সম্পর্ক যত নিকটতর, সম্পর্কের দায় তত ব্যাপকতর, তিক্ততা তৈরীর আশংকাও তত বেশি।
যত দূরের তত ভালো। যতটা কাছের ততটা ঝুঁকিপূর্ণ আমাদের সব সম্পর্ক।
সব সম্পর্কই মূলত দেয়া-নেয়ার ব্যাপার। নিঃস্বার্থ বলে কিছু নেই আমাদের সম্পর্ক-হিসেবে।
দিনশেষে সবকিছু, কিছু না কিছু দেয়া-নেয়ার ব্যাপার। অথচ, মানুষ কেমন যেন নির্লিপ্ত হয়ে পড়ে নিকটতর সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
সামাজিক সম্পর্কে মানুষ যতটা যত্নবান, ব্যক্তিগত সম্পর্কের দায় মিটানোর ব্যাপারে নয় ততটা আন্তরিক।
মনে করে, ওতো আছে। থাকবেই। কাছের মানুষটা যেন তার কেনা গোলাম।
কারো ভক্ত হওয়া যতটা সহজ, যতটা মধুর, অনুসারী বা সহযোগী হওয়াটা অনেক সময়ে ততটা সুখময় হয় না।
কেননা, এতে থাকে সুনির্দিষ্ট দায়, অনুপেক্ষনীয় দায়িত্ব। তাই, প্রেম করা সহজ, সংসার করা কঠিন।
মাঝে মাঝে, নিকটবর্তী হওয়ার পরে সম্পর্কগুলো হয়ে পড়ে অধিকতর নাজুক। ব্যাপারটা কেমন যেন জটিল। প্যারাডক্সিক্যাল।
রোমান্টিক কল্পনার মাদকতা, বাস্তব সাক্ষাৎ-সম্পর্কে, অনেক সময়ে ফিকে হয়ে আসে।
অযত্ন আর একতরফা প্রত্যাশার চাপে এক সময়ের সুস্থ সম্পর্কের ঘটে নিরব মৃত্যু।
নিহত হয় সম্পর্ক। বিগত সময়ের অপসৃত বাস্তবতাকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। জীবন হয়ে যায় সময় ক্ষেপণের আয়োজন। অসহ্য হয়ে ওঠে জীবনের দায়।
তাই, নিহত সম্পর্কের বোঝা বয়ে বেড়ানোর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর নাই। মানুষের জীবনে।
এর থেকে বাঁচার কোনো পথ কি আছে?
হ্যাঁ, আছে নিশ্চয়। পক্ষদ্বয় যত্নবান হবে সম্পর্কটিকে সারিয়ে তোলার জন্য। কথাবার্তা বলবে মনখুলে। সমস্যা যে হয়েছে, তা বুঝবে।
সবার আগে, স্বীকার করে নিবে, সম্পর্কটা এখন ততটা নির্ঝঞ্ঝাট নয়। মেনে চলবে তারা স্বীকৃত সব সম্পর্কসীমা। অধিকার সচেতনতার পাশাপাশি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে হবে সম দায়িত্ব পরায়ন।
কেবলই নিজের অধিকারসচেতন আবেগি মানুষদের “কাছে আসার গল্পগুলো” পরিণতি লাভ করে দুঃসহ তিক্ততায়। অহরহ দেখছি আশেপাশে।
দায়-দায়িত্বহীন বন্ধুত্বের আবেগ সহসাই ফুরায়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, the distant the better; the closer the bitter.
অতিকাছের একজন হতে পারতো যে, সে থাকে বহুদূরে। পাওনি তাকে। ক্ষতি কী? কিভাবে তুমি নিশ্চিত হলে, কাছাকাছি এলে সবকিছু হত অনেক বেশি সুখের?
সাক্ষাত-সম্পর্কে আহত অনুভবের চেয়ে দূরে থাকাই ভালো। তাতে করে, আবেগটুকু অন্তত বেঁচে থাকে।
নিহত সম্পর্কের কষ্ট বয়ে বেড়ানোর চেয়ে না পাওয়ার বেদনা বরং ভালো। কাছাকাছি হওয়ার চেয়ে মাঝে মাঝে দূরত্বটাই শ্রেয়।
মিলনের চেয়ে মাঝে মাঝে বিরহ মধুরতর, পাওয়ার চেয়ে, কখনো কখনো না পাওয়ার সুখ মধুময় বেশি।