায় ‘কাজ করে যাওয়া’) মৌলিক সমাজ পরিবর্তন তথা বিপ্লবের সমাজবিজ্ঞানের নিরিখেও অবৈজ্ঞানিক এবং এর সুন্নাহ-উদাহরণের নিরিখেও প্রশ্নবিদ্ধ।

যোগ্য লোক তৈরির তরীকা:

তৈরি লোকদেরকে চাহিদা মোতাবেক ময়দান সংশ্লিষ্ট করতে না পারার কারণে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যত ক্যাডার বের হয়েছে তার অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশই জামায়াতে ইসলামীতে সক্রিয় থেকেছে, নেতৃত্বে এসেছে। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তৈরি নেতৃবৃন্দকে কাজে লাগানোর উপযোগী কাঠামো ও কর্মসূচি এডপ্ট করার পরিবর্তে জামায়াতের কম্পার্টমেন্টালাইজড লিডারশিপ এদেরকে তারুণ্যজনিত বুঝজ্ঞানের গলদ বা ঘাটতির কোটায় ফেলে আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে।

হেফাজতে ইসলামীর প্রবল আত্মপ্রকাশের ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট গণজোয়ারকে কাজে লাগানোর সাথে সাথে নিজেদের ‘তৈরি লোকদেরকে’ ময়দানে সক্রিয়ভাবে ধরে রাখার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে নিম্নোক্ত বিষয় বা ক্ষেত্রসমূহে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনগোষ্ঠীর সোশ্যাল সাইকিতে এক ধরনের বিপ্লবের মাধ্যমে মতাদর্শগত বিজয় ও প্রতিষ্ঠা লাভের পরে বাংলাদেশের সামাজিক পুনর্গঠন ও টেকসই জাতিরাষ্ট্র গঠনের পরবর্তী বিপ্লবে জামায়াত কতটুকু সফলতা লাভ করতে পারবে, তা নির্ভর করছে এর সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মপন্থায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তারা কতটুকু টেকসই পরিবর্তন বা বিপ্লব করতে পারবে, তার উপর।

জামায়াতের এই প্রত্যাশিত অভ্যন্তরীণ বিপ্লবের জন্য যা করণীয়:

নারী অধিকার: সম্প্রসারিত নাস্তিক্যবাদের পাশাপাশি গণমানুষের ইসলামচেতনা ধারণ করে জাতি গঠনে নেতৃত্ব দেয়ার স্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে জামায়াতে ইসলামীকে যা করতে হবে সে তালিকায় নারী অধিকারের বিষয়টিকে আমি সর্বাগ্রে স্থান দিতে চাই। সনাতনী ইসলাম চর্চায় যে রক্ষণশীল নারী নীতি ফলো করা হয় তা নিবর্তনমূলক ও সুন্নাহবিরোধী।

নারী জাগরণের এই যুগে প্রাচ্য অবদমন ও পাশ্চাত্য ভোগবাদিতার মধ্যবর্তী ভারসাম্যপূর্ণ ইসলামী ধারা কায়েমের মাধ্যমে সমাজের সকল নারীকে আদর্শবাদের আওতায় স্বীকৃতি প্রদান ও আপন করে নেয়াটা ভীষণ জরুরি। কিছুসংখ্যক নারীকে আদর্শের ছাঁচে যথাসম্ভব খাঁটি করে গড়ে তোলার বর্তমান নীতির পরিবর্তে সাধারণ নারীদের মধ্যে গণহারে আদর্শগত তথা ঈমানী চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়ার কর্মপন্থাকে অধিকতর সঠিক মনে করি।

জামায়াতের নারীনীতিকে উদার করার জন্য সর্বাগ্রে মুখমণ্ডলের অর্ধাংশ ঢেকে রাখার যে ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তা তুলে দিতে হবে। পুরুষদের দাঁড়ি রাখা, পাজামা-পাঞ্জাবী ও টুপি পরার মতো যারা চাইবে উচ্চমান বিবেচনায় তারা নেকাব পরতে পারবেন। কিন্তু শপথের কর্মী হওয়ার অন্যতম শর্ত হিসাবে এটিকে প্রয়োগ করা যাবে না।

মসজিদে নামাজ আদায়সহ সকল সামাজিক কাজে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের মাত্রা ও ধারাকে রাসূলুল্লাহর (সা) সময়কার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ঈমানদার নারীদেরকে উদ্বু্দ্ধ করতে হবে।

পুরুষ কর্মীদের থেকে আলাদাভাবে পর্দানশীন নারীদের রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে নিয়মিত অংশগ্রহণ দৃশ্যমান থাকতে হবে।

কর্মজীবী নারীদের মধ্যে বস্তি, কলোনি ও ফ্যাক্টরিভিত্তিক যোগাযোগ ও তাদের নানাবিধ সামাজিক সেবা প্রদানকে একটা সাংগঠনিক ট্রেন্ডে পরিণত করতে হবে।

সমাজসেবামূলক কার্যক্রম: সমাজ বিপ্লব ও আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের অপরিহার্যতা ও ব্যাপকতা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার দরকার নাই। কথা হলো, জামায়াত কি জনসেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান? নিরপেক্ষ জরিপে অত্যন্ত স্বাভাবিক এই প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা কম। গণমানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসাসহ সব মৌলিক মানবাধিকার কি কেবল (ইসলামী) রাষ্ট্র কায়েমের পরবর্তী ব্যাপার? যদি তা না হয়, গণবিপ্লব সংঘটন প্রত্যাশী একটি ইসলামী দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীকে ব্যানার টাংগিয়ে ছবি তোলা ও প্রেস রিলিজ দেয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে গণমানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সমাজসেবামূলক কাজে অর্থ ব্যয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। জামায়াত কর্মীদের মতো যোগ্য ও বিশ্বস্ত লোকদেরকে তারা খুঁজছে। সবকিছুতে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের জন্য চেয়ে থাকার বিদ্যমান ট্রেণ্ডকে ভেংগে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের জন্য রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। এ ধরনের অরাজনৈতিক কাজের মাধ্যমে গড়ে উঠা রাজনৈতিক প্রাপ্তি প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কার্যক্রমের চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ।

প্রযুক্তি, গণমাধ্যম ও সংগঠনকাঠামো: শাহবাগ আন্দোলন এ দেশের প্রচলিত ইসলামী শক্তিসমূহের মধ্যে প্রযুক্তি ও গণমাধ্যম ব্যবহারের যে জোয়ার সৃষ্টি করেছে তা আরও ব্যাপক রূপ লাভ করবে, আশা করি।

বস্তুত পক্ষে, (ইসলামী) আন্দোলন এমন হতে হবে যাতে করে এর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মধারাকে আন্দোলনের মূলধারা হিসাবে প্রতীয়মান হবে। দ্বীনি তথা ধর্মীয় দিক হতে মনে হবে, এটি মূলত একটা দ্বীনি সংগঠন যাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক কিছু কর্মকাণ্ড আছে। সামাজিক সহায়তামূলক কর্মকাণ্ডের দিক হতে দেখলে মনে হতে হবে, এটি মূলত একটা সামাজিক সংগঠন যাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কিছু বক্তব্য (আসপেক্ট) আছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এত ব্যাপক হতে হবে যেন বামধারার মতো, এক দৃষ্টিতে, এটিই আন্দোলনের মূলধারা।

একক সংগঠন কাঠামোর বর্তমান অবস্থায় এসব ক্ষেত্র ও ব্যক্তিবিশেষে বিপরীতমুখী ধারাগুলোর সমন্বয় সম্ভব নয়। এ জন্য জনশক্তিকে আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুসারে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন কাঠামোয় ভাগ করে দিতে হবে।  যিনি অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ সমাবেশে বক্তৃতা দিবেন, সংগঠনের আমীর বা সভাপতি হওয়ার কারণে রাজনৈতিক ময়দানেও তিনি প্রধান অতিথি বা সভাপতির বক্তৃতা দিবেন – বিদ্যমান এই এককেন্দ্রিক সাংগঠনিকতাকে পরিহার করতে হবে।  বহুমুখী যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবীদেরকে ব্যতিক্রম হিসাবে দেখতে হবে।

বিনোদন সংস্কৃতি: মনে পড়ে, এত টিভি চ্যানেল যখন ছিল না, তখন মুখঢাকা ইসলামী কর্মীরা ক্যাম্পাসের বাসাগুলোতে বিটিভিতে সাপ্তাহিক নাটক দেখতো। এলাকার নেকাব পরিহিতা ছোট বোন, ছাত্রী, ভাবী/চাচী সবাই এই ‘আমল’টি নিয়মিত করতেন। অমুক নেতার মেয়ে, তমুক দায়িত্বশীলের স্ত্রী – নির্ভরযোগ্য সূত্রেই শুনেছি, কানে হেডফোন লাগিয়ে সুযোগ পেলেই ‘ব্যান্ডের’ গান শুনতেন! এক সময় ‘আলগা’ নারী/পুরুষের কণ্ঠে গান বাজানোর কারণে রেডিও কেনা, রাখা ও শোনা নিষিদ্ধ ছিল। বিবিসি ইত্যাদি খবর শোনার অজুহাতে টিভি রাখাকে এক পর্যায়ে জায়েয করা হলো। আর এখন তো…।

আমি এসব বাসি কথা বললাম এ জন্য যে, ‘লাহওয়াল হাদীসের’ (বাজে কথাবার্তা) অজুহাতে এ দেশের ইসলামপন্থীরা বিনোদন সংস্কৃতিকে যথাসম্ভব অস্বীকার করার চেষ্টা করেছে, যা মানবীয় প্রবণতার পরিপন্থী। বিনোদন সংস্কৃতির পক্ষে যেসব রেফারেন্স হাদীসে আছে সেগুলোর ইপ্লিকেশনকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে অকার্যকর করে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে।

এখন সময় এসেছে বিনোদন সংস্কৃতির বিষয়ে একেবারে প্রাকটিক্যাল কথা বলা। মনে রাখতে হবে, ভেন্টিলেশন প্রিভেন্টস এক্সপ্লোশন। মানুষকে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিতে হবে। রিগোরিজম অর্থাৎ কঠোরতা আরোপের প্রতি ঝোঁক হলো ঐতিহাসিকভাবে একটা ধর্মীয় প্রবণতা, ইসলাম যার বিরোধিতা করেছে।

যে কোনো পরিবর্তনের মতোই এসব বিষয়ে রাতারাতি কিছু করে ফেলার হঠকারিতার পরিবর্তে জামায়াত বা যে কোনো ইসলামপন্থী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উচিত হবে এসব বিষয়ে নিজেদের মাইন্ডসেটের আমূল পরিবর্তন সাধন করা। মনমানসিকতায় বাঞ্ছিত পরিবর্তন ঘটলে পরিবেশ পরিস্থিতিই বলে দেবে, কখন কী করতে হবে।

বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতা: বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে ইসলামপন্থীরা এক অদ্ভূত দোলাচালে ভোগেন। তারা দাবি করেন, ইসলাম যুগের অগ্রগামী ও বুদ্ধিবৃত্তিক মতাদর্শ। কিন্তু যখনি কোনো বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলে বা দূরে বসে বুঝে হোক না বুঝে হোক, কোনো কিছুকে চ্যালেঞ্জ করে বসে, তখনি ইনারা বুদ্ধির দাবিকে ‘ঐশী বাণী’ দিয়ে নাকচ করার জেহাদে ঝাপিয়ে পড়েন! যেখানে ওহী আছে, সেখানে নাকি আক্বল তথা বুদ্ধির কোনো করণীয় নাই। কথাটা একপেশে বা আংশিক সত্য। বিয়ন্ডের কোনো মেটাফিজিক্যাল বিষয়ে বিয়ন্ডে যে মহাসত্ত্বা আছেন তাঁর কথা বা ওহীকে মেনে নেয়াই তো যুক্তি-বুদ্ধির দাবি। নয় কি? ব্যাপার হলো যুক্তির স্তরবিন্যাসের বিষয়, যুক্তিহীনতার বিষয় নয়। যেখানে যুক্তি চলবে না, সেখানেও যুক্তি দিয়েই বলতে হবে, কেন সেখানে যুক্তি চলবে না। তাই না?

ইসলামপন্থীরা ব্যতিক্রম বাদে সাধারণত ধর্মের বিষয়ে খুবই অসহিষ্ণু। যুক্তিকে যদি যুক্তি দিয়েই মোকাবিলা করা না হয়, তাহলে মানুষ কেন সেটি মানবে? আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, তৎকালীন দার্শনিকদের মতবাদসমূহকে দার্শনিক যুক্তি দিয়েই মোকাবিলা করেছিলেন শ্রেষ্ঠতম মুসলিম দার্শনিক হিসাবে বিবেচিত আবু হামিদ আল গাযালী।

জামায়াতের গঠনতন্ত্রে দ্বিমতের বিষয়াদি: অভ্যন্তরীণ দলীয় ফোরামের বাহিরে দ্বিমত প্রকাশের বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা স্পষ্টতই সুন্নাহ বিরোধী। অপ্রিয় সত্য কথা বলা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সওয়াবের কাজ নয় কি? থিংকট্যাংক সিস্টেম না থাকা বা কার্যকর না থাকাকে জামায়াতের নেতারা কীভাবে ব্যাখ্যা ও সমর্থন করবেন, জানি না। বেসিক্যালি আধ্যাত্মিক চেতনার বিষয় বা ‘নেক আমল’ হিসাবে, সর্বরোগবটিকা হিসাবে ইসলামকে ম্যাক্রো-লেভেলে প্রচার, প্রস্তাব ও (বলপূর্বক) প্রয়োগের পরিবর্তে বাস্তব সমাজে বাস্তবায়নযোগ্য ও অন্য যে কোনো মতাদর্শের তুলনায় অধিকতর কল্যাণজনক হিসাবে ইসলামকে প্রপাগেট করতে হবে। ইসলামের জাগতিক যোগ্যতা বাস্তব কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের ঐতিহ্যগত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শরীয়াহ প্রয়োগের ক্রমধারাকে গ্রহণ করা হয়নি। এই ডিডাকটিভ ইসলামিক স্টাবলিশমেন্ট বা স্ট্রাকচারকে ইনডাকটিভ কাঠামোতে রূপান্তর করতে হলে নিজেদের মধ্যে ও অন্যান্যদের মধ্যে এসব বিষয়ে ওপেন ডিসকোর্স চালু করতে হবে।

বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চায় জামায়াতের বিস্ময়কর অনীহা: জামায়াত কেন জানি সাংগঠনিকতার নামে এক ধরনের গোপনীয়তার নীতিতে বিশ্বাস করে। পারস্পরিক আস্থা ও সওয়াবের নিয়তে, আনুগত্যের প্রাবল্যের জোয়ারে আনওয়ান্টেড ফ্যাক্টস কনসিল করা জামায়াতের একটা কমন প্র্যাকটিস। ১৯৭১ সালে কে, কোথায়, কী করছিলেন, কেন করছিলেন, অন্যরা কী করছিলেন – ইত্যকার ইতিহাসকে তারা অজ্ঞাত কারণে সবসময় চেপে যেতে চেয়েছে। ইসলামের আধ্যাত্মিকতার প্রবল আবেগ সৃষ্টি করে অনাকাংখিত সত্যকে যথাসম্ভব অনস্তিত্বশীল প্রমাণের চেষ্টা করেছে। ১৯৭৮ সালে মাওলানা আবদুর রহীম সাহেবের সাথে কী হয়েছিল, ১৯৮২ সালে যুবশিবিরের ঘটনাটা কী ছিল– এসব সঠিকভাবে জানা, কোনো আগ্রহী ব্যক্তি বা গবেষকের জন্য এখন অসম্ভব-প্রায়। ফ্রম নাউ অনওয়ার্ড, এহেন পলিসি বাদ দিয়ে বড় কোনো ঘটনার বিষয়ে, তা সাংগঠনিক হোক, জাতীয় হোক, সঠিক তথ্য সম্বলিত শ্বেতপত্র টাইপের বক্তব্য দিতে হবে। কেননা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের সুযোগের অভাবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড: জামায়াতের পক্ষে অরাজনৈতিক আমব্রেলা সংগঠন হিসাবে ভূমিকা পালনের বিষয়টি এ পর্যায়ে এসে আর সম্ভব নয় বিধায় জামায়াতের উচিত হবে জামায়াতের আদর্শ নিয়ে অনেকগুলো আলাদা সহযোগী প্লাটফর্ম গড়ে তোলা। এই জামায়াত অফশুটগুলোর কোনো একটা বা কয়েকটা জামায়াতের পাশাপাশি স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও চালাতে পারে। স্বতন্ত্র এসব দল, সংগঠন ও সংস্থা কমন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। মনে রাখতে হবে, প্রশাসনিক তথা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং নামাজ ও হজের মতো নিতান্ত ধর্মীয় বিষয়াদির ক্ষেত্রে এককেন্দ্রিক নেতৃত্ব থাকাটা আবশ্যিক। এর বাহিরে ইসলাম কায়েমের জন্য চেষ্টারত ও প্রতিষ্ঠিত ইসলামী কর্তৃপক্ষের গাইডেন্সের জন্য কর্মরত দলের ক্ষেত্রে এই এককেন্দ্রিক কর্তৃত্বের ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয়। ইসলাম কায়েমের চেষ্টা বিভিন্ন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন পথ, পদ্ধতি ও সাংগঠনিক কাঠামোয় করতে পারে। এ ধরনের পলিটিক্যাল প্লুরালিজমকে গ্রহণ বা ধারণ করার লক্ষ্যে অর্গানাইজেশনাল টোটালিটারিয়ানিজম ও রেজিমেন্টেশন হতে জামায়াতের রিজিড সংগঠন কাঠামোকে ফ্লেক্সিবল হিসাবে রূপান্তর ঘটাতে হবে। অন্ততপক্ষে এ ধরনের মুভকে একোমোডেইট করা, একনলেজ করার মনমানসিকতা বিচার-পরবর্তী জামায়াত নেতৃত্বের থাকতে হবে।

সংগঠন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস:

ক্যাডার সিস্টেম: গণমানুষের কথা বলতে হলে, গণবিপ্লব করতে হলে নির্বাচনমুখী গণতন্ত্র নির্ভরতাকে পরিহার করে সত্যিকারভাবেই গণমুখী চরিত্রের হতে হবে। ক্যাডার সিস্টেমের কারণে গণমানুষের যারা নেতা তারা সাধারণত সংগঠনমুখী হয় না। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সমাজিক মানদণ্ডে কম যোগ্যতার কোনো ক্যাডার বা সাংগঠনিক পদাধিকারী, সংগঠনের নেতা হওয়ার সুবাদে সমাজেরও নেতা হয়ে বসেন, যা ক্ষেত্রবিশেষে অনাকাংখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। নিছক সাংগঠনিক (রুকন) ভোটাধিকারের বলে একজন কর্মচারী ভাইয়ের উপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমারত এসে যেতে পারে। কিন্তু তিনি কীভাবে ‘স্যার’দের নেতৃত্ব দিবেন?

মধ্যবর্তী কর্মপন্থা হিসাবে ক্যাডার সিস্টেমকে একেবারে বাদ না দিয়ে একে যথেষ্ট পরিমাণে নমনীয় তথা ফ্লেক্সিবল হিসাবে রিসেট করা যেতে পারে।

রিপোর্টিং সিস্টেম: বর্তমান কাঠামোর ব্যক্তিগত রিপোর্টিং সিস্টেমকে বাদ দিয়ে ‘তাওয়াছাও বিল হক্ব’ বা হকের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান সংক্রান্ত গাইডেন্সের আলোকে ব্যক্তিগত মান সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ চাইলে ছাপানো বইয়ে লিখতে পারবে, কেউ চাইলে ডায়েরিতে লিখবে, কারো যদি মনে থাকে তিনি স্মরণ করে বলবেন – এমনটি হতে হবে। মুমিন মুমিনের আয়না – এই হাদীসের ভিত্তিতে ভালো কাজে তথা একজন অপরজনকে ব্যক্তিগত মানোন্নয়নে সহযোগিতা করবেন।

সিলেবাস: জামায়াত-শিবিরের মানোন্নয়ন সংক্রান্ত পাঠ্যসূচি হাতে নিয়ে কারো পক্ষে এটিকে ‘মাওলানা মওদূদী লিমিটেড কোম্পানি’ বলাটা একেবারে অযৌক্তিক নয়। বিশ্বে জামায়াতই একমাত্র ইসলামী আন্দোলন নয়। যারা জামায়াতের বাহিরে বিভিন্ন দেশে ইসলামী আন্দোলন করছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও গিয়েছে, ‘সাফল্যের শর্তাবলী’, ‘নৈতিক ভিত্তি’ কিম্বা ‘হাকীকত সিরিজ’ ছাড়াই তো তারা কাজ করছে। তাই না? ইসলামী আন্দোলন বুঝার জন্য ‘তাফহীমুল কোরআন’ ছাড়া গত্যন্তর নাই বলে যারা মনে করছেন তারা আন্তরিকভাবেই একটা নির্দোষ ভুল করছেন। জামায়াত-শিবিরের লোকজন মাওলানা মওদূদীর ইসলামী সাহিত্য পড়ে ইসলামকে একটা পূর্ণাঙ্গ ও গতিশীল মতাদর্শ হিসাবে বুঝেছেন, জেনেছেন। একবিংশ শতাব্দিতে ইসলামকে সঠিকভাবে জানা ও বুঝার জন্য মাওলানা মওদূদীর সাহিত্যের বাহিরে আর কোনো উপযোগী বই-কিতাব নাই কিম্বা হতে পারে না – বিষয়টি কি এমন? 

সাংগঠনিক পাঠ্যসূচিতে দলীয় নেতাদের নোট টাইপের পুস্তিকা, একচেটিয়াভাবে মাওলানা মওদূদীর বই ইত্যাদির পরিবর্তে প্রাচীন ও সমকালীন নামকরা ইসলামী গবেষকবৃন্দের বইপুস্তকগুলোকে টেক্সট ও রেফারেন্স হিসাবে রাখতে হবে, যেখানে মাওলানা মওদূদীরও কয়েকটা বই থাকতে পারে।

সংগঠন কাঠামো ও প্লুরালিজম: জামায়াতের বর্তমান সংগঠন কাঠামো জায়ান্ট ট্রি মডেলের। একটি বটবৃক্ষের মূল, প্রধান কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা ও ফুল-পাতার মতো মাওলানা মওদূদীর সাহিত্য হলো জামায়াতের শেকড়; কেন্দ্রীয় সেটআপ হলো এর প্রধান কাণ্ড; ছাত্রশিবির, ছাত্রীসংস্থা ইত্যাদি হলো এর শাখা; ফুলকুঁড়ি, চাষী কল্যাণ সমিতি, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ইত্যাদি এর প্রশাখা। জায়ান্ট ট্রি বা বটবৃক্ষের আদলে গড়ে তোলা সংগঠন কাঠামো সংগঠন ও আন্দোলনকে সম্প্রতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে কতিপয় শীর্ষ জামায়াত নেতাকে আটক করার ফলে পুরো সংগঠন এর সকল শাখা-প্রশাখা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিকভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এর পরিবর্তে পেশা ও শ্রেণীগতভাবে সংগঠনের কলামগুলো যদি সত্যিকারভাবেই স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে গুচ্ছবদ্ধ থাকতো, তাহলে একটি কলামের লোকাল প্রবলেম বা ইস্যুতে অন্যগুলো একসাথে ভেংগে পড়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। আলাদা কিন্তু পাশাপাশি বানানো কোনো দালানের অংশবিশেষ বোমার আঘাতে ভেংগে পড়া সত্ত্বেও এর অন্য অংশ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা হলো এর উদাহরণ।

রাজনৈতিক ইসলাম বা ইসলামের রাজনৈতিকতার এই গণজোয়ারকে ধরে রাখতে হলে, কাজে লাগাতে হলে, এ দেশে ইসলামের জন্য কাজের নেতৃত্ব দিতে হলে বিদ্যমান ‘জায়ান্ট ট্রি মডেলের’ পরিবর্তে ‘ওয়াইড গার্ডেন মডেলে’ সংগঠন কাঠামো গড়ে তোলা আশু কর্তব্য। এতে স্বাতন্ত্র্যপ্রিয়তার কল্যাণে মানুষের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার উদ্ভব ঘটবে। গণবিপ্লব সৃষ্টি, তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো, টিকে থাকা ইত্যকার জাগতিক সফলতার অন্যতম শর্ত হলো আদর্শের পক্ষে ‘আইকন’ তৈরি হওয়া। টাওয়ারিং ফিগার তৈরি হওয়া। সেলফ ব্রান্ডিংকে স্বীকার না করলে, সুযোগ না দিলে, ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপ তৈরি হতে পারে না। এবং ক্যারিশম্যাটিক লিডার ছাড়া যৌথ নেতৃত্বে, সাংগঠনিকভাবে বিপ্লব সংঘটনের কোনো নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে নাই, হতে পারে না।

জামায়াত আত্মার বিকাশে গুরুত্ব আরোপ করে, আত্মপ্রকাশ বা আত্মবিকাশকে নিরুৎসাহিত করে, খারাপ ও ক্ষতিকর মনে করে। যার কারণে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মাওলানা মওদূদীর পরে আর কোনো আইকন তৈরি হয় নাই। আইকন না থাকায় জামায়াত জাতীয় জীবনে প্রভাবক বা সহায়ক ভূমিকার বাহিরে আজ পর্যন্ত এককভাবে তেমন মৌলিক কিছু করতে পারে নাই। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে জামায়াত হয়তোবা আগাতে পারতো।

জামায়াত আনুগত্যকে যতটা জোর দিয়েছে, আনুগত্যের পরিমণ্ডলকে যতটা বিস্তৃত করেছে, পরামর্শ-প্রক্রিয়াকে ততটা গুরুত্ব দেয় নাই। বরং ক্ষুদ্রতর, ক্ষেত্র বিশেষে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্নদের সমন্বয়ে গঠিত একপেশে দলীয় ফোরামের মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা ও পরামর্শ-প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব সীমিত করেছে। নেতৃত্ব ও আনুগত্যের ভারসাম্য দাবি এক অর্থে অর্থহীন বটে। কারণ, আনুগত্য থাকলেই নেতৃত্ব থাকবে, নেতৃত্ব থাকলে আনুগত্যও থাকবে। ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয় হলো নেতৃত্ব ও পরামর্শের মধ্যে। কারণ, নেতৃত্ব ও পরামর্শের মধ্যকার সম্পর্ক অনিবার্য নয়, আপতিক। একটি থাকলে অপরটি নাও থাকতে পারে বা কমও থাকতে পারে। সুতরাং নেতৃত্ব ও পরামর্শের মধ্যকার ভারসাম্যই কায়েম বা অর্জন করার ব্যাপার। নেতৃত্ব ও আনুগত্যের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা, এই অর্থে জামায়াতের অন্যতম তাত্ত্বিক ভ্রান্তি।

ইসলামী ঐক্যপ্রচেষ্টা: মাজারপূজারী ছাড়া সকল ইসলামী শক্তির সাথে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরাই সেরা – এমন অহমিকা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। জামায়াতের বাহিরে দেশে ইসলামের কাজ কারা কারা করছে, এমন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জামায়াতের উচ্চশিক্ষিত লোকেরাও তেমন কিছু বলতে পারে না। অন্যদেরকে সম্মান করতে না পারলে, সেক্রিফাইস করতে না পারলে, নিজেদেরকে সোল এজেন্ট হিসাবে জাহিরে ব্যস্ত থাকলে আত্মপ্রচারমুখী বাঙলীরা কেন আপনাদের সাথে কাজ করবে? সেটি যদি ইসলামের জন্যও হয়? ঐক্য যদি চান, তাহলে সময়ে সময়ে পেছনে গিয়ে বসার মনমানসিকতাও থাকতে হবে।

জামায়াত কি পারবে? জামায়াত কি এসব বিষয়কে গ্রহণ করতে, অন্তত সিরিয়াসলি ডিসকাস করতে পারবে? সুদিনে তারা নিয়োগ ও সুবিধা বন্টনে ব্যস্ত থাকেন। দুর্দিনে মোকাবিলায়। প্রকৃতপক্ষে উচ্চশিক্ষিত জনশক্তির এক বিরাট অংশ মাঝেমধ্যে অনানুষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলে সংবাদ পর্যালোচনা ব্যতিরেকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, কর্মপন্থা নির্ধারণ, পরামর্শ ও কৌশলগত সহযোগিতা প্রদান, জনমত গঠন ও প্রয়োজনে মোকাবিলার মতো ‘অসুবিধাজনক পথে’ অগ্রসর হয় নাই। ভাবাদর্শগত বিজয় সত্ত্বেও দলীয়ভাবে জামায়াতের পরাজয়ের শংকা এখানেই। কারণ, বাংলাদেশে ‘জামায়াত’ নামে সাধারণের মাঝে একতরফা প্রচারণার পরিণতিতে ক্ষেত্রবিশেষে বিতর্কিত এসব পরিচিত নেতাদেরকে দিয়ে একটি গণমুখী দল পরিচালনা দুরূহ ব্যাপার। বিপ্লবের সম্ভাবনার নিরিখে বিবেচনা করলে তাই এই পুরনো দলটির নাম ও নেতৃত্ব সহকারে যে পরিচিতি, তার পরিবর্তনই কাম্য।

জামায়াত স্বীয় নাম আর কাঠামোকে গুরুত্ব দিবে, নাকি স্বীয় মতাদর্শকে আপহোল্ড করবে – সেটি এখন তাদের সিরিয়াসলি ভেবে দেখার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়। যুগ ও সময়ের চাহিদা অনুসারে নিজেকে পুননির্মাণ করতে না পারলে জামায়াত বড় ধরনের ভুল করবে। যদি জামায়াত রি-স্ট্রাকচারড হয়ে, নিজেকে রি-ব্র্যান্ড করে ময়দানে উঠে আসতে পারে তাহলে এ পর্যন্ত জামায়াতের যত ভুল হয়েছে, যত ক্ষতি হয়েছে সব পুষিয়ে যাবে। এমনকি বিশাল লাভের বোঝা বইতে গিয়ে হয়তোবা হিমশিম খেতে হবে! প্রস্তুতি না থাকলে পরাজয়ের ঢেউয়ের আঘাতের চেয়ে বিজয়ের স্রোতের তীব্রতা সামাল দেয়া কঠিনতর হয়ে পড়ে।

আমি আশাবাদী, জামায়াতের নবীন নেতৃত্ব নতুনভাবে সংগঠন ও আন্দোলনকে গড়ে তুলবে। হতে পারে, মানুষ অধিকতর রক্ষণশীল হেফাজতে ইসলামের পরিবর্তে আধুনিক ও মধ্যপন্থী জামায়াতকেই শ্রেয়তর মনে করবে ও নেতৃত্বের জন্য বেছে নেবে। তেমন পরিস্থিতিতেও নতুন ধারার এই ইসলামপন্থী আন্দোলনকে অপরাপর ইসলামী ও ইসলাম বহির্ভূত সবাইকে নিয়ে থাকতে হবে, চলতে হবে, দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হতে হবে।

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Abdul Mannan: When the new leaders would come, I think, you will say the same kind of thing that time also.

Mohammad Mozammel Hoque: Brother, the point of your comment is not clear or may be, it is your personal understanding about me. I did not personalize it when I have written it. Instead, this note focuses on many relevant points. To my sheer surprise, perhaps, you did not find any point to agree!

Abdul Mannan: যে সমস্যার কথা আপনি বলছেন তা সবসময়ই থাকবে। ফলে সকল সময় আপনি এ ধরনের লেখার প্রেক্ষাপট দেখতে পাবেন। মানুষ না বদলিয়ে সংগঠন আর কত বদলানো যায়?

Mohammad Mozammel Hoque: সেজন্যই তো মাইন্ডসেটের পরিবর্তনের কথা বলেছি, আভ্যন্তরীণ বিপ্লবের কথা বলেছি। সিস্টেম না বদলিয়ে মানুষ বদল বা নেতৃত্বের পরিবর্তন ইত্যাদি যা-ই বলুন না কেন, তা নিছক অর্থহীন। একদৃষ্টিতে, যে সিস্টেমকে জামায়াতের শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়; অন্যদৃষ্টিতে, তা জামায়াতের অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকও বটে। এই সিস্টেম কম্যুনিস্ট মতাদর্শ হতে নেয়া। এটি সর্বাত্মকবাদী। কোরআন-হাদীস হতে এর পক্ষে দলীল দেয়া সম্ভব হলেও ইসলাম প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি হিসাবে এটিই একমাত্র সুন্নাহ মডেল – এমন নয়। আপনি মানেন বা না মানেন, নেতৃত্ব ও সংগঠনের এককেন্দ্রিকতা ও বহুকেন্দ্রিকতা (প্লুরালিজম) – এই দুটি আপাতবিরোধপূর্ণ নোশনকে যদি আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে আমি কী বলতে চেয়েছি তা বুঝা আপনার জন্য সহজ হবে। ধন্যবাদ। অন্তত কিছু তো বললেন!

Mohammad Ahsanul Haque Arif: আসসালামু আলাইকুম, স্যার। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও পুরোটা পড়ে ফেললাম। অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্যে। জামায়াতে ইসলামীর কিছু সংস্কারবাদী ভাইদের লেখার স্ববিরোধিতা, ব্যক্তিগত নিস্ক্রিয়তা ও প্রপার গাইডলাইন তৈরির চেষ্টায় কোনো সময় না দিয়েই কেবল ‘সংস্কার চাই’ টাইপ কথায় কিছুটা বিরক্ত ছিলাম। তাদেরকে বলেছিলামও যে, তোমাদের এইসব কথা সংগঠনের নেতৃত্ব কেন, কর্মীরাও গ্রহণ করবে না। আপনার লেখাটি আমার সেই কথাগুলোর বিপরীতে মনের চাওয়াগুলোর প্রতিফলন মনে হচ্ছে। অনেক ধন্যবাদ।

পরিবর্তন একটি গতিশীল সংগঠনের জন্যে নিয়মিত বিষয়। তা করতে না পারলেই বরং গ্রহণযোগ্যতা বা যোগ্যতা হারিয়ে যায়। অনেকদিন ধরেই অনেক কথা শুনছিলাম, কিন্তু প্রপার গাইডলাইন দাঁড় করাতে দেখেছি খুব কম মানুষকেই। আবার উপস্থাপনার দুর্বলতায় অনেক সময় ভালো কথাও খারাপে পর্যবসিত হয়েছে। যেমন, যে মানুষটি gone case বলে শুরু করবে, তাকে বন্ধু বা গঠনমুলক সমালোচনাকারী হিসেবে চিন্তা করার যে সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার দরকার তা সাধারণভাবে থাকে না। তাই এই জাতীয় শব্দ নিজেদের লেখায় ব্যবহার করে যারা সংস্কার চায়, তাদের কথা শোনার চেয়ে এড়িয়ে চলে সময় বাঁচানোই ভালো মনে করি। আমার এই ধারণা ভুলও হতে পারে। কিন্তু একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে আমি এভাবেই চিন্তা করি।

আপনার লেখাগুলো অন্যদের থেকে আলাদা মনে হয় এই কারণেই যে, আপনার লেখা এমন সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়েই সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরছে। সুন্দর পদ্ধতিতে প্রস্তাব দিলে এবং সুন্দর প্রস্তাব হলে তা সময় কম বা বেশি লাগতে পারে, কিছু মানুষের মনপুত নাও হতে পারে, কিন্তু ফলাফলে গ্রহণযোগ্য হবে ইনশাআল্লাহ। যারা আপনার নোটটি এবং আমার কমেন্টটি পড়বে তাদের অনুরোধ করবো, এই বিষয়টি ভেবে ও অনুসরণ করেই আমাদের আগানো দরকার। ভালো পরামর্শ ছুঁড়ে দিলে তা ঢিল হিসেবে চিন্তা করা হয়, পরামর্শ হিসেবে নয়।

আপনার লেখার যে পরিবর্তনগুলোর কথা বলেছেন, তার বেশিরভাগের সাথেই একমত। একটি রেফারেন্স নোট হিসেবে চিন্তা ও কাজে রাখার চেষ্টা করছি আপনার এই নোটটিকে। ধন্যবাদ, স্যার।

Mustafiz Nadem: “জামায়াত-শিবিরের মানোন্নয়ন সংক্রান্ত পাঠ্যসূচি হাতে নিয়ে কারো পক্ষে এটিকে ‘মাওলানা মওদূদী লিমিটেড কোম্পানি’ বলাটা একেবারে অযৌক্তিক নয়।”

শিবিরের সিলেবাস সম্পর্কে একটু বলবো। সিলেবাসে কর্মী হওয়ার জন্য ১০টি বই পড়তে হয়, যার মধ্যে ২টি মাওলানা মওদূদী লিমিটেড কোম্পানির (আপনার ভাষায়)। সাথী হওয়ার জন্য প্রায় ৪০টি বই পড়তে হয়, যার মধ্যে ৮/৯টি মাওলানা মওদূদী লিমিটেড কোম্পানির। সদস্য হওয়ার জন্য প্রায় ৮০টি বই পড়তে হয় যার মধ্যে ১৭/১৮টি বই মাওলানা মওদূদী লিমিটেড কোম্পানির। আপনাদের সময় হয়তো সব বই মাওলানা মওদূদীর লেখা ছিল। এখন কিন্তু ইমাম গাজ্জালিসহ ড. ইউসুফ আল কারজাভীর বইও পড়ানো হয়। আমি আপনার সাথে আংশিক একমত পোষণ করছি, সিলেবাস আপডেট করা যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়, আমাদের পাঠ্যাভ্যাস নেই বললেই চলে। আপনার ভিন্ন চিন্তাটাই ভালো লাগে…।

Mohammad Mozammel Hoque: সিলেবাস, রিপোর্ট বইসহ যে কোনো সাংগঠনিক ম্যাটেরিয়্যাল ও অভ্যন্তরীণ প্রোগ্রামাদিকেও এমনভাবে সেট করতে হবে যাতে যে কেউ সেটি পছন্দ করতে বাধ্য হয়। সংশ্লিষ্টদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মাওলানা মওদূদীর পরে মাওলানা আবদুর রহীম ছাড়া কোনো আইডিওলগ জামায়াতে সৃষ্টি হয় নাই। যেসব সম্মানিত শীর্ষ দায়িত্বশীলদের গাইডবই টাইপের বইপত্র সিলেবাসে রেখে পড়ানো হয় তাঁরা কেউই দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা লেখক-গবেষক নন। তাঁরা জামায়াত নেতা। এর অতিরিক্ত কিছু নন। শুনতে খারাপ লাগলেও এটি সত্য। যাদের কোনো বই জামায়াত-শিবিরের সিলেবাসে টেক্সট হিসাবে নাই, এমন অনেক প্রখ্যাত ইসলামী গবেষক-চিন্তাবিদ বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশে রয়েছেন।

জামায়াতের রিপোর্ট বইয়ে ‘টার্গেট’ শব্দটির যে যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা যায় তাতে টার্গেটকৃত ব্যক্তি যদি দেখে যে তাকে ‘…. টার্গেট’ হিসাবে লেখা হচ্ছে; তিনি যদি সেন্সিবল পর্যায়ের হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বিব্রতবোধ করবেন। ‘টার্গেট’কৃত ব্যক্তির মধ্যে চেঞ্জ না হলে তিন হতে ছয় মাসের মধ্যে তাকে বাদ দিয়ে নতুন ‘টার্গেট’ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আপনিই বলুন, তিন-ছয় মাসে কি একজন মননশীল ব্যক্তিকে কনভিন্স করা সম্ভব? এভাবে জামায়াত সংগঠন পদ্ধতির মধ্যকার বহু অযৌক্তিক এলিমেন্টের কথা বলা যায়। এরপরও যখন ‘কাজ হচ্ছে’ তাহলে এসব ‘সমালোচনার’ লক্ষ্য বা ভিত্তি কী? এমন প্রশ্ন যে কোনো সংগঠনবাদী বলতে পারেন। ভাই, তাবলীগ জামায়াতের ‘বহুত ফায়দা হবে’ টাইপের গৎবাঁধা মেশিনারি দাওয়াতেও তো এরচেয়ে বেশি লোক জড়ো হচ্ছে। আসলে অবস্থাটা এমন যে, কিছু একটা বললেই হলো। লোক পাওয়া যাবেই। বাংলাদেশে লোক এত বেশি…।

Khandoker Zakaria Ahmed: জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে যদি একান্তে প্রশ্ন করা হয় আপনারা মতাদর্শকে (ইসলাম) আপহোল্ড করবেন নাকি সংগঠনকে (জামায়াতকে)? তাঁরা সহজ উত্তর দিবে না। হয়ত অনেক ঘুরিয়ে-পেচিয়ে যুক্তি দিয়ে বলবে, একটি আরেকটির পরিপূরক। অতএব, দুটোকে আপহোল্ড করতে হবে। আরো সহজভাবে বললে তাদের কথার উত্তর হয়ত দাঁড়াবে, সংগঠনকে (জামায়াত) আপহোল্ড করলে ইসলাম আপহোল্ড হবে। কিন্ত বাস্তবতা তা নয়। জামায়াতের এখানে সংগঠন বিষয়ে ছাড় দিতে হবে। মোজাম্মেল ভাইয়ের দীর্ঘ লেখা থেকে তা পরিস্কার হয়েছে। ইসলাম শুধুমাত্র ধর্ম বা একটি বিশ্বাস নয়, এটি একটি জীবনাদর্শ – এটি এখন বাংলাদেশের সর্বমহলে (ইসলামের বিভিন্ন ধারা, এমনকি ইসলামবিরোধী ধারাও, বলতে গেলে প্রায় সবার কাছেই) প্রতিষ্ঠিত ধারণা। এই প্রতিষ্ঠার পিছনে জামায়াতের অবদান সবচেয়ে বেশি, যেটিকে জামায়াতের ভাবাদর্শগত বিজয় নিঃসন্দেহে বলা যায়। এ বিজয়কে কার্যকর করার জন্য একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো ও কাঠামোটির সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই।

মোজাম্মেল ভাইয়ের লেখা থেকে পরিস্কার, জামায়াতের বিদ্যমান কাঠামো, এপ্রোচ ও কৌশলে বহু সীমাবদ্ধতা আছে, যার কারণে দলীয় জামায়াতের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষমতায়ন বা বিজয় সুদূরপরাহত। তিনি সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করে করণীয় উল্লেখ করেছেন। আমার মনে হয়, বিষয়গুলো আরো সুসংগঠিতভাবে করার জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে, যারা সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলোচনা করে ও অতীত-বর্তমান-সম্ভাব্য ভবিষ্যৎসহ সবকিছু বিশ্লেষণ করে সুর্দিষ্ট করণীয় ঠিক করতে পারেন। মোজাম্মেল ভাইয়ের এ লেখা কমিশনের কাজকে সহায়তা করতে পারে। আমি এটিও ধারণা করি, জামায়াতের পক্ষে এ জাতীয় কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটিও সত্য– কাউকে না কাউকে এটি করতে হবে। আমি এও বিশ্বাস করি, দেশে এ জাতীয় কমিশন গঠনের জন্য অভিজ্ঞ, যোগ্য, তাকওয়াসম্পন্ন উপযুক্ত লোকও আছেন। তাঁদের নিয়ে হয়ত এ কাজের জন্য কমিশন বা ভিন্ন কোনো নামে কমিটি গঠন হবে, কিন্তু ততদিনে অনেক খেসারতি দিতে হবে।

Mohammad Mozammel Hoque: Though I have addressed Jamaat-e-Islami, actually it could be considered as a blue print of a viable pro-Islamic movement in Bangladesh. Thanks.

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *