এক সিনসিয়ার পাঠক আমাকে সতর্ক করে বলেছেন:

“ইসলামে ফালাসাফার চর্চা কড়াভাবে নিষিদ্ধ। স্যার যেসব ওয়ার্ড য়ুজ করেন এসব আলোচনায় তা কুফুরির সামিল। যে কোনো ‘আলিমকে দেখালেই বলবে, সালাফরা এসব আলোচনায় ভয়ংকরভাবে রাগ করতেন।

স্যার, আপনি স্মার্ট হতে পারেন, বাট আপনি ভুল পথে achen”

আমি বললাম, তাহলে ফিলোসফিতে শিক্ষকতা করার মাসলাটা কী? আপনার কথা অনুসারে তো জায়েয হওয়ার কথা নয়। যেমন, সুদী ব্যাংকে চাকরি করা জায়েজ কিনা, এমন প্রশ্নের মতো।

তিনি বললেন, “জ্বী, সুদী ব্যাংকে চাকুরি করাত জায়েজ নই ই।”

আমি বললাম, তাহলে ফিলোসফি বিভাগে শিক্ষকতার চাকরি করা কি সুদী ব্যাংকে চাকরি করার মতো? আপনার ধারণায়?

তিনি পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেন। বললেন, “এটা দারুল ইফতার মুফতিরা বলবেন আমি নগন্য জাহেল মানুষ,ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা জানি তাই বলেছি। আপনি আখিরাত ও দুনিয়ার লাভের স্বার্থে নির্ভরযোগ্য কোনো ‘আলিমের থেকে জেনে নিতে পারেন।”

আমি নাছোড়বান্দা। বললাম, আমি আপনার মতটা জানতে চাচ্ছি। You are not giving fatwa. just what’s up to you …? what do you think about it personally? I would not mind anything. Your personal opinion please!

এবার তিনি আসল কথাটা বললেন, “সুদী ব্যাংকে কেউ চাকুরী করলে ঈমান হারা হয় না, যদ্দুর জানি। তবে কবিরা গুনাহগার হয়। …অনেক বেশি পাপ। কিন্তু এমন উদাহরণভুড়ি ভুড়ি আছে সালাফদের সময় থেকে, যারা ফালাসাফা আর কালাম চর্চা নিয়ে ব্যস্ত ছিল তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। ঈমান হারা হয়েছে।

জাহমিয়া, জাবরিয়া, মু’তাযিলারা গ্রীক ফিলোসফি ও কালাম চর্চা দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। কুর’আনকে মাখলুক বলা, জান্নাত জাহান্নাম অস্বীকার, পরকাল অস্বীকার থেকে শুরু করে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছেন টাইপ কথা অব্দি।

তাই, আমার কথা সুদী ব্যাংকে চাকরী করা আর ফিলোসফির শিক্ষক হওয়া, দু’টা সেম নয়। ফিলোসফির শিক্ষকতা বা চর্চা কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে জায়িজ হতে পারে, যেমনটা পূর্ববতী কিছু সংখ্যক ইমামরা করেছেন। আমভাবে সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার চেয়েও ভয়ংকর। কারণ এক্টায় ঈমান চলে যায়, আরেক্টায় কবিরা গুনাহগার হয়।”

আমি বললাম, I appreciate your sincerity but disagree with your opinion. You have misunderstood the whole thing. Though it is not your personal problem, anyway.

মাস ছয়েক আগে “কীভাবে বুঝবো কোন ধর্ম সঠিক?” শিরোনামে একটা ভিডিও বক্তব্য দিয়েছিলাম। সেটার কমেন্ট থেকে এই উদ্ধৃতি।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Abdullah Maroof: স্যার, আশায়েরী, মু’তাযেলী, মাতুরিদী মত নিয়ে একটা তুলনামূলক আলোচনা হলে ভালো হইতো।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হয়তোবা। আমি ভবিষ্যৎমুখী মানুষ। বর্তমানের প্রতি অধিকতর মনোযোগী। অতীতের প্রতি, বিশেষ করে ইতিহাস চর্চার প্রতি খানিকটা বিতৃষ্ণ। ইতিহাসমুখী যারা, তারা সাধারণত ষড়যন্ত্রতত্ত্ববাদী এবং নেতিবাচক মন-মানসিকতার হয়ে থাকে। সেজন্যে, ইতিহাস চর্চাকে সাধারণত এড়িয়ে চলি। যদিও ইতিহাস একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ।

Abdullah Maroof: স্যার, ইবনে খালদুনের মুকাদ্দিমা নিয়েও তো আলোচনা হইসিলো ?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু আলোচনাটা করেছিলেন আরেকজন। আমি ওনার কাছ থেকে এ ব্যাপারে শুনতে চেয়েছি। ইবনে খালদুন সম্বন্ধে আমার তেমন পড়াশোনা নাই। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু সেক্যুলার বা প্রগতিশীল শিক্ষককে দেখেছি, তারা ইবনে খালদুনের পক্ষে খুব জোরেশোরে কথা বলেন।

Abdullah Maroof: এইখানে ইতিহাসের কোন ব্যাপার নাই স্যার।

উদাহরণ: আল্লাহের কি আকার আছে?

মু’তাযেলী: নিরাকার।

আশায়েরী: তাঁর হাত পা আছে।

মাতুরিদী: তিনি নিরাকার ও আকার আছে।

সবারই নিজস্ব যুক্তি আছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এ ব্যাপারে আমার নিজস্ব যুক্তি আছে। এবং সেগুলো উপরের প্রত্যেকটি থেকে স্বতন্ত্র। কিন্তু সেটি বলার জন্য তো এই পোস্ট নয়।

Abdullah Maroof: স্যার, এইগুলো এই পোস্টে আলোচনা করবোও না। আমি জাস্ট এই বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনার জন্য অনুরোধ করছি।

Rafan Ahmed: কেউ যদি ইসলামের মূল উসূল, মেটাফিজিক্স ভালো করে জানে ও মানতে পারে তাহলে পথভ্রষ্ট হওয়ার সুযোগ কম। তবে, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে, দর্শন হলো একটা চোরা গলি। যে যেমন চায় তেমন ধারণা বানিয়ে গাট বেধে বসে থাকতে পারে।

সালাফদের হুশিয়ারি মানার পক্ষে আমি নিজেও। ইতিহাসের অধিকাংশ কালামবিদ সঠিক পথ থেকে কোনো না কোনোভাবে বিচ্যুত হয়েছেন শুনেছি। তবে ইসলামের প্রসার করতে গেলে এর পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো ভালো করে বুঝতে হবে। এই বাধার অনেকটাই আদর্শিক, কোনো না কোনো দর্শনভিত্তিক। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামে এগুতে অনেকটা বাধ্য হয়েই এগুলো জানা লাগে।

আল্লাহ ছাড়া কোনো সাহায্যকারী নেই।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: দর্শন হলো বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যবর্তী জায়গা। এজন্য দেখবেন, কট্টর বিজ্ঞানবাদী ও কট্টর ধর্মবাদী লোকেরা দর্শনকে এড়িয়ে গিয়ে পরস্পর পরস্পরকে খণ্ডন করার চেষ্টা করে। অথচ, Philosophy starts with science; and ends-up in religion. এ নিয়ে আমার একটি লেখা আছে: বিজ্ঞানের পরিণতি হলো দর্শন, আর দর্শন শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠে ধর্ম

Robin Khan: যখন আমি এপিকিউরাসের বস্তুবাদী দর্শনের সাথে পরিচত হই কোনোক্রমেই তার দর্শন মাথা থেকে তাড়াতে পারছিলাম না; যদিও আমার ইসলামী দর্শন ও ইতিহাস, কুরআন, হাদীসের সাথে সামান্য পরিচয় আছে। আসলেই দর্শন চোরাগলির রাস্তা, একবার প্রবেশ করলে সবাই বের হয়ে আসতে পারে না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মুশকিলের ব্যাপার হলো, ফিলোসোফিকে বাদ দেওয়ার জন্য তো ফিলোসফিই লাগবে …! আসলে আমরা যখন যুক্তি দিয়ে কোনো কিছু বলি, তখন মূলত ফিলোসফিই চর্চা করি। যদিও এ সম্বন্ধে আমরা সাধারণত সচেতন থাকি না। everyone does philosophy, but only a few are aware of that.

Robin Khan: ধন্যবাদ। যখন আমার মনে এরকম দার্শনিক বিশ্বাসেরর ব্যাপারে সন্দেহ জাগে, সূরা বাকারার প্রথম ১৫ আয়াত স্মরণ করি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কথায় বলে: অল্প জ্ঞানে নাস্তিক, গভীর জ্ঞানে আস্তিক।

Robin Khan: দোয়া করবেন

ফায়াজ শাহেদ: ওই লোক তো নিজেই স্বীকারোক্তি দিলেন তিনি কম জানেন। কোনো বিষয়ের ওপর স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে চুপ থাকা ভালো। উনার মতে– ফালসাফা চর্চায় অতীতের অনেক মুসলিম গোমরাহ হয়ে গেছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো— উনি যার সাথে তর্ক করছেন তিনিও কি গোমরাহ হয়েছেন?

তিনি তো বরং ইসলামের খেদমতে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

তথাকথিত ইসলামিক স্কলার দাবিদার কতিপয় আলেম জ্ঞান জিনিসটাকে মডিফাই করে ফেলেছে, যেখানে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই জ্ঞানকে কুরআনে কোনো শব্দ দিয়ে বিশেষায়িত করেননি।

আমার প্রশ্ন হলো— আপনারা যারা বলেন ফিলোসফি পড়ে মানুষ গোমরাহ হয়, আমি বলবো আপনারা আল্লাহর কুরআনের দিকে তাকান। তিনি বলেছেন ‘কুরআন পড়ে কেউ হেদায়তের পথে আসবে, কেউ গোমরাহীর পথে যাবে।’ বড়ই আশ্চর্যের বিষয় হলো, কুরআন পড়ে কেন গোমরাহ হবে মানুষ?

হুম— যে গোমরাহ হবার সে কুরআনের মতো মহাগ্রন্থ পড়েও গোমরাহ হয়, শুধু ফিলোসোফি হতে যাবে কেন?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কবি সাহেব, ফ্যান্টাস্টিক বলেছেন।

Mostafa Nur: ফিলোসফি এবং ফিলোসফির চর্চায় সমস্যা নয়। সমস্যা হলো ফতোয়া নিবিষ্টদের ইসলাম জ্ঞান। উনারা ইসলামকে যতটা বুঝেন তার মাঝে ইসলামের পক্ষে প্রত্যেকটি কুঁড়েঘর নির্মাণ করে নিজের চিন্তায় অন্যকে চিন্তা করতে বাধ্য করেন। কিন্তু ইসলাম যে বিশাল বিস্তৃত সমাধান ধারণ করেছে তার গভীরতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে উনাদের যে শ্রম-ঘাম-রক্ত ব্যয় হতে পারে, তার চ্যালেঞ্জ নিতে উনারা কখনোই প্রস্তুত নন। ফলে দ্রুত ফতোয়ার কাজটি সেরে নেন এবং ইসলামের সোলএজেণ্ট সাজার জন্যে কতিপয় নিজস্ব ভাবনাকে ইসলামের পক্ষের ফতোয়া বলে তৃপ্ত হন। উনারা জ্ঞান চর্চার প্রতিপক্ষ সেজে নিজের জ্ঞানের স্তুতি আওড়ান, এমনকি কখনো কখনো ক্ষিপ্ত আচরণ করেন।

আপনি এগিয়ে থাকুন। সত্যকে উচ্চকিত করার আলো হয়ে জ্বলতে থাকুন অন্ধকার ঠেলে। ফি আমানিল্লাহ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি তো এতটা কড়া কথা সাধারণত বলেন না ….!

Mostafa Nur: বলি না, কিন্তু বলতে হলো যে…

Sakib Bin Salam: Give the man who challenged you a job at a bank. You’ll see how quickly his moral compass switches from “kabira gunah” to “it’s just a means to an end”.

Abubakar Siddique: একজন শিক্ষক যদি অমুসলিম দেশের নাগরিক হন, তিনি সে দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হন, ছাত্র সব অমুসলিম হয়, তার পাঠদান যদি হয় তাদের ধর্মীয় শিক্ষা; তাহলে তিনি কি শিক্ষকতা ছেড়ে দিবেন? পাঠদানে তার ঈমান ছুটে যাবে? ঈমান কি এত নরম? আসলে স্যার, আমাদের এই জাতীয় সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়নি বিধায় ইসলামের ব্যাপকতা বুঝি না, গভীরতায় যাই না। একজন ঈমানদার বিজ্ঞানের শিক্ষক হলে ডারউনের থিওরি বা অর্থনীতিতে মার্ক্সিজম চাপ্টার বাদ দিবেন? নিশ্চয় নয়। মাদ্রাসায় দর্শন শাস্ত্র না থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। যাযাকাল্লাহ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যুক্তি-বুদ্ধি তথা দর্শনচর্চা এমন একটা ব্যাপার, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে কী বলছেন তা নিয়ে ‘যুক্তিবুদ্ধির পক্ষে আল্লাহ তায়ালা’ শিরোনামে আমরা একটা নিবন্ধ ছাপিয়েছি, পড়ে দেখতে পারেন।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া, ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

Khondoker Zakaria Ahmed: নিঃসন্দেহে সিনসিয়ার পাঠক আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী! আপনাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে চায়!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে। তাহলে এখন কী করা যায়? আপনার পরামর্শ?

Khondoker Zakaria Ahmed: আমি ভাবছি অন্য কথা। এ রকম সালাফ ভক্তদের সংখ্যা কেমন আছে। যদি খুব বেশি হয়ে থাকে, তাহলে অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে বেশি সময় লাগবে না। অবশ্য তার চিন্তাভাবনাও এক ধরনের ফিলোসফি। আপনি কী বলেন?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: দুই ধরনের লোকেরা জোরেসোরে কোমর বেঁধে ফিলোসফির বিরোধিতা করে: (১) ধর্মবাদীরা এবং (২) বিজ্ঞানবাদীরা। সালাফীরাও ফিলোসফির বিরোধী, স্টিফেন হকিংও ছিলেন ফিলোসফির বিরোধী। উনার গ্র্যান্ড ডিজাইন বইয়ের কয়েক চ্যাপ্টারে উনি ফিলোসফির বিরোধিতা করেছেন। যদিও উনি সেটি করেছেন ফিলোসফিক্যালি। একচুয়ালি এটি করতে গিয়ে উনি ফিলোসফি অফ সাইন্সই চর্চা করেছেন; যদিও সে সম্বন্ধে তিনি সচেতন ছিলেন না বলেই মনে হয়।

আমরা হাঁটার সময় যেমন ফিজিক্সের নিয়ম অনুসারে হাঁটি। ফিজিক্সের লোকেরা সেটা বুঝতে পারলেও আমরা বুঝি না; সঠিক করে বলতে পারি না; কিন্তু অবচেতনভাবে সেসব নিয়ম মেনে চলি।

তেমনি করে, মানুষ যখন চিন্তা করে তখনই সে ফিলোসফিক্যালি চিন্তা করতে প্রকৃতিগতভাবে বাধ্য। যদিও প্রফেশনাল ফিলসফারেরা বিষয়গুলো যেভাবে বুঝতে পারে, সাধারণ লোকেরা নিজেদের চিন্তার নিয়মবলী ও গতি-প্রকৃতিকে সেভাবে অর্থাৎ ভালো করে বুঝতে পারে না। অথবা, বুঝলেও ভাষায় সেটাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে পারে না।

ওই যে কথাটা, ইদানিং যেটা বলছি, everyone does philosophy; but only a few are aware of that.

Khondoker Zakaria Ahmed: বিজ্ঞান নিজেই ফিলোসফি। লজিক যদি ফিলোসফি হয়, তাহলে বিজ্ঞানও ফিলোসফি। লজিক ব্যতীত বিজ্ঞান হয় না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিজ্ঞান ফিলোসফি নয়। কিন্তু বিজ্ঞানের ভিত্তি এবং পরিণতি হলো ফিলোসফি।

Khondoker Zakaria Ahmed: ফিলোসফির ছাত্র না হয়ে ফিলোসফি নিয়ে কথা বললে যে ভুল হয়, সেটাই হয়েছে। ধন্যবাদ সঠিকটা জানানোর জন্য।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ফিলোসফি আর ফিজিক্স, দুইটা খুব কাছাকাছি। এরিস্টটলের বিখ্যাত বইয়ের নাম হচ্ছে ‘মেটাফিজিক্স’ মানে ‘দ্য বুক আফটার ফিজিক্স’।

Khondoker Zakaria Ahmed: আমারও তাই মনে হয়। আমাদের সমস্যা হলো বইগুলো পড়া হয় না। ফলে ভাণ্ডারে সম্পদের বড়ই অভাব।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার পেশা এবং বই পড়া, দুইটা ভিন্নমুখী পথ। তারপরও আপনার আগ্রহ দেখে বেশ ভালো লাগে। পুরনো লোকদের মধ্যে খুব অল্প লোকের সাথে আমার সম্পর্ক অব্যাহত আছে। আপনি তার অন্যতম এবং প্রধান ব্যক্তি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন! আমাদেরকে রহম করুন! তাঁর হেদায়েতের উপর টিকে থাকার তৌফিক দান করুন! দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন! আ-মীন।

Khondoker Zakaria Ahmed: আ-মীন।

Amim Mohammad: সেক্যুলারিজম কুফরী মতবাদ।!? সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা কুফরী শিক্ষাব্যবস্থা।!? সুতরাং, সেক্যুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া ও শিক্ষকতা করা হারাম!!??!!

এই ফতোয়ার মাধ্যমে আশা করি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটাই যদি সেক্যুলার হওয়ার কারণে নাজায়েজ হয়, তাহলে সেটার অধীনস্থ কোনো ডিসিপ্লিন বা বিভাগ জায়েয হওয়ার তো আর প্রসঙ্গই আসে না; তাই না?

Amim Mohammad: জ্বী স্যার! আরো বড় মাপের ফতোয়া দিতে হবে!

সেক্যুলার রাষ্ট্র একটি কুফরী রাষ্ট্র।!? কুফরী রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান কুফরী!? সুতরাং, সরকারি ও সরকার অনুমোদিত সব প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও সুবিধা নেওয়া কুফরী অথবা হারাম!!??

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সওয়াবের নিয়তে বেয়াদবি করার কাজে অভ্যস্ত আমাদের এক সহকর্মী ইতোপূর্বে এক মাদ্রাসার মুফতি ছিলেন। তিনি ক্লাসের মধ্যে সহশিক্ষার বিপক্ষে বলছিলেন। তখন সেখানে উপস্থিত স্টুডেন্টদের মধ্য থেকে কেউ উনাকে বলল, ‘স্যার, আপনি যদি সহশিক্ষা না-জায়েয মনে করেন, তাহলে এরকম একটা সহশিক্ষাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে আসলেন কেন?’ ওই শিক্ষক কী জবাব দিয়েছিলেন সেটা আমি ঠিক স্মরণ করতে পারছি না। তবে ওই ক্লাসের স্টুডেন্টরাই আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছিল। এটুকু মনে আছে।

অধিকতর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

Hasan Mahmud: ‘ফিলোসফি’ কি জিনিস, এটাই বা কয়জন জানে? এই যে ‘সালাফদের’ কথা বলা হচ্ছে, তাঁরাও একটা ফিলোসফির উপর দাঁড়িয়ে…

Numan Ahmad: ইসলামী ফিলোসফি তো পড়া-জানা ফরজ। যেমন- শরহে আকায়েদ, আল ফিকহুল আকবর ইত্যাদি কিতাবাদিতে যা আছে। অনৈসলামিক ফিলোসফি পড়া নাযায়েজ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যেটাকে জায়েজ বলছেন, আর যেটাকে না-জায়েজ বলছেন, দুটিরই তো পদ্ধতি একই। অর্থাৎ একই জিনিসের দুই ধরনের প্রয়োগ। ছুরি দিয়ে অপারেশন করা আর ছুরি মেরে কাউকে হত্যা করার মতো।

Muhammad Mostafijur: মধ্যযুগের ইসলামী সভ্যতায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, তাঁদের সবাই তো দার্শনিক এবং খাঁটি মুসলিমও। তবে আপনি আপনার চাকরি থেকে সরে আসবেন– এটা সমধান হতে পারে না। আমি শুধু এটুকুই বলবো, বর্তমানে যে ফিলোসফি পড়ানো হয় এটার যেসব পয়েন্ট কুরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক, সেটা পড়ানোর সময় বলে দেওয়া যায় না? আমি মনে করি, এটা বলে দেওয়া উচিত ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমি মনে করি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান হতো, তাহলে আপনার কথাটা প্রাসঙ্গিক হতো।

H Al Mahdee: দর্শন নিয়ে এই উপমহাদেশের আলিম সমাজে এক ধরনের অদূরদর্শিতা আছে। সে জন্যে আমাদের সালাফরা রোগ বুঝে ঔষধ দিতে পারতেন। আর আমরা শুধু লম্বা করে নাউজুবিল্লাহ পড়ে হারাম হারাম বলে অতি বেহেশতি সাজি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সমস্যা হলো, ধর্মের পক্ষের লোকদের মধ্যে যারা দর্শন সম্পর্কে খানিকটা পজেটিভ, তারাও দর্শন সম্পর্কে বেশ খানিকটা ভুল ধারণা পোষণ করে।

তারা মনে করে, দর্শন জিনিসটা আদতে খারাপ। কিন্তু নাস্তিকতাবাদসহ নানা ধরনের ‘খারাপ দর্শন’গুলোকে মোকাবেলা করার জন্য খানিকটা দর্শন চর্চা করা যেতে পারে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো।

অথচ, দর্শন হচ্ছে একটা পদ্ধতি, মুক্তচিন্তার পদ্ধতি। এই সার্বজনীন মানবিক চিন্তাপদ্ধতি কাজে লাগিয়ে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে যে কেউ যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথবা, যে যেদিকে যাক না কেন, সে মূলত এই পদ্ধতিতেই অগ্রসর হয়েছে।

জীবন ও জগতের মৌলিক বিষয় তথা সমস্যাগুলো নিয়ে সম্ভাব্য প্রতিটি অবস্থানই দর্শনসম্মত। কোনো বিষয়ে দর্শন একটা মাত্র কথা বলে না। বরং, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্ভাব্য সবগুলো দিকের ভালো-মন্দ ও সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরে। ব্যক্তি যেভাবে এই tool বা হাতিয়ারকে ব্যবহার করবে, সে অনুসারেই নির্ধারিত হবে তার দর্শন।

H Al Mahdee: স্যার, একটা কথা মনে পড়ে গেল। তখন ক্লাস এইট কি নাইনে আমি। আমাদের স্যার ক্লাসে একদিন ‘প্রত্যেক সুশিক্ষিতই স্বশিক্ষিত’ এই টপিকে কথা বলছিলেন। বললেন, তোমরা যে এখানে ক্লাসে আসছো? কী দরকার? কেন? সুশিক্ষিত মানেই যদি স্বশিক্ষিত হয়, তবে পড়াশোনা শুধু বাসায় নয় কেন? তারপর বললেন, তিনি যেদিন কামিল পরিক্ষায় স্ট্যান্ড করে তার শিক্ষকের দোয়া নিতে গিয়েছিলেন, সেদিন তাঁর শিক্ষক তাকে বলেছিলেন, আজ থেকে তার এই স্বশিক্ষা কার্যক্রম শুরু।

এখন আমাদের দেশের অনেক দ্বায়ীদের সাথে ব্যক্তিগত উঠাবসার মারফতে জেনেছি, দর্শন নিয়ে ঘাটাঘাটি করার কুফল। নিরুৎসাহিত হয়েছি অনেক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ইমাম গাজালীর (রহ.) কথা। অধিকাংশ আলেম উনার ফিলোসফিকে অনেকভাবে ভুল প্রমাণের চেষ্টা চালান, অথচ ওই যে পড়াশোনা করার জন্যেও যে প্রাইমারি থেকে কামিল-মাস্টার্স পর্যন্ত একটু পড়া দরকার ছিল, সেটুকু তারা করে না। তো ফিলোসফির বুঝটা আসবে কই থেকে?! আর বললেন না মুক্তচিন্তা? সে আবার কী? এখনো যে এখানে কেউ হারাম ফতোয়া দেয়নি, সেটাই কপাল।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইমাম গাজালি হলেন মুসলিম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। এটি শুধুমাত্র মুসলমানদের কথা নয়; পাশ্চাত্য দুনিয়ার লোকেরা সেটাই মনে করে। তারা যদি একজন মুসলিমের নাম জানে তাহলে তারা গাজ্জালীর কথা বলে। তারা যদি দুজনের নাম জানে, তখন তারা গাজ্জালীর সাথে আল্লামা ইকবালের কথা বলে।

কাজী স্বাধীন: দর্শনশাস্ত্রের মোদ্দা কথা হচ্ছে মুক্ত জিজ্ঞাসা। যাবতীয় সনাতন বিধিনিষেধের কর্তৃত্বকে দর্শন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে। মানুষের চিন্তাজগতে যেসব অন্ধ ধারণা থাকে, সেসব ধারণার গোপন উৎস ও আশ্রয়স্থানগুলো খুঁজে বের করাই দর্শনের কাজ। এভাবেই খোঁজ করতে করতে দর্শন এ সিদ্ধান্তেও উপনীত হতে পারে যে পরমসত্তা বলে আদৌ কিছুই নেই। আর যদিও বা থাকে, তবে নিছক যুক্তির মাধ্যমে তাকে বুদ্ধিগোচর করা সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে ধর্মের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ঈমান; বুদ্ধির মোহমুক্ত এই ঈমান পাখির মতো তার সামনে চেয়ে দেখে বন্ধনহীন পথ।

সিদ্ধান্ত আপনার।

আল-হাশ্‌র ৫৯:১৯:

তোমরা তাদের মত হইও না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হল ফাসিক।

And be not like those who forgot Allah, so He made them forget themselves. Those are the defiantly disobedient.

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি ভুল করছেন। বরং খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ধর্মগুলোর রেফারেন্স বাদ দিয়েই মুলধারার দর্শনের ভেতর থেকে জগৎ ও জীবনের স্বরূপ নিয়ে অধিবিদ্যার যে আলোচনা, তাতে জগতের সৃষ্টিকর্তা থাকার বিষয়টা বিভিন্ন দার্শনিকের আলোচনায় বারবার এসেছে।

আপনাকে বোঝানোর জন্য খুব সংক্ষেপে বলছি, কোনো একটা বিষয়ে যতগুলো বিকল্প হতে পারে তার সবগুলোর একই সাথে পক্ষে এবং বিপক্ষে হলো ফিলোসফির অবস্থান। আপনি ফিলোসফি থেকে আস্তিকতার পক্ষে যুক্তি পাবেন, আস্তিকতার বিপক্ষ যুক্তিও ফিলোসফি থেকে পাবেন। ফিলোসফিক্যাল ওয়েতে নাস্তিকতার পক্ষে যুক্তি পাবেন। একই সাথে নাস্তিকতার বিপক্ষ যুক্তিগুলোও ফিলোসফি থেকে পাবেন।

অজ্ঞেয়বাদের পক্ষে আপনি বা যে কেউ ফিলোসফি থেকে যুক্তি খুঁজে পাবেন, আবার একই সাথে ফিলোসফি থেকে অজ্ঞেয়বাদের বিপক্ষেও যুক্তি খুঁজে পাবেন।

কোন ধারার যুক্তিগুলোকে আপনি গ্রহণ করছেন, সেটা আপনার মন-মানসিকতা ও ঝোঁক-প্রবণতার উপর নির্ভর করে। ইংরেজিতে এটাকে বলে intentionality; আর আরবিতে বলে নিয়ত।

তাহলে কী বুঝলেন?

শোনেন, এই কথাটা বুঝলে আমার কথা আপনি বুঝতে পারবেন। মানেন, না মানেন সেটা ভিন্ন বিষয়। কথাটা হচ্ছে,

philosophy is not meant to give any specific answer. yet, whatever answer you prefer, that one is necessarily philosophical.

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *